প্রতীকী ছবি।
একটি উৎসেচক জিনের বাড়বাড়ন্তই প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের মূলে এবং তাকে নিষ্ক্রিয় করা গেলেই ওই মারণ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে এক বাঙালি বিজ্ঞানীর দাবি। এ ভাবেই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে আলো দেখালেন তিনি।
গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে আমেরিকার ক্যানসাস ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের ক্যানসার গবেষক অনিমেষ ধর এবং তাঁর সহযোগীদের দাবি, অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসার হলে সেখানে ‘হিস্টোন ডেমিথ্যালাস থ্রি এ’ (কেডিএমথ্রিএ) নামে একটি উৎসেচক জিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ওই জিনকে নিষ্ক্রিয় করতে পারলে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ওই ক্যানসার। ইঁদুরের উপরে পরীক্ষা চালিয়ে এই বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানাচ্ছেন ক্যানসার বায়োলজির অধ্যাপক অনিমেষবাবু।
ওই গবেষক জানান, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে, যখন আর কিছু করার থাকে না। জন্ডিস ছাড়া থাকে না আর কোনও উপসর্গ। জন্ডিসের বিভিন্ন পর্যায়ে অগ্ন্যাশয়ে কেডিএমথ্রিএ-র মাত্রা মাপলে ধরা পড়বে, ক্যানসার হয়েছে কি না। সে-ক্ষেত্রে ক্যানসার বাড়াবাড়ি অবস্থায় পৌঁছনোর আগেই তা ধরা সম্ভব। অনিমেষবাবুর দাবি, তাঁরা এমন একটি যৌগ আবিষ্কার করেছেন, যা কেডিএমথ্রিএ-কে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরের শরীরে ওই যৌগ ঢুকিয়ে দেখা গিয়েছে, টিউমারের বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। দ্রুত কমছে কেডিএমথ্রিএ-র পরিমাণও।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে উৎসেচক জিন কেডিএমথ্রিএ-র ভূমিকা কী?
অনিমেষবাবুদের দাবি, গবেষণাগারে তৈরি করা এই উৎসেচক ইঁদুরের অগ্ন্যাশয়ে ঢুকিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানকার সুস্থ কোষগুলি দ্রুত পরিণত হচ্ছে ক্যানসার কোষে। ওই জিন কী ভাবে এটা করে, সেই ধাঁধারও সমাধান করেছেন তাঁরা। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে দেখা যায়, টিউমার খুব দ্রুত বড় হয়ে হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ‘হিফ ওয়ান আলফা’ নামে একটি জিন। ওই জিন অগ্ন্যাশয়ের টিউমারে অতিরিক্ত রক্তজালিকা তৈরি করে। তার মাধ্যমেটিউমার কোষে অতিরিক্ত খাদ্য পৌঁছয়। দ্রুত বাড়তে থাকে তারা। অগ্ন্যাশয়ের জন্য পাঠানো সব খাবারই ওই টিউমার কোষে চলে যায়। ফলে সুস্থ কোষ মরতে শুরু করে। টিউমারের দ্রুত বৃদ্ধির সহায়ক হিফ ওয়ান আলফা জিনকে নিয়ন্ত্রণ করে কেডিএমথ্রিএ। তাই কেডিএমথ্রিএ-র পরিমাণ বেড়ে যায়। ওই
উৎসেচককে কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই ক্যানসারের বাড়বাড়ন্ত রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
‘‘মানবদেহে এই গবেষণা সফল হলে সেটা নিশ্চয়ই দারুণ হবে,’’ বলেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তবে তাঁর প্রশ্ন, ক্যানসারের মতো একই উপায়ে কি আগে থেকে অগ্ন্যাশয়ে পাথর অথবা প্যানক্রিয়াটাইটিস নির্ণয় করা সম্ভব? ঘনিষ্ঠ বন্ধুর উদাহরণ দিয়ে সুবীরবাবু বলেন, ‘‘তাঁর ক্ষেত্রেও অনেক আগে ক্যানসার নির্ণয় করা হয়েছিল। কিন্তু অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে সফল অপারেশনের পরেও তা এমন ভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যে, আড়াই বছরের বেশি বাঁচিয়ে রাখা যায় না রোগীকে।’’ সেই রোগের বৃদ্ধি আটকাতে পারলে সেটা আশাপ্রদ খবর বলে মনে করেন সুবীরবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy