Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Apollo 11

‘মুনওয়াক’-এর ৫০ বছর: ফের চাঁদে নামার প্রস্তুতি শুরু

এর মধ্যেই সত্যিকারের ‘মুনওয়াক’ করে ফেলেছে মানুষ। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাধা কাটিয়ে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা চাঁদের মাটি ছুঁয়ে এসেছেন নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন (বাজ) অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্সরা।

মানুষের চন্দ্রবিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ। ছবি: নাসা

মানুষের চন্দ্রবিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ। ছবি: নাসা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ১৯:২১
Share: Save:

মাধ্যাকর্ষণ যেন সেখানে আলগোছে টান মারে। মাটি ছুঁয়ে পা উঠে আসে মসৃণ বিভঙ্গে। ঘন ঘন পদক্ষেপ এগিয়ে যাওয়ার মোহ-বিভ্রম তৈরি করে চোখের সামনে। আসলে তা মুনওয়াক। তিরিশের দশকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেহাতই ‘স্থানীয়’ এই পপ গানের স্টেপ বিশ্বজয় করতে বেরিয়ে পড়ে ১৯৮৩ সালে। সৌজন্যে মাইকেল জ্যাকসন।

এর মধ্যেই সত্যিকারের ‘মুনওয়াক’ করে ফেলেছে মানুষ। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাধা কাটিয়ে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা চাঁদের মাটি ছুঁয়ে এসেছেন নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন (বাজ) অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্সরা। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ‘স্যাটার্ন-ফাইভ’ রকেটের পিঠে চড়ে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিল ‘অ্যাপোলো ১১’। সঙ্গে ছিল চাঁদে নামার মহাকাশযান ‘ঈগল’। ২০ জুলাই চাঁদে নেমেছিল ‘ঈগল’ । পরের দিন অর্থাৎ ২১ জুলাই সেই ইতিহাসের নির্মাণ। পৃথিবী থেকে দেখা সোনালি চাঁদের রুক্ষ্ম জমি ছুঁয়েছিলেন আর্মস্ট্রংরা।

সেই খবর পেয়ে কেনেডি স্পেস স্টেশনের কর্মীদের কারও চোখে জল, কেউ বা ফেটে পড়ছেন উল্লাসে। আড্ডায় উঠে আসছে মানুষের চন্দ্রবিজয়ের কথা। চাঁদে সেই প্রথম পাড়ির ৫০ বছর পূর্ণ হল শনিবার, ২০১৯ সালের ২০ জুলাই। মানুষের ‘ছোট্ট একটা পদক্ষেপ’ কেমন করে যেন ‘মানবসভ্যতার কাছে বিরাট লাফ’ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীর হাইপোথিসিসে যেন, টাইম ওয়ার্পের সুড়ঙ্গ বেয়ে কয়েক মুহূর্তে হাজার হাজার বছর এগিয়ে যাওয়া। সভ্যতার যে লগ্নে এপম্যানদের আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল আগুনের আবিষ্কার। ১৯৬৯ সালে সভ্যতাকে ঠিক সেই ধাক্কাটাই দিয়েছিল ‘স্যাটার্ন-ফাইভ’ রকেট।

প্রথম চন্দ্রাভিযানের কাহিনী শুনুন বাজ অলড্রিনের মুখে

গত অর্ধ শতাব্দীতে কবির কল্পনাভূমি থেকে উত্তরোত্তর বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে চাঁদ। যে লক্ষ্য পূরণে আগামী সোমবার পাড়ি দিচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান ২-ও। ১৯৬৯ সালের অভিযানকে ধরলে এখনও পর্যন্ত আমেরিকা মোট ছ’টি অভিযান হয়েছে চাঁদে। লক্ষ্য ছিল, চাঁদ থেকে তেজষ্ক্রিয় মৌল এনে নিজেদের শক্তির ঘাটতি মেটানো। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দুনিয়া তখন হয় আমেরিকার দলে, না নয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে। সেই ঠান্ডা লড়াইয়ে অবশ্য তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ‘স্যাটার্ন-ফাইভ’র পাল্টা হিসাবে ‘এন-ওয়ান (সুপার হেভি লিফট লঞ্চ ভেহিকল)’ রকেট তৈরি করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু, তা সফল হয়নি। ঠিক যেমন অনেক চেষ্টা করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগে পরমাণু বোমা তৈরি করে উঠতে পারেনি হিটলারের জার্মানি।

মানুষের চন্দ্রবিজয়ের খবরের হাত ধরেই তৈরি হয় নতুন নতুন কন্সপিরেসি থিওরিও। সত্যিই কি চাঁদে পা রেখেছে মানুষ? ‘এসব নাসার তৈরি করা সিনেমা’, সমান্তরাল ভাবে এমন নানা কাহিনিও ছড়িয়ে পড়ে দুনিয়া জুড়ে। পাল্টা প্রমাণ প্রকাশ্যে আনে নাসাও। সে সব ‘তত্ত্ব’ দূরে সরিয়ে রেখে ২০২৪ সালে, নতুন করে চাঁদের পাড়ায় পা রাখতে চলেছে মানুষ। ফের চাঁদের পাড়ায় ঢুকতে চলেছে পৃথিবীর দূতরা। এখন শুধু নাসা নয়, চাঁদের মাটিতে পা রাখতে উৎসুক চিন বা ভারতও। চাঁদের মাটি ছুঁতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে পৃথিবীর মাটিতেও। পৃথিবীতে কমছে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ। বিকল্প শক্তি খুঁজতে তাই চাঁদে থাকা ‘হিলিয়াম-৩’-এর মতো জ্বালানি দখলদারিই এখন লক্ষ্য হয়ে উঠেছে মানুষের।

পায়ে পায়ে ‘মুনওয়াক’-এর ৫০ বছর স্পর্শ করা। যে ভাবে, এই ৫০ বছরেই মানুষের সভ্যতার ইতিহাস বুকে খোদাই করে অজানায় পাড়ি দিয়েছে কার্ল সাগানের ‘ভয়েজার-১’। পৃথিবীর বৃষ্টি, বাতাস আর শিশুর হাসির আওয়াজ বুকে গেঁথে তা সৌরমণ্ডলের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। হয়তো সেই শব্দ এক দিন ‘ডিকোড’ হয়ে যাবে ভবিষ্যতের কারও কাছে!

আরও পড়ুন: চাঁদে এখন না নামলে পরে খুবই পস্তাতে হত ভারতকে!

আরও পড়ুন: চাঁদই হতে চলেছে আগামী দিনের সেরা ল্যাবরেটরি!​

অন্য বিষয়গুলি:

Saturn v First lunar mission Apollo 11 America
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE