সোমবার অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী তিন অর্থশাস্ত্রীর নাম ঘোষণা করল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। জানিয়ে দেওয়া হল, ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য যৌথ ভাবে মনোনীত হয়েছেন তুরস্ক বংশোদ্ভূত ড্যারন অ্যাসেমোগলু, ইংল্যান্ডের সাইমন জনসন এবং আমেরিকার জেমস এ রবিনসন। তবে এঁরা সকলেই বর্তমানে আমেরিকার নাগরিক।
অর্থনীতিতে ২০২৪ সালের নোবেল প্রাপক তিন জনের গবেষণার বিষয়— দেশীয় সমৃদ্ধিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি কী ভাবে তৈরি হয় এবং সামগ্রিক সমৃদ্ধিকে কী ভাবে প্রভাবিত করে, সেই নিয়েই দীর্ঘ গবেষণা করেছেন তাঁরা। নোবেল কমিটির (অর্থনীতি) চেয়ারম্যান জ্যাকব সভেনসন বলেছেন, ‘‘দুই দেশের মধ্যে আয়ের পার্থক্য কমানো এই সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই তিন অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন, সেই অসাম্য দূর করতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির বড় ভূমিকা রয়েছে। যে সব দেশের সামাজিক রীতিনীতিগুলি শোষণমূলক, সেই সব সমাজ বিশেষ সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠতে পারে না। গবেষণার মাধ্যমে তা-ই দেখিয়েছেন তিন বিজ্ঞানী।’’
আরও পড়ুন:
নোবেল পুরস্কার কমিটি বিশদে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, যখন ইউরোপীয়রা বিশ্বের নানা দেশে নিজেদের উপনিবেশ বিস্তার করা শুরু করেছিল, তখন সেই সব সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলিতেও বদল আসে। সুবিধার জন্য সে সব দেশে নয়া রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে ইউরোপীয়রাই। কিন্তু দেখা গিয়েছে, যে উপনিবেশগুলি সে সময় সমৃদ্ধ ছিল, সেগুলি এখন দরিদ্র; আর যে উপনিবেশগুলিতে সে সময় দারিদ্র্য ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ, সমাজে সম্পদের বণ্টন কী ভাবে হচ্ছে এবং সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কার হাতে রয়েছে। কখনও কখনও জনগণ একজোট হয়ে শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। অর্থাৎ সংঘবদ্ধ সমাজের ক্ষমতা কখনও একচেটিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। এই পরিস্থিতি এড়াতে শাসক নানা স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, ফলে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ, তখন অসাম্য ঘোচানোর একটিই বিকল্প পথ রয়েছে— শাসক যদি নিজেই জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়, অর্থাৎ ক্ষমতার হস্তান্তর এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
আরও পড়ুন:
ড্যারন এবং সাইমন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-তে গবেষণারত। আর জেমস শিকাগো ইউনিভার্সিটির গবেষক। ২০২৩ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্লদিয়া গোল্ডিন। নোবেলজয়ীরা নোবেল পদক ছাড়াও পাবেন একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ বিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা, ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য আট কোটি ৯০ লক্ষ টাকারও বেশি।