কালো হয়ে গিয়েছে পুকুরের জল। করঙ্গপাড়ায়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।
কালো হয়ে গিয়েছে পুকুরের জল। বাড়ির সব আসবাবপত্রে পুরু আস্তরণ। কালো হয়ে গিয়েছে গাছপালাও।
দিনের পর দিন এমন দূষণে বাস করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাঁরাএই দাবিতে কারখানার গেটে আধিকারিকদের আটকে বিক্ষোভ দেখালেন বাসিন্দারা। পরে সেই আধিকারিকদের পাড়ায় নিয়ে গিয়ে তাঁরা দেখান, দূষণের জেরে কী পরিস্থিতি এলাকার। অবিলম্বে দূষণ বন্ধ না হলে কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কারখানার আধিকারিকদের আশ্বাস, এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্গাপুরের আরএন মুখোপাধ্যায় রোডের পাশে ওই বেসরকারি কার্বন ব্ল্যাক তৈরির কারখানা থেকে মাঝে-মাঝেই দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের করঙ্গপাড়ার বাসিন্দারা। তবে গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা জানান, বাড়ি-ঘর-বারান্দা ভরে গিয়েছে কালো কণায়। শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্বাস নেওয়ার দূষণের কণা সাধারণত নাসিকা ঝিল্লি এবং নাকের ভিতরে থাকা পেশির স্তরে যে আধা-তরল পদার্থ আছে, তাতে আটকে যায়। কিন্তু ছোট ২.৫ মাইক্রন আকৃতির কণিকা ট্রাকিয়া হয়ে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ে চলে যায়। কণিকা জমে জমে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ডেকে আনে। করঙ্গপাড়ার বাসিন্দা দেবব্রত সাঁই, সূর্য কেশরা বলেন, “দিনের পর দিন দূষণ ছড়াচ্ছে কারখানাটি। দিন দুয়েক তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আর সহ্য করা যাচ্ছে না।” বাসিন্দারা জানান, বাধ্য হয়ে এ দিন কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখালেন। প্রথমে আধিকারিকদের কারখানায় ঢুকতে বাধা দেন। পরে তাঁদের কয়েক জনকে এলাকায় নিয়ে গিয়ে দূষণের পরিস্থিতি দেখান।
দুর্গাপুর ছাড়াও কোচি ও গুজরাতে মোট চারটি কারখানা রয়েছে এই সংস্থাটির। দেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম কার্বন ব্ল্যাক প্রস্তুতকারক সংস্থা সেটি। দুর্গাপুরের কারখানাটি গড়ে ওঠে ১৯৬০ সালে। বছরে গড়ে মোট ১ লক্ষ ৫২ হাজার মেট্রিক টন কার্বন ব্ল্যাক উত্পাদন হয়। পূর্ব, উত্তর এবং দক্ষিণ ভারত ছাড়াও নানা দেশে তা রফতানি হয়। কার্বন ব্ল্যাক প্রস্তুত করার সময় এক ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস বেরোয়। আগে এই গ্যাস জ্বালিয়ে নষ্ট করা হত। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হত। তা ছাড়া সংস্থারও খরচ হত। তবে ২০০৩ সালে সরকার বিদ্যুত্ আইন বদলে শিল্প কারখানার বাড়তি বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করায় উদ্যোগী হয়। তার পরেই ক্ষতিকারক ওই গ্যাস কাজে লাগিয়ে দুর্গাপুরের কারখানায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নিজস্ব বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র গড়ে তোলে সংস্থাটি।
কেন দূষণের মাত্রা হঠাত্ বেড়ে গিয়েছে? কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ জনিত কারণে এখন বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া জমা করে রাখা কার্বন বাতাসে উড়ে গিয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। ফলে দূষণ বেড়েছে। কারখানার আধিকারিক কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজস্ব বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। দ্রুত সেটি চালু হয়ে যাবে।” যতক্ষণ বিদ্যুত্ কেন্দ্র পুনরায় চালু না হচ্ছে ততক্ষণ কর্তৃপক্ষকে কারখানার উত্পাদন বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ দফতর। দফতরের দুর্গাপুরের এক আধিকারিক বলেন, “দূষণ মাত্রাছাড়া হলে মুশকিল। করঙ্গপাড়ার ওই কারখানা সম্পর্কে তেমনই অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র চালু না হওয়া পর্যন্ত উত্পাদন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy