সবুজ বড় নারকেল কুল হোক বা লাল লাল টোপা কুল। যতই চোখে পড়ুক না কেন, সরস্বতী পুজোর আগে খাওয়া বারণ। মা-ঠাকুরমারা আবার বলেন, সরস্বতীকে নিবেদন না করে কুল খেলেই পরীক্ষায় ফেল অনিবার্য।
বয়স বেড়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছেন। তবু যেন পুজোর আগে কুল খেতে গেলে হাত কাঁপে। কেউ বলেন, এ সব নিছক কথার কথা। তবে এ নিয়ে জনশ্রুতিও রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত এক কাহিনি জানায়, দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে মহামুনি ব্যাসদেব তপস্যা করতে বসেছিলেন। তপস্যা শুরু করার আগে একটি কুলের বীজ রেখে মা সরস্বতী বলেছিলেন, যত দিন না এই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে, সেখান থেকে গাছ বড় হচ্ছে তত দিন তপস্যা চালিয়ে যেতে হবে। সেই গাছ থেকে একটি পাকা কুল যে দিন ব্যাসদেবের মাথায় এসে পড়বে, সে দিনই তপস্যা ভঙ্গ করা যাবে। সেই নিয়ম মেনেই একদিন তপস্যারত ব্যাসদেবের মাথায় হঠাৎ করে সেই গাছ থেকে পাকা কুল এসে পড়ে। ঘটনাচক্রে সেই দিনটি ছিল বসন্ত পঞ্চমী।
বসন্ত পঞ্চমীতেই সরস্বতী পুজো হয়। পরের দিন শীতল ষষ্ঠী। সে দিন আবার আগের রাতের খাবার খাওয়ার চল রয়েছে বাংলায়। কারও বাড়িতে ভোগের খিচু়ড়ির সঙ্গে আবার কারও বাড়িতে শীতল ষষ্ঠীতে কুলের টক খাওয়ার চল রয়েছে। পুজোর সময় যে ফল নিবেদন করা বীণাপাণিকে, সেখানে অবশ্য নারকেল কুল দেওয়াই রীতি। টোপাকুল রাখা হয় চাটনি বা টকের জন্য।
এক এক বাড়িতে এক এক রকম ভাবে রাঁধা হয় কুলের টক। কেউ মশলা দেন, কেউ দেন না। কোনও বাড়িতে কুলের সঙ্গে টম্যাটো দেওয়ারও রীতি রয়েছে। জেনে নিন, সহজে কী ভাবে সুস্বাদু কুলের টক বানাবেন।
উপকরণ
৩০০ গ্রাম পাকা টোপাকুল
১ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
আধ টেবিল চামচ গোটা সর্ষে
স্বাদমতো নুন
এক চিমটে হলুদ
স্বাদমতো চিনি
পদ্ধতি
পাকা কুল ধুয়ে নিন। কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম হলে সর্ষের ফোড়ন দিতে হবে। তার মিনিট দুই পরে দিয়ে দিন ধুয়ে নেওয়া কুল। মিনিট দুই-তিন নাড়াচাড়ার পরে দিয়ে দিতে হবে সামান্য হলুদ, স্বাদমতো নুন। তার পর দেড় কাপের মতো জল দিয়ে কুল সেদ্ধ হতে দিন। মিনিট ৫-৭ ফুটে গেলে যোগ করতে হবে স্বাদমতো চিনি। অন্তত আধ কাপ চিনি এ ক্ষেত্রে লাগবে। চিনির জলে কুল ফোটার সময় কয়েকটা কুল খুন্তির সাহায্য ফাটিয়ে দিলে স্বাদ ভাল হবে। সমস্ত উপকরণ ফুটে গেলে নামিয়ে নিন।
অনেকে কুলের টকে পাঁচফোড়ন, জিরে, শুকনো লঙ্কা শুকনো কড়ায় নেড়ে গুঁড়িয়ে নিয়ে ভাজা মশলা ছড়িয়ে দেন। কেউ কেউ সর্ষে নয়, শুধু পাঁচফোড়ন ব্যবহার করেন। অনেকে চিনির বদলে গুড়ও দিয়ে থাকেন। ইচ্ছমতো জিনিস দিতেই পারেন। তবে অনুপাত ঠিক থাকা দরকার।