কাটকাহন
ডিজাইনার ভাবিন ত্রিবেদী দীপাবলীর সাজের জন্য আনারকলির অবয়বে বিভিন্ন কাটের পোশাক তৈরি করেছেন। দীপাবলির সাজে সনাতনী ধাঁচের চলকে মাথায় রেখে তিনি পরতে বলছেন আনারকলি গাউন। কার্ভি থেকে সাইজ জিরো, যে কোনও শরীরেই এই গাউন চেহারায় একটা আভিজাত্য নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন ভাবিন। কেউ একটু বেশি সাহসী হতে চাইলে আনারকলি গাউনের ঝুল ছোট করে ট্রেন্ডি লুকটাকে হাইলাইট করতে পারেন বলে পরামর্শ দিচ্ছেন ভাবিন। এই দীপাবলিতে স্কিন টাইট পোশাকের চল একেবারেই নেই। ফ্যাব্রিকের ফুরফুরে উড়ু ভাবটাকে যে সমস্ত কাট ধরে রাখতে পারে সেই কাটের উপরেই এখন জোর দেওয়া হচ্ছে। যেমন মাটি ছোঁওয়া ম্যাক্সি ড্রেস। জর্জেট বা শিফনের তৈরি বলে এই ধরনের পোশাকে শরীরের বাঁধনটাও খুব চমৎকার ধরা পড়ে। ভাবিন বলছেন, “বাড়িতে অতিথি এলে, পুজোর কাজ করতে বা বাজি পোড়াতে এই হাল্কা ম্যাক্সি ড্রেস সবচেয়ে কাজের, ফ্যাশনও হল, কাজও থাকল।” ইন্দো-ওয়েস্টার্ন লুক আনতে ভাবিন আমব্রেলা কাটের ঘের দেওয়া স্কার্টের সঙ্গে স্প্যাগেটি টপ পরতে বলছেন। আবার যাঁরা নিজেদের কার্ভকে পোশাকের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে চান তাঁদের জন্য ভাবিন একরঙা শিফন, লিনেন, জর্জেটের শাড়ি, সঙ্গে ভারী কাজের নকশা করা বর্ডার ব্লাউজের কম্বিনেশনের উপর জোর দিচ্ছেন।
ঘাঘরো যো ঘুমে
“শুধু সালোয়ার স্যুটেই ভরসা করলে চলবে না”, বলছেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। খুব বেশি ভারী চেহারা না হলে লেহেঙ্গা চোলি দীপাবলির রাত পোশাক হতে পারে বলে মনে করছেন ডিজাইনার অনিতা খৈতান। এই পোশাকের মধ্যে থেকে বেশ একটা খানদানি জৌলুস ঠিকরে পড়ে সেটা দীপাবলির জন্য আদর্শ বলে মনে করেন অনিতা। তিনি বলছেন, “সাধারণত সিল্কের লেহেঙ্গায় ভারী জারদৌসি কাজ বা দামি পাথর বসানো থাকে। কখনও কখনও শামুক-ঝিনুক, ছোট্ট ছোট্ট ঘষা কাচ বা প্রাচীন আমলের পয়সা আকৃতির ধাতু-চাকতিও বসানো হয়। তাই এগুলো ওজনে একটু ভারী। সে দিক থেকে ক্রেপ বা জর্জেটের লেহেঙ্গার সুবিধা হল, ওজনে হাল্কা, পুজোর বাড়িতে ছোটাছুটির পরেও সাজ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।”
লেহেঙ্গা একঘেয়ে লাগলে লেহেঙ্গা-স্যুটের ফিউশন, লেহেঙ্গা-শাড়ি, গাউন-লেহেঙ্গা, এই ধরনের পোশাকও পরা যায় বলে জানাচ্ছেন অনিতা। পাথর বসানো, সিক্যুইন কাজের লেহেঙ্গা স্কার্টের চল এখন। একটু অন্য ধাঁচে নিজেকে সাজাতে হলে অনিতা তার সঙ্গে চোলি কাটের ব্যাকলেস টপ, পায়ে পাথরচটি বা মোজরি পরতে বলছেন। হেমন্তিকার আলো আপনার শরীরেই জ্বলে উঠবে।
চোলি কে পিছে
লেহেঙ্গা-চোলির সব থেকে আকর্ষণীয় অংশ হল চোলির ডিজাইন। হেমলাইন, নেকলাইন বা পিঠের অংশটার নকশা কায়দার হতেই হবে। যেমন, প্রিন্সেস বা এম্পায়ার কাট। এতে বাস্টলাইনের সৌকর্যের দিকেই নজরটা আগে যায়, কোমরের দিকটা ঈষৎ ভারী হলেও সমস্যা হয় না। আরও একটু মেদ জমলেও ক্ষতি নেই। চোলির বদলে একটা করসেট পরে নিন। চেপে বসবে শরীরে, মেদ বোঝাই যাবে না আর কোমর অংশটাও ঢাকা থাকবে। উন্মুক্ত থাক গ্রীবা আর ওপর-হাতে পরে নিন একটা জম্পেশ বাজুবন্ধ। ছিমছাম, সর্পিল, সোনার। বাজি নয়, চোলিতে বাজিমাত করুন।
শাড়ি কে ফলসা
দীপাবলির উৎসবে শাড়ি ছাড়া আর অন্য কিছুই ভাবছেন না ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য। দীপাবলি আর কালীপুজোর কথা ভেবে তিনি সাবেক ফ্যাব্রিকের বুনোটে তৈরি করেছেন স্মার্ট ট্রেন্ডি শাড়ি যা ষোলো থেকে ষাটের মন কেড়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে প্যাস্টেল শেড মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করার চল খুব বেশি। এই প্যাটার্নকেই ভারতীয় শাড়ির শরীরে ঢেলে সাজিয়েছেন প্রণয়। উজ্জ্বল কমলার সঙ্গে সবজেটে প্যাস্টল শেড মিশিয়ে চেক আর ফ্লোরালের কম্বিনেশনে শাড়ির পাটলি-পাল্লু আলাদা করেছেন তিনি। চমক আনতে কোথাও আবার কেবল শাড়ির প্লিটের জায়গায় বোট্যানিক্যাল প্রিন্ট ব্যবহার করেছেন। প্রণয় বলছেন, “বোটানিক্যাল প্রিন্ট ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন সবচেয়ে ইন। এই প্রিন্টে কেবল ফুল নয়, লাতা, পাতা, প্রজাপতির মোটিফ ব্যবহার করে একটা তরতাজা লুক দেওয়া হয়।” শাড়ির ভাঁজে প্রণয় জুড়ে দিয়েছেন এই প্রিন্ট। দীপাবলির রাতে পরে নিন আসমানি নীল আর হট পিঙ্কের কম্বো শাড়ি। সঙ্গে থাক কাচ বসানো পিঠ খোলা বাহারি চোলি ব্লাউজ। ব্যস! কালোরাতের আলোর রানি আপনিই হবেন। দীপাবলির রাতে কোটা সিল্ক পরার চল দেখা যায়। সেই কথা মাথায় রেখে প্রণয় কোটা সিল্কের জমিতে গেঁথে দিয়েছেন লখনউয়ের চিকনকারি। গুজরাত আর লখনউ হাত ধরাধরি করে এ বার আপনার শরীরেও দিয়া জ্বালাক!
রঙ্গিলা রে
দীপাবলি এমনই এক উৎসব যেখানে নিজের শরীরকে নানা রঙে সাজাতে হয় বলে মনে করছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। ভাবিন বলছেন, “দীপাবলির জন্য সব ধরনের উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে থাক একটু নিয়নের আলতো ছোঁওয়া।” অগ্নিমিত্রা যদিও নিয়নকে পুরোপুরি বাতিল করছেন। অনিতা বলছেন, “সাদা-কালোর ঘন মোড়কে পোশাকে থাক হট পিঙ্ক বা লালের আভিজাত্য।” দীপাবলির রঙ্গোলির মতো রং মিশুক আপনার পোশাকে তা যেন নিজের ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে না যায়, কেবল সেটা খেয়াল করুন। হট পিঙ্ক, লাইম গ্রিন, মিডনাইট ব্লু, সাদা, কালো, হলুদ আর জমাট লালে ঘিরে থাক আপনার আলোর উৎসব।
ফিউশনে-ফ্যাশনে
কালীপুজো আর দীপাবলি বাজির উৎসব। তাই সাজগোজের সময়ে সবার আগে মাথায় রাখতে হবে সচেতনতার কথা। রেশমের বদলে বেছে নিন সুতি। যাঁরা শাড়ি, লেহেঙ্গার মতো ভারী সাজের দিকে যেতে চাইছেন না, তাঁদের জন্য ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল বলছেন, “পালাজো আর লং সাইড স্লিটের কুর্তা পরুন, করিনা থেকে আলিয়া ভট্ট— বি টাউনের দীপাবলি উৎসবে এখন এই পোশাকের চল সবচেয়ে বেশি।” হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া-তে আলিয়া ভট্টর সিম্পল লুকটাই দীপাবলিতে জেন ওয়াই অনুসরণ করবে বলে মনে করছেন অগ্নিমিত্রা।
অভিষেক দত্ত আলোর উৎসবে সাজের জন্য যদিও হাঁটলেন অন্য পথে। তিনি বলছেন, “মেয়েরা লেগিংসের সঙ্গে কুর্তি পরতে পারেন। হাল্কা এমব্রয়ডারির কাজ করা শর্ট কুর্তির সঙ্গেই পরতে পারেন আনারকলি চুড়িদার। একটা গাঢ় শেডের পোশাক পরলে রাতের জমকালো ভাবটা ফুটে উঠবে। শাড়ি পড়লে, অ্যাভয়েড করা ভাল সিল্ক, নেট বা সিন্থেটিক শাড়ি। এ বছর প্রি-স্টিচ করা শাড়িই চলছে ট্রেন্ডে। বাজি পোড়ানো ও দৌড়ঝাঁপের মাঝে এমন শাড়ি বেশ কম্ফর্টেবলও।” আর পুরুষদের জন্য, অভিষেক কুর্তা-ধুতি, অথবা পাঞ্জাবি-ধুতি, ধোতি প্যান্টের ওপর জোর দিচ্ছেন। ট্রেন্ডি জারদৌসি পাঞ্জাবির সঙ্গে জোহেব প্যান্টও পরতে পারেন বলে জানাচ্ছেন তিনি।
দীপাবলিতে চলবে না
• পশ্চিমী পোশাক
• স্কিন টাইট, ফিটেড পোশাক
• নিয়ন কালার
• হাত, কান, গলার গয়না একসঙ্গে পরবেন না
• ফ্যাকাশে রং
ছবি সৌজন্যে প্রণয় বৈদ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy