ছবি: সুব্রত চৌধুরী
সকাল-সন্ধ্যায় খ্যানখেনে গলার স্বর এত তীব্র যে, পরিচিত গাছের ডালে ঘুম ভাঙা অথবা ঘুমোতে যাওয়া পাখিরা ধড়মড়িয়ে ভয় পেয়ে ডানা মেলতে বাধ্য হয়। গলাটা কাসুবুড়ির। থানটা প্রমাণ সাইজের নয় বলে শরীর পুরো ঢাকে না। জামা নেই বলে পরার বালাই নেই। কথাটা ঠিক হল না। একটা নতুন থানের ভাঁজে ধবধবে সাদা জামা সযত্নে রাখা আছে কাসুবুড়ির ছোট্ট ঘরের তাকে। তার বড় সাধ, ওই থান জামা পরে মানুষের কাঁধে চেপে শ্মশানে যাবে।
ঘুম ভাঙে মাঝরাত শেষ হলেই। তখন আর চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে পারে না কাসুবুড়ি। চোখের পাতায় সেই সব মানুষের মুখ কিলবিল করতে থাকে, যারা এক এক করে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। সেই মুখগুলো চোখের পরদায় বসে তাকে ভয় দেখায়, আবার কেউ কেউ হাসে, কাঁদেও। আশ্চর্য ব্যাপার, যখন ঘুমোতে যায়, তখন সহজে চোখের পাতা এক হতে চায় না, কিন্তু সেই ঘুম ভাঙলেই চোখ খোলা রাখতে বাধ্য হয় কাসুবুড়ি। নইলে তারা আসে একের পর এক। সবাই যে প্রতি শেষ রাতে আসে, তা নয়। ঘুরে ফিরে আসে। শুধু ওই এক জন ছাড়া। বারো বছরে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের রাতে তো বটেই, ফুলশয্যার রাতেও ভাল করে দেখেনি তাকে। এক হাত দূরে শুয়ে বলেছিল, ‘‘আমার শরীর ভাল নেই। একটু ঘুমোই?’’
কাসুবুড়ির বারো বছরের হৃৎপিণ্ড তখন ঢিপঢিপ আওয়াজ তুলছিল। মুখে কথা ফোটেনি। আঠারো বছরের বর বালিশ আঁকড়ে বলেছিল, ‘‘সকাল থেকে আজ পেটে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ খেয়েছি। এখন একটু ঘুম পাচ্ছে। ঘুমোই?’’
জবাব দেয়নি কাসুবুড়ি। মনে মনে বলেছিল, কী পেটুক রে বাবা! নিজের বিয়েতে বোধহয় গলা পর্যন্ত খেয়েছে! এটা মনে হতেই তার হৃৎপিণ্ড শান্ত হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে সে যখন বুঝতে পারল তার বর ঘুমিয়ে পড়েছে তখন নিঃশব্দে উঠে বসে, একটু ঝুঁকে মুখ দেখল। ওই আঠারো বছরের সদ্য দাড়ি-কামানো মুখটা ঘুমিয়ে পড়ায় কী শান্ত দেখাচ্ছে! কাসুবুড়ির মনে হয়েছিল, ঘুমালে ছেলে আর মেয়েদের মুখ একই রকম নিষ্পাপ দেখায়।
আরও পড়ুন: নববর্ষের ভোর নিয়ে আসত গানের আসর
লোকটা নিশ্চয়ই ভাল ছিল। কলকাতার কলেজে পড়তে যাওয়ার আগে তাকে দু’বার চুমু খেয়েছিল। বর হিসেবে এটা সে খেতেই পারে। হেসে বলেছিল, ‘‘কাকিমা বলেছেন, পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করার আগে যেন আমি বাবা না হই।’’
শুনে মুখ নিচু করেছিল সে।
‘‘তুমি তো এখনও বড় হওনি। আমি চাকরি পেতে পেতে তুমি নিশ্চয়ই বড় হয়ে যাবে। তখন আমরা দু’জনে মা-বাবা হব, কেমন?’’
‘‘ধ্যেৎ!’’ দৌড়ে কেন সরে এসেছিল সে জানে না, আসতে খুব ভাল লেগেছিল।
সেই যে চলে গেল, তার পর তার চিঠি আসতে লাগল। না, তার নামে নয়। মায়ের উদ্দেশে চিঠি লিখে, শেষে বাড়ির সবাইকে শ্রদ্ধা, প্রণাম, স্নেহ জানিয়ে, শেষ করত এই রকম লিখে: ‘তোমার বউমাকে আশীর্বাদ জানাইলাম।’ পড়ার পর সেই চিঠি তাকে দিয়ে শাশুড়ি বলতেন, ‘‘খোকা চিঠি লিখেছে। পড়লে ওখানকার খবর জানতে পারবে।’’
ওই বয়সে চিঠি না পড়লে যেমন দুঃখ হত, পড়লেও কষ্ট বেড়ে যেত বহুগুণ। কেন খামের ওপর তার নাম লিখে বর চিঠি পাঠাতে পারে না! তার পর খবরটা এল। গঙ্গায় স্নান করতে গিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে। সবাই উঠে এসেছিল, শুধু সে ওঠেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার শরীর পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে শ্বশুর-দেওররা ছুটেছিল কলকাতায়। খোঁজাখুঁজি হয়েছিল বিস্তর, ডুবুরিও নামিয়েছিল। কিন্তু সেই আঠারো বছরের শরীরটা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জলে ডুবে যাওয়া মানুষ ভেসে উঠেছে বহু দূরে, স্মৃতি লোপ পাওয়ায় ফিরে আসতে পারেনি। বহু দিন পরে পরিচিত কেউ দেখতে পেয়ে হইচই করে ফিরিয়ে এনেছে। এ রকম নজির আছে ভূরিভূরি। তাই দেহ না পাওয়া যাওয়ায় সিঁদুর মোছা হয়নি সিঁথি থেকে, শাঁখা খোলা হয়নি নতুন বউয়ের। জলে চোখ ভিজিয়ে অপেক্ষা করতে করতে যখন বারোটা বছর চলে গেল, তখন শ্বশুর গত হয়েছেন। পুকুরের বাঁধানো সিঁড়িতে বসে শাঁখা ভাঙা হল, সিঁথিতে সাবান ঘষা হল। শাশুড়ি বললেন, ‘‘তোমার বাবা নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তুমি কী চাও?’’
‘‘আপনি যা বলবেন।’’
‘‘তোমার শ্বশুরমশাই চলে গেলেন। আশায় ছিলাম, ছেলে হয়তো ফিরে আসবে। সেই আশায় জল পড়ল আজ। আমি আর কী বলব! যে ক’দিন বাঁচব, সে-ক’দিন যদি সঙ্গে থাকো, তা হলে—’’ চোখ বন্ধ করলেন শাশুড়ি।
থেকে গিয়েছিল কাসুবুড়ি। শাশুড়ি যখন গেলেন, তখন তার চুলের কিছুটা সাদাটে। গাল ভেঙেছে। বাপের বাড়িতে যাওয়ার পথটাও খোলা ছিল না। মা এবং বাবা গত হয়েছেন। বাড়ি বিক্রি করে, ভাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বদলির চাকরিতে বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছে। দেওরদের কাছে তাদের বাপ-পিতামহের বাড়িটা বড় পুরনো মনে হল। উঠোনের ও পাশে একটা ঘর, রান্নাঘর আর কল-পায়খানা বউদির জন্য রেখে, বাড়িটা বিক্রি করে নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে গেল তারা। ওদের মতোই যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল কাসুবুড়ি।
রাতে যারা আসে, তারা আসুক। দিনের বেলা তো দু’মুঠো দু’বেলা দিতে হবে পেটে। এ ব্যাপারে খুব কৃতজ্ঞ কাসুবুড়ি তার শাশুড়ির কাছে। নিজের হাতে ধরে কাসুন্দি তৈরি করতে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। কাসুন্দি হেলাফেলা করে বানানো যায় না। অনেক যত্ন, অনেক ভক্তিভরে উপোসে থেকে কাসুন্দি বানাতে তাকে শিখিয়েছিলেন শাশুড়ি। সেই কাসুন্দি এ-বাড়ি ও-বাড়ি বিক্রি করে দিব্যি তার সংসার চলে যাচ্ছে। আর সেই থেকে তার নাম হয়ে গেল কাসুবুড়ি। কাসুবুড়ির কাসুন্দি।
******
কাল বিকেলে একটু শীত-শীত করছিল। বর্ষার দিনে চাদরে শরীর মুড়ে ঘুমিয়েছিল কাসুবুড়ি। হঠাৎ চোখের বন্ধ পাতায় জলের ঢেউ। বুঝতে না বুঝতে সেই ঢেউ চোখ ছেড়ে এমন উঠে এল যে, তার বয়স আঠারো বছরের বেশি নয়। মিষ্টি হাসল তরুণ, ‘‘কী গো, আমায় চিনতে পারছ, না ভুলে মেরে দিয়েছ?’’
লজ্জা পেল কাসুবুড়ি। এই গলা কানে গেলেই শরীর ঝিমঝিম করে। সে মুখ নিচু করল। তরুণ বলল, ‘‘ওগো, আমি আর কত দিন একা থাকব?’’
চমকে মুখ তুলল কাসুবুড়ি, ‘‘তার মানে?’’
‘‘এ তো সহজ কথা। চলে এসো, চলে এসো আমার কাছে। এখন বেশ অন্ধকার বাইরে, বেরিয়ে এসো। সোজা চলে যাও কুয়োর ধারে। ওখানে আমি আছি। তুমি কুয়োয় ঝাঁপ দিলেই আমার বুকে গিয়ে পড়বে। আহা, মিলন হবে আমাদের!’’ শব্দ করে হাসল তরুণ। হঠাৎ একটি নারীকণ্ঠ শোনা গেল, ‘‘বসে বসে ভাবছ কী? আমার ছেলে যা বলছে, তা শোনো। কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে মরো।’’
আর পারল না কাসুবুড়ি। ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে, বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগল। শ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলে একটা গোঙানি ছিটকে বেরোল তার গলা থেকে। তার পর তার চিৎকার শুরু হল, ‘‘মর মর! আঃ, মরেও কেন যে মরে না! উঃ, এত কাল পরে সোহাগ জানাতে এসেছে! উনি জলের তলায় শুয়ে আছেন আর আমাকে ডাকছেন পাশে নিয়ে শুতে! ছ্যা, ছ্যা! ব্যাটাছেলেগুলো কি মরে গিয়েও বদলায় না! আর বুড়িটাকে দেখো, মরে গিয়েও সমানে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকতে বলত, আমিও বিধবা, তুইও বিধবা। দুই বিধবা যদি একে অন্যকে না দেখে, দেখবে কে? সেই বুড়ি ছাই হয়ে গিয়ে, যত দরদ সব ঝরাচ্ছে ছেলের জন্য! ছ্যা ছ্যা!’’
কাকগুলো চিৎকার করে উঠবেই এই সময়। তা কানে গেলে কাসুবুড়ির গলার তেজ বেড়ে যায়। পৃথিবীর আকাশে যত মৃত মানুষের আত্মা তার কল্পনায় আসে, তাদের বিদ্ধ না করে শান্তি পায় না। আর এই করতে করতে এক সময় পুবের আকাশ ফর্সা হয়ে আসে। স্নান করে শুদ্ধ হয়ে, কাসুন্দির বোতলগুলো রোদ্দুরে দিয়ে লাঠি হাতে মোড়ায় বসে সে। কাকেরা আসে, তারা লাঠিটাকে চেনে। খানিক দূরে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বোতলগুলো দেখে। তাদের দিকে সতর্ক চোখ রাখে কাসুবুড়ি। ওই যে চকচকে দেখতে কাকটা তার দিকে তাকিয়ে এক বার হাঁ করেই বিজ্ঞের মতো ঘাড় ঘোরাল, সেটা যে আঠারো বছরে জলে ডুবে যাওয়া মানুষটার ছদ্মরূপ, তাতে তার কোনও সন্দেহ নেই। রোদ জমছে, খালি মাথায় বসে থানের প্রান্ত সেখানে ঘোমটার মতো তুলে দিতে দিতে ভাবে, তুমি মন্দ হলে আমি সৎ হব না কেন!
******
রোদ নিস্তেজ হওয়ার আগেই বেরোয় কাসুবুড়ি। গোড়ার দিকে এখানকার একমাত্র মুদি দোকানদার হরিপদ এসে বাড়ি থেকে যেমন অর্ডার থাকে, নিয়ে যেত। কাসুবুড়িকে বোতল-পিছু যে দাম দিতে হয়, তার ওপর নিজের লাভ ইচ্ছেমত রেখে বিক্রি করত। বোতলে কোনও লেবেল নেই, তবু প্রচার হয়ে গিয়েছিল—কাসুবুড়ির কাসুন্দি।
ব্যাপারটা মাথায় ঢোকাল ডাক্তারবাবুর ছেলে। সদ্য কলেজে উঠেছে। ছুটির সময় সে বাড়িতে আসে। জ্ঞান ইস্তক দেখে আসছে কাসুবুড়িকে। সে বার শহর থেকে প্যাকেট-ভর্তি ছাপানো কাগজ নিয়ে এল তার বাড়িতে— ‘‘অ ঠাকুমা, দেখো কী এনেছি!’’
‘‘কী রে? ওগুলো কেন আনলি?’’ কাসুবুড়ি অবাক।
‘‘একটা কাসুন্দির বোতল দাও দিকি।’’ ছেলেটা বোতল নিয়ে, তার গায়ে প্যাকেট থেকে কাগজ বের করে লাগিয়ে, টিউবের আঠা সেঁটে দিল। হেসে বলল, ‘‘পড়ে দেখো, কী লিখিয়ে এনেছি!’’
কাসুবুড়ি চোখ বড় করে পড়ল, বোতলের গায়ের কাগজে ছাপার অক্ষরে জ্বলজ্বল করছে, ‘কাসুবুড়ির কাসুন্দি’। ফোকলা দাঁতে কলকলিয়ে হেসে উঠল কাসুবুড়ি, ‘‘ও মা গো, এ কী লিখে এনেছিস! সবাই যে আমার নাম জেনে যাবে!’’
‘‘তাই তো চাই! এত ভাল কাসুন্দি মানুষ খাচ্ছে। অথচ যে বানাচ্ছে, তার নাম কেউ জানবে না, তা কি হয়!’’ ছেলেটা নিজের কীর্তি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল।
বুকের মধ্যে তখন খুশির ঢেউ কিলবিল করছে। নিজের নাম দেখছে আর শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে কাসুবুড়ির। কোনও মতে জিজ্ঞেস করল, ‘‘কত খরচ হল, কী দিতে হবে, বল?’’
ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে, কাসুবুড়ির দুই গালে হাত বুলিয়ে হেসে বলল, ‘‘তুমি অনেক দিন বেঁচে থাকো, এমন সুন্দর কাসুন্দি বানিয়ে যাও, তা হলেই দেওয়া হয়ে যাবে।’’
প্যাকেট রেখে ছেলেটা চলে গেলেও নড়তে পারছিল না কাসুবুড়ি। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কোনও পুরুষ তার দুই গালে এ ভাবে হাত রাখেনি। এমনকী যে লোকটা দুম করে জলে ডুবে গেল, সে-ও না! ঝুঁটি বাঁধা পাকাচুল নিয়ে অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে বসে থাকল কাসুবুড়ি। চৈতন্য ফিরল কাকের কর্কশ চিৎকারে। চমকে তাকিয়ে দ্যাখে, হতচ্ছাড়া কাকটা ছেলেটার এনে দেওয়া লেবেলের প্যাকেটটায় মুখ ঢুকিয়ে, কী আছে তা খুঁজছে। কাসুবুড়ি চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘মর, মর! দূর হ!’’ কাকটা উড়ে গিয়ে কার্নিসে বসলেও তার রাগ কমছিল না। চিৎকার করে বলল, ‘‘জলে ডুবেও জ্বালিয়ে যাচ্ছে আমাকে! হিংসে, এখন হিংসেতে জ্বলেপুড়ে মরছে! মর, মর! আবার মর তুই!’’ কাকটা কী বুঝল সে-ই জানে, উড়ে চলে গেল।
******
বোতলে লেবেল লাগানোর পর কাসুন্দির চাহিদা বেড়ে গেল। গৃহস্থরা বলতে লাগলেন, ‘‘দোকান থেকে আর কেন কিনতে যাব? দোকানদারকে যে দামে দাও তুমি—সেই দামেই না হয় আমাদের দিও, একটু সাশ্রয় হবে।’’
এতে দোকানদার রেগে গেলেও বিক্রি বাড়ল কাসুবুড়ির কাসুন্দির। এখন তাকে আর টাকার চিন্তা করতে হচ্ছে না। ঠিক সময়ে কাসুন্দির উপকরণ কিনে ফেলতে পারলে ডালভাতের চিন্তা করতে হবে না।
কিছু দিন থেকেই মনে হচ্ছিল, ডাক্তারবাবুর বাড়িতে যাওয়া তার কর্তব্য। শেষ পর্যন্ত দু’বোতল কাসুন্দি নিয়ে সে ডাক্তারবাবুর স্ত্রীর কাছে পৌঁছে গেল, ‘‘আপনার ছেলের জন্য আমার কাসুন্দির বিক্রি বেড়েছে। তাই এই দুটো রেখে দিন।’’
‘‘ও মা, তাই! শুনেছি খুব ভাল কাসুন্দি বানান আপনি। কত দাম?’’
‘‘ছি ছি! আপনার ছেলের জন্য ব্যবসা বেড়েছে আমার, আমি কি দাম নিতে পারি?’’
অনেক তর্কবিতর্কের পর একটা বোতলের দাম নিতে রাজি হল কাসুবুড়ি। দ্বিতীয়টি সে ডাক্তারবাবুর ছেলেকে উপহার হিসেবে দিচ্ছে। ভদ্রমহিলা হেসে গ্রহণ করলেন।
******
সেই রাতেই তৃতীয় প্রহরে যখন ঘুম ভাঙল, তখন চোখ খুলতে গিয়েও না খুলে শুয়ে রইল কাসুবুড়ি। অন্ধকার। কোথাও নদীর জলের ঢেউ নেই। এ যাবৎকাল শুনে-আসা কণ্ঠগুলোর আজ কোনও অস্তিত্ব নেই। খুব খুশি হল কাসুবুড়ি। আবার ঘুমের চেষ্টা করতেই একটু একটু করে নরম তন্দ্রা যেন মশারির মতো তাকে ঘিরে ফেলল। আর তখনই সেই উদ্দাম জলরাশি ভেদ করে একটি আঠারো বছরের তরুণ উঠে এল। তার মুখ ছায়া-ছায়া। দু’হাত বাড়িয়ে সে বলছে, ‘‘আয়, কাছে আয়, তোর দুই গালে হাত বুলিয়ে দিই। তোর শুকনো গালদুটো নরম করে দিই। আয়, কাছে আয়।’’
চিৎকার করে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসল কাসুবুড়ি। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, বুকে তীব্র যন্ত্রণা। কোনও মতে নিজেকে সামলে কাসুবুড়ি ছুটল নদীর দিকে। আকাশ তখনও ফরসা হয়নি।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সবাই যখন চিৎকার করে কেঁদেছিল, তখন সে পাথর হয়ে বসে ছিল। কেউ এক জন বলেছিল, ‘‘মুখপুড়ি বুঝতেই পারছে না, ওর জীবনটা সাদা হয়ে গেল।’’
কাসুবুড়ি আজ কাঁদল। ডুকরে ডুকরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy