আবেশে চলিলা প্রভু জগন্নাথ মন্দিরে।জগন্নাথ দেখি প্রেমে হইলা অস্থিরে॥
জগন্নাথ আলিঙ্গিতে চলিলা ধাইয়া।মন্দিরে পড়িলা প্রেমে আবিষ্ট হইয়া॥
ভগবানকে দেখে ভক্তের কী দশা হয়, চৈতন্যদেবের জগন্নাথ দর্শন প্রসঙ্গে উপরের কথাগুলো ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-এ লিখেছিলেন কৃষ্ণদাস কবিরাজ। জগন্নাথদেবকে দেখলে কৃষ্ণপ্রেমে আকুল শচীনন্দনের এমন ভাব আসারই কথা। কিন্তু সাধারণ মানুষজন, তাঁদের কী অবস্থা হত? আঠারনলা ব্রিজ পেরনোর সঙ্গে সঙ্গেই জগন্নাথদেবের মন্দিরের চূড়া দেখে যাত্রীরা আনন্দে বিভোর হয়ে উঠতেন। ‘পুরী যাইবার পথে’ বইয়ে চুণীলাল বসু লিখছেন, “অনাহার, অনিদ্রা, অভাব, দারুণ পথকষ্ট, রোগ, শোক, ভয়, ভাবনা— এসকলই মুহূর্ত্তের নিমিত্ত বিস্মৃত হইয়া চিত্রার্পিতের ন্যায় আত্মহারা হইয়া তাহারা অনিমেষ লোচনে ধ্বজার দিকে চাহিয়া থাকে এবং ভূম্যবলুণ্ঠিত হইয়া শ্রীজগন্নাথ দেবের পবিত্র নাম উচ্চারণপূর্ব্বক নমস্কার করিতে থাকে। যে ঈপ্সিতের দর্শনাভিলাষের বাসনা আজীবন হৃদয়ে পোষণ করিয়া আসিতেছিল, আজি তাহা পূর্ণ হইবার সম্ভাবনা দেখিয়া তাহাদিগের হৃদয়, আশা ও আনন্দের তরঙ্গ কিরূপে উদ্বেলিত হইতে থাকে, তাহা ভক্ত ভিন্ন অপর কাহারও বুঝিবার বা বুঝাইবার শক্তি নাই।” আঠারো শতকে রায়গুণাকরও তো গান লিখে মনের সাধ মিটিয়েছিলেন, ‘চলো চলো যাই নীলাচলে/ (রে ওরে ভাই) ঘটাইল বিধিভাগ্যবলে...’ তীর্থাভিলাষী বাঙালির যাওয়ার জায়গাগুলো ছিল মূলত গয়া, কাশী, বৃন্দাবন, পুরী বা প্রয়াগ। তবে পুরীকে কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। বড়লোকদের পাশাপাশি নিম্নবিত্তরাও যেতেন। রাজা বা রানিরা গরিবগুর্বোদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা বেশি পছন্দ করতেন। তাতে নাকি পুণ্য হয় বেশি। অনেকেই যেতেন ধনীর সফরসঙ্গী হয়ে। ‘সমাচার দর্পণ’ ১৮১৫-র ১৬ জুলাই লিখল, ‘মহিষাদলের রানী ও শ্রীযুত বাবু গুরুপ্রসাদ বসু শ্রীক্ষেত্রে যাইয়া প্রত্যেকে পাঁচ২ শত করিয়া এক সহস্র দীন দরিদ্রের’ জগন্নাথ দর্শনের বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন।
জগন্নাথের শ্রীমুখ দর্শন করে ফেরার পথে অনেকের পঞ্চত্বপ্রাপ্তিও ঘটত। ১৭ এপ্রিল, ১৮২৪- এর ‘সমাচার দর্পণ’ বলছে, শ্রীক্ষেত্রের যাত্রীদের ও মহামহাবারুণীযোগে গঙ্গাস্নান করে যারা ফিরে যাচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এত লোক স্বর্গবাসী হয়েছিলেন যে ‘মড়ার গন্ধেতে পথে চলা অতিকঠিন’ হয়ে গিয়েছিল।
‘সোমপ্রকাশ’ (১৩ জুলাই, ১৮৬৩) বলছে, এ বারে রথের জন্য অনেক জগন্নাথযাত্রী ‘কালগ্রাসে পতিত হইয়াছে’। তাঁদের মধ্যে কেউ পুরীতে, কেউ বা রাস্তায় অসুস্থ হয়ে, আর কেউ বৈতরণী নদীগর্ভে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। সরকার উদাসীন। কোনও কালেই তীর্থযাত্রাকে তারা সুনজরে দেখেনি। মিশনারি থেকে দেশীয় মানুষজনের একাংশও তাই। মিশনারিদের কাছে জগন্নাথক্ষেত্র তো ছিল কলেরার মতো রোগের আঁতুড়ঘর। আর এই কলেরার দাপট এতটাই ছিল যে, কোনও কোনও বছর জগন্নাথদেবের রথ টানার জন্য লোকই পাওয়া যেত না। ২৮ জুলাই ১৮২১-এর ‘সমাচার দর্পণ’ বলছে, “জগন্নাথ ক্ষেত্রে পূর্ব্ব বৎসর যাত্রিক লোক অতিন্যূন গিয়াছিল তাহাতে সেখানকার অধিকারিরা ও আর২ লোকেরা জ্ঞান করিয়াছিল যে আগামি বৎসর লোক অধিক হইবেক। কিন্তু এইক্ষণে সমাচার পাওয়া গেল যে পূর্ব্ব বৎসর হইতে এই বৎসর অতিন্যূন লোক হইয়াছিল। এবং দুর্ভিক্ষ ও ওলাউঠা রোগের দ্বারা সেখানকার লোক বিধ্বস্ত হইয়াছে এই বৎসর সেখানকার কোন লোক জগন্নাথ দেবের রথ টানে নাই ও সেখানকার ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা অন্য কোন উপায়দ্বারা রথযাত্রা সমাপ্ত করিয়াছেন।”
শুধু কি মড়ক? দুর্ভিক্ষের কারণেও তো জগন্নাথ দর্শনে বঞ্চিত হয়েছে বাঙালি। ১৮ মে ১৮৬৮-র ‘সোমপ্রকাশ’ বলছে, ভয়ানক দুর্ভিক্ষের জন্য দু’বছর জগন্নাথক্ষেত্রে যাত্রী যাওয়া বন্ধ ছিল। প্রত্যেক দিন শয়ে শয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, তার উপর খাদ্যসঙ্কট— এই সব শুনে জগন্নাথের অনেক ভক্তের নাকি ‘ভক্তিরস শুষ্ক হইয়া গিয়াছিল’। অনেকে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু সরকার সতর্ক করাতে যেতে পারেননি। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কড়া পাহারার জন্য অনেকে আবার উলুবেড়িয়া থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তা নিয়ে কেউ অভিযোগ করা তো দূরের কথা, অনেকে নাকি আহ্লাদিতও হন। ইতিহাসের ধারা তো একই। একশো বছর আগে কলেরা, মহামারি, দুর্ভিক্ষের জন্য যাত্রী কম যাওয়াতে রথের দড়িতে টান পড়ল না, আবার দুর্ভিক্ষের দাপটে প্রায় দু’বছর যাত্রী যাওয়াই বন্ধ ছিল পুরীতে। ঠিক যেন বছর দুই আগে কোভিডের চোখরাঙানিতে যাত্রী বা পর্যটকশূন্য পুরীর রথযাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয়।
কলেরার হাত থেকে নিজের সেনা বাঁচাতে অবশ্য যাত্রী হেনস্থায় সরকার বিশেষ তৎপর ছিল। ‘উৎকল দীপিকা’ বলছে, জগন্নাথের যাত্রীরা পাছে সংক্রামক রোগ নিয়ে আসে এই ভয়ে কটকের ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কটকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। ৩০ বছর পরও ছবি বদলায়নি। ১২৯৫ বঙ্গাব্দে ‘ভ্রমণ-বৃত্তান্ত’ লেখক সুপ্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরী কটকে পৌঁছে দেখলেন, যাত্রীদের সেখানে ঢোকার অধিকার নেই। তাদের জন্য কটকের চার মাইল দূরে নয়াবাজার তৈরি হয়েছে। কলেরার দাপটে তীর্থযাত্রীদের সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতা অনেকেই ভাগ করে নিয়েছিলেন। দেবীপ্রসন্ন লিখছেন, পুরীর রাস্তায় যখন বসন্ত বা কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটে তখন সৎকার করার লোক থাকে না। রাস্তার ধারে ফেলে চলে যায়। কিন্তু মানুষের কোনও হেলদোল ছিল না। বিশেষ করে রথের সময়। দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘চতুর্ধাম ও সপ্ততীর্থ’-তে রথের সময় পুরীতে প্রায় দু’লক্ষ যাত্রী উপস্থিত হয়। কারণ ধর্মপ্রাণ হিন্দু নরনারীর বিশ্বাস, রথে জগন্নাথদেবের দর্শন লাভ করলে আর জন্মাতে হয় না। তাই তো ভয় না দেখিয়ে কেউ কেউ আবার পুরীযাত্রীদের একটু সতর্ক হতে বলেছিলেন। যেমন অশ্বিনীকুমার চট্টোপাধ্যায়, ‘পুরী-সহচর’ গ্রন্থে। পুরীতে জল ও তৈরি খাদ্য সাবধানে ব্যবহার করতে বলেছেন। চুণীলাল বসু নিদান দিয়েছেন, “পুরীর ন্যায় যাত্রী-বহুল তীর্থস্থানে পানীয় জল না ফুটাইয়া পান করা উচিত নহে। জলের দোষে পুরীতে রক্তামাশয়, কলেরায় আক্রান্ত হতে পারে।”
শুধু কলেরা নয়, ভিলেন তো ছিল আরও অনেকেই— অনাবৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। এ সবের জেরেও অনেক যাত্রী না ফেরার দেশে চলে যেতেন। ২২ জুন, ১৮১৯-এর ‘সমাচার দর্পণ’ তাই লিখল, ‘অন্যান্য বছরের থেকে এই বছর’ অনেক লোক শ্রীপুরুষোত্তম ক্ষেত্রে রথযাত্রার জন্য গিয়েছে বটে কিন্তু অনাবৃষ্টি, প্রচণ্ড গরম এবং খাদ্যদ্রব্য দুর্মূল্য হওয়ায় মনে হচ্ছে যে, তাদের সবাই ফিরে আসবে না। রথের সময় খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে সব জিনিসেরই দাম যে আকাশছোঁয়া হত, সে তো অশ্বিনীকুমার চট্টোপাধ্যায় নিজ মুখে স্বীকার করেছেন— “সমস্ত জিনিসপত্রের মূল্য উড়িষ্যাবাসী প্রথমে ৩/৪ গুণ হাঁকিয়া বসে, পরে একটা মাঝামাঝি রফা করিয়া সন্তুষ্ট হয়।... রথযাত্রার সময় সকল জিনিসই অগ্নিমূল্যে বিক্রয় হয়।” রমাপদ চৌধুরী ‘হারানো খাতা’-য় লিখেছিলেন আট দশ-বছর বয়সে পুরীতে সারি সারি ঘরে বেলেপাথর বা কালো পাথরে চোখের সামনে খোদাই হতে দেখেছেন ভুবনেশ্বর মন্দিরের অলস কন্যা ও পত্রলেখার রেপ্লিকা। নামমাত্র দাম, তবু খদ্দের জুটত না। খদ্দের জুটত না বলেই কি ‘উড়িষ্যাবাসীরা’ রথেরসময় মওকা বুঝে জিনিসপত্রের দাম তিন-চার গুণ বেশি হাঁকত?
সে কালে পুরী যাওয়া এ কালের মতো অত সহজ ছিল না। রেল চালু হওয়ার আগেও মানুষজন পায়ে হেঁটেই যেতেন। তাই বলা হত, ‘যদি থাকে পায়ে বল, তবে চলো নীলাচল’ বা ‘হাতে কড়ি পায়ে বল।/ তবে চল নীলেচল॥’ হাঁটাপথের বিপত্তি ছিল আবার অন্য রকম। যাওয়ার সময় অপরিচিত মানুষের দ্বারা লুঠ হয়ে সর্বস্বান্ত হত মানুষ। কখনও কখনও খাবারে ধুতরোর বীজ মিশিয়ে যাত্রীদের হত্যাও করা হত। সে কালের খবরের কাগজে সে রকম সংবাদ রাশি রাশি। ১৮৩৭-এর ৪ ফেব্রুয়ারি ‘সমাচার দর্পণ’ জানাচ্ছে, “সকলেই অবগত আছেন যে শ্রীক্ষেত্র তীর্থে যাঁহারা যাত্রা করেন তাঁহাদের অনেক প্রায় প্রত্যাগত হন না।” অনুমান করা হয় যে, রাস্তার খানিক দূরে দূরে অপেক্ষমাণ ঠগেরা ওই যাত্রীদের নানা ছলে ভুলিয়ে ‘শ্বাসরোধ করত হত্যা করিয়া পরে সর্ব্বস্ব লুটিয়া লয়।’
অনেকে আবার জলপথে পুরী পৌঁছতেন। কলকাতা থেকে গেঁওখালি। সেখান থেকে ছোট খালের মধ্য দিয়ে স্টিমার বা নৌকাযোগে কটক। আর সমুদ্র দিয়ে যেতে হলে কলকাতা থেকে জাহাজে চাঁদবালি, সেখান থেকে খালপথে কটক। কটক থেকে ‘জগন্নাথ সড়ক’ দিয়ে পালকি, গরুর গাড়ি, অথবা পায়ে হেঁটে পুরী। প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। সরকারি প্রতিবেদন বলছে, ১৮০৬-এ স্রেফ আঠারনলা ঘাট দিয়েই পুরী ঢুকেছিলেন ১,৮৮,০০০ জন। বিপদের অন্ত ছিল না। ১৮৮৭-তে প্রায় হাজারখানেক আরোহী-বোঝাই ‘স্যর জন লরেন্স’ নামক জাহাজ সমুদ্রপথে পুরী যাত্রাকালে জলে ডুবে যাওয়ার ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ তো লিখেই ফেললেন আস্ত এক কবিতা— ‘সিন্ধু তরঙ্গ’। ভক্তহৃদয়ে অবশ্য এ সব রেখাপাত করেনি। ১৮৮২-র ২৫ ডিসেম্বর ‘সোমপ্রকাশ’ লিখল, “পুরী পর্যন্ত রেলওয়ে প্রস্তুত হয়, ইহা অনেকেরই ইচ্ছা, পথ দুর্গম বলিয়া অনেক লোক ইচ্ছা সত্ত্বেও উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে বিশেষতঃ জগন্নাথ ক্ষেত্রে যাইতে পারে না। অতএব গবর্ণমেন্ট এরূপ স্থলে রেলওয়ে নির্মাণ করিলে লাভবান হইবেন এবং সাধারণ লোকের যে বিশেষ সুবিধা হইবে, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই।” বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের ভেতর দিয়ে রেলপথ নির্মাণ করতে হলে বড় বড় নদী বাঁধতে হয় বলে সরকার প্রাথমিক ভাবে এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন, পরে সেখানকার রেলওয়ে কমিটির সেক্রেটারি কুমার বৈকুণ্ঠনাথ দে সরকারের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য দরখাস্ত করেন। মিশনারিরা গালাগালি দিলেও কোম্পানি কিন্তু শেষ অবধি সার কথাটা বুঝে রেলপথ তৈরি করে। লাভ বুঝতে কি আর বেনিয়াদের দেরি হয়!
রেল হওয়ার পর যাত্রী সংখ্যা বাড়ে। ১৩১৪ বঙ্গাব্দে দ্বিতীয় বার একেবারে রেলে চড়ে শ্রীক্ষেত্রে পৌঁছে গণেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ভ্রমণ কাহিনী (উৎকল)’-এ লিখছেন ‘এখন’ বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানির রেল জগন্নাথ দর্শন সহজ করে দিয়েছে। যেখানে তাঁরা তেরো দিনে পৌঁছেছিলেন, সেই রেল কোম্পানি এখন যাত্রীদের তেরো ঘণ্টায় শ্রীক্ষেত্রে পৌঁছে দেয়।
যাত্রী সমাগম বাড়লে মানুষের কিছু অসুবিধেও জুড়েছিল। অম্বুজাসুন্দরী দাস তো ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ (ফাল্গুন ও চৈত্র, ১৩১০ বঙ্গাব্দ)-য় রেল হওয়ায় শ্রীক্ষেত্রের অপকারিতা বিষয়ক এক নিবন্ধই লিখে ফেলেন। বলছেন শ্রীক্ষেত্রে রেল হওয়ায় দেশের লোকের কিছু সুবিধা যেমন হল, তেমনই অধিক লোকসমাগমে শ্রীক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। বিশেষ করে যোগের সময় শ্রীক্ষেত্রের দুর্দশা এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। প্রত্যেক বার রথের সময় মহামারি। প্লেগটাই বাকি ছিল, দোলে প্লেগ দেখা দিলে ষোলো কলা পূর্ণ হল।
তীর্থ নিয়ে বদনাম সত্ত্বেও পুণ্যার্থীদের বাগে আনা যায়নি। তাঁরা ছিলেন বড্ড বেপরোয়া। বনমোহিনী দাসী পুরী যাবার পথে জলে পড়ে মারা যান, সংবাদপত্রে লেখা হল, “জগন্নাথক্ষেত্রে যাইতে যে কত বিপদ। তথাপি লোকেরা বুঝিয়া বুঝেনা।” লালবিহারী দে-র সেই অলঙ্গার কথা মনে পড়ে? জগন্নাথধামের পাণ্ডার দূত বা ‘সেথো’ গ্রামে আসা ইস্তক সে প্রায় উন্মাদিনী। যাওয়ার আগের দিন বেচারার ঘুম ছুটে গিয়েছিল। শেষ অবধি ফেরার পথে কলেরায় বিলীন হলেন তিনি। তীর্থযাত্রায় মেয়েদের এই উন্মাদনা লক্ষ করেই ‘সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়’ ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৯-এ লিখল, “আমাদিগের দেশের মাগীরা শ্রীক্ষেত্র ও গঙ্গাসাগর এই দুইটী তীর্থস্থান ইজারা করিয়া লইয়াছে।” বাস্তবিকই শ্রীক্ষেত্রকে প্রায় লিজ়ে নিয়ে ফেলেছিলেন মেয়েরা। কেউ আবার পালাতেন কোলের ছেলেকে রেখে। খবরের কাগজ তুলোধোনা করত এদের। কোলের ছেলে ফেলে পালিয়ে আসত বলেই তো ‘জগন্নাথের কিবে লীলে/ কোলের ছেলে যায় গো ফেলে’-র মতো প্রবাদের জন্ম। আর ‘সোমপ্রকাশ’ (১৮ মে, ১৮৬৮) লিখল, “কেহ কেহ কুসংস্কার নিবন্ধন গমন করে; কতকগুলি অন্তঃপুরের বন্ধনছেদন করিয়া স্বাধীন বায়ু সেবন করিতে যায় এবং অনল্পসংখ্যক বালবিধবা তীর্থের নামে কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করিবার উদ্দেশে জগন্নাথদর্শনে যাত্রা করে।”
অনেকে আবার বারবনিতা নিয়ে ফূর্তি করতেও পুরী যেতেন। স্টিমারে পুরী যাত্রাকালে অন্তত তেমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরীর। লিখছেন, “কলিকাতার সৌখিন বাবুরা বেশ্যাদিগকে লইয়া তীর্থযাত্রা করিয়াছেন এবং চাঁদবালীর যাত্রী নিবাস সকলকে পবিত্র করিতেছেন... অনেক লোক তীর্থের ভান করিয়া আসিয়া বিদেশে নানারূপ স্বেচ্ছা-বিহার ও এইরূপ আমোদ প্রমোদ করিয়া দেশে ফিরিয়া যায়।” অর্থাৎ তীর্থে এলে যেন সাত খুন মাফ। সেখানে যেন যা খুশি করা চলে! শ্রীক্ষেত্রকে অনেকেই ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করেছেন। যেমন আঠারো শতকে, সিরাজদৌল্লার অন্যতম শত্রু ঘসেটি বেগমের ঘনিষ্ঠ, ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ ‘পুরুষোত্তমধাম দর্শন করিবেন’ বলে রটিয়ে সপরিবার নৌকা করে বিপুল ধনরত্ন নিয়ে পৌঁছলেন কলকাতায়। পুরীমুখো কিন্তু হননি।
অনেককেই আবার ভুলিয়ে বা ফুসলিয়ে নিয়ে আসত কখনও পাণ্ডা বা তার দূত ‘সাথুয়া’ বা সেথো। হারানচন্দ্র রাহা তাঁর বই ‘সচিত্র ভারত ভ্রমণ’-এ দেখিয়েছেন, কী ভাবে পুরীর পাণ্ডারা ভারতবর্ষের সর্বত্র গিয়ে জগন্নাথের মাহাত্ম্য কীর্তন করত। ভুলিয়ে নিয়ে আসা যাত্রীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক, বেশির ভাগই অভিভাবকের অনুমতি না নিয়ে পাণ্ডার সঙ্গে পালিয়ে আসা। কারও কারও আবার পথেই ভবলীলা সাঙ্গ হত। কখনও শ্রীক্ষেত্র দেখানোর নাম করে স্বামীই পৌঁছে দিতেন যমক্ষেত্রে। অনুমান করা যায়, এতে রাস্তাঘাটের রোগ, মারি, দুর্বৃত্তদের ঘাড়ে দোষ চাপানো বিশেষ সহজ হত। ৮ মে ১৮১৯-এর ‘সমাচার দর্পণ’ বলছে, জগন্নাথ দেখাবে বলে নিয়ে যাওয়ার পথে এক জন লোক নিজের বৌকেই খুন করেছিল।
থাক সে কথা এখন। তন্ময় হয়ে মানুষ সাথুয়াদের মুখে শুনতেন মাহাত্ম্য: পুরীর সমুদ্রকূলে গড়াগড়ি দিলে ব্রহ্মহত্যার পাপ ক্ষয় হয়, মহাপ্রসাদ স্বয়ং মা লক্ষ্মী রাঁধেন, রাঁধুনি চাল ডাল তরিতরকারি রাত্রিকালে রন্ধনশালায় রেখে আসে, কী আশ্চর্য সকালে দেখে মহাপ্রসাদ প্রস্তুত! এর পরেও কি যাত্রীদের আটকে রাখা সম্ভব? আসলে মেয়েদের কাছে তীর্থ তো ছিল মুক্তি। কচি বিধবার একটু তরুণ পাণ্ডার (পডুন পরপুরুষের) সান্নিধ্য লাভ, কয়েক দিনের জন্য একটু নিজের মতো করে বাঁচা।
মিশনারি থেকে দেশীয় মানুষদের একাংশের কাছে পুরী ছিল হিট লিস্টে। পুরীর সবই তাদের অসহ্য ঠেকত। পুরীর অপরিচ্ছন্নতা, পানীয় জলের অভাব, পুকুরসর্বস্বতা, সেই জলেই শৌচকর্ম, তাতেই পিপাসা মেটানো। অশ্বিনীকুমার চট্টোপাধ্যায় শোনালেন পুরী শহরের ভিতরের পরিবেশ কতটা খারাপ। কেবল সমুদ্রতট বেশ স্বাস্থ্যপ্রদ। আর ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘সাহারা’ গ্রন্থের ‘পুরী প্রবাস’ অংশে লিখেছিলেন তাঁর শোনা কথা, “এ স্থান উদরাময়, আমাশয় প্রভৃতি রোগের নিত্য লীলাস্থল, আর রথযাত্রার অব্যবহিত পরেই বিসূচিকা সংক্রামক ও সংহার-মূর্ত্তিতে দেখা দিয়া ভক্ত যাত্রীদিগকে সদ্যঃ সদ্যঃ মুক্তি দান করে।”
তবে সাহেবি কায়দায় স্বাস্থ্যোদ্ধারে যাওয়া লোকজনের কাছেও যে জায়গাগুলো ক্রমে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছিল পুরী তার অন্যতম। ‘দী-পু-দা’— যদিও দী, মানে বীরকুল ওরফে দীঘার আকর্ষণ বাঙালিদের কাছে অনেকটা পরের। বাকি থাকে পুরী আর দার্জিলিং। অস্বাস্থ্যকর জায়গা বলে মিশনারি আর সাহেবদের সুরে বাঙালির একাংশ যে পুরীকে গালাগালি করতে ছাড়েনি, সেই পুরীতে ফি বছর ডাক্তারের পরামর্শ মতো বিশ শতকের প্রথমার্ধে ‘বায়ু’ পরিবর্তনের জন্য যাওয়া বঙ্গসন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছিলেন ‘পরিব্রাজকের ডায়েরি’ গ্রন্থের রচয়িতা নির্মলকুমার বসু। ছোটবেলায় কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর শরীর ছিল ছিপছিপে ও দুর্বল। প্রত্যেক দিন ১০-১২ ক্রোশ হেঁটে চিঁড়ে, মুড়কি, দুধ, ইত্যাদি খেয়ে তাঁর শরীর সেরে উঠেছিল এই হাঁটাপথে শ্রীক্ষেত্র যাওয়ার পথে। অশ্বিনীকুমার চট্টোপাধ্যায় আরও এক ধাপ এগিয়ে শোনালেন কোন সময়টা এই বায়ু পরিবর্তনের জন্য ভাল। বলছেন, ‘হাওয়া বদলাইবার’ পক্ষে শীতকাল সর্বাপেক্ষা ভাল। গরমকাল মন্দ নয়। তবে বর্ষাকাল সব থেকে খারাপ। বেশি দিন পুরীতে থাকাও ভাল নয়। তাতে আমাশা হওয়ার আশঙ্কা। যাঁদের পেটের ব্যামো, অম্বল, আমাশা, অর্শ, বাতরোগ আছে তাঁদের পক্ষে পুরী ভাল নয়। যাঁরা যক্ষ্মা, কাশি, সর্দিরোগে ভুগছেন তাঁদের পক্ষে খুব ভাল। এরই পাশাপাশি পুরীতে এসে কী করা উচিত আর কী অনুচিত সেটাও বলতে ভোলেননি চাটুজ্যেমশাই। পরামর্শ দিলেন, পুরীতে এলে সকাল বিকেল বেড়ানোর, না হলে শরীর ভাল থাকবে না। রোদের তাপ ভাল নয়, সামান্য একটু পেট খারাপ হলেই পুরী ‘পরিত্যাগ করিবেন’।
এ ভাবেই পুরী বাঙালির অন্যতম ‘পপুলার ডেস্টিনেশন’ হয়ে উঠেছিল। জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে ভ্রমণসাহিত্যের যেমন অবদান আছে ঠিক ততটাই বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়েরও। হ্যান্ডবুক বার করছে, ফলাও করে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, টুরিস্ট টিকিটের ব্যবস্থা করছে, সঙ্গে ছাড়ও দিচ্ছে। বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে হোটেল ছাড়া বিজ্ঞাপনে বিশ শতকের গোড়ার দিকে পুরীতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেলের খবরও পাওয়া যায়। ভিক্টোরিয়া ক্লাব, প্যারাডাইস লজ— এমন ছিল সব নাম। এদের ভৌগোলিক অবস্থানও ছিল গুরুত্বপূর্ণ, তীর্থযাত্রীর ভিড়ে ঠাসা বড়দাণ্ড (বর্তমান গ্রান্ড রোড), বা মন্দির-পাণ্ডা অধ্যুষিত দোলমণ্ডপ সাহি, হরচণ্ডী সাহি বা মনিকর্ণিকা সাহির মতো জায়গা নয়। ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমুদ্রকূল, বিজ্ঞাপনে যা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া থাকত। অনেকেই যেতে লাগলেন। ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে পুরী গেলেন। এক, দু’মাস ধরে মাথা ঘোরার রোগে ভুগে ভাবলেন পুরীর নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও সমুদ্রের বাতাসে উপকার হবে। তাই গেলেন শরীর সারাতে। দুই, অনেক দিন ধরেই জগন্নাথ আর সমুদ্রকে দেখার প্রবল সাধ। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। গণেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় অনেক দিন ধরেই প্ল্যান ফাঁদছিলেন এক বার শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করবেন, কিন্তু কোনও ভাবেই তা সফল হচ্ছিল না। শুনলেন রথযাত্রা উপলক্ষে তাঁর গর্ভধারিণী এবং প্রতিবেশীদের অনেকেই ঠাকুরবাড়ি (শ্রীক্ষেত্র) যাবেন, তিনিও জুটে গেলেন সেই দলে।
অগুনতি বাঙালির কাছে পুরী ছিল নিজের দেশের মতো। ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে তাঁদের মন ভরত না। ঠিক যেমনটা হয়েছিল মন্মথনাথ দে-র। ‘দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ’ বইতে লিখছেন, গোটা দক্ষিণ ভারত ঘুরে যখন পুরী এলেন তখন মনে হল “পুরীতে উপস্থিত হইয়া যেন নিজদেশে আসিয়াছি বলিয়া কতকটা শান্তি পাইলাম।” পুরী ভ্রমণ তাঁর প্রথম নয়, আগেও অনেক বার এসেছিলেন, কিন্তু সাধ মেটেনি। আসলে পুরীর একটা আলাদা টান আছে, যে কারণে বাঙালি বার বার ছুটে যান। আজও। এত এত ট্রেন নিত্য যাচ্ছে কলকাতা থেকে, কিন্তু সহজে টিকিট মেলা দুষ্কর। তাই তো মন্মথনাথ স্বীকার করলেন, “ইহার যে কি এক আকর্ষণী শক্তি আছে, যাহাতে হিন্দু বা অহিন্দু যে কেহ হউক একবার আসিলে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যলিপ্সু হইয়া বা হিন্দুর গৌরবপূর্ণ অক্ষয়কীর্ত্তি দর্শন মানসে, সকলেই পুনঃ পুনঃ আসিতে বাধ্য হয়।” অনেকের আবার পুরী থেকে ফিরলে যেন ‘স্টেটাস’ বাড়ত। ‘উত্তরায়ণে গঙ্গাস্নান’-এ শরৎকুমারী দেবী লিখছেন, “রক্ষা সামান্য একটু লেখাপড়া জানিত, একবার শ্রীক্ষেত্রে গিয়াছিল। শ্রীক্ষেত্র হইতে ফিরিয়া আবধি আপনাকে একজন বহুদর্শিনী সর্বজ্ঞ বলিয়া মনে করিত।” আসলে মিশনারিদের অপপ্রচার, কলেরা, বসন্ত কিছুই পুরী সম্পর্কে বাঙালিকে টলাতে পারেনি, রেল চালুর কত কাল আগে, কেবল ১৮১৯-২০’তেই ১,৩১,০০০ যাত্রী শ্রীক্ষেত্রে গিয়েছিলেন হাঁটার কষ্ট উপেক্ষা করেই।
সবার কপালে জগন্নাথদর্শন ছিল না। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ঠাকুমা এক বার শ্রীক্ষেত্রে গেলেন। কলকাতা থেকে চাঁদবালি স্টিমারে গিয়ে তার পর হাঁটাপথে পৌঁছলেন। সুনীতিকুমার বলছেন, এমন চমৎকার করে সে সবের গল্প ঠাকুমা করতেন, ছেলেবেলায় মনে হত তাঁর সঙ্গে আমরাও যেন শ্রীক্ষেত্র দেখে এসেছি। মুগ্ধ হয়ে মানুষ শুনতেন জগন্নাথ দেখে ফেরা মানুষের অভিজ্ঞতা, আর ফেলতেন দীর্ঘশ্বাস। কবে তাঁর জীবনে আসবে সে মাহেন্দ্রক্ষণ, এই ভাবনায়।
অনেক কাল আগে বঙ্গোৎকল সংস্কৃতি নিয়ে সাঁতরাগাছিতে এক আলোচনাসভায় থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। আজও মনে আছে, আশি ছুঁই-ছুঁই জনৈক ভদ্রলোক চমৎকার একটি কথা বলেছিলেন। ছেলেবেলায় তিনি শুনেছিলেন হাওড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বৃদ্ধারা বছরভর এক পয়সা দু’পয়সা করে জমাতেন বারুণীর সময় গঙ্গাস্নানে যাওয়ার জন্য। ও দিকে সদ্য বেঙ্গল নাগপুর রেলপথ বসেছে। গঙ্গাস্নান সেরে ফেরার পথে তাঁরা যখন দাসনগরে ওই রেলপথটি ডিঙোতেন, তখন লোহার পাতগুলোতে মাথা ঠুকতেন আর বলতেন— “এ আমাদের ঠাকুরবাড়ির লাইন গো, এজন্মে তো হলো না, পরের জন্মে যদি যেতে পারি!” সত্যি তো। এর পরেও কি আর বাঙালির জগন্নাথপ্রেমের প্রমাণ লাগে? আমাদের এখানকার মহিষাদল, মাহেশ বা ইস্কনের রথ বাদ দিলাম। পশ্চিমবঙ্গের পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট বাচ্চারা ফি-বছর যেমন সাজিয়েগুছিয়ে রথ বার করে, তেমনটি ওড়িশাতেও দেখা যায় না।
শেখ মকবুল ইসলামের ‘বাংলার জগন্নাথ সাহিত্য’ পড়লেই বোঝা যায়, কত প্রাচীন এই ভক্তি। জগন্নাথধাম থেকে আনা একটি সামগ্রীর তো নামই হয়ে গেল ‘ক্ষেত্তুরে বাটি’। ফি-বছর নিমাইকে দেখতে ভক্তরা নীলাচল যেতেন বলেই তো কৃষ্ণদাস লিখেছিলেন, “গৌড়দেশের ভক্তগণ প্রত্যব্দ আসিয়া।/ পুনঃ গৌড়দেশে যায় প্রভুকে মিলিয়া॥” তিনি যে বাঙালির প্রাণনাথ, সব জ্বালা জুড়তে সেখানেই তো দৌড়তেন মানুষ। যেমন দৌড়েছিলেন কেশব সেন-জননী সারদাসুন্দরী, ‘প্রিয়তমা ননদ বিন্দুর মৃত্যুশোক ভুলতে’। বাংলা পাঁজিতে আজও লেখা থাকে অমুখ তারিখ ‘শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা’। এ কালে সেই রথযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে একটু দ্বিধা আছে বটে, তবে সেই করোনা-ভয় থেকে তো জগন্নাথ ওরফে ওড়িশার আমজনতার ‘কালিয়া’ই তরাবেন। ভয়ের এ পারে ত্রস্ত জনগণ, আর ও পারের বেপরোয়া মানুষজন— সকলকেই মেলাবেন তিনি, মেলাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy