Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Senior Citizen

সিনিয়র সিটিজ়েন

মলয়বাবু উঠোনের বকুল গাছটির দিকে তাকান, “দেখবি, রাতে যখন বকুল ফুল ফোটে, মনে হবে গাছে হাজার তারা ফুটে আছে।”

ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল

ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল

বিক্রম অধিকারী
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

দাদান, তোমার চুল তো বরফের মতো সাদা!” একটা বয়সের পর মানুষ বয়স লুকোয় না, বয়স নিয়ে গর্ব করে। মলয়বাবু হাসেন, “দাদুভাই, চাইলেই চুল কালো করা যায়, কিন্তু চুল সাদা করতে পুরো জীবন লেগে যায়!” নাতিকে মোবাইল হাতে নিতে দেখে মলয়বাবু বলেন, “হাতে মোবাইল থাকলে অনেক কিছু কিন্তু হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমাদের সময় মোবাইল ছিল না। তোর সঙ্গী অ্যালেক্সা-গুগল। আমার সঙ্গী ছিল গিলান্ডি-বকুল।”

“ধ্যাত, নদী-গাছ কি কারও সঙ্গী হয় নাকি!”

মলয়বাবু উঠোনের বকুল গাছটির দিকে তাকান, “দেখবি, রাতে যখন বকুল ফুল ফোটে, মনে হবে গাছে হাজার তারা ফুটে আছে।” বকুলতলায় অবিরাম ফুলের বৃষ্টি। মলয়বাবুর মন বকুল-সুবাসে ভরে ওঠে। তিনি উদাসী স্বরে বলেন, “আমি অবসর ঘরে নয়, গিলান্ডির চরে কাটাতাম।”

“দাদান, এক দিন গিলান্ডির চরে নিয়ে যাবে?”

“ভোর— অ্যাই ভোর! ও ঘরে কী মধু আছে শুনি? কত হোমওয়ার্ক পড়ে আছে!” পামেলার ঝাঁঝালো গলা শুনে ভোর একছুটে বেরিয়ে যায়। মলয়বাবু ভাবেন, ‘কী সুন্দর এই ছেলেবেলা! হোমওয়ার্ক ছাড়া আর কোনও টেনশন নেই।’

ছেলেবেলায় মলয়বাবু ব্যাকুল হয়ে রোববারের প্রতীক্ষা করতেন। এখন বাচ্চাদের সাত দিনই কড়া রুটিনে ঠাসা। এরা পরীক্ষায় নম্বর পায় কী সব— ৯৮, ৯৯, ১০০! মার্কস নয় তো, যেন ফারেনহাইট স্কেলে জ্বরের পরিমাপ। এক জনের মার্কস ভাগ করে নিলে দু’-তিন জন পরীক্ষায় দিব্যি উতরে যাবে। এদের চিলতে অবসরটুকু মোবাইল ফোনের দখলে। এখন মহল্লার রাস্তা, খেলার মাঠ, বাড়ির ছাদ নিঃসঙ্গ পড়ে থাকে। চাঁদের বুড়ি আর চরকা কাটে না। মোবাইল ওদের সব কল্পনা, খেলাধুলো লুঠ করে নিয়েছে।

এক দুপুরে ভোর আবদার করে, “দাদান, সব্বাই ঘুমোচ্ছে। চলো না, তোমার গিলান্ডির চরে।”

মলয়বাবু ফিসফিস করেন, “চল, ঘুরে আসি।” নরম রোদ ছড়ানো পড়ন্ত দুপুর। রাস্তা ছেড়ে মাঠে নামতেই ফুরফুরে মলয়বাবুর মেজাজ। তাঁর মধ্যে ছেলেবেলা ভর করে। ফিনফিনে রোদের ডানায় ভেসে তিনি পৌঁছে যান ফেলে আসা কৈশোরে।

গিলান্ডি নদীর ধারে একটি জলপাই গাছ। শীতের আগমনি বার্তা নিয়ে গাছটি জলপাইয়ে ছেয়ে আছে। ঝরা পাতা সরাতেই দুটো জলপাই দেখা যায়। মলয়বাবু তুলে নেন তাঁর ছেলেবেলার দু’টুকরো তেপান্তর।

“দাদুভাই, এই যে জলপাই!” তিনি নিজে একটা জলপাই কামড়েই ছুড়ে ফেলেন, “উফ, বাপ রে কী টক!”

ভোর তার মা পামেলার গলা নকল করে, “না ধুয়েই মুখে দিলে? আনহাইজিনিক!”

মলয়বাবু অন্য জলপাইটা নিজের পাঞ্জাবিতে মুছতে-মুছতে বললেন, “ভয় কী, এখানে তো আর তোর মা নেই।” তিনি জলপাইটা ভোরের হাতে দেন, “দ্যাখ, টেস্ট করে দ্যাখ।”

ভোর ইতস্তত করে, “দাদান, মা জানলে?” মলয়বাবুর কণ্ঠে বেপরোয়া কৈশোর, “ধুস, জানবে কী করে?” ভোর ভয়ে-ভয়ে জলপাইয়ে কামড় বসায়। মুখ-চোখ কুঁচকে বলে, “উঃ, কী টক! এক্কেবারে লেবুর মতো।”

“দাদুভাই, চল এবার ফেরা যাক।”

“দাদান, রোদে থাকতে তো ভালই লাগে।”

ছেলেবেলায় মলয়বাবুর কত দুপুর উড়ে বেড়িয়েছে ফড়িঙের সঙ্গে। তখন রোদ-গরমের বোধ ছিল না। সেন্টিগ্রেড-ফারেনহাইট জানার পরই বুঝি গরম লাগতে শুরু করে। মলয়বাবু ভোরকে সমর্থন করেন, “ঠিক বলেছিস। ঠান্ডায় গরম পোশাক, রুম হিটার। গরমে এসি-কুলার। বৃষ্টিতে ছাতা। এখন ছাই ঋতু এনজয় করার স্কোপই নেই।”

“ঠিক বলেছ,” ভোর বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ে, “চাঁদমামা কিছু না পরেই সারা রাত বাইরে থাকে। কই ওর তো ঠান্ডা লাগে না!”

গোধূলির আলো মেখে ওরা বাড়ি ফেরে। পামেলা বারান্দায় বসেছিল। থমথমে গলায় পামেলা প্রশ্ন ছোড়ে, “ভোর, কোথায় গিয়েছিলে?”

মা ‘গিয়েছিলি’ না বলে ‘গিয়েছিলে’ বলল! এ তো ভয়ঙ্কর রাগের পূর্বাভাস। ভোর মিনমিন করে, “গিলান্ডির চরে গিয়েছিলাম।”

পামেলা চিড়বিড়িয়ে ওঠে, “বনে-বাদাড়ে ঘুরে ডেঙ্গু বাধাও।” মাকে এড়িয়ে ভোর ঘরে যাচ্ছিল। পামেলার শিকারি চোখ এড়ানো মুশকিল। সে ভোরকে টেনে ধরে, “হাঁ কর তো।”

ভোরের মুখের সামনে নাক নিয়ে পামেলা হুঙ্কার করে, “কী খেয়েছিস?”

ভোর অপরাধীর গলায় বলে, “জলপাই।”

“না-ধোয়া জলপাই! কী আনহাইজিনিক!” পামেলা ভোরকে হিড়হিড় করে টেনে ঘরে নিয়ে যায়, বলে, “বাচ্চাদের তবুও দু’ঘা দিয়ে থামানো যায়। মুশকিল এই ছিঃনিয়র সিটিজ়েন নিয়ে।” একটু উনিশ-বিশ হলেই পামেলা মলয়বাবুকে ‘ছিঃনিয়র সিটিজ়েন’ বলে।

*****

আকাশের ক্যানভাসে মেঘের পোঁচ পড়তেই ঝলমলে দিন ঝাপসা হয়ে যায়। মেঘলা দুপুরে বিষণ্ণতা স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসে। কৈশোর হল সোহাগি রোদের সোনালি সকাল। যৌবন কমলা রোদের আয়েশি দুপুর। মাঝবয়েসের ব্যস্ত বিকেলটা গড়ালেই গোধূলি— জীবনের শেষ অধ্যায়। বার্ধক্যের মলাটে বন্দি হয়ে থাকে কৈশোর-যৌবনের ইতিহাস।

ঝমঝম বৃষ্টি। উঠোনের পেয়ারা গাছটির সঙ্গে ভিজতে থাকে মলয়বাবুর অবোধ্য কৈশোর। কাগজের নৌকো ভাসানো বন্ধুদের না পেয়ে আজকাল বৃষ্টিও উচ্ছ্বাসহীন। দামাল সঙ্গীদের দেখা না পেয়ে মনমরা পাকা পেয়ারা গাছ থেকে খসে মাটিতে গড়ায়। বয়স বাড়লেই ছেলেবেলার ভাল লাগা-জেদ বদলে যায় বড়দের হিসেব-বোধবুদ্ধিতে। এখন মন চাইলেও আর বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। বড় হওয়ার অনেক দাম। মানুষের বয়স বাড়ে, কিন্তু কেউ বুড়ো হতে চায় না। বুড়ো হতে বয়স লাগে, কিন্তু বয়েস না কমলেও তো আচরণে বাচ্চা হওয়া যায়। মলয়বাবুর খুব বৃষ্টিতে নামতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু অকারণে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলে সবাই কী ভাববে। জীবনটা ‘লোকে কী ভাববে’ ভেবে-ভেবেই আর নিজের মতো বাঁচা হয় না। কিছুদিন পর লোক এসে ‘বলো হরি, হরিবোল’ বলবে, সে সময় হয়ে যায়। গুলি মারো লোককে। মলয়বাবু বৃষ্টিতে নামেন। ভাল লাগার জলপ্রপাতে স্নিগ্ধ হতে থাকেন।

দাদানকে ভিজতে দেখে ভোরের গলায় পামেলার বুলি, “পচা জল-কাদায় নেমেছ। ছিঃ, কী আনহাইজিনিক! জ্বর হবে কিন্তু।”

ভোর বৃষ্টিকে পচা জল, মাটিকে কাদা বলছে! মলয়বাবুর আফসোস হয়, বেচারা ছেলেবেলা হারিয়ে অকালে কেমন বড় হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে ভেজে সবাই, তৃপ্ত হয় ক’জন?

মলয়বাবুকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে পামেলা ঝলসে ওঠে, “অন্যকে বারণ করবে কোথায়, না নিজেই...! ছিঃনিয়র সিটিজ়েন, ভোরকে শেষ করে ছাড়বে।”

আবার একই অভিযোগ— ‘ভোরকে শেষ করে ছাড়বে।’ মলয়বাবু তো ভোরের জন্য নিজেকে শেষ করে দিতে পারেন, কিন্তু তাঁকে এই কথা বার বার শুনতে হয়। তাঁর অনেক দিনের অবরুদ্ধ অশ্রু আজ বৃষ্টির সঙ্গে মিলেমিশে যায়।

পাতা-ফুল-পেয়ারা পড়ে উঠোন ভরে থাকে। পামেলার সব রাগ গিয়ে পড়ে বকুল-পেয়ারা গাছ দুটোর ওপর। সে গজগজ করে, “আপদ দুটোকে বিদেয় না করলেই নয়। বাড়িতে রোদ-আলো আসে না। জঞ্জাল সরাতেও ফালতু টাকা নষ্ট।”

মলয়বাবু বলেন, “বৌমা, জঞ্জাল পরিষ্কার করার টাকা বরং আমার পেনশন থেকে দিয়ো।”

“‘আমার পেনশন থেকেও দিয়ো’! বললেই যেন হয়ে গেল,” পামেলার কথায় শ্লেষ, “ওই আছে এক পেনশন। সবার পেট থেকে নেট যেন ওঁর পেনশনেই চলে।”

*****

মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি আশীর্বাদ না অভিশাপ? অবসরপ্রাপ্ত মানুষ পরিবারে বেকার ছেলের মতো। আয় নেই বলে কেউ দাম দেয় না। বৃদ্ধরা যেন মোবাইলের যুগে অচল ল্যান্ডফোন। আজকের সভ্যতা বড় বিবেকহীন, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে বুড়োদের জন্য সময় কোথায়?

মৃগাঙ্ক-পামেলা ছেলেকে নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়েছে। বুড়োদের কুকুরের জীবন। দিনরাত বাড়ি আগলে রাখো। খবরের কাগজ চেটেপুটে দিনগুলো খুঁড়িয়ে চলে। এক দিন খবরের কাগজ না এলে বোঝা যায় ভরা সংসারেও মলয়বাবু কতটা নিঃসঙ্গ। শৈশব ও বার্ধক্যের অনেক মিল। দুই স্তরেই মানুষ অন্যের উপর নির্ভরশীল। তবুও জীবনের শুরু ও শেষ আলাদা। সংসারে প্রয়োজন শেষ বলেই যেন বুড়োরা সব বোঝা। জীবন-যৌবন রুটি-রুটিন করেই কেটে গেল। প্রতিদানে জীবন-সায়াহ্নে ‘ছিঃনিয়র সিটিজ়েন’ সম্মান!

মলয়বাবুর মতো আজ আকাশেরও মুখ ভার। তাঁর মনের ঝড় বুঝি বাইরেও সঞ্চারিত হয়। ক্ষণিকের দমকা ঝড়ে বকুল গাছের একটা বড় ডাল ভেঙে পেয়ারা গাছের ওপর পড়ে। বকুল ডালের ভারে পেয়ারা গাছটি পুরো উপড়ে যায়। উথালপাথাল ঝড়ে পেয়ারা গাছটির মতোই মলয়বাবুর সব বন্ধনের শিকড় ছিঁড়ে যায়। বৃদ্ধ হওয়া তো একটা যোগ্যতা। মলয়বাবুর মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস টগবগিয়ে ওঠে, ‘হ্যাঁ, আমি বুড়োদের মতো অসহায় হয়ে জন্মেছিলাম ঠিকই। কিন্তু বুড়োদের মতো বাতিল হয়ে নয়, যুবক হয়ে মরতে চাই...’

ঝড়-বৃষ্টি থামতেই একটা ব্যাগে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ভরে তিনি বেরিয়ে পড়েন।

মেঘের প্রচ্ছদ ছিঁড়ে উঁকি মারছে ষোড়শী চাঁদ। আকাশ চুঁইয়ে পড়া জ্যোৎস্নায় তাঁর মনের অন্ধকার ধুয়ে যায়। বাড়ির ছাদে যে নিজেকে বন্দি রাখে, সে-ই গরিব। পুরো আকাশটাই যার ছাদ, তার মতো ধনী আর কে? জ্যোৎস্নার করিডর ধরে মলয়বাবু এগিয়ে চলেন অজানা বাণপ্রস্থে।

মৃগাঙ্করা বাড়িতে ফিরে ঝড়ে বিধ্বস্ত বকুল-পেয়ারা গাছ দেখতে পায়। উৎফুল্ল পামেলা ফিসফিস করে বলে, “বেশ হয়েছে, এক দিকের আপদ গেছে।”

বার-বার ডোরবেল বাজিয়েও মলয়বাবুর সাড়া নেই। বন্ধ দরজা ঠেলতেই খুলে যায়। মলয়বাবু ঘরে নেই। মৃগাঙ্ক বলে, “জ্বালিয়ে মারল। ফের গোঁসা করে মেয়ের বাড়ি গিয়ে হাজির হয়েছে। ছিঃনিয়র সিটিজ়েন,” পামেলার কণ্ঠে শ্লেষ, “মোল্লার দৌড় মেয়ের বাড়ি পর্যন্ত। সুড়সুড় করে আবার এখানেই ফিরে আসতে হবে।” পামেলার চোখ দুটো ঝলসে ওঠে, “কাল তো তোমার অফিস বন্ধ। এই তো সুযোগ! বকুল গাছদুটোকে বিদেয় করতে হবে। উনি ফিরলে বলব, ঝড়ে গাছ ভেঙে গেছে।”

মৃগাঙ্ক বাবার কাছেই শুনেছিল, বকুলকাঠ খুব শক্ত, দামি ও দুষ্প্রাপ্য। পামেলার চাপে তাড়াহুড়োয় জলের দরে গাছটা বিক্রি করতে হল। সঙ্গে পেয়ারা গাছ ফ্রি। শর্ত একটাই, গাছ কেটে সব ডালপালা সরিয়ে উঠোন পরিষ্কার করে দিতে হবে। দুপুরের মধ্যেই গাছ কেটে পুরো উঠোন সাফ। পামেলা আনন্দে ডগমগ, “যাক বাবা, বাঁচা গেল। দ্যাখো, বুড়ো বকুল গাছটা না থাকায় বাড়িটা আলোয় ঝলমল করছে। উঠোনটাও বেশ ফাঁকা-ফাঁকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লাগছে।”

বকুল গাছের স্নেহছায়ার অভাবে বাড়ির উঠোন নিদাঘ দুপুরে ঝলসে যাচ্ছে। বকুল গাছটি এই পরিবারেরই সদস্য ছিল। সন্ধে হলেই ঝাঁকে-ঝাঁকে চড়ুই গাছে রাত কাটাতে আসত। তারা আর আসবে না।

মৃগাঙ্ক দিদিকে ফোন করে, “দিদি, বাবা কবে আসবে রে?” ফোনের ও-প্রান্তে শঙ্কিত গলা, “কী বলছিস? বাবা তো আমার এখানে আসেনি...”

প্রিয়জন না থাকলেই তার প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়ে ওঠে। মৃগাঙ্ক বাবাকে ফোন করে। মলয়বাবুর ঘরে মোবাইল বেজে ওঠে। মৃগাঙ্ক নিশ্চিন্ত হয়, “দ্যাখো কাণ্ড! বাবা ফিরে এসেছে, অথচ আমারা কেউই জানি না।” মলয়বাবুর ঘরে গিয়েই ও আর্তনাদ করে, “পামেলা, বাবা এ বার মোবাইল নিয়ে যায়নি...” মৃগাঙ্কর ভেতরটা হু হু করে ওঠে। নিরাশ্রয় চড়ুইগুলোর মতো বাবা কোথায় রাত কাটাবে? ও ফুটো বেলুনের মতো ধপাস করে বসে পড়ে।

পামেলার স্বগতোক্তি, “ছিঃনিয়র সিটিজ়েন জ্বালিয়ে মারল! বুড়োটা ঠিক সব হাতিয়ে কেটে পড়েছে।”

মলয়বাবু নিজের আলমারির ডুপ্লিকেট চাবি পামেলার কাছে রেখেছিলেন। পামেলা দ্রুত আলমারি খোলে। আলমারির ভেতরে লকারের মুখে একটা খাম সাঁটা। খামে মলয়বাবুর লেখা চিঠি—

জানি, আমার খোঁজে প্রথমে এখানেই আসবে। আমার স্থাবর সব আগেই মৃগাঙ্ককে লিখে দিয়েছি। মৃগাঙ্কর মা-র সব গয়না এই লকারে আছে। আমার বিয়ের আংটিও রেখে যাচ্ছি। আমার সব সঞ্চয় ব্যাঙ্কে। এটিএম কার্ড দুটো রেখে গেলাম। দুটোরই পিন নম্বর ভোরের জন্মসাল।

এখন ঘোর পড়াশোনায় আক্রান্ত শৈশব। ভোরকে খোলা আকাশে খেলতে দিয়ো। একটু মেঘ-রোদ-বৃষ্টিতে নামতে দিয়ো। হোক না কৈশোর একটু বেহিসেবি। জীবন তো আর হিসেবের খাতা নয়। বুড়োরা একটু বাচ্চামি করেই, কিন্তু বাচ্চারা বুড়োর মতো আচরণ করলেই সমস্যা। বেচারা রাত-দিন শুধু বইয়ে ডুবে থাকলে সত্যি-সত্যিই ‘ছিঃনিয়র’ সিটিজ়েন হয়ে যাবে।

তোমরা ভাল থেকো, খুব ভাল।

অন্য বিষয়গুলি:

Senior Citizen Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy