ছবি: কুনাল বর্মণ
আজ সকাল থেকেই মেঘ আর আকাশের খুনসুটি চলছিল। জানুয়ারির রংহীন ক্যানভাস ভাসিয়ে ধূসর মেঘের স্তর এখন ঝুরো ঝুরো তুষার ঝরিয়ে চলেছে। ছাইরঙা মেঘচাদরে মুড়ি দেওয়া অভিমানী আকাশের নীচে শুভ্র গালিচায় ঢাকা দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা তুষারমগ্ন বার্চ-পাইনের দঙ্গল। আর এমনই এক ‘চিলড’ বরফদুপুরে শ্রাবণীর চিলতে বারান্দায় বরফের সঙ্গে সঙ্গেই জমতে শুরু করেছে কুচি কুচি কষ্টের হিরেমানিক!
বারান্দার পাশেই ছোট্ট লিভিং রুম। জীর্ণ কাউচে হেলান দিয়ে অবশ হয়ে বসেছিল শ্রাবণী। হাতে বিনয়ের ডেনিমের প্যান্ট! যেটা গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে বিনয় কিনে এনেছে। অ্যাপার্টমেন্টের লন্ড্রি রুমে নিয়ে যাওয়ার আগে অভ্যাসবশত এক বার সব জামাকাপড় উল্টেপাল্টে চেক করে নিচ্ছিল ও। আর ঠিক তখনই... গোটা পৃথিবীটাই যেন দুলে উঠেছিল ওর চোখের সামনে! দুরুদুরু বুকে শ্রাবণী আবিষ্কার করেছিল... বিনয়ের নতুন জিনসের পকেটে একটা কুঁচকোনো কাগজের টুকরো! একটা মোটেলের রসিদ, ভার্জিনিয়ার ‘প্লেজার হাট’! আজকাল অফিসের কাজে প্রায়ই হুটহাট নিউ ইয়র্ক যেতে হচ্ছে বিনয়কে। আর সন্দেহটা সেখানেই... নভেম্বরের যে তিনটে ডেট লেখা আছে রসিদে, সেইসপ্তাহে বিনয়কে প্রজেক্টের কাজে নিউ ইয়র্ক যেতে হয়েছিল! কিন্তু... সত্যিই কি তা-ই?
এই মুহূর্তে শ্রাবণীর বুকের মধ্যেও প্রবল তুষারঝড়ের দাপট! মনের মধ্যে তুবড়িবাজির মতো ফাটছে যত ফেরেববাজ চিন্তাভাবনা। সন্দেহের বিষ দেহে মনে প্রাণে তিলে তিলে বিস্তৃত হয়ে চলেছে... বিনয়কে বেশ কয়েক বার ফোন করেছে শ্রাবণী, সুইচড অফ। অফিসে আজ একটা মিটিং আছে বলেছিল বিনয়। হোয়াটসঅ্যাপেও মেসেজ পাঠিয়েছে শ্রাবণী। কিন্তু নাহ! সারাটা দিন মানুষটার কোনও সাড়াশব্দই নেই!
অবশ্য এই প্রথম নয়। গত সপ্তাহেও এমনই এক অভিশপ্ত দুপুরে, বিনয়ের তথাকথিত নতুন কেনা একটা জামা কাচতে দিতে গিয়ে চমকে উঠেছিল শ্রাবণী! সেই জামার পকেটে সে দিন অযাচিতেই ঝলসে উঠেছিল বিদ্যুতের মতো তীব্র দ্যুতিমান এক রেখা। সে রেখা প্রকারান্তরে ভাঙনেরই রেখা! এক আঙুল লম্বা সেই কোঁকড়ানো, বাদামি চুলের চুলবুলি চাউনি সে দিন প্রবল বাজের মতো ওর বুকে বেজেছিল! না, এতে এক চুলও ভুলচুক নেই যে, সে চুল শ্রাবণীর নয়। কোনও রকম চুলচেরা বিশ্লেষণেরও প্রয়োজন নেই। ঘাড় অবধি কুচকুচে কালো চুলের অধিকারিণী শ্রাবণীর চুল সেই কুন্তলরেখার সঙ্গে মেলে না। তবে কি বিনয়দের অফিসের ওই স্প্যানিশ মেয়েটি, ওই ফ্রন্ট ডেস্ক এগজ়িকিউটিভটি... যার কথা বলতে গেলেই বিনয়ের মুখের রং বদলে যায়... আপাতমুখরা ওই মেয়েটির সঙ্গেই কি বিনয়ের...?
তার মানে তো এও হতে পারে, জামাকাপড়গুলোও হয়তো একেবারে সে দিনই কেনা নয়, ডেটিং করতে গিয়ে বেশ কিছু দিন আগেই কেনা। ফেরার সময় ডেটিং-পার্টনারের লাগেজে চলে গিয়েছিল, কিছু দিন পরে পেয়ে মেয়েটি ফেরত দিচ্ছে, আর বিনয় বাড়ি নিয়ে এসে নতুন বলে চালাচ্ছে! ডিডাকশনটা করতে পেরে শ্রাবণীর নিজেকে লেডি শার্লক হোমস বলে মনে হচ্ছিল!
“ক্রি ই ই ইং...” শ্রাবণীর ভাবনার তার কেটে গেল মোবাইলের তারস্বর চিৎকারে!
“হ্যালো...” হোয়াটসঅ্যাপে ছোটবোন পারোর গলার স্বর ভেসে এল, “মেসেজে কী সব আবোলতাবোল লিখেছিস রে! এক এক সময় তোর মাথায় কিসের যে ভূত চাপে, আর চাপ বাড়ে আমাদের! ওই ‘প্লেজার হাট’-এর ব্যাপারটা ঠিক কী বল তো?”
“হুঁম, ‘প্লেজার হাট’ই বটে! নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে... ওখানে নির্ঘাৎ কপোত-কপোতীদের আনন্দের হাট বসে! এই তো, খানিক আগেই ওখানে ফোন করেছিলাম আমি। এখানে তো এ ভাবে এরা কোনও ইনফরমেশন দিতে চায় না। ভাগ্যিস ওই মোটেলটার মালিক এক পটেলসাহেব। ওঁকে পাইনি, তবে দেশি রিসেপশনিস্টকে ‘আবার রুম বুক করতে চাই’ বলে, মোটেলের মহা প্রশস্তি করে যেটুকু জানতে পারলাম, তাতে মোটেই স্বস্তি পেলাম না! ওই তিন দিন, ওই রুমে যে কাপল স্টে করেছিল, তারা এক জন ইন্ডিয়ান গাই ও তার স্প্যানিশ ওয়াইফ! রসিদে নাম লেখা আছে মিস্টার অ্যান্ড মিসেস কাশ্যপ! ওটা উইলসন কিংবা উইলিয়ামস হলে হয়তো এতটা চিন্তা হত না!”
ফোনের ও পারে পারো আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে, “শোন দিদি, তুই এত ভাবিস না...”
“ওরে পারো, সে দিন শার্টে মাথার চুল আর আজ পকেটে আস্ত একটা মোটেলের রসিদ! এর পরেও তুই বলবি ভাবব না?”
“শুধু শুধু চিন্তা করছিস তুই দিদি। এক বার জামাইবাবুকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করে দেখ না! কেন শুধু শুধু বেচারাকে...”
“বেচারা?” ঝাঁঝিয়ে ওঠে শ্রাবণী, “বেচারা নয়, তিনি হলেন বদমাইশের চারা! চারা কেন, একেবারে বদের বটবৃক্ষ। তুই যা-ই বলিস পারো, শেষ না দেখে আমি ছাড়ছি না!”
ফোনটা রেখে মাথাটা একটু ঠান্ডা করে ভাবতে বসল শ্রাবণী। আচ্ছা, এ বার ও কী করবে? হাতে ক্লু বলতে চুল আর মোটেলের রসিদ... এই দুটোর মধ্যে নির্ঘাৎ কোনও যোগসূত্র তো আছেই! ওই মোটেলের রুমেই যার সূত্রপাত, সেই সূত্রটাকেই খুঁজে বার করতে হবে। কিন্তু কী করে? শ্রাবণী জানে, চুলের মতোই এই রসিদের কথা জিজ্ঞেস করলেও বিনয় একেবারে আকাশ থেকে পড়বে!
“কী আশ্চর্য! শার্টের পকেটে চুলটা কী ভাবে এল আমি কী করে জানব? কম দামে পেয়ে যাওয়া শার্টটা তো আমি গতকালই অফিস থেকে ফেরার পথে কিনে এনেছি...” সে দিন রাতে বিছানায় বিছিয়ে থাকা সন্দেহ, শ্রাবণীর অবিশ্বাসী চাউনি... সবই যেন অবাক করেছিল বিনয়কে, তার পর বলেছিল, “দাঁড়াও, ওই দোকানের রসিদটা তোমায় দেখাচ্ছি...”
নাহ্, ব্যাগ-মানিব্যাগ সব ঘেঁটেও সে শার্টের রসিদ সে দিন দেখাতে পারেনি বিনয়। অবশ্য ভুলোমনা, তালকানা বিনয় কোনও কালেই এ সব টুকরো কাগজের প্রতি যত্নবান ছিল না। বরাবরই জামাকাপড়, জিনিসপত্রের বিল, ইলেকট্রিসিটি বিল, প্রেসক্রিপশন... বিনয়ের হাতে পড়লেই উধাও হয়ে যেত! এ সব তাই চিরকাল শ্রাবণীই সামলে এসেছে। এমনকি নিজের বেশভূষার প্রতিও খেয়াল ছিল না মানুষটার। চারটে জামা, তিনটে প্যান্ট— এই ছিল সাকুল্যে বিনয়ের সারা বছরের অফিস ইউনিফর্ম। সংসারখরচ সামলে শ্রাবণী স্বামীর জন্য জন্মদিনে নতুন জামা কিনে আনলে রাগ করত বিনয়, “কেন বেকার খরচ করো?” সেই বিনয় বিদেশে এসে নিজের জামা নিজে কিনে আনছে,লাজুক স্বরে বলছে, “জানো, এই অফিসে একটা জামা কেউ দু’বার পরে আসে না...”
কই, বিনয় তো এমন ছিল না! হিসেবি, অমিশুক, আপনভোলা মানুষটার হঠাৎ এ রকম ভোল পাল্টে গেল কী করে!
ওদের নিতান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে, দশ বছরের দাম্পত্যে দামি বাড়িগাড়ির অভাব ছিল ঠিকই, কিন্তু আন্তরিকতার অভাব ছিল না। অন্তত এত দিন তো শ্রাবণী তা-ই মনে করে এসেছে! বিনয়ের অফিসের একটা ছোট্ট প্রজেক্টের প্রয়োজনে সবে চার মাস হল ওরা ইউএসএ-তে, ফিলাডেলফিয়ার কাছে এক ছোট শহরতলিতে এসে উঠেছে। একটা বছর থাকতে হবে। বিনয়ের মাইনেপত্তর তেমন বেশি কিছু নয়। তাও সস্তার অ্যাপার্টমেন্টটা বিনয়ের অফিসের কাছে বলে গাড়িভাড়ার ঝামেলাটা নেই আর ছেলের ডিস্ট্রিক্ট এলিমেন্টারি স্কুলেরও কোনও খরচাপাতি নেই... না হলে ওই অতি সাধারণ মাইনেতে বিদেশযাপন কষ্টকর হয়ে উঠত। ওদের অবশ্য খুব বেশি চাহিদাও কিছু ছিল না। এখানে এসেও দু’জনে অনাবিল ধৈর্যে কোন বিল কোথায় কমানো যায় তা নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষানিরীক্ষা করে গিয়েছে। কলকাতা থেকেই অনেক রিসার্চ করে এই অ্যাপার্টমেন্টটা বিনয় খুঁজে বের করেছিল, তার নেট ফল কিছুটা সাশ্রয়। ফার্নিচারের জন্যেও খরচ করতে হয়নি, পাশের ফ্ল্যাটের এক বাংলাদেশি পরিবার চলে যাওয়ার আগে তাদের আসবাবপত্র দিয়ে গেছে ওদের।
সে বার বাদামি কেশবতীর কেসটা ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিদিশাকেও জানিয়েছিল শ্রাবণী। কোনও সমস্যায় দিশেহারা হয়ে পড়লে শ্রাবণী আজও বিদিশার শরণাপন্ন হয়। হোয়াটসঅ্যাপে সে দিন সব শুনে বিদিশা গম্ভীর ভাবে মন্তব্য করেছিল, “জানিস সাবু, চল্লিশে পৌঁছলেই কিন্তু ছেলেদের মিডলাইফ ক্রাইসিস শুরু হয়! না, না, ডোন্ট ক্রাই সাবু! এই সময়েই কিন্তু ছেলেদের হ্যাংওভার, কমবয়সি মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ— ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে! একটা ম্যাগাজ়িনে পড়ছিলাম, জীবনে কী পেয়েছে আর কী পায়নি, তার হিসেব মেলাতে গিয়ে অনেক ছেলেরাই নাকি এই মিডলাইফে ‘ওল্ড ওয়াইফ’ ত্যাগ করে ‘নিউ লাইফ’-এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে...”
আচ্ছা, বিনয়ের ক্ষেত্রেও কি তা-ই হয়েছে? নতুন কেউ এসেছে ওর জীবনে? চোখ ছলছল করে ওঠে শ্রাবণীর! এই তো সে দিন বিনয়ের কাছেই শুনছিল শ্রাবণী, ওদের অফিসেরই এক জন নাকি গ্রিন কার্ডের লোভে বৌকে জোরজবরদস্তি ডিভোর্স দিয়ে এক আমেরিকান মেয়েকে বিয়ের তোড়জোড় শুরুকরে দিয়েছে!
আঁধার মনে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় শ্রাবণী। ওর চোখের কোণে চিন্তার ম্লান আভা, উস্কোখুস্কো চুলে দুশ্চিন্তার সাতকাহন জমাট বেঁধে রয়েছে। রূপসী না হলেও শ্রাবণীর উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, পানপাতা মুখের এক আলাদা শ্রী রয়েছে। তবে এটা মানতেই হবে... সম্প্রতি অন্যান্য সঞ্চয়ের বদলে শরীরে স্নেহপদার্থের সঞ্চয়টা একটু বেশি পরিমাণেই হয়েছে। আর হ্যাঁ, সারা দিন একা ঘরের চার দেওয়ালে বন্দি ও যে আজকাল একটু খিটখিটে হয়ে গেছে, সেটা ও নিজেই বেশ বুঝতে পারে। রাত বাড়লে বিনয়ের ইচ্ছেকে পাত্তা না দিয়ে অনেক সময়েই ও পাশ ফিরে শুয়ে থেকেছে। কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে সত্যি সত্যিই দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকতে ইচ্ছে করছে শ্রাবণীর!
নাহ্, এ ভাবে আর বসে থাকা সম্ভব নয়। ঝটপট তৈরি হয়ে নেয় শ্রাবণী। স্কুলবাসটা পাঁচটা নাগাদ অ্যাপার্টমেন্টের সামনে ছেলেকে নামিয়ে দিয়ে যায়, তার আগেই ও ঠিক ফিরে আসবে। কিছুতেই ও ওর সাধের সংসারটাকে এ ভাবে তছনছ হয়ে যেতে দেবে না। প্রথমেই এই সমস্ত কিছুর পিছনে দায়ী ওই মহিলাকে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কোথায় গেলে খোঁজ পাবে ওই মহিলার? অপারেশন ‘প্লেজার হাট’ তো ডাহা ফেল।
আচ্ছা, একটা কাজ করলে হয় না? এই জিনস আর শার্ট দুটোই বিনয় বলেছে ওদের অফিস থেকে একটু দূরে ‘মিলার’স ক্লজ়েট’ নামের একটা দোকান থেকে কিনেছিল। সম্প্রতি খুলেছে দোকানটা। ওখানে জামাকাপড়ের দামটা বেশ কম, অন্তত হিসাবি বিনয়ের মতে। আচ্ছা, ওই দোকান থেকেই অনুসন্ধান শুরু করলে কেমন হয়? তার পর সেখান থেকে সোজা চলে যাবে বিনয়ের অফিস! গিয়েই ধরবে ওই স্প্যানিশ মেয়েটিকে...
এই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিনয়ের অফিস মোটামুটি মিনিট পনেরোর হাঁটাপথ। মাঝে এক রবিবার বিকেলে ওরা তিন জনে মিলে হাঁটতে বেরিয়ে বিনয়ের অফিসের ও দিকটাও ঘুরে এসেছিল...
ঝকঝকে ‘মিলার’স ক্লজ়েট’-এর কাচের দরজাটা ঠেলে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকল শ্রাবণী। বাপ রে! বাইরে কী ভয়ানক ঠান্ডা! সত্যি, বাড়ি থেকে না বেরোলে এখানে শীতের বাড়াবাড়িটা টেরই পাওয়া যায় না।
শো-রুমের চার পাশে থরে থরে সাজানো জামাকাপড়। ঝাঁ চকচকে দোকানে পা রেখে একটু হকচকিয়েই গেল শ্রাবণী। চরম অস্তিত্বসঙ্কটে পড়লে ওর মতো নিতান্ত গোবেচারা মেয়েও যে এমন বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে, তা ওর নিজেরই জানা ছিল না। আরে বাবা, আবেগের বশে সবেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু এখন কী করণীয়!
এ দিক ও দিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিল শ্রাবণী। শুধু ছেলেদেরই নয়, মেয়েদেরও প্রচুর কালেকশন আছে এখানে। ব্র্যান্ডেড জামাকাপড়ও আছে...অথচ দাম সত্যিই বেশ কম! একটু দূরেই একটা শপিং মল আছে, সেখানে এক বার ছেলের জন্যে একটা জ্যাকেট কিনতে গিয়েছিল ওরা। সেখানে তো সে বার জামাকাপড়ের দাম দেখে ওদের বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে গিয়েছিল!
সামনের কাউন্টারে ব্যস্ত রুপোলি চুলের সপ্রতিভ তরুণী। কয়েকটি মেয়ে অন্য দিকে জামাকাপড় গোছানোর কাজ করে চলেছে। হঠাৎই হু হু ঠান্ডা হাওয়ার দমকে ঘুরে তাকাল শ্রাবণী। শো-রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেছে এক আফ্রো-আমেরিকান। হাতে ব্যাগভর্তি জামাকাপড়। অবাক হয়ে দেখল শ্রাবণী... ব্যাগের জামাকাপড়গুলো কাউন্টারে জমা করে, তার পরিবর্তে গরম ডলারে পকেট ভারী করে ছেলেটি চলে গেল!
তবে কি... একটা কথা মনে পড়ে যেতেই শ্রাবণীর ভুরুজোড়া কুঁচকে গেল! কার কাছে যেন শুনেছিল শ্রাবণী, এ দেশে অনেক রিটেলার আছে যারা ‘জেন্টলি ইউজ়ড ব্র্যান্ডেড’ জামাকাপড় কিনে, বা ডোনেট করা জামাকাপড় সংগ্রহ করে সে সব কম দামে বিক্রি করে। আচ্ছা, এরাও কি তাই করে? আর বিনয়ও কি পাকেচক্রে এখান থেকেই... মরিয়া হয়ে শো-রুমের মেয়েটিকে পাকড়াও করে বসে শ্রাবণী।
হ্যাঁ, ও যা ভেবেছে ঠিক তাই! ‘মিলার’স ক্লজ়েট’ পুরনো জামাকাপড় কিনে একেবারে সে ভাবেই বিক্রি করে! মাঝখানে ওয়াশিং বা এই জাতীয় কিছু করে না। সে সব খদ্দেরের দায়িত্ব এবং সেই কারণেই দাম অপ্রত্যাশিত কম। করলে হয়তো দুশ্চিন্তার কারণ হত না।
আর... সেই কম দামের মোহে, হয়তো না জেনেই পরমানন্দে ওই দু’খানি পরমাণু বোমা কিনে বাড়ি ফিরেছিল বিনয়। যে-বিনয় বৌ-ছেলের জন্য কখনও সস্তা খোঁজেনি, সে শুধু নিজের জন্যই...
উফ, এত ক্ষণে বরফমেঘের চাঙড় সরিয়ে সোনালি রোদের মায়া উঁকি মেরেছে আকাশে। বিনয়ের শার্ট, প্যান্টটা হাতে নিয়ে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে চটজলদি হিসেব কষে ফেলে শ্রাবণী। আর সেই সঙ্গে কষে কোমরও বেঁধে নেয়। আচ্ছা, ওর সামান্য হাতখরচার সঙ্গে এই প্রাপ্তিযোগ মিলিয়ে যা হবে, তাতে বিনয়ের জন্যে একটা ফার্স্ট হ্যান্ড, ব্র্যান্ডেড শার্ট হয়ে যাবে না?
কী আশ্চর্য! চূড়ান্ত হিসেবি মানুষটার মিতব্যয়ী বৌয়ের আজ হঠাৎ এমন বেহিসেবি হতে ইচ্ছে হচ্ছে কেন, কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy