Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Short Story

অনুরক্তি

পারমিতার চোখেমুখে আনন্দের ঝিকিমিকি। হবে না-ই বা কেন! এ তাদের বহু দিনের পরিকল্পনার ফল।

ছবি: কুনাল বর্মণ

ছবি: কুনাল বর্মণ

জয়িতা রায়
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫১
Share: Save:

কুমায়ুন হিমালয়ের পার্বত্য খাঁজের মধ্যে এত সুন্দর লোকেশনে এমন একটা হোটেল পাওয়া যাবে, ওয়েবসাইটের ছবিগুলো দেখে আঁচ করতে পারেনি নীলেন্দু আর পারমিতা। হলদ্বানির মধ্যে সেরা লোকেশনে যেন গড়ে তোলা হয়েছে এই হোটেলটা। হিমালয়ের রূপ এখানে যতটা আদিম, ততটাই মোহময়।

পারমিতার চোখেমুখে আনন্দের ঝিকিমিকি। হবে না-ই বা কেন! এ তাদের বহু দিনের পরিকল্পনার ফল। তবেই না তারা এত লম্বা ছুটি ম্যানেজ করে সব দিক সামলে এখানে বেড়াতে আসতে পারল! তা ছাড়া গত রাতে ট্রেনে তাদের যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা রূপকথার থেকে কিছু কম নয়। সে কথা ভেবেই আনন্দের শিহরন খেলে গেল নীলেন্দুর সারা শরীরে।

হোটেলের সবচেয়ে ভাল ভিউয়ের ঘরটি দখল করে মাঝবয়সি বেয়ারাটাকে একটু বেশিই টিপ্‌স দিয়ে ফেলল নীলেন্দু। তার পর দরজাটা বন্ধ করে পারমিতাকে পিছন থেকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল। পারমিতা বিশাল কাচের জানলার সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে হিমালয়ের রূপ দেখছিল। হঠাৎ নীলেন্দুর স্পর্শে চমকে উঠল। তার হাতটা ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে বলল, “ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটু ঘুমিয়ে নিই চলো। কাল তো সারা রাত কেউই ঘুমোইনি!”

নীলেন্দুর কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগল পারমিতাকে। জিজ্ঞেস করল, “কিছু হয়েছে?”

“নাঃ। একটু ক্লান্ত।”

কথা বাড়াল না নীলেন্দু। তবে বুঝল, কিছু একটা তো হয়েছে। খাওয়াদাওয়া সেরে বিশ্রাম নিক। মনের কথা সে ঠিক বার করে নেবে।

বিকেলে হোটেলের ব্যালকনিতে বসে চা আর বিস্কুট খেতে খেতে নীলেন্দু লক্ষ করে দেখল, পারমিতার ছোটখাটো চেহারার মধ্যে ক্লান্তির রেখা আর নেই, কিন্তু চিন্তার ছাপ তেমনই আছে। নীলেন্দু তার পাশে চেয়ারটা টেনে নিয়ে কাছে এসে বসল। পারমিতার মাখনের মতো ফর্সা চামড়ার উপর পড়ন্ত সূর্যের আলো পিছলে যাচ্ছে। ভেজা ভেজা ঠোঁটের উপর লালচে আভা।

মুগ্ধ চোখে দেখতে দেখতে নীলেন্দু প্রশ্ন করল, “বলো না, কিছু সমস্যা? ও দিকে কিছু হল না কি?”

“না,” পারমিতা তার সুন্দর কালো চোখদু’টো তুলে তাকাল নীলেন্দুর দিকে। একটু ইতস্তত করে বলল, “তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর বলতে পারো, এমন মনোরম পরিবেশে কথাটা বলব বলেই এত প্ল্যান করে এখানে বেড়াতে আসা।”

এ বার নীলেন্দু সামান্য ঘাবড়ে গেল। তবে পারমিতাকে বুঝতে না দিয়ে, “সাসপেন্সে না রেখে বলে ফেলো দেখি,” বলে পারমিতার হাতটা ধরল। এই প্রবল শীতেও পারমিতার নরম হাতদু’টোর তালু ভেজা। কী নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে পারমিতা?

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পারমিতা নীলেন্দুর চোখে চোখ রেখে সোজাসুজি খানিক ক্ষণ তাকিয়ে রইল। তার পর বলল, “নীড়, তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। হয়তো বা জানোও না। একটা মেয়ে যে কাউকে কেমন করে কতটা ভালবাসতে পারে, তা তোমরা পুরুষেরা বুঝবে না। আঁচ করতে পারলেও, বুঝতে পারা অসম্ভব। আমি তোমাকে আমার কাছে চিরকাল ধরে রাখতে চাই নীড়! আমি চাই আমার কাছে তোমার একটুখানি অস্তিত্বও যেন সারা জীবন থাকে। বুঝতে পারছ আমার কথা?”

নীলেন্দু কী বলবে বুঝতে পারল না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল পারমিতার দিকে।

একটানা কথা বলে পারমিতা আবার দম নিয়ে বলতে শুরু করল, “দেখো, তুমি তো আমাদের দু’জনেরই পরিস্থিতি জানো, এ ভাবে বারবার দেখা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তা হলে এই অসম্ভবটা সম্ভব হওয়ার একটাই রাস্তা আছে। আমি তোমার সন্তানের মা হতে চাই। এই পৃথিবীতে আমরা দু’জন ছাড়া কেউ এ কথা জানবে না। আমি জানি তোমার সন্তান হয়ে যে আসবে, তার মধ্যে তোমার অংশ থাকবে। আমি তোমায় ছাড়া বেঁচে থাকতে পারব না নীড়। সেটা যখন অসম্ভব, তখন তুমি তোমাকে আমায় দাও। আমাদের সন্তানের মধ্যে দিয়ে আমাদের ভালবাসা বেঁচে থাকুক!” পারমিতার চোখে জল চিকচিক করে উঠল।

নীলেন্দু বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো বসেছিল। তার শূন্য দৃষ্টি দূরের হিমালয়ে স্থির। হঠাৎ সে অস্পষ্ট ভাবে বলে উঠল, “তা হলে তার পর থেকে তুমি আমি... আর কখনও...”

চেয়ার ছেড়ে উঠে ব্যালকনির রেলিংয়ের পাশে দাঁড়াল পারমিতা। ফ্যাঁসফেঁসে অথচ দৃঢ় গলায় বলল, “আর আমাদের দেখা হবে না। কোনও যোগাযোগ থাকবে না।” তার পর নীলেন্দুর দিকে ফিরে বলল, “কিন্তু সারা জীবন তো এই সম্পর্কটা এমনিও থাকত না, নীড়! আমরা দু’জনেই সেটা জানি। আমাকে অন্তত বাকি জীবনটা বেঁচে থাকার সান্ত্বনাটুকু দাও।” তার পর ধীরে ধীরে নীলেন্দুর কাছে এসে বলল, “এমন ভিক্ষা যে নারী চায়, তাকে ফিরিয়ে দেবে নীড়?”

নীলেন্দুর দম আটকে আসছিল। তার দীর্ঘ ছিপছিপে শরীরটাকে আস্তে আস্তে চেয়ার থেকে তুলে সে পারমিতাকে জড়িয়ে ধরল।

কুমায়ুন হিমালয়ের সেই হোটেলে বাকি সাত দিন কেটে গেল মোহগ্রস্ততায় আর দু’জনের সমান ভাল লাগার জায়গা, কবিতা লেখায়।

পারমিতা স্কুলের বাংলা দিদিমণি বলে শুধু নয়, সে বরাবরই কবিতাচর্চা করতে ভালবাসত। বিভিন্ন ম্যাগাজ়িনে তার কবিতা ছাপা হত। এ ভাবেই এক ডাক্তারের ক্লিনিকের ওয়েটিং লাউঞ্জে ম্যাগাজ়িন পড়তে পড়তে কবিতা প্রসঙ্গে কথা বলা থেকেই দু’জনের আলাপ। বাল্যবন্ধু সৌরজিৎকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল নীলেন্দু। আর পারমিতা গিয়েছিল শাশুড়ির রিপোর্ট দেখাতে। প্রথম আলাপে দু’জনের সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ দেখে ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া, তার পর প্রেম। দিনের পর দিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, বেড়াতে যাওয়া, কবিতা নিয়ে আলোচনা, লেখালিখি। নৌবাহিনীর সৈনিকের স্ত্রী পারমিতার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা হত বছরে এক বার কি দু’বার। তার সঙ্গে মনের গ্রন্থি জোড়া লাগেনি কখনই। সে নীলেন্দুর মধ্যে আবিষ্কার করল প্রাণদায়ী ধারার খোঁজ। নীলেন্দু হয়ে উঠল তার

মনের ‘নীড়’।

নীলেন্দু তখন সদ্য পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরেছে। স্কুলজীবন থেকেই টুকটাক কবিতা লেখার অভ্যেস। ফলে ভাবপ্রবণ কোমল মানসিকতা নতুন ব্যবসায়িক চিন্তার কাছে হার মানল। কম বয়সে বিয়ে হল এমন মেয়ের সঙ্গে যেখানে বাইরের ধুমধাম হল যত বেশি, ঘরের ভিতরের ‘ধুমধাম’টা বিয়ের পরে হল আরও জোরে। নামটা থাকল প্রেমের বিয়ের, কিন্তু দেখা গেল দু’জনেরই মনের মধ্যে বিস্তর অমিল। গঙ্গার ধারে বসে কাটানো দিনগুলোকে একেবারে মিথ্যে বলে মনে হল তার। বুঝল, যে স্ত্রী বইয়ের তাক থেকে সব বই নামিয়ে বক্সখাটের মধ্যে চালান করে, সেই তাকে সফ্‌ট টয় সাজায়, তাকে সে গত তিন বছরে আদৌ কিছু চেনেনি। ফলে পারমিতার প্রেমে পড়তে তার বেশি সময় লাগেনি।

তার পর প্রথম প্রথম মন্দারমণি, বকখালি... এ বারই এত দূরে। একেবারে ‘কুমায়ুনের দ্বার’ হলদ্বানিতে। প্রচুর কবিতা আর অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দিনগুলো কেটে গেল। অসম্পূর্ণ জীবনের এই ক’টা দিন দিয়ে তারা যেন জীবনটা পুরোপুরি উপভোগ করে নিতে চাইল। তার পর আবার ফিরে গেল যে যার জায়গায়। ফিরতেই হয় যে!

কয়েক মাস পর, সুখবরটা ফোনে জানার পর দিনই কলকাতার বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে দু’জনে সব কথা খুলে বলল। তিনি কথা দিলেন তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই বিশ্বাসের তিনি মর্যাদা রাখবেন। চিকিৎসা হল যথাযথ। কেটে গেল একে একে প্রয়োজনীয় মাসগুলো।

তার পর হঠাৎ এক দিন মধ্যরাত্রে ফোন এল নীলেন্দুর কাছে। এমনিতে তার কাছে কোনও মহিলার ফোন এলেই স্ত্রী অদিতি বিরক্ত হত। কিন্তু সে দিন বন্ধুর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে শুনে অদিতি হাই তুলে পাশ ফিরে শুল। নীলেন্দু নিশ্চিন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে। মাঝরাস্তায় তুলে নিল সৌরজিৎকে। নীলেন্দু জানত, পারমিতাকে এই গভীর রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই। অসম্ভব যন্ত্রণায় কাতরানো পুত্রবধূকে কারা হাসপাতালে নিয়ে যেতে এসেছে, সে বিষয়ে বৃদ্ধা শাশুড়িও পারমিতাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। তখন সেই অবস্থাও ছিল না। শুধু জানালেন, তাঁর ছেলেকে খবর দেওয়া হয়েছে। পরদিন দুপুরের মধ্যে নিশ্চয়ই সে পৌঁছে যাবে।

দ্বিরুক্তি না করে যন্ত্রণায় কাতরানো পারমিতার ভারী শরীরটাকে গাড়িতে তুলে তীব্রবেগে হাসপাতালের দিকে ছুটিয়ে দিল নীলেন্দু। পারমিতাকে এমন কাতরাতে দেখে বিচলিত হলেও মাথা ঠান্ডা রেখে গাড়ি চালাল সে।

হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সমস্ত নিয়মকানুন পালন করে বাইরের চত্বরে গিয়ে দাঁড়াল দুই বন্ধু। কী ভাবে যে দুশ্চিন্তায় বাকি রাতটা কাটল, তা সহজেই অনুমান করা চলে। সে রাতে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে নীলেন্দু ভাবছিল তাদের লখনউ থেকে হলদ্বানি যাওয়ার সেই বিচিত্র রাতটার কথা। হিমালয়ের বুক চিরে চলা ট্রেনগুলোয় যে এখনও কখনও কখনও সেই প্রাচীন যুগের ইতিহাসের গন্ধমাখা কাঠের ক্যুপ জুড়ে দেওয়া হয়, তা জানা ছিল না দু’জনেরই। সৌভাগ্যবশত ওরা এমনই একটা ক্যুপে রিজ়ার্ভেশন পেয়েছিল। তা ছাড়া ক্যুপটা এমনই একটেরে, যেন শুধুমাত্র দম্পতিদের জন্যই সেটা তৈরি। এমনিতেই তারা রেল কোম্পানির অমন সারপ্রাইজ়ে অভিভূত ছিল, তার উপর রাত হতেই আবিষ্কার করল, সে দিন ভরা পূর্ণিমা। প্রকৃতি নিজের রূপে ডুবিয়ে তাদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল। জাদু ঢেলে দিয়েছিল তাদের উপর। সারা রাত দু’জনে হাত ধরাধরি করে জানলার দিকে তাকিয়ে বসেছিল।

সৌরজিৎ ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একটু ঠেলা মারল নীলেন্দুকে। তার স্মৃতির ঘোরটা কেটে গেল। বুদ্ধপূর্ণিমার সেই রাতের কথা ভাবতে ভাবতে এই শীতের রাতেও অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছে তার শরীর। গাড়িতে উঠে কাচ তুলে বসল দু’জনে। দীর্ঘ অপেক্ষা। সকাল হয়ে চার দিকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করল। বেলা গড়িয়ে দুপুর হল। নাওয়াখাওয়া নেই। পায়চারি চলল পার্কিং লটেই।

হঠাৎ নীলেন্দুর ফোন বাজল। ডাক্তারবাবুর ফোন। কাঁপা হাতে ফোনটা ধরে নীলেন্দু শুনল তিনি বলছেন, “কনগ্র্যাচুলেশন্‌স নীলেন্দু, পারমিতার ছেলে হয়েছে। দু’জনেই ঠিক আছে। তোমাকেই খবরটা প্রথমে জানালাম। রাখছি।”

কলটা কেটে গেল। নীলেন্দু নিশ্চল পুতুল যেন। সৌরজিৎ তার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। ঠিক তখনই পার্কিং লটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দু’-তিন জন লোকের উল্লাসধ্বনি শোনা গেল। চমকে তাদের দিকে তাকাল নীলেন্দু। সৌরজিতের চোখে চোখ পড়তেই বুঝল যে, সে যা ভাবছে সৌরজিৎও তাই ভাবছে। একটু উঁকি মেরে তিন জনের চেহারা দেখে নীলেন্দু তাদের মধ্যে পারমিতার বরকে চিনতে পারল। আনন্দে টগবগিয়ে তারা হাসপাতালের ভিতরের দিকে যাচ্ছে।

বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল নীলেন্দুর। তার প্রথম সন্তান পৃথিবীতে এল, অথচ সে এক বারও দেখতে পাবে না তাকে! স্পর্শ করতে পারবে না! ভালবাসায় তার জীবন ভরিয়ে দিয়েছিল যে পারমিতা, তার কষ্টে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেও পারবে না! তা হোক, পারমিতার ইচ্ছে তো পূর্ণ হয়েছে... তার

নিজের জীবনটা যতই অপূর্ণ থাকুক। মুখে দু’হাত চাপা দিয়ে হু হু করে কেঁদে ফেলল নীলেন্দু। সৌরজিৎ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বন্ধুকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে পিঠটা চাপড়ে দিল।

তার পর আর কী? ফেরার পালা। ফিরতেই হয় যে!

তার পর সেই বাড়ি, দায়িত্ব, পৈতৃক ব্যবসা। সবার সঙ্গে হাসিমুখে ব্যবহার। বক্সখাটের পেটে বই আর বইয়ের তাকে সফ্‌ট টয়। শুধু কবিতার মোটা লাল মলাটের খাতাখানা ঢুকে গেল আলমারির সবচেয়ে নীচের কুঠুরির সবচেয়ে অন্ধকার কোণে। পড়ে থাকল বুকের মধ্যে বিচ্ছেদ যন্ত্রণার ক্ষত আর সেই জ্যোৎস্নায়-ভেসে-যাওয়া কাঠের ক্যুপে পরস্পরকে স্পর্শ করে জানলার দিকে তাকিয়ে হিমালয়ের অপরূপ রূপে বিমুগ্ধ দুই তরুণ-তরুণীর মৌন চিত্র।

বছরদুয়েক পর। সান্দাকফুতে দুপুর নাগাদ পৌঁছে লাগেজ হোটেলে নামিয়ে রেখে হাঁটতে বেরোল নীলেন্দু। হোটেলের আশপাশটা আলো থাকতে থাকতেই দেখে আসা দরকার। ব্যবসার ফাঁকে সময় পেলে একাই বেরিয়ে পড়ে সে। হোটেলের সামনে যেখানে পাহাড়ি পথটা বেঁকে গেছে, ঠিক সেখানে এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। জ্যাকেট-দস্তানা-টুপিতে মোড়া একটা মেয়ে ক্যামেরা দিয়ে পথের পাশে দাঁড়ানো একটা শিংওয়ালা লোমশ গরুর ছবি তুলছে। পিছন থেকেই চেনা চেনা লাগল নীলেন্দুর। মেয়েটি পিছন দিকে মুখ ঘোরাতেই চমকে উঠল দু’জনে।

আবার সেই হিমালয়। আবার মুখোমুখি দু’জনে।

পারমিতা সামান্য হেসে বলল, “চলি, গাড়ি অপেক্ষা করছে।” বলেই দ্রুতপায়ে দূরে দাঁড়ানো ল্যান্ড রোভারটার দিকে চলে গেল। ফিরতেই হয় যে!

নীলেন্দুর উজ্জ্বল হয়ে ওঠা মুখ নিভে গেল মুহূর্তে। মাথা নিচু করে খানিক দাঁড়িয়ে থেকে ধীরে ধীরে ফিরে চলল হোটেলের দিকে। সূর্যও তখন ম্রিয়মাণ হয়ে আলো ঢালছে পর্বতের বুকে। সেই আলোয় স্নান করছে পাহাড়ি পথের পাশে ঝরে পড়া উজ্জ্বল লাল রঙের দু’টি রডোডেনড্রন ফুল। কেউ তাদের দেখল না।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Joyita Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy