ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।
“ভগবান খুব ভাল লোক, বুঝলেন দিদি! আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে ভগবানকে নোবেল, অর্জুন পুরস্কার, পরমবীর চক্র, দাদাসাহেব ফালকে, জ্ঞানপীঠ— সব প্রাইজ় এক সঙ্গে দিতাম।”
“আপনি কে মশাই? চেনা নেই শুনো নেই... ভগবানের নাম নেওয়ার অছিলায় গেরস্থবাড়িতে ঢুকে পড়তিচেন!”
“ভগবানের নাম শুনলেও আজকাল লোকে তেড়ে আসছে! একেই বলে ঘোর কলি।”
“আপনি কি কিছু বিক্কিরি কত্তে এয়েচেন? তা হলে আসুন। এখন আমার মেলা কাজ।”
“আমি কিচ্ছু বেচতে আসিনি। ভগবানের নির্দেশে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।”
“পুতুলের বাবা বাড়ি নেই, সাহস বেড়ে গেছে, তাই না?”
“বিষ্টুবাবু বাড়ি নেই?”
“আপনি তাকে চেনেন? ছি ছি! আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলিচি! মাপ করবেন দাদা! আসুন, বসুন। অ্যাই পুতুল, আর পড়াশুনো কত্তে হবে না। দাদাকে মোড়া দে।”
“বিষ্ণুপদ গুড়িয়াকে আমি চিনি না। শুধু নাম আর পদবিটুকু জানি। আর, ওঁর সঙ্গে এক বার দেখা হতে হতে হয়নি।”
“আপনি পুতুলের বাবার নাম করেচেন মানে আমার কুটুম। ওই যে, পুতুল মোড়া এনেচে। আপনি চুম মেরে বসুন তো। আমি চা আনতেচি। পুতুলের বাবা জরুরি কাজে বেরিয়েচে। কখন ফিরবে ঠিগ নেই। আমার আবার সকালের দিকে বড় এক মগ চা না খেলে আলিস্যি কাটতে চায় না। আপনার চিনিটিনি নিয়ে পবলেম নেই তো?”
“ধুস! ও সব বড়লোকদের রোগ। আমি লেবার ক্লাস। এই হেঁটে দশ মাইল চলে গেলাম, এই দশ বস্তা সিমেন্ট ছ’তলার ছাদে রেখে এসে আবার কুড়ি বস্তা স্টোন চিপস লরিতে তুলে দিলাম...”
“আমরা লেবার কেলাস নই বটে, তবে আমরাও খেটে হাল্লাক হয়ে যাই। চাষের কাজ কি মুখের কতা? জমির আগাছা নিড়নো থেকে শুরু করে হাল চাষ, বীজ রোওয়া, সার আর পোকামারা বিষ ছড়ানো, ফসল কেটে ঘরে তোলা— এই সব কত্তে গিয়ে জান কয়লা হয়ে যায়।”
“জনমজুর রাখেননি?”
“জমি হল বাচ্চার মতো। তাকে নিজের হাতে মানুষ করতে হয়। তা ছাড়া আমরা বড়লোক চাষি নই যে লোক দিয়ে কাজ করাব। ওতে ঢাকের দায়ে মনসা বিকোয়।”
“পুতুলকে চাষের কাজে লাগাননি?”
“না দাদা, ও পড়াশুনো করতিচে। কাল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। আপনি খপর কাগচে পুতুলের ব্যাপারটা পড়ে আমাদের বাড়ি এয়েচেন। তাই না?”
“ঠিক ধরেছেন দিদি। খবরের কাগজে পুতুলকে নিয়ে ওই লেখাটা পড়েই বিষ্টুবাবুর নাম জেনেছি।”
“আমাদের গেরামের কাজল কুইলা ছেলেটা কলকেতার খপর কাগজে চাগরি করে। সে গত হপ্তায় বাড়ি এসে পুতুলের বাবার সঙ্গে কতাটতা বলে গেল। পরে দেগলুম কাগচে সব বেরিয়েচে। পুতুলের সিট পড়েছে হুড়হুড়ি পাথমিক বিদ্যালয়ে। সেটা এখেন থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে। সেন্টারের কাছে যে সব বাড়ি আছে, তার মালিকরা করুনা-র ভয়ে কাউকে ঘরভাড়া দিচ্চে না। এ দিকে লকডাউনের জন্যে বাস, ম্যাজিক ট্যাস্কি, অটো, টোটো, টেরেন, কিচ্চুটি চলতেচে না। পুতুল একটা সাইকেল পেয়েছিল গরমেন্টের কাছ থেকে। সেটা ক’দিন আগে চুরি হয়েচে।”
“এই রে! ওহ! তাই?”
“চুরি না হলেও লাভ হতনি। পুতুলের বাবার হার্টে সমিস্যে। চল্লিশ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেলে ডবল ক্যারি করতে গিয়ে কিচুমিচু হয়ে গেলে আমরা মা মেয়ে মিলে অথৈ জলে পড়তুম।”
“তা ঠিক।”
“পুতুল কী করে পরীক্ষে দিতে যাবে— এই নিয়ে ভেবে ওর বাবার রাতে ঘুম আসতেচে না। পুতুলের যাতায়াতের একটা গতি করতে ভোর থাকতে বেরিয়েচে। এখনও ফিরলনি। কী যে হবে!”
“এই কারণেই আপনাদের বাড়ি ঢোকার সময় ভগবানের নাম নিলাম। যার কেউ নেই, তার ভগবান আছে। এত পরোপকারী আজকাল দেখা যায় না। ভগবানকে নোবেল প্রাইজ়, অর্জুন পুরস্কার, পরমবীর চক্র, দাদাসাহেব ফালকে, জ্ঞানপীঠ— সব এক সঙ্গে দিলেও কম পড়বে।”
“আপনি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেবেননি তো। এই নিন চা।”
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করব? কিছু মনে করবেন না?”
“আমাদের বাবা কলকেতার লোকেদের মতো ন্যাকামো নেই। যেটা বলার, মুখের ওপরে বলে দিই। কী বলবেন বলুন।”
“আপনাদের মেয়ের নামটা খুব ইন্টারেস্টিং! পুতুল গুড়িয়া। নামে পুতুল, পদবিতেও পুতুল।”
“আমাদের এ দিকে হরেক রকম পদবি আচে। বাঘ, সিংহ, হাতি, ঘোড়া... কিচ্ছুটি বাদ নেই। আমরা জানতুম না যে গুড়িয়া মানে পুতুল। তা হলে অন্য নাম রাখতুম। কিন্তু আপনার নাম বা পদবি কিচুই তো জানি না এখনও। আপনি এয়েচেন কোতা থেকে? দেকে তো কলকেতার লোক বলে মনে হচ্চে।”
“আমার নাম ভোঁদড় রজক। বাড়ি কলকাতার ঝোলাবাগান বস্তিতে।”
“অ্যাই পুতুল! পড়ায় মন দে। বাবার বয়সি লোকের নাম শুনে ফিকফিক করে হাসবিনি! কলকাতায় এই রকম মডান নাম চলে।”
“আহা! ওকে বকবেন না। বাচ্চা মেয়ে।”
“বাচ্চা না হাতি! বদের ধাড়ি একটা! আপনার পরিবারে আর
কে আচে?”
“আমার বউ নিশা ঝোলাবাগানে থাকে। আমাদের একটাই মেয়ে, নাম টুইঙ্কল। সাত বছর বয়স। পড়ে বালিকুড়িয়ার নবোদয় বিদ্যালয়ে।”
“মেয়ের নাম খুব মিষ্টি! কিন্তু এই ইস্কুলটা কোতায়?”
“বহরাগোড়ায়।”
“সে তো ঝাড়খন্ডে। আমাদের গাঁয়ের কয়েকটা ছেলে ওখেনে চাগরি করে।”
“আমিও চাকরিই করি। বহরাগোড়ার বজরঙ্গবলী কনস্ট্রাকশনে।”
“মেয়েকে ওখেনে নিয়ে গেলেন কেন? কলকেতায় কত ভাল ইশকুল!”
“ঝোলাবাগানে থেকে পড়াশুনো হওয়া শক্ত। নিশা কাজ করতে বেরোয়। জায়গাটাও সুবিধের না। খারাপ লোকেতে ঠাসা। তা ছাড়া, মেয়েটা জন্ম থেকে খুঁতো! খুঁড়িয়ে হাঁটে। তাই ওকে আমার কাছে রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। মাসে এক বার মায়ের সঙ্গে দেখা করে আসত। তার পর তো লকডাউন শুরু হয়ে গেল।”
“লকডাউনের গল্প আর ভাল্লাগে না দাদা। কী ছিল আর কী হয়ে গেল! কখনও ভেবেচি যে মুখে আঁচল বেঁধে সারাদিন ঘুত্তে হবে? কখনও ভেবেচি যে সরকার হুকুম করবে, বাড়ি থেকে বেরনো যাবে না— আর আমরা সেই হুকুম মেনে নেব? কখনও ভেবেচি যে কলকারখানা, দোকানপাট, ইশকুল-কলেজ মাসের পর মাস বন্দ থাকবে? একটা পোকার জুজু দেখিয়ে গরমেন্ট দেশ বেচে দিচ্চে আর আমরা ভয়ের চোটে বাড়ি থেকে বেরুচ্ছি না!”
“কত কিছু যে মেনে নিচ্ছি দিদি! হিসেব দিলে মহাভারত। আমার মালিক কারখানায় তালা ঝুলিয়ে বলল, ‘কনস্ট্রাকশনের কাজ লকডাউনের জন্যে বন্ধ। তোরা বাড়ি চলে যা। লকডাউন উঠলে ফিরিস।’ ”
“মালিক তো বলেই খালাস।”
“ঠিক কথা দিদি। এ দিকে আমার অবস্থাটা ভাবুন। সঞ্চয় বলতে যৎসামান্য টাকা। বহরাগোড়ার কাছাকাছি স্টেশান হল চাকুলিয়া, ঘাটশিলা আর ঝাড়গ্রাম। কিন্তু ট্রেন না চললে স্টেশানে গিয়ে ঘোড়ার ডিম লাভ হবে। বাস, লরি, ট্রাক, টেম্পো— কিচ্ছু চলছে না। একটাই সুবিধে। টুইঙ্কলের ইশকুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঠিক করলাম, হেঁটেই বাড়ি ফিরব। বিদেশ-বিভুঁইয়ে একা একা না খেয়ে মরার চেয়ে বাড়িতে বৌ-বাচ্চার সঙ্গে মরা অনেক ভাল। দুশো কিলোমিটার রাস্তা ঠিক ম্যানেজ হয়ে যাবে। চিত্রেশ্বর শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে টুইঙ্কলকে নিয়ে ভগবানের ভরসায় বেরিয়ে পড়লাম।”
“আবার ভগবান?”
“আছে দিদি। আছে। আপনি মানলেও আছে, না মানলেও আছে। শুধু তাকে খুঁজে নিতে হয়। আমি তাঁর দেখা পেয়েছি বলে জানি। সেই কথা বলতেই তো এত দূর দৌড়ে আসা।”
“অ্যাই পুতুল। গোল গোল চোখ করে তাকাবিনি। পড়া বন্দ করে দেখ তোর বাপ এল কি না! হ্যাঁ দাদা, আপনি বলুন।”
“বলার আর কী আছে? ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে, মেয়েকে নিয়ে শুরু করলাম হাঁটা।”
“সে আর বলতে হবেনি। টিভিওয়ালারা ওই দেকিয়ে বড়লোক হয়ে গেল।”
“ওরা যা দেখায়, আসল খবর তার বাইরে থাকে দিদি।”
“আমি টিভিতে সিরিয়াল দেখি। পুতুলের বাপ দিনরাত খপর চ্যানেল গেলে। এই চ্যানেল থেকে ওই চ্যানেলে গেলে ফারাক করা যায় না। সে যাকগে। আপনাদের কথা বলুন।”
“আমাদের সঙ্গে মেলা লোক হাঁটছিল। গোড়ার দিকে বেশ একটা মোচ্ছব-মোচ্ছব ভাব ছিল। আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়লাম। মেয়েটা খুঁড়িয়ে হাঁটছিল বলে সব্বাই আমাদের টপকে গেল। রাত তিনটে নাগাদ দেখলাম আমি আর টুইঙ্কল আপনাদের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছেছি। আশপাশে কেউ নেই। মেয়েটা আর হাঁটতে পারছে না। কিন্তু মুখে টুঁ শব্দটি নেই। জানে যে গরিবের ঘরে জন্মেছে, কষ্ট সইতেই হবে।”
“আহা রে!”
“গরিবের জন্যে চোখের জল ফেলবেন না দিদি। গরিবের কেউ না থাকুক ভগবান আছে। নোবেল প্রাইজ় বাঁধা আছে ভগবানের জন্যে। টুইঙ্কলের রক্ত আর কাদামাখা পায়ে ন্যাকড়া বেঁধে দিচ্ছি— এমন সময় ভগবানের দেখা পেলাম।”
“কী রকম? কী রকম?”
“দেখলাম আপনাদের উঠোনে চকচক করছে দু’চাকার ভগবান। বিষ্টুবাবুর সাইকেল!”
“ওরে পুতুল রে! এই দেখ! এই সেই সাইকেল-চোর! দাঁড়া, তোকে কুত্তা দিয়ে খাওয়াব। পুতুল! তোকে আর পড়তে হবেনি! পঞ্চাতকে খপর কর। চোরকে বাঁশডলা না দিলে আমার শান্তি হবেনি।”
“দিদি, প্লিজ! পুতুলের পরীক্ষার আগে টেনশন করবেন না। আমি তো চিঠি লিখে দাওয়ায় ইট চাপা দিয়ে গিয়েছিলাম! লিখেছিলাম, নিতান্ত বিপদে পড়ে সাইকেলটা নিচ্ছি, দরকার ফুরোলে ফেরত দিয়ে যাব। লিখিনি? দিব্যি কেটে বলুন!”
“চোরের মুখে ভগবানের নাম? আজ তোর এক দিন কি আমার এক দিন। জানোয়ার কোথাকার! অ্যাই পুতুল! পড়তে বোস! তোকে কোথাও যেতে হবে না!”
“না বলে পরের জিনিস নেওয়াকে চুরি বলে। আমি তো বলে নিয়েছিলাম। তাই না? সাইকেল নিয়ে পালানোর সময় অন্ধকারে বিষ্টুবাবু আমাদের দেখে ফেলেন।”
“ওই জন্যেই তুমি বলতেছিলে, পুতুলের বাবার সঙ্গে আলাপ হতে হতে হয়নি! চোরচোট্টা শয়তান! এই পুতুল! ঢের পড়াশুনো করেচিস। শিগ্গিরি পুলিশে খপর দে।”
“প্লিজ, আমার কথাটা শুনুন। কাগজে পুতুলকে নিয়ে রিপোর্টটা পড়েই আমি আপনাদের বাড়িতে এসেছি।”
“কেন এসেচ? আবার কী চুরি করবে?”
“সাইকেল ফেরত দিতে এসেছি।”
“কী করতে এসেচেন?”
“সাইকেলটা ফেরত দিতে এসেছি। পুতুলকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়া আর ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও আমার। হার্টের সমস্যা নিয়ে বিষ্টুবাবুর পক্ষে চল্লিশ কিলোমিটার ডবল ক্যারি করা ঠিক হবে না। টুইঙ্কলকে কেরিয়ারে বসিয়ে লম্বা রাস্তা পেরনোর অভিজ্ঞতা আমার আছে। তা ছাড়া আমরা হলাম লেবার ক্লাস। এই হেঁটে দশ মাইল চলে গেলাম, এই দশ বস্তা সিমেন্ট ছ’তলার ছাদে রেখে এসে আবার কুড়ি বস্তা স্টোন চিপস লরিতে তুলে দিলাম... লকডাউনের বাজারে না খেটে খেটে শরীরে জং ধরে গেছে। আপনি শুধু এই ক’টা দিন দু’মুঠো খেতে দেবেন। তা হলেই হবে। আমি দাওয়ার এক কোনে পড়ে থাকব। পরীক্ষার পাট চুকে গেলেই চলে যাব। ও দিদি! কাঁদছেন কেন?”
“চোকে কী পড়ল কে জানে! আমাকে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি আমাকে বলুন, পুতুলের পরীক্ষে হয়ে গেলে কী ভাবে কলকেতা ফিরবেন?”
“আবার ‘আপনি’ কেন দিদি? ভোঁদড় রজকের ‘তুই’ শুনে শুনে অভ্যেস হয়ে গেছে। যেমন নাকি, মাইলের পর মাইল হাঁটা অভ্যেস হয়ে গেছে। ফিরতে অসুবিধে হবে না। আমরা হলাম লেবার ক্লাস।”
“তুমি বোসো ভাই। হাঁড়িতে দু’মুঠো চাল ফেলে আসি। রাতে কী খাও? ভাত না রুটি?”
“আমি রুটির দলে। সাইকেলটা কিন্তু যত্নে রেখেছিলাম দিদি। আপনি দেখে নিতে পারেন। আসল ভগবান তো সেই লোকটা, যে সাইকেল আবিষ্কার করেছিল। তাকে নোবেল প্রাইজ়, পরমবীর চক্র, দাদাসাহেব ফালকে, জ্ঞানপীঠ, অর্জুন পুরস্কার— সব এক সঙ্গে দেওয়া উচিত।”
“কে যে ভগবান কে জানে! অ্যাই পুতুল! পড়তে বোস। তোর বাবা কোনও কম্মের না। নেহাত আমার আত্মীয়স্বজন আচে তাই বেঁচেবত্তে আচিস। আমি না থাগলে তোদের যে কী হবে...”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy