Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস

স্বাধীনতা তুমি...

এ বারে নাকি স্বাধীনতার ষাট বছর হবে! কবে যেন দিনটা? স্বাধীনতার জন্মদিন? হেডস্যর তারিখটা বলেছিলেন সে দিন, কিন্তু ভুলে গেছে বুধুয়া। ইস্কুলে সে দিন অনেক কিছু হবে। আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি বেশি করে। ড্রিল, মার্চ পাস্ট।

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

সঞ্জয় দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

• (গত সংখ্যার পর) •

এ বারে নাকি স্বাধীনতার ষাট বছর হবে! কবে যেন দিনটা? স্বাধীনতার জন্মদিন? হেডস্যর তারিখটা বলেছিলেন সে দিন, কিন্তু ভুলে গেছে বুধুয়া। ইস্কুলে সে দিন অনেক কিছু হবে। আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি বেশি করে। ড্রিল, মার্চ পাস্ট। অঙ্ক স্যর যে দিন বলেছিলেন স্বাধীনতার মুখ দেখতে পাওয়ার কথা, সে দিনই তো তাদের প্র্যাকটিস শুরু হল! স্যররা বলেন রিহার্সাল। অঙ্ক স্যরই তো ড্রিল করান তাদের। বুধুয়ার খুব ভাল লাগে মার্চ পাস্ট আর ড্রিল। ইস্কুলের দারোয়ান রামেশ্বর আর হেডস্যরের বেয়ারা কালুদা ড্রাম বাজায়। এ বারে নাকি একটা ব্যান্ডপার্টিও আনা হবে।

ইস্কুল থেকে ফিরে বিলাসজ্যাঠাকে জিজ্ঞেস করেছিল বুধুয়া, ‘স্বাধীনতা কে?’

বিলাসজ্যাঠা হেসে উঠেছিল তার প্রশ্ন শুনে।

‘স্বাধীনতা কে না রে পাগলা, স্বাধীনতা কী? কী জিনিস? স্বাধীনতার মানে কী?’

‘কী মানে গো জেঠু?’

একটু চুপ করে থাকল বিলাসজ্যাঠা। তার পর বলল, ‘স্বাধীনতা মানে হচ্ছে, যে জিনিসটা করতে তোর সবচেয়ে ভাল লাগে, সেইটা করতে পারা।’

বুধুয়ার তো সবচেয়ে ভাল লাগে হাতের ঢিল, বা গুলতির মধ্যে ধরা ছোট্ট পাথরের টুকরোটাকে দূরের কোনও লক্ষ্যে অব্যর্থ নিশানায় পৌঁছে দিতে। নিপুণ লক্ষ্যভেদ। সেটাই তা হলে স্বাধীনতা?

বাবা মাঝে মাঝে বাড়িতে যে বন্দুকগুলো এনে লুকিয়ে রাখে, সেগুলো নিয়ে খেলতে তাহলে দোষ কী?

কবে প্রথম বন্দুক ধরেছিল বুধুয়া, তার মনে নেই। কিন্তু ছোটনের কাছ থেকে বাবা-মা জানতে পেরে গিয়েছিল তার লক্ষ্যভেদের কথা। ছোটনটা খুব দুরন্ত, কিন্তু তার খুব ন্যাওটা। ইস্কুলের সময়টুকু ছাড়া বেশির ভাগ সময়টাই তার সঙ্গে সেঁটে থাকে। সে যেখানে যেখানে যায়, ছোটনও যায় তার সঙ্গে। ছোটনের কাছে শুনে বাবা, বিলাসজ্যাঠা, ঝন্টুকাকা, বিল্টুদা, সবাই মিলে এক দিন পরীক্ষা নিয়েছিল তার। খাঁ খাঁ জ্যৈষ্ঠের দুপুরে এক দিন তাকে সরকারবাড়ির আমবাগানে নিয়ে গিয়েছিল।

সরকারবাড়িতে কেউ থাকে না। বহু যুগ আগে খুব রমরমা ছিল সরকারদের। এখন ভাঙা দেউল ঘিরে জঙ্গল ঘন হয়ে এসেছে। বিশাল আমবাগান, আমগাছগুলোর মাঝে আগাছার বিস্তার রোধ করার কেউ নেই। সাপ আর শিয়ালের অবাধ বিচরণভূমি। সেখানে তার হাতে একটা বড় বন্দুক ধরিয়ে দিয়েছিল বাবা। টোটা ভরা। বন্দুকটা নিয়ে বেশ অনেক দূরের একটা গাছের একেবারে উপরের দিকে ঝুলে থাকা একটা আম এক মুহূর্তে ঝটকে দিয়েছিল বুধুয়া। বাবা, ঝন্টুকাকা, বিল্টুদা, সবাই হাততালি দিয়ে উঠেছিল। আমটা আর দেখা যায়নি। শুধু ডালটা দোল খাচ্ছে। গুলির শব্দে ডানা ঝটপটিয়ে এক ঝাঁক পায়রা উড়ে গেল। বিলাসজ্যাঠা বলেছিল, অন্তত সাতশো গজ হবে। অতশত বোঝেনি বুধুয়া, তবে সে আরও দূরের জিনিস তাক করতে পারে। বাবা অবশ্য সে দিন তাকে শাসিয়েছিল খুব, কখনও যেন একা একা সে আর বন্দুক না ধরে।

বুধুয়া বলেছিল, ‘তা হলে বন্দুক আনো কেন?’

‘সব কথায় তোর কী দরকার রে শালা? যা বলছি শুনে চলবি। বন্দুক হাতে নিলে হাত ভেঙে দেব।’ ধমকে উঠেছিল বাবা। বাকিরা হেসে উঠেছিল সে দিন।

কিন্তু বন্দুকের লোভ সামলাতে পারেনি বুধুয়া। আবারও বাবার আনা বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। সঙ্গে যথারীতি ছোটন। ছোটনকে অবশ্য সে শাসিয়ে রেখেছিল। বাড়িতে কাউকে বললে আর কখনও, কোনও দিন, তাকে সঙ্গে নেবে না। বাবা কোথায় বন্দুক লুকিয়ে রাখে, বুধুয়া জানে। হয় খাটের তলায়, না হলে রান্নাঘরে বাসনের তাকের পিছনে, কোনও কোনও সময় ঠাকুমার ঘরে, ঠাকুরের আসনের পিছনে। অবশ্য ঠাকুমাকে না জানিয়ে। ঠাকুমা জানতে পারলে অনর্থ করবে। বাবা যখন বাড়ি থাকে না, মা রান্নাঘরে, বা কলতলায়, ঠাকুমা পুজোয় বসেছে, তখন সন্তর্পণে বন্দুকটা বার করে নেওয়া বুধুয়ার পক্ষে তো কোনও ব্যাপারই না! ওই তো আড়াইখানা ঘর। পিছনের বারান্দার কোণে এক চিলতে রান্নার জায়গা। নামেই রান্নাঘর। এর মধ্যে লুকোবে কোথায় বাবা?

নানা ধরনের বন্দুক নিয়ে আসে বাবা। ছোট ছোট পিস্তল, বড় বন্দুক, মাঝারি সাইজের বন্দুক। কোনওটারই নাম জানে না বুধুয়া। কোনওটাই বাড়িতে বেশি দিন রাখে না বাবা। কয়েক দিনের মধ্যেই ঝন্টুকাকা বা বিল্টুদাকে সঙ্গে নিয়ে কোথায় যেন দিয়ে আসে বন্দুকগুলো। আবার কিছু দিন পরে নতুন একটা নিয়ে আসে। কোল্ট, বেরেটা, ব্রাউনিং, উইনচেস্টার, বুশমাস্টার, এ সব নামগুলো বিচ্ছিন্ন ভাবে শুনেছে সে বাবা আর ঝন্টুকাকার মুখে। আর শুনেছে রেঞ্জ, অ্যাকিউরেসি, রিপোর্ট, সাইলেন্সার ইত্যাদি শব্দ। কোনটার কী মানে, তার জানতে ইচ্ছে করে খুব। কিন্তু বাবাকে জিজ্ঞেস করলেই তো মারবে!

আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছে বুধুয়া। বাড়িতে বন্দুক ঢোকে রাতে। তাদের শিউলিবাড়ি জায়গাটা অদ্ভুত। আধা গ্রাম, আধা শহর। এক দিকে একটু গেলে জামতাড়া, অন্য দিকে চিত্তরঞ্জন। চিত্তরঞ্জন বড় শহর। নানা প্রয়োজনে এখানকার সবাইকে চিত্তরঞ্জনেই যেতে হয়। কিন্তু চিত্তরঞ্জন পশ্চিমবঙ্গে। শিউলিবাড়ি ঝাড়খণ্ড। পিজি কলোনি থেকে একটু গেলেই পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খণ্ডের সীমানা।

শিউলিবাড়ি নামেই শহর, আসলে এখনও অনেকটাই গ্রামের মতো। রাত হয়ে গেলেই নিশুতি। রাস্তায় প্রায় কোথাওই আলো নেই। ইলেকট্রিকের আলো নেই অনেকের বাড়িতে। যাদের বাড়িতে আছে, তাদেরও দিনের অনেকটা সময়েই আলো থাকে না। রাত্রে যখন আলো থাকে, তখনও তার পাওয়ার এত কম যে অনেক সময় ঘরের লোকেরই মুখ দেখা যায় না ভাল করে। রাতে খুব প্রয়োজন না হলে কেউ রাস্তায় বেরোয় না। রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যায় অন্ধকার পড়লেই। শুধু দেখা যায় হেল্থ সেন্টারের বারান্দায় টিম টিম করে আলো জ্বলছে। সেখানে পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে কয়েকটা ঘেয়ো কুকুর।

সেই রকম রাত্রেই বাবা নিঃসাড়ে বাড়িতে ঢোকে। বাবার গায়ে পাতলা চাদরমুড়ি দেওয়া দেখলেই বুধুয়া বুঝতে পারে, বাবা আজ বন্দুক নিয়ে এসেছে।

এ বারও ঠিক সে ভাবেই বন্দুক নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিল বাবা। রাতে ইস্কুলের পড়া করছিল বুধুয়া। তাদের বাড়িতে ইলেকট্রিকের আলো আছে। কিন্তু সে রাতে যথারীতি লোডশেডিং। বাবা বোধহয় বেছে বেছে আলো নিভে থাকা রাতগুলোতেই বন্দুক আনে! বই থেকে মুখ না তুলেই বুঝতে পেরেছিল বুধুয়া, আজ বাড়িতে বন্দুক ঢুকছে। বাবা সোজা নিজের ঘরে গেল। তার মানে আজ খাটের তলায় থাকবে বন্দুক!

পর দিন দুপুরবেলা, বাবা বেরিয়ে গেছে যথারীতি। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেছে। ঠাকুমা নিজের এক চিলতে ঘরে, ঠাকুরের আসনের সামনেই মাদুর পেতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমোলে কেমন যেন হাপরের মতো নিশ্বাস পড়ে ঠাকুমার। বুধুয়া শুনতে পায়, মা ছাদে। একটু পরেই বিল্টুদা নিজের বাড়ির ছাদ থেকে আলসে টপকে তাদের ছাদে এসে পড়বে। মা এখন অনেক ক্ষণ নীচে নামবে না। ছাদের দরজা বন্ধ থাকবে। খাটের তলায় ঢুকে গুপ্তধন সন্ধান করার আদর্শ সময়। নতুন বন্দুকের কেমন একটা ঠান্ডা ভাব থাকে! বন্দুক হাতে নিয়ে প্রথমেই নলটা একটু গালে ঠেকিয়ে দেখে নেয় বুধুয়া। কেমন একটা হিমেল, শীতল স্পর্শ। একটা গন্ধও থাকে বন্দুকের। নেড়ে-চেড়ে দেখলেই গন্ধটা নাকে আসে। প্রতিটা বন্দুকের গন্ধ আলাদা মনে হয় বুধুয়ার।

কিন্তু সে দিন, খাটের তলায় ঢুকে সে অবাক! যে ঢাউস কালো ট্রাঙ্কটাতে লেপ, তোশক, শীতের পোশাক ঠাসা থাকে তাদের, ট্রাঙ্কটা ঠিক সেই জায়গাতেই আছে। প্রায় দেওয়ালের গায়ে ঠেকানো প্রায়। এক চিলতে ফাঁক আছে ট্রাঙ্ক আর দেওয়ালের মধ্যে। অভ্যাসবশত সেখানেই হাত চালিয়ে দিয়েছিল সে। ওইটাই বাবার বন্দুক লুকিয়ে রাখার পরিচিত জায়গা। কিন্তু এদিক-ওদিক চালিয়েও কাপড়ে ঢাকা কোনও পোঁটলা হাতে ঠেকল না। হামাগুড়ি দিয়ে আর একটু ভিতরে ঢুকে বুধুয়া আরও এক বার ভাল করে হাতড়াল জায়গাটা। অমসৃণ দেওয়াল। ট্রাঙ্কের জং-ধরা টিনের গা। হাতে কিচ্ছু ঠেকছে না। কোনও মতে শরীরটা দুমড়ে-মুচড়ে ট্রাঙ্কের পিছনে এক বার উঁকি দিয়ে দেখল। কিচ্ছু নেই। সাফ জায়গা। বুধুয়া হতবাক। ট্রাঙ্কটা ছাড়া খাটের তলায় তো আর কিছু নেই। তাদের ওই ছোট্ট ঘরেও তো আর কোনও জায়গা নেই যেখানে কিছু লুকিয়ে রাখা যায়।

খাটের তলা থেকেই ঘরটায় এক বার অভ্যস্ত চোখ বুলিয়ে নিল সে। উলটো দিকের দেওয়ালের গায়ে একটা হালকা কাঠের টেবিল। চেয়ারটার একটা হাতল আছে, একটা নেই। খাটে শুয়ে থাকলে যে দিকে পা যায়, সে দিকে একটা জানলা। ওই একটাই জানলা ঘরে। জানলার দু’পাশের দেওয়ালে দড়ি টাঙানো। সেখানে মায়ের শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ। বাবার কয়েকটা চেক-কাটা লুঙি। ছোটনের ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটা জামা। তার হাফপ্যান্ট। সব জামাকাপড়ের ভারে দড়ির মাঝখানটা ঝুলে পড়েছে নীচের দিকে। দেওয়ালে লাট খাচ্ছে সন্তোষীমা’র ছবি দেওয়া একটা বাংলা ক্যালেন্ডার। তাতে বড় বড় করে লেখা যশোমতি বেডিং স্টোর্স, ঢাকুরিয়া, কলিকাতা ৭০০০৩১। সারা ঘরে আর কিছু নেই।

তা হলে বন্দুকটা কি আজই নিয়ে চলে গেল বাবা? না কি অন্য কোথাও রাখল?

খাটের তলা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়েই আসছিল বুধুয়া। হঠাৎ বাঁ পা’টা ট্রাঙ্কে লেগে যেতে একটু সচকিত হল। ট্রাঙ্কটা একটু নড়ে উঠল যেন! নড়ে ওঠার কথা না তো! ভীষণ ভারী ট্রাঙ্ক। বছরে দু’-একবার যখন খাটের তলা থেকে টেনে বার করতে হয় ওটাকে, ঘাম ছুটে যায়। বছরের বাকি দিনগুলো খাটের তলায় এঁটে বসে থাকে। আবার এক বার পা দিয়ে আলতো করে ঠেলা দিল ট্রাঙ্কটাকে। হ্যাঁ, কেমন যেন ঢল ঢল করছে! যে কাঠের তক্তাটার উপর ট্রাঙ্কটা রাখা থাকে, সেটা আলগা হয়ে গেছে। হওয়ার কথা নয়। খাটের তলার আধো অন্ধকারে তত ক্ষণে চোখ সয়ে এসেছে বুধুয়ার। নিচু হয়ে শুয়ে জায়গাটা সে ভাল করে দেখল। কাঠের তক্তাটার নীচে মেঝের একটা ইট নেই। জায়গাটা ফাঁকা। সেখানে হাত ঢোকাতেই বুঝতে পারল, আশেপাশের কয়েকটা ইটও আলগা হয়ে এসেছে।

এক দিনে পারেনি বুধুয়া। ট্রাঙ্কটা একটু একটু করে ঠেলে সরাতেই পুরো দুটো দুপুর লেগে গেল। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়েও পারা যাবে না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

তত ক্ষণে জেদ চেপে গেছে বুধুয়ার। কী আছে ওখানে? বন্দুকটা কি ওইখানে লুকিয়ে রেখেছে বাবা? কেন?

ভাগ্যিস সেই রাতে বাবা ফেরেনি! মাঝে মাঝেই যেমন ফেরে না। বেলা তিনটে নাগাদ পাড়ার কলে জল আসার আগেই মা ছাদ থেকে নেমে আসবে। তার একটু পরেই ঠাকুমাও উঠে পড়বে। তাই তিনটের আগেই খাটের তলা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে বুধুয়াকে। আবার পরের দিন দুপুর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। সারা দিন বুক ঢিপঢিপ! ভয়ে, কৌতূহলে।

তৃতীয় দুপুরে ট্রাঙ্ক সরিয়ে যেটুকু জায়গা বার করা দরকার, সেটুকু বার করে, এক এক করে আলগা ইটগুলো সরিয়ে নিতে পারল বুধুয়া। ভিতরে অন্ধকার গর্ত। সাপ বা শেয়াল থাকে যদি? যাঃ! ঘরের মধ্যে সাপ থাকবে কী! সাহস করে হাত ঢুকিয়ে দিল বুধুয়া। কাপড় না! অন্য কিছু। যতটা ভারী হবে ভেবেছিল, ততটা ভারীও তো নয়! সহজেই টেনে বার করে আনল বুধুয়া গাঢ় খয়েরি রঙের ব্যাগটাকে। চেন দেওয়া। দারুণ দেখতে। এক টানে চেনটা খুলে ফেলে বুধুয়া অবাক।

এমন বন্দুক কখনও দেখেনি সে!

কালো, ঝকঝক করছে জিনিসটা! খুব বড় নয়, মাঝারি আকারের। বাবা আগে যে বড় বন্দুকগুলো নিয়ে আসত, সেগুলোর চেয়ে হালকা। বন্দুকের যেটা নল, বাবারা বলে ব্যারেল, সেই ব্যারেলের উপর আর একটা কালো চকচকে নল, দু’দিকে কাচ বসানো। ওটা কী? ওটা দিয়ে কী হয়? ওখানটা দিয়ে তো বন্দুক তাক করার কথা! আগে যে সব বন্দুক দেখেছে বুধুয়া, সেগুলোতে ব্যারেলের মাঝামাঝি একটা জায়গায়, অনেকটা ইংরিজি U অক্ষরের মতো আকৃতির একটা ধাতব বস্তু লাগানো থাকে। তার মধ্য দিয়ে লক্ষ্য স্থির করতে হয়। ওটাকে নাকি বলে ‘সাইট’। যে দিন সরকারদের আমবাগানে নিয়ে গিয়ে তার টিপ পরীক্ষা করেছিল বাবা, সে দিন বুঝিয়ে দিয়েছিল। রিভলভার বা পিস্তলে ও-সব থাকে না। ওগুলো ঠিক পছন্দও হয় না বুধুয়ার। তার আকর্ষণ বন্দুকের প্রতি। কোনও কোনও বন্দুকে ও রকম দুটো সাইট লাগানো থাকে, একটা নলের আগায়, একটা গোড়ায়। এটাতে সে রকম কিছু নেই, শুধু ওই চকচকে নলটা।

এটা ভাল করে নেড়েচেড়ে দেখতেই হচ্ছে বুধুয়াকে!

• (ক্রমশ) •

অন্য বিষয়গুলি:

mystery novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE