সদর স্ট্রিটের ৮ নং বাড়ি থেকে তালতলা লেনের ৩/৪ সি খুব দূর নয়। প্রথম বাড়িটা এখন থেকেও নেই। ভোল পাল্টে ফেলেছে। এই বাড়িতে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দ্বিতীয় বাড়িটা আজও আছে। মৌলা আলির দরগা থেকে যে রাস্তাটা ধর্মতলার দিকে চলে গেছে— যে রাস্তার পুরনো নাম ধর্মতলা স্ট্রিট, আর নতুন নাম এস এন ব্যানার্জি রোড— তাতে ঢুকে বাঁ দিকে ক্যালকাটা গার্লস আর ক্যালকাটা বয়েজ় স্কুলের তল্লাট ছাড়িয়ে একটু গেলেই একে একে তালতলা পোস্ট অফিস, তালতলা হাইস্কুল। তার খানিক বাদেই বাঁ দিকে ঢুকে গেছে তালতলা লেন। আটপৌরে এলাকা। পাঁচমিশেলি চেহারা। সাহেব কলকাতার কাছেপিঠে হলেও যেন বহু দূর। এবং মলিন। সেই গলিতে ঢুকে কয়েকটা বাড়ি ছাড়লেই পৌঁছনো যায় সেই ঠিকানায়।
বাড়িটার একতলায় দুটো ঘর, দোতলায় দুটো। শতবর্ষ আগে ত্রিপুরার পশ্চিমগাঁর নবাব ফয়জুন্নিসা চৌধুরানির নাতিরা এ বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। একতলায় দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ঘরটায় থাকতে দিয়েছিলেন মুজফ্ফর আহমদ আর কাজী নজরুল ইসলামকে। এ দেশে তখন কমিউনিস্ট পার্টির পত্তন হব-হব করছে। একদা ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’-র সর্বেসর্বা মুজফ্ফরের রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়ছে। অন্য দিকে বেঙ্গলি রেজিমেন্টের কাজ সেরে বছর খানেক হল কলকাতায় থিতু হয়েছেন নজরুল। কবি ও গায়ক হিসেবে যশ ছড়াচ্ছে দিকে দিকে। বড়দিনের ছুটির সময় খুব সম্ভবত শেষ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে একটা কবিতা লিখে ফেললেন তিনি। ফাউন্টেন পেনে নয়, পেনসিলে। কেন? মুজফ্ফরের কথায়, ‘দোয়াতে বার বার কলম ডোবাতে গিয়ে তার মাথার সঙ্গে তার হাত তাল রাখতে পারবে না, এই ভেবেই সম্ভবত’ পেনসিলের শরণ নেওয়া। মুজফ্ফরের ঘুম ভাঙতে পুরো কবিতা তাঁকে শোনালেন নজরুল। শ্রোতার মধ্যে তেমন ভাবান্তর না দেখে মুষড়ে পড়লেন। বেলা গড়াতে তাঁদের কাছে এলেন ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার কর্তা আফ্জাজুল হক। তিনি চলে গেলে একটু বাদে এলেন ‘বিজলী’ পত্রিকার তরফে অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য। দু’জনকেই নতুন কবিতাটি পড়ে শোনালেন। শুনে দু’জনেই উচ্ছ্বসিত। দু’জনেই কপি চাইলেন। এবং দু’জনকেই কৃতার্থ করলেন বাইশ বছরের কবি।
নলিনীকান্ত সরকার সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বিজলী’র ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি সংখ্যায় সেই দীর্ঘ কবিতা প্রথম বেরোল। বাজারে পড়ামাত্র উড়ে গেল। এত তাড়াতাড়ি যে ক’দিনের মাথায় ফের ছাপতে হল ‘বিজলী’র ওই সংখ্যা। সব মিলিয়ে ২৭ হাজার কপি। মাস দুয়েকের মধ্যে মোজাম্মেল হক সম্পাদিত ‘মোসলেম ভারত’-এর কার্তিক ১৩২৮ সংখ্যা বেরোল, নির্ধারিত সময়ের চার মাস বাদে। তাতেও রইল সেই কবিতা। তার আগেই ‘প্রবাসী’-র মাঘ ১৩২৮ সংখ্যায় সেই কবিতার পুনর্মুদ্রণ হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। ‘সাধনা’র বৈশাখ ১৩২৯ সংখ্যা, ‘ধূমকেতু’র ২২ অগস্ট ১৯২২ সংখ্যা— কোথায় না ছাপা হল সেই কবিতা! ওই বছর পুজোর মরসুমে পুরনো কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে ‘অগ্নি-বীণা’ কাব্যগ্রন্থে সঙ্কলিত হল সেই কবিতা। ক মাস আগেই ‘একজন সৈনিক’ পরিচয়ে যাঁর ‘শাত্-ইল-আরব’ কাগজে বেরিয়েছে, এই কবিতার বিপুল জনপ্রিয়তা তাঁর নাম পাঠকের মুখে মুখে ছড়িয়ে দিল।
ছাপাখানা আসার পর আর কোনও বাংলা কবিতার বরাতে এমন খাতিরদারি জোটেনি। বা অখ্যাতির ভাঁড়ার উপচে পড়েনি। আর কোনও কবিতা দশকের পর দশক ধরে পরাক্রান্ত ব্রিটিশ শাসকের খাতায় ‘বিপজ্জনক’ মার্কা পায়নি। সবচেয়ে বড় কথা, বাঙালি আর কোনও কবিকে একটা কবিতার নামে ডাকেনি। নজরুলকে ডাকল। রেওয়াজি আবৃত্তিকার কিংবা বাংলা সিনেমার ফুটো মাস্তান প্রমোদ প্রধানের চোখে আজও ওই ‘ঝাঁকড়া চুলের বাবরি জোয়ান’-এর প্রথম পরিচয়— ‘বিদ্রোহী কবি’। কবি আর কবিতা একাকার। আজও বাংলাভাষার চিরকালীন বেস্টসেলার ‘সঞ্চিতা’র পাতা ওল্টালে সবার আগে সেই কবিতাতেই চোখ আটকায়। কোথাও না কোথাও থেকে কানে ভেসে আসে কাজী সব্যসাচীর দরাজ গলায় ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে রেকর্ড করা সেই কবিতার আবৃত্তি— ‘বল বীর—/ বল উন্নত মম শির!’
১৯২১ সালের এক শেষ ডিসেম্বরের শেষ রাতে লেখা হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’। এ বছর সেই কবিতা রচনার শতবর্ষ।
ঠিক তার আগের বছর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ময়দান ছেড়ে এসে কলকাতায় থিতু হবার সময় ‘সৈনিক’ পরিচয়টুকুই সার ছিল তাঁর। ‘মাসিক সওগাত’, ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’, ‘নূর’-এর পাতায় হাত পাকানোর পর ‘মোসলেম ভারত’ ক্রমে তাঁর আত্মপ্রকাশের মুখপত্র হয়ে উঠল। মুজফ্ফর আহমদের সহ-সম্পাদনায় ‘নবনূর’-এর পাতায় তাঁর কট্টর রাজনৈতিক অবস্থান খিলাফত আন্দোলনের আগুন উস্কে দিল। অন্য দিকে রবিবাবুর গান ও কালোয়াতি খেয়াল-গজলের গাইয়ে হিসেবে তাঁর নাম ছড়াল কলেজপাড়া অফিসপাড়ার মেসবাড়ির আসর থেকে ‘ভদ্রলোক’ বাঙালির জলসাঘরে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাগৃহে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাঁকে ডেকে এনে পাশে বসালেন খোদ রবীন্দ্রনাথ। মাঝে দু’মাসের জন্য কুমিল্লায় গিয়ে বেঘোরে পড়ে তাল কেটেছিল। জুলাইতে সেই মুজফ্ফরের হাত ধরে কলকাতায় ফিরে ৩/৪সি তালতলা লেনের বাড়িতে থেকে শুধু তো ‘বিদ্রোহী’ নয়, ১৯২১-এর অগস্ট থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে নজরুল লিখেছিলেন ‘আনোয়ার’, ‘কামাল পাশা’, ‘শাত্-ইল্-আরব’-এর মতো কবিতা, কিংবা ‘ভাঙার গান’ যার স্মরণীয় প্রথম পঙ্ক্তি ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’। ওই গান আজও সমকালের দাবি মেটাচ্ছে। কামাল আতাতুর্কের তুরস্ক পাল্টে গেলেও ওরহান পামুকের বয়ানে তার মৌতাত মরেনি।
এ সব ছাপিয়ে ‘বিদ্রোহী’ কী ভাবে একশো বছরের পাড়ি জমাল এবং এই দেশ এই সময়ের কাছে পুনর্মূল্যায়নের প্রার্থী হল তার সুলুকসন্ধান করতে ওই কবিতার কাছেই যেতে হবে। তাঁর জীবন ও সৃজন নিয়ে দুই বাংলাতেই গবেষণা চলেছে। প্রকাশনা হয়েছে। এর সাম্প্রতিক ফসল ঢাকা থেকে বেরোনো গোলাম মুরশিদের জীবনীগ্রন্থ ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’-র নামেই ওই কবিতার অমোঘ স্বীকৃতি আছে। বছর খানেক আগে আমাদের হাতে এসেছে সুমিতা চক্রবর্তীর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: কবিতার জন্ম-পাঠকের অন্বেষা’। আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ়ের এই প্রকাশনা তার তথ্যসঞ্চয়ন ও টীকাটিপ্পনীর গুণে আগামী দিনের নজরুলপাঠের এক দিগ্দর্শিকা হতে চলেছে।
স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের ‘কুবলা খান’ রচনার সঙ্গে এর রচনাবৃত্তান্তের মিল যতই আপতিক হোক, আকাশ থেকে পড়েনি ‘বিদ্রোহী’। ‘আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ’-এর মধ্যে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’র খেই একই রকম আপতিক। কয়েক মাস আগেই বাঙালি মুসলমানের মনে জাতীয়তাবোধের চেতনা বুনে দিতে ইসলামের ইতিহাস ও পুরাণের সুতো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন নজরুল। ‘বিদ্রোহী’তে যিনি ‘খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া’ লিখে মুসলমান সাহিত্য সমালোচকদের হতাশ করলেন, তিনি যেন অন্য মানুষ।
এর পটভূমি কী?
মনে রাখতে হবে, ১৯১১ সালের মাঝামাঝি স্বদেশি আন্দোলনের চাপে পিছু হটে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন ব্রিটিশ সরকার। এর পর থেকে বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল, তা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন নজরুল। বর্ধমান তো বটেই, তার আগে ময়মনসিংহের স্কুলে লেখাপড়া করার সুবাদে অ-নাগরিক বাংলাকে লোকায়ত ঐতিহ্যকে কী ভাবে বদলাতে শুরু করেছিল মৌলবাদী আচার-আচরণ, বড় হয়ে উঠেছিল ছোঁয়াছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল, তা হাড়ে-হাড়ে বুঝেছিলেন। রানিগঞ্জের সিহাড়শোল রাজ হাইস্কুলে ক্লাস টেনের ফার্স্ট বয় যে দু’জনের সঙ্গে হরবখত মেলামেশা করতেন তাঁদের এক জন শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় বামুন ঘরের ছেলে, আর এক জন শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ কেরেস্তান। এই সাম্প্রদায়িকতাকে তাঁরা তিন জন মেনে নেননি, মনেও নেননি। ম্যাট্রিকুলেশন না দিয়ে বেঙ্গলি রেজিমেন্টে নাম লেখানোর পর করাচিতে দু’বছরের প্রবাসজীবন নজরুলকে রোজকার জাতবিচারের হিসেব থেকে দূরে রেখেছিল। বলশেভিক বিপ্লবের খবর পেয়ে সেনা ছাউনিতে মেঠাই বাটোয়ারা করেছিলেন যে নজরুল, সেই তিনিই যে এক দিন ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ লিখবেন তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে! গৈগেরামের গরিব ঘরের ছেলে। শহর কলকাতার কুলীনকুলসর্বস্ব ‘ভদ্রলোক’ হওয়ার দায় নেই। গজদন্ত মিনারে খাসমহল গড়ার ঝামেলা নেই। নাগরিক মেরুবিভাজনের ঊর্ধ্বে যেতে তাঁকে বেগ পেতে হয় না। ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ গোছের উচ্চকিত উচ্চারণ তাঁকে মানিয়ে যায়। বিলিতি ধাঁচের বোলবোলাও নয়, লোকায়তের সুর অনায়াসে বাজে তাঁর লেখায়। ইদানীং নজরুলের গায়ে ‘খাঁটি বাঙালি কবি’ তকমা সেঁটেছেন যতীন সরকার। বেখাপ্পা লাগেনি।
নজরুলের জন্মের একশো বছরে তাঁর এক অনন্য মূল্যায়ন করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিদগ্ধ অধ্যাপক লিখেছিলেন, ‘নজরুল দেখলেন যে, সাম্প্রদায়িকতাটা আসলে সকল হিন্দু-মুসলমানদের ব্যাপার নয়, এটি হল দুই সম্প্রদায়ের দুই মধ্যবিত্তের ব্যাপার। ওই দুই মধ্যবিত্ত নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা নিয়ে লড়াই করছে, সেই লড়াইকে তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গেছে। তাদেরকে ঠেলে দিয়েছে গৃহযুদ্ধের দিকে।’ এই সময় চিত্তরঞ্জন দাশ যুযুধান দুই মধ্যবিত্ত পক্ষকে কাছাকাছি এনে সমঝোতা করাতে চেয়েছিলেন। এটা নজরুলের মনে ধরেছিল। ‘বিদ্রোহী’ লেখার মাস চারেক আগে বাসন্তী দেবীর ডাকে জেলে আটক চিত্তরঞ্জনকে মনে রেখে ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ লিখেছিলেন। এর ক’বছর পর ‘আমার কৈফিয়ৎ’-এ ‘যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি নাড়ি কাছা!’-র মতো পঙ্ক্তি বেরিয়েছিল তাঁর হাত থেকে। অনেক পরে ‘শেষ সওগাত’ নামে কথিত অভিভাষণে হাতে লাঠি আর আস্তিনে ছুরি নিয়ে যুযুধান হিন্দু-মুসলমানকে ‘হ্যান্ডশেক’ করানোই যে তাঁর কবিতা লেখা গান তৈরির উদ্দেশ্য ছিল এ কথা একেবারে সাফ লিখেছিলেন নজরুল।
‘বিদ্রোহী’র ছত্রে ছত্রে ওই করমর্দনের উষ্ণতা আছে। শব্দ-সাম্প্রদায়িকতাকে চুরমার করার স্পর্ধা আছে। হিন্দু ও ইসলামীয় পুরাণের অণু-পরমাণু এসে মিলেছে তাতে। ‘আমি বজ্র, আমি ঈশান-বিষাণে ওঙ্কার,/ আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা-হুঙ্কার’ কিংবা ‘তাজি বোর্রাক আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার/ হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে’র মধ্যে লাগাতার চলেছে গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার এই প্রয়াস। ‘বিদ্রোহী’র বীরপুরুষ যে অলৌকিক ঘোড়ায় সওয়ার হবেন, তাতে বাঙালির সমন্বয়ী সংস্কৃতির লাগাম জুতে দিতে চেয়েছিলেন নজরুল। ‘আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক’ উচ্চারণের মধ্যে কপিলাবস্তুর সিদ্ধার্থের সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গভীর সংযোগের সুতো ধরানো ছিল। গ্রিক পুরাণ থেকে অর্ফিয়াসের বাঁশরী টেনে এনে শ্যামের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে যে আন্তর্জাতিকতা আছে, তা যেন প্রাচী-প্রতীচীর মেলা বসাল। পাশে এসে দাঁড়ালেন ওয়াল্ট হুইটম্যান, তাঁর ‘সং অব মাইসেল্ফ’ নিয়ে। হয়তো মোহিতলাল মজুমদারও, ‘আমি’ নিয়ে। ‘বিদ্রোহী’-র ১৪১ পঙ্ক্তি জুড়ে অস্মিতার এই বিস্ফোরণ, আগে-পরের বাংলা কবিতায় বিভাজিকাচিহ্ন হয়ে রইল।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছন্দরীতির ছাপ নজরুলের কবিতায় আগেই পড়েছিল। তাঁকে সালাম জানিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন ‘বুনো তোমার ছোট্ট ভাই’। ‘বিদ্রোহী’তে কলাবৃত্তের পঙ্ক্তিতে এসে ভিড়ল হলন্ত দল। স্বতঃস্ফূর্ত ভাষার পিছনে এল বাঁধভাঙা আবেগের উচ্ছ্বাস। বিদ্রোহের উপমান হয়ে এল যত রাজ্যের ঝোড়ো হাওয়া। ‘আমি তড়িতে চড়িয়া উড়ে চলি জোর তুড়ি দিয়া, দিয়া লম্ফ’ যে গতিজাড্যের সঞ্চার করল তা আলাদিনের জাদু-গালিচায় তুলে দিল পাঠককে।
আজও দেয়। তবে ওই সমন্বয়ের সংস্কৃতি বাঙালিকে ছেড়ে চলে গেছে। চাই না-চাই ধর্মীয় অনুষঙ্গ বাঁচিয়ে লেখালেখি করাই এখন দস্তুর। পুরাণ ছেড়ে গেছে আধুনিকতার চৌহদ্দি। চেনা কোনও সাম্প্রদায়িক প্রতীক নিয়ে একটু খোঁচা দিলেই অসহিষ্ণুতার আগুনে ঘি পড়ে। খড়্গ-কৃপাণ বেরিয়ে আসে। গ্রামপতনের শব্দ আর শোনা যায় না।
তাই ৮ সদর স্ট্রিট আর ৩/৪সি তালতলা লেনের যোগসাজশ আজ আমাদের মনে করাতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy