ছবি: পিয়ালী বালা
এক মনে কাচের ভাঙা টুকরোগুলোর দিকে তাকিয়েছিল কস্তুরী। মনটা ভারী খারাপ হয়ে আছে। তবু ভাগ্যিস শাশুড়িমার কানে যায়নি কাচ ভাঙার শব্দ! নইলে তিনি আবার হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে এলে একেবারে দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়ে যেত। তখনই কস্তুরীর সংসারে তাঁর একমাত্র ছেলে আর নাতনি যে কত কষ্টে আছে, এ বিশ্বাস প্রোথিত করতে উঠেপড়ে লেগে যেতেন। মাঝে মধ্যে কস্তুরীর মনে হয় চিৎকার করে বলে, ‘মা, আমাদের বিয়ের বয়স কিন্তু উনিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও কি আপনার আক্ষেপ গেল না? আর কী লাভ এখনও এ সব বলে? এখনও কি মনে হয় আপনার শিউলিফুল পাতানো বান্ধবীর মেয়ের সঙ্গে আপনার ছেলের বিয়ে দিলে আপনার আক্ষেপ চলে যেত? চিরতরে?’
কিন্তু কস্তুরী চুপ করে থাকে। বলে কোনও লাভ নেই। আকিঞ্চনকে বলেও লাভের লাভ ফক্কা। সেই এক বাণী শুনিয়ে দেবে, “আর তো কয়েকটা মাস। এমনিতেই বাবার প্রচুর বয়স হয়েছে। মা-র হাই শুগার। সপ্তাহে দু’দিন ইনসুলিন। সো? কিডনি ফেল করতে আর কতই বা দেরি?”
প্রথম যে দিন এ কথা শুনেছিল, অবাক হয়ে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়েছিল কস্তুরী। এ কেমন লোক, যে বাবা-মায়ের মৃত্যুকামনা করে! পরে অবশ্য বুঝেছিল আকিঞ্চন মানুষটাই এমন। সে দুটো, সম্ভব হলে একাধিক নৌকোয় পা রেখে চলা মানুষ। দোতলায় সে বৌকে মায়ের বিরুদ্ধে বলে, আবার একতলায় গেলেই সে মায়ের আঁচলধরা পুত্র। তাই এই মানুষকে বলে আর কোনও লাভ নেই। লাভ নেই স্বয়ং শাশুড়িমাকে বলেও। অতীত অভিজ্ঞতা তাকে এই ব্যাপারে ঋদ্ধ করেছে।
মাঝে মাঝে আকিঞ্চনকে নিয়েও নানা অভিযোগ জমা হয় কস্তুরীর মনে। আকিঞ্চন ভয়ানক শর্ট টেম্পার্ড। একটুতেই রেগে আগুন, ফের দু’মিনিট পরে হয়তো সদাশিব। প্রথম প্রথম খুব অবাক হত কস্তুরী। একটা সুস্থ সবল মানুষ কী করে পাঁচ মিনিটের তারতম্যে এক বার ভিসুভিয়াস, আবার হিমালয় হতে পারে? যত ক্ষণে অভিমান মেঘের মতো জমে উঠছে কস্তুরীর মনে, টলটলে চোখ তার সাক্ষী হতে যাবে যাবে করছে, তত ক্ষণে আগের ঘটনা সব ভুলে মেরে দিয়েছে আকিঞ্চন। হোয়াটসঅ্যাপে কেউ হয়ত একটা অ্যাডাল্ট জোক পাঠিয়েছে, সেটা পড়েই দিব্যি সোফার উপরে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। শুধু তা-ই নয়, সেই জোক শেয়ার করতে চলেও আসছে কস্তুরীর পাশে। আবার কস্তুরীর চোখে জল কেন সে ব্যাপারেও গভীর ভাবনায় পড়ে যাচ্ছে। এমন মানুষকে নিয়ে আঠারোটা বছর কী করে পেরিয়ে গেল, এক-এক সময় ভাবতেও অবাক লাগে কস্তুরীর।
শ্বশুরমশাই শ্যামলেন্দু রায় অবশ্য এ সবের ধার দিয়েও যান না। তার কারণ আছে। তিনি কার্যত দৃষ্টিহীন। তিনি নিজের মতো থাকেন। তিন বেলা স্বল্পাহার করেন। সংসারের কোনও কিছুতেই আর তাঁর কোনও কিছু আসে যায় না। কানের পাশে হয়তো বৌ গজগজ করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে আর তিনি কাল্পনিক কারও সঙ্গে বার্তালাপ করে চলেছেন। এই কাল্পনিক বার্তালাপটা শুরু হয়েছে বছর আষ্টেক আগে থেকে। গ্লুকোমার অতর্কিত আক্রমণে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলার পর থেকেই। এই বার্তালাপ কার সঙ্গে সেটা শ্যামলেন্দু ছাড়া একমাত্র ভগবান জানেন। এক-এক দিন প্রশ্ন করে দেখেছে কস্তুরী, “বাবা, আপনি কার সঙ্গে কথা বলেন?”
“ওরা আসে।”
“ওরা! কারা?”
“তোকে দেখাতে পারব না রে মা। তাদের শুধু আমিই দেখতে পাই।”
কস্তুরীর মাঝে মাঝে মনে হয় তবে কি বাবা তাঁর বংশের মৃত পূর্বপুরুষদের কিংবা আত্মীয়স্বজনদের দেখতে পান? ভাবতেই গায়ে কাঁটা দেয়। এক বার শ্যামলেন্দু বলেছিল, “না রে মা। বাপ-মায়ের মুখই মনে আসে না। আসলে যারা আসে তাদের আগে কোনও দিন দেখিনি। এই যেমন মনে কর, তুই তো আমার ডান দিকে বসে আছিস? তোকে তো দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি ওই জায়গাটায় একটা বাচ্চা বসে আছে। তার পর এই যে... ওই যে... বেশ কিছু বাচ্চা...”
“বাচ্চা? মানে শিশু?”
“হুম। কিশোর বলতে পারিস। বছর দশ, এগারো, বারো... এই রকম আর কী।”
“তারা কী বলে? মানে কী করে? তাদের দেখতে কী রকম?”
“এমনিতে মুখে তো কিছু বলে না। শুধু আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে, চেয়েই থাকে।”
“স্ট্রেঞ্জ!”
“এই যে... এই যে... একটি বাচ্চা আমার মাথার উপর থেকে উঁকি দিয়ে আমায় দেখছে। এই যাঃ,যাঃ বলছি...”
শ্যামলেন্দু মাথার উপরে হাত ঘুরিয়ে কাদের তাড়াতে থাকেন। অদ্ভুত লাগে কস্তুরীর। কোথায় যেন পড়েছিল প্রায় সব মানুষেরই নাকি একটা করে সুপারন্যাচারাল পাওয়ার থাকে। মানুষের পাঁচটা ইন্দ্রিয় এক সঙ্গে সক্রিয় থাকে বলে সেই বৈশিষ্ট্যটা উপলব্ধি করতে পারা যায় না। প্যারানর্মালিটি নিয়ে একটা বইয়ে সে পড়েছিল, মানুষের একটা ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে গেলে, আর একটা ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। অথবা তার বাইরে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। রবিঠাকুর কি এই জন্যেই লিখে গিয়েছিলেন ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’?
আকিঞ্চন জাঁদরেল উকিল। সে এ সব কিছু মানে না। এক দিন বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ডাক্তারবাবু নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারের ফর্দের মতো লিস্টি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ফর্দ মিলিয়ে মিলিয়ে ওষুধ আনা হয়েছিল। খাওয়ানো হয়েছিল। লাভের লাভ কিছু হল না। মেহুলি কখনও কখনও বলে, “ওটা দাদানের পাগলামি। আর কিস্যু না। বোগাস।”
মেহুলি। কস্তুরী আর আকিঞ্চনের একমাত্র সন্তান। এই সামনের মাসে সাড়ে সতেরো পেরিয়ে যাবে। ছোটবেলায় মনে হত দেখতে একদম মায়ের মতো হবে। সেই নাক, সেই ছোট কপাল। মায়ের আঁচল ছাড়া আর কোনও আশ্রয় মেহুলি চিনতই না। শাশুড়ি সেই সময় আরও খড়্গহস্ত হয়ে উঠেছিলেন। ও দিকে আকিঞ্চন কারণে-অকারণে চেঁচাত, তার উপরে নিজের বেসরকারি চাকরির অসম্ভব চাপ... এই সব সামলাতে সামলাতে এক এক সময় হা-ক্লান্ত লাগত কস্তুরীর। বাড়ি ফিরে মেহুলিকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে তার সারা দিনের ক্লান্তি দূর করত সে। মেহুলি জন্মেছিল নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগে। ইনকিউবেটরে ছিল অনেক দিন। বাড়িতে আনার পর তুলোর মধ্যে আঁকড়ে ধরে পালা করে রাতের পর রাত জাগত সে আর আকিঞ্চন। প্রতি মুহূর্তে তাকিয়ে দেখত, মেয়ের বুকে আলতো চাপ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত— বেঁচে আছে তো?
সেই মেহুলি কেমন ধীরে ধীরে পাল্টে গেল! এখন বেশির ভাগটাই যেন বাপের মতো। সেই হাইট, সেই বদরাগী মেজাজ। এই অমুক জিনিসটা খাব বলে বায়না করছে, এনে দিলে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। অজুহাত দিচ্ছে, প্রিপারেশনটা মনের মতো হয়নি। আজকাল তো মায়ের হাতের সব প্রিপারেশনই তার সাব-স্ট্যান্ডার্ড লাগে। নিজের খারাপ লাগাটুকু সরিয়ে রেখে এক দিন আধঘুমন্ত আকিঞ্চনকে জাগিয়ে দিয়ে নিজের আশঙ্কার কথা বলেছিল কস্তুরী। আকিঞ্চন কোনও কালেই কস্তুরীর কথায় তেমন গা করে না। নিদ্রাজড়িত নেশাগ্রস্ত গলায় বলেছিল, “মেহুর চিন্তা তুমি ছাড়ো। ও আমার মেয়ে। রায়বাড়ির মেয়ে।”
কিন্তু রায়বাড়ির মেয়ে বলে তো আর চুপচাপ বসে থাকা যায় না। সতেরো বছর কম নয়। মেয়ে এখন সব বুঝতে শিখেছে। গভীর রাত অবধি মোবাইলে কী সব দেখে। কী দেখে তা দেখতে পায়নি কস্তুরী, তবে দরজার বাইরে কান পেতে যে সব শব্দ শুনেছে, তাতেই গায়ে কাঁটা দিয়েছে তার। মেহুলি ব্লু-ফিল্ম দেখে! তার পর সে কখন বেরিয়ে যায়, কী খায়, কাদের সঙ্গে মেশে... কে জানে। কোনও দিন হয়তো ভর সন্ধেবেলা বাড়িতে এসে দড়াম করে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। হাজার ধাক্কাধাক্কিতেও আর খোলে না। ডিনার করতে আসে না। আবার কোনও দিন হয়তো বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত একটা-দেড়টা পেরিয়ে যায়। তার উপরে আছে শাশুড়িমায়ের একঘেয়ে ভাঙা রেকর্ডের মতো বাণীবর্ষণ। যেন এই সব কিছুর জন্য একমাত্র কস্তুরীই দায়ী। কস্তুরী ভেবে উঠতে পারে না সে কী করবে। এর মধ্যেই এক দিন আকিঞ্চন একটা গুড নিউজ় দিল! মেয়ের এইট্টিনথ বার্থডেতে নাকি মেয়েকে ওয়াইনের বোতল গিফট করবে। কী একটা নাম বলেছিল, খুব দামি। আকিঞ্চন প্লেনে উড়িয়ে আনবে স্কটল্যান্ড থেকে। বোঝো!
ফের কাচের টুকরোগুলোর দিকে নজর গেল কস্তুরীর। মনের উপর আরও ওজন চাপল। যতটা না শখের পোর্সেলিনের ডিশটা ভেঙে যাওয়ায়, তার চেয়েও বেশি তার যত্ন করে করা খাবারটা কেউ মুখে না তোলায়। মেঝেয় কাচের টুকরো আর যত্রতত্র ছড়ানো আলুর পরোটা আর তার নতুন রেসিপি আলু-বাহারি। সাধারণ মাছের ঝোল ভাত আজকাল বাপ-মেয়ের মুখে রোচে না। সকালে রুটি আর আলু-পটলের মাখা-মাখা তরকারির পাট উঠে গিয়েছে সেই কোন কালে। আজ সপ্তাহের মাঝামাঝি একটা ছুটি পাওয়া গেছে বলে কস্তুরী ইউটিউব খুলে বসেছিল। এই কাণ্ডটা সে মাঝে মধ্যেই করে থাকে। বিশেষ করে বাপ-মেয়ের মনের মতো মুখরোচক রান্নার চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে। আকিঞ্চন কাল রাতেই নিদান দিয়েছিল, সকালে বেরোবে। ঠিক ক’টায় সময় খুলে বলেনি। মেয়েটাও একদম বাবার কপি-পেস্ট। এই বলল, “খেতে দাও, বেরোব।” তার পর পাঁচ মিনিটের মধ্যে হতভম্ব কস্তুরীর সামনে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল। ময়দাটা মেখে রেখে একটা ওভেনে আলুসেদ্ধ বসিয়ে দিয়ে চটজলদি রান্না হিসেবে আলু-বাহারি খুঁজে পেয়েছিল। বেশি ঝকমারি নেই। ফ্রাইং প্যানে মাখন গরম করে, পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে রাখতে হবে। ভাজার সময় সামান্য নুন। তার পর ওই প্যানেই আলুতে একটু নুন দিয়ে ভাজা। দরকারে একটু মাখন দেওয়া যায়। ঘরে মাখন বাড়ন্ত বলে কস্তুরী সামান্য ঘি দিয়েছিল। আকিঞ্চনের শুগারের টেন্ডেন্সি। তাই আলুর স্টার্চ ফেলে দিয়েছিল। এর পর ঢিমে আঁচে ঢাকা দিয়ে ভাজা, যাতে আলু সেদ্ধ হয়ে যায়। আলু লালচে হয়ে গেলে ভাজা পেঁয়াজ, ধনেপাতা কুচি ও গোলমরিচ ছড়িয়ে সার্ভ করা। সোজাসাপটা রান্না।
বিপত্তিটা ঘটল খাবার টেবিলে। পরোটা ছিঁড়ে আলুতে জড়িয়ে মুখে দিয়েই মেয়ের চিল-চিৎকার। কী ব্যাপার? নুন হয়নি। কস্তুরী আলতো করে আলু-বাহারি জিভে দিয়ে দেখল। নাঃ। সব কম্বিনেশন তো পারফেক্ট। কিন্তু মেয়েকে বোঝায় কে? তবু চেষ্টা করেছিল কস্তুরী। আলতো করে মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে বলতে গিয়েছিল, “কই রে। সব ঠিকই তো আছে। আর এক বার মুখে দিয়ে দেখ।”
এ বার ফল হল উল্টো। ডান হাতের এক ঝটকায় পরোটা আর আলু-বাহারি সমেত পোর্সেলিনের প্লেট পপাত ধরণীতলে। কাচ ভাঙার আওয়াজে টয়লেট থেকে মুখে শেভিং ফোম মাখা অবস্থাতেই বেরিয়ে এসেছিল আকিঞ্চন। সবটা না শুনেই শুরু হল স্ত্রীর উপর চোটপাট। মেয়ে বেরিয়ে গেল হনহন করে। বাপও “মেহুই খেতে পারল না, আমি ট্রাই না-ই বা করলাম...” বলে ফের টয়লেটে ঢুকে গেল। মিনিট কুড়ি পরে আকিঞ্চনের গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ মিলিয়ে যেতেই চোখে জল এসে গেল কস্তুরীর। মাসখানেক আগের কথা মনে এল।
সন্ধেবেলা। ঘন ঘন ডোরবেল। এমনিতে রায়বাড়িতে গেস্ট বিশেষ কেউ আসে না। বারান্দা থেকে নীচে উঁকি মেরে কস্তুরী দেখল, মেহুলি দাঁড়িয়ে আছে। মেহুলি ক্যারাটে শেখে। শখে। সপ্তাহে তিন দিন যায়, কোনও দিন যায় না। কস্তুরী ভেবেছিল, হয়তো সেখানেই গেছে। ভাল করে নজর করে দেখল, মেহুলির সঙ্গে জনাচারেক মেয়ে রয়েছে। দরজা খুলে দিতে বন্ধুদের নিয়ে মেহুলি সোজা নিজের রুমে এবং দরজা বন্ধ। এ আবার কী! বন্ধু আসতেই পারে, নিজেদের মধ্যে গপ্পোসপ্প করবে তাতে আর দোষ কী, তা-ই বলে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার কী হল! হালকা পুশ করে কস্তুরী বুঝল ভিতর থেকে লকড। কস্তুরী চলে আসছিল, গন্ডগোল বাধালেন কেতকীবালা। ‘কে এল’ ‘কে এল’ করতে করতে তিনি বার বার আঘাত করায় এক সময় মেহুলি দরজা খুলে দিতে কেতকীবালা এবং কস্তুরী দু’জনেই স্তম্ভিত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy