ছবি: কুনাল বর্মণ।
বল্লালের কথা শুনে তমা জিজ্ঞেস করল, “ঠাম্মি রান্না করতেন?”
“ও, তুমি তো জানো না, অবশ্য জানবেই বা কী করে! আমার জ্ঞান হওয়ার আগেই মা মারা যান।”
“ইসস! আহা রে!”
“আমার বয়স বছর তিনেক যখন, তখন বাবা আবার বিয়ে করলেন। পরে আরও দুই ভাই হয়।”
“সৎমা ভালবাসতেন নিশ্চয়ই!”
“সেই সুযোগটাই তেমন হয়নি। প্রাথমিক পেরোবার পরেই হস্টেলে পাঠিয়েছিলেন বাবা। আমি তখন থেকেই শিকড়বিচ্ছিন্ন। ছুটিগুলোয় অন্যরা বাড়ি যাওয়ার জন্য কাঁদত, আমি না যাওয়ার জন্য। যেতে তাও হত। গেলে মনে হত, যেন অন্য লোকের বাড়িতে বিনা নিমন্ত্রণে গিয়ে উঠেছি।”
“বাবা?”
“আমরা গ্রামের ছেলে। সেই করিমপুর সীমান্তের কাছে বাড়ি। সেখানে তখনকার দিনে ছেলেমেয়েদের ভালবাসা, আদর মানে আদিখ্যেতা। বরং পিটিয়ে শাসনটাই ছিল স্বাভাবিক! তাই বাবা কোনও দিন বাড়তি কিছু দেখাননি। আর আমি যেহেতু বরাবরই বাইরে বাইরে থেকেছি, তাই সম্পর্কটা কোনও দিনই গভীর হয়নি, ভাল কি বাসেন না, নিশ্চয়ই বাসেন! তবে সবার প্রকাশভঙ্গি তো সমান নয়।”
বল্লালের এই কথাটায় তমার বিপ্লব আর স্নেহময়ের কথা মনে পড়ে গেল। তার পরই মনে পড়ল গরিমার কথা। সে যে আজ যাচ্ছে না, সে যে বল্লালের সঙ্গেই প্রায় রয়েছে গত সন্ধ্যা থেকে, তার বিন্দুবিসর্গও ও জানে না। জানানোর সময় নেই, ইচ্ছেও নেই। এক হাতে আলতো করে ফোনটা সুইচড অফ করে দুটো হাতের ওপর চিবুক রেখে বল্লালের কথা শুনতে শুরু করল সে। গরিমা থাকলে তার ভঙ্গি দেখে নিশ্চয়ই বলত একে কথা শোনা নয়, বলে কথা গেলা। শ্রবণশক্তিকে চোখের পর্দায় এনে তমা তখন বলছে, “এখন কেমন আছে ওরা? কোথায় আছে? যোগাযোগ আছে তোমার সঙ্গে?”
চানঘর থেকেই জামা, প্যান্ট পরে বেরিয়েছিল বল্লাল। ঢিলেঢালা জামা প্যান্ট। এখন সে একটা চেয়ারে বসে সামনের চেয়ারে পা তুলে দিয়েছে। তার শরীরীভাষায় ক্লান্তি মোচনের ইঙ্গিত। তার চোখের তলায় কালি। গবেষণা, পড়ানো, এদিক-ওদিক ঘোরা আর বাউন্ডুলেপনার জন্য সে কি খুব ক্লান্ত? বল্লালের জন্য ছুতো খুঁজে খুঁজে সহানুভূতি জড়ো করে তমা। তার প্রশ্নের উত্তরে বল্লাল তখন বলছে, “যোগাযোগ মানে উৎসব, অনুষ্ঠান হলে আমি যাই। ওরা এখনও ওখানেই আছে। আমি বলেছি সম্পত্তির ভাগ আমি নেব না। ভাইরা তাতে খুশি। বাবা খুব অথর্ব হয়ে গেছেন। আমি মাসে মাসে সামান্য কিছু পাঠাই। যখন যাই বাবা, মা-র জন্য ধুতি, শাড়ি নিয়ে যাই।”
“মা কী বলেন?”
“বলেন বিয়েটা করলে তো হয়!”
“তা মা পাত্রী দেখলেন না।”
“পাগল! দেখলে তো ধরে আনতেন কোন পুঁটির মা ধরনের মেয়ে। মাথায় অ্যাত্ত বড় ঘোমটা।”
“তোমার তো পুঁটির মা-ই দরকার।”
“আমার তো কাউকেই দরকার নেই।”
“ঠিক? ভেবে বলছ তো?”
“তোমার মনে নেই, মুন্সিয়ারিতে বলেছিলাম ৫৬ জন আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে, এবার না হয় সেটা ৫৭ হবে। ঝোলা তো বাঁধাই আছে।”
“অত সহজে তো পালাতে পারবে না পাগলাঝোরা! আমি তো সেই করিমপুরে গিয়ে হাজির হয়ে তোমার মাকে প্রণাম করে বলব, আমিই পুঁটির মা।”
“যাচ্চলে! পুঁটিটা কোথায়?”
“আসবে, আসবে! সময় হোক, পুঁটি, কই, রুই, কাতলা, হাঙর, তিমি সব আসবে। এসে বলবে বাকি ৫৬ জনের হিসেব কোথায়?”
“আমি বলব অডিট চলছে।”
“অডিটই তো চলছে ইতিহাসবাবু। আমি যদি বলি ওই ৫৬ বন্দরে নৌকো থামাতে থামাতেই দশটা বছর কেটে গেল!”
“আমার বাড়ির লোকেরা গ্রামে থাকে। অত বুঝবে না!”
“আমি ধরে ধরে বোঝাব তোমার মাকে! বলব, দেরাদুনে আপনাদের পুত্রবধূ আছে, জানেন তো?”
“উনি প্রদীপ জ্বেলে তোমায় বরণ করে নেবেন।”
“ঝাড়গ্রামেও শাখা খোলা হচ্ছে, জানেন তো।”
“এই, ঝাড়গ্রাম আবার কোথা থেকে এল? ওখানে তো বছরে এক বারও যাই না!”
“তার মানে অন্য সব জায়গায় গল্প আছে।”
“ও তো মাটির গল্প।”
“নিম্নচাপের অকালবর্ষণে মাটি তো ঝুরঝুর করে কাদা হয়ে যাচ্ছে বল্লালস্যর।”
“কাদাই তো সার।”
“কাদা তো কলঙ্কও স্যর।”
“আরে না রে বাবা, ওটা আমার গবেষণা।”
“তুমি তোতলাচ্ছ কেন?”
“কো-কো কোথায়?”
“ক’টা বিয়ে করেছ তুমি?”
“একটাও না।”
“একটাও না?”
“সত্যি বলছি, মাটি ছুঁয়ে বলব?”
“একটা বিয়েও করোনি? কিন্তু আমি যে জানি তুমি একটা বিয়ে করেছ।”
“কবে? কোথায়? কী সব যে বলো না তুমি!”
তমা মুখ গম্ভীর করে উঠে যায়। গিয়ে দাঁড়ায় বল্লালের চেয়ারের পিছনে। তার পর দু’হাতে পিছন থেকে তাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে প্রশ্ন করে, “মনে নেই? মুন্সিয়ারিতে গভীর রাতে ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে তুমি একজনকে বিয়ে করেছিলে?”
বল্লাল তার হাত দিয়ে তমার হাত দুটো ধরে থাকে। উত্তরে বলে, “না গো তমা ম্যাডাম, ওটাকে বিয়ে বলা যায় না।”
তমা সেই ভাবেই ঠোঁট ঠেকিয়ে বলে, “ওটাও বিয়ে নয়? কেন বল্লাল স্যর?”
বল্লাল বলে, “ওটা তো পেতনি! তুমি বলো, অত রাতে মানুষ পাওয়া যায়?”
তমা আলিঙ্গন খুলে বল্লালের পিঠে কিল মারতে মারতে বলে, “আমি এখন পেতনিই!”
বল্লাল অচঞ্চল গলায় বলে, “না হলে কেউ নিমতলা শ্মশানে গিয়ে আমাকে খুঁজে বের করে!”
তমা ছেলেমানুষের মতো পিছিয়ে যায়। বল্লাল তার হাতটা টেনে বলে, “আমার তো পেতনিই চাই। সেজন্যই তো আগের ৫৬ জন ভোকাট্টা হয়ে গেছে। সেজন্যই তো নিমতলায় বাউন্ডুলে ভূত খুঁজে পেল তার পেতনিকে!”
তমা আবার এসে বসল বল্লালের পাশে। বাইরে বৃষ্টি কখনও বাড়ল, কখনও ধরল, কখনও গতি কমাল। এখানে ওই চেয়ারে বসেই কথার সমুদ্রে ভেসে গেল দু’জনে। কথাও এত প্রবহমান হয়? কথার স্রোতও বন্দর খুঁজে না পেয়ে ভেসে বেড়ায়? তমা কখনও উঠে খিচুড়ি চাপাল। বল্লাল কখনও উঠে ঝুলবারান্দা থেকে বৃষ্টি দেখল। তার পর আবার এসে বসল চেয়ারে। কথায় হারাল ঘড়ির কাঁটা।
খিচুড়ি আর পাঁপড় ভাজা হল ভাল লাগার উনুনে কথার জ্বালে। সেই সাধারণ খাবারই স্বর্গীয় ভোজ বলে মনে হল তাদের। কখনও স্মৃতিচারণের কোনও কঠিন কোণে চোখ সজল হল তমার। কখনও ফেলে-আসা জীবনে ভালবাসার ছোঁয়াটুকু না থাকা সহস্র এক ঘটনার কোনও একটি মনে পড়ে গলা ধরে এল বল্লালের। কখনও বল্লাল ছবি এঁকে বোঝাল দুন উপত্যকার কোন অরণ্যে তার ডেরা, তার প্রতিবেশ, প্রতিষ্ঠান। কখনও তমা কলমের আঁচড়ে বোঝানোর চেষ্টা করল সেই নদীটার কথা যেটা বেড় দিয়ে রেখেছে তার শৈশবের সুখুচর গ্রামকে। খাবার টেবিলে বসে হাত শুকিয়ে গেল, কথার নদী শুকোল না।
বল্লাল খিচুড়ি খেয়ে পরম তৃপ্তিতে বলল, “কী ভাল রেঁধেছ গো তুমি, পুরো পুঁটির মা!”
তমা বলল, “এবার তা হলে যাও, পুঁটিকে স্কুল থেকে নিয়ে এসো। ওর ছুটির সময় হয়ে এসেছে।”
বল্লাল বলল, “আজ বরং তুমিই যাও, আমার ঘুম পাচ্ছে।”
বলে একটা হাই তুলবে। তমা বলবে, “ও, বলতে ভুলে গেছি, ওর ছুটির দেরি আছে, আজ স্কুলে ম্যাজিক দেখাবে...”
অমনি বল্লাল বলবে, “প্রাইমারিতে আমাদের স্কুলে এক জন ম্যাজিক দেখাত বছরে এক বার...”
তমা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলবে, “আমাদেরও!”
তার পর আবার তারা কথায় ডুবে যাবে। আটকে থাকবে শব্দের অট্টালিকায়। কথা বলতে বলতে আরও এক বার হাই উঠবে বল্লালের। তমা এক নিমেষে উঠে গিয়ে তার জন্য বিছানা করে এক রকম ঠেলে তাকে ঘুমোতে পাঠাবে। বল্লালের আপত্তি উড়িয়ে বলবে, “মুন্সিয়ারির কথা মনে নেই? এখন আমি তোমায় বলব, টুক করে একটু চোখ বুজে নিতে। তার পর বিকেলে বৃষ্টি ধরবে, আমরা বেরোব সামনের রাস্তায় ঘুরতে...”
বল্লাল বলবে, “রাস্তা ডুবে গেছে।”
তমা ছোটদের ভোলানোর মতো করে বলবে, “আমরা সেখানেই কাগজের নৌকো ভাসাব।”
বল্লাল বিছানায় উঠে বসে বলবে, “মনে আছে ছোটবেলায়?”
তমা নির্দ্বিধায় তার মুখে চাপা দিয়ে বলবে, “কিছু মনে নেই। চোখের কোলে কালি পড়ে গেছে না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। এখন আর একটা কথাও নয়, ঘুমোও।” বলে নিজে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বল্লালের মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। হাত বোলাতে বোলাতে হাত নেমে আসবে তার কপালে, নাকে, গালে। তমা টের পাবে উষ্ণ শোণিতের মতো, বাইরের সশব্দ বৃষ্টির মতো অঝোর ধারা বর্ষণ হচ্ছে বল্লালের চোখ থেকেও। বাইরের তমা স্থির থাকবে। তার ভিতরের নারী কাতর হয়ে উঠবে। করুণায়, মায়ায় সিক্ত হবে সে আশরীর। তার পর বল্লাল গড়িয়ে পড়বে গাঢ়তম ঘুমে। বাইরে আসবে তমা। প্রথমেই চোখ যাবে ছোট্ট টেবিলটার ওপর। আধফোটা স্বর্ণচাঁপাগুলো তখন প্রস্ফুটিত হয়েছে।
পরের দিন
দৃষ্টির আড়াল সকালে ঘুম ভাঙার পর বেশিক্ষণ আর শুয়ে থাকতে পারে না তমা। কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম হল। ঘুম ভাঙার পর বিছানায় উঠে বসল সে। হাঁটু ভাঁজ করে হাঁটুর ওপর কনুই, আর তার ওপর থুতনি রেখে একদৃষ্টে তাকিয়েই থাকল জানলার দিকে। নিম্নচাপের বৃষ্টি তখন ক্ষণিক বিরতি দিয়েছে। আকাশের চাপা মেঘলা, ভারী, ভিজে ভিজে আবহাওয়া বোঝা যাচ্ছিল বন্ধ ঘর থেকেও। আর তমার ভঙ্গি থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে, সে একটুও খুশি নেই। খুশি নেই বলে ঘুম থেকে উঠেই পুতুলের মতো, ছেলেমানুষের মতো এ ঘর, ও ঘর করল না। দৈনন্দিন কাজও শুরু করল না। এই মুহূর্তে তার মুখ দেখলে মনে হবে সে-ও থমকে আছে আকাশের মতো, একটা টুসকি দিলেই ঝরে পড়বে জল। অবশ্য তার কারণও ছিল।
করবী গাছের ভিজে পাতা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছে নীচে। সেদিকে তাকিয়ে তমা ভাবতে থাকে, গতকাল দুপুরেও এই বাসাতেই তারা কত কথা বলেছে, গড়িয়েছে সুখ প্রবাহে। তার পর কী যে হল! প্রায় সন্ধ্যার সময় ঘুম থেকে ধড়মড় করে উঠে বসে বল্লাল বলল, “আমায় যেতে হবে তমা।”
পাশের ঘরের সোফায় শুয়ে তারও চোখ লেগে এসেছিল। সে তখন বল্লালকে বলেছিল, “তোমার ঝাড়গ্রাম সফর পিছিয়ে দিলে হয় না?”
বল্লাল দ্রুত উঠে বেসিন থেকে চোখে-মুখে জল দিয়ে বলেছিল, “ও রকম সফর তো আমি বছরে কুড়িটা করি। এবার থেকে তোমাকেও নেব। আমায় দেরাদুনে ফিরতে হবে। পরশু একটা সেমিনার আছে। আমায় থাকতেই হবে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মনে পড়ে গেল।”
তমা বলল, “এত রাতে তুমি দুন যাবে? টিকিট?”
বল্লাল হেসে বলেছিল, “চিন্তা কোরো না, হয়ে যাবে একটা ব্যবস্থা। আমি কি প্ল্যান করে যাতায়াত করা লোক!”
তাকে আর আটকায়নি তমা। দ্রুত হাত চালিয়ে জলখাবার করে দিয়েছে। দিয়েছে দিনাবসানের চা। বল্লাল তার হাতে চাপ দিয়ে বলেছে, “মনখারাপ কোরো না। যে সংসারের বয়লার এখানে আর চিমনি ওখানে, সেখানে এরকম ব্যাঘাত তো আসবেই।”
মাথা নেড়েছিল, কিন্তু মনখারাপকে দূরে রাখতে পারেনি। তৈরি হয়ে যখন বল্লাল সত্যিই চলে গেল, তখন মনে হল সে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলবে। এই প্রথম এই ফ্ল্যাটে নিজেকে তার একা বলে মনে হল, এই প্রথম সাত সকালের আলোয় সে দেখতে পেল একাকিত্বের ছায়া।
বল্লাল বেরিয়ে যাওয়ার সময় সে ছলছল চোখে দাঁড়িয়েছিল, সে চলে যাওয়ার পর সত্যিই কেঁদে ফেলল তমা। তারও খানিক পর সে ফোনটা হাতে নিল বল্লালকে ফোন করে ট্রেনে জায়গা পেল কি না, ডিনার পেল কি না জানার জন্য। এবং তার পরই চমকে গেল।
সেই সকালে ফোন বন্ধ করার পর সময় কী ভাবে কেটে গেছে খেয়ালই ছিল না তার, মনে ছিল না ফোনটা চালু করার কথাও। মা নিশ্চয়ই ভয়ানক রেগে আছেন। ফোন চালু হওয়ার পর হুড়মুড় করে বার্তাগুলো এসে পড়ল তার হাতের ফোনে। হ্যাঁ, মা দু’বার ফোন করেছেন, বল্লালবাবু এই যাওয়ার পরেও দু’বার ফোন করেছেন, গরিমা এক বার আর বিপ্লব ফোন করেছে চব্বিশ বার। সংখ্যাতত্ত্ব কি কিছু প্রকাশ করে? মাথা ঘামায়নি সে। ভেবেছিল অন্য ফোনগুলো দু’-চার কথায় সেরে বল্লালকে দীর্ঘ ফোন করবে। তাই মাকে ফোন করল, গরিমার সঙ্গে মামুলি দু’-চারটে বাক্য বিনিময় হয়েছিল, তার সঙ্গে কথা শেষের আগেই পর্দায় ফুটে উঠেছিল ‘বিপ্লব কলিং’। সে হ্যালো বলতেই অন্য দিক থেকে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে বিপ্লব বলেছিল, “তুই ঠিক আছিস?”
সে যেন একটু বিরক্ত হয়েই বলেছিল, “বেঠিক থাকব কেন?”
“না, অনেক ক্ষণ ফোনটা বন্ধ ছিল তো!”
“আমি ফোন বন্ধ রেখে কিছু কাজে মন দিয়েছিলাম। বাকি পড়ে ছিল অনেক দিন।”
“ও। ঠিক আছে। আমি ওই বাড়ির ব্যাপারটায় কথা বলব বলে ফোন করে দেখলাম বন্ধ। তার পর অনেক বার ফোন করেছি।”
“আমার মনে ছিল না ফোনটা বন্ধ করে রাখা।”
“অভ্যেস নেই তো। আসলে আমি জানতে চাইছিলাম দক্ষিণ পূর্ব না দক্ষিণ পশ্চিম?”
“কিসের দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম?”
“আমি জানতে চাইছিলাম, তোর যেন কোন দিকে মুখ ফ্ল্যাট পছন্দ, দক্ষিণ পূর্ব না দক্ষিণ পশ্চিম?”
“কেন? কী হবে জেনে?”
“সত্যিই কিছু হবে না। কারণ ওই আবাসনে বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাট আছে, কিন্তু দক্ষিণমুখী একটাও নেই। তাই বাতিল। তাই ফোন করেছিলাম।”
বিপ্লবের ফোনের কারণ শুনে তমার মনে হয়েছিল অভিনয়। মনে হয়েছিল, নাটক করছে সে। তার পর মনে হয়েছিল, অভিনয় করার মতো আবেগ থাকলে বিপ্লব বোধ হয় যন্ত্রমানব হয়ে থাকত না।
তার পর সে ফোন করেছিল বল্লালকে। বল্লাল আর সে যেন এক অনন্ত বাক্যালাপের আরব্য রজনী চ্যানেল, সংযোগ হলেই কথা শুরু হয়ে যায়। এত কথা তাদের কী করে জমে কে জানে! হু হু ছুটতে থাকা ট্রেনের সঙ্গে যখন পাল্লা দিতে পারে না মোবাইল টাওয়ার, শূন্যে ভাসা তরঙ্গরাশি যখন সূত্র মেলাতে ব্যর্থ হয়, তখন ফোন কেটে যায় তাদের। আবার সংযোগ পেতে অনেকটা দেরি হয়। ফের সংযোগ কাটে। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে তমা শয্যা নেয়। ঝুপ করে অন্ধকার নামার মতো দুঃখ নেমে আসে তার ঘরে। একাকিত্বের দুঃখ। যে-দুঃখ গত দু’বছরের একা থাকায় কখনও হয়নি তার। যে বালিশে বল্লাল শুয়েছিল, সেখান তার ঘ্রাণ খোঁজে সে। তার পর কখন যেন ঘুমিয়েও পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy