একটু বেশি রাতে ফের বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে। বার বার তমার ঘুম ভেঙে গেল। এক বার মনে হল, ফোন করলে হয় বল্লালকে। আর ছেলেমানুষের মতো ভয় হল, যদি সেই দুপুরে গিয়ে ঘুম ভাঙে আর বল্লাল ফিরে যায় কফি হাউস থেকে! মনে হল রাত যেন আর কাটছেই না। রাতে এক বার বিছানায় উঠে বসল সে। নিজেকে প্রশ্ন করল, তা হলে এটাই কি প্রেম? তার কলেজের ছাত্রীরা যেমন প্রেম করে, সেই রকম প্রেম তাকেও মজাল? তা হলে বিপ্লবের বেলায় এক দিনও এ রকম হয়নি কেন? তা হলে কি সেটা প্রেম নয়? না কি সেটাই আসল প্রেম? এটা সাময়িক উচ্ছ্বাস? ভাবতে পারে না সে। ঘুমিয়ে পড়ে। তার ঘুমে দেখা দেয় সেই মিনিবাসের পিছনটা, যেখানে লেখা, ‘ঢুলব দুজনে’। মিনিবাসের সিটে কারও একটা কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোনোর স্বপ্ন দেখতে দেখতে সে ঘুমিয়ে পড়ল।
অকাল বাদল
সকালে তাড়াতাড়িই ঘুম ভাঙল তমার। ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। আবার ঝুলবারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল সে। করবী গাছের কাণ্ড, পাতাগুলো পর্যন্ত ভিজে গেছে জলে। চলন্ত ট্রেনে বসে থাকলে যেমন মনে হয় বিগত দীর্ঘ ক্ষণ ও পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে এর গতির হেরফের হবে না, তেমনই মুষলধারার বৃষ্টি দেখেও মনে হল সে ঝরছে অনেক ক্ষণ থেকে এবং ঝরবেও অনেক ক্ষণ পর্যন্ত। বৃষ্টির জন্য চিন্তিত হল না তমা। নাহয় একটা ছাতা নিয়ে বেরোবে, নাহয় বাস না পেয়ে হেঁটে যাবে। কলেজ আজ যাবে না, ঠিকই করেছিল। তাতে অসুবিধে নেই। শৃঙ্খলাপরায়ণ তমাম্যাডাম ছুটি নেন খুব কম। আর এখন ক্লাসও নেই কলেজে। বাইরের প্রকৃতি দেখা হয়ে গেলে ঘরে ফিরে এল তমা। ফোনে হাত দিয়েই দেখতে পেল জ্বলজ্বল করছে একটি মিস্ড কল। সেভ না করা নম্বর। গত সন্ধ্যায় আসা সেই ফোন। তমা নম্বরটি সেভ করল পাগলাঝোরা নামে। কোনও কারণ নেই, মনে হল, তাই বল্লালকে ওই নামে লিখে রাখল সংখ্যার খাতায়। রোজের মতো স্নান সেরে তৈরি হয়ে নিল তমা, শুধু রান্না করল না। বাইরে বল্লালের সঙ্গেই খেয়ে নেবে কোথাও, এমনই ভেবে রাখল।
স্নানঘর থেকেই সে শুনতে পাচ্ছিল ফোনের আর্তি। বেরিয়ে দেখল পাগলাঝোরার ফোন। সে ফোন করতেই শোনা গেল তার গলা, “কলেজ স্ট্রিট তো ভাসছে!”
সে অবাক হয়ে বলল, “তুমি এখনই পৌঁছে গিয়েছ না কি?”
শুনে বল্লাল হাসতে লাগল। তার পর বলল, “হাঁটু পর্যন্ত জল। তা হলে কোথায় যাবে? নিমতলা যাবে, কাল যেখানে গিয়েছিলে?”
তমা ভুরু কুঁচকে বলল, “ওখানে তো ছাউনি নেই, সারা ক্ষণ ছাতা ধরে রাখলে কথা বলা হবে না। এই শোনো, তুমি কিছু খেয়ে বেরোওনি তো?”
বল্লাল বলল, “না, তুমি এসো, এক সঙ্গে খাব।”
তমা বলল, “কোথাও আসতে হবে না, তুমি আমার বাড়ি চলে এসো। দিগ্বলয় আবাসন। চিনতে পারবে তো?”
বল্লাল বলল, “তোমার ওখানে?”
“কেন, অসুবিধে আছে তোমার?”
“না, মানে ব্যাগট্যাগ সঙ্গে আছে তো!”
“এসো হে বল্লাল, এসো এসো। তোমার ব্যাগ নিয়েই এসো। মনে করো, তুমি একটা জাহাজ। তার নাম এম ভি বল্লাল... না, তার নাম এম ভি পাগলাঝোরা। আর আমি হলাম তোমার বন্দর। না হয় আমার এখানেই আজ ভিড়ল তোমার তরী।”
“হা-হা! এম ভি পাগলাঝোরা! আচ্ছা তাই। আর তুমি তমা হারবার। তমা, তুমি কী খেতে পছন্দ করো?”
“আছাড়!” বলে ফোন কেটে দেয় তমা। তার পর সে তৈরি হতে বসে। আজ বাইরে বেরোবে বলে একটা সাদামাটা কুর্তি আর ডেনিম বের করে রেখেছিল। এখন পরিকল্পনা বদলে যেতে অন্য পোশাক বের করল। বার করল শাড়ি। ঠিক করল পরিপাটি করে সাজবে। তাই যে যত্ন করে পরল কলমকারি। তার সঙ্গে মেলানো দীর্ঘ হাতা ব্লাউজ়। চোখে পরল কাজল। আয়নার সামনে বসে সাজতে সাজতে সে টের পেল, পুরনো ঘটনা তুলনার তুলাপাত্রে চেপে বার বার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে।
তমার মনে পড়ে যাচ্ছে, সে দিনও ছিল বর্ষার দিন। তার বাবা-মা বেশ ক’দিন থেকে তাকে ধাতস্থ করে দিয়ে গিয়েছেন। সন্ধ্যায় এসেছিল বিপ্লব। সে দিন প্রথম, সে দিনই তার শেষ আসা। তার পর একটু একটু করে শুকিয়ে গেছে সেই সম্পর্কের নদীখাত। এখন তা প্রায় নদী থেকে বিচ্ছিন্ন। অথচ অন্য নদী যখন এসে মিশল তার স্ৰোতে, তখন যেন কেঁপে উঠল তার পঞ্চেন্দ্রিয়। তমা বুঝতে পারে, পাগলাঝোরা তাকে করে তুলেছে পঞ্চদশী কিশোরীর মতো। সে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী গরিমাকে কলেজ না যাওয়ার কারণ জানাতে ভুলে যাচ্ছে, সে নিয়ম করে বাড়িতে ফোনের শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলছে। তার বাস্তব ও কল্পনা, চিন্তা ও ভবিষ্যৎচিন্তা, কাজ ও পরিকল্পনায় এখন শুধু বল্লাল। তাকে গৃহী করে তুলতে গিয়ে সে নিজেই কি কক্ষচ্যুত হয়ে গেল? না কি নদীতে নদীতে মিলনের সময় এমন কম্পন, এমন উচাটন সম্ভব, উচিত ও অবধারিত?
ডোরবেল বাজে।
নিঃশব্দ পায়ে প্রায় ছুটে যায় তমা।
দরজা খুলে দেখে, দাঁড়িয়ে আছে বিপ্লব।
বিপ্লব! এত অপ্রত্যাশিত কিছু আগে কখনও তার জীবনে ঘটেছে বলে মনে করতে পারল না তমা। অন্য সময় হলে হয়তো এতটা রূঢ় হত না সে, কিন্তু বার বার মনে হতে শুরু করল বল্লালেরও তো এখনই আসার কথা। তাই দরজা খুলে, ভেতরে আসতে বলার বদলে সে দরজায় দাঁড়িয়েই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি?”
তার প্রশ্নে মৃদু বিব্রত হয়ে সে বলল, “বাড়িটা ফাইনাল করে ফেললাম তমা। এই সুখবরটা তোমায় দেওয়ার জন্য ছটফট করছিলাম। মনে হল এটা ঠিক ফোনে বলার মতো নয়। তাই সামনে এসে বললাম।”
বলে তার হাতে মিষ্টির একটা বাক্স তুলে দিল বিপ্লব। তমা কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, “ও।” তার মাথা তখন সত্যিই কাজ করছে না। বিপ্লবই বলল, “যোগাযোগের দিক থেকে খুব সুন্দর জায়গায়। বেশ খোলামেলা। আজ যাই। তুমি নিশ্চয়ই বেরোবে। আমার তোমাকে শুধু খবরটা দেওয়ার ছিল। আসছি!”
বলে যেমন ধাঁ করে এসেছিল তেমনই ধাঁ করে চলে গেল বিপ্লব। তমা হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে তেমনই চুপ করে খোলা দরজায় হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকল। ঘড়ির সময় আর তার সাজ দেখে বিপ্লব ভেবেছে সে এখনই কলেজে বেরোবে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে সমানে। আজও বৃষ্টিতে ভেজেনি বিপ্লব। আজও তার অন্য হাতে ধরা ছিল নির্ভরযোগ্য ছাতা। বিপ্লব জানে, বৃষ্টিতে ঘরে থাকার মেয়ে নয় তমা। কিন্তু তমা জানে না, নদী-পরিত্যক্ত খাত বর্ষার
জলে পুষ্ট হয়ে ফের নদীতে এসে মিশতে চাইলে কী করতে হয়।
ঠিক সেই মুহূর্তে ফোনের বেজে ওঠা সুরধ্বনি তার চেতনায় আঘাত দেয়। ছুটে গিয়ে দেখে ডাকছে পাগলাঝোরা। ফ্ল্যাট নম্বর জানতে চাইছে। তমার মনে পড়ে যায় এই ছোট্ট ঘটনাটা একটা আছাড় খাওয়ার মতোই হয়ে গেল। সে ফোনে তো সেটাকেই তার প্রিয় খাবার বলেছিল!
বল্লাল এল এক মুখ লাজুক হাসি সঙ্গে নিয়ে। বেল বাজতেই এ বারও দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলল তমা। বাইরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে, তবে ধারাপাতের গতি কমেছে। গুমোট গরম উধাও, একটু ঠান্ডা ঠান্ডাই লাগছে। দরজায় এক হাত রেখে কোমরে আঁচলটা বেঁধে তমা বলল, “যে গোটা ভারত হুটহাট ঘুরে বেড়ায়, সে এইটুকু আসতে এতটা সময় লাগিয়ে দিল?”
বল্লাল মাথা নত করে বলল, “কত ক্ষণ সময় বেশি লাগিয়ে ফেললাম, তমা?” তমা দরজা আটকে এক মুখ হাসি কপট রাগে ঢেকে বলল, “অতিরিক্ত দশ মিনিট!”
বল্লাল তার হাসিমুখ এক মোলায়েম দুঃখ, হতাশায় ঢেকে বলল, “আর একটু দেরি হয়েছে তমা ম্যাডাম, দশটা বছর! এই ঠিকানায় পৌঁছতে আমার অতিরিক্ত দশটা বছর সময় লেগে গেল!”
বল্লালের এই কথাটা যেন কাঁপিয়ে দিল তমাকে। কিন্তু কথাটা তার যে কী ভাল লাগল! শব্দের যদি অবয়ব থাকত, কথার যদি আয়তন থাকত, তা হলে সে সেই অবয়বকে আদরে, চুম্বনে, আলিঙ্গনে ভরিয়ে দিত। কথার জনকের সেই আদর প্রাপ্য হয় না, সে তো ভাল কথা, মন্দ কথা, মন রাখা কথা, কথার কথা— কত কী-ই বলে!
এ কথার তাই কোনও উত্তর দিল না তমা। দরজা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ভেতরে এসো দয়া করে।”
তার পর লক্ষ করে দেখল, হাতে ছাতা থাকলেও বল্লাল প্রায় পুরোটাই ভিজে গেছে। পিঠে বড় একটা ব্যাগ। এটা কাল ছিল না। তার মানে তার অস্থায়ী ঠিকানা অনুপমের মেসেই এটা ছিল। বল্লাল ঘরে ঢুকে ঝপ করে মেঝেয় তার ঢাউস পিঠব্যাগটা রাখল। তার ওপর রাখল ভেজা ছাতাটা। তার পর হাতের মুঠোটা তার নাকের সামনে মেলে ধরে বলল, “এটা তোমার জন্য!”
তমা পরম বিস্ময়ে দেখল, সেই মুঠোয় পদ্মপাতার ওপর রাখা গোটা কয়েক চাঁপা ফুল। স্বর্ণচাঁপা। সে অবাক হয়ে বলল, “এই বর্ষায় এগুলো কোথায় পেলে?”
বল্লাল জিজ্ঞেস করল, “তোমার ভাল লেগেছে!”
তমা বলল, “ভীষণ ভাল লেগেছে!”
বল্লাল বলল, “অতিরিক্ত দশ মিনিটের হিসাব দিলাম। দশ বছরেরটা পরে দেব।”
তমা তখন মুগ্ধ এই নৈবেদ্যে। এ ছেলে জলভাসি শহরের কোন আদাড়-বাদাড় থেকে এই ফুল তুলে এনেছে কে জানে! অথবা কোন ফুলওয়ালা এই ফুল তাকে এনে দিয়েছে কে জানে! কিন্তু সে মুগ্ধ হল। মুগ্ধ হয়ে ভুলে গেল সদর দরজা বন্ধ করতে। ভুলে গেল অতিথি অ্যাপ্যায়ন। সে পরম সমাদরে আধফোটা চাঁপাফুলগুলো তার মুঠোয় ভরে গভীর ভাবে ঘ্রাণ নিল। সেই সুগন্ধ তার ফুসফুস থেকে হৃদয় হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। তার পর আবারও শ্বাস নিল। তার পর মৃদু স্বরে বলল, “এত সুন্দর উপহার আমি আগে কখনও পাইনি!”
কিন্তু কাকে বলছে? সে কোথায়? এ দিক-ও দিক তাকিয়ে তমা আবিষ্কার করল, সে দেওয়ালে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে তার বিভিন্ন বয়সের ছবির কোলাজ। আচ্ছা, বিপ্লব তা করেনি কেন? সেই মুহূর্তে তার মনে হল তখনও এই বাড়িতে কোনও অলঙ্করণ করা হয়নি। সে কি একটু বেশিই নির্মম হয়েছিল বিপ্লবের প্রতি? তমার এই এক দোষ। অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্ন এসে তাকে বিরক্ত করে সময়ে অসময়ে। সে বল্লালের দিকে তাকিয়ে বলল, “এই জন্যই তোমার নাম দিয়েছি পাগলাঝোরা। কোথায় ভিজে জামাকাপড় ছাড়বে, ভিজে গা মুছবে, তা নয়, দেয়ালের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছ!”
বলেই মনে পড়ল তার ভাঁড়ারের কথা। তখন গভীর চিন্তায় বলল, “এই রে, আমার কাছে তো ছেলেদের জামাকাপড় নেই, তোমায় কী পরতে দেব বলো তো?”
বলেই মনে হল, এখানে বিপ্লব থাকলে হয়তো বলত, ভালই হল, কিছু আর পরব না তা হলে! তার পরই মনে হল, কারও মুখে সে জোর করে কথা বসিয়ে দিচ্ছে না তো! আজ সকালে বিপ্লবের হঠাৎ, অপ্রত্যাশিত আগমনের জন্যই কি এটা হচ্ছে? এ বার তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বল্লাল বলল, “ভিজিনি তো, কোথায় ভিজলাম?”
তমা এ বার ভুরু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। তার পর প্রথমে গিয়ে সদর দরজা বন্ধ করে, বল্লালের ভারী ব্যাগ যত্ন করে একটা কাঠের চেয়ারে তুলে রাখে, তার ছাতাখানা খুলে মেলে দেয় এবং তার কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলে, “ভেজোনি, না? এটা যদি ভেজা না হয়, তা হলে ভেজা কাকে বলে?”
বল্লাল আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে বলে, “এই ভেজা তো আরামের। দুনের বৃষ্টি কী ঠান্ডা! ওখানে ইচ্ছে করলেও ভেজা যায় না তমা।”
তমা চোখ বড়বড় করে বলে, “সব পরে শুনব! আগে বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করো, তার পর বাকি কথা। আমার বারমুডা পরবে?”
বল্লাল বলল, “বদলাতেই হবে?”
তমা নীরবে মাথা নাড়ল, তখন সে বলল, “আমার ব্যাগে অনেক জামাকাপড় আছে, চিন্তা কোরো না।”
তার পর সে বাথরুমে গেল। তার পর সে খোলা গলায় জিজ্ঞেস করল, “তমা, সাবান কোথায়? এই তমা, এই গামছাটায় গা মুছব? তমা, আলোটা জ্বেলে দাও।” কেন কে জানে, তখন তমার হঠাৎ খুব গর্ব হতে লাগল। নিজেকে কেমন যেন সম্পূর্ণ বলে মনে হল। নিজেকে যেন কত বড়, পরিণত বলে মনে হতে শুরু করল। সে তখন দুধ ঘন করে কফি তৈরি করল। নিজে লুচি বেলে গরম গরম ভেজে রাখল খাবার টেবিলে পাশাপাশি দুটো থালায়। সে তখনও জানত না বাথরুম থেকে বেরিয়ে সেই লুচি দেখে “করেছ কী!” বলেই ছেলেটা খেতে বসে যাবে। সে জানত না বাউন্ডুলে তার ভিজে জামাকাপড় বাথরুমেই স্তূপাকৃতি করে রেখে খাওয়ার টেবিলে বসে লুচিতে কামড় দেবে। তার পর মনে পড়ার ভঙ্গিতে জিভ কেটে বলবে, “এ মা, আমি আগে খেয়ে ফেললাম!” তমা তখনও জানত না সে এত যত্ন করে কাউকে খাওয়াতে পারে! পরম তৃপ্তিতে তাকে লুচি-তরকারি খেতে দেখে তার মন যে এমন আনন্দে ভরে যাবে, তাও তো জানত না। সে নিজেকে কখনও নারী বলে ভাবেনি, ভেবেছে এক জন মানুষ হিসেবে। তার মধ্যেও যে এমন এক জন নারী এত দিন, এত বছর ধরে লুকিয়ে ছিল, তা জানত না সে। না কিতার মধ্যের নারীও তার কাছে পৌঁছতে দশ বছর বেশি সময় লাগিয়ে দিল?—‘এত দিন তুমি কোথায় ছিলে? আজ তোমায় কে তমার ঠিকানা দিল?
এই বাউন্ডুলেরাম? এই বৃষ্টিভেজা পাগলাঝোরার সঙ্গে কি সেই রাস্তাটা খুঁজে পেল, যা সব ঠিকানা মিলিয়ে দেয়!’ যদি দু’বছর আগে সে বিপ্লবের
সঙ্গে জুড়ে যেত, তা হলেও কি এই ঠিকানায় সে পৌঁছত? তমা বুঝতে পারে, অনেক কৌতূহল হয় এমনই, যার অনুভূতি হয়, স্পষ্ট উত্তর হয় না। আজ পড়ে থাকল তার প্রাতরাশ, সে পরম মমতায় পাশে দাঁড়িয়ে খাওয়াল বল্লালকে। আর তখন তার নিজেকে বেশ গিন্নি-গিন্নি মনে হল। কলেজে ক্লাস নিয়ে, ছেলেমেয়েদের শাসন করে যা মনে হয়নি আগে কখনও।
খেতে বসার টেবিল সামনে রেখে চেয়ারে বেশ আয়েশ করে বসল বল্লাল।
তমা বলল, “দুপুরে খিচুড়ি খাবে?”
বল্লাল বলল, “এই তো লুচি খেলাম, আবার দুপুরেও খাব? খিচুড়ি যদিও অনেক দিন খাইনি। খুব ছোটবেলায় অবশ্য প্রায়ই খেতাম, ঠাম্মি বেশি কিছু করতে পারত না তো!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy