ছবি: কুনাল বর্মণ।
তমার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই গরিমা বলল, “আজ এখনও চায়নাদি এল না? না কি বৃষ্টিতে সেও ডুব?” চায়নাদির বাইরে চায়ের দোকান আছে। সে রোজ দু’বার করে টিচার্স রুমে চায়ের কেটলি নিয়ে আসে।
তমা বলল, “জানি না। চা নেই তো কাজও নেই...” বলে তার চেয়ারখানা মেঝেয় ঘষে ঘষে গরিমার পাশে নিয়ে গেল তমা। গরিমাও যেন এই মুহূর্তটারই অপেক্ষায় ছিল। এরই মধ্যে আরও এক দফা বৃষ্টি এল। অন্ধকার হয়ে এল বাইরের চার পাশ। আর এ দিকে দুই বান্ধবী গলা নামিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মধ্যদিনের সংলাপে। শুরু করল গরিমা, “তোর সালোয়ারটা খুব সুন্দর। কিন্তু কাপড়টা তো টেরিকট। গরম হবে খুব।”
“বর্ষা বলে পরলাম। সকাল থেকে কী বৃষ্টিটা হচ্ছে বল তো!”
“তোর তো বৃষ্টি হলেই মন নেচে ওঠে আনন্দে।”
“তা ওঠে। ধেই ধেই করে মন নেচে ওঠে। কেন, তোর ভাল লাগে না?”
“আমার রাগ হয়।”
“কেমন রাগ, তমালবাবুকে কামড়ে দেওয়ার মতো?”
“বালাই ষাট। আমার তমলুকে রেগে কামড়াতে যাব কেন, ওকে তো আদর করে কামড়াব। ছোট্ট একটা কামড়, নাকের ওপর। অমনি চোখ ছোট ছোট করে তাকায় বাচ্চাদের মতো। বরং বলতে পারিস যেমন রাগ হয় স্নেহময়ের ওপর। আমার পরম শ্রদ্ধেয় পতিদেবতার ওপর।”
“তোরা ডিভোর্সটা করছিস না কেন?”
“করছি না মানে কী? এটা কি অনলাইন গেম? আসলে কী বল তো, অনেকগুলো ব্যাপার খুব ঠান্ডা মাথায় হিসেব করে চলতে হচ্ছে। এত দিন তাও চলছিল, মুন্সিয়ারি থেকে ফেরার পর আর ভাল লাগছে না আলাদা থাকতে। তমাল তো পুরো পাগল, বলছে, ‘তুমি এখনই ব্যাগ গুছিয়ে চলে এস।’ ওর মাও জানেন সব। সে সব ঠিক আছে। কিন্তু মামলা না মিটলে আমি আর ও এক সঙ্গে থাকতে পারব না। এখন ও ভাল উকিলের খোঁজ করছে। আজ বিকেলে দেখা হবে আমাদের। যদি উকিলের সময় হয়, তা হলে আজই দু’জনে দেখা করব তার সঙ্গে। কিন্তু কবে স্নেহময়ের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসব, কী বলব, মামলার কথা কী ভাবে যে স্নেহকে বলব কিছু বুঝতে পারছি না। তমাল তো মরিয়া হয়ে লেডিজ় হস্টেল খুঁজছে। ওয়ার্কিং মেয়েদের মেস হলেও হবে। বলছে সোজা সেখানে গিয়ে উঠে তার পর স্নেহকে ফোনে জানাতে।”
“এখন স্নেহর সঙ্গে তোর সম্পর্ক কেমন?”
“স্নেহর ধারণা, বিন্দাস আছে ও। ভেতরে ভেতরে যে সম্পর্কটা শেষ হয়ে খোলসটা পড়ে আছে তা ও বুঝতেও পারছে না।”
“মানে? ও একই রকম আছে?”
“তুই ভাবতে পারবি না তমা, ও যে কোন জগতে বাস করে তা নিয়ে তোর কোনও ধারণাই নেই তোর। জানিস, সে দিন কান চুলকোতে চুলকোতে আমায় বলছে, ‘হ্যাঁ গো, আমাদের কোন মাসে বাবা-মা হওয়া ভাল?’”
“বোঝো! তুই কী বললি?”
“আমি এখন আর কিছু বলি না। আগে তাকাতাম রাগী চোখে, এখন তাকাইও না। তোর এটুকু শুনে মনে হবে কী ভাল, কী চমৎকার লোক। কিন্তু যদি সকালে এক ঘণ্টা আমাদের বাড়িতে থাকিস, তা হলে দেখতে পাবি কী ওর চেহারা! ‘গরিমা, আমার টাই কোথায়, আমার মোজাটা খুঁজে পাচ্ছি না কেন? তুমি একটু গুছিয়ে রাখতে পারো না?’— এ সব নিয়ে তুমুল চিৎকার। সকালে বসে বসে খবরের কাগজ পড়বে, পা নাচিয়ে নাচিয়ে রাজনীতির শ্রাদ্ধ করবে। আর ন’টা বেজে গেলেই দেখতে হয় ওর চেহারা। আমি এই চিৎকার সহ্য করতে পারি না। আশপাশের লোকজন কী ভাবে বল তো!”
“রাতে ফেরার পর?”
“রাত অবধি অপেক্ষা করতে হয় না, দুপুরেই ফোন করে তিরিশ বার সরি বলবে। আমি আজকাল আর ফোন ধরি না, তখন এসএমএস করে সরি বলে। রাতে ফিরে পেছন পেছন ঘোরে। ধর জল ভরছি, ছুটে এসে সে কাজ করে দেবে। বাসন ধুচ্ছি, এসে করে দেবে সেটা। বারান্দায় মেলে রাখা জামাকাপড়ও ভাঁজ করে তুলে দিয়ে দাঁত বার করে হাসবে। আর কী গা জ্বালানো কথা জানিস, ওর শম্ভুদা বা অন্য কোনও আত্মীয় বন্ধু ফোন করলে বলবে, ‘নেহাত আমার বৌটা ভাল, অন্য কোনও মেয়ে হলে কবে ভেগে যেত!’”
“তুই সেই সুযোগে বলে দিলি না কেন কথাটা?”
“ওকে সামনাসামনি বলতে আমি পারব না রে। সে চেষ্টা করিনি ভাবছিস? কত বার ঝগড়ার সময়ে বলছি, তোমায় বিয়ে করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তখন কিছু বলেনি, পরে শান্ত পরিস্থিতিতে এ কথা, ও কথার পর টুক করে ছুঁইয়ে দিয়েছে, যে ভুল হয়ে গেছে তা নিয়ে আলোচনা না করাই ভাল। লোকটা যখন বদমেজাজি, তখন যে রাগ জমে, রাতে নরম নরম কথায় তার পুরোটা কি আর দূর হয়?”
“তাও তো তোরা এখনও জুড়ে আছিস। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সুখী দম্পতি। সেজেগুজে অনুষ্ঠানেও যাচ্ছিস। লোকে কী করে ভাববে, ভেতরটা শূন্য!”
“আমারও অবাক লাগে, জানিস! আমাদের অন্য সহকর্মীরা ছুটি পড়লে বাঁচে। রোজ কলেজে ঢুকেই কত জন বিরক্তি দেখায় বল! অর্ণবটা বলে, ‘উঃ! ফের খোঁয়াড়ে এলাম।’ শুভারতিদি বলে, ‘হরি দিন তো গেল, পার কখন করবে?’ কিন্তু আমি ওই বাড়ি থেকে বেরোলে প্রাণ ফিরে পাই, আর ওই বাড়িতে ঢোকার সময় মনে হয় যেন কারাগারে ঢুকছি।”
“আচ্ছা, তমালবাবুর সঙ্গে দেখা না হলেও কি তুই বেরিয়ে আসতিস?”
“খুব সত্যি কথা বলেছিস তমা। মনে কর, তোর কোথাও হয়তো কেটে গেছে। হয়তো ঘা হয়েছে। সেটা থাকতে থাকতে সহ্য হয়ে যায়। কিন্তু যখন সেটা খোঁচানো হয়, যন্ত্রণাটা অসহ্য হয়ে ওঠে।”
“বুঝেছি। মঞ্চে যথাসময়েই তমালবাবুর প্রবেশ।”
“না, তুই এখনও বুঝিসনি তমা। যদি তমালের সঙ্গে আমার দেখা না হত, ঘনিষ্ঠতা না হত, তা হলে সবই এখনও চলত মসৃণ গতিতে। আমি সকালে তুমুল বিরক্ত হতাম, দুপুরে ওর ফোনে একটু নরম হতাম, সন্ধ্যায় আর একটু নরম হয়ে ওর সঙ্গেই ঘুরতে বেরিয়ে যেতাম, রাতে নির্লজ্জের মতো ওর বুকে মিশে যেতাম। পরের দিনটা হয়তো সময়ে সব হয়ে যেত। তার পরের দিন আবার কিছু খুঁজে না পেয়ে গজগজ করা, তার দু’দিন পর ফের অসভ্যের মতো চিৎকার! শুধু এই একটা কারণই যে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য যথেষ্ট, আমি তা আদালতে এক বার জানাতে চাই। এক জন ভদ্র পরিবারের মানুষ এটা দিনের পর দিন সহ্য করে যেতে
পারে না।”
“কিন্তু তমালবাবু প্রবেশ না করলে...”
“ও হ্যাঁ, খেই হারিয়ে ফেলছি। ভেতরটা ফার্নেস হয়ে আছে রে তমা, বাইরেটা শান্তিবন। হ্যাঁ, তমাল আমার জীবনে না এলে এটাই চলত। আমি বিরক্ত হলেও বেরনোর কথা ভাবতাম না। কিছু বাস্তব সমস্যা ছিল। বাবা-মা থাকেন এলাহাবাদে, এখানে কোথায় থাকব, কখন চাকরি করব! কী ভাগ্যিস তাও থিসিসটা জমা পড়ে গেছে।”
“তমালবাবু তোকে মানসিক ভাবে খুব সমর্থন করছেন!”
“তুই ভাবতে পারবি না! ধর আমি বাড়িতে স্নেহময়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছি, দু’জনেই চেঁচিয়েছি, মন পুরো বিক্ষিপ্ত, তখন ওর সঙ্গে দেখা হল। অন্য কেউ হলে হয়তো সবটা শুনত, কার দোষ, কার গুণ তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করত, হয়তো স্নেহময়ের নামে দু’চার কথা বলত! ও কিন্তু ওই প্রসঙ্গই তুলবে না। ভুলেও তুলবে না। হয়তো ওর ফোন থেকে একটা জোক পড়াল বা ফোন থেকে দুটো ভিডিয়ো ক্লিপিংস দেখাল। খানিক ক্ষণ পরে আমি পুরো ভুলে যাই সব। ও জাদুকরের মতো আমার মন থেকে সব খারাপ লাগা মুছে দেয়। আমি তো তাই বলি ও আমার মাথাব্যথার ওষুধ। আর কত কী জানে! খবরের কাগজ বোধহয় আতসকাচ দিয়ে পড়ে মুখস্থ করে। ‘এখানে কী হয়েছে জানো, ওখানে কী হয়েছে জানো,’ বলে এমন এক একটা আকর্ষক বিষয়ে ঢুকিয়ে দেবে তোর মনকে যে, একটু পরে দেখবি তোর আর মাথাব্যথা নেই। এটাই তো মুশকিল রে, তখন আমার আর ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করে না।”
“আচ্ছা, তোরা ঘর বাঁধলে ওর সঙ্গে কখনও যদি ঝগড়াঝাঁটি, মনোমালিন্য হয়! তখন তোর পুরনো কথা মনে পড়বে না? আফসোস হতেও তো পারে?”
“এই তমা! একদম মনের কথা বলেছিস! আমি সে দিন তমালকে ফোনে ঠিক এই কথাটাই বললাম, যদি তোমার সঙ্গে বিয়ের পর ঝগড়া হয়! ও কী বলল জানিস? বলল, ‘সে তো হবেই। ঝগড়া ছাড়া বিয়ে হয় না কি? হবে, তাও তো তোমার সঙ্গেই হবে।’ বলল, তবে ও চেঁচাবে না। চিৎকার করা, জিনিসপত্র ছোড়া, খাওয়া বন্ধ— এ সব করতে গেলে ওর মা নাকি ঠেঙাবেন। ভদ্রমহিলা খুব ভাল। আমি দু’দিন-তিন দিন গিয়ে দেখা করে এসেছি। সে তো তুই জানিস।”
“আচ্ছা, ডিভোর্স হওয়ার পর তুই তো বিয়ে করবি। পরে যদি স্নেহময়ও বিয়ে করে, আর যদি তোকে নিমন্ত্রণ করে, ওর বিয়েতে যেতে পারবি?”
“তুই খুব অসভ্য। প্রচুর ভুলভাল বকিস।”
“একটা কাল্পনিক প্রশ্ন। ধর ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন। প্রার্থীর মানসিকতা যাচাই করা হচ্ছে।”
“তুই কিন্তু সমানে আমায় বকিয়ে যাচ্ছিস, নিজে কিছু বলছিস না! মুখে তালা দিয়ে রেখে শুধু আমার পেট থেকে কথা বের করে নিচ্ছিস।”
“আমার সব কথা তো তুই জানিস।”
“আমার কোনটা তুই জানিস না?”
“ভবিষ্যৎ।”
“চা নাও দিদি...” চায়নাদির ডাকে সংবিৎ ফেরে দুই তরুণীর। বাইরে বৃষ্টি তখন একটু ধরেছে। কলেজে আজ ক্লাস হচ্ছে না। টিচার্স রুমে আরও কয়েকজন শিক্ষক এসেছেন একে একে। প্রজেক্ট জমা দিতে জনা দু’-চার ছাত্রছাত্রীও এসেছিল তাঁদের কারও কারও কাছে। কোনও দিকেই চোখ যায়নি দুই বান্ধবীর। এখন তারা পাশাপাশি বসে চা খাচ্ছে। গরিমা ফোন ঘাঁটছে আনমনে। ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে সে তমালকে ফোন করছে। করে মৃদু উচ্ছ্বাসও দেখাচ্ছে, “ও পেয়েছ অ্যাপয়েন্টমেন্ট! দারুণ। চারটেয়? অসুবিধে নেই। ক্লাস নেই আজ। ওরে বাবা, তোমায় এত ভাবতে হবে না। কী? না, অত হয় না। উঁহু! হবে না। এই, তমা কিন্তু পাশে বসে আছে। তুমি ফোন রাখো না বাবা! হ্যাঁ, জানি। আমি চিনি। আচ্ছা। ঠিক আছে, এখন রাখি? গিয়েও তো কথা বলব না কি, এখনই সব শুনব? আচ্ছা, রাখলাম।”
অন্য দিকে তাকিয়ে কাগজের কাপে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সব কথাই কানে যায় তমার। সে অনুমান করে নিতে পারে বিপরীত প্রান্তের সংলাপ। কেন কে জানে, তার মনে বার বার বিপ্লবের মুখ ভেসে ওঠে। গরিমা যখন বলে, আলাদা হওয়ার কথাটা সামনে বলতে পারবে না, তখন মনে হয়। যখন প্রবল বিরক্তিতে স্নেহময়বাবুর বর্ণনা দেয়, তখন সে যেন মনের পর্দায় বিপ্লবের কাটা কাটা কথাগুলো শুনতে পায়, তার চিবুক শক্ত করা ছবিটা দেখতে পায়। আবার গরিমা যখন শান্তিবনের কথা বলে, রেস্তরাঁয় খেতে খেতে তমালের কাঁধে মাথা রেখে দেওয়ার গল্প শোনায়, সে তখন এক বাউন্ডুলেকে দেখতে পায়। সেই কল্পনাচিত্রে সে নিজেই গরিমা হয়ে ওঠে, গরিমার দুর্ব্যবহারের পাত্র স্নেহময় বিপ্লবের মতো আর পরম ভরসার তমাল বল্লালের চেহারা নেয়, ভাবতে ভাবতে সে চমকে ওঠে, কিন্তু ভাবনাটা বন্ধ করে না।
সংলাপ এমন এক প্রবাহ, যা এগিয়ে চলে ছন্দে। ছন্দপতন হলে কথা থেমে যায়। নতুন করে শুরু করতে হলে কাঠখড় পোড়াতে হয় বিস্তর। তমা আর সে চেষ্টা করে না। চেয়ার-সহ নিজের কক্ষপথে ফিরে আসে। গরিমাও ব্যস্ত হয়ে টেবিল গুছোতে শুরু করে। বোঝা যায়, এ বার সে উঠবে। কিন্তু তমার সর্বশেষ প্রশ্নের উত্তর সে দেয়নি! নিজের চেয়ারে চুপ করে বসে গরিমার দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে তমা। কিন্তু গরিমা তার দিকে তাকাতেই চায় না। টেবিলের কাজগুলো গুছিয়ে এক পাশে জড়ো করে, উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যাগ খুলে কী সব দেখে তমার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ‘চলি রে।’ তার পর ব্যস্ত পায়ে প্রায় ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তমার মনে হল ঘর থেকে বেরনোর পর তার গতি কমে যাবে। বাইরে তাকিয়ে দেখল আকাশটা থম মেরে আছে।
গরিমা বেরিয়ে যাওয়ার পর কাজে মন বসল তার। প্রজেক্ট খাতার একটা তোড়া শেষ করল। সেকেন্ড সেমেস্টারের একশো তিপান্ন জন ছেলেমেয়ের ইন্টারন্যাল অ্যাসেসমেন্টের কাজ কিছুটা এগোল। এর মাঝখানে এক বার দিবাকরদা এল। দিবাকরদা এই শহরের বইওয়ালা। পুস্তকের হোম সার্ভিস। এই চাকরিতে যোগ দিয়ে থেকে দিবাকরদাকে দেখছে সে। রোগাটে চেহারা। মুখটা শুকনো, কিন্তু চোখদুটো বাঙ্ময়। লোকটা তার সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগ পলিথিনে ঢাকা দিয়ে গোটা কলকাতা চষে বেড়ায়। অনেক লোক ওর চেনা, তাদের কাছে বইয়ের সম্ভার নিয়ে সে হাজির হয় মাসে এক দিন, দু’দিন। নতুন বইয়ের কথা বললে এনে দেয়। কোনও দুর্লভ বইয়ের জন্য আবদার করলে পুরনো বইয়ের দোকান ঘেঁটেও তা জোগাড়ের চেষ্টা করে। দিবাকরদার শুধু একটাই দোষ, কেউ দরদাম করলে আর তার কাছে বই বিক্রি করতে যাবেই না। এই শহরের আনাচে-কানাচে তার নাকি অনেক ক্রেতা। কোথাও অবসরপ্রাপ্ত অথর্ব বৃদ্ধ, কোথাও স্বেচ্ছা গৃহবন্দি রাজনৈতিক নেতা, কোথাও চাকুরে, কোথাও অধ্যাপক, কোথাও
ধনীর গৃহবধূ।
বাইরের প্রকাশনার একটা বই আনতে দিয়েছিল তমা। পলিথিন সরিয়ে বইয়ের ঢাউস ব্যাগ থেকে সযত্নে তার বইটা বার করে দিল দিবাকরদা। তার পর দাম বুঝে নিয়ে অন্য টেবিলে চলে গেল। আপাতত অন্য কাজ ভুলে বইটায় ডুবে গেল তমা। তার পর আকাশের সর্বশেষ সংবাদ, ভাবগতিক দেখার জন্য জানলার দিকে তাকাতে গিয়ে দেখল, দিবাকরদা বসে আছে অর্কদার টেবিলের সামনে।
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy