Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Novel

novel: মায়াডোর

সে দিন কাফেতেও মঞ্জীরার কপালে এ রকমই ভাঁজ দেখতে পেয়েছিল উত্তীয়। না, তার মুখচোখের অভিরাজের মতো ভাবলেশহীন দশা ছিল না।

ছবি: বৈশালী সরকার।

ছবি: বৈশালী সরকার।

অভিনন্দন সরকার
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:০৯
Share: Save:

উত্তীয় অলস চিন্তা করছে। তার মনে হচ্ছে সে আর কোনও দিনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। কিছু দিন পর তার চুল আরও লম্বা হবে, লতিয়ে যাবে ঘাড় ছাপিয়ে। দাড়ি ঘন হবে, চোখে থাকবে উদ্ভ্রান্তের দৃষ্টি। শহরের পথে পথে সারাদিন একা ঘুরে বেড়াবে উত্তীয়। বিরহী পুরুষ বা ব্যর্থ প্রেমিকের ধাপ দ্রুত পেরিয়ে যাবে উত্তীয়। তাকে দেখে বিবাগী এক উন্মাদ মনে হবে।

অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। অফিস, বাড়ি, বন্ধুদের আড্ডা নিয়ে দিব্যি জীবন কেটে যাচ্ছিল উত্তীয়র। কিছুর অভাববোধ ছিল না।

আসলে হয়তো এমন কিছুই ছিল না তার জীবনে, যা হারিয়ে গেলে অভাববোধ জন্ম নিতে পারে।

যেদিন প্রথম তাদের অফিসে পা রেখেছিল মঞ্জীরা, সেদিন থেকেই বেঁচে থাকাটা পাল্টে গেছিল উত্তীয়র।

বারবার তার সামনের চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল, তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল সব কিছু।

পাতলা গোলাপি ঠোঁটে যে পলকা বিষাদ লেগে ছিল, সেই বিষাদই যেন চোরা মেঘ হয়ে ঢুকে পড়েছিল উত্তীয়র বুকে। সেই মেঘ জমাট বেঁধেছে, রাতদিন ইতিউতি উড়ে বেড়িয়েছে উত্তীয়র ভিতরঘরে।

যেদিন কফি খেতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল উত্তীয়, সেদিনও কি সে জানত, সামনের মানুষটাও কত ব্যথা বুকে নিয়ে বেঁচে আছে?

না, প্রথম দিনই নিজের সব গোপন গভীর কথা উজাড় করে দেয়নি মঞ্জীরা। বরং কাফেটেরিয়ার সেই ঘণ্টাখানেক সময় প্রায় একা একাই বকবক করে গেছিল উত্তীয়।

বেরিয়ে আসার সময় বলেছিল, “আপনার থ্যাঙ্ক ইউ বলা কমপ্লিট হয়েছে ম্যাডাম, নাকি আর এক দিন বসতে হবে?”

মঞ্জীরা উত্তর না দিয়ে হেসেছিল।

অল্প পরিচিত পুরুষের এই ধরনের আপাতঘনিষ্ঠ প্রশ্নের উত্তরে যদি কোনও নারী নিরুত্তর থাকে, তবে সব সময় যে তা সম্মতির লক্ষ্মণ হবে তার নিশ্চয়তা নেই।

তবে অটোয় উঠে মঞ্জীরা যখন তার দিকে তাকিয়ে বিদায়ী হাসি হেসেছিল, তখন কেন যেন উত্তীয়র মনে হয়েছিল খুব তাড়াতাড়িই আবার দেখা হবে তাদের।

দেখা হয়েছিল, তবে খুব তাড়াতাড়ি নয়। মাস দেড়েক পরে মঞ্জীরার মায়ের বাকি ক্লেম সেটল হয়ে যাওয়ার খবরটাও ব্যাঙ্ক থেকে উত্তীয়ই জানিয়েছিল।

এটা বাড়াবাড়ি। যে কোনও ক্লেম সেটলমেন্টের মেল সরাসরি ক্লায়েন্টের মোবাইল আর মেল বক্সে ঢুকে যায় আজকাল, ব্যাঙ্ক থেকে যে ফোন যাওয়া আবশ্যক নয়। তবে এই উচ্চ পর্যায়ের পরিষেবা বিফল হয়নি।

দ্বিতীয় বার দেখা করতে রাজি হয়েছিল মঞ্জীরা। শহরে তখন ঘোর বর্ষা। বিকেল থেকে বৃষ্টি নেমেছিল, পথঘাট জলমগ্ন। কাফেতে অপেক্ষা করতে করতে সবে যখন উত্তীয় ভাবছে আর বুঝি মঞ্জীরা আসবে না, ঠিক তখনই মঞ্জীরা এসেছিল। ছাতাটা কাফের কাচের গেটের সামনের বালতিতে রেখে, গাঢ় সবুজ শিফনের কুঁচি ঝেড়ে, ভিজে আঁচল সামলে মঞ্জীরা তাকিয়েছিল উত্তীয়র দিকে।

আর উত্তীয় দেখেছিল বৃষ্টি নামছে, চারদিক ঝাপসা করে পৃথিবীর প্রেইরি অঞ্চলের সবুজে সবুজ বনভূমি, কালো আকাশ থেকে নেমে আসা অপার্থিব ধারাপাতে অঝোরে ভিজে যাচ্ছে রাতভোর।

বন্ধুতা বাড়তে সময় লেগেছিল, খুব সাবধানে যেমন করে দিঘির পিছল সিঁড়ি বেয়ে পায়ে পায়ে স্নানে নামে গ্রাম্য রমণী, তেমন ভাবে উত্তীয়র কাছে এসেছিল মঞ্জীরা।

তৃতীয় দেখায় সময় লাগেনি, তার পর চতুর্থ আর তার পর অগুন্তি বার সেই কাফেটেরিয়ায় গেছিল দু’জনে, সময় যেন পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে থাকত তাদের দেখা হওয়ার দিনগুলোয়।

একটু একটু করে দূরত্ব কম হচ্ছিল। মঞ্জীরা প্রথম দিকে নীরব শ্রোতা হয়ে থাকত। নীরব তবে শীতল নয়। খুব খুঁটিয়ে সে শুনত উত্তীয়র জীবন-কথা, তার ফেলে আসা শহরের দিনগুলো, মায়ের গল্প, ক্রিকেট কেরিয়ার... সব বিষয়েই তার প্রবল উৎসাহ ছিল।

ধীরে ধীরে অনেক আগল ভেঙেছে। মঞ্জীরা তার অতীত, ভাঙা সম্পর্কের গল্পও বলেছে এক দিন।

এটা আর এক মজা। যে মুহূর্তে তুমি নিজের দুর্বলতা, না বলতে পারা ব্যথার ক্ষতমুখ কারও কাছে উন্মুক্ত করে দিচ্ছ, তখনই তার ওপর খুব অবচেতনেই এক নির্ভরতার জায়গাও তৈরি হয়ে যায়।

তবু সংযমের আগল ছিল। উত্তীয়র মনে হয়েছে মাঝে মাঝেই যেন মঞ্জীরার তল পায় না সে, তাকে যেন ছোঁয়া যায় না, সে যেন এই পৃথিবীর কেউ নয়।

এক সময় এমন হল, সপ্তাহে দু’-তিন দিন দেখা না হলে তাদের আর চলছিল না। উত্তীয় একটা সময়ের পর বুঝে উঠতে পারছিল না এই সম্পর্কের অভিমুখ কোন দিকে।

উত্তরবঙ্গে উত্তীয়দের ছোট্ট শহরে এক বার দিন দশেকের জন্য ঘুরে এল উত্তীয়। একটু দূরত্বের দরকার ছিল। এমন একটা মুহূর্তও যায়নি যখন সে মঞ্জীরার কথা ভাবেনি।

এলোমেলো বিকেলে ঝিলের ধারে, খুব ভোরে তাদের শহরের বিখ্যাত রাজবাড়ির বাগানে প্রথম আলো এসে পড়ার সময় মনে মনে কয়েকশো কিলোমিটার দূরের এক শহরে পৌঁছে যেত উত্তীয়। তার চোখের সামনে থেকে কখনই সেই প্রেইরির হরিৎ বনভূমিতে বৃষ্টি নামার দৃশ্যটা হারিয়ে যায়নি।

এক দিন হঠাৎ দার্জিলিং চলে গেল উত্তীয়। এটাও অভিনব, ছুটিতে বাড়ি ফিরে সচরাচর তাদের একান্নবর্তী বাড়িটা ছেড়ে নড়তেই চাইত না সে।

কলকাতায় ফিরে মঞ্জীরার সঙ্গে দেখা করে তার হাতে তুলে দিয়েছিল একটা ছোট্ট গণেশ মূর্তি।

মঞ্জীরা হাতের মুঠোয় সেই গণেশ মূর্তিটাকে এমন পরম মায়ায় ঘিরে রেখেছিল, উত্তীয়র মনে হয়েছিল সেই নরম হাতে শুধু একটা ছোট্ট মূর্তি নয়, উত্তীয়র সমস্ত সত্তাটাকেই ধরে আছে সে।

উত্তীয় জানত সময় বা সম্পর্ক এক জায়গায় থেমে থাকে না। এমন গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ দুই নরনারী শুধুমাত্র বন্ধুত্বের পরিচয়ে সারা জীবন কাটাতে পারে না।

ময়দানে সন্ধে ঝাপসা হচ্ছিল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আলোর সাজে সেজে উঠল। সান্ধ্য ভ্রমণকারীদের হট্টগোলে বাবু হয়ে বসল উত্তীয়, চা-ওয়ালার কাছ থেকে লেবু-চা কিনে এক চুমুক দিয়েই মুখ বিকৃত করল উত্তীয়, তার মনে পড়ে গেল আজ সকাল থেকে প্রায় কিছুই পেটে পড়েনি তার।

আর ঠিক তখনই অভিরাজ তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেছিল, “আপনাকে খুব চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি বলুন তো!”

হুইস্কির দ্বিতীয় পেগটা বড় এক চুমুকে শেষ করল উত্তীয়। অভিরাজের আজকাল এই নেশাটা পেয়ে বসেছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর দুটো জিনিস নতুন শুরু করেছিল সে। এক, নিজের ক্রিকেট ক্যাম্প আর দ্বিতীয় হল, সপ্তাহান্তে সিঙ্গল মল্টে চুমুক দেওয়া।

প্রথম জিনিসটা তার অধীনস্থ অন্য কোচরা চালিয়ে নিচ্ছে, রোজ রোজ গিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না অভিরাজকে, কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে কিডনির ওপর চাপ দেওয়া একদম নিষেধ, তাই মদ্যপান আপাতত স্টপ। কিন্তু অভিরাজ থেমে থাকেনি, নিজে হালকা লিকার চা নিয়ে পাশে বসে থাকবে, কিন্তু উত্তীয়কে পাশে বসিয়ে মদ গেলানো চাই-ই চাই। আর চলবে রাত পর্যন্ত দুই বন্ধুতে প্রমত্ত গল্পগাছা। জুঁইয়ের চোখ লেগে আসে, সে উঠে আসে দুই বন্ধুকে ফেলে। উত্তীয় আর অভিরাজের আড্ডা চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত।

জুঁই উত্তীয়র দিকে তাকিয়ে বলল, “তা হলে পাকাপাকি ভাবে দেবদাস হওয়ার প্ল্যানটা ফাইনাল হয়ে গেল তাই তো?”

উত্তীয় জবাব দিল না, সে তার তৃতীয় লার্জ পেগ বানাচ্ছে। জুঁই তাকে কিছুটা সময় দিল, আর তার পর আবার বলল, “আরে দেখা নেই, ফোন তুলছ না। ও তো পাগল পাগল করছে। একেই এর মেন্টাল কন্ডিশন এই রকম, তার ওপর তুমি সরে গেলে। কী বিপদে যে পড়েছি।”

উত্তীয় মৃদু হাসল, “তোমার চিন্তা করার কিছু হয়নি। আমি যে অবস্থাতেই থাকি তুমি ডাকলে চলে আসব। আর তা ছাড়া ওর কন্ডিশন তো একটু স্টেবল দেখছি এখন। ময়দানে প্রথম দেখায় আমাকে চিনতে পারেনি ঠিকই, তবে সে কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। সেটুকু বাদ দিলে...”

জুঁই উত্তীয়কে থামিয়ে দিল, “চিন্তাটা কিন্তু তোমার অবস্থা নিয়েও, এত স্ট্রং রিলেশন ছিল তোমাদের। এভাবে হঠাৎ ব্রেক আপ হয়ে
যায় নাকি?”

“না, স্ট্রং তো বটেই। কিন্তু এটাও তো মনে রাখতে হবে মঞ্জীরা কিন্তু কখনই আমাকে কিছু কমিট করেনি।”

“এ আবার কী কথা? দুটো মানুষ কাছাকাছি আসবে, আলাপ বাড়বে, তারা বিয়েটিয়ে করবে, ঘর-সংসার হবে, সারাজীবন তার পর তারা পরস্পরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে জীবন অসহ্য করে তুলবে... এটাই তো স্বাভাবিক। কে জানে বাবা, এতে আবার কমিট করার কী হল? আমরা স্মল টাউনের মেয়েরা তো অন্তত এ ভাবেই দেখি জীবনটাকে।”

পানীয়ে বড় চুমুক দিল উত্তীয়, হাসিমুখে তাকিয়ে আছে বন্ধুপত্নীর দিকে। তার থেকে বছর খানেকের বড়ই হবে জুঁই। একটা আশ্চর্য সারল্য ঘিরে থাকে সবসময় মেয়েটাকে।

এলাহাবাদের প্রবাসী বাঙালি জুঁইয়ের বাবা অভিরাজের দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের খুব কাছের মানুষ। সেই সূত্রেই সম্বন্ধ। ভাল জুড়ি হয়েছে অভিরাজের। অভিরাজ নিজেও খুব একটা ঘোরপ্যাঁচ বোঝা লোক নয় কোনও দিন, ব্যুরোক্রেসির ধারকাছ মাড়ায়নি, নিজের ট্যালেন্টে কলার উঁচু করে ক্রিকেট কেরিয়ার সম্পূর্ণ করেছে।

উত্তীয় খুব স্বাভাবিক স্বরে বলল, “কিন্তু আমাদের কেসটা কি আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো, জুঁই?”

জুঁই মাথা নাড়ল, না ব্যাপারটা অস্বীকার করতে পারে না সে। মঞ্জীরা তো আর পিছুটানহীন নারী নয়, যে হুট বলতে উত্তীয়র হাত ধরে উড়বে, কিন্তু মেয়েটিকে না দেখেই শুধুমাত্র উত্তীয়র মুখে শুনেই তার মঞ্জীরাকে যেন খুব পরিচিত কেউ বলে মনে হয়। তার ধারণা ছিল দু’জনের সম্পর্ক বেশ গভীর।

আগামী মাসে জুঁই-অভিরাজের বিবাহবার্ষিকীতে মেয়েটিকে এ বাড়িতে নিয়ে আসবে উত্তীয়, এ কথাও পাকা হয়ে ছিল।

কোথা থেকে যে কী হয়ে যায়! মানুষের মন এত দ্রুত পালটে যায় আজকাল! জুঁই সোফায় সরে এল, “সেদিন কী হয়েছিল বলবে? কষ্ট না হলে বলতে পার।”

আর একটা পেগ শেষ করল উত্তীয়। তার পর নতুন পেগ বানাতে বানাতে তাকাল বাকি দু’জনের দিকে। জুঁই বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে, অভিরাজের কপাল কুঁচকে রয়েছে। সে প্রাণপণে উত্তীয় আর জুঁইয়ের কথোপকথন বোঝার চেষ্টা করছে। পারছে না। কিছু ক্ষণ পর পরই খেই হারিয়ে ফেলছে সে।

সে দিন কাফেতেও মঞ্জীরার কপালে এ রকমই ভাঁজ দেখতে পেয়েছিল উত্তীয়। না, তার মুখচোখের অভিরাজের মতো ভাবলেশহীন দশা ছিল না। তার দৃষ্টি ছিল তীক্ষ্ণ, উত্তীয়র মনের অনেক গভীর পর্যন্ত পড়ে ফেলছে যেন।

“মানে, সিরিয়াসলি! আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। আমার ব্যাপারে সব কিছু জানো, তবুও তুমি কী করে...”

“জানি বলেই তো আরও বেশি করে বলছি। সবাইকে কি আমি এ কথা বলে বেড়াই?”

“না উত্তীয়, আমি জানি। কিছু বোলো না আর। কিন্তু নিজের দিকে তাকাও এক বার। ব্রাইট, ইয়ং, ওয়েল সেটেল্ড... কেন তুমি আমার ব্যাপারে এত দূর ভেবে ফেলবে? উই আর ফ্রেন্ডস না? দ্য বেস্ট অব ফ্রেন্ডস। সোলমেটস! আমরা তো এ ভাবেও থাকতে পারি, পারি না?”

মঞ্জীরা টেবিলের ওপর উত্তীয়র আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুলগুলো গলিয়ে দিয়েছিল।

উত্তীয় আঙুল ছাড়ায়নি। সে বলেছিল, “আই অ্যাম রিয়েলি সিরিয়াস, নিজেকে বুড়ি ভাবো নাকি তুমি? আই হ্যাভ নো প্রবলেম উইথ ইওর পাস্ট।”

অন্য বিষয়গুলি:

Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy