Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

পাহাড়ের ঢালে ঝাউবনে আধপোড়া বিমান

এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘার গ্ল্যামার নেই। অরুণাচলের ঘন জঙ্গলে আচ্ছন্ন পাহাড়ে গত ৩ জুন আছড়ে পড়ে বায়ুসেনার বিমান। প্রায় এক মাস খোঁজ মেলেনি তার। এরই মধ্যে বর্ষা, কপ্টারও নামতে পারছে না। স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে এগিয়ে এলেন এভারেস্টজয়ী তাকা টামুট। উত্তর-পূর্ব ভারত এমনই! রাজীবাক্ষ রক্ষিত৩ জুন বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমান ভেঙে পড়ার খবর যখন সিয়াং জেলার জোমলো মংকু গ্রামে পৌঁছয়, তখন রাত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, গত বছরের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী তাকা টামুট পর দিন সকালেই স্থির করেন, বাইরে থেকে আসা সেনা বা বায়ুসেনার জওয়ানদের থেকে এখানকার পাহাড়-জঙ্গল তিনিই বরং ভাল চিনবেন।

নৈসর্গিক: পাহাড়, হ্রদ আর জঙ্গলে ঘেরা অরুণাচলের অপরূপ প্রকৃতির মধ্যেই ঘটে গিয়েছিল দুর্ঘটনা।

নৈসর্গিক: পাহাড়, হ্রদ আর জঙ্গলে ঘেরা অরুণাচলের অপরূপ প্রকৃতির মধ্যেই ঘটে গিয়েছিল দুর্ঘটনা।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৭:৩০
Share: Save:

নাগাড়ে বৃষ্টি। জোঁক আর সাপে ভরে আছে জঙ্গলের মাটি। বার বার পাথরে হাত ফসকাচ্ছে। রবারের জুতো পিছলে যাচ্ছে পাথর থেকে। ‘‘কখনও মনে হচ্ছিল হাল ছেড়ে দিই। বাকি দলগুলোও তো ইতিমধ্যে হাল ছেড়েছে। কিন্তু তখনই মনে ভেসে উঠছিল ১৩ জন দুর্ভাগার বাবা-মা, বৌ-ছেলেমেয়েদের কথা। গত বছর এভারেস্টে উঠেছিলাম কৃতিত্ব অর্জনের উৎসাহে। আর আজ পারি পাহাড় পাড়ি দিচ্ছি কর্তব্যের তাগিদে। কেউ আমায় আসতে জোর করেননি। উল্টে আমিই জোর করে এই পথে পা বাড়িয়েছি। তাই পিছু হঠার প্রশ্নই নেই,’’ বলছিলেন তাকা টামুট।

৩ জুন বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমান ভেঙে পড়ার খবর যখন সিয়াং জেলার জোমলো মংকু গ্রামে পৌঁছয়, তখন রাত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, গত বছরের এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী তাকা টামুট পর দিন সকালেই স্থির করেন, বাইরে থেকে আসা সেনা বা বায়ুসেনার জওয়ানদের থেকে এখানকার পাহাড়-জঙ্গল তিনিই বরং ভাল চিনবেন। তাই ১৩ জন হতভাগ্য আরোহীকে নিয়ে কোথায় বিমান ভেঙে পড়েছে তা খুঁজে বার করা সহজ হবে তাঁর পক্ষেই। ততক্ষণে সিয়াংয়ের জেলাশাসক রাজীব টাকুক সব গ্রামের গাঁওবুড়াকে নির্দেশ দিয়েছেন, গ্রামের সেরা শিকারি ও পাহাড়-চড়িয়েদের রওনা করিয়ে দেওয়া হোক বিমানের খোঁজে। ৫ জুন পাসিঘাট পৌঁছে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাকা ও তাঁর অপর এভারেস্টজয়ী সঙ্গী কিষণ টেকসেং জানান, তাঁরা পাহাড় চড়ার সব সরঞ্জাম নিয়ে তৈরি। নিজেদের খরচেই উদ্ধার অভিযানের অংশ হতে চান তাঁরা। জেলাশাসক তাঁদের সঙ্গে মাল বহনের জন্য আট জন পোর্টারের ব্যবস্থা করেন। ৮ জুন বেলে মোলো গ্রাম থেকে পায়ুমের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয় তাঁদের।

তখনও দিনভর এএন-৩২, এমআই-১৭, ধ্রুব, চেতক, সি-১৩০ বিমান ও কপ্টারগুলো নাগাড়ে চক্কর কাটছে। রাতেও তল্লাশি চালাচ্ছে সুখোই-৩০। কিন্তু সিয়াং আর সি-ইয়োমি জেলার কোন পাহাড়ের কোথায় বিমান পড়ে আছে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ করছে না রেডার। অকেজো দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ‘লোকেটর বিকন’। বিভিন্ন গ্রাম থেকে খবর আসছে— বিমান দেখতে পাওয়া গিয়েছে, বিমান ভাঙার শব্দ এসেছে। জেলাশাসক রাজীব জানান, যে দলটি বিমান খুঁজে পেয়েছে তাদের কথা সকলে মনে রেখেছেন। কিন্তু আরও অন্তত তিন থেকে চারশো মানুষ হাতে বন্দুক আর দা নিয়ে, পিঠে খাবার চাপিয়ে এক সপ্তাহ ধরে দুই জেলার দুর্গম পাহাড়-জঙ্গল চষে ফেলেছেন। তাঁদের অবদান ও আত্মত্যাগও অনস্বীকার্য। তাঁরা কিন্তু কোনও পুরস্কার বা টাকার লোভে এ কাজ করেননি। করেছেন মানবিকতার খাতিরে।

উদ্বিগ্ন তাকা টামুট। আকাশে তখন চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টার। ডানদিকে, পাহাড়ের ঢালে দগ্ধ ঝাউবন

ইতিমধ্যে প্রচণ্ড কষ্টকর পাহাড়-জঙ্গল চড়ে ১০ জুন গাসেংয়ে পৌঁছেছে তাকা ও কিষণের দল। তাকা বলেন, “নাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছিল। অসম্ভব হয়ে পড়েছিল পাহাড় চড়া। সেই সময় শুধুমাত্র আরোহীদের পরিবারের আশঙ্কার চিন্তা আমাদের চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে। মনে মনে ভাবছিলাম, এভারেস্ট থেকে বিফল হয়ে ফিরলে বা চড়তে গিয়ে মরে গেলেও কাউকে কিছু বলার ছিল না। বৌ নেই, বাচ্চাকাচ্চা নেই। কিন্তু এ বার তো এসেছি ১৩টা পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে। খালি হাতে, কোনও হদিশ না পেয়ে ফিরলে গ্রামের মানুষ তো বলবেই, নামের জন্য এভারেস্ট চড়েছে কিন্তু কাজের কাজ করতে পারল না।”

গাসেংয়ে এক মহিলা জানালেন, ৩ জুন একটা বিমানকে এঁকেবেঁকে গ্রামের মাথা দিয়ে উড়তে দেখেছেন। গাসেং ও গাতে গ্রামের মধ্যে থাকা পাহাড় পেরনোর সময় বিমানটিকে একেবারে নিয়ন্ত্রণহীন দেখাচ্ছিল। কোনও মতে পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে সেটি উড়ে যায়। গাতে গ্রামে এক শিকারি জানান, ওই দিন পাহাড়ে বোমা ফাটার মতো শব্দ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন দিক থেকে শব্দ এসেছে তা বুঝতে পারেননি। সব তথ্য একজোট করে সেনা, বায়ুসেনা ও প্রশাসনকে জানান তাকারা। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বিমানটি সম্ভবত ‘পারি আদি’ ও ‘পাহু ডিনো’ পাহাড়ের খাঁজে কোথাও ভেঙে পড়েছে।

১১ জুন বায়ুসেনার অফিসারদের সঙ্গে তাকাও এমআই-১৭ কপ্টারে চাপেন। পাহাড়ের যতটা সম্ভব ধার ঘেঁষে চলতে থাকে কপ্টার। আচমকাই পারি পাহাড়ে ঝাউবনের ঢালে চোখ আটকায় তাকার। তিনি বলেন, ‘‘দূর থেকে দেখলে মনে হবে মেঘে ঢাকা ফুলের পাহাড়। কিন্তু চপারের জানালা দিয়ে হঠাৎই চোখে পড়েছিল, পাহাড়ের ঢালে পুড়ে খাক ঝাউবন। আশঙ্কা আর খুঁজে পাওয়ার উত্তেজনায় কেঁপে উঠল বুক।’’ পাহাড়ের প্রায় ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় যখন পুড়ে ছত্রাকার হয়ে যাওয়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেলেন তাকারা, তখন যোরহাট থেকে দিল্লি অবধি আরোহীদের পরিবার দাবি করছে, ভারতের দিকে বিমানের সন্ধান না মিললে খোঁজা হোক চিনের দিকেও।

১২ জুন, সকাল ৯টা। কপ্টারে করে তাকা, কিষণ ও সেনাবাহিনীর কয়েক জন পর্বতারোহীকে নামিয়ে দেওয়া হল পাহাড়ের কাছে এক সরোবরের ধারে। খুঁজেপেতে ওইটুকুই মোটামুটি সমতল এলাকা দেখা গিয়েছিল। তাকাদের সঙ্গে পাহাড় চড়ার সরঞ্জাম, তাঁবু ছিলই। তাই তাঁদের আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয় উদ্ধার কাজে। নেতৃত্বে ছিলেন উইং কম্যান্ডার নমিত রাওয়াত। সাত মহাদেশের উচ্চতম শৃঙ্গ জয় করা বায়ুসেনার ‘মিশন সেভেন’-এর নেতা ছিলেন তিনি।

সরোবর থেকে এক সেনা জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে পাহাড় চড়া শুরু করেন তাকা। পৌঁছন বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ। তাকা বলেন, “চারদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। বিমানের টুকরো। তার মধ্যেই মাটিতে গেঁথে, গাছে আটকে আধপোড়া দেহগুলো। দশ দিন হয়ে গিয়েছে। চলছে বৃষ্টি। ফলে পচন ধরেছে দেহে। ছ’টি দেহ দেখতে পেলাম। বাকিদের দেহ বিমানের বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়েছিল। মেঘে ঢাকা, ফুলে ভরা স্বর্গীয় পাহাড়ের মধ্যে যেন একখণ্ড নরক দর্শন। এত খারাপ লাগছিল, বলে বোঝাতে পারব না।’’

পরের দিন থেকে দেহাংশগুলি খুঁজে সংগ্রহ করার কাজ শুরু হল। প্রথমেই খুঁজে বের করা হল বিমানের ককপিট ভয়েস ও ডেটা রেকর্ডার। ‘‘আমরা যেটাকে ‘ব্ল্যাক বক্স’ বলেই জানতাম,’’ বলছেন তাকা। খাড়া দুর্ঘটনাস্থল থেকে দেড় ঘণ্টা হাঁটা দূরত্বে তৈরি করা হল শিবির। বার বার শিবির ও দুর্ঘটনাস্থলে যাতায়াত করতে শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল সবার। কিন্তু দেহ ও উদ্ধারকারীদের ফিরিয়ে নিতে চপার আর আসে না। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর দিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিল তাকার মোবাইলের ব্যাটারি। অবশ্য সিগন্যাল থাকার প্রশ্নই নেই। দলের সঙ্গে থাকা স্যাটেলাইট ফোনে জানা গেল, আশেপাশে আবহাওয়া মন্দ। ঘন মেঘে দেখা যাচ্ছে না পাহাড়। ১২ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময়টাই তাকার কাছে সবচেয়ে কষ্টের। তাঁর কথায়, “একে উদ্ধারকারীর সংখ্যা বেশি। শিবির মাত্র তিনটে। তাই সকলে একসঙ্গে শোয়ার জায়গা নেই। তার উপরে দু’দিনের খাবার সঙ্গে এনেছিলাম। তা শেষ হয়ে যাওয়ায় শুধু কম কম করে জল আর বিস্কুট খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছিল আমাদের সবাইকে। মৃতদেহ আগলে সে এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে অনিশ্চয়তা। অবেশেষে ১৮ জুন আকাশ খানিক পরিষ্কার হওয়ায় চপার এসে উপর থেকে খাবার ফেলল। দড়িও ঝুলিয়ে দিল। পাঁচ উদ্ধারকারীকে ফেরত নিয়ে গেল তারা। পরের দিন নিয়ে যাওয়া হল দেহ এবং দেহাংশগুলি। বাকি থাকলাম আমরা ১৩ জন। ভাবা হয়েছিল পরের খেপেই হেলিকপ্টার এসে আমাদের তুলে নিয়ে যাবে। কিন্তু ফের আবহাওয়া মন্দ।”

পাহাড়ের ১২ হাজার ফুটে, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে আটকে পড়ে থাকলেন উদ্ধারকারী ১৩ জন। ২২ জুন তাঁদের সন্ধানে সিয়াংয়ের গ্রাম থেকে জেলাশাসকের পাঠানো দুই শিকারি এসে হাজির। তাঁরা জানালেন, রাস্তার যা অবস্থা তাতে এই বৃষ্টিতে এত সরঞ্জাম, রাইফেল, তাঁবু, উদ্ধার সামগ্রী, অক্সিজেন সিলিন্ডার কাঁধে বয়ে হেঁটে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। এক-এক জনের ভাগে প্রায় ৮০-৯০ কিলো মালপত্র। আবার এই সব মূল্যবান সামগ্রী ফেলেও আসা চলে না। পাহাড়ি নদীগুলোও ফেঁপে উঠেছে। উপচে পড়ছে জলপ্রপাত। সেই সঙ্গে সাপ, প্রাণীতে ভরা জঙ্গল। তাই ফের অপেক্ষা। এর মধ্যে আবার এক দিন মৌমাছির আক্রমণের মুখেও পড়লেন তাকারা।

শেষ পর্যন্ত ২৯ জুন আকাশে মেঘ কাটল। দূরে কপ্টারের শব্দ শুনে উল্লাসে ফেটে পড়লেন সকলে। উদ্ধারকারীদের উদ্ধার করতে হাজির হল এমআই-১৭। একে-একে আট জন বায়ুসেনা, চার জন স্থলসেনা, তাকা টামুট ও দুই শিকারিকে তুলে নেওয়া হল। কিন্তু পাহাড় পার হওয়ার জন্য কপ্টারে বেশি ওজন নেওয়া সম্ভব ছিল না। স্থানাভাবে তাকার নিয়ে যাওয়া তাঁবু, ক্যারাবিনার, পুলি-সহ পাহাড় চড়ার সামগ্রী ফেলে আসতে হল। তাকার দুঃখ, “নিজের পকেট থেকে চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করেছি উদ্ধার অভিযানে। কিছু পাব বলে যাইনি। কিন্তু পাহাড় আমার প্রাণ। অনেক কষ্টে পাহাড় চড়ার জিনিসপত্র জোগাড় করতে হয় আমাদের। প্রায় ১৫ হাজার টাকার জিনিস দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকাটা মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।” ২০১৭ সালে বিফল এভারেস্ট অভিযানের পরে, গত বছর নিজের, ধার করা ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে জোগাড় করা মোট ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে এভারেস্টে উঠেছিলেন তাকা।

জেলাশাসক রাজীব বলেন, ‘‘আরও শতাধিক গ্রামের মানুষ নিজেদের খরচে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন। আমরা সকলকেই কিছু টাকা দেব ভাবছি।’’ এত বড় উদ্ধার অভিযানে পাহাড়ি গ্রামের মানুষগুলো যে মানবিক মুখ দেখিয়েছেন, তা কখনও ভোলার নয়। সেনাবাহিনী মুখপাত্র হর্ষবর্ধন পান্ডে বলছিলেন, ‘‘চিন সীমান্ত-ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রাম বা জঙ্গলে সেনা নজরদারি কিন্তু কম। গ্রামবাসীরাই আমাদের ভরসা। বিশেষ করে অরুণাচলের বাসিন্দাদের মধ্যে দেশপ্রেম আর উর্দিধারীদের প্রতি ভালবাসা অনেক বেশি। গোটা অভিযানে আম জনতার যে সহযোগিতা দেখা গিয়েছে, তাতে আমাদের গর্ব ও ভরসা দুই-ই বহু গুণ বেড়ে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arunachal Pradesh Taka Tamut IAF AN-32
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy