পথিকৃৎ: ‘মাস্ক’-এর আবিষ্কর্তা উ লিয়েন থে। ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমন্স
বিরাট আর্মচেয়ারে পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চির চেহারাটা প্রায় পুরোটাই ডুবে গিয়েছে। চশমার আড়ালে ঝকঝকে দুটো চোখ। শান্ত মুখে হাসছেন মধ্য তিরিশের চিনা চিকিৎসক। হাসতে-হাসতেই ‘যুদ্ধং দেহি’ ভিনদেশীয় সহকর্মীর সঙ্গে মতভেদ মেটানোর চেষ্টা করছেন।
তাতে ফরাসি চিকিৎসক জেরাল্দ মেনি আরও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন। পায়চারি করছেন ক্ষিপ্ত বাঘের মতো। এই চিনা লোকটার দাবি, একটা কাপড়ের টুকরো জীবাণু আটকাবে! একটা সময় তাঁর দিকে আঙুল তুলে গনগনে চোখে হুমকি দিচ্ছেন, ‘‘এই যে চিনাম্যান, তোমার এত সাহস যে, তুমি আমার কথা খারিজ করে আকাশকুসুম তত্ত্ব আওড়াচ্ছ! দেখে নেব তোমাকে।’’
নিজের আত্মজীবনীতে সে দিনের কথা বিস্তারিত লিখে গিয়েছেন সেই চিনা চিকিৎসক-বিজ্ঞানী উ লিয়েন থে। প্রকৃত নাম গো লেয়ান টাক। জন্ম ১৮৭৯ সালে, মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে। বাবা ছিলেন স্বর্ণকার। চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পদ্ধতির জনক হিসাবে লিয়েন থে-কে কুর্নিশ করে পৃথিবীর চিকিৎসক মহল। তার আগে পর্যন্ত মাস্কের ব্যবহার ছিল শুধু অস্ত্রোপচারের সময়।
১৯১০-১১ সালে চিনের উত্তর-পূর্বাংশে শুরু হয়েছিল ভয়াবহ মাঞ্চুরিয়ান প্লেগ বা নিউমোনিক প্লেগ। তা প্রতিরোধে উ লিয়েন থে-র অবিশ্বাস্য ভূমিকা এবং সেই প্লেগের উৎস চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ায় নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনীত হয়। এই চিকিৎসা-বিজ্ঞানীর দেখানো পথ ধরেই এখনও গোটা বিশ্বে ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্প্যানিশ ফ্লু থেকে শুরু করে হালের সার্স বা করোনা রুখতে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহৃত হয়।
ঠিক যে পদ্ধতিতে লিয়েন থে ‘অ্যান্টি-প্লেগ মাস্ক’ তৈরি করেছিলেন, সেই পদ্ধতিও কিন্তু খুব একটা বদলায়নি। তবে লিয়েনের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের বিজ্ঞানী হয়ে প্রথাভাঙা রাস্তায় হাঁটার সাহস দেখানো সোজা কথা নয়। চিকিৎসা পরিষেবায় যুগান্তকারী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পদে পদে বাধা, ব্যঙ্গ, হেনস্থার মুখে পড়েছেন তিনি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস আর নিজের কাজের উপর আস্থা হারাননি। তথ্য-প্রমাণ-যুক্তির সঠিক মিশেলে তাঁর পদ্ধতিকে তিনি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন পৃথিবীর সর্বত্র।
১৯১০ সালের শরৎকাল। চিন ও রাশিয়ার সীমান্তবর্তী মানঝাউলি শহরে প্লেগ শুরু হল। ঝড়ের গতিতে মূলত রেলপথ অনুসরণ করে রোগ ছড়িয়ে পড়ল দক্ষিণের দিকে মাঞ্চুরিয়ার হারবিন ও অন্য শহরে। বিশেষত হারবিনে পোকামাকড়ের মতো মানুষ মরতে লাগল। মৃত্যুহার প্রায় ১০০ শতাংশ। যাঁরাই আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরাই মরছেন। রাস্তায় মৃতদেহের স্তূপ। সেই সময় মাঞ্চুরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল চিন, জাপান ও রাশিয়ার অধীনে ছিল। তিন সরকারই পড়ল ঘোরতর দুশ্চিন্তায়। কোনও ভাবে রোগ আরও ছড়ালে বিপদ গোটা বিশ্বের, সে কথা বুঝে ইউরোপ আর আমেরিকাও উদ্বিগ্ন হয়ে চিকিৎসক দল পাঠানো শুরু করল। চিনের ইম্পিরিয়াল কোর্ট, চিকিৎসকদের যে দলকে প্লেগ মোকাবিলার জন্য পাঠাল তার প্রধান নিযুক্ত হলেন মালয়েশিয়ায় জন্মানো কেম্ব্রিজ-পাশ চিনা চিকিৎসক উ লিয়েন থে। তারিখটা ১৯১০-এর ১৯ ডিসেম্বর।
আক্রান্ত এলাকায় কিছু দিন সরেজমিনে ঘুরে দেখে তে যা বার্তা দিলেন তাতে অনেক চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরই ভুরু কুঁচকে গেল। লিয়েন থে জানালেন, এই প্লেগের ধরন অন্য প্লেগের থেকে আলাদা। এটা অসুস্থ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এলেও রোগ ছড়ানোর জন্য কোনও না-মানুষ বাহক আর প্রয়োজন হচ্ছে না। রোগ ছড়াচ্ছে বাতাস-বাহিত হয়ে। এটি নিউমোনিক প্লেগ, আর সেই জন্যই রোগ আটকাতে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। তত দিন পর্যন্ত ধারণা ছিল, প্লেগ ছড়ায় শুধু ইঁদুর বা মাছির মতো প্রাণীর মাধ্যমে। জাপান, ফ্রান্স, রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের অনেকেই বিদ্রুপে বিদ্ধ করতে লাগলেন চিনা চিকিৎসককে।
সমালোচনার জেরে লিয়েন থে-কে চিনা মেডিক্যাল টিমের প্রধানের পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। সেই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি টিয়েন্টসিনের পেইয়াং মেডিক্যাল কলেজের ফরাসি চিকিৎসক-অধ্যাপক জেরাল্দ মেনি এসে পৌঁছলেন মাঞ্চুরিয়ায়। তাঁর প্লেগ মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি কিছুতেই লিয়েন থে-র বাতাসবাহিত সংক্রমণ তত্ত্ব মানবেন না। মাস্ক নিয়েও মতভেদ চরমে উঠল।
যে রাতে তিনি লিয়েন থে-কে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন, তার পর দিন সকালেই প্লেগ হাসপাতালে চলে গেলেন। এবং চৈনিক চিকিৎসককে ভুল প্রমাণিত করতে মাস্ক ছাড়াই এক প্লেগ-আক্রান্তের অস্ত্রোপচার করলেন। এর দিনকয়েকের মধ্যেই প্লেগ-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল মেনি-র। গোটা বিশ্ব চমকে উঠল। বায়ুবাহিত জীবাণু-সংক্রমণ আটকাতে মাস্কের অপরিসীম গুরুত্ব নিমেষে স্বীকৃতি পেয়ে গেল। প্রশাসন থেকেও মাস্ক পরার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হল। হারবিনের রাস্তায় নাকে-মুখে মাস্ক বা কাপড়ের আচ্ছাদন ছাড়া কাউকে দেখতে পাওয়া গেল না।
গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে লিয়েন থে-র মাস্কের অসামান্য ভূমিকা নিয়ে প্রচুর লেখালিখি হল। বড়-বড় ছবি ছাপা হল। মাস্ক ব্যাপারটা ঠিক কী রকম, তা প্রথম মানুষ চাক্ষুষ করল। এর একটা অন্য রাজনৈতিক গুরুত্বও ছিল যা সেই সময় চিনকে বিরাট সুবিধে করে দিয়েছিল।
যে হেতু মাঞ্চুরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল সেই সময় বিভিন্ন দেশের শাসনাধীন ছিল, ফলে তাদের মধ্যে চোরা সংঘাত লেগে থাকত। গোটা এলাকা শেষ পর্যন্ত কে কব্জা করতে পারে এবং দক্ষ, আধুনিক প্রশাসক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রতিযোগিতাও ছিল। মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে অন্যের আগে প্লেগ নিয়ন্ত্রণ করার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। তাতে লিয়েন থে-র দৌলতে সে যাত্রায় জিতে গিয়েছিল চিন। প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর মাঞ্চুরিয়ায় ধীরে-ধীরে কমতে লাগল প্লেগের প্রকোপ। ১৯১১-র ১ মার্চ শেষ কেস নথিভুক্ত হয়েছিল। সেরে উঠতে লাগল মানুষ। আর সংক্রামক রোগের মহামারির মোকাবিলার ইতিহাসে সংযোজিত হল এক নতুন অধ্যায়—‘মাস্ক’।
এই মাস্ক তৈরির জন্য লিয়েন থে সাহায্য নিয়েছিলেন ন’ইঞ্চি চওড়়া দুটি সার্জিক্যাল গজের টুকরোর। তাদের মাঝখানে ছ’ইঞ্চি-চার ইঞ্চির একটা তুলোর টুকরো রেখে সেলাই করে দেওয়া হল। সার্জিক্যাল গজের দু’প্রান্ত দড়ির মতো করে কাটা থাকত, যাতে কানের উপর দিয়ে নিয়ে মাথার পিছনে বাঁধা যায়। নাক থেকে শুরু করে থুতনির নীচ পর্যন্ত যাতে ঢাকা থাকে সেটা নিশ্চিত করা হত।
শুধু প্লেগ মোকাবিলায় জয় পাওয়া নয়, অতিমারি বা মহামারি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিকিৎসা-আইনে মাস্কের অন্তর্ভুক্তি ও গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে সওয়াল করতে ঠিক মহামারির পরে ১৯১১-র এপ্রিলে লিয়েন থে যোগ দেন মাকডেন-এ আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্লেগ সম্মেলনে। সঙ্গে নিয়ে যান ৬১ পাতার একটি ফোটো অ্যালবাম। তার এক একটি পাতায় এক একটি ছবি আটকানো ছিল। সঙ্গে ইংরেজি ও চাইনিজ়ে লেখা ক্যাপশন।
সব ছবিই ১৯১০-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্লেগ-আক্রান্ত হারবিন শহরে তোলা। এই অ্যালবামে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছিল মাস্কের কার্যকারিতা ও ব্যবহার সংক্রান্ত ছবি। ৩২টি ছবিতে বিভিন্ন অবস্থায় মাস্ক পরিহিত সাধারণ মানুষ ও প্লেগ-যোদ্ধাদের ছবি ছিল। গোটা বিশ্ব থেকে আসা চিকিৎসক-বিজ্ঞানীদের উপর মাস্কের প্রবল প্রভাব ফেলতে সফল হন চিনা চিকিৎসক।
এর প্রায় সাত বছর পর, ১৯১৮ সালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্প্যানিশ ফ্লু-র প্রকোপের সময় ‘মাস্ক’ পরা বাধ্যতামূলক করা হল। আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, সান্টা ক্রুজ় বা অ্যারিজ়োনার মতো শহরে জারি হল ‘ফেস মাস্ক অর্ডিন্যান্স’। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বেরোলেই অর্থদণ্ড বা হাজতবাস। একই নিয়ম মানা হল ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে। গান লেখা হল মাস্ক নিয়ে— ‘ওবে দ্য লজ়/ ওয়্যার দ্য গজ/ প্রটেক্ট ইওর জস/ ফ্রম সেপটিক পজ়।’
শুধু মাস্ক পরার প্রচলনই নয়, মাঞ্চুরিয়ান প্লেগ নিয়ন্ত্রণে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন লিয়েন থে। তাঁর নির্দেশেই তৈরি হয়েছিল নতুন প্লেগ হাসপাতাল। চিন-জাপান-রাশিয়ার মধ্যে সাময়িক ভাবে স্থগিত হয়েছিল ট্রেন চলাচল। সংক্রমণ আটকাতে রাস্তায় পড়ে থাকা প্রায় দু’হাজার মৃতদেহের যথাযথ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাঁর নির্দেশ মেনে। তিনিই প্লেগ চলাকালীন চিনের প্রথম ময়নাতদন্ত করেছিলেন এক চিনা ভদ্রলোকের মৃতা জাপানি স্ত্রীর দেহে। উদ্দেশ্য, প্লেগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে চিহ্নিত করা।
তিনি দেখলেন, পূর্ববর্তী বিউবোনিক প্লেগের মতোই এই প্লেগ তৈরি করছে ‘ব্যাসিলাস পেস্টিস’ (Bacillus pestis) নামে ব্যাকটিরিয়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জীবাণু আরও মারাত্মক রূপ নিয়ে দ্রুত সেপটিসেমিক প্লেগ ছড়াতে শুরু করেছে।
এই ব্যাকটিরিয়া এসেছিল এক ধরনের বিশেষ লোমশ কাঠবিড়ালির থেকে, যা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত মাঞ্চুরিয়া প্রদেশ ও সাইবেরিয়ায়। এদের লোমের তৈরি কোটের খুব চাহিদা ছিল ইউরোপ-আমেরিকায়। ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ ধরে ওই কাঠবিড়ালির চামড়া রফতানি হত। কাঠবিড়ালি মেরে চামড়া সংগ্রহ করতেন শিকারিরা।
১৯১০ সালে শ্যানডং প্রদেশ থেকে পরিযায়ী শিকারিদের একটা বড় দল এসেছিল সেই শিকারে। স্থানীয় শিকারিরা জানতেন যে, এই জাতের সুস্থ কাঠবিড়ালিরা মাঠেঘাটে দৌড়ে বেড়ায়। অসুস্থরা থাকে তাদের গর্তে। তাঁরা অসুস্থদের শিকার করতেন না। কিন্তু বাইরের শিকারিরা সেটা জানতেন না। বেশি কাঠবিড়ালি ধরে বেশি মুনাফার জন্য তাঁরা গর্ত থেকে সহজে অসুস্থদের বের করে মেরে চামড়া রফতানি করেছিলেন। সেখান থেকেই ছড়ায় মাঞ্চুরিয়ান প্লেগ। লিয়েন থে-র সাহায্য গোটা বিষয়টির রহস্যভেদ সহজ হয়েছিল। যে কোনও মহামারি মোকাবিলার ক্ষেত্রে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লিভারপুলে ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এ স্যর রোনাল্ড রস-এর অধীনে এক বছর পোস্টগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ করেন উ লিয়েন থে। তার পর ম্যালেরিয়া ও টিটেনাস নিয়ে গবেষণা করেছিলেন প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটে। এহেন চিকিৎসক-বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত জীবন জুড়ে ছিল তুমুল ওঠাপড়া। ১৯৩৭ সালে জাপানি সেনা যখন চিন আক্রমণ করতে আসছে, তখন তিনি পালিয়ে জন্মস্থান মালয়েশিয়ায় চলে যান। সঙ্গে আনতে পেরেছিলেন এক ছেলেকে। চিনে থেকে গিয়েছিলেন স্ত্রী রুথ ও আরও দুই ছেলে, যাঁরা সবাই ভগ্নস্বাস্থ্য হয়ে একে একে মারা যান।
চিনে শাসক পরিবর্তনের ফলে তিনি আর কখনও সেখানে ফিরতে পারেননি। পরে আবার বিয়ে করেন। আগের পক্ষের এক ছেলে ও দ্বিতীয় পক্ষের চার সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়াতেই থাকতে শুরু করেন। নিজের প্রাইভেট ক্লিনিক খোলেন। ১৯৬০ সালে মারা গিয়েছিলেন অতিমারিরোধী মাস্কের এই আবিষ্কারক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy