রোমের টিবার দ্বীপে অবস্থিত ‘কে সিনড্রোম’-খ্যাত সেই হাসপাতাল, ফাতেবেনেফ্রাতেল্লি।
রোমের এক ছোট্ট হাসপাতাল। ওয়ার্ডে ভর্তি ভয়ঙ্কর মারণ রোগে আক্রান্ত রোগীরা। সে রোগ ছোঁয়াচে। কাছে গেলেই সংক্রমণ, ফল প্রাণসংশয়। ডাক্তার ও নার্স ছাড়া কারও সে ওয়ার্ডে প্রবেশ নিষেধ। অসুখের নাম কে সিনড্রোম। রোগের কারণ ফ্যাসিজ়ম, চিকিৎসা মানবিকতার আশ্রয়।
গত শতকের পঞ্চাশের দশক। রোমের টিবার আইল্যান্ডের একটা ছোট্ট হাসপাতাল, ফাতেবেনেফ্রাতেল্লি। বেশ কিছু জটিল রোগের চিকিৎসা হয় এখানে। মরণাপন্ন রোগীদের ভিড়ও লেগেই থাকে। ইথারের ভারী গন্ধ আর মৃত্যুর গন্ধ মিলেমিশে যায় হাসপাতালের হাওয়ায়। বিবর্ণ ক্ষয়াটে ওয়ার্ডগুলি দাঁড়িয়ে থাকে গায়ে গা ঘেঁষে। এরই মধ্যে একটা ওয়ার্ড যেন আরও ফ্যাকাশে আর মৃত্যুগন্ধী। ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক আর সংক্রামক এক অসুখে ভুগছেন এই ওয়ার্ডের রোগীরা। চিকিৎসকরা বলেন, এই অসুখের নাম ‘সিনড্রোম কে’। অজানা আর নতুন বলেই বোধহয় এই ব্যাধির কোনও ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। প্রথমে বিকলাঙ্গতা, আর তার কিছু দিনের মধ্যেই মৃত্যু অবধারিত এই রোগে। ওয়ার্ডের ভিতর থেকে শোনা যায় শুকনো কাশি, বমির আওয়াজ, যন্ত্রণাকাতর গোঙানির শব্দ। ব্যথায় মাঝে মাঝে চিৎকার করে ওঠেন রোগীরা। সেই শব্দ শুনে থমকে যান ওয়ার্ডের বাইরে দিয়ে চলা মানুষগুলি। তার পরেই তাড়াতাড়ি চলে যান অন্য দিকে। এই ওয়ার্ডের সামনে বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাও বারণ। মুহূর্তের জন্য দরজা একটু ফাঁক হলে দেখা যায় পর পর বেডের সারি। রক্তশূন্য কিছু পাণ্ডুর মুখের ঝলক। কৌতূহলীদের মুখের সামনে দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় দরজা। হাসপাতালের কয়েক জন মাত্র চিকিৎসক আর নার্স ঢুকতে পারেন এখানে। সারা শরীর, মুখ ঢেকে ওয়ার্ডে ঢোকেন তাঁরা সংক্রমণের ভয়ে। প্রায়ই মৃত্যু হানা দেয় এখানে। সাদা চাদরে সারা শরীর ঢেকে পিছনের দরজা দিয়ে বার করা হয় মৃতদেহ। তার পর কী হয় দেহগুলির, ঈশ্বরই জানেন। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন রোগ সারানোর। তাও প্রতিদিন বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা, বেড়েই চলে।
কী করে এই মারণব্যাধি ঢুকল রোমে, তা জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে কিছুটা সময়। ১৯৪৩ সাল। কিছু দিন আগেই নাৎসিরা ঢুকেছে রোমে। একের পর এক বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে ইটালিতে বসবাসকারী ইহুদিদের ওপর। পাশ হচ্ছে ইহুদি-বিরোধী আইন। বেনিটো মুসোলিনির নেতৃত্বে ইটালিয়ান সোশ্যাল রিপাবলিক চলে হিটলারের অঙ্গুলিহেলনে। রোমান ইহুদিদের খানিকটা ভরসার জায়গা ছিল পোপ। রোমের দায়িত্বে থাকা জার্মান সেনাধ্যক্ষ রেইনার স্টাহেলও আশঙ্কা করেছিলেন যে, পোপ দ্বাদশ পায়াস রোমানদের ওপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু পোপ সব দেখেও নিশ্চুপ রইলেন। ফলে রোমান ইহুদিদের ওপর শুরু হল সীমাহীন নিপীড়ন। এই সবই রোমে অসুখটা ঢোকার পথ প্রশস্ত করল।
যে দিন ঘটনার সূত্রপাত, সে দিন ছিল অক্টোবরের এক বৃষ্টিভেজা দিন। হাসপাতালের বাগানে ফোটা গোলাপের পাপড়ি পায়ে পায়ে পিষে মিশে গিয়েছে রাস্তায়। সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফ্যাসিস্টবিরোধী চিকিৎসক আদ্রিয়ানো ওসিসিনি। হাসপাতালের সামনে তখন যা চলছে, তার ভয়াবহতা অবর্ণনীয়। ফাতেবেনেফ্রাতেল্লির ঠিক উল্টো দিকে ইহুদিদের সবচেয়ে বড় বন্দি শিবির। সেখান থেকে দলে দলে মানুষকে টেনে হিঁচড়ে বার করে পশুর মতো গাদাগাদি করে ট্রাকে তুলছে নাৎসি গেস্টাপোরা। ১৯৪৩-এর ১৬ অক্টোবরের এই কুখ্যাত অভিযানে গেস্টাপোরা ১২৫৯ জনকে অউশভিৎজ় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে ৬৮৯ জন মহিলা এবং ২০৭ জন বাচ্চা ছিল। যার মধ্যে ১৫ জন মাত্র বেঁচে ফিরতে পেরেছিল। এ সব পরের কথা হলেও এই ধরপাকড়ের ফল কী হতে চলেছে, তা খানিকটা আন্দাজ করে কেঁপে উঠলেন আদ্রিয়ানো। তাঁর সামনে তখন মানুষ চিৎকার করছে ভয়ে, আতঙ্কে। আপ্রাণ পালানোর চেষ্টা করছে তারা। যারা ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে পড়ছে তাদের মেরে ধরে ফের ট্রাকে তুলছে গেস্টাপোরা। ভারী বুট আর বেয়োনেটের আঘাতে রক্তাক্ত মানুষ লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। বাচ্চাদের মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রাকে। এরই মধ্যে নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচাতে এক মা তাঁর বাচ্চাকে প্রায় ছুড়ে ফেলে দিলেন রাস্তায়। বাচ্চাটি আইল্যান্ডের সংযোগকারী রাস্তা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে ছুটতে হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে মাটিতে পড়ে গেল। ভীত সন্ত্রস্ত প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখলেন, কাদা আর গোলাপের পাপড়িতে মাখামাখি একটা বাচ্চাকে বুকে করে ছুটে হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে গেলেন এক নার্স। বাইরের গোলমাল শুনে তত ক্ষণে হাসপাতালের ভিতরের লোক জমা হয়েছে রাস্তায়। সেই সুযোগে ট্রাক থেকে কোনও ক্রমে লাফিয়ে পড়ে নাৎসিদের নজর এড়িয়ে বেশ কিছু ইহুদিও ভিড়ে মিশে ঢুকে পড়ল হাসপাতালে। অবস্থা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আদ্রিয়ানো। কী করবেন এদের নিয়ে, কেমন করে বাঁচাবেন এই বিপন্ন মানুষদের— ভাবতে ভাবতেই দেখলেন, একটু দূরে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু ফ্যাসিস্টবিরোধী গিউলিয়ো সেল্লা। তাঁর মুখ তখন রাগে ঘৃণায় শক্ত। সেল্লা এগিয়ে এলেন তাঁর কাছে। সেই মুহূর্তে দুই বন্ধু ঠিক করলেন যে ভাবেই হোক, এই মানুষগুলিকে বাঁচাতে হবে। তত ক্ষণে হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক জিয়োভানি বোরোমেয়ো চলে এসেছেন ঘটনাস্থলে। তিন জনে মিলে হাসপাতালের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন আরও বেশ কিছু পলাতক ইহুদিকে।
চিকিৎসক বোরোমেয়ো প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯২০ সালে যখন তাঁকে ফ্যাসিস্ট পার্টিতে যোগদান করতে বলা হয়, তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন তাঁর কাছে রোমের দু’টি বিখ্যাত হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব আসে। কিন্তু এর জন্য ফ্যাসিস্ট পার্টির সদস্য হওয়া আবশ্যক ছিল, তাই রাজি হননি তিনি। ফাতেবেনেফ্রাতেল্লি মূলত চালিত হত ক্যাথলিক চার্চের দ্বারা। সরাসরি এই হাসপাতাল ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের অধীনে ছিল না। ১৯৩৫-এ বোরোমেয়ো যোগ দেন এখানে। সেই থেকেই ইটালির প্রশাসনের একের পর এক ইহুদি-বিদ্বেষী নীতিতে রোমে বসবাসকারী ইহুদিদের কাছে কখনও তিনি এবং কখনও এই হাসপাতাল হয়ে উঠেছে আশ্রয়স্থল। কিন্তু সেগুলি সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এই দিন, গেস্টাপোদের হাত থেকে পালিয়ে যত সংখ্যক ইহুদি ফাতেবেনেফ্রাতেল্লিতে ঢুকলেন, প্রাথমিক ভাবে তাদের একটি ওয়ার্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া হলেও চিকিৎসকরা জানতেন বেশি দিন এই ভাবে হাসপাতালের বাকিদের চোখে ধুলো দিয়ে এঁদের লুকিয়ে রাখা যাবে না। আপাতত বাঁচালেও এর পর কী ভাবে পলাতকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়লেন তাঁরা।
তখনই সেই অদ্ভুত মারণরোগ, অর্থাৎ সিনড্রোম কে-র প্রাদুর্ভাবের শুরু। নাৎসিদের হাত থেকে আশ্রিতদের বাঁচানোর জন্য অভিনব এক পরিকল্পনা করলেন চিকিৎসকরা। বোরোমেয়ো প্রচার করতে শুরু করলেন, এক বিরল এবং সংক্রামক রোগ হঠাৎ নতুন স্ট্রেন নিয়ে ফিরে এসেছে। রোমানদের মধ্যে সাংঘাতিক ছড়িয়ে পড়েছে রোগটা। হাসপাতালের ‘কে ওয়ার্ড’-এ যারা ভর্তি আছে তারা প্রত্যেকে এই রোগে আক্রান্ত। কী হয় এই রোগে? জানানো হল, এই রোগে সারা শরীরে খিঁচুনি, স্মৃতিভ্রংশ, ক্রমশ পক্ষাঘাত হয়ে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু। ওই এলাকার ধারেকাছে যারা যাবে তাদেরও সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা। আর এ এমন জটিল অসুখ যে, এক বার কেউ আক্রান্ত হলে মৃত্যু অবধারিত।
‘সিনড্রোম কে’ নামটাও দেওয়া হয়েছিল বিদ্রুপাত্মক রসিকতায়। ‘কে’ শব্দটা এসেছিল অ্যালবার্ট কেসেলরিং আর হার্বার্ট কেপলারের নাম থেকে। নাৎসি সেনাধ্যক্ষ অ্যালবার্ট কেসেলরিং-এর নির্দেশে রোমের নাৎসি পুলিশ অধিকর্তা কেপলার, আর্ডেটাইন কেভে ৩৩৫ সাধারণ নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। এই দুই ভয়ঙ্কর অত্যাচারী নাৎসির হাত থেকে ইহুদিদের বাঁচানোর জন্য এদের উপহাস করে এদেরই নামে দেওয়া হল ‘ভয়ঙ্কর’ অসুখটার নাম। প্রত্যেক রোগীর নামে তৈরি হল ভুয়ো কাগজপত্র। যখনই কোনও ইহুদি পালিয়ে আসত হাসপাতালে, তার ভর্তির কাগজে অসুখের জায়গায় লেখা হত ‘সিনড্রোম কে’। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা বুঝতে পারতেন কে আসল রোগী, আর কে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন।
শুধু ইহুদি নয়, ইটালির বহু বিশিষ্ট ফ্যাসিস্ট-বিরোধী মানুষ সেই সময় রোগী সেজে এই হাসপাতালে আশ্রয় নেন এবং ভুয়ো রোগশয্যা থেকেই তাঁদের নাৎসি-বিরোধী কর্মকাণ্ড চালু রাখেন। এর মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ এবং সমাজতাত্ত্বিক গিউসেপ্পে রোমিতা, ক্যাথলিক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা অ্যাসচিলা গ্রান্ডি, পেরোত্তি পাস, গিউসেপ্পে স্প্যাতারো-সহ আরও অনেকে। পোপকে নিয়ে যত অভিযোগই থাক এই হাসপাতালের ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন ফাদার মাউরিজিয়ো বাইলেক। এখানকার ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি-বিরোধী সমস্ত কাজে তাঁর সক্রিয় সমর্থন ছিল। তাঁর সাহায্যেই ইহুদি চিকিৎসক ভিত্তোরিয়ো ইমানুয়েল সাচেরদোতি-কে ভুয়ো কাগজে হাসপাতালে কাজ দেন বোরোমেয়ো। ধর্মের জন্য আগের চাকরিটা খুইয়েছিলেন তিনি। ‘কে সিনড্রোম’ নিয়ে এই বিরাট আর বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডে ভিত্তোরিয়ো ইমানুয়েল ছিলেন অন্যতম প্রধান সহায়ক। তিনি টিবার আইল্যান্ডের পাশের ইহুদি হাসপাতাল থেকে নিয়মিত রোগী নিয়ে আসতেন এখানে উন্নত চিকিৎসার জন্য। এখানেই শেষ নয়, মাউরিজিয়ো এবং বোরোমেয়ো হাসপাতালের নীচে বসান বেআইনি রেডিয়ো ট্রান্সমিটার। এর মাধ্যমে তাঁরা ইটালিয়ান রয়্যাল এয়ার ফোর্সের জেনারেল রবার্ট লর্ডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
এ ভাবেই চলছিল সব। কিন্তু এক দিন ঘটল দারুণ বিপদ। ফাতেবেনেফ্রাতেল্লির বেসমেন্টে থাকা রেডিয়ো ট্রান্সমিটারের সন্ধান পেয়ে গেল নাৎসিরা। এক ডাবল এজেন্ট মারফত অতি গোপনে খবর এল, সেই দিনই তল্লাশি চালাতে আসছে নাৎসি মিলিটারি বাহিনী।
ইহুদি বন্দি শিবিরের খুব কাছে হওয়ায় হাসপাতালটির উপর দীর্ঘ দিন ধরে নজর ছিল নাৎসিদের। তল্লাশি প্রত্যাশিতই ছিল, কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেলেন চিকিৎসকরা। প্রথমেই রেডিয়ো ট্রান্সমিটার টিবারের জলে ফেলে দেওয়া হল। যথাসময়ে হাজির হল নাৎসিরা। হাসপাতালের সমস্ত ওয়ার্ডে চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে এক সময় তারা এসে পৌঁছল কে ওয়ার্ডের সামনে। তত ক্ষণে সেখানকার বাসিন্দাদেরও সতর্ক করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ভিত্তোরিয়ো সাচেরদোতির ভাইঝি দশ বছরের লুসিয়ানা-সহ আরও কিছু বাচ্চাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ওই ওয়ার্ডে। তাদের বলা হল, ক্রমাগত কেশে যেতে। বড়দের বলা হল, গলা দিয়ে এমন বিকৃত আওয়াজ করতে, যেন প্রচণ্ড শারীরিক কষ্ট পাচ্ছে তারা। নাৎসিদের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার আগে বোরোমেয়ো খুবই নিস্পৃহ গলায় তাদের বললেন যে, এই ওয়ার্ডে ঢুকলে জীবনসংশয়ের আশঙ্কা প্রবল। অসুখটা অতি ছোঁয়াচে। কোনও ভাবে হাসপাতালের রোগীদের থেকে এক জনের হলে পুরো নাৎসি বাহিনীতে মড়ক লেগে যেতে পারে। ভিতর থেকে আসা ভয়ানক সব শব্দ, চিকিৎসকের ঠান্ডা সতর্কবার্তা, সব মিলিয়ে আতঙ্কিত হয়ে গেল নাৎসিরা। চিকিৎসক সাচেরদোতি পরে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘সিংহের মতো বুক চিতিয়ে এসেছিল গেস্টাপোরা। কিন্তু কে ওয়ার্ডে ঢোকার কথা হতেই সব খরগোশের মতো পালাল। ওরা ভেবেছিল, যক্ষ্মা বা ক্যানসারের মতোই কোনও মারাত্মক অসুখ কে সিনড্রোম।’
সেই প্রথম আর সেই শেষ। এর পরেও কয়েক বার হাসপাতালে তল্লাশি চালালেও মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কে ওয়ার্ডের ধারেকাছে ঘেঁষেনি নাৎসিরা। হাসপাতাল থেকেই এখানে আশ্রয় নেওয়া ইহুদিদের সময় সুযোগ মতো অন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হত। পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত কে ওয়ার্ড যতটা সম্ভব রক্ষা করে গিয়েছে ইহুদিদের। ইহুদিদের রক্ষা করে গিয়েছেন আদ্রিয়ানো ওসিসিনি, জিয়োভানি বোরোমেয়ো, ভিত্তোরিয়ো সাচেরদোতির মতো চিকিৎসকরা, যাঁরা মনুষ্যত্বের প্রতি সীমাহীন অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরা এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্য মানুষরা জানতেন, সামান্য ভুল, একটু অসতর্কতা প্রাণসংশয় ঘটাতে পারে। তাও তাঁরা মাথা নোয়াননি ফ্যাসিস্টদের কাছে। আদ্রিয়ানো ওসিসিনি পরে ইটালির স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সমন্বয় দফতরের মন্ত্রী হন। চরম দুঃসময়ের আশ্রয়দাতা বোরোমেয়োকে ইহুদিরা ভোলেননি। তাঁর কাজ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়। হলোকাস্টের স্মৃতিরক্ষা সংস্থা ইজ়রায়েলের ইয়াদ ভাসেম তাঁকে মরণোত্তর সম্মানে ভূষিত করে।
কে সিনড্রোম বলে যে আসলে কোনও অসুখই নেই, সবটাই যে ভিত্তিহীন আর ভুয়ো, তা কোনও দিনই জানতে পারেনি নাৎসিরা। সেই প্রথম বার সংক্রামক আর মারণ এক ‘অসুখ’ বাঁচিয়ে দিয়েছিল বহু মানুষের প্রাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy