তামিলনাডুর বর্ধিষ্ণু শহর এরওয়াডি। হজরত মহম্মদের ১৮তম বংশধর, নানা দেশে ধর্ম প্রচারের পর এসে পৌঁছন এখানে। সুলতান সৈয়দ ইব্রাহিম এরওয়াডিতে যে দরগাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাতে মদিনার পবিত্র মাটি রয়েছে। রাজপরিবারের প্রধান সদস্যদের সকলেরই কবর সে দরগাতেই। একই সঙ্গে এখানে আছে সুলতানের দুই বীর শহিদ সেনাপতির কবর। এই দুজনের জন্যই এরওয়াডির প্রধান দরগার খ্যাতি। মানুষ বিশ্বাস করেন— শয়তানের প্রভাবে সৃষ্ট অসুখ, বিশেষত মানসিক অসুখ, নির্মূল হয় এই দরগায় দরখাস্ত করলে।
প্রধান দরগার পাশেই আর একটি দরগার নাম: রাবিয়া আম্মার দরগা। রাবিয়া ছিলেন সুলতানের বোন। এই দরগায় পুরুষের প্রবেশ নিষেধ, এবং এ-ও মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য বিখ্যাত।
তাই এরওয়াডিতে মনোরোগীর ভিড় হয়। আগেও হত। দরগায় জায়গা হত না বলে, তাদের থাকার জন্য নানা মেন্টাল হোম খোলা হয়েছিল। চিকিৎসা যদিও হত দরগার পবিত্র জল এবং প্রদীপের তেল মালিশ করে। সারা দিন রোগীদের দরগায় গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হত, আর রাতে বেঁধে রাখা হত ঘরে, শিকল দিয়ে।
৬ অগস্ট, ২০০১। ভোর রাতে এমন একটি মেন্টাল হোমে আগুন লেগে ২৮ জন মনোরোগী পুড়ে মারা যান। সারা দেশে অনেক হইচই হয়— তার পরে বিশেষ কিছু হয় না, বলাই বাহুল্য। এরওয়াডিতে এর পরেও রোগীর ভিড় কমে না, শিকলে বেঁধে রাখাও চালু থাকে।
ভারতে অনেক জায়গায় ‘এরওয়াডি দিবস’ পালন করা হয়।
না। আমার কোনও রোগী কোথাও পুড়ে মারা যাননি। আমার রোগীদের সারা রাত কেউ বেঁধে রাখে না।
২
মানসিক রোগীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যে সংগঠনগুলি, তার সামনের সারিতে ‘অঞ্জলি’। প্রতি বছর ৬ অগস্ট অঞ্জলির তত্ত্বাবধানে কলকাতায় ‘অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস’-এর সামনে পথসভা হয়, নাটক হয়— ‘এরওয়াডি ডে’ উদ্যাপিত হয়।
গত বছর, এরওয়াডি দিবস পালিত হয়েছিল কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে। একটা বিতর্ক সভায় আলোচনার বিষয় ছিল— ‘জবরদস্তি ভর্তি করা মানসিক রোগীদের পক্ষে ভাল।’ অঞ্জলির নিমন্ত্রণে এই আলোচনা শুনেছিলাম। শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, সকলেরই বক্তব্য সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এক বার ভর্তি হলে আর ছুটি না পাওয়ার বিরুদ্ধে। হাসপাতালের চূড়ান্ত অব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
শুনতে শুনতে বার বার ফিরে যাচ্ছিলাম সুনয়নার গল্পে।
৩
রাঁচিতে ‘কেন্দ্রীয় মনশ্চিকিৎসা সংস্থান’-এ ভর্তি হয়েছিল সুনয়না। পুরুলিয়া না বাঁকুড়ার গ্রামের স্কুলশিক্ষকের মেয়ে। ও আগেও ভর্তি হয়েছে বার চারেক। তখন আমি ওর দায়িত্বে ছিলাম না। বছর পঁচিশ-ছাব্বিশের প্রাণোচ্ছল মেয়ে, কলেজ পড়া শেষ হয়েছে, মাস্টার্স করতে পারেনি বাবার আর্থিক সমস্যার জন্য।
‘বিয়েরও আশা নেই’, বলত আমাকে। ‘বাবার তিন মেয়ে, আমি বড়। তার ওপর পাগল। আমাকে বিয়ে করবে কে?’ এক দিন বললাম, চিকিৎসা করো না কেন? যা দেখছি, একটা ওষুধ খেলেই অনেক ভাল থাকো। মাথা নিচু করে বলল, মা বাবা বলে: পাগলের চিকিৎসা করালে সবাই মেয়েকে পাগল বলবে।
মানুষের লজিক আমি অনেক সময় বুঝি না। মেয়েকে চিকিৎসা করে সুস্থ রাখলে লোকে পাগল বলবে, আর মেয়েকে অসুস্থ হতে দিয়ে, তার ‘পাগলামি’ দুনিয়াকে প্রত্যক্ষ করিয়ে ‘পাগলা গারদ’-এ ভর্তি করলে বলবে না?
জানলাম, এ আলোচনা কখনও সুনয়নার বাবার সঙ্গে কেউ করেনি, তার কারণ তিনি কখনও মেয়েকে নিয়ে বা ছুটি করাতে হাসপাতালে আসেনইনি। পাঠিয়েছেন অন্যান্য আত্মীয়দের।
সুনয়নার অসুখ প্রতি বারের মতোই অসুখের নিয়মে সেরে গেল। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী রোগীর বাড়ির লোক তিন মাসের হাসপাতাল খরচা জমা দিয়ে রোগীকে ভর্তি করে। সময়ের আগে রোগী সেরে গেলে, বা তিন মাস পেরিয়ে গেলে, বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠি লেখার দায়িত্ব আমার। সুনয়নাকে জিজ্ঞেস করলাম, ফাইলের এই ঠিকানাই তোমার বাড়ির ঠিকানা? সুনয়না বলল, হ্যাঁ। আপনি কি বাড়িতে ছুটির চিঠি লিখছেন? বললাম, এ বার কিন্তু বাড়ি গিয়ে ওষুধ বন্ধ করবে না। একটু ম্লান হেসে বলল, বাড়ি গেলে তো? বললাম, মানে কী? সুনয়না বলল, বাড়ি থেকে বেরোবার আগে মা-বাবা বলে দিয়েছে, আর নিয়ে আসবে না।
বুকটা ধড়াস করে উঠল। মানসিক হাসপাতালে বহু পরিবার-পরিত্যক্ত মানুষ পড়ে আছে। এই মেয়েটাও...
বললাম, না, না। অমন কথা মা বাবা রাগ করেই বলে। দেখো, ঠিক নিয়ে যাবে। সুনয়না মাথা নাড়ল। আসবে না।
বলা সত্ত্বেও সুনয়না যে আশাহত হয়নি, তার প্রমাণ পেলাম দু-তিন দিন পর থেকেই। ওয়ার্ডে ঢোকামাত্র ছুটে আসত, ডাক্তারবাবু, বাবা উত্তর দিয়েছে? বলতাম, দাঁড়াও, সবে তো চিঠি গিয়েছে।
রোজ।
অনেক বার ভর্তি হয়েছে যে রোগীরা, তারা নিয়মকানুন জানে, দিনও গোনে ডাক্তারের চেয়ে বেশি। এক দিন বলল, ডাক্তারবাবু, আবার চিঠি পাঠানোর সময় হয়েছে না? ফাইল খুলে দেখলাম, হয়েছে। দ্বিতীয় চিঠি গেল। এই সব চিঠির বয়ান ছাপানো থাকে। তাতে শুধু রোগীর নাম আর ঠিকানা লিখে সই করে দেওয়াই আমার কাজ। দ্বিতীয় চিঠির বয়ান একটু কড়া। আবার শুরু হল প্রশ্ন। ‘উত্তর এল?’ না।
মেয়েটার চোখের ঔজ্জ্বল্য কমতে থাকে। প্রশ্নও বদলায় ক্রমে। ‘আসেনি, না? জানতাম।’ বলে চলে যায়।
তৃতীয় চিঠি যায়। এর বয়ান আরও কড়া। রোগীর উন্নতির খবর পাঠানো সত্ত্বেও আসছ না কেন হে?— গোছের। সুনয়না আর ছুটে আসে না, হেঁটে আসে। কিন্তু আমাকে দেখলে প্রশ্নটা ঠিকই করে। উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যায়।
দিন কাটে। সপ্তাহ। মাস। সুনয়না বলে, আগের বার ছাপানো তিনটে চিঠির পরেও কেউ আসেনি। ডাক্তারবাবু একটা হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তার পরে জেঠতুতো দাদা এসেছিল।
হাসপাতালের নিয়মে আছে বটে, তিনটে ছাপানো চিঠির উত্তরে কেউ না এলে ডাক্তার নিজের বয়ানে চিঠি লিখতে পারেন। ফাইল উলটে দেখলাম তেমন একটা চিঠি বছর খানেক আগে তখনকার ডাক্তার লিখেছিলেন, এবং তার সপ্তাহ দুয়েক পরেই সুনয়নার ছুটি হয়ে যায়।
সুনয়না বলল, আপনি লিখবেন?
এই চিঠিতে জুনিয়র ডাক্তারের সই করার অধিকার ছিল না। সই করতেন বড় ডাক্তার। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, লিখব? ডা. লক্ষ্মণ বললেন, আভি ভেজো। আমি আগের চিঠির বয়ান ধরে লিখলাম, উনি তাতে কাটাকুটি করে বললেন, টাইপ করিয়ে আনো। চিঠি পাঠিয়ে ওয়ার্ডে গিয়ে ডেকে পাঠালাম সুনয়নাকে। এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। বললাম, চিঠি গেছে। বলল, লাভ নেই, কেউ আসবে না।
কিন্তু উৎসাহ বাড়ল আবার। রোজ জিজ্ঞেস করা চাই, ডাক্তারবাবু, এল? সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তা। আর কিছু দিন পরে আপনিও তো আর এই ওয়ার্ডে আসবেন না। অন্য কোথাও চলে যাবেন। তখন?
বলতাম, তখন অন্য ডাক্তার আসবেন। তোমাকে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বইকী!
৪
এ বার দু’সপ্তাহ যেতে না যেতে দিন ওয়ার্ডে আর্দালি এসে বলল, ডাইরেকটর বুলা রহা হ্যায়!
কী ব্যাপার? সবচেয়ে বড় সাহেবের তলব কেন? সাধারণত ভয়ংকর কোনও ভুল না করলে তো উনি ডাকেন না। যেতে যেতে দেখি ডা. লক্ষ্মণও যাচ্ছেন। বললেন, তুমিও? কী ব্যাপার?
জানি না। দুজনে গিয়ে পৌঁছলাম ডিরেক্টরের অফিসে। ডিরেক্টরের হাতে একটা কাগজ। আমাকে বললেন, সুনয়না তোমার পেশেন্ট? বললাম, হ্যাঁ, স্যর। বললেন, কেমন আছে? বললাম, ভাল আছে। ডিসচার্জের জন্য অপেক্ষা করছে। চিঠি গেছে... আমাকে থামিয়ে দিয়ে ডিরেক্টর বললেন, আর চিঠি পাঠাতে হবে না। বলে হাতের কাগজটা বাড়িয়ে দিলেন ডা. লক্ষ্মণের দিকে।
নিঃশব্দে পড়ে লক্ষ্মণ কাগজটা দিলেন আমাকে। কোনও ধরনের সরকারি চিঠি। কাগজের মাথায় অশোকস্তম্ভ এমবস করা। লোকসভার কোনও সাংসদ অকথ্য খারাপ ইংরিজিতে লিখছেন— শ্রী অমুক চন্দ্র অমুক এই জেলার বিখ্যাত স্কুলের নামী, বয়স্ক শিক্ষক। তাঁর তিনটি মেয়ের এক জন সুনয়না। সে মানসিক ভারসাম্যহীন। পাগলি। বার বার রাঁচির পাগলা গারদে নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তার অসুখ সারেনি। সে বদ্ধ উন্মাদ, এখন পাগলা গারদে ভর্তি। এই পাগলা গারদের দুজন ডাক্তার— এক জনের নাম অনিরুদ্ধ দেব, অন্য জনের নাম লক্ষ্মণ— সুনয়নার বাবাকে নানা রকম মিথ্যা লিখছে যে সুনয়নার অসুখ সেরে গেছে। তাকে বাড়ি নিয়ে যান। চিঠির বয়ান ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে হ্যারাসমেন্টের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এতদ্দ্বারা এমপি কেন্দ্রীয় মনশ্চিকিৎসা সংস্থানের নির্দেশককে নির্দেশ দিচ্ছেন, সুনয়নার অত্যন্ত সজ্জন বাবাকে হ্যারাস করা বন্ধ হোক। শিক্ষক মহাশয় দুঃস্থ, তিনি সুনয়না ছাড়াও আরও দুটি মেয়ের পিতা, তাঁর পক্ষে উন্মাদ মেয়েকে বাড়িতে বসিয়ে খাওয়ানো সম্ভব নয়।
সাংসদ এই বলে চিঠি শেষ করেছেন, নির্দেশক পত্রপাঠ এই অত্যাচার বন্ধ যদি না করেছেন, তবে এমপি তাঁর ক্ষমতাবলে নির্দেশক, ডা. লক্ষ্মণ এবং ডা. অনিরুদ্ধ দেব-এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে বলে তাঁদের সাসপেন্ডও করে দেবেন।
চিঠি পড়া শেষ করে দেখি ডিরেক্টর আর ডা. লক্ষ্মণ অন্য দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি বললাম, আমার মনে হয়... আমাকে থামিয়ে দিয়ে ডিরেক্টর বললেন, আর কোনও চিঠি কি গেছে? আমি বললাম, চারটে গেছে, তিনটে বয়ান অনুযায়ী, চতুর্থটি আমার লেখা। বলে তাড়াতাড়ি বললাম, ডা. লক্ষ্মণ সই করেছেন।
ডা. লক্ষ্মণও তাড়াতাড়ি বললেন, আমি নিয়ম মেনেই সই করেছি।
ডিরেক্টর বললেন, চারটেরই কপি পাঠিয়েছে। না, বেআইনি কিছু করেছেন বলছি না— তবে আমার নির্দেশ, আর চিঠি যাবে না। আর কমিউনিকেশনের প্রয়োজন নেই।
বললাম, স্যর, একটা ২৬-২৭ বছরের মেয়ে, গ্র্যাজুয়েট। বাইপোলার ডিজর্ডার। রোজ টাকা দশেকের একটা ওষুধ খেলে ভাল থাকবে। বছরে বার চারেক-পাঁচেক বাড়ি থেকে রাঁচি এসে ডাক্তারের ফি না দিয়েই দেখাতে পারবে। চাকরি করে সংসারে সাহায্য করতে পারবে। শুধু বাবাকে একটু বুঝতে হবে যে চিকিৎসা চলতে হবে।
ডিরেক্টর আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, বাবাকে বোঝানোর আগে এমপি-কে বোঝাতে হবে। কে বোঝাবে? আমি না আপনি?
চুপ করে রইলাম। ডিরেক্টর বললেন, ঠিক আছে, আপনি আসতে পারেন। বেরোতে যাচ্ছি, ফিরে ডাকলেন আবার। বললেন, রোগীকে কিছু বলবেন না, বুঝলেন?
বুঝলাম। ফিরে গেলাম ওয়ার্ডে। কপাল ভাল— সুনয়নার সঙ্গে দেখা হল না। খেতে গেছে।
৫
সুনয়নার ওয়ার্ডে কাজ করার মেয়াদ শেষ। যখন হ্যান্ডওভার দিচ্ছি, সুনয়না ঘরে ঢুকে এল।
আপনি চলে যাচ্ছেন?
মাথা নাড়লাম— মেয়াদ শেষ...
আমার বাড়িতে কে চিঠি লিখবে?
ডা. ভোসালে-র দিকে দেখাতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু হাতও উঠল না, মুখ দিয়ে কথাও বেরল না।
সুনয়না একটু দাঁড়িয়ে থেকে বলল, ‘আসবে না, না? কেউ আসবে না। আপনাকে বলেছিলাম না, কেউ আসবে না।’ তার পর চলে গেল। কেউ কিছু বলতে পারলাম না।
ডা. ভোসালে আমাকে বললেন, ওর ফাইলে লিখে দিও— সুইসাইড রিস্ক। এ সবের পরে ওয়ার্ডে গলায় দড়ি দিলে ওর বাবা আমাদের ছিঁড়ে খাবে।
ঠিক কথা। যে পরিজনকে আমরা ছেঁড়া চটির মতো ফেলে দিই, অন্যের হাতে তার সামান্য অনাদরের সন্দেহও সহ্য করি না।
রাঁচিতে আর বেশি দিন থাকিনি। যে ক’দিন ছিলাম, সুনয়নার ওয়ার্ডে কাজ করতে হয়নি, কিন্তু আসতে যেতে, নাইট, বা ইমার্জেন্সি ডিউটিতে দেখা হত। বলত, ‘ডাক্তারবাবু, আপনার পরে আর কোনও ডাক্তার বাড়িতে চিঠি লেখেনি। আপনি জানেন, কেন?’
এক দিন বলেছিলাম, আমাকে জিজ্ঞেস করো কেন? তোমার এখনকার ডাক্তারবাবু সব জানেন, আমি তো আর তোমার ডাক্তার নই।
‘কেউ কিছু বলে না। আমি জানি, বাবা নিশ্চয়ই জানিয়েছে, আসবে না আমাকে নিতে। কিন্তু এঁরা কিচ্ছু বলেন না। তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। আপনিও বলবেন না?’
কোনও রকমে, ‘আমি জানি না কিছু’, বলে পালিয়েছিলাম।
৬
‘জোর করে ভর্তি করা কি রোগীর পক্ষে মঙ্গলজনক?’ আলোচনা শুনতে শুনতে আনমনা হয়ে পড়ছিলাম।
সুনয়নার মুখ আমার মনে নেই। কিন্তু চোখ দুটো মনে আছে। ফিমেল সেকশনের পাশ দিয়ে স্কুটার নিয়ে সজোরে পালিয়ে যাবার সময় যে চোখ দুটো দেখতাম জাল লাগানো গেটের ওপারে আশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে, আজ যদি ডা. দেব বলেন, ‘সুনয়না, তৈরি হও। বাবা এসেছেন, বাড়ি নিয়ে যাবেন।’
ডা. দেব কাউকে বোঝাতে পারবে না, কেন এখনও, ২৫ বছর পরেও অনেক সময় রাতে ঘুম ভেঙে যায় ওই চোখের দৃষ্টি সইতে না পেরে। অন্ধকার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি। ঘুম ফিরে আসতে চায় না। এ আমার ব্যক্তিগত এরওয়াডি।
anideb@yahoo.com
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy