Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
international music day

বাঙালির বিশ্বসুর

যোগ দিবস মাত্র পাঁচ বছরের। অথচ আশির দশক থেকেই আজকের দিনে পালিত হয় আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস। এই শহরের গান অবশ্য সেই সব তকমার ঢের আগে থেকে বাকি বিশ্বের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাঁটে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে মহীনের ঘোড়াগুলি সহ সকলেই। যোগ দিবস মাত্র পাঁচ বছরের। অথচ আশির দশক থেকেই আজকের দিনে পালিত হয় আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস। এই শহরের গান অবশ্য সেই সব তকমার ঢের আগে থেকে বাকি বিশ্বের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাঁটে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে মহীনের ঘোড়াগুলি সহ সকলেই। অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

সাঙ্গীতিক: লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভাল হলে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে বিটলসের জর্জ হ্যারিসন। বাঁ দিকে, লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে জোন বায়েজের পারফরম্যান্স। ছবি: গেটি ইমেজেস

সাঙ্গীতিক: লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভাল হলে পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে বিটলসের জর্জ হ্যারিসন। বাঁ দিকে, লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে জোন বায়েজের পারফরম্যান্স। ছবি: গেটি ইমেজেস

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বিলিতি ‘খাড়া সুর’ বাংলা গানে সংযোজন করে বড্ড গোলযোগ উপস্থিত করেছেন তিনি। ‘জাত গেল’ বলে রে রে করে ওঠেন ‘হিন্দু সঙ্গীত’-এর শুদ্ধতাবাদীরা। টাউন হলের এক সভায় অক্ষয়চন্দ্র সরকার জানালেন, এই ভদ্রলোকের ধারায় গাওয়া গান শুনলে তাঁর ‘প্রাণে ব্যথা’ লাগে। এক কথায়, সবই নাকি ‘বিকৃত সুর’।

আসলে বিলেতফেরত সেই ভদ্রলোক বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতে ‘হাসির গান’-এর যে নতুন মাত্রা যোগ করলেন, তাতে বিলিতি প্রভাব প্রবল। প্রসঙ্গত, রিচার্ড হ্যারিস ব্যারহামের ছদ্মনামে লেখা ‘দি ইনগোল্ডসবাই লেজেন্ডস’ বইটি গোগ্রাসে পড়েছিলেন উনি। হাসির গান লিখতে গিয়ে ওই বিলিতি বইয়ের একটি বিশেষ রীতি তিনি গ্রহণ করলেন। আর তা হল, কাল-পরম্পরাকে দুমড়ে-মুচড়ে অসঙ্গতির আবহ তৈরি। ভদ্রলোকটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

পাশ্চাত্য প্রভাবের কারণে দ্বিজেন্দ্রলালের নামে বিস্তর গালমন্দ হতে থাকল। সমর্থনে এগিয়ে এলেন তাঁর বহু দ্বন্দ্ব-মিত্রতার সহযাত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বললেন, ‘যদি দ্বিজেন্দ্রলাল হিন্দুসংগীতে বিদেশী সোনার কাঠি ছুঁইয়ে থাকেন তবে সরস্বতী নিশ্চয়ই তাকে আশীর্বাদ করবেন।... হিন্দুসংগীতের কোনো ভয় নেই, বিদেশের সংস্রবে সে আপনাকে বড়ো করেই পাবে।’ গানের ব্যাপারে বাঙালি কোনও দিন প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বা হিন্দু-অহিন্দু ছুঁৎমার্গে বিশ্বাসী নয়।

সুরের সব কিছুরই অবাধ কোলাকুলি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত চিন্তায়। তখন তিনি ব্রিটেনে। এক বার ম্যাডাম নিলসনের (সম্ভবত ক্রিশ্চিন নিলসন) গান শুনতে গিয়েছেন। শুনে মনে হল, কণ্ঠস্বরের এমন আশ্চর্য শক্তি তিনি আগে শোনেননি।

‘বাল্মীকিপ্রতিভা’ ও ‘কালমৃগয়া’, গীতিনাট্য দু’টি লেখার পর্বে পাশ্চাত্য সঙ্গীতবিশারদ, পিয়ানোয় তুখড় জ্যোতিদাদার প্রভাব (কবির ভাষায় ‘উত্তেজনা’) প্রবল। পাশাপাশি, রবার্ট বার্নসের ‘ই ব্যাঙ্কস অ্যান্ড ব্রেজ়’-এর সুরের ছোঁয়ায় ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’, ‘ওল্ড ল্যাঙ সাইন’-এর বঙ্গায়ন ‘পুরানো সেই দিনের কথা’।

আবার পাশ্চাত্য সঙ্গীতে যুক্তিহীন মুগ্ধতা ছিল রবীন্দ্রনাথের, তাও নয়। ‘আরব-সমুদ্রে’ জাহাজে সফরকালে এক বিলিতি যুবক ও দু’-একজন বিলিতি মহিলার গান শুনলেন তিনি। তাঁরা খুব একটা মন্দ না গাইলেও রবীন্দ্রনাথের কানে লাগল তাঁদের গানের সুর ও কণ্ঠে জোর দেওয়ার চেষ্টা। আর ‘সে জোর সংগীতের ভিতরকার শক্তি নহে, তাহা যেন বাহিরের দিক হইতে প্রয়াস…।’

এ দেশের আপ্তবাক্য, ‘ন বিদ্যা সঙ্গীতাৎ পরাঃ’, অর্থাৎ সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে কোনও বিদ্যা নেই। এই বিদ্যাচর্চায় রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলালের পাশে, আর এক জন কাজি নজরুল ইসলাম। স্বদেশের মাটির গন্ধের পাশাপাশি, বিলিতি সুরকে নিবিড় করে চিনেছেন তিনি। ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’-তে আরবি, ‘মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে’-তে মিশরীয় সুরের খেলা দেখা যায়। আবার ভীমপলশ্রী রাগ ও দাদরা তালের ‘কানন গিরি সিন্ধু-পার ফিরনু পথিক দেশ-বিদেশ’ এই গানে রয়েছে নজরুলেরই অনূদিত ৩৮ ও ১৭০ নম্বর রুবাইয়ের প্রভাব।
এই তিন স্রষ্টাকে মনে রেখে আজকের ‘ওয়ার্ল্ড মিউজ়িক ডে’-তে তাই আমরা বলতেই পারি, বাঙালি সুরের জগতে চিরকাল বিশ্ব-নাগরিক। আজ বিশ্ব যোগ দিবস ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জািতক যোগ দিবসের বয়স মাত্র পাঁচ বছর। ২০১৫ সাল এটি শুরু হয়। আর বিশ্ব সঙ্গীত দিবসের সূচনা ১৯৮২ সােল, প্যারিসে। তার পর দুিনয়ার ১২০টি দেশ জুড়ে আজ সেই সঙ্গীতের উদ্‌যাপন।

সঙ্গীতের এই বিশ্ব-ভ্রাতৃত্বের কারণেই ষাটের দশকে ‘বিটল্‌স’-এর ‘নরওয়েজ়িয়ান উড’-এ শোনা গেল সেতার। বাজালেন দলের লিড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন। তিনি তত দিনে সেতার শিখে ফেলেছেন তাঁর গুরু রবিশঙ্করের কাছ থেকে। এর পরে একে একে মন্টেরেই পপ উৎসব, উডস্টকে পরিবেশনা, শাস্ত্রীয় সুরকে সঙ্গে করেই ‘রক’, ‘পপ’-এর জগতেও অবিসংবাদী চরিত্র হয়ে উঠলেন রবিশঙ্কর। ‘দ্য বার্ডস’, ‘দি অ্যানিম্যাল্‌স’, ‘রোলিং স্টোন্‌স’-এর মতো ব্যান্ডও রবিশঙ্করের সান্নিধ্যে এসে ভারতীয় সঙ্গীতের এই আশ্চর্য ক্ষমতাকে বোঝার চেষ্টা করল।

বিশ্বকে গ্রহণ করার ক্ষমতা রবিশঙ্করের কতটা প্রবল তা বোঝা যায়, বেহালাবাদক ইহুদি মেনুহিনের সঙ্গে তাঁর সখ্য থেকেও। এই দুই শিল্পীর দু’টি অ্যালবাম, ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’ ও ‘ইস্ট মিটস ওয়েস্ট’— নাম দু’টিই বাঙালির বিশ্ব-যোগের প্রমাণ।
এই রবিশঙ্করই আবার এক জনের সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘দাদার পরেই শ্বেতাঙ্গিনী মহলে ওঁর ডিমান্ড ছিল ইউরোপ বা আমেরিকাতে।’ সরোদবাদক তিমিরবরণ ভট্টাচার্য সম্পর্কে এই কথা। তিমিরবরণের সরোদ শুনে তাঁকে মার্কিন মুলুকে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান ফিলাডেলফিয়ার সঙ্গীত নির্দেশক লিয়োপোল্ড স্টকস্কি।

তবে, তিমিরবরণের সরোদ ও তাঁর তৈরি ভারতীয় অর্কেস্ট্রার ইউরোপ-বিজয় উদয়শঙ্করের আমন্ত্রণে তাঁরই ‘ব্যালে ট্রুপ’-এ যোগ দেওয়ার পর। ১৯৩১-এ সঁজে লিজে সেই পর্বের প্রথম অনুষ্ঠান। সেখান থেকে টানা দেড় বছরেরও বেশি ইউরোপের নানা দেশে অনুষ্ঠান। সঙ্গীতে বাঙালির বিশ্বজয় কি আজকের কথা!

এই ইউরোপ-পর্বে কয়েকটি মজার ও বাঙালির সুর-সাধনার জয়যাত্রার কথা উল্লেখ করেছেন তিমিরবরণ, তাঁর ‘উদয়-পথের সহযাত্রী’ বইতে। এক বার হল্যান্ড সীমান্তে রক্ষীরা উদয়শঙ্করের দলকে আটকালেন। সঙ্গে থাকা বাদ্যযন্ত্র, কাপড় ইত্যাদি দেখে রক্ষীরা ভাবলেন ব্যবসায়ীর দল। শেষমেশ তিমিরবরণ সরোদ হাতে বসলে মুগ্ধ হয়ে গেলেন রক্ষীরা। মিলল ছাড়পত্র। সীমান্তে এমন উৎপাতের জেরে বিপত্তি ঘটল সাবেক চেকোস্লোভাকিয়াতেও। প্রাগে অনুষ্ঠান। কিন্তু সীমান্ত-বিপত্তির জেরে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশ কয়েক ঘণ্টা দেরি হল। প্রেক্ষাগৃহে মারমুখী দর্শক। পর্দা উঠলে তিমিরবরণ চোখ বুজে সরোদ বাজাতে শুরু করলেন। আচমকা স্টেজে ধুপধাপ শব্দ। শিল্পী ভাবলেন, পচা ডিম বা পনির নিশ্চয়। একটা কিছু গায়ে এসে পড়লে চোখ মেললেন তিমিরবরণ। দেখলেন, ‘ছোট ছোট সুন্দর ফুলের তোড়া’!

শুধু বিদেশ-বিজয় নয়, বিশ্ব-সুরের আস্বাদটুকুও স্ব-দেশে আনতে চেয়েছিলেন তিমিরবরণ। তাই, দেশে ফিরে নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেওয়ার পরে অর্কেস্ট্রায় ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে ব্যাঞ্জো, ভিয়োলা, চেলো-সহ বিভিন্ন ভিনদেশি যন্ত্র, পশ্চিমি সুর আমদানি করলেন তিনি। বালি ও জাভা গিয়ে ‘গ্যামেলন অর্কেস্ট্রা’র বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এলেন। এই কাজে বিশেষ সাহায্য করল জাভার সুলতানকে রবীন্দ্রনাথের ও এক অধ্যাপককে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা চিঠি। প্যারিসে সঙ্গীত দিবস শুরুর ঢের আগে থেকেই বাঙালির গানবাজনা আন্তর্জাতিক।

এই বঙ্গের লোকায়ত সুরও বিশ্বে বার বার সমাদৃত। ১৯৯০-এর জানুয়ারিতে সবার চোখের আড়ালে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি এলাকার এক বিয়েবাড়িতে হাজির স্বয়ং বব ডিলান! আমন্ত্রণকারী বন্ধু পূর্ণচন্দ্র দাস বাউল। তাঁর ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা।

এর অন্তত ত্রিশ বছর আগের ঘটনা। পূর্ণচন্দ্র তখন থাকেন কালী টেম্পল রোডের এক যাত্রিনিবাসে। সেখানেই এক দিন গ্র্যান্ড হোটেল থেকে ফোন— এক সাহেব তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। বাউলগীতির যন্ত্র হাতে, স্ত্রী মঞ্জুদেবীকে নিয়ে হোটেলে গেলেন পূর্ণচন্দ্র। আলাপ হল অ্যালবার্ট গ্রসম্যানের সঙ্গে। তিনি বব ডিলানের ম্যানেজার, লোকগীতির পৃষ্ঠপোষক। তিনি আমেরিকা যাওয়ার আহ্বান জানালেন পূর্ণচন্দ্রকে। সঙ্গে জানালেন, ‘ডিলানও তোমার মতো এক বাউল।’ এর পরে, ডিলানের বিয়ার্সভিলের বাড়িতে যাওয়া, থাকা, এক সঙ্গে গান-আলাপ, অনুষ্ঠান সবই চলতে থাকল সুরের লয় ধরেই। সঙ্গে ডিলানের পাঠানো চালে খিচুড়ি রাঁধেন মঞ্জুদেবী। ডিলানের আবার সে খিচুড়ি ভীষণ পছন্দ!
এ তো গেল বাউল-কথা। এই বিশ্ব সঙ্গীত দিবসেই বাঙালির মনে পড়তে পারে শতবর্ষে পা দেওয়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কথা। হেরমান হেস-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ অবলম্বনে ওই নামেই সিনেমা তৈরি করেন কনরাড রুকস। সেখানে হেমন্তের কণ্ঠে বহুল প্রচলিত বাংলা গান ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ এবং ‘ও নদী রে’ গান দু’টি অত্যন্ত সফল ভাবে ব্যবহৃত হল। জনপ্রিয় বাঙালি গায়ক, জার্মান লেখক এবং মার্কিন পরিচালকের জোটবন্ধন সে যাত্রাতেও দুনিয়াকে বুঝিয়ে দিল, সঙ্গীতকে কখনই আটকানো যায় না দেশ-কালের ছোট্ট পরিসরে।
চলচ্চিত্রের কথা উঠলে বাঙালির বিশ্ব-নাগরিক সত্যজিৎ রায়ের কথা ওঠাটা স্বাভাবিক। সত্যজিতের মামার বাড়ির সদস্য ছিলেন অতুলপ্রসাদ সেন। বিজয়া রায় জানিয়েছিলেন, তাঁদের বাড়িতে পাশ্চাত্য সঙ্গীত চর্চার একটি পরিবেশ ছিল। কিশোর বয়সে সত্যজিতের সঙ্গে এই সূত্রেই তাঁর সখ্য তৈরি হয়। পাশ্চাত্য সুরের প্রতি সত্যজিতের আগ্রহ তাঁর চলচ্চিত্রেও স্পষ্ট।

যেমন, ‘তিন কন্যা’র ‘মণিহারা’য় আবছায়া, ছমছমে পরিবেশ তৈরি করতে বেজে ওঠে চেলোর গম্ভীর নিনাদ। আবার ‘চারুলতা’র শুরুতে বাঁশি, সেতার, অর্গানের পাশাপাশি, মাঝে ব্যবহৃত চেলো ও বেহালা বাদনের আবহ।

রাজনৈতিক সমমনস্কতার জন্যও বাংলা গান বিশ্বের আঙিনায় হেঁটেছে বহু বার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে আসে সলিল চৌধুরীর কথা। জুলিয়া ওয়ার্ড হাউ-এর ‘ব্যাটল হিম অব দ্য রিপাবলিক’-এর প্রেরণা কয়েক যুগ পরে সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে গণসঙ্গীত ‘জন্মভূমি’ ও পরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘ধন্য আমি জন্মেছি মা’-তে অনেকেই দেখতে পারেন। আবার পল রোবসনের ‘ওল্ড ম্যান রিভার’কে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এনেছেন ভূপেন হাজারিকা, তাঁর ‘বিস্তীর্ণ দু’পারের অসংখ্য মানুষের হাহাকার’ গানে। আবার সমসময়ে ‘কতটা পথ পেরোলে’, ‘ও গানওলা’, ‘আমি যাকে ভালবাসি’, নাগরিক কবিয়াল কবীর সুমনের এই গানগুলিতে শ্রোতারা যথাক্রমে ডিলানের ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’, ‘মিস্টার ট্যাম্বুরিন ম্যান’, ‘লাভ মাইনাস জ়িরো’র সন্ধান করতেই পারেন। যদিও ভাষায়-সুরে ‘সুমনীয়’ জাদুর কারণে এগুলি একান্ত ভাবেই নতুন বাংলার গান। এর সঙ্গে বাংলা ব্যান্ডও পৃথিবীর কানে কথা বলতে চেয়েছে। যেমন, ‘চন্দ্রবিন্দু’র ‘মৌনমুখরতা’-য় সাইমন অ্যান্ড গারফাঙ্কেল-এর ‘দ্য সাউন্ড অব সাইলেন্স’-কে খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। তারও আগে কে ভুলতে পারে এই শহরে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র সেই সুর ‘ভালবাসি পিকাসো, বুনুয়েল দান্তে/বিটলস, ডিলান আর বিঠোফেন শুনতে/ রবিশঙ্কর আর আলি আকবর শুনে ভাল লাগে।’ এটাই বাঙালির সুরেলা ঐতিহ্য।

শুধু বিটলস বা বব ডিলান নয়, কে ভুলতে পারে মধ্য কলকাতার জ্যাজ়ফেস্টকে? জ্যাজ়, পপ, রেগে-কে বারংবার কুর্নিশ জানিয়েছে এই শহর। তবে সবচেয়ে বড় ঘটনা অন্যত্র। এ শহরের ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন সম্প্রতি পেরিয়ে গেল ৬৮ বছর। রবিশঙ্কর থেকে আলি আকবর, বিলায়েত খান, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ভীমসেন জোশি, বিসমিল্লা খান, কাকে না শুনেছে এই শহর সেই মঞ্চে? প্রায় সাত দশকের ধ্রুপদী ঐতিহ্য কম কথা নয়। সঙ্গীত দিবস বারংবার মনে করিয়ে দেয়, বিভিন্ন ঘরানার গানেই বাঙালির মুক্তি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy