Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
মহাপ্রভুর খাঁটি নিরামিষ আহার্য থেকে কৃত্তিবাসী রামায়ণ, মঙ্গলকাব্য থেকে ঠাকুরবাড়ির প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী— বাঙালির খাদ্যতালিকার বিবর্তনে আছে বহুমাত্রিক ঝলক।

Bengali diet: পার্বতীকে ঘি দিয়ে শাক রাঁধতে বলেছিলেন শিবঠাকুর

আর বলেছিলেন ছোলার ডালে যেন একটু মিষ্টি থাকে। ধর্মমঙ্গল কাব্যে এর উল্লেখ আছে।

দেবাশিস ভৌমিক
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:২৮
Share: Save:

শরতের আদুরে মেঘে-রোদে গরম কমতে শুরু করলেই বাঙালির হজমশক্তি বাড়ে, এ কথা সকলেই জানেন। ঠান্ডা-গরম, শক্ত-নরম সম্পর্কে নিঃস্পৃহ থেকে সর্বভুক হয়ে ওঠাটাই বাঙালির শরতের আমেজ। কাঁসার থালায় সরু চালের ঝুরঝুরে গরম ভাত, প্রথম ভাতে কিঞ্চিৎ গব্যঘৃত, নবযৌবনা ডাগর বেগুনের আহ্লাদি ভাজা, সোনাখড়কে কিংবা মৌরলা মাছের তেল-গরগরে বাটিচচ্চড়ি আর শেষপাতে নলেন গুড়-সহ পুরু সরযুক্ত ঘন গোদুগ্ধ। আহা! জীবন এত ছোট ক্যানে? আহারান্তে লম্বা ঢেকুরের সফল তৃপ্তিতে একটি মিঠে পান মুখে তুলে দিতে পারলে ধন্য হয় শরৎযাপন। কেমন যেন একটা বাঙালিত্ব উথালপাথাল করে নাভিপ্রদেশের ভিতর ও বাইরে।

বঙ্গবাসীর জীবনে এই তৃপ্তিদায়ক খাদ্য-সংস্কৃতি আজকের নয়, তার সমৃদ্ধ অতীত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের ইতিউতি। মহাপ্রভুর ভোজনতালিকা সম্পূর্ণ নিরামিষ ছিল ঠিকই কিন্তু যে কোনও আমিষাশী পাঠক অমিয় নিমাই শ্রীচৈতন্যের ভোজনতালিকা শুনলে চোখ কপালে তুলবেন—“যমানী পুড়িয়া ঘৃতে করিল ঘন পাক।/ সাজা ঘৃত দিয়া রান্ধে গিমা তিতা শাক॥/ কোমল বাথুয়া শাক করিয়া কুচা কুচা।/ লাড়িয়া চাড়িয়া রান্ধে দিয়া আদাছেঁচা॥” এ তো মুখপাতের খাওয়া মাত্র। বেতো শাক কিংবা গিমাপাতা নাকি মুখের রুচি আনে, খাবার ইচ্ছে বাড়িয়ে দেয়। তাই শুরুতেই এমন আয়োজন। বাঙালির হেঁশেলে আলুর আবির্ভাব তখনও ঘটেনি। তাই শাকের এত অভিনবত্ব।

শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্যের বাড়িতে দেখা করতে এসেছেন মহাপ্রভু। পঞ্চব্যঞ্জনে তাঁকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন গুরুদেব। কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃতে মহাপ্রভুর ভোজনতালিকা প্রসঙ্গে লেখা আছে—“সত্য পীত ঘৃতযুক্ত শালি অন্নস্তূপ।/ চৌদিকে ব্যঞ্জন ডোঙ্গা আর মুদ্গসূপ॥/ সামুদ্রিক শাক আর বিবিধপ্রকার।/ পটল কুষ্মান্ড বড়ি মানকচু আর॥/ রাইমরিচ শুক্তো দিয়া কন্দ মূল ফলে।/ অমৃতনিন্দক পঞ্চবিধ তিক্ত ঝোলে॥/ মুগ বড়া মাস বড়া রম্ভা বড়া মিষ্ট।/ ক্ষীরপুলি নারিকেল যত পুষ্প ইষ্ট॥” আমিষ রান্না যাঁরা রাঁধেন, তাঁদের তুলনায় নিরামিষ রন্ধনকারীর মুনশিয়ানা বেশি, বাঙালিঘরের চিরকালীন এই কথাকে সেদিন সত্য করে তুলেছিলেন অদ্বৈত আচার্যের পত্নী সীতাদেবী।

মধ্যযুগের বঙ্গসাহিত্যে বাঙালির খাবারদাবারের প্রসঙ্গ রয়েছে কৃত্তিবাসী রামায়ণে। তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসেছেন স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র, ‘সূক্ষ্ম অন্ন সহ আর পঞ্চাশ ব্যঞ্জন।’ রাম ভোজনরসিক ছিলেন, না কি পেটুক সে অন্য বিতর্ক। কিন্তু প্রবল পরাক্রমশালী বীরের খাদ্যতালিকায় পঞ্চাশটি ব্যঞ্জন থাকা আশ্চর্যের কিছু নয়। অথচ এই রামই যখন গুহকের আতিথ্য গ্রহণ করছেন তখন তিনি খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সংযত। শুধু ফলাহারেই তিনি সন্তুষ্ট— “নানাবিধ ফল খাব কদলী কাঁঠাল।/ সরঙ্গ নারঙ্গ আদি পাইব রসাল॥” বাঙালির নিজস্ব ফল খাওয়ার সংস্কৃতি আজ লুপ্তপ্রায়।

চৈতন্যযুগ কাটতে না কাটতেই বাঙালি উভচর হয়ে উঠল। নিজের ভোজনতালিকার সাতকাহন করে দ্বিজ বংশীদাস লিখলেন, “বড় বড় হঁটা মৎস্য করিল তলিত।/ রিঠা পুঠা ভাজিলেক তৈলের সহিত॥/ বেত আগ পরিয়া চুচরা মৎস্য দিয়া।/ শুকত ব্যঞ্জন রান্ধে আদাটি বাটিয়া॥/ পাবদা মৎস্য দিয়া রান্ধে নালিতার ঝোল।/ পুরান কুমড়া দিয়া রোহিতের কোল॥” রেসিপিতে কী অভিনবত্ব! নালতে শাক দিয়ে পাবদামাছ, পাকা কুমড়ো দিয়ে রুই মাছের পেটি! আজকের বাজারচলতি রান্নার বইয়ে এ সব রেসিপি আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

পেটুক বাঙালির রসনায় ওঠাপড়া তো থাকবেই। আটপৌরে রান্নার পাশাপাশি ভোজবাড়ির রান্নাতেও মধ্যযুগের বাংলায় অভিনবত্ব ছিল চোখে পড়বার মতো। ফুলবড়ি দিয়ে শাক, কইমাছ কড়া করে ভাজা, চিতলের পেটি ভাজা, কুমড়ো-আলু বড়ি দিয়ে রুইমাছের ঝোল, শোলমাছ আর কুলের অম্বল, সোনামুগ ডাল, সরলপুঁটি ভাজা, চিচিঙ্গের বড়া, কচি কুমড়ো ভাজা... একের পর এক রান্না করে গেছেন খুল্লনা। আর সোনার গাড়ুতে ঘি নিয়ে তা পাতে পাতে পরিবেশন করছেন পুত্রবধূ লহনা—‘গন্ধে আমোদিত সাধুর ভবন’।

মনসামঙ্গলে লখিন্দরের বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ। মা সনকা সাত বৌমাকে নিয়ে রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত— ‘পায়েস পিষ্টক কৈল প্রচুর রন্ধন।/ স্থান করি দিল জ্ঞাতি করিতে ভোজন॥’ সে দিন বাঙালি জীবনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্নব্যঞ্জনের সঙ্গে অপরিহার্য প্রতিবেশী হিসেবে থাকত পায়েস পিঠে আর ছাঁচি মিষ্টি। ঘরেই তৈরি হত সব। খাওয়া শেষ হলে অতিথির হাতে তুলে দেওয়া হত কর্পূর-তাম্বুল। এ গেল অধিবাসের খাওয়াদাওয়া। লক্ষণীয়, এখনও আমিষের গন্ধ এতটুকুও পাওয়া যায়নি। বরকে নিয়ে রওনা দিল বরযাত্রীর দল।

যথাসময়ে বিয়ে শেষ হওয়ার পর বেহুলার মা নব্য জামাতাকে সমাদর জানালেন সুবাসিত শালি অন্ন পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে। সে শালিধান বাঙালির কাছে আজ লুপ্তস্মৃতির অহঙ্কার মাত্র। লখিন্দর নতুন জামাই। তবুও তার ভোজনতালিকায় একটিও আমিষ পদ চোখে পড়েনি। সেটা পেলাম বিজয় গুপ্তর মনসামঙ্গলে। পূর্ববঙ্গের কবি বলেই হয়তো তাঁর লেখায় মাছের প্রসঙ্গ এল। এল খাঁটি সর্ষের তেল দিয়ে বেগুনপোড়া, সর্ষেবাটা দিয়ে মাখা কলার থোড়, পলতার পাতা থেঁতো করে বেগুন দিয়ে ধনে-পলতা, কাঁচকলা দিয়ে সুগন্ধ পাঁচন, ঘি দিয়ে গিমেশাক ভাজা, কাঁঠালের বিচি ভাজা ইত্যাদি পরিচিত বাঙালি রান্নার প্রসঙ্গ। সর্ষের তেলের যথেচ্ছ ব্যবহার সে কালেও কম ছিল না। ধনেপাতা, খরশুন মাছ, চিংড়ি, রুই-চিতলের পেটি, বাইন মাছ, জিরে-লঙ্কাবাটা দিয়ে শোলমাছের মুড়িঘণ্ট— প্রতিটি খাবারেই প্রাণ ঢেলে সর্ষের তেল খরচ করেছেন রাঁধুনিরা।

নিরামিষ থেকে আমিষের দিকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ল ধর্মমঙ্গলের কাল থেকে। তখন সদ্য সদ্য বাঙালির পাকশালে মুসুরডালের অনুপ্রবেশ ঘটেছে পর্তুগিজদের কল্যাণে। ধর্মমঙ্গলের শিবঠাকুর কুমড়ো আর বেগুন দিয়ে শুক্তো রাঁধতে বলছেন পার্বতীকে। সঙ্গে যেন থাকে মুসুরডাল আর করঞ্জার ফল। মুসুরডাল কী করে যে আমিষে ঢুকে পড়ল, কে জানে! পেটুক শিবঠাকুর আরও বলেছেন, ঘি দিয়ে ফুলবড়ি ভেজে তা যেন দুধে ডুবিয়ে দেওয়া হয় খাবার সময়। চচ্চড়ি, পলতার বড়ি, ছোলার ডাল— এ সব তো পার্বতী সব সময়ই রান্না করেন, তা নিয়ে শিবের অনুযোগ নেই। তবে ওই ছোলার ডালটা রান্নার সময় তাতে যেন একটু মিষ্টি দেওয়া হয়, ওতে স্বাদ বাড়ে। শ্মশানবাসী হলেও রান্নাবান্নার বিষয়ে মহাদেবকে একেবারে অনভিজ্ঞ ভাবা ঠিক হবে না। পার্বতীকে নির্দেশ দিচ্ছেন, “ঘৃত আর জিরা সন্তলনে রান্ধিবে পালঙ্গ...”। পালং শাক একটু ঘি দিয়ে সাঁতলে নিলে তার স্বাদ কেমন হতে পারে, তা পেটুক বাঙালির মতো আর কে-ই বা জানেন! এই ধর্মমঙ্গলেই প্রথম জিরে-লঙ্কা-ধনে-রসুন-পিঁয়াজ দিয়ে মাংস রান্নার কথা পাওয়া যাচ্ছে।

রান্নার হাত দেবী অন্নপূর্ণারও ছিল অত্যন্ত দড়। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে চোখে পড়বে, “বড়াবড়ি কলামূলা নারিকেল ভাজা।/ দুধ থোড় ডালনা সুক্তানি ঘন্ট ভাজা॥/ কাঁঠালের বীজ রান্ধে চিনি রসে গুড়ো।/ তিল পিঠালিতে লাউ বার্তাকু কুমড়ো॥/ নিরামিষ তেইশ রান্ধিলা অনায়াসে।/ আরম্ভিলা বিবিধ রন্ধন মৎস্য মাসে॥” ১৭৫০ সালের ভারত-সাহিত্যের খাদ্যতালিকায় মাছ মাংস রান্না বেশ ঘন-ঘন। হবে না-ই বা কেন! নদিয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তো কম ভোজনরসিক ছিলেন না। শোনা যায়, মহারাজের প্রিয় পদ ছিল ‘হৈয়ঙ্গবীন’। মানে, কালো গাইয়ের দুধ দুইয়ে টাটকা মাখন তুলে তার থেকে সদ্যপ্রস্তুত ঘি। শুরুর ভাতে এটা অপরিহার্য ছিল কৃষ্ণচন্দ্রের। রায়গুণাকরের লেখাতেই রয়েছে, বাটা, খয়রা মাছ ভাজার সঙ্গে কাছিমের ডিমের বড়ার কথা। রয়েছে ছোট কাছিম বা উবির সেদ্ধ কাবাবের কথাও। বোঝা যায়, নবাব-বাদশাহি খাদ্যসংস্কৃতির ঢেউ অল্পবিস্তর হলেও যমুনার পানি বেয়ে এসে পৌঁছেছিল জলঙ্গীর শান্ত জলে।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আমল শেষ হল। বঙ্গদেশে তত দিনে ঢুকে পড়েছে ব্রিটিশ বেনের দল। ছাপোষা বাঙালি ম্লেচ্ছ ইংরেজের খাওয়াদাওয়া নিয়ে খুব যে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়েছিল, তা নয়। তবে এই সময় থেকে কচি পাঁঠার ঝোল ভুলিয়ে দিল বাঙালির ইহকাল-পরকাল। ‘সংবাদপ্রভাকর’-এর কবি ঈশ্বর গুপ্ত বাসনা প্রকাশ করলেন, মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তেও যেন কচি পাঁঠার ঝোল খেয়ে তার পর শেষ নিঃশ্বাসটি ফেলতে পারেন। নাক-উঁচু বাঙালির রান্নাঘরে মুরগির প্রবেশাধিকার ছিল না বললেই চলে। গুপ্তকবি যেন কল্পদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিলেন, ‘বিচিত্র পুষ্পের রথে পাঁটা পাঁটা বলে/ সাতান্ন পুরুষ তার স্বর্গে যায় চ’লে।’ পাঁঠার মাংসের এই কদর আজও বাঙালি একই ভাবে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, সেটাই বড় কথা।

বাঙালি খাদ্যতালিকাকে নবাবি ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সম্মিলিত রসায়নে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মেয়ে-বৌরা। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর লেখা ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ বইটি বাঙালি হেঁশেলের খোলনলচে অনেকটাই বদলে দিল। খাওয়াদাওয়া নিয়ে অনেক নতুন ভাবনার সন্ধান দিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী। পুরোটাই বাঙালি ভাবনায় ‘মেনু’ শব্দের বাংলা তর্জমা করে নিলেন ‘ক্রমণী’। আমিষ ও নিরামিষ দু’রকম রান্নারই বিপুল আয়োজন রাখলেন বইটিতে। নিরামিষ ক্রমণীতে স্থান পেল জাফরানি ভুনি খিচুড়ি, ধুঁধুল পোড়া, শিম-বরবটি ভাতে, পাকা আম ভাতে, পটলের নোনা মালপোয়া, পাকা কাঁঠালের ভুতি ভাজা, কাঁকরোল ভাজা, অড়হর ডালের খাজা, লাউয়ের ডালনা, বেগুন ও বড়ির সুরুয়া, ছোলার ডালের ধোঁকা, বেগুনের দোলমা, আলুবোখরা, আমচুর দিয়ে মুগের ডাল, পাকা পটলের ঝুরঝুরে অম্বল, ঘোলের কাঁড়ি, রামমোহন দোলমা পোলাও, লিচুর পায়েস, নারকেলের বরফি। আরও আছে, আলু পোড়া, দুধ দিয়ে বেগুনভর্তা, মুলো সেদ্ধ, আনারস ভাজা, মোচা দিয়ে আলুর চপ, মুগের ফাঁপড়া, ডুমুরের ছেঁচকি, মোচা ছেঁচকি, কুমড়ো দিয়ে মুগের ডালের ঘণ্ট, পালং শাকের ঘণ্ট, উচ্ছে দিয়ে মুসুরডাল, ওলের ডালনা, ঢেঁড়শের ঝাল, ছানার ফুপু পোলাও, নিরামিষ ডিমের (সব্জি দিয়ে ডিমের আকৃতিতে বানানো) বড়ার কারি, করলার দোলমা আচার, আলুর দমপোক্ত, কচি কাঁচা তেঁতুলের ফটকিরি ঝোল, নারকেলের অম্বল, পাকৌড়ি, খইয়ের পরমান্ন, কমলী ইত্যাদি। প্রতিটি নিরামিষ রান্নাই প্রায় অপ্রচলিত,অভিনব তো বটেই।

এই বইতে আমিষ খাবারেরও তালিকা রয়েছে। তাতে বাদশাহি ছাপের সঙ্গে রয়েছে বিলিতিয়ানাও। যেমন, পাতলা পাউরুটির ক্রুটো, জারক নেবু, বাদামের সুপ, ভেটকি মাছের মেয়োনিজ়, মুরগির হাঁড়ি-কাবাব, মটনের গ্রেভি কাটলেট, সব্জি ও বিলিতি বেগুনের স্যালাড, স্নাইপ রোস্ট, আলুর সিপেট, উফস আলানিজ, ডিজ়ার্ট, ডিম দিয়ে মুলুকতানি সুপ, আলু ফ্রেঞ্চ স্টু, চঁওচঁও, বড় রুই মাছের ফ্রাই, মাংসের হুসনি কারি, পোলাও, ফ্রুট স্যালাড, অলিভ রুটি, নারকেলের স্যুপ, ধূমপক্ব ইলিশ, মুরগি বয়েল হ্যাম, মটনের কলার, ঠান্ডা দেলি ও ব্লাঁমজ, নারকেল টফি, আদার মোরব্বা— এই রকম আরও কত কী।

দেশের রাজনৈতিক বা আর্থসামাজিক চালচিত্র পাল্টে গেলে তার প্রভাব পড়ে তার দৈনন্দিন জীবনচর্যায়। মধ্যযুগের বাঙালি কবিরা সেই পালাবদলকে জড়োয়া শিল্পের মতো ধরে রাখেন তাঁদের সৃজনমালিকায়। সংস্কৃতির সেই রূপান্তর তো বাঙালির ভোজনসংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে নয়। ভোজনরসিক বাঙালির পবিত্র বিগ্রহ সাজানো থাকে তেলকালি মাখানো রান্নাঘরেই, সেটাই তাঁর প্রকৃত সাধনপীঠ। তেত্রিশ কোটি দেবতাই যে বিরাজ করেন সেই পবিত্র ভোজনমন্দিরে, তা বাঙালির চেয়ে আর কেউ বেশি জানে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy