ছবি: সুব্রত চৌধুরী
বাঙালি ঝুঁকিবিমুখ, কথাটি প্রায়শই শোনা যায়। কিন্তু একটু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে কথাটি সব ক্ষেত্রে খাটে না। অতীতে অনেক ব্যাপারে বাঙালি এমন ঝুঁকি নিয়েছে, যা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। পরাধীন ভারতে স্বদেশি আন্দোলনে ছিল মস্ত ঝুঁকি। ইংরেজ পুলিশের হাতে ধরা পড়া, জেলে নির্মম অত্যাচার, দ্বীপান্তর, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকি ফাঁসিরও ঝুঁকি ছিল স্বাধীনতার আন্দোলনে। তাতে কিন্তু বাঙালি মোটেও দমে যায়নি। বরং দলে দলে বাংলার দামাল ছেলেরা যোগদান করেছে দেশকে স্বাধীন করার আন্দোলনে। ঝুঁকি কম নেই দুর্গম পাহাড়ে ওঠাতেও। প্রায়শই পাওয়া যায় দুর্ঘটনার খবর। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঙালি পর্বতারোহীদের আটকে রাখা যায় না। আমাদের দেশে ফি বছর যত মানুষ পর্বতাভিযানে যান, তার একটি বড় অংশই পাড়ি জমান এই বাংলা থেকেই। ঝুঁকি আছে জেনেও অভিযানের অদম্য নেশায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া বহু চরিত্রের হদিস আমরা বাংলা গল্প-উপন্যাসেও পেয়ে থাকি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’-এর ‘শঙ্কর’, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’, হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘কুমার-বিমল’ থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’— এমনই সব দুঃসাহসী চরিত্র। অদম্য সাহস কিংবা মনোবলে ভর করে নানা ঝুঁকি পাশ কাটিয়ে এরা সব সময়েই এগিয়ে গিয়েছে।
তা হলে বাঙালির ঘাড়ে ঝুঁকিবিমুখতার এই অপবাদ কেন? আসলে বাঙালি এই অপবাদটি অর্জন করেছে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে অনীহার কারণে। অতীতে অনেক সুবিধে থাকা সত্ত্বেও এই দুই ক্ষেত্রে বাঙালি তেমন এগোতে পারেনি অথবা এগোতে চায়নি। অথচ এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। ভারত দখল করার পর ১৭৭২ সালে ইংরেজরা কলকাতাতেই তাদের রাজধানী পত্তন করেছিল। ১৯১১ সাল পর্যন্ত কলকাতাই ছিল ভারতের রাজধানী। ইংরেজদের উদ্যোগেই প্রথম শিল্পায়ন হয়েছিল এই বাংলায়। হুগলি নদীর দু’পাশে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য কলকারখানা। ১৮৫৩ সালে এই কলকাতাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স’ — ভারতের প্রথম বণিক সভা। ইংরেজদের এই শিল্প এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে শামিল হয়েছিলেন ভিন্রাজ্যের কিছু উদ্যোগপতি। বাঙালি এই ব্যাপারে যেন প্রথম থেকেই একটু পিছিয়ে। বাঙালি মাঠ ছেড়ে দেওয়ায় ভিন্রাজ্যের কিছু ব্যবসায়িক পরিবার এখানে ব্যবসা শুরু করে এবং পরে সর্বভারতীয় বড় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়। ব্যবসার দিকে না গিয়ে ইংরেজদের অধীনে দশটা-পাঁচটার চাকরি করে সুখে জীবন যাপন করাটাই যেন অধিকাংশ বাঙালির লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। কোনও ইংরেজ কোম্পানির বড়বাবু হতে পারলে তো কথাই ছিল না। এই পদে পৌঁছতে পারলে সমাজে জুটত ঈর্ষণীয় সম্মান। ইংরেজদের সঙ্গে একটু গা ঘষাঘষির সুযোগ পেলে অনেকেই নিজেকে ধন্য মনে করতেন। হয়তো এই মনোভাবের কারণে অনিশ্চয়তার ঝুঁকি না নিয়ে সাহেবদের সংস্থায় কাজ করাকেই অনেক বাঙালি শ্রেয় মনে করেছিলেন। করণিক পদ এবং ‘বাঙালি বাবু’ কথাটা চালু হয় এই সময় থেকেই। কেরানি বাবুদের ঠিকানা রাইটার্স বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৭৭৭ সালে এবং শেষ হয় ১৭৮০ সালে।
তবে বাঙালিরা একদমই ব্যবসার দিকে পা বাড়াননি, এ কথা বললে ঠিক বলা হবে না। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, এবং স্যর বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো কয়েক জন বাঙালি বড় সাফল্য পেয়েছিলেন বিভিন্ন ব্যবসায়। তবে এই ধরনের নামের তালিকা খুব বড় হবে না। প্রফুল্ল রায় বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সাফল্য বা মুনাফা অর্জনের জন্য নয়। তাঁর লক্ষ্য ছিল, তাঁর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দেখে ইংরেজদের চাকরিতে প্রলুব্ধ না হয়ে বাঙালিরা নিজেদের সংস্থা গড়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাক এবং অন্য ভারতীয়দের সেখানে কাজের সুযোগ করে দিক। কিন্তু তাঁর এই প্রয়াস খুব বেশি বাঙালিকে আকর্ষণ করতে পারেনি।
ব্যবসার মতো বিনিয়োগের দুনিয়াতেও বাঙালি মোটেই কখনও পা বাড়িয়ে খেলেনি। সব সময়েই গুটিয়ে থেকেছে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে। ঝুঁকির দিকে ঝোঁকা সমাজের কাছে ছিল অপরাধের শামিল। তখনকার দিনে শেয়ার বাজারের সঙ্গে ঘোড়ার মাঠ কিংবা জুয়ার ঠেককে রাখা হত একই পঙ্ক্তিতে। ফলে ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর ছেড়ে বাঙালি কখনওই অনিশ্চয়তার দুনিয়ায় পা বাড়াতে চায়নি। শিল্পের মতো বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এমনটা কিন্তু হওয়ার কথা ছিল না। কলকাতাকে কেন্দ্র করে প্রথম প্রজন্মের ব্যবসা স্থাপনের সুবাদে কলকাতাতেই স্থাপিত হয়েছিল দেশের তথা এশিয়ার প্রথম শেয়ার বাজার। বেসরকারি ভাবে শেয়ার লেনদেন বেশ কয়েক বছর আগে থেকে চালু হলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘দ্য ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ’ চালু হয় ১৮৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর। নেতিবাচক মানসিকতার কারণে এখানেও বাঙালি খুব একটা ভেড়েনি। ফলে প্রথম থেকেই তা দখলে চলে গিয়েছিল ভিন্রাজ্যের মানুষজনের কাছে, যাঁরা ঝুঁকি নিতে পিছপা ছিলেন না। আমাদের সমাজে শেয়ারে লগ্নিকে সর্বস্বান্ত হওয়ার শ্রেষ্ঠ জায়গা হিসেবে মনে করা হত। ষাটের দশকে অনেক বাংলা ছায়াছবিতেও এই রকম ঘটনা দেখানো হয়েছে।
সাধারণ ভাবে বাঙালিরা শেয়ারবিমুখ হলেও বেশ কিছু বাঙালি পরিবারে কিন্তু সেই সময়ে শেয়ার প্রবেশ করেছিল। সাহেবদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে যখনই কোনও সাহেব কোম্পানি শেয়ার ছাড়ত, তার ছিটেফোঁটা জুটত বাঙালি কর্মীদের কপালে। এ ছাড়া সামান্য হলেও কিছু মানুষ অন্যদের দেখে সাহেব কোম্পানির শেয়ার কিনতেন। এই কারণে আজও খুঁজলে উত্তর কলকাতা তথা হাওড়া এবং হুগলির অনেক প্রাচীন পরিবারের পুরনো দলিল-দস্তাবেজের স্তূপে শেয়ার সার্টিফিকেটের দেখা মিলতে পারে। সেই সময়ের বাংলা গল্প-উপন্যাসেও শেয়ারের কথা পাওয়া যায়। ‘কোম্পানির কাগজ’ বলে যার উল্লেখ আছে, তা আসলে শেয়ার সার্টিফিকেট ছাড়া কিছু নয়।
শেয়ার ছাড়ে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি। ব্যবসার আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন হচ্ছিল বড় মাপের পুঁজির, যা এক জন বা কয়েক জন মালিকের পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। বহু মানুষের যৌথ পুঁজির ভাবনা থেকেই সৃষ্টি হয় জয়েন্ট স্টক কোম্পানির। অনেক মানুষ অল্প অল্প করে শেয়ার কিনলে বড় পুঁজির জোগান মেটে। সাহেবরা কলকাতাকে তাঁদের মূল কর্মক্ষেত্রের জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়ায় বহু বছর আগেই কলকাতায় শুরু করেছিল জয়েন্ট স্টক কোম্পানি স্থাপন। সেই সময়ে ভারতে কোনও কোম্পানি আইন না থাকায় কোম্পানিগুলি নথিবদ্ধ হত ইংল্যান্ডে। ভারতে আমরা প্রথম কোম্পানি আইন পাই ১৯১৩ সালে। কলকাতায় কোম্পানি তৈরি হয়েছে এর অনেক আগে থেকেই। যেমন ‘দ্য বিশ্নওথ টি কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি চা কোম্পানি নথিবদ্ধ হয়েছিল ১৮৬৩ সালে। ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে নথিবদ্ধ হয়েছিল ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ় কোম্পানি। আজকের সিইএসসি-র জন্ম ১৮৯৯ সালে। এর পর এক এক করে জন্ম নেয় শালিমার পেন্টস (১৯০২), আইটিসি (১৯১০), বিড়লা কর্প (১৯১৯), কেশোরাম কটন (১৯১৯), ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ক (১৯২১) যা ১৯৫৫ সালে রূপান্তরিত হয় ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক হিসেবে। সেই সময়ের প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ছিল বামার লরি (১৯২৪), ফিলিপস ইন্ডিয়া (১৯৩০), বাটা ইন্ডিয়া (১৯৩১), ইউনিয়ন কার্বাইড (১৯৩৪), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক (১৯৪৩) ইত্যাদি। অর্থাৎ ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেই এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিল বেশ কিছু কোম্পানি, যাদের কেউ কেউ পরবর্তী কালে মহীরুহের আকার ধারণ করেছিল এবং নথিবদ্ধ হয়েছিল শেয়ার বাজারে। কলকাতায় শিল্প, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ব্যাপারে এত কর্মকাণ্ড হওয়া সত্ত্বেও তাতে বাঙালি কেন তেমন ভাবে অংশ গ্রহণ করল না? শুধুই কি ঝুঁকিবিমুখতার কারণে? না কি অন্য আরও কারণ ছিল?
ব্যবসা এবং বিনিয়োগ দুইয়ের জন্যেই প্রথম জমি তৈরি হয়েছিল বাংলায়। বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও বাঙালি কিন্তু কখনওই তাতে সামগ্রিক ভাবে চাষ করতে এগিয়ে আসেনি। ঝুঁকি অবশ্যই এর একটা কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়। নানা আদর্শে উদ্বুদ্ধ বাঙালিকে টাকার পিছনে তেমন ভাবে ছুটতে কখনওই দেখা যায়নি। উচ্চ চিন্তা এবং সরল জীবনযাত্রা— এতেই বাঙালি সন্তুষ্ট থাকত। এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়নি কখনও। একটা ছোটখাটো চাকরি হলেই সংসার চলে যেত। গ্রামের দিকে কৃষিকাজ এবং স্থানীয় স্তরে ছোট ব্যবসা এবং অন্যান্য পেশা থেকে উপার্জিত টাকায় তাঁদের প্রয়োজন মিটে যেত। বাঙালি যে টাকার পিছনে ছোটেনি, তার একটি অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল বাংলার নবজাগরণ। ব্রিটিশ রাজত্বকালে অবিভক্ত বাংলায় ঊনবিংশ এবং বিংশ শতকে দেখা গিয়েছিল সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক আবির্ভূত হচ্ছিলেন দিকপাল মনীষীরা। এঁদের আন্দোলন মূলত ছিল কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাস এবং সঙ্কীর্ণ মনোভাবের বিরুদ্ধে। এর ফলে ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছিল পুরনো অনেক প্রথা। দিকে দিকে প্রচারিত হচ্ছিল যুক্তিবাদ। এই আন্দোলনের পুরোধাদের মধ্যে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর, শ্রীরামকৃষ্ণ, উইলিয়াম কেরি, ডিরোজ়িয়ো, মাইকেল মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ, রানি রাসমণি এবং আরও অনেকে। এঁদের কথা এবং আদর্শে তখন মানুষ বুঁদ হয়ে ছিল। এঁদের দেখানো পথ ছেড়ে অন্য দিকে তাকানোর কথা কেউ ভাবেনি। এক দিকে যখন বাঙালিদের মনের অন্ধকার দূর হয়ে যাচ্ছে রেনেসাঁসের আলোয়, অন্য দিকে তখন জোরদার হচ্ছে স্বদেশি আন্দোলন। স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলা পেল সুভাষচন্দ্র এবং রাসবিহারী বসুর মতো সাহসী নেতাদের। বাঙালি যুব সমাজের কাছে এঁরাই তখন প্রকৃত আদর্শ। এই সব কারণের সমন্বয়েই সেই সময়ে বাঙালি মননে ব্যবসা তথা বিনিয়োগের ব্যাপারটি তেমন ভাবে স্থান পায়নি।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ এই ছ’বছর ধরে চলল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এর পর এল স্বাধীনতা। আনন্দের জোয়ারে ভাসল বাংলা তথা গোটা ভারত। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিল দাঙ্গা। বাংলা ভাগ হওয়ার প্রভাব এসে পড়ল এই বাংলাতেও। সমস্যা মানুষকে ছাড়ল না দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও। শুরু হল দেশ গঠনের কাজ। স্বদেশি আন্দোলনের জায়গায় স্থান নিল দেশের রাজনীতি। আর রাজনীতিতে তো বাঙালি সব সময়েই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে বাংলায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। রাজ্য জুড়ে শুরু হল খাদ্য আন্দোলন। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল বামপন্থী দলগুলি। এই সময় থেকেই বামেরা শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করে। এর পর ১৯৬৭ এবং ১৯৬৯ সালের দুটো যুক্তফ্রন্ট সরকারের শরিক ছিল সিপিআই (এম)। মূল শিল্পগুলির জাতীয়করণের পক্ষে ছিল বাম দলগুলি। স্বাধীনতার আগে এবং পরেও বাংলায় বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়। বিভিন্ন কারণে প্রয়োজন হয় ব্যাঙ্কগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণের। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালে দেশের ১৪টি বড় বেসরকারি ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৭৭ সালে বাংলায় বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে এবং বাম জমানা চলে ২০১১ সাল পর্যন্ত। বামেরা কখনওই সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের বাইরে অন্য কোথাও লগ্নি করতে উৎসাহ দেয়নি, বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে কোম্পানির শেয়ার কেনার ব্যাপারে। এঁদের মতাদর্শ ছিল ‘শ্রম দিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করব, কোনও ফাটকা কাজে লিপ্ত হয়ে নয়।’ এই কারণে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি যখন বিলগ্নিকরণের পথে নেমে কিছু শেয়ার কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছিল, তা প্রত্যাখ্যান করেছিল বাম ইউনিয়নের সদস্যরা। তাদের ৩৪ বছরের শাসনকালে সাধারণ মানুষের জন্যে বেসরকারি ক্ষেত্রে লগ্নির হাওয়া এই রাজ্যে তৈরি হয়নি। কারণ শেয়ার কেনার অর্থ হল আংশিক পুঁজি বিনিয়োগ করে আংশিক পুঁজিপতি হওয়া, তা সে যত ছোট অংশেরই হোক না কেন। বামপন্থী নেতারা হয়তো মনে করতেন, এতে সর্বহারা হওয়ার গৌরব ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
এ ছাড়া অতীতে এমন একটা সময় গিয়েছে যখন ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ১৯৭৯-৮০ সাল থেকে শুরু করে ২০০০-২০০১ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ দু’দশকের বেশি সময় ধরে ৫ বছর মেয়াদি ব্যাঙ্ক জমায় মানুষ সুদ পেয়েছে ১০ থেকে ১৩ শতাংশ হারে। এত উঁচু হারে নিশ্চিত আয় ছেড়ে মানুষের অন্যত্র টাকা লগ্নির কথা ভাবার প্রয়োজন পড়েনি। বিনিয়োগে বাঙালি একদমই ঝুঁকি নেয়নি তা অবশ্য নয়। তবে লোভ, অজ্ঞানতা এবং ঝুঁকি মাপার অক্ষমতার কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছে তথাকথিত চিট ফান্ডে লগ্নি করে।
চাকা ঘুরতে শুরু করে নব্বইয়ের দশক থেকে, যখন ভারত বিশ্বায়নের পথে পা বাড়ায়। এর বেশ কয়েক বছর আগেই ভারতে চালু হয়েছে কম্পিউটার ব্যবহার। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রথম চালু হয় ১৯৯৫ সালের ১৫ অগস্ট। এর ফলে দুরন্ত গতি পায় ব্যবসায়িক কাজকর্ম। নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ভারতে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানি। পাশাপাশি দেশি কোম্পানিগুলিও আনতে শুরু করে বড় মাপের বিভিন্ন প্রকল্প। মূলধন জোগাড়ের লক্ষ্যে বাজারে শেয়ার ছাড়ার ধুম পড়ে যায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে শেয়ারে লগ্নিতে উৎসাহ বাড়ে। মানুষকে বোঝানো হয়, আপনি যখন কোনও সংস্থার শেয়ার কেনেন তখন তা থেকে লাভ অর্জন করা ছাড়াও আপনি দেশের শিল্পোন্নয়নের শরিক হন। এরই মধ্যে বিশ্ব বাজারে মজবুত জায়গা করে নেয় ভারতের প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলি। খুব বেশি মাত্রায় না হলেও এই সময়ে বেশ কিছু বাঙালি ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের বেড়া ডিঙিয়ে শেয়ারের দুনিয়ায় ঢুকে পড়েন।
মানুষ যাতে বিনিয়োগ এবং বিমার বাজারে প্রতারিত না হয় তা দেখার জন্য ১৯৯২ সালে সেবি এবং ১৯৯৯ সালে আইআরডিএ নামে দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হয়। পাশাপাশি মানুষকে বোঝানো হয় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সুদ কমাতে হবে। মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হয় বেশি করে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতে।
নতুন শতকের গোড়ার দিকে বেশ পরিণত হয়ে উঠেছিল মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প। ইউনিট ট্রাস্ট ছিল ভারতের প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড। এদের প্রথম প্রকল্প ‘ইউনিট-৬৪’ যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বাঙালিদের মধ্যেও। এই প্রথম বাঙালিরা একটু বেরোয় ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের বাইরে। ট্রাস্টের মাথায় সরকারের হাত থাকার কারণে বহু বাঙালি লগ্নি করেছিলেন এদের পরের প্রকল্প মাস্টার শেয়ারেও। ১৯৬৩ সালে ইউনিট ট্রাস্টের পর দ্বিতীয় ফান্ড হিসেবে বাজারে আসে এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ড। নব্বইয়ের দশকের পর নতুন নতুন ফান্ড আসার হিড়িক পড়ে যায়। ভারতে এখন আছে ৪৪টি মিউচুয়াল ফান্ড এবং বাজারে আছে এদের অসংখ্য প্রকল্প। শেয়ারের তুলনায় ফান্ডে ঝুঁকি কম থাকার কারণে ফান্ড প্রকল্পগুলি বাঙালিদের মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে। জনপ্রিয়তার আর একটি কারণ হল, এখানে কিস্তিতে অল্প অল্প করে টাকা জমানো যায়। অর্থাৎ অল্পবিত্তের মানুষরা লম্বা মেয়াদে এখানে লগ্নি করে বড় তহবিল গড়ে তুলতে পারেন।
শেয়ার এবং ফান্ডের ব্যাপারে বোঝানোর জন্য এখন বাজারে আছেন অনেক পেশাদার এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পরামর্শদাতা। ঝুঁকির প্রশ্নে এঁরা বলেন, ঝুঁকি তো জীবনের সর্বত্রই আছে, তবে শুধু শেয়ারই ব্রাত্য হবে কেন? বাড়ির বা হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই তো সিংহভাগ মানুষ মারা যান। তা সত্ত্বেও তো আমরা বিছানাকে ব্রাত্য করিনি। ঝুঁকি আছে ব্যস্ত রাস্তায় পথ চলতেও। তাও তো আমরা রাস্তায় নামি। কিন্তু হাঁটি সাবধানে। একই ভাবে বুঝেশুনে সাবধানে শেয়ারে লগ্নি করতে হবে যাতে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এখন যা দিন এসেছে, তাতে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে শেয়ারে লগ্নি না করে উপায়ান্তর নেই। কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত এখন বাধ্যতামূলক ভাবে শেয়ারে লগ্নি করতে হয়। পেনশন ফান্ড এনপিএস-এরও একাংশ খাটে শেয়ার বাজারে। এলআইসি-ও মোটা টাকা লগ্নি করে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে। আগামী ৪ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে এলআইসি বাজারে আনতে চলেছে দেশের বৃহত্তম পাবলিক ইস্যু। এই মেগা ইস্যুর একাংশ সংস্থার কর্মী এবং পলিসিহোল্ডারদের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা।
এখনও কি বাঙালি মুখ ফিরিয়ে থাকবে?
বিনিয়োগের দুনিয়ায় শেয়ারকে শ্রেষ্ঠ সম্পদের (অ্যাসেট ক্লাস) মর্যাদা দেওয়া হয়। বড় মাপের ঝুঁকি থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে এই লগ্নিতে যা আয় হতে পারে, তা অন্য কোনও সূত্র থেকে হওয়া সম্ভব নয়। কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৮৮ সালে এক বাঙালি মধ্যবিত্ত মাত্র ২০০ টাকা লগ্নি করেছিলেন হিরো হন্ডার ২০টি শেয়ারে। বোনাস এবং বিভাজনের পর তিনি এখন ওই সংস্থার ২৫০টি শেয়ারের মালিক, যার বাজারদর এখন ৬ লক্ষ টাকা। এক সময়ে ২০০ টাকা দামের এই শেয়ারের বাজারদর পৌঁছেছিল ১০ লক্ষ টাকায়। এ ছাড়া ডিভিডেন্ড বাবদ বছরে আসে ১৫০০০ টাকা। আর এক জন ২০০৩ সালে মাত্র ৬২৫০ টাকা লগ্নি করেছিলেন মারুতি সুজ়ুকির ৫০টি শেয়ারে। আজ তার বাজার দর প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। এক সময়ে প্রতিটি শেয়ারের দাম উঠেছিল ১০,০০০ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ৬২৫০ টাকা লগ্নি করে পরে তার বেড়ে ওঠা দামে একটি নতুন গাড়ি কিনে ফেলা সম্ভব ছিল। বাটা কোম্পানি থেকে ফি বছর ডিসকাউন্ট কুপন পাওয়ার লক্ষ্যে কয়েক বছর আগে এক জন ২৫টি বাটার শেয়ার কিনেছিলেন নামমাত্র মূল্যে। বোনাস পেয়ে তা পরে বেড়ে হয় ৫০, যার বর্তমান বাজার দর ১ লক্ষ টাকার আশেপাশে। তবে শুধু শেয়ার কেন, এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও। ১৯৯৫ সালে একটি মিড ক্যাপ প্রকল্পে ১০,০০০ টাকা লগ্নির বর্তমান বাজার দর কমবেশি ২০ লক্ষ টাকা। এগুলো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। এমন অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে আছে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড জগতে।
শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বড় লাভের হাতছানি থাকলেও ঝুঁকি এবং আদর্শের কারণে অতীতের কয়েকটি প্রজন্ম তাতে পা বাড়ায়নি। তখন জীবনে চাহিদা ছিল অনেক কম। অল্প আয়ে সাধারণ জীবনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকত। শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, ফুটবল, ধর্মীয় উৎসব ইত্যাদিতে মানুষ মেতে থাকত। অতিরিক্ত আয়ের পিছনে ছুটত না, ছোটার প্রয়োজন বা মানসিকতাও ছিল না। অবস্থা পাল্টাতে শুরু করল যখন আধুনিক জীবনে এক দিকে চাহিদা বাড়তে এবং অন্য দিকে ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে গচ্ছিত আমানত থেকে সুদ বাবদ আয় কমতে শুরু করল। ঘরে ঘরে পরিস্থিতি একই রকম দাঁড়াল। বেতনের টাকায় এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে হয়তো কোনও রকমে সংসার চলে যাচ্ছে, কিন্তু তা দিয়ে শখ-আহ্লাদ মেটাতে গেলেই হাতে থাকছে পেনসিল, অর্থাৎ প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত কিছুই বাঁচছে না। বাজারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা সামান্য বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট মানুষকে গভীর হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া বিপুল খরচ বেড়েছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে। যৌথ পরিবার এক রকম বিলুপ্ত হওয়ায় চাকরি পাওয়া মাত্রই মানুষ ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবছে। ভবিষ্যতের ভাবনাও আছে। এত সব তো শুধু চাকরি করে সব ক্ষেত্রে মেটানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ একটু বেশি আয়ের সন্ধানে খানিকটা ঝুঁকির পথে হাঁটতেই হবে। বাঙালি তাই বেরিয়েও পড়েছে চিরকালীন লক্ষ্মণরেখার বাইরে। শেয়ার সম্পর্কে যাঁদের তেমন ধারণা নেই, তাঁরা বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। এই ভাবে ধীরে ধীরে সনাতন পন্থা ছেড়ে বাঙালি এরই মধ্যে ডানা মেলেছে মুক্ত আকাশে। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এবং সুদ বাবদ আয় কমছে, তাতে প্রবীণ মানুষেরাও একটু অন্য পথে খানিকটা আয় বাড়ানোর কথা ভাবছেন।
লগ্নির ব্যাপারে সনাতন আদর্শ এবং ঝুঁকির বাঁধ ভেঙে দ্রুত গতিতে এগোতে শুরু করেছে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। এঁদের অনেকেই ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা পাচ্ছে এবং পরবর্তী কালে উচ্চশিক্ষার জন্য রাজ্য এবং দেশের বাইরে যাচ্ছে। এই ভাবে এরা কোনও প্রদেশের গণ্ডিতে আটকে না থেকে হয়ে উঠছে বিশ্বনাগরিক। আগের প্রজন্মের আদর্শ কিংবা সংস্কারের বাঁধ এদের বেঁধে রাখতে পারছে না, কারণ তারা সাহস অর্জন করেছে। তারা বুঝতে শিখেছে ‘গাছ উঁচু, তাই আঙুরফল টক’ বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ঝুঁকি দেখে পিছিয়ে আসা নয়, ঝুঁকি কী করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় সেই শিক্ষা তারা অর্জন করছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব তথ্য এখন এদের হাতের মুঠোয়।
এরা সবাই কম্পিউটারে পারদর্শী হওয়ায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি পরিচালনা করা, অনলাইনে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করা এদের কাছে যেন বাঁ হাতের খেলা। প্রয়োজন মনে করলে, শেয়ার বিশ্লেষকদের রিপোর্টও এরা পেয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মধ্যে। এই সব ব্যাপারে অনেকটাই পিছিয়ে আগের প্রজন্ম, যাঁরা সব সময়েই সোজা ব্যাটে খেলে এসেছেন। নতুনদের রিভার্স সুইপ কিংবা সুইচ হিট তারা আয়ত্ত করে উঠতে পারেনি। অন্য দিকে নতুন প্রজন্মের কাছে এই বদলগুলোর আত্মীকরণ ক্রমশ হয়ে উঠেছে ‘সার্ভাইভাল স্ট্র্যাটেজি’-রই অন্যতম অঙ্গ।
নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা এখন আর শুধু ‘দুধে ভাতে’ সন্তুষ্ট নয়। না, আদর্শকে তারা গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে সে কথা বলা চলে না, কিন্তু নতুনদের কাছে আদর্শ এখন পিছনের আসনে। চালকের আসন দখল করেছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং হিসেব কষে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস। আধুনিক প্রজন্মের তাই খুব প্রিয় শব্দবন্ধ হয়ে উঠেছে এই ‘ক্যালকুলেটেড রিস্ক’। দুই প্রজন্মের ফারাক এখন অনেকটাই। নতুনরা তো বটেই, বেশি আয়ের তাগিদে পুরনোদেরও অনেকেই সনাতন পথ ছেড়ে হাঁটতে শুরু করেছেন আগে যে পথ ব্রাত্য ছিল সেই পথে। ঝুঁকির ভয় হার মানছে তাগিদের কাছে। এখন অনেক বেশি সংখ্যায় বাঙালি আসছেন শেয়ার বাজারে। লগ্নিকারীদের সংখ্যায় রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ এখন সপ্তম স্থানে। মুম্বই শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা এখন ১০.৩৮ কোটি, এঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আছেন প্রায় ৫৫ লক্ষ লগ্নিকারী। গত এক বছরে এই রাজ্যে লগ্নিকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৬.৫৮ লক্ষ অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বাঙালি আর আদর্শের টানে এবং ঝুঁকির ভয়ে বাঁধা পড়ে নেই। সব ভেঙে এগোতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy