Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ২৩
Bengali Novel

হাওয়ার আড়ালে

মিশুকের ডাকে হুঁশ ফিরল কস্তুরীর। মেয়েটা এই অল্প সময়ের মধ্যে স্নান করে একটা ঘন নীল রঙের টপ আর কালো কেপরি পরেছে। শ্যাম্পু করে চুল ছেড়ে দিয়েছে।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

অজিতেশ নাগ
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ০৭:৩১
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: মিশুকের মায়ের সঙ্গে গল্প করছিল কস্তুরী। মিশুক ঘরে এসে তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। তাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে নানা গল্প করে। কথায় কথায় কস্তুরী জানতে পারে মিশুকের কাজের জায়গায় সমস্যা চলছে। আটকে আছে তাদের পারিশ্রমিক। মিশুক কস্তুরীকে আবারও মনে করিয়ে দেয় যে, সে যেন কোনও ভাবে সব্যর নাম উচ্চারণ না করে ফেলে। বাড়িতে জানাজানি হলে মুশকিল। মিশুকের বাবা পাত্র অব্রাহ্মণ বলে আপত্তি করতে পারে। কস্তুরী মিশুককে পুজোয় কিছু দিতে চাইলে আপত্তি করে মিশুক, কারণ তার জামাকাপড় অনেক হয়ে গেছে। মিশুকের মা ইলিশ মাছ ভাজা এনে খাওয়ায় কস্তুরীকে। মিশুকের বোন মিহিরার সঙ্গে পোষ্য মাফিন বাড়ি ফিরে এলে তার সঙ্গেও দেখা হয় কস্তুরীর।

মিহিরা প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়িয়ে গেলে মিশুক বলল, “না গো বিবি। তবে মাছ খায়। ওকে সামান্য ভেঙে দাও আর দিয়েই পটাপট খেয়ে ফেলো। না হলে ও কিন্তু যাবে না। ভারী হ্যাংলা।”

তাই করল কস্তুরী। খালি প্লেটটা তুলে মিশুক বলল, “এই দ্যাখ। নেই।”

কী আশ্চর্য! প্লেটটা খালি দেখেই কুকুরটা টুকটুক করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কস্তুরী হেসে ফেলল।

মিশুক বলল, “তুমি বোসো। আমি চট করে স্নানটা সেরে আসি।”

কস্তুরী বুঝল, সহজে পার পাবে না। বিছানায় পড়ে থাকা আজকের খবরের কাগজটা তুলে নিল সে। বাড়িতে সকালে কাগজ এলে সে শুধু সিনেমার পাতাটা উল্টে দেখে, তাও ডিটেলসে যায় না।

অভ্যেসমতো সিনেমার পাতাটা খুঁজে পড়তে যেতেই পাশের পাতার একটা খবরে চোখ আটকে গেল। ‘মধ্য কলকাতায় মহিলার রহস্যময় মৃত্যু’। কী মনে হওয়ায় প্রতিবেদনটায় চোখ রাখতেই কস্তুরী থরথর করে কেঁপে উঠল। রাধিয়া শ্রীবাস্তব! হ্যাঁ। এই তো জোড়াবাগান পুলিশ স্টেশনের নাম আছে। কস্তুরী আতিপাতি করে আকিঞ্চনের নাম খুঁজল। নেই। তবে ‘এই ঘটনায় এক জন বিশিষ্ট আইনজীবী জড়িত আছেন’ এই তথ্যটুকু দেওয়া আছে। লেখা আছে ‘এটা খুন না আত্মহত্যা তদন্ত শুরু হয়েছে’।

সর্বনাশ! আকিঞ্চন কি তবে শেষে খুনের মামলায় জড়িয়ে গেল? অথচ সকালে যখন ঘোষালবাবু এসেছিলেন, তখনও আকিঞ্চন বলেছিল পেটি কেস। ওই মহিলা আত্মহত্যা করলেন শেষ অবধি? কালকেও তার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল। কী কাণ্ড! তার মানে ভদ্রমহিলার কথা সত্যি? কস্তুরীর মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। আকিঞ্চন কোথায় এখন? বাড়ি ফিরে এসে নিশ্চয়ই কস্তুরীকে খুঁজবে না। কারণ ওকে জানানো হয়নি যে, আজ কস্তুরী অফিস যাবে না। আচমকা ভয়-ভয় করে উঠল কস্তুরীর। মেহুলিকে ফোন করবে? সে কি বাড়ি ফিরেছে?

মেহুলির কর্কশ আওয়াজ, “কী হয়েছে? ফোন করেছ কেন?”

“তুই কোথায়?”

“আমি প্রিন্সেপ ঘাট যাচ্ছি। কেন জিজ্ঞেস কোরো না। আর কিছু?”

“নাঃ।”

ফোনটা কেটে দিল কস্তুরী। তার পর কত ক্ষণ খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে বসেছিল মনে নেই।

“কী হয়েছে বিবি?”

মিশুকের ডাকে হুঁশ ফিরল কস্তুরীর। মেয়েটা এই অল্প সময়ের মধ্যে স্নান করে একটা ঘন নীল রঙের টপ আর কালো কেপরি পরেছে। শ্যাম্পু করে চুল ছেড়ে দিয়েছে। দেখতে মিষ্টি লাগলেও তাকে দেখার মতো মন আপাতত কস্তুরীর নেই। কিন্তু এখনই মিশুককে সবটা বলা যাবে না। কস্তুরী ম্লান হেসে অজুহাত বানাল, “কিছু না। ক’দিন অফিসে খুব স্ট্রেস যাচ্ছে রে। একটা ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না। সেই নিয়ে চিন্তা করতে করতে কাল রাতেও ভাল ঘুম হয়নি।”

“চলো বেরোই। ঘুম কেটে যাবে।”

একটু আগেও কস্তুরীর ইচ্ছে করছিল বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু আকিঞ্চনকে দেখলে তার মাথায় রক্ত চড়ে যাবে। মেহুলি আচমকা প্রিন্সেপ ঘাটে যাচ্ছে কেন? কারও সঙ্গে মিট করতে? চিন্তা, চিন্তা, চিন্তা। গোদের উপর বিষফোড়া শাশুড়িমা। আকিঞ্চনকে পুলিশ নিয়ে গেছে এই কথা এক বার কানে গেল আর রক্ষা নেই। কানের পোকা বার করে দেবেন। আর কাল সন্ধেবেলা ওই মহিলা কেন এসেছিলেন, কেন সবার সামনে কথা না বলে শুধুমাত্র কস্তুরীর সঙ্গে কথা বলতে দোতলায় গিয়েছিল, এই সব প্রশ্নে প্রশ্নে মাথাটা পুরো খেয়ে নেবেন।

বাড়ি থেকে বেরোতে যেতেই আরতিদেবী ছুটে এসেছিলেন, “কী হল? ওঁকে নিয়ে এই চচ্চড়ে রোদে কোথায় বেরোচ্ছিস মিশু?”

গোপনে কস্তুরীর হাতে একটা টান দিয়ে বলেছিল, “একটু শপিং করে আসি মা।”

আরতিদেবী গজগজ করছিলেন, “আলমারি ভর্তি অ্যাত্ত জামাকাপড়। আবার কেনাকাটা! পারি না বাপু। তবে আপনি ভাই আবার আসবেন। দেখুন তো কী কাণ্ড! আপনি খাবেন বলে রান্নাবান্না করছিলাম... আর উনিও তো এখনও এলেন না। এতটা বেলা হয়ে গেল। সাবধানে যাস। বেশি রাত করিস না। ওঁকে তো বাড়ি ফিরতে হবে।”

অ্যাপ-ক্যাবে চেপে মিশুক তার গা ঘেঁষে বসে টুকটাক কথা বলছিল, তবে কানে ঢুকছিল না কস্তুরীর। এক বার শুধু শুনল, হাইল্যান্ড পার্ক নয়, ওরা চলেছে সাউথ সিটি। কস্তুরী মোবাইলে প্রবল ভাবে খুঁজছিল সেই ছেলেটার নম্বর। কী যেন বেশ নাম ছিল ছেলেটার? সে দিন যারা ধরাধরি করে আকিঞ্চনকে নার্সিং হোমে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এক জন। তপন? শিমুল? দুম করে মনে এসে গেল। পলাশ! ইয়েস। মোবাইল হাতড়ে নাম্বারটা বার করে ফোন লাগাল। ও পাশে পলাশ, “হ্যাঁ। বৌদি বলুন।”

“পলাশ, খবরটা পেয়েছ?”

“সে তো পেয়েছি। দাদার উচিত ছিল ক্লাব হয়ে থানায় যাওয়া। আমি তো আপনাদের বাড়ির পাশেই থাকি প্রায়। আমরা জানলাম বেলা দশটা নাগাদ। কী করে এমন হল বৌদি? আপনি কিছু জানেন?”

“না ভাই, সকালে ইনস্পেটর ঘোষাল এসেছিলেন। বললেন পেটি কেস।”

“পুলিশ ও রকম বলে। ভুলিয়ে-ভালিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার মতলব। একটা সুইসাইড হয়ে গেল আর পুলিশ বলছে পেটি কেস!”

“তোমাদের দাদা কোথায়?”

“দাদা তো লকআপে। আপনি জানেন না? ঘোষাল ফোন করেনি আপনাকে?”

“না তো।”

“মাইরি। আপনি কি বাড়িতে?”

“না। একটু কাজে বেরিয়েছি।”

“আপনি বাড়িতে ফিরে আসুন বৌদি। এই সময় বাইরে থাকা ঠিক হবে না। কোনও আপডেট পেলে আমি জানিয়ে দেব।”

“কিন্তু...”

ফোনটা কেটে দিল পলাশ। চলমান গাড়িতে থম মেরে বসেছিল কস্তুরী। তার কর্তব্য কী এমন সময়ে? বস্তুত কিছুই নয়। স্বামী নিজে উকিল না হলে একটা উকিলের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে পারত সে। সহসা খেয়াল হল, মিশুক অনেক ক্ষণ ধরে চুপচাপ। বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে হাত ছুঁয়ে প্রশ্ন করল, “কী হল তিতি?”

তিতি হাত ছাড়িয়ে নিল।

কস্তুরী মিশুকের ব্যবহারে খুব অবাক হয়ে ফের বললে, “কী হয়েছে মা? আমি কিছু বললাম?”

মিশুক তার দিকে না তাকিয়ে বলল, “তুমি মিথ্যুক। লায়ার। আই হেট লায়ারস।”

“সে কী! কী মিথ্যে বললাম?”

মিশুক মুখ ফেরাল, “মিথ্যে বলোনি? অফিসে স্ট্রেস, ফাইল হারিয়েছে এটসেট্রা এটসেট্রা? স্যরি টু সে, আমি তোমার ফোনের ডিসকাশন শুনেছি। আমায় ছুঁয়ে বলো তুমি সত্যি বলেছিলে আমায়।”

কস্তুরী হেসে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে মনটা হালকা হল। মনে মনে বলল, তুই আমার কোন জন্মের মেয়ে রে? মেয়ে না হলে মায়ের কষ্ট এত তাড়াতাড়ি কেউ বোঝে? মুখে বলল, “তোকে ছুঁয়ে বলছি, আমি মিথ্যে বলেছিলাম।”

হেসে ফেলল মিশুক, “দ্যাট’স মাই বিবি। এ বার আমায় বল হোয়াট হ্যাপেনড?”

“দূর। পেট খিদেয় চোঁ-চোঁ করছে। আগে চল কিছু খাই।”

“একটু আগে মাছ খেয়ে তোমার খিদে বেড়ে গেল? তুমি কিন্তু অ্যাভয়েড করছ।”

সন্ধের অন্ধকার নেমে আসছে। বহু দূরে একটা জাহাজের মতো কিছু একটা ভেসে আছে। গঙ্গার উপরে একটা নৌকোয় বসে সেটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছিল মেহুলি। একটা প্রবল ঠান্ডা বাতাস এসে তার চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। একটু আগেও এক হাতে চুল সামলানোর চেষ্টা করছিল সে। লাভ নেই বুঝে হাল ছেড়ে দিয়েছে। নৌকোয় বসার একটু পরেই মাঝি বলেছিল, “বেঁধে দিই?” মাঝির কথার অর্থ মেহুলি ধরতে পারেনি। স্বর্ণেন্দু বারণ করেছিল। পরে অবশ্য অনুসন্ধিৎসু মন জানতে চেয়েছিল। স্বর্ণেন্দু বলেছিল, “ও সব তোর জেনে কাজ নেই মা। বাজে লোকের...”

“তুমি বলো না। প্লিজ় বলো।”

কিছুতেই মানতে চাইছিল না বলে স্বর্ণেন্দু খুলে বলেছিল। সব শুনে লজ্জা পাওয়ার বদলে মজা পেয়েছিল সে। কপোত-কপোতীরা তা হলে এই সব করতে আড়াইশো টাকা দিয়ে আধ ঘণ্টার জন্য নৌকো ভাড়া করে! সত্যি কলকাতায় আজকাল প্রেম করার জায়গার বড্ড অভাব দেখা যাচ্ছে।

কাল রাতে ওসমানের সেই মাঠকোঠা বাড়িতেই উপন্যাসটা শেষ করতে পেরেছে স্বর্ণেন্দু। আজ ভেবেছিল বাড়ি গিয়ে রিভিশন শুরু করে দেবে। উপন্যাসটার প্রিন্টেড কপি বগলে চেপে অফিস থেকে বেরোনোর উপক্রম করছে, এমন সময় মেহুলির ফোন।

“আঙ্কল, তুমি বাড়ি আছ?”

“না রে। সবে অফিস থেকে বেরোচ্ছি। তুই আছিস কেমন? বেশ কয়েক দিন পরে মনে পড়ল বুড়োটাকে? সে দিন তো বলেও এলি না।”

“সব কথা বলব। আগে দেখা হোক।”

“কবে আসবি? এক দিন বাড়ি আয়।”

“এক দিন কেন? আজই। এক্ষুনি।”

“আবার!”

“তুমি বাবুঘাটে এস। আমি আসছি। বিকেল চারটে। ওকে? বাই।”

স্বর্ণেন্দুকে আর কিছু না বলতে দিয়েই লাইন কেটে দিয়েছিল মেহুলি। স্বর্ণেন্দু ফাঁপরে পড়লেন। আচ্ছা পাগল মেয়ে তো। উঠল বাই তো কটক যাই। এটা ঠিক যে বেশ কিছু দিন ধরে মেহুলির মুখটা মনে পড়ছিল। আহা! মেয়েটা যদি তার কাছে থাকত।

সূর্য ডুবে গেছে একটু আগে। পশ্চিমের আকাশে এখন কালো রং। বেশ কিছু পাখি দল বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। কালচে নীল আকাশে তাদের কৃষ্ণবর্ণ দেখাচ্ছে। স্বর্ণেন্দুর মনে হল, সূর্যের আলো বড় আশ্চর্য জিনিস। সেই আলোয় সব কিছুই রঙিন হয়ে ওঠে। চাঁদের আলো নিয়ে কবিরা চিরকাল মাতামাতি করে আসছেন। অথচ সেই আলো ধার করা। শুধু চাঁদের আলোয় কোনও রংই ফুটে ওঠে না। প্রকৃতি যেন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়, ধার করা জিনিস আর আসল জিনিসের পার্থক্য। দূর দিগন্ত থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে স্বর্ণেন্দু বললেন, “কী বলতে এলি বললি না তো? ঘাটে ফেরার সময় হয়ে গেল।”

এই কথার উত্তরে মেহুলি বেশ কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “খুব ভাল লাগছে জানো আঙ্কল, খুব ভাল লাগছে। আর কিছু ক্ষণ থাকি?”

“থাকলেই কিন্তু আরও আড়াইশো টাকা।”

“সে হোক। তুমি মাঝিকে বলে দাও। এখানে আমরা সারা রাত থাকব।”

খুব হাসলেন স্বর্ণেন্দু। হাসল মেহুলিও। সামান্য পরে কান্নাভেজা গলায় বলল, “আমার বাপি খুব ভাল, জানো আঙ্কল। কিন্তু তোমার মতো নয়।”

“কেন রে? বাবা-মা কখনও খারাপ হয়?”

“তুমি বুঝবে না। বাপি ভাবে শুধু দামি দামি গিফট কিনে দিলেই... বাপি কত দিন আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। অনেক আগে ধরত, জানো আঙ্কল। বাপির গায়ে একটা গন্ধ আছে। কী ভাল যে লাগে।”

“ওরে আমার পাগল মেয়ে, সব মেয়ের কাছেই বাবা একটা আলাদা জিনিস।”

“তোমাকে জড়িয়ে ধরি?”

“আয় মা।”

মেহুলির চুলের গন্ধ নাকে এসে লাগছে। স্বর্ণেন্দুর সারা গা শিহরিত হয়ে উঠল। মেহুলি এক জন পূর্ণবয়স্কা নারী। তবু এ শিহরন সে শিহরন নয়। এক জন বাবা হয়ে নিজের মেয়েকে পরম আদরে জড়িয়ে ধরার শিহরন। ক’দিনের বা পরিচয়? তবুও এর মধ্যে কী সহজ ভাবে নিজে থেকেই তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে এই মেয়েটা। এই মুহূর্তে মেহুলিকে একটি ছোট্ট শিশু বলে মনে হচ্ছে। স্বর্ণেন্দু আকাশের দিকে তাকালেন। হে ঈশ্বর, যদি তোমার অস্তিত্ব সত্যি হয়, তবে এই মুহূর্ত চিরস্থায়ী হোক।

মাঝির গলা কানে এল, “এ বার ফিরছি ঘাটে।”

স্বর্ণেন্দু বলল, “আরও আধ ঘণ্টা।”

“তা হলে কি এ বার লাগিয়ে দেব?”

স্বর্ণেন্দু রেগে গেল না। সামান্য হাসল। মানুষের মন নিয়ে তার কারবার। উপন্যাসে মানুষের একের পর এক বিচিত্র মানসিকতা নিয়ে খেলা করে সে। এ ক্ষেত্রে আরও আধ ঘণ্টা চাওয়াতে মাঝি যা বুঝেছে, তা-ই বলেছে।

স্বর্ণেন্দু মুখে বলল, “তুমি ওই দিকটা থেকে এক বার ঘুরিয়ে আনো দেখি।”

নৌকো এগোল। স্বর্ণেন্দু মেহুলির চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলল, “এ বার বল।”

“কী?”

“আজ তোর যা যা দুঃখ আছে, বলে ফেল। জানিস তো, নদী আমাদের সব দুঃখ নিয়ে নেয়। আর পাহাড় আমাদের প্রশান্তি দেয়। সমুদ্র দেয় উদারতা। বোকা লোকেরা ভাবে সমুদ্র-নদী-পাহাড় এই সব বুঝি জাস্ট বেড়াবার জায়গা আর ছবি তোলার জায়গা। তুই কোনও দিন পাহাড় দেখেছিস?”

“উম। এক বার ডালহৌসি। আর এক বার ভুটান। ব্যস।”

“বন্ধুদের সঙ্গে?”

“নাঃ। বাবা-মার সঙ্গে। তাও ক-ত দিন আগে।”

“সমুদ্র?”

“নাঃ।”

“সে কী রে! এত বড়টি হয়েছিস। কোনও দিন কাছ থেকে সমুদ্র দেখিসনি?”

“কে নিয়ে যাবে?”

“অ্যাই মেয়ে, এখন আবার জেদ ধরে বলিস না, ‘আঙ্কল সমুদ্র দেখাতে নিয়ে চলো, এখনই।’”

লাফিয়ে উঠল মেহুলি। স্বর্ণেন্দুর মুখোমুখি বসে বলল, “যাবে? যাবে?”

“অ্যাই, না।”

“প্লিজ়।”

“তুই না সত্যি বাচ্চা মেয়ে। কিছুই বুঝিস না। আমি যে তোকে নিজের মেয়ে ভাবি, এটা কেউ জানে? তোর বাবা-মা ছাড়বে কেন? উল্টে রামধোলাই দেবে।”

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Novel rabibasariyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy