ছবি কুনাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: জেঠামশাই বকাবকি করার আগেই শশিকান্তকে ঘরে ডেকে নেন সেই সন্ন্যাসী। শশিকান্ত দেখল সেই ঘরে ধুনির আগুন জ্বলছে না, বদলে বিছানায় রয়েছে রাশীকৃত বই। সন্ন্যাসী নানা কথা বললেন শশিকান্তর সঙ্গে। তাকে জ্ঞানের জগৎ বিস্তৃত করার এবং বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ানোর উপদেশ দিলেন। পড়তে দিলেন স্বামী বিবেকানন্দের ‘জ্ঞানযোগ’। অসুস্থ রমানাথের জন্য বাড়িতে ডাক্তার নিয়ে আসেন নীলমণি। আর সেদিনই ভোররাতে হঠাৎ ঘুমভেঙে যাওয়ায় শশিকান্ত উঠে দেখে ওদের বাগানবাড়ি ঘিরে ফেলেছে পুলিশের দল। পিসি নিভাননী শশিকান্তকে বলেন, পুলিশ শুধু হাতেই ফিরে যাবে। পরদিন সকালেই সর্বত্র রটে যায়, ওদের বাড়িতে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে এক বিপ্লবী লুকিয়ে ছিল এবং এলাকায় বিপ্লবী কার্যকলাপ বৃদ্ধির জন্য জেঠামশাই নীলমণিই দায়ী।
ঈশান আবার চুপ করে যায়। অস্তগামী সূর্যের দিকে অপলক চেয়ে থাকে। খেলার মাঠের কোলাহলও থেমে গেছে। সকলে বাড়ি ফিরে গেছে। শুধু বসে আছে ওরা দু’জন। শশিকান্ত বলে, “এ বার উঠি। অবিনাশ জেঠুর কাছে যেতে হবে।”
“কবিরাজ অবিনাশ সেন?”
“হ্যাঁ, বাবা কেমন আছে, জানাতে হবে।”
শশিকান্ত উঠে পড়ে। ঈশানও উঠে পড়ে। দু’জনে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।
হঠাৎ ঈশান বলে, “সাহস এক দিনে আসে না, শশী। এটাও অভ্যাসের ব্যাপার। আমি নিজেই কি ভাবতে পেরেছিলাম, সারা গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে বিপ্লবের কাগজ সেঁটে দিতে পারব!’’
হাঁটা থেমে গেল শশিকান্তর। ঈশানের দিকে সরাসরি তাকাল। অন্ধকারে দেখতে পেল না ঈশানের মুখ। শুনতে পেল ঈশান বলছে, “বিপ্লবী দলে নাম লেখা শশী, জীবন সার্থক হবে। আমি নাম লিখিয়েছি। ভেবে দেখ, আমি আসব আবার।”
মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যায় ঈশান। অন্ধকারে সেই দিকে তাকিয়ে শশিকান্ত অবিনাশজেঠুর বাড়ির দিকে যাত্রা করে।
অবিনাশ সেন নামকরা কবিরাজ। তাঁর মতো গুণী কবিরাজ এ তল্লাটে পাওয়া দুষ্কর। রমানাথের স্ত্রীকে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচাতে পারেননি, তবু অবিনাশ কবিরাজের উপর বিশ্বাস যায়নি রমানাথের। তাই, নিজের চিকিৎসার দায়িত্বও তাঁর হাতে ছেড়ে নিশ্চিন্ত থেকেছেন।
কবিরাজ মশাইয়ের বাড়িটি একতলা। দু’টি ঘর। একটিতে কবিরাজ মশাই নিজে থাকেন। অন্য ঘরটিতে তার তাঁর স্ত্রী ও কন্যা।
শশিকান্ত দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখতে পেল, কবিরাজ মশাইয়ের মেয়ে ঘরের মেঝেয় বসে একমনে আলতা পরছে। সামনের লণ্ঠনের আলোয় তার মুখটা উজ্জ্বল। শ্যামলা রং, চোখগুলো বড় বড়। পরনে একটা ডুরে শাড়ি। এই মেয়েটির সামনে শশিকান্ত অস্বস্তি বোধ করে। তার বুকের ভিতর ধকধক শব্দ হয়। আজও সেই অস্বস্তি শুরু হল। হৃৎপিণ্ডের শব্দ সে নিজেই যেন শুনতে পেল।
মেয়েটির নাম লাবণ্যময়ী। নামের সঙ্গে চেহারা সাযুজ্যপূর্ণ। তবু যেন চোখ দু’টির সৌন্দর্য আলাদা। লাবণ্যময়ী শশিকান্তর দিদি কনকবালার বন্ধু। যদিও তাদের দু’জনের বয়সের পার্থক্য আছে। লাবণ্য খানিকটা ছোটই হবে। কনকবালার সঙ্গে খেলতে যায়। শশিকান্ত যখন আর একটু ছোট ছিল, তখন সেও ওদের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শশিকান্তকে বাতিল করে দিয়েছে কনকবালা। বলেছে, “আমাদের খেলায় তুই আসিস কেন?... তুই কি মেয়ে?”
পুরুষদের মেয়ে বললে পৌরুষে লাগে। শশিকান্তরও লেগেছিল। শশিকান্ত আর যায়নি ওদের সঙ্গে খেলতে। তবু তাদের বাড়ি যাওয়া-আসার সময় কখনও-সখনও দেখা হয়ে যেত লাবণ্যময়ীর সঙ্গে। শশিকান্তর মনে হত অনেক কথা বলে লাবণ্যময়ীর সঙ্গে। কিন্তু সাহসে কুলোত না। লাবণ্যময়ী সলজ্জ হেসে চলে যেত।
লাবণ্যময়ী দরজার দিকে তাকিয়ে শশিকান্তকে দেখতে পেল। দেখে লণ্ঠন হাতে উঠে এল। বলল, “এসো শশীদা।”
শশিকান্ত বলল, “জেঠামশাই আছেন?”
“হ্যাঁ, আছে, তুমি এসো,” বলে লাবণ্যময়ী শশিকান্তকে তার বাবার ঘরে নিয়ে যায়।
একটি বৃহদাকার বই পড়ছিলেন ভদ্রলোক। তাঁর চেহারা কৃশকায়। চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। গৌরবর্ণ। স্বল্পকেশ।
শশিকান্তর পায়ের শব্দে বই থেকে মুখ তোলেন ভদ্রলোক। বলেন, “খবর ভাল তো শশিকান্ত?”
শশিকান্ত উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, জেঠামশাই। বাবা এখন ভাল আছেন। বললেন, আপনাকে জানাতে। তাই এলাম।”
“বেশ করেছ, তবে খেয়াল রেখো, বাবা যেন এখন একেবারে বাইরে না বেরোন। অন্তত পনেরো দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিতে হবে।”
“আমি বলব বাবাকে। তবে আপনি যদি আর এক বার বাবাকে দেখে আসেন।”
“সে আমি যাব’খন। তবে কী জানো শশী, তোমাদের বাড়িতে যেতে এখন ভয় করে— এই বুঝি পুলিশ ধরে নিয়ে গেল! যা সব কাণ্ডকারখানা চলছে তোমাদের বাড়িতে।”
শশিকান্ত অবাক হয়ে তাকাল কবিরাজ জেঠামশাইয়ের দিকে। বলল, “কাণ্ডকারখানা?”
“তা নয়তো কী?” কবিরাজমশাই উত্তেজিত হয়ে বলেন, “এক বিপ্লবী নাকি লুকিয়ে ছিল সন্ন্যাসীর বেশে তোমাদের বাড়িতে?”
লাবণ্য একটা পাত্রে তার মায়ের হাতে তৈরি গোটা চারেক সন্দেশ নিয়ে এসেছিল শশিকান্তর জন্য। বাবার কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, “সত্যি নাকি শশীদা?”
শশিকান্ত লাবণ্যর হাত থেকে মিষ্টির পাত্রটা নিতে নিতে বলল, “এক জন সন্ন্যাসী এসেছিলেন, তবে উনি বিপ্লবী কি না, আমার জানা নেই।পুলিশ যখন খুঁজতে এসেছিল, তখন হতেও পারে যে উনি বিপ্লবী।”
“তুমি দেখেছ ওই সন্ন্যাসীকে?” চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে লাবণ্য।
শশিকান্ত সংক্ষেপে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।”
কবিরাজমশাই হঠাৎ তাড়া দিয়ে বলে ওঠেন, “তুমি খাও, শশী...” লাবণ্যকে ইশারা করে বললেন শশীর জন্য এক গেলাস জল নিয়ে আসতে। লাবণ্য চলে যাওয়ার পর বললেন, “পুলিশ তাকে ধরতে পারল না, এটা কেমন করে হল?”
এই রহস্যটা শশিকান্তর অজানা। একমাত্র জানেন তার পিসি নিভাননী। না হলে, কেন সে দিন শশিকান্তকে বলেছিলেন— ওরা খালি হাতে ফিরে যাবে। তার মানে, পিসি সব জানতেন। তবে এ সব কথা অবিনাশজেঠুকে বলা যাবে না। কাউকেই বলা যাবে না। বিপ্লবীদের ঘরের লোককেও কিছু গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়।
নাকে একটিপ নস্যি গুঁজে, রুমাল দিয়ে নাক মুছে, অবিনাশ সেন হঠাৎ বলে উঠলেন, “তোমার জেঠামশাই নীলমণি বাঁড়ুজ্যেও বিশেষ সুবিধের লোক নয়। বেশ ছিল বেলঘর। কী দরকার ছিল এই শান্ত গ্রামে বিপ্লবীদের ঢুকিয়ে গ্রামে অশান্তি ডেকে আনার! দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার লাগানোও শুনেছি তার কাজ।”
শশিকান্ত কোনও উত্তর দিল না। জেঠামশাইয়ের পক্ষ সমর্থন করে কিছু বললেই কবিরাজ জেঠু রুষ্ট হবেন তার উপর। তার চেয়ে চুপ করে থাকা ভাল।
শশী সন্দেশে মন দেয়। তার চোখ খোঁজে লাবণ্যকে। খাওয়া শেষ হতেই লাবণ্য ঘরে ঢোকে এক গেলাস জল নিয়ে। শশী কাঁসার গেলাস থেকে ঢকঢক করে জল খেয়ে গেলাসটা ফিরিয়ে দেয় লাবণ্যকে। অজান্তেই লাবণ্যর আঙুল স্পর্শ করে শশিকান্ত। বুকের ভিতর আবার সেই হাতুড়ি পেটার শব্দ শুনতে পায়। লাবণ্য গেলাস নিয়ে চলে গেলে, শশিকান্ত বলে, “আমি উঠি এ বার, জেঠামশাই।”
অবিনাশ কবিরাজ বলেন, “হ্যাঁ, এসো। সাবধানে থাকবে। তুমি আবার এ সবে জড়িয়ে পোড়ো না।”
শশিকান্ত উঠে দরজার দিকে এগোয়। আড়াল থেকে এক মহিলা বেরিয়ে আসেন। ছোটখাটো চেহারা। ঘোমটার আড়ালে মুখ দেখা যায় না ভাল করে। লাবণ্যর মা। খুব কম কথা বলেন। কোনও মহিলাকে এত কম কথা বলতে দেখেনি শশিকান্ত।
শশী দরজার বাইরে পা দিতেই, লাবণ্যকে কিছু বললেন মহিলা। সম্ভবত তাকে একটু এগিয়ে দিতে বললেন। লাবণ্য একটা লণ্ঠন নিয়ে এগিয়ে এল। বলল, “চলো শশীদা, তোমাকে আমি খানিকটা এগিয়ে দিই। তুমি যা হাঁদা, অন্ধকারে রাস্তায় কোথাও হোঁচট খেয়ে গড়াগড়ি দিলে আমাদের বদনাম হবে!” বলেই লাবণ্য খিলখিল করে হাসতে শুরু করল।
শশিকান্ত বলল, “আর বাকি পথটা, যখন তুই সঙ্গে থাকবি না, তখন?”
“আমি সঙ্গে থাকব, শশীদা,” লাবণ্য খুব আস্তে আস্তে বলে।
শুনতে পেয়ে শশিকান্ত লাবণ্যর দিকে চায়।
লাবণ্যর মুখে হাসি। বলে, “তোমাদের বাড়ি দেখা যাচ্ছে। আমি তা হলে আসি।”
শশিকান্ত বলে, “হ্যাঁ, আয়। এক দিন আসিস।”
লাবণ্য উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, আসব। দেখব, কেমন কথা বলো! তুমি যা লাজুক!”
আর দাঁড়ায় না লাবণ্য। তার বাড়ির দিকে ফিরে যায়। শশিকান্ত বাকি পথটা একা একাই ফেরে।
বাড়ির খুব কাছে এসেই কাকাকে দেখতে পায় শশিকান্ত। টালমাটাল অবস্থা। এক বার বাঁ দিকে যাচ্ছে তো পরক্ষণেই ডান দিকে। শশিকান্ত দাঁড়িয়ে যায়। এগোলেই কাকার মুখোমুখি হতে হবে। সেটা সে চায় না। অপেক্ষা করে খানিক ক্ষণ। বাড়ির মধ্যে কাকা ঢুকে গেলেই, সে হাঁটা দেবে বাড়ির পথে।
হঠাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে একটি শরীরের আবির্ভাব হল তার সামনে। ভয় পেয়ে গেল শশিকান্ত। ভূতপ্রেতে তার মোটেই বিশ্বাস নেই, তবু হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে এই রকম কাউকে দেখলে একটু ভয় তো হয়ই। শশিকান্তর মুখ দিয়ে কাঁপা-কাঁপা আওয়াজ বেরিয়ে এল, “কে, কে ওখানে?”
ছায়ামূর্তি খানিকটা তার সামনে এগিয়ে এসে বলল, “ভয় পেয়েছিস?... আমি বিশু। তোর কাছে একটা বিশেষ দরকারে এসেছি। এক্ষুনি চলে যাব।”
“বিশু! কোথায় ছিলি এত দিন?” শশিকান্ত জিজ্ঞেস করল।
“সে সব পরে বলব। তুই এই চিঠিটা রাখ। তোর জেঠামশাইকে এক জন পাঠিয়েছেন। তোর কাজ হবে জেঠামশাইকে এটা দিয়ে দেওয়া।”
“কিন্তু দেব কাকে? জেঠামশাই তো বাড়ি নেই।”
ছায়ামূর্তি শশিকান্তর আরও কাছে সরে আসে। কানের কাছে মুখ এনে বলে, “আজই আসবেন। কখন বলতে পারব না। তুই অপেক্ষা করিস।”
“বিশু, তুইও বিপ্লবী দলে?” শশিকান্ত অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।
শশিকান্ত কোনও উত্তর পেল না। ছায়ামূর্তি তত ক্ষণে অন্তর্হিত। কাকাকেও আর দেখা যাচ্ছে না।
শশিকান্ত চিঠিটা বুকপকেটে রেখে বাড়ি ফিরল।
বাড়িতে ঢুকেই দেখল, কনকবালা তার ঘরের মেঝেতে বসে কী পড়ছে। শশিকান্তকে দেখেই বলল, “তুই কি সন্ন্যাসী হওয়ার মতলবে আছিস? এ বই তুই কোথায় পেয়েছিস? কে দিয়েছে তোকে বল, না হলে আমি বাবাকে বলে দেব।”
শশিকান্ত দিদির হাত থেকে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল, “বলব না যা।”
“ঠিক আছে, আমি বাবাকে বলতে চললাম...” বলে উঠে দাঁড়ায় কনকবালা।
শশিকান্ত দিদির হাতটা চেপে ধরে। বলে, “বলছি, কিন্তু কথা দে যে, তুই কাউকে বলবি না।”
কনকবালার মুখে হাসি ফিরে এসেছে। বলে, “কথা দিলাম।”
শশিকান্ত সব বলে দিদিকে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায় কনকবালা। মুখ থেকে কথা সরেনা তার। অনেক ক্ষণ পর প্রশ্ন করে, “তুই এখন কোথায় গিয়েছিলি?”
“অবিনাশ জেঠুর বাড়ি,” শশিকান্ত উত্তর দেয়।
“কেন? ওই বাড়িতে হঠাৎ?”
“বাবা বলেছিল যেতে। অবিনাশ জেঠুকে বাবার ভাল থাকার খবরটা জানিয়ে আসতে।”
“লাবণ্যকে দেখলি?”
“দেখব না কেন?”
“তোর সঙ্গে কথা বলল?”
“ওই একটু-আধটু।”
শশিকান্ত লক্ষ করল, তার দিদির মুখে সামান্য হাসি এসেই মিলিয়ে গেল।
“যাই, বাবাকে জানিয়ে আসি, অবিনাশ জেঠু কী বললেন,” শশিকান্ত উঠে পড়ে। বাবার ঘরে যাবে বলে পা বাড়ায়। ঠিক সেই সময় পিসি হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে। বলে, “এক মুসলমান ভদ্রলোক তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। তুই নাকি তার ছেলেকে বই দিবি বলেছিস?”
শশিকান্তর ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠল। তাহলে কি...
এক মুহূর্ত ভেবে সে তার বুকপকেটে এক বার হাত দিয়েই দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
শশিকান্তকে দেখেই ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, “বই এনেছ?”
শশিকান্ত বুকপকেট থেকে চিঠিটা বার করতেই ভদ্রলোক ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিলেন এবং মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সেই দিকে খানিক ক্ষণ তাকিয়ে, ফিরে আসতেই সে দেখল, তার পিছনে কখন পিসি এসে দাঁড়িয়েছেন। বলল, “পিসি তুমি...?”
এই প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে পিসি বললেন, “হিন্দু ব্রাহ্মণ বাড়িতে মুসলমান ডেকে আনছিস... এ সব জানলে তোর বাবা-কাকা তোকে কী করবে জানিস?”
শশিকান্ত বলল, “চিনতে পারলে না, পিসি? উনি কে জানো?”
নিভাননী শশিকান্তর মুখটা চেপে ধরেন। ফিসফিস করে বলেন, “একটা কথাও নয়।”
শশিকান্ত ঘরে চলে গেলে তিনি হাতজোড় করে কপালে ঠেকিয়ে মনে মনে কী যেন বললেন। তার পর সদর দরজা বন্ধ করে দোতলায় ফিরে এলেন।
১৩
অনেক দিন পর গদিতে এসেছেন রমানাথ। শরীর এখনও দুর্বল। তবুও মনের জোরে চলে এসেছেন। উমানাথ সঙ্গে আছে, তাই ভরসা। সারা রাস্তা উমানাথ খেয়াল রেখেছে রমানাথের কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না। রমানাথের চেহারারও বেশ অবনতি ঘটেছে। সেটা লক্ষ করে ঘনশ্যামজি বললেন, “রমাবাবু, আপনার চেহারা তো বিলকুল খারাপ হয়ে গেছে।”
দীর্ঘ দিন বাংলায় থেকে ঘনশ্যামজি বাংলাটা বেশ ভালই রপ্ত করে নিয়েছেন। মনেই হয়না, তিনি মারোয়াড়ের লোক। তাঁর পোশাক-আশাকেও বাঙালিয়ানার ছাপ। শুধু মাথায় একটা পাগড়ি পরেন।
“হ্যাঁ, ঘনশ্যামজি, ভুগলাম তো বেশ অনেক দিন... এখনও শরীর বড় দুর্বল। সঙ্গে উমা নাথাকলে আসতেই পারতাম না!” ধীরে ধীরে উত্তর দেন রমানাথ।
“এলেন কেন? এই ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের দিনে?” দরজার বাইরে রাস্তায় উপর চোখ রেখে বললেন ঘনশ্যামজি।
“ঝামেলা? কী ঝামেলা?” রমানাথ বললেন। তাঁর চোখে বিস্ময়।
উমানাথও অবাক হয়েছে ঘনশ্যামজির কথায়। তার চোখেও কৌতূহল। বলল, “আবার কী ঝামেলা হল ঘনশ্যামজি?”
ঘনশ্যামজি আবার রাস্তার দিকে তাকালেন। তার পর বললেন, “ডাকাতি হয়ে গেছে উমাবাবু।”
“আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না!” উমানাথ বলল। তার পর রমানাথের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কিছু বুঝতে পারছ, মেজদা?”
রমানাথ মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলেন তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না।
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy