বিস্মৃত: কালীশঙ্কর ঘোষের বসতবাটীর বর্তমান অবস্থা। ডান দিকে, পুব দিকের দেওয়ালে ঠাকুরদালানের খিলানের আদল। ছবি: অরিন্দম চক্রবর্তী।
বর্ধমান আর হুগলি জেলার সীমান্তে ধনেখালি থানার একটি গ্রামের নাম চোপা। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড রেলপথের গুড়াপ স্টেশনের অদূরে তার অবস্থিতি। সেই চোপা থেকে ভাগ্য ফেরাতে অষ্টাদশ শতকে কলকাতায় এসেছিলেন দুই ভাই, কালীশঙ্কর ও দুর্গাপ্রসাদ ঘোষ। তবে তাঁরা সহোদর ছিলেন, না কি তুতো-ভাই, তা জানা যায়নি।
সমকালীন রামদুলাল সরকার অথবা জয়নারায়ণ মিত্রের মতো এই দুই ভাইও আমেরিকান জাহাজি সওদাগরদের সঙ্গে ব্যবসায়িক গাঁটছড়া বেঁধে ফেলেছিলেন। বাঙালিরা পুরোপুরি ভুলে গেলেও, মার্কিন মুলুকে এখনও তাঁদের স্মৃতিবাহী অভিজ্ঞান রাখা আছে সযত্নে। বস্টনের সামান্য উত্তর দিকে, ম্যাসাচুসেটস উপসাগরের তীরবর্তী সালেম শহরের পিবডি সংগ্রহশালায় রয়েছে দুর্গাপ্রসাদ ঘোষের পূর্ণাবয়ব মাটির মূর্তি, যা উনিশ শতকের প্রথম দিকে কৃষ্ণনগরের শ্রীরাম পালকে দিয়ে তৈরি করিয়ে জাহাজযোগে পাঠানো হয়েছিল। এই সংগ্রহশালায় রক্ষিত ডাডলি পিকম্যানের রোজনামচায় লিপিবদ্ধ আছে ঘোষভাইদের কীর্তিকলাপের প্রসঙ্গ। সেখান থেকে জানা যায়, কালীশঙ্কর-দুর্গাপ্রসাদের ব্যবসা ছিল মূলত আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে, যদিও দক্ষিণ অংশও পুরোপুরি বাদ পড়েনি।
আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসার দৌলতে বিপুল বিত্ত উপার্জন করেছিলেন দুই ভাই। তার পর বর্তমান রবীন্দ্র সরণি ও বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের সামান্য দক্ষিণ-পূর্বে প্রাসাদোপম অট্টালিকা গড়ে তুলেছিলেন কালীশঙ্কর। সে বাড়িতে সাড়ম্বরে আয়োজিত হত কালীপুজো। ১৯০৩-এ কালীশঙ্কর ঘোষ এবং তাঁর কিংবদন্তিসম কালী-আরাধনার সঙ্গে বাঙালি পাঠকের প্রথম পরিচয় ঘটান প্রাণকৃষ্ণ দত্ত। নববিধান ব্রাহ্মসমাজের প্রচারক এই প্রাণকৃষ্ণ দত্ত বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের ‘কলিকাতা অনাথ আশ্রম’- এর প্রতিষ্ঠাতাও বটে। তিনি বিবরণীটি উপস্থাপন করেছিলেন ‘নব্যভারত’ পত্রিকায় ‘কলিকাতার ইতিবৃত্ত’ নিবন্ধমালার মধ্যে: “এই গৃহে শ্যামাপূজার রাত্রে প্রাঙ্গণ রক্তে ডুবিয়া যাইত, নর্দ্দমা দিয়া রক্তের স্রোত বহিত। সাত হাত লম্বা প্রতিমা হইত, দালানে পর্ব্বতপ্রমাণ মিষ্টান্নের স্তূপ হইত। আমরা বাল্যকালে ইঁহার পরবংশীয়দিগের পূজার এক একটী মিঠাই দেখিয়া আশ্চর্য্য হইতাম, দুইটী বড় মালসার ভিতর মিঠাই ঢালিয়া এক একটী মিঠাই প্রস্তুত হইত।” প্রাণকৃষ্ণের আয়ুষ্কালের নিরিখে হিসাব করলে বোঝা যায়, ১৮৬০-এর দশকেও ঘোষবাড়ির পুজোর যথেষ্ট রমরমা ছিল, যদিও কালীশঙ্করের প্রয়াণ ঘটেছিল তার ঢের আগে।
‘কলিকাতার ইতিবৃত্ত’-এর সূত্রে জানা যাচ্ছে, কালীশঙ্করের বাড়ির কালীপুজো ছিল ‘ভয়ানক ব্যাপার’। তাঁরা ছিলেন ‘ভীষণ তান্ত্রিক’, ‘কলিকাতার ইতিবৃত্ত’ রচনাকালেও (১৯০৩) ‘সুরাপান ভিন্ন আহ্নিক সম্পন্ন’ হত না। তাই নিয়ে তিনটি রসালো জনশ্রুতি পরিবেশন করেছিলেন প্রাণকৃষ্ণ। কারণবারি সেবন যে হেতু ঘোষেদের ধর্মীয় কৃত্যের অঙ্গ ছিল, তাই কর্তা-গিন্নি থেকে আরম্ভ করে সংসারের প্রত্যেকে, গুরু-পুরোহিত থেকে পরিচারক-পরিচারিকাদেরও সুরাপান করতে হত। কালীপুজোর রাতে তা চলত বিরামহীন। এক বার কালীপুজোর দিন দুপুরে ঢুলিরা গিয়ে কালীশঙ্করের স্ত্রী গৌরমণির কাছে তেল আর জলপান চাইল। তাদের এমন ধৃষ্টতার জবাবে উষ্মা প্রকাশ করে নেশাতুর গৃহকর্ত্রী বললেন: “কী! তোরা আমার বাড়িতে তেল-জলপান চাইছিস। যা, মিঠাই খা, মোমবাতি মাখ।”
অন্য দু’টি কাহিনির নায়ক কালীশঙ্কর ঘোষ স্বয়ং। প্রসাদী পানীয় সহযোগে আহ্নিক সাঙ্গ করে এক পুজোর দিন সন্ধেবেলায় ঘোষমশাই মালা জপছেন, তাঁর একটি পা তখন মোড়া আর অন্যটি ছড়ানো। মালিকের মতোই নেশায় বিভোর এক ভৃত্য প্রসারিত পা-খানি টিপছে আর ফোঁপাচ্ছে। বাবু কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুই কাঁদছিস কেন রে?” কাঁচুমাচু চাকরের জবাব: “কর্তা, এত দিন চাকরি করছি, কখনো কোনো কসুর করিনি। আজ আপনার একখানা পা হারিয়ে ফেলেছি, খুঁজে পাচ্ছি না।” কালীশঙ্কর সহাস্যে অভয় দিয়ে বললেন, “ভাবিসনি, জলখাবারের জায়গায় বোধহয় ফেলে এসেছি। যা, বাড়ির ভেতর থেকে নিয়ে আয়।” হুকুম তামিল করতে ছুটল পরিচারক। তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালিয়েও বেচারা পায়ের হদিস না পেয়ে গিন্নিমার শরণাপন্ন হল। কিন্তু তাঁর অবস্থাও তো তথৈবচ; বললেন, “আহ্নিকের জায়গাটা এক বার দেখে আয় তো গিয়ে।” সে চেষ্টাও বিফল হতে আবার কান্না জুড়ে দিয়ে হতাশ চাকর ফিরে এল কর্তামশাইয়ের কাছে। মুশকিল আসানের আশায় কালীশঙ্কর বললেন, “তা হলে বুঝি আহ্নিকের নৈবেদ্যর সঙ্গে ঠাকুরমশায়ের বাড়ি চলে গিয়েছে, জিজ্ঞেস করে আয়।” সে কথা নিবেদন করতে টপভুজঙ্গ পুরোহিতের সপ্রতিভ জবাব, “ওরে, কালীশঙ্করের পা যদি আমার বাড়িতে এসে থাকে, তা হলে কাল সকাল হলেই আমি মাথায় করে পৌঁছে দিয়ে আসব। তুই নিশ্চিন্তে চলে যা।” উদ্বেগমুক্ত হয়ে ভৃত্যটি অনুসন্ধানে ক্ষান্ত দিয়ে বকেয়া পদসেবার কাজে ফিরে গেল।
এক মোক্ষম ঘটনা ঘটল কালীপুজোর এক মৌতাতময় অমাবস্যার রাতে। কালীশঙ্করের হঠাৎ খেয়াল জাগল, এতগুলো পশুকে মায়ের কাছে বলি দিয়ে আমি তো অক্ষয় পুণ্য সঞ্চয় করছি, তা হলে গুরুদেবকে বলি দিলে না জানি আরও কত পুণ্য অর্জন করা যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। গুরুদেবও তখন তুরীয় অবস্থায়, কথাটা কানে তুলতেই ‘তথাস্তু’ বলে নেচে উঠলেন। তাঁকে সাদরে নিয়ে যাওয়া হল হাড়িকাঠের পাশে। বলিদানের জন্য যে কামাররা নিযুক্ত হয়েছিল, গৃহকর্তার আদেশে তাদেরও তরলপথের পথিক হতে হয়েছিল। কিন্তু এত বলিদান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব যেহেতু তাদের ঘাড়ে, তাই সামান্য পান করেই কামাররা গুরুতর নেশার ভান করছিল। এমন লোমহর্ষক কাণ্ড দেখে তো তাদের আক্কেল গুড়ুম। কামারদের বুদ্ধিমান দলপতি করজোড়ে কালীশঙ্করের কাছে অনুনয় পেশ করল, “কর্তামশাই, এ সব খাঁড়া দিয়ে তো চিরকাল জন্তু-জানোয়ার বলি দিয়ে এসেছি, এ দিয়ে কি গুরুদেবকে বলি দিতে আছে! আমার বাড়িতে গুরুবলির নতুন খাঁড়া রাখা রয়েছে। একটু সবুর করুন, আমি চট করে নিয়ে আসছি।” এই বলে, দলবলকে সাবধান করে, সে যথাশীঘ্র থানার কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে এল। অবশ্যম্ভাবী অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন গুরুদেব।
আদালতের নথিপত্র থেকে আন্দাজ করা যায়, ১৮১৬ ও ১৮২৩-এর মধ্যবর্তী কোনও সময়ে কালীশঙ্কর ঘোষের মৃত্যু হয়। কাজেই প্রাণকৃষ্ণ দত্ত যে পুজো দেখেছিলেন, তা তাঁর পুত্র-পৌত্রদের আমলের। প্রাণকৃষ্ণ তাঁদের অভিহিত করেছিলেন কালীশঙ্করের ‘পরবংশীয়’ পরিচয়ে। তাঁর লেখা গল্পকথাগুলিও প্রাণকৃষ্ণ নিশ্চয়ই শুনেছিলেন পূর্ববর্তী প্রজন্মের কারও মুখে। কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে কালীশঙ্করের জীবদ্দশায় অনুষ্ঠিত কালীপুজোর ধারাভাষ্য পাওয়া গেলে তা অবশ্যই আরও বিশ্বাসযোগ্য হত। তেমন একটি সাক্ষ্যও কিন্তু দুষ্প্রাপ্য বইয়ের পাতায় লুকিয়ে আছে।
স্বনামধন্য মিশনারি উইলিয়াম কেরির অন্যতম সহযোগী ছিলেন উইলিয়াম ওয়ার্ড। শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানাটির দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। চার খণ্ডে তিনি হিন্দুদের শাস্ত্রগ্রন্থ, ধর্ম ও আচারব্যবহার নিয়ে বই লিখেছিলেন। তার তৃতীয় খণ্ডে (১৮১১) ওয়ার্ড জানিয়েছেন যে, কয়েক বছর আগে তিনি কালীশঙ্কর ঘোষের কালীপুজো দেখতে গিয়েছিলেন। তবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে না রবাহূত হয়ে, তা তিনি কবুল করেননি। দ্বিতীয়টি হলে বুঝতে হবে, কালীশঙ্করের কালীপুজোর নামডাক সাহেবি মহলেও পৌঁছেছিল, কৌতূহলী করে তুলেছিল মিশনারিদেরও। সেখানে সে দিন কী দেখেছিলেন পাদরিসাহেব?
কালীশঙ্করের ইমারতটি ছিল চক-মেলানো, মাঝখানে উঠোন। তার উত্তর ধারে দক্ষিণমুখী ঠাকুরদালানে অধিষ্ঠিত ছিলেন কালীপ্রতিমা। চার পাশের ঘর তখন দর্শনার্থীতে ঠাসা। উৎসর্গ করার জন্য উঠোনে হাজির ছিল মোষ, পাঁঠা এবং ভেড়া। গৃহকর্তা কালীশঙ্করের সঙ্গী ছাড়াও ছিল জনা কুড়ি অন্য লোক, যাদের দায়িত্ব ছিল পশুগুলিকে ধরে-পাকড়ে হাড়িকাঠে পেড়ে ফেলা। প্রথমে চলল ছাগবলি, তার পরে মোষ, বলিদানপর্ব শেষ হল দু’-তিনটি ভেড়া দিয়ে। জন্তুগুলি যাতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা না করতে পারে, তাই তাদের ঠ্যাংগুলো বাঁধা ছিল দড়ি দিয়ে। হাড়িকাঠের মধ্যে গলা ঢুকিয়ে উপরের খিল আটকানোর পর, এক ব্যক্তি পিছনের পা দু’টি টেনে ধরছিল প্রবল শক্তিতে। সেই অবসরে চওড়া ভারী খাঁড়ার আঘাতে এক কোপে ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল মুণ্ড। পরমুহূর্তে এক জন সহকারী মুণ্ডহীন দেহটি নিয়ে চলে যাচ্ছিল দেবীমূর্তির সামনে। মোষের কাটা মুণ্ডটি যখন নিজের মাথায় চাপিয়ে নাচতে নাচতে বাহক এগিয়ে যাচ্ছিল কালীপ্রতিমার দিকে, তখন তার শরীরের চার পাশ দিয়ে বয়ে নামছিল রক্তের অঝোর ধারা। উইলিয়াম ওয়ার্ড অবাক বিস্ময়ে লিখেছেন, রক্তপাতে এমন অদম্য উৎসাহ যেমন তিনি অন্যত্র দেখেননি, তেমনি ইংল্যান্ডের কোনও কসাইয়ের মধ্যে খুঁজে পাননি পশুবধের এমন নৈপুণ্য।
বলিদান শেষ হতে কালীশঙ্কর এগিয়ে গেলেন বলিদাতা কামারের কাছে। শুধু তাই নয়, ক্রিয়াবিধি সুসম্পন্ন করার জন্য আলিঙ্গন করে তার হাতে তুলে দিলেন বস্ত্র-সহ নানা উপহার। তত ক্ষণে উঠোন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। জীবজন্তুদের ভয়ার্ত চিৎকার, অতগুলি পশুহত্যার বীভৎসতা, মানুষের হিংস্র উন্মত্ততায় ওয়ার্ডের অসুস্থ লাগছিল। মাঝরাত নাগাদ যখন তিনি ফিরছিলেন, তখন তাঁর মন আতঙ্ক, ঘৃণা ও ক্রোধের সংমিশ্রণে ভরপুর।
ওয়ার্ড বলিদানের পরের পর্বেরও কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। পশুদের ছিন্ন মুণ্ড, রক্ত ও মাংস দেবীর রাতের ভোজ্য হিসেবে নিবেদিত হওয়ার পর, আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে আরম্ভ হল হোম। শেষ কৃত্য দক্ষিণা দান। ব্রাহ্মণ এবং অভ্যাগতদের মধ্যে বিতরিত উপহারের পরিমাণ ছিল প্রচুর, ক্ষেত্রবিশেষে মহার্ঘ। ব্রাহ্মণভোজনের পর অতিথি ও বাড়ির বাসিন্দাদের খাওয়াদাওয়া শুরু হল। এই সময়ে বাড়ির অভ্যন্তরে দেবীর প্রসাদী কারণবারি পান চলল সঙ্গোপনে। সব পাট চুকে যাওয়ার পর, দেবীর সমক্ষে শুরু হল নাচগান। তার চরিত্র ছিল সমসাময়িক দুর্গাপুজোর মজলিশের অনুরূপ।
ওয়ার্ডের বর্ণনায় কামারকে কালীশঙ্করের আলিঙ্গন ও উপহার দেওয়াটা বিসদৃশ ঠেকতে পারে। কিন্তু ঘটনা হল, বাড়ির বলি নিয়ে গৃহকর্তারা সন্ত্রস্ত থাকতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, ‘মোষ বাধলে জয়, ছাগ বাধলে ক্ষয়’। সুতরাং, যত ক্ষণ না পাঁঠা বলি সাঙ্গ হয়, তত ক্ষণ তাঁরা সিঁটিয়ে থাকতেন। কামারের সংবর্ধনা সেই ভয়মুক্তির বহিঃপ্রকাশ।
বালক প্রাণকৃষ্ণের কালীপুজো দর্শনের পর খুব বেশি দিন কালীশঙ্কর ঘোষের ভদ্রাসন অটুট ছিল না। পারিবারিক বিবাদের ফলে, কালীশঙ্করের পাঁচ পুত্রের ওয়ারিশানদের মধ্যে বাঁটোয়ারার প্রয়োজনে সেই বিশাল ইমারত সংলগ্ন ফাঁকা জমি পুকুর-সহ পাঁচ টুকরো হয়ে যায়। ভাগাভাগির জন্য ঠাকুরদালানের কোল ঘেঁষে একটি ‘প্রাইভেট প্যাসেজ’ বা গলিপথ সৃষ্টি করতে হয়। ফলে চক-মেলানো তিন দিক থেকে ঠাকুরদালান বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনুমান করা যেতে পারে, এই সময়ে কালীপুজোতেও নেমে আসে পূর্ণচ্ছেদের যবনিকা। পরবর্তী কালে কালীশঙ্করের অন্যতম পুত্র তথা অ্যাটকিনসন টিলটনের অফিসের মুৎসুদ্দি উমেশচন্দ্র ঘোষের নামে গলিটি চিহ্নিত হয়। উমেশ ঘোষ লেনের মাঝামাঝি জায়গার দক্ষিণ ধারে আজও দাঁড়িয়ে আছে কালীশঙ্কর ঘোষের বাড়ির তিন দিক দিয়ে ঘেরা সেই একদা রক্তপ্লাবিত উঠোন। প্রসঙ্গত, বাড়িটি সমান অংশে ভাগীদারদের মধ্যে বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন প্রথম বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার নীলমণি মিত্র।
জাতীয়তাবাদের উদ্গাতা ঋষি রাজনারায়ণ বসু তাঁর আত্মচরিতে হিন্দু কলেজের এক সহপাঠী সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “যোগেশচন্দ্র ঘোষ কলিকাতার বিখ্যাত কালীশঙ্কর ঘোষদিগের বংশজাত। ইনি গণিত বিদ্যাতে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন এবং ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটি কার্য্য কিছুদিন করিয়া পরলোকগমন করেন।” উমেশচন্দ্র বা যোগেশচন্দ্রের মতো অবস্থাপন্ন উত্তরাধিকারী থাকা সত্ত্বেও, বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের মধ্যেই ঘোষবংশ কালীশঙ্করের ভদ্রাসনের বিভিন্ন অংশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কালীপ্রতিমা আসীন হতেন যে পাঁচ খিলানওয়ালা প্রকাণ্ড ঠাকুরদালানে, তা ধূলিসাৎ করে গজিয়ে উঠেছে একাধিক ছোট বাড়ি। তবু নজর করলে আজও তার পূর্ব দিকের দেওয়ালে খুঁজে পাওয়া যায় সাবেক কারুকার্যের আবছা আভাস— যেন অতীত আড়ম্বরের ম্লান সাক্ষী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy