পরিবেশটা পাল্টে গেল বেতলার রাস্তা থেকে কেচকি যাওয়ার রাস্তাটা ধরতেই। ঠিক যেমন শীতকালে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে, তেমন করে। কোয়েল নদী পেরিয়ে এত ক্ষণ ছিল পাশাপাশি দুটো গাড়ি যাওয়ার রাস্তা। দু’পাশে জঙ্গল। এখন সেই রাস্তাটা সরু হয়ে গিয়ে একটা গাড়ি যাওয়ার মতো চওড়া। রাস্তা সরু হওয়ায় দু’পাশের জঙ্গল আরও কাছে।
মোটরবাইকে সওয়ার আমরা দু’জন। সৈকত মোটরবাইক চালাতে চালাতে বলল, “একটু এগোলেই সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র সেই বাংলোটা পড়বে। বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে। এখন এখানে অনেকে থাকতে আসে। শীতকালেই ভিড় হয়। কলকাতার লোকজন এখানে অসীম, হরি, সঞ্জয়, শেখরের মতো দিন কাটাতে আসে।”
রাস্তার দু’দিকে পলাশ, আম, জাম, কেন্দু, অমলতাস, শাল, বনতুলসীর ঝাড়। জঙ্গলের নিজস্ব গন্ধ আর আবছায়ার সঙ্গে শীতের হালকা কুয়াশা মাখামাখি। সৈকত বলল, “পর্যটকরা বেশির ভাগ এই শীতকালেই পালামৌ আসে। অবশ্য বর্ষার সময়েও পালামৌর জঙ্গলের আর এক রূপ। চার দিক সব সবুজ হয়ে থাকে। সেই সবুজ এখন নেই।”
এখন সকাল আটটা। শীতের সকাল, তাই বেশি রোদ ওঠেনি। জঙ্গলে বড় বড় গাছের পাতা ঘিরে থাকা কুয়াশা ছুঁয়ে মোটরসাইকেল আস্তে চললেও মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়া গরম জামা ভেদ করে শীতের কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। তবু এই শীত যেন শহুরে শীত নয়। এই শীতের কামড়ে একটা জংলি ব্যাপার আছে। তাই শহুরে শীতের সকালে যে আড়ষ্টতা থাকে, সেটা একেবারেই নেই। পলাশ, কেন্দু, অমলতাসের পাতা যেন বলছে, ‘এই শীত ছুঁয়ে দেখো তুমি।’
জঙ্গলের রাস্তার বাঁকটা ঘুরতেই দেখলাম ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র সেই বিখ্যাত বাংলো। ছবির প্রথম দৃশ্যের মতোই নদীর ধারে বাংলোটা এখনও নির্জন, একাকী। আশপাশে কেউ নেই।
শীতে তো বাংলো পর্যটকে ভর্তি থাকার কথা। নেই কেন? কোথায় গেল সবাই?
জানতে পারলাম, সকালে সবাই বেতলায় জঙ্গল সাফারিতে গেছে। ভোরের জঙ্গল সাফারিটা খুব ভাল। জন্তুজানোয়ার দেখার সুযোগ বেশি।
সিনেমার মতো এখন আর গাড়ি নিয়ে অবাধে ঢুকে যাওয়া যায় না বাংলো চত্বরে। বাংলো ঘিরে পাঁচিল। লোহার গেট। তালাবন্ধ।
সৈকত থাকে ডালটনগঞ্জে। সে বলল, “এখন যে চৌকিদার আছে, তার বাড়ি যাওয়ার কথা নয়। সারা দিন বাংলোতেই থাকে সে। ওকে বলা আছে আজ সকালে আমরা এখানে আসব। ওর নাম কমলেশ সিংহ।”
তালাবন্ধ লোহার গেটের এ পারে দাঁড়িয়ে আমরা “কমলেশজি, কমলেশজি” বলে হাঁক দিতে শুরু করলাম। মনে পড়ল, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-তে চৌকিদারের নাম ছিল রতিলাল। প্রৌঢ় রতিলাল অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে খুব বিব্রত ছিল। চার বন্ধুর খাবার ঠিকমতো করে দিতে পারছিল না। বার বার বাড়ি চলে যাচ্ছিল। এই চৌকিদার কি এখন পর্যটকদের জঙ্গল সাফারির সুযোগে কিছু ক্ষণের জন্য বাড়িচলে গিয়েছে?
কয়েক বার ডাকাডাকির পর কমলেশ সিংহ ছুটে এল। তালা খোলার আগে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগের সেই রতিলালের মতো আজকের কমলেশও জিজ্ঞেস করল, “বাংলো আপলোগকা বুকিং হ্যায় বাবু?”
সৈকত বলল, “আমাকে চিনতে পারছ না? আমি সৈকত। ডালটনগঞ্জে থাকি। ছবি তুলতে, সিনেমার শুট করতে কত বার এখানে এসেছি। বাংলো বুকিং করব কেন? আমরা তো এখানে থাকব না। এখানে বেড়াতে এসেছে আমার এই কলকাতার বন্ধু। বাংলোটা একটু ঘুরে দেখেই আমরা চলে যাব।”
এ বার আর কথা না বাড়িয়ে লোহার গেট খুলে দিল কমলেশ। সৈকত আমাকে বাংলো চত্বরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “বাংলোটা আগে ঘুরে নাও। আমি তত ক্ষণ বাইরে কেচকি সঙ্গমের ছবি তুলি।”
সিনেমার মতোই বাংলোর গঠনটা একই রকম আছে। শুধু পাল্টেছে বহিরঙ্গ, রং। বাংলোর ঘেরা দেওয়াল জুড়ে গ্রাম্য জীবনযাত্রার নানা ছবি আঁকা। বাংলোয় ওঠার সেই সিনেমার মতো সিঁড়ির ধাপ দেখতে পেলাম। চার পাশে খোলা জায়গায় যেখানে চার বন্ধুর গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছিল, সেই লনটা এখনও আগের মতোই।
কমলেশ গেট খুলে দিয়ে চলে গিয়েছে। বাংলো চত্বরে একা ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে ভাবছি কোথায় গেল সেই কুয়োতলা, যেখানে কুয়ো থেকে জল তুলে চার বন্ধু স্নান করছিল।
বুঝতে পারিনি, কখন যেন হালকা মেঘ করে এসেছিল। শীতের কুয়াশা আর মেঘ মিলিয়ে কেমন যেন অস্পষ্টতা। জাঁকালো শীতে সব কিছুই অনেকটা রূপকথার মতো। বাংলোর ভিতরে না গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম বাংলো চত্বরেই এক গাছের তলায়। দেখলাম ওই গাছের কাছেই সেই কুয়ো। এখন পরিত্যক্ত। সেখান থেকে আর জল ওঠে না। পুরো কুয়োটাই সিমেন্টের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। কুয়োতে ওঠার সিঁড়ির ধাপ এখনও আছে। সেই সিঁড়ির ধাপে গিয়ে বসলাম।
সিঁড়ির কাছে বসে ছিলেন এক বৃদ্ধ। এই কড়া শীতেও একটা হালকা চাদর ছাড়া গায়ে কিছু নেই। এলাকার পুরনো মানুষ হলে হয়তো সেই সময়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শুটিং দেখে থাকতে পারেন। তখনকার কিছু গল্প কি এখনও মনে আছে তাঁর? ভেবে আলাপ করতে গেলাম।
বৃদ্ধের মুখটা যেন চেনা চেনা। কাছে যেতেই তিনি এক গাল হেসে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, “আমাকে চিনতে পারছ তো? আমি অসীম। আমি একা নই... হরি, সঞ্জয় আর শেখরও এখন এখানেই থাকে। এই জঙ্গলে। বাংলোর আশপাশে। এর থেকে শান্তির জায়গা আর খুঁজে পাওয়া গেল না। এই কেচকির জঙ্গল, এই কোয়েল নদী আর ঔরঙ্গা নদীর সঙ্গমস্থল, এই বাংলোই এখন আমাদের স্থায়ী ঠিকানা।”
আমার মুখে তখন অবিশ্বাস ঠিকরে বেরোচ্ছে। একেবারে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র ছবির অসীমের বয়স্ক প্রতিরূপ! আমার দিকে তাকিয়ে ওই বৃদ্ধ বললেন, “আমিই অসীম, বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আচ্ছা, আমায় একটা চিমটি কেটে দেখো। তা হলেই বুঝতে পারবে।”
চিমটি কাটিনি। আমি তো জেগে। তবু বুঝতে পারছিলাম না, সত্যিই জেগে আছি না কোনও স্বপ্নের জগতে কেউ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ওই বৃদ্ধ কুয়োতলা থেকে উঠে আমাকে বললেন, “চলো, তোমায় ঘুরিয়ে দেখাই বাংলোটা। হরি, শেখর, সঞ্জয়রা বোধ হয় কেচকির পাড়ে ঘুরতে গেছে।”
বাংলোর লন পেরিয়ে সিঁড়ির ধাপ বেয়ে উপরে বারান্দায় উঠতে দেখা গেল, সিনেমাটির কিছু স্থিরচিত্রের কোলাজ ফ্রেমবন্দি করে টাঙানো। পর পর তিনটে ফোটো ফ্রেম। প্রথম ফ্রেমে শুধু ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র অপর্ণা। পরের ফ্রেমে চার বন্ধুর বিভিন্ন মুহূর্তের কোলাজ। তার পরের ফ্রেমে রয়েছে অসীম আর অপর্ণার বেশ কিছু দৃশ্য।
স্থির দৃষ্টিতে ছবিগুলো দেখতে দেখতে বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “এই সব আমাদের যৌবনের ছবি, বুঝলে ভায়া। কী সব দিন ছিল তখন! তখনকার পালামৌর সঙ্গে এখনকার পালামৌর মিল খুঁজলে কিছুই পাবে না। হয়তো জঙ্গল অনেকটা একই রকম, কিন্তু পরিবেশ অনেক পাল্টে গেছে। মনে আছে, আমরা শহর থেকে এসে ব্রেকফাস্টে ডিম পাইনি বলে সবাই কেমন রেগে গেছিলাম! শেষে অপর্ণার বাড়ি থেকে ডিমের ব্যবস্থা হল। এখন এখানে বিরিয়ানিও পাওয়া যায়।”
আবার ফোটো ফ্রেমগুলোর দিকে চোখ গেল ওই বৃদ্ধর। মাঝের ফোটো ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ওই যে দেখছ, নদীর ধারে একটা গাছে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর অপর্ণা, ওই গাছটা এখন আর নেই। বছর কয়েক আগে একটা বন্যায় ওই গাছটা ভেঙে পড়ে যায়। এখন ওখানে অনেক নতুন গাছ লাগানো হয়েছে।”
পঞ্চাশ বছর আগে বাংলোর বারান্দা খোলা ছিল। এখন লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা। সেখান থেকে নদীর পাড় দেখতে পাওয়া যায়। বৃদ্ধ বলেন, “মানতেই হবে, এই জায়গাটা এখন বন দফতর থেকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ওয়াচটাওয়ার হয়েছে। নদীর পাড়ে বসার জায়গা হয়েছে। এখন ডালটনগঞ্জ থেকে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সকালে বেড়াতে চলে আসে।”
বারান্দা থেকে নদীর ধারে সিমেন্টের তৈরি বসার কয়েকটা জায়গা দেখা যাচ্ছে। একটা বসার জায়গায় এক তরুণ তার বান্ধবীর কাঁধে মাথা রেখে কিছু কথা বলছে। ওই বৃদ্ধ বলতে থাকেন, “এখনকার ছেলেমেয়েরা সকালে মোটরবাইক, স্কুটি নিয়ে চলে আসে। কেউ চলে যায় ওয়াচটাওয়ারের উপরে। কেউ আবার নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে যায়। শুধু ছেলেরা মিলে যারা আসে, তারা আবার একটু বেশি হইহুল্লোড় করে। নদীর ধারে বা ওয়াচটাওয়ারে বসে মদ খায়। খাবার খায়। তবে আমাদের মতো মহুয়া খেতে কাউকে বিশেষ দেখি না। এখন আগের মতো মহুয়া সব জায়গায় পাওয়া যায় না।”
কথা বলতে বলতে বারান্দা থেকে ঢুকে পড়ি ঘরে। এখনও এই বাংলোয় দুটোই ঘর। ঘরের ফ্যানের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে গেল ছবির সেই দৃশ্যের কথা। তখন গরম লাগলে হাওয়া খাওয়ার জন্য ছিল হাতে টানা পাখা। মাথার উপরে টাঙানো থাকত বিশাল পাখা, আর সেই পাখার সঙ্গে লাগানো দড়ি দেওয়ালের ফুটো দিয়ে গলিয়ে বার করা থাকত বারান্দায়। সেখান থেকে দড়ি ধরে টানলে পাখার হাওয়া খাওয়া যেত।
হাসতে হাসতে বৃদ্ধ বললেন, “যত বার এই ফ্যানটা দেখি, মনে পড়ে শেখরের কথা। আমাদের ঘরে দুলি আর কয়েক জন আদিবাসী মেয়েকে ঘরের কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল। কেউ ঘর সাফ করছিল, কেউ জল তুলছিল। একটা মেয়েকে ফিট করেছিল হাতপাখার দড়ি টানার জন্য। মনে পড়ে?”
বাথরুমে উঁকি মেরে দেখলাম, শাওয়ার-সহ কমোড বাথরুম। শাওয়ারের দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ হেসে বললেন, “এখন শাওয়ার চলে আসায় কুয়ো পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছে।”
দুটো ঘর বাদে রয়েছে একটি ডাইনিং রুমও। ওই ডাইনিং রুমে পাতা একটা বড় টেবিল। তার চার ধারে কয়েকটা চেয়ার পাতা। ডাইনিং রুমের এক দিকে কোনও শিল্পীর আঁকা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে নদীর ধারে অপর্ণা ও অসীমের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য। সেই কেচকি সঙ্গমে নদীর ধারে গাছতলা। দূরে পাহাড়।
হঠাৎ করে মোবাইল ফোনের কল আসার আওয়াজে চার দিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল। বৃদ্ধ বারান্দায় এসে বলেন, “ওই যে বাংলোর এই জায়গাটায় আমরা চার বন্ধু এসে প্রথমেই খবরের কাগজ পুড়িয়েছিলাম। খবরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতে চাইনি। এত বছর পরেও এই জায়গাটাতে নিস্তব্ধতাই ভাল মানায়।”
বারান্দা থেকে দেখা যায়, বাংলোর পাশের মাঠে খোলা জায়গায় দুই তরুণ-তরুণী পাশাপাশি বসে একমনে মোবাইল ফোন দেখে যাচ্ছে।সে দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ বলেন, “ঠিক ওখানেই আমাদের মেমরি গেম খেলা হয়েছিল। গোল হয়ে বসে আমরা চার বন্ধু, আর অর্পণারা দুই বোন। অপর্ণা আর জয়া।”
বৃদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “চলো, ওখানে গিয়ে বসা যাক। খেলবে না কি, আমার সঙ্গে মেমরি গেম? কিছু দিন আগে কলকাতার এক দল পর্যটক এসে দেখলাম আমাদের মতো করে মেমরি গেম খেলতে বসেছে।”
এই বলে বৃদ্ধ খুব জোরে জোরে হাসতে লাগলেন। তার পর একা একাই বাংলো থেকে নেমে ওই মেমরি গেমের জায়গার দিকে হাঁটতে লাগলেন। যেন ওঁর মধ্যে হঠাৎ একটা ব্যস্ততা চলে এসেছে। আর হাঁটতে হাঁটতেই মনে হল, উনি কুয়াশার মধ্যে মিলিয়ে গেলেন।
হঠাৎ একটা হাতের ঠেলায় ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। দেখি সৈকত আমার কাছে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছে। সৈকত বলল, “কী ব্যাপার, কুয়োতলায় এসে ঘুমিয়ে পড়লে? তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি কখন থেকে। কাল রাতে ট্রেনে কি ঠিকমতো ঘুম হয়নি?”
কলকাতা থেকে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ধরে গতকাল রাত দেড়টায় ডালটনগঞ্জে নেমেছি। স্টেশনের ধারেই একটা হোটেলে রাতটা কোনও রকমে কাটিয়ে আজ অনেক সকালে সৈকতের সঙ্গে মোটরবাইকে বেরিয়ে পড়েছি। একটু ক্লান্ত ছিলাম ঠিকই, কিন্তু ঘুম পেয়ে যাওয়ার মতো তো অবস্থা হয়নি। কুয়োপাড়ে বসে ঘুমিয়ে পড়লাম কী করে?
আমি সৈকতকে বললাম, “ওই বয়স্ক ভদ্রলোক কোথায়, যাকে দেখতে একদম ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির অসীমের মতো!”
সৈকত হাসতে হাসতে বলল, “তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র ওই চার বন্ধুর কেউই তো আর ইহজগতে নেই। তুমি কি ওঁদের দেখতে পেলে না কি? এখানে ঘুরছেন ওঁরা?”
সৈকত বলল, “এখন এই বাংলোয় তুমি, আমি আর ওই চৌকিদার কমলেশ ছাড়া আর কেউ নেই। চৌকিদার বলল, পর্যটকরা সবাই জঙ্গল সাফারিতে গেছে। চলো এই ফাঁকে বাংলোটা ঘুরে দেখবে।”
আমি আর কিছু বললাম না। বাংলোর সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই দেখলাম বারান্দার দেওয়ালে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র ফোটো ফ্রেম। ঘরগুলো ডবল বেড। মাথার উপর ফ্যান। এ সব তো একটু আগেই দেখলাম। অবিকল অসীমের মতো দেখতে ওই বৃদ্ধ দেখালেন বাংলোটা। সেটা কি স্বপ্ন? এখন কি বাস্তব? স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তব হুবহু মিলে যাচ্ছে কী করে? এই বাংলোর সব কিছুই যেন রহস্যে ঘেরা।
সৈকত বলল, “এখানে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। সোলার পাওয়ারে সব কিছু চলে। ঘরগুলোয় ফ্যান আছে, কিন্তু এসি নেই।”
ঘরগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে চলে এলাম ডাইনিং রুমে। ডাইনিং রুমে সেই অপর্ণা আর অসীমের নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ছবিটা।
বাংলো থেকে বেরিয়ে নদীর ধারে এলাম। এই শীতের সকালে কয়েক জন পর্যটককে দেখলাম নদীর ধারে কোয়েলের শীতল জল ছুঁয়ে দেখছে। আর সঙ্গে সঙ্গে জল থেকে পা সরিয়ে নিচ্ছে। কোয়েল নদী যেন ওই পর্যটককে বলছে, ‘আমাকে স্পর্শ করা কি এতই সহজ?’
জলের মধ্যে পাথরের টুকরো ফেললে যেমন হালকা ঢেউ ওঠে, সে রকমই কেচকি সঙ্গমের নিস্তব্ধতা ভেঙে একটু দূরে কোয়েল নদীর সেতু দিয়ে ট্রেন যাওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। এই ট্রেন যাওয়ার শব্দ অর্ধশতক আগেও এই কোয়েলের পাড়ে বসে ওই চার বন্ধু শুনেছিল। দেখলাম নদীর ধার দিয়ে কয়েক জন জনজাতি তরুণ-তরুণী হেঁটে যাচ্ছে। অনেক কিছু পাল্টে গেলেও সন্ধ্যায় সন্ধ্যাতারা ওঠার মতো, নদীর ধার দিয়ে জনজাতি মানুষদের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যগুলো যেন শাশ্বত।
একটু আনমনেই যেন সৈকতকে জিজ্ঞেস করলাম, “ওরা কোথায় যাচ্ছে?”
সৈকত বলল, “কাজে। এখন এখানকার জনজাতি মেয়েদের হাতে অনেক কাজ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে সরকার থেকে অনেকে ঋণ নিয়ে দোকানও করেছে।”
তার পর নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েদের দিকে তাকিয়ে সৈকত বলল, “তুমি কিন্তু সিনেমার দুলি আর তার সঙ্গে থাকা সেই মেয়েদের সঙ্গে এখনকার গ্রামের জনজাতি মেয়েদের মেলাতে যেয়ো না। কোয়েল নদী, এখানকার জঙ্গল, প্রকৃতি অনেকটা একই থাকলেও, পাল্টে গিয়েছে এখানকার মানুষদের জীবনযাত্রা। সিনেমায় দুলি আর তার বান্ধবীরা হাটে ফাঁকা ঝুড়ি নিয়ে কাজের আশায় বসে থাকত। আর বিকেল হলে জঙ্গলে মহুয়া ঠেকে গিয়ে শহুরে বাবুদের থেকে চেয়েচিন্তে মহুয়া খেত। মনে আছে, সিনেমায় ওই চার বন্ধুর মধ্যে হরিকে দুলি বলেছিল, ‘বাবু আমাকে কলকাতায় নিয়ে যাবি?’ সেই দুলিদের খোঁজ আর পাবে না।”
আমি বললাম, “এই গ্রামবাসীদের মধ্যে কেউ কি দেখেছিল পঞ্চাশ বছরেরও আগের, সেই ষাটের দশকে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র শুটিং? চলো না সে রকম যদি কারও সঙ্গে দেখা হয়! তা হলে তার সঙ্গে কথা বলে আসি। তার সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কথা শুনে আসি।”
সৈকত বলল, “গ্রামে সে রকম লোকের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু চলো ঘুরে আসি। কেচকি সঙ্গমে এই বাংলোর পাশেই কোয়েল নদীর ধারে জঙ্গল-ঘেরা একটা গ্রাম আছে। গ্রামটার নামও বোধহয় কোয়েল। শুনেছি ওখান থেকে শুটিংয়ের জন্য লোক নেওয়া হয়েছিল।”
অজানা ওই গ্রামের উদ্দেশে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। সৈকত বলল, “জঙ্গলের এই গ্রামগুলোতে অনেকেই কাজ করে। সরকার ছেলেদের থেকে মেয়েদের ঋণ দিতে বেশি পছন্দ করে। কারণ দেখা গিয়েছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ঋণ শোধ করার রেকর্ড অনেক বেশি ভাল।”
জঙ্গলের শুঁড়িপথ ধরেই এগিয়ে চলেছে মোটরবাইক। এ রকম জঙ্গলের পথ ধরেই পঞ্চাশ বছর আগে সেই চার বন্ধু হেঁটেছিল। আর হঠাৎ আবিষ্কার করেছিল একটা মহুয়ার ঠেক। আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি মোটরবাইকে। জঙ্গলের পথ ধরে যে সব মানুষেরা হেঁটে আসছেন, তাঁদের হাঁটার ভঙ্গি দেখেই বোঝা যায় ওঁরা কাজে যাচ্ছেন।
মহুয়ার ভাটিখানার বদলে জঙ্গলের রাস্তায় পেলাম কয়েকটা খাবারের দোকান। তার মধ্যে গ্রামেরই এক মোড়ে চা, শিঙাড়ার দোকান সাজিয়ে বসেছেন যে তরুণী, তাঁর নাম সবিতা ওঁরাও।
একটু পরেই সকালের জলখাবারের শিঙাড়া ভাজা হবে। তার জন্য আলু সেদ্ধ করে মাখার কাজে বসেছেন সবিতা। শিঙাড়ার তেল গরম হচ্ছে কড়াইয়ে। জানা গেল, এই চায়ের দোকান গত পাঁচ বছর ধরে তিনি চালাচ্ছেন। তাঁর স্বামী ডালটনগঞ্জে কাজ করেন। তাই দোকানটা তিনি একাই চালান।
সৈকত বলে, “দেখলে তো আজকের দুলিদের। ওরা বেশির ভাগই কাজে ব্যস্ত। কিছু অনুন্নত গ্রাম আছে ঠিকই, কিন্তু কেচকি আর তার আশপাশের মানুষদের মধ্যে খুব একটা গরিবি দেখতে পাবে না।”
গ্রামের ইতিউতি ঘুরতে থাকলাম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদও উঠেছে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা হল উমাশঙ্কর দয়াল নামে এক যুবকের সঙ্গে। উমাশঙ্কর বলেন, “আমার বাবা বেঁচে নেই। বাবার কাছে শুটিংয়ের অনেক গল্প শুনেছি। শুনেছি সিনেমায় যে নদীর পাড়ে মেলা বসানো হয়েছিল, সেই মেলায় গ্রামের অনেক মানুষকে সিনেমায় দেখা গিয়েছিল। তাদের সবাইকে ৫০ পয়সা করে দিয়েছিল শুটিং পার্টি। আমার বাবা মেলায় গ্রামের লোক জড়ো করার কাজ করেছিলেন।” এর পর কিছু ক্ষণ ভেবে আবার উমাশঙ্কর বলেন, “আর এক জনের বাড়ি যেতে পারেন। নাম পুনিত সিংহ। ড্রাইভারির কাজ করত। বাবার মুখে শুনেছি, শুটিংয়ের আয়োজনে নানা কাজে যে গাড়ি ব্যবহার করা হত, সেই গাড়ি চালাতেন পুনিতজি। বাবার বন্ধু ছিলেন উনি। কিন্তু ওঁর তো অনেক বয়স। কিছু কি মনে আছে তাঁর?”
কত বয়স পুনিতজির? প্রশ্ন করায় উমাশঙ্কর বললেন, “একশো সাত।”
শুনে চমকে উঠলাম। গ্রামের রাস্তা ধরে সোজা চলে এলাম পুনিতজির বাড়ি।
পাকা বাড়িতে কয়েকটা গরু বাঁধা। অনেক ডাকাডাকিতে এক বয়স্ক মানুষ বেরিয়ে এলেন। জানালেন, তিনি পুনিতজির ছেলে। ওঁর সঙ্গে দেখা করব বলতে তিনি জানালেন, “বাবা এখন তো কানে শুনতে পান না। ভাল করে চোখে দেখতেও পান না। দেখা করে কী করবেন? অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও ধরে ধরে নিজেই হাঁটেন।”
জিজ্ঞেস করলাম, “এঁর বয়স কি একশো সাত?”
পুনিতের ছেলে মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “পুনিতজির আধার কার্ড আছে? একটু নিয়ে আসুন না। সেখানে তো সরকারি ভাবে বয়স লেখা থাকবে।”
আধার কার্ড অবশ্য দেখাতে পারেননি পুনিতের ছেলে। তবে তাঁর বাবাকে ঘর থেকে বাইরে বারকরে এনেছিলেন। এই কড়া শীতে আরও যেন জবুথবু হয়ে গেছেন। দেখে মনে হল, বয়স একশো সাত না হলেও অতিবৃদ্ধ পুনিতের বয়স একশোর কাছাকাছি হতেই পারে। পুনিতের ছেলে বললেন, “বাবা সেই সময় গাড়ি চালাত। ওই সিনেমার শুটিংয়ে গাড়ি চালানোর কাজ করত। কিন্তু এর বেশি কিছু জানি না। বাবার এখন ও সব কিছু মনেও নেই। বাবার বয়স হয়েছে অনেক। শরীর খারাপ। কিন্তু গ্রামে তো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সেই ডালটনগঞ্জ।”
তবু তাঁর কানের কাছে গিয়ে পুনিতের ছেলে জোরে জোরে বলল, “বাবা এঁরা কলকাতা থেকে এসেছেন। কেচকির পাড়ে পঞ্চাশ বছরেরও আগে যে বাঙালিবাবু বাংলা সিনেমার শুটিং করেছিলেন, সেই শুটিংয়ের কথা কিছু তোমার মনে আছে?”
কথা শুনে পুনিতের চোখে-মুখে কোনও অভিব্যক্তি ফুটল না। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটা অস্পষ্ট আওয়াজ করলেন শুধু।
তত ক্ষণে আমাদের কথা শুনতে ভিড় করেছেন গ্রামের মানুষরা। কৌতূহলী কয়েক জন বয়স্ক মহিলার মুখে বলিরেখার ছাপ। পরনের কাপড়ে নেই দারিদ্রের ছাপ। মনে পড়ল ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে এক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দুলি হরিকে বলেছিল, তার এক বন্ধু কলকাতায় গিয়ে ব্লাউজ় কিনেছে। সেন্ট কিনেছে। ‘কলকাতা’ শব্দটা দুলিদের কাছে একটা ম্যাজিকের মতো ছিল।
জঙ্গলের মধ্যে লুকোনো ছোট্ট গ্রামের কাছ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কোয়েল নদী। ফের ওই বাংলোয় ফেরার সময় দেখলাম বেলা বাড়তে জঙ্গলের গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এ বার শীতের রোদ তরবারির ধারের মতো চকচক করছে। পর্যটকের ভিড় বেড়েছে ওই বাংলো ঘিরে কেচকি সঙ্গমে। শীতের রোদ মেখে নদীর ধীরে একটা পিকনিকের আমেজ।
মোটরবাইকে পিছনে বসে দেখলাম বাংলোর সিঁড়িটায় কয়েক জন বসে ছবি তুলছে। ওই সিঁড়ির আশপাশে যেন পর্যটকদের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র চার বন্ধু। অসীম, হরি, সঞ্জয় আর শেখর। ওদের তো দেখতে পাচ্ছে না পর্যটকরা। আমি কেন দেখতে পাচ্ছি ওদের? কিছু কি বলতে চাইছে ওরা?
মোটরবাইক জঙ্গলের রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে ডালটনগঞ্জের দিকে। মনে হল, ওই চার মূর্তি জঙ্গলের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে। আর পিছন থেকে বলছে, “আমরা এই নদীসঙ্গম, এই জঙ্গল আর এই বাংলো অনন্তকাল ধরে বুকিং করে রেখেছি। আবার এসো এক দিন। দেখা হবে ফের, এই অরণ্যে...”শুনে চমকে উঠলাম। গ্রামের রাস্তা ধরে সোজা চলে এলাম পুনিতজির বাড়ি।
পাকা বাড়িতে কয়েকটা গরু বাঁধা। অনেক ডাকাডাকিতে এক বয়স্ক মানুষ বেরিয়ে এলেন। জানালেন, তিনি পুনিতজির ছেলে। ওঁর সঙ্গে দেখা করব বলতে তিনি জানালেন, “বাবা এখন তো কানে শুনতে পান না। ভাল করে চোখে দেখতেও পান না। দেখা করে কী করবেন? অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও ধরে ধরে নিজেই হাঁটেন।”
জিজ্ঞেস করলাম, “এঁর বয়স কি একশো সাত?”
পুনিতের ছেলে মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “পুনিতজির আধার কার্ড আছে? একটু নিয়ে আসুন না। সেখানে তো সরকারি ভাবে বয়স লেখা থাকবে।”
আধার কার্ড অবশ্য দেখাতে পারেননি পুনিতের ছেলে। তবে তাঁর বাবাকে ঘর থেকে বাইরে বারকরে এনেছিলেন। এই কড়া শীতে আরও যেন জবুথবু হয়ে গেছেন। দেখে মনে হল, বয়স একশো সাত না হলেও অতিবৃদ্ধ পুনিতের বয়স একশোর কাছাকাছি হতেই পারে। পুনিতের ছেলে বললেন, “বাবা সেই সময় গাড়ি চালাত। ওই সিনেমার শুটিংয়ে গাড়ি চালানোর কাজ করত। কিন্তু এর বেশি কিছু জানি না। বাবার এখন ও সব কিছু মনেও নেই। বাবার বয়স হয়েছে অনেক। শরীর খারাপ। কিন্তু গ্রামে তো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সেই ডালটনগঞ্জ।”
তবু তাঁর কানের কাছে গিয়ে পুনিতের ছেলে জোরে জোরে বলল, “বাবা এঁরা কলকাতা থেকে এসেছেন। কেচকির পাড়ে পঞ্চাশ বছরেরও আগে যে বাঙালিবাবু বাংলা সিনেমার শুটিং করেছিলেন, সেই শুটিংয়ের কথা কিছু তোমার মনে আছে?”
কথা শুনে পুনিতের চোখে-মুখে কোনও অভিব্যক্তি ফুটল না। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটা অস্পষ্ট আওয়াজ করলেন শুধু।
তত ক্ষণে আমাদের কথা শুনতে ভিড় করেছেন গ্রামের মানুষরা। কৌতূহলী কয়েক জন বয়স্ক মহিলার মুখে বলিরেখার ছাপ। পরনের কাপড়ে নেই দারিদ্রের ছাপ। মনে পড়ল ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে এক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দুলি হরিকে বলেছিল, তার এক বন্ধু কলকাতায় গিয়ে ব্লাউজ় কিনেছে। সেন্ট কিনেছে। ‘কলকাতা’ শব্দটা দুলিদের কাছে একটা ম্যাজিকের মতো ছিল।
জঙ্গলের মধ্যে লুকোনো ছোট্ট গ্রামের কাছ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কোয়েল নদী। ফের ওই বাংলোয় ফেরার সময় দেখলাম বেলা বাড়তে জঙ্গলের গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে এ বার শীতের রোদ তরবারির ধারের মতো চকচক করছে। পর্যটকের ভিড় বেড়েছে ওই বাংলো ঘিরে কেচকি সঙ্গমে। শীতের রোদ মেখে নদীর ধীরে একটা পিকনিকের আমেজ।
মোটরবাইকে পিছনে বসে দেখলাম বাংলোর সিঁড়িটায় কয়েক জন বসে ছবি তুলছে। ওই সিঁড়ির আশপাশে যেন পর্যটকদের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র চার বন্ধু। অসীম, হরি, সঞ্জয় আর শেখর। ওদের তো দেখতে পাচ্ছে না পর্যটকরা। আমি কেন দেখতে পাচ্ছি ওদের? কিছু কি বলতে চাইছে ওরা?
মোটরবাইক জঙ্গলের রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে ডালটনগঞ্জের দিকে। মনে হল, ওই চার মূর্তি জঙ্গলের মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে। আর পিছন থেকে বলছে, “আমরা এই নদীসঙ্গম, এই জঙ্গল আর এই বাংলো অনন্তকাল ধরে বুকিং করে রেখেছি। আবার এসো এক দিন। দেখা হবে ফের, এই অরণ্যে...”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy