ছবি: রৌদ্র মিত্র
সে বড় সুখের সময়। বিশ্বের অন্যত্র না হলেও ভারতে তো বটেই। ১৮৫৩-এর সেই গ্রীষ্মে ভারতে প্রথম রেল চলল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নয়নের মণি ভারত তখন যাকে বলে ‘হট অ্যান্ড হ্যাপেনিং’। ভারতের রেল চলাচল তখন লন্ডনেও বড় সংবাদ। ‘লন্ডন ইলাসট্রেটেড নিউজ়’-এর মতে পলাশির জয়ের থেকেও বড় এই ঘটনা। বড় তো বটেই, রেলের সাহায্যে ভারতে আরও পোক্ত হবে ব্রিটিশ শাসন। ভারতীয় অর্থনীতিতে বিপুল পরিবর্তন আনবে রেল। শোষণের পথটি হবে আরও সহজ। কিন্তু সে অন্য গল্প। আমাদের গল্প অন্য। এক মানুষকে নিয়ে। এই ‘হট অ্যান্ড হ্যাপেনিং’ ভারত যাকে ডাকছে।
স্টিলের ট্রাঙ্ক সঙ্গে নিয়ে ঠিক এই সময়ে ভারতে এসে উপস্থিত হলেন উইলিয়াম জেমস হার্শেল। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। পরিবার জুড়ে একাধিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। সবার আগে নাম করতে হয়, জেমসের ঠাকুরদা, স্যর উইলিয়াম হার্শেলের। সৌরজগতের ইউরেনাস গ্রহটি আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাঁরই। ১৭৮১ সালে এই গ্রহটি খুঁজে পান উইলিয়াম। বাবা স্যর জন ফ্রেডরিক উইলিয়াম হার্শেলও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতজ্ঞ। কিন্তু বাবার খুব প্রিয়পাত্র ছিলেন না জেমস। ছিলেন বেশ দুরন্তই। নিজের এই ছেলেকে ‘মাই আনরুলি বয়’ বলেই সম্বোধন করতেন জন। বাবা বুঝেছিলেন আর যা-ই হোক, ছেলের দ্বারা জ্যোতির্বিজ্ঞান হবে না। বাবার পরামর্শ মেনে ও পথ মাড়াননি জেমস। বরং প্রশাসনিক কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন হেলিবেরির ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ’-এ। সেখানে ‘ইন্ডিয়ান রাইটার শিপ’ পোগ্রামে পাশ করার পরে সোজা ভারতে। আরও ঠিক করে বললে ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ক্যাডার’-এ। ঠান্ডা শীতল দেশ ছেড়ে সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা এই বাংলায়।
সদ্য কুড়ি পেরিয়েছেন জেমস। প্রথম পোস্টিং হল মালদহ, অ্যাসিস্ট্যান্ট কালেক্টর অ্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট পদে। কাজ কী? গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেরিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ। পাশাপাশি, প্রয়োজনে বিচারের কাজও করা। কোনও গ্রামে বিচারপ্রার্থী থাকলে সেখানে বড় গাছ, যেমন বটের ছায়ায় বসত এই বিচারসভা। অন্য দিকে, ভারতের অবস্থা পাল্টেছে। ভারত জুড়ে তখন সিপাহি বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডের হাত ধরে বিদ্রোহের শুরু, একে একে কানপুর, দিল্লি, লখনউ, ঝাঁসি জুড়ে তা ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ল। বিদ্রোহী সিপাইদের হাতে ব্রিটিশ অফিসার, অধস্তন কর্মীদের হত্যার একের পর এক ঘটনা সামনে আসতে থাকল। ব্রিটিশ মহিলা ও শিশুদের হত্যার খবরে লন্ডনে শোরগোল পরে গেল। বদলা নেওয়ার আওয়াজ উঠল। ভারতে ব্রিটিশ অফিসারদের হাতে ‘লাইসেন্স টু কিল’-এর অধিকার তুলে দেওয়া হল। যেখানে খুশি, যখন ইচ্ছে কোনও ভারতীয়কে, বাদামি চামড়ার মানুষকে হত্যা করা যাবে। ফলে বদলা হল প্রবল। ব্রিটিশ অফিসারদের স্মৃতিচারণায়, চিঠিতে সেই বদলার আভাস মেলে।
জেমসও সেই বদলার সঙ্গী হতে চান। কিন্তু যেখানে তিনি কর্মরত, তা প্রায় নিরুপদ্রব। এই শান্ত পরিবেশ জেমসকে হতাশ করে। আত্মীয়কে লেখা চিঠিতে সেই হতাশার কথা থাকে। তবে কিছু উত্তেজক মুহূর্ত এসেছিল। এক বার রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসে ৪৮ জন ভারতীয় সিপাইয়ের সামনাসামনি পড়ে গিয়েছিলেন জেমস। নিজের কাছেও অস্ত্র ছিল না। কথায় ভুলিয়ে ওই সিপাইদের আত্মসমর্পণে রাজি করান জেমস। জেমসের এই ‘ডিপ্লোম্যাসি’ ব্রিটিশ শাসকের নজরে পড়েছিল। সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতের শাসন যে আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে রাখা যায় না, তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। পাশ হয়ে গেল গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়ার চার্টার। শুরু হল রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন। হেলিবেরির ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ’ বন্ধ হয়ে গেল। তবে সে কলেজ থেকে পাশ করা বেশ কয়েক জনকে নতুন ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিস-এ নেওয়া হল। জেমসও ছিলেন সেই মনোনীতদের দলে। পোস্টিং হল জঙ্গিপুর মহকুমায়।
এর মধ্যে বাংলায় জেমসের পাঁচ বছরে কেটে গিয়েছে। বাংলায় কী ভাবে প্রশাসন চালাতে হয় তার প্রাথমিক আন্দাজ হয়েছে। কিন্তু সিপাহি বিদ্রোহের পরে প্রশাসন চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সিপাহি বিদ্রোহ শাসক ব্রিটিশ আর শাসিত ভারতীয়দের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গাটুকু তলানিতে নিয়ে গিয়েছিল। ছোট ব্যবসায়ী, ছোট মাল সরবরাহকারী, কৃষকদের সঙ্গে প্রতি দিন নানা কাজ থাকত জেমসের। কিন্তু এদের আর বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কারণ, এঁদের একটি অংশ নানা ভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। কোম্পানির শাসনের সময়ে, নানা রকম লোক ঠকানোর উপায় এরা শিখে নিয়েছিল। সেগুলি এ বার পাল্টা ইংরেজ শাসকদের উপরে ব্যবহার শুরু করল। ফলে দিনে দিনে জেমসের কাজ চালানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরিবার থেকে আসা জেমসের কাছে এমন পরিস্থিতি ছিল অকল্পনীয়। দিনের পর দিন, একা, বাংলার গরমে কঠিন পরিশ্রম করেও জেমসের মনে হচ্ছিল কিছুই আর ভাল হবে না। হেলিবেরির সহপাঠীদের কাছে লেখা চিঠিতে সেই হতাশার কথা প্রকাশ করেছেন জেমস। জেমসের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছিল নকল ধরতে। জমি, বাড়ি, সম্পত্তির কাগজপত্র আকছার নকল করা হত। এই নকল ধরতে ধরতেই জেমস রীতিমতো জেরবার হয়ে যেতেন।
১৮৫৮-এর জুলাই মাস। চূড়ান্ত বিরক্ত জেমস। জঙ্গিপুরের জঙ্গল কেটে নতুন রাস্তা তৈরি হবে। এর জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। নিস্তা গ্রামের রাজ্যধর কোঁয়াই দরপত্র জমা দিয়েছে। তার সঙ্গেই কাজের জন্য চুক্তি হবে। কিন্তু রাস্তা তৈরির নামে ঠকাবে না তো রাজ্যধর? চিন্তিত জেমস। এমন সময়ে তাঁর মাথায় এক নতুন চিন্তা এল। চুক্তিপত্রে সই-এর পাশাপাশি রাজ্যধরের হাতের ছাপও রেখে দেওয়ার। কেন এমন চিন্তা এসেছিল। অনেক দিন পরেও সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি জেমসও। তবে ছোটবেলায় টমাস বিউকের লেখা পাখি বিষয়ক একটা বই পড়েছিলেন তিনি। টমাস তাঁর বইয়ে আঙুলের ছাপ রাখতেন। তার প্রভাব থাকতে পারে। তবে এমন ছাপ নেওয়ার প্রথা বাংলায় অনেক দিন আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। নিরক্ষরদের টিপসই নেওয়া হত। মৃত্যুর পরে পায়ের, হাতের ছাপ রেখে দেওয়ার প্রথাও ছিল। জ্যোতিষীরাও হাতের ছাপ রেখে দিতেন। রাজ্যধরকে খানিক ভয় দেখাতেই এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন জেমস। যাতে পরে রাজ্যধর চুক্তিলঙ্ঘন করতে সাহস না পায়। রাজি হয়ে যায় রাজ্যধর। চুক্তিপত্রের পিছনে কালি আর তেলের মিশ্রণে ডুবিয়ে ডান হাতের ছাপ তুলে রাখা হয়।
না, রাজ্যধর চুক্তি লঙ্ঘন করেননি। বরং আবার কাজের জন্য রাজ্যধরের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। তখনও রাজ্যধরের হাতের ছাপ নিয়ে রাখেন জেমস। প্রতিটি মানুষের হাতের ছাপ যে আলাদা হয়, তা কি জানতেন জেমস? না, তখনও জেমস সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছননি। তবে আন্দাজ ছিল। এবং তা ক্রমেই জোরালো হতে থাকে। তাই চুক্তিপত্রে হাতের ছাপ নেওয়াকে নিয়মে পরিণত করলেন জেমস। হুগলি, মেদিনীপুর, আরা— যেখানে দায়িত্বে ছিলেন সেখানে প্রায় সবার হাতের ছাপ তুলে রাখতে শুরু করলেন। বাদ গেলেন না, কর্মচারীরাও। সরকারি নিয়ম না থাকলেও জেমস কাজ চালিয়ে গেলেন। সঙ্গে কাজ কেমন চলছে দেখতে গেলে, কেউ দেখা করতে এলে— জেমসের কাছে হাতের ছাপ রেখে যাওয়ার দাবি মেটাতে হত। শুধু সাধারণ মানুষই নন, এ দাবি ফেরাতে পারেননি কৃষ্ণনগরের তৎকালীন মহারাজও। শুধু এক বারই নয়, কয়েক বছর বাদে বাদে একই ব্যক্তির হাতের ছাপ সংগ্রহ করে রাখতে শুরু করেন জেমস। এ ভাবেই তাঁর কাছে হাতের ছাপের বিপুল তথ্যভান্ডার তৈরি হয়ে যায়। তথ্য বিশ্লেষণ করে জেমস আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলেন প্রত্যেকের হাতের ছাপ আলাদা। নিজের ভাবনা পরীক্ষা করার জন্য কলকাতার নাম করা কয়েক জন শিল্পীকে হাতের ছাপ নকল করতে বলেন জেমস। কিন্তু তাঁরা সফল হয়নি। জেমসের এই চেষ্টা অন্য ভাবে ফল দিতে থাকে। এই সময়ে হুগলির আশপাশে দলিল, দস্তাবেজ নকল করার অভিযোগ কমতে থাকে। কিন্তু হাতের ছাপ কী ভাবে পরে কাজে লাগবে সে সম্পর্কে জেমসের কোনও ধারণা ছিল না।
১৮৬০ সালে নদিয়ায় বদলি হয়ে যান জেমস। নদিয়ায় তখন নীল বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। এক শ্রেণির ইংরেজ জোর করে চাষিদের নীল চাষে বাধ্য করছে। চলছে অকথ্য অত্যাচার। এক বার অর্থ দাদন নিয়ে নীল চাষ শুরু করলে আর নিস্তার নেই। নীল চাষিদের নীল চাষে বাধ্য করতে নানা নকল দলিল, দস্তাবেজ ব্যবহার করতেন এই ইংরেজ ব্যবসায়ীরা। নদিয়ার দায়িত্ব নিয়ে এই সমস্যার সামনে পড়েন জেমস। মে, ১৮৬০ এই পরিস্থিতি সামলাতে নীল কমিশন তৈরি করে ব্রিটিশ সরকার। সেখানে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে চাষ সংক্রান্ত দলিল, চুক্তি রেজিস্ট্রেশনের পক্ষে মত দেন জেমস। কিন্তু তার সেই প্রস্তাবে সে সময় কমিশন সায় দেয়নি।
তবে জেমসের কাজ থেমে থাকেনি। এর মধ্যে নিজের দেশেও জেমসের কাজ কিছুটা পরিচিতি পেয়েছে। জেমস চাইছিলেন সব সরকারি কাজে হাতের ছাপ ব্যবহার করা হোক। ১৮৭৭-এ হুগলির ম্যাজিস্ট্রেট আর কালেক্টরের দায়িত্ব পান জেমস। ফলে হুগলির জেল, আদালত, রেজিস্ট্রেশন অফিস— সবই জেমসের অধীন। নিজের তত্ত্বকে কাজে লাগালেন জেমস। শুরু করলেন জেল দিয়ে। বন্দিদের কাছ থেকে হাতের ছাপ জোগাড় করলেন। সেই সময়ে বন্দিদের একাংশের নাম ভাঁড়িয়ে তার হয়ে অন্য কেউ জেল খাটতেন। জেমসের উদ্দেশ্য ছিল এই লোকদের চিহ্নিত করা। পাশাপাশি আদালতে অনেকে নাম ভাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিত। ফলে সাক্ষীদের হাতের ছাপ রাখার নির্দেশ দিলেন জেমস। একই ভাবে সম্পত্তি কেনা-বেচার সময়ে দলিলে হাতের ছাপ রাখাও চালু করলেন।
বড় ধাক্কা লাগল ১৮৮০-র অক্টোবরে। ‘নেচার’ পত্রিকায় একটি নোট চোখে পড়ল জেমসের। তাঁরই স্বদেশীয় হেনরি ফাউন্ডস সেই নোটে দাবি করেছেন, হাতের ছাপ থেকে কাউকে শনাক্ত করার ভাবনাটি তাঁর। তিনি এ নিয়ে অনেক কাজও করেছেন। তাঁর কৃতিত্ব অন্য কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে দেখে পাল্টা চিঠি দিলেন জেমস। পরের মাসেই তা প্রকাশ করল ‘নেচার’। শুরু হল জোর বিতর্ক। নিজের ধারণা কী ভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা দেখানোর জন্য হেনরি তার কাজ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড-এর হয়ে কাজ করা শুরু করলেন। অন্য দিকে, জেমস তার কাজের স্বীকৃতির জন্য, এবং হাতের ছাপ গ্রহণ প্রথা সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য বাংলার সরকারের কাছে আবেদন করলেন। হেনরির কাজকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সে ভাবে স্বীকৃতি না দিলেও, তিনি ব্রিটিশ লেখকের আর্থার কোনান ডয়েলের চোখে পড়ে যান। শার্লক হোমস-এর গল্পে হেনরির ধারণাকে ব্যবহার করেন। ধীরে ধীরে নানা কাজেই হাতের ছাপ ব্যবহার শুরু হয়।
জেমসের কাজকে হাতে তুলে নেন এডওয়ার্ড রিচার্ড হেনরি, বাংলা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল। রাইটার্স বিল্ডিং-এ অ্যানথ্রোপমেট্রি বিভাগ চালু করেন। সেখানেই জেমসের কাজ কী ভাবে প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। এই বিভাগের জন্য দু’জন বাঙালিকে নিয়ে আসেন এডওয়ার্ড। এক জন আজিজুল হক। অন্য জন, হেমচন্দ্র বসু। এই দুই বাঙালি সাব ইন্সপেক্টরের হাত ধরে জেমসের হাতের ছাপের তত্ত্ব পুলিশি কাজে বহুল ব্যবহার শুরু হয়। অনেক কিছুর মতোই হাতের ছাপ থেকে ব্যক্তিকে শনাক্ত করার আবিষ্কার কোনও এক জনের কৃতিত্ব নয়, তবে এই পথে জেমসের অবদান ভোলার নয়। আরও গর্বের বিষয়, এই বাংলায় বসেই এমন কাজ করে যেতে পেরেছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy