Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Picnic

দেশে বিদেশে বার বার বদলেছে বনভোজন

ভিক্টোরীয় আমলের দস্তুর, এক এক জন আনবে এক-একটি পদ। যেমন দেখা যায় ‘পথের পাঁচালী’-র কুলুই চণ্ডীর ব্রতেও। ব্রিটিশদের হাত ধরে নতুন করে পিকনিক-প্রীতি ছড়িয়েছিল বাঙালির মনে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ বাঙলির চড়ুইভাতিতে আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার প্রভাব।

একত্রভোজ: এলিফ্যান্টা কেভস-এ সাহেব-মেমদের পিকনিক, ১৮৬৫। ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমন্স।

একত্রভোজ: এলিফ্যান্টা কেভস-এ সাহেব-মেমদের পিকনিক, ১৮৬৫। ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমন্স।

অমিতাভ পুরকায়স্থ
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৬
Share: Save:

উইথবার্ন-এর দিকে হাঁটতে হাঁটতে পথে ডরোথি ও উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের। তাঁরা তিন জন একটা টিলার উপর থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখলেন। পাশে নদীর চরে জেগে থাকা একটা পাথরের উপর খানিক বিশ্রাম নিয়ে ডিনার সারলেন। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজ পড়লেন তাঁদের কবিতা। ডরোথি কবিতা ও প্রকৃতির নিরবচ্ছিন্ন সান্নিধ্য উপভোগ করলেন। তাঁর মনে হল যেন এটাই স্বর্গ। ১৮০২ সালের ৪ মে ডরোথি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন এই অভিজ্ঞতার কথা। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে পান-ভোজনের আয়োজনও যেন জড়িয়ে গিয়েছিল রোম্যান্টিক আন্দোলনের সঙ্গে। এই পথ ধরেই উনিশ শতকে, বিশেষ করে ভিক্টোরিয়ান যুগে ব্রিটিশ সংস্কৃতির একটি বিশেষ চিহ্ন হয়ে উঠল এই খোলা জায়গায় খাওয়াদাওয়ার আয়োজন, যার নাম পিকনিক।

মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমল থেকেই পিকনিকের এই সর্বজনীন চেহারা দেখা গেলেও, ধারণাটা প্রচলিত ছিল বহু দেশে। তবে তা নির্দিষ্ট আকার নিতে শুরু করে আঠারো-উনিশ শতক থেকেই। ডরোথি ওয়ার্ডসওয়ার্থ যে বছর তাঁর ডায়েরিতে উইলিয়াম ও কোলরিজের সঙ্গে বেড়ানোর অংশটি লিখেছেন, সেই বছরই ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকা ‘পিকনিক’-এর সংজ্ঞা বোঝাতে বলছে, এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের সকলকেই কোনও একটি পদ নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। পুরো মেনু ঠিক করার পর, কে কোন পদ আনবে সেটা নির্দিষ্ট করা হবে লটারির মাধ্যমে।

এই আয়োজন যে সমাজের উঁচুতলার মানুষের জন্যই সংরক্ষিত, ভিক্টোরীয় যুগে পিকনিকের মেনু দেখলে তা বোঝা যায়। ১৮৬১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় মিসেস ইসাবেলা বিটন-এর গার্হস্থ্য ব্যবস্থাপনার উপর বই। পরে বইটির একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রথম সংস্করণ ও ১৯০৬ সালের সংশোধিত সংস্করণে পিকনিকের এলাহি মেনুর তুলনা করলে প্রায় অর্ধশতক ধরে ব্রিটেনে পিকনিকের খাবারের একটা ধারণা পাওয়া যায়। প্রথম মেনুতে রোস্ট, সেদ্ধ ছাড়াও বিফ, হ্যাম, ভেড়া, ফাউল, হাঁস এমনকি পায়রাও স্থান করে নিয়েছিল ডজনখানেক মাংসের পদের মধ্যে। সঙ্গে থাকত স্যালাড, লেটুস, শসা। ছিল ক্রিসমাস পুডিং, ক্যাবিনেট পুডিং। কেকের তালিকায় চিজ় প্লাম ও স্পঞ্জ কেক। এ ছাড়াও পাউরুটি, বিস্কুট ও কয়েক ঝুড়ি তাজা ফল। পিকনিকে চা-পানের ব্যবস্থা ছিল। তৈরি করার ঝামেলার জন্য কফি বারণ ছিল। এর তুলনায় ১৯০৬ সালের দু’টি মেনু বেশ সংক্ষিপ্ত। একটি মেনুতে বিফ, ল্যাম্ব ও চিকেনের পাঁচটি পদ। অন্য মেনুটিতে দু’রকম করে হ্যাম ও চিকেনের সঙ্গে এক পদের বিফ। ঢুকেছিল স্যামন মাছ ও বড় চিংড়ি। সঙ্গে ফ্রুট টার্ট, চিজ় কেক, জেলি, ক্রিম। ব্রেড, বিস্কুট, তাজা ফল, স্যালাড থাকলেও বৈচিত্র তুলনায় কম।

মিসেস বিটন এর সঙ্গে যোগ করেছিলেন ওয়াইন, বিয়ার, সোডা-ওয়াটার, লেমনেড, প্লেট, ছুরি, চামচ, কাঁটা-চামচ, গ্লাস, টেবলক্লথ, গোলমরিচ, নুন, মাস্টার্ড, ভিনিগার, চিনি, কর্ক স্ক্রু, শ্যাম্পেন ওপেনার-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসের বিশাল তালিকা। সে যুগে বিভিন্ন রকম বাস্কেট, ক্যারিয়ার ও রান্নার সরঞ্জাম আবিষ্কার হয়েছিল বয়ে নিয়ে যাওয়ার ও ঘরের বাইরে খাওয়াদাওয়ার সুবিধের জন্য। ভিক্টোরীয় ও তার পরবর্তী যুগে ব্রিটিশ সমাজের উঁচু তলায় পিকনিকের জনপ্রিয়তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এই বইগুলি থেকে।

শুধু ব্রিটিশ গ্রীষ্মের সুন্দর আবহাওয়াতেই পিকনিকের জনপ্রিয়তা সীমাবদ্ধ রইল না। ভারত-সহ যে দেশেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার হল, সেখানেই ছড়াল পিকনিক সংস্কৃতি। জঙ্গলের ধারে বা পাহাড়ের সানুদেশে পিকনিকের তাঁবু পড়তে শুরু করল। সেখানেও হাজির চিনেমাটির দামি পাত্র থেকে পারস্যের গালিচা। শিমলা পাহাড়ে এক সফরসূত্রে এই প্রসঙ্গটি স্মৃতিকথায় উল্লেখ করে লেডি ডাফরিন লিখেছেন, চার দেওয়ালের বাইরে লাঞ্চ করতে ব্রিটেনে যেটুকু অসুবিধে হত, ভারতে লাটসাহেবদের যাতে সেটুকুও কষ্ট করতে না হয়, সে দিকে প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজর থাকত। আরও লিখেছেন, এ ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশের খাওয়াদাওয়াও হত রীতিমতো ব্যাঙ্কোয়েট-সুলভ। চেয়ার-টেবিল থেকে রুপোর বাসনপত্র পর্যন্ত সমস্ত বিলাসিতা মজুত থাকত। ভিসেরিন ডাফরিন-এর লেখা থেকে আমরা বুঝতে পারি, পিকনিকও হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশ রাজের ভাবমূর্তি তৈরির এক প্রকল্প, যার মাধ্যমে মোগল সাম্রাজ্যের ন্যায্য উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রজাদের কাছে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছিল ব্রিটিশরা।

ব্রিটিশ ভারতে ঔপনিবেশিক সমৃদ্ধির ছবি আঁকতে পিকনিকের প্রসঙ্গ অবধারিত। ভারতের পটভূমিতে ১৯২০-র দশকের ঘটনাক্রমের উপর লেখা রুথ প্রওয়ার ঝাবওয়ালা-র ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’ উপন্যাসে পিকনিকের মেনুতে রোস্টেড চিকেন, কোয়েল, পটেড শ্রিম্প-এর উল্লেখ আছে। ই এম ফরস্টার-এর ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’ উপন্যাসের ঘটনাক্রমেও পিকনিক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেও পিকনিকের জন্য শয়ে শয়ে টাকা খরচের কথা বলছেন আয়োজক ডাক্তার আজিজ।

অনেক সময় পিকনিকের সঙ্গে পাখি শিকারের মজাও জুড়ে দিতেন সাহেবরা। কয়েকটা হাঁস মারতে পারলেই শালতি বেয়ে সেগুলি উদ্ধারের জন্য হাজির থাকত অনুচররা। সেই সব পাখির ঝলসানো মাংস বা ‘গেম মিট’ পিকনিকের মেনুকে আরও খোলতাই করত। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান রান্নার বইগুলোয় এ সব মাংস রান্নার রেসিপি ঢুকে পড়েছে উনিশ শতকের শেষ থেকেই। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে এই মাংস পাওয়া যায় বলে খবর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রজননকালে যে এই সব পাখির মাংস বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৯১৩-তে প্রকাশিত ‘অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কুইজ়িন’-এর লেখিকা কনস্টান্স ই গর্ডন।

শিল্প-সংস্কৃতির নানা পরিসরের মতোই, খাদ্য সংস্কৃতিতেও ব্রিটিশ ও ভারতীয় উপাদানের আদানপ্রদান ঘটেছে। পিকনিকের খানাও তার বাইরে নয়। স্যান্ডউইচে ঢুকে পড়ল ইলিশ, ফ্রেঞ্চ মাস্টার্ডের পাশাপাশি মেনুতে স্থান করে নিতে শুরু করল হরেক রকম ভারতীয় আচার। সাহেবদের পিকনিকের অতি জনপ্রিয় যে পদটির কথা আলাদা করে বলতে হয়, তা হল ‘স্কচ এগ’। মাংসের কিমার মধ্যে সেদ্ধ ডিম ভরে পুরো জিনিসটা ভাজা হয়। খাদ্য-ঐতিহাসিক অ্যালেন ডেভিডসন মনে করেছেন, ‘নার্গিসি কোফতা’র প্রেরণাতেই তৈরি হয়েছিল এই খাবার।

প্রশাসনিক বা বাণিজ্যিক সংস্থার বড়কর্তারা ছাড়াও ভারতে কাজ করতেন বহু ব্রিটিশ এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। এঁদের মধ্যে ছিলেন সেনা ও রেল কর্মী, চা-বাগানের কর্তা, বাণিজ্যিক সংস্থার অফিসার। এঁরা কিন্তু ব্রিটেনের মধ্যবিত্তদের মতোই ঘাসের উপর টেবলক্লথ পেতে তার উপর পিকনিক বাস্কেট থেকে খাবার বার করে খেতেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষ কয়েক দশকে শৈশব কাটানো অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের স্মৃতিকথার সঙ্কলন ‘লাস্ট চিলড্রেন অব দ্য রাজ’ বইটির দু’টি খণ্ডে এমন ছবির ছড়াছড়ি। বিশেষ করে মনে দাগ কাটে গ্রামোফোন কোম্পানির সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট নর্ম্যান ইনেস-এর মেয়ে হ্যাজেল ইনেস-এর ভাষ্য, যেখানে তাঁরা তাঁদের দমদমের বাংলোর কাছে পিকনিক করতেন বন্ধুদের নিয়ে। আয়া বা গৃহ-সহায়কেরা থাকতেন সাহায্যে। সামগ্রিক ভাবে আয়োজন হত আটপৌরে। এ সব পিকনিকে সাধারণত পরিবেশিত হত নানা রকম স্যান্ডউইচ, মাংসের পাই, কাটলেট, স্যালাড, ফলের টার্ট, কেক, বিস্কুট, লেমনেড, চা ইত্যাদি।

ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে কলকাতায় ও সারা বাংলায় পিকনিক-সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। এ শহরের বাবুদের চিনে নেওয়ার অন্যতম লক্ষণ ছিল ‘অষ্টাহে বনভোজন’। অবশ্য সেই উদ্যোগের পুরোটাই ছিল বাবুদের লোক-দেখানোর চাল। বিদেশি প্রভাবের বাইরে, এ দেশের লৌকিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বহু কাল ধরে প্রচলিত বাড়ির বাইরে খাওয়াদাওয়ার প্রথা, কুলুই চণ্ডীর ব্রত বা পৌষ সংক্রান্তির পরের দিনের ‘মাঠরান্না’ যেমন। তবে পিকনিকের সঙ্গে এই সব ব্রত উদ্‌যাপনের অঙ্গ হিসেবে প্রাকৃতিক পরিবেশে ভোজনের একটি মূল পার্থক্য আছে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ থেকে খুব সুন্দর ভাবে তা বোঝা যায়। কুলুই চণ্ডীর ব্রতের বনভোজনে সকলে নিজের নিজের জিনিস নিয়ে যাওয়ার রীতি। অন্যরা ভাল চাল, ডাল, ঘি, দুধ নিয়ে আসে, আর অপু-দুর্গার মা বার করেন মোটা চাল, মটরডাল বাটা আর দুটো বেগুন। পাশে বসে ভুবন মুখুজ্যেদের সেজ ঠাকরুনের ছেলেমেয়েরা আখের গুড়ের পাটালি আর কলা দিয়ে মেখে দুধভাত খায়। নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য সর্বজয়ার মন কেমন করে। বৈষম্যের এই ছবির ঠিক পাশাপাশি আমরা দেখি, কালীনাথ চক্কোত্তির মেয়ে বিনি শুধু শ্রমদানের বিনিময়ে চড়ুইভাতির পূর্ণ শরিক হতে পারে। সকলেই আনন্দ করে ভাত আর বেগুনভাজা খায়। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এড়িয়ে সকলে মিলে আনন্দের অংশীদার হওয়াই বনভোজনের বৈশিষ্ট্য।

এই সূত্রেই সাহেবদের পিকনিক আর বাঙালির সাবেক বনভোজনের মধ্যে আর একটি ফারাক চোখে পড়ে। সাহেবি পিকনিকের মূল আয়োজনটাই ‘অফ-সাইট’, বাড়ি থেকে রেঁধে নিয়ে যাওয়া। ছোট স্টোভে চা তৈরি, বা শাফিং ডিশ-এর (বুফেতে পরিবেশনের সময় খাবারের নীচে অল্প আগুন জ্বলার পাত্র) সাহায্যে খুব সামান্য কিছু রান্না করা হয় পিকনিকের জায়গায়। রান্নার পরিবর্তে পিকনিকের সময়টা তাঁরা কাটান খেলাধুলায়, সামাজিকতায় বা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। অন্য দিকে আমাদের পিকনিকের আয়োজনে রান্না করাটাই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রাখে।

‘চোখের বালি’ উপন্যাসে বিশুদ্ধ বাঙালি বনভোজনের যে উদাহরণ রেখেছেন রবীন্দ্রনাথ, সেখানে দেখি সেই ছবি। গৃহ-সহায়করা জিনিসপত্র নিয়ে আসতে দেরি করছে, বিহারী কেরোসিন-চুলায় জল গরম করে সবার হাতে গরম চা আর মিষ্টান্ন ধরিয়ে দিল। তার পর বাক্স থেকে বেরোল সব সরঞ্জাম— চাল-ডাল, আনাজ, ছোট ছোট বোতলে পেষা মশলা। বিহারী ও বিনোদিনী রান্না শুরু করল।

বিংশ শতকের মাঝামাঝি পৌঁছে বাঙালির পিকনিক দু’টি সমান্তরাল ধারায় বয়ে চলেছে। এক দিকে পরশুরামের ‘কামরূপিণী’ গল্পের পিকনিক, অন্য দিকে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বনভোজনের ব্যাপার’। পরশুরামের চরিত্ররা সমাজের উঁচুতলার মানুষ, অনুচর-সহ বাড়িতে তৈরি কাটলেট ফ্রাই পাই চপ শিককাবাব নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে পিকনিক করতে আসেন। অন্য দিকে টেনিদারা শ্যামবাজার থেকে মার্টিন রেলে উঠে বাগুইআটি থেকে আরও চারটে স্টেশন ছাড়িয়ে বনভোজনে যায়। মেনু খিচুড়ি, ডিমের ডালনা, পোনা মাছের কালিয়া। সবটাই নিজেদের রান্নার পরিকল্পনা। সঙ্গে রসগোল্লা লেডিকেনিও। চার জনে মোট দশ টাকা ছ’আনা চাঁদা উঠলে এর থেকে বেশি কিছু হয় না যে!

এই সমান্তরাল ধারাটা খুব ভাল ধরা পড়ে লীলা মজুমদার ও কমলা চট্টোপাধায়ের ‘রান্নার বই’-তে। সেখানে পিকনিকের একটি মেনু খাঁটি সাহেবি কায়দার, মুরগির রোস্ট, আলু রোস্ট, মটর সেদ্ধ, লাল করে ভাজা সেদ্ধ ডিম আর শসা টমেটো লেটুস স্যালাড-ভরা রোল। সঙ্গে মিষ্টি প্যাটি, অন্য কোনও মিষ্টি। বিকেলে খাবারের জন্য ফ্রুট কেক বা স্কচ শর্টব্রেড নেওয়ার পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে পরোটা নিমকি বা এলোঝেলোর কথা বলা হয়েছে। আর একটি মেনুতে সবই এদেশি খাবার। লুচি বা পরোটা, শুকনো আলুর দম বা আলু-পটল আলু-কপির চচ্চড়ি। সঙ্গে মাছের চপ ও মাংসের বড়া, পরিবর্তে শামি কাবাব। তৃতীয় বিকল্পটিতে বলা হয়েছে খিচুড়ি, বেগুনভাজা, আলুর দম ও টমেটোর চাটনির কথা। সঙ্গে মাছভাজা রাখার কথা বললেও, পিকনিকে মাংস রাঁধা লীলা মজুমদারের পরিবারে খুব একটা পছন্দের ছিল বলে মনে হয় না, কারণ তাতে খেতে দেরি হয়ে যায়।

বদলেছে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস। খাবারে বেড়েছে মার্কিন ও পূর্ব এশীয় প্রভাব, নতুন চেহারায় হাজির হয়েছে মোগলাই নবাবি খানাও। এ কালের পিকনিকে তার খানিকটা প্রভাব তো পড়বেই। কিন্তু কিন্তু আজও নিজেরা রান্না করে খাওয়ার মধ্যেই একেবারে আটপৌরে সাধারণ পিকনিকের নির্মল আনন্দ খুঁজে পান অনেকে। এঁরা সকলেই বুঝি এক-এক জন ‘ভজহরি মান্না’— আদি অকৃত্রিম পিকনিক-রসিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy