আপসহীন: বহু বার রাজদণ্ড নেমে এসেছে, তবু নিজের সত্যে অনমনীয় কবি পেন্ডিয়ালা ভারাভারা রাও
মহাশূন্য। নিকষ কালো ক্যানভাসে তুলির টানে আঁকা বালুকণার মতো ছড়ানো-ছিটোনো নক্ষত্রপুঞ্জের মায়া-আঁচল। তেমনই কোনও এক আকাশগঙ্গায় ছড়িয়ে থাকা নক্ষত্ররাজির মধ্যে পুঁচকে সদস্য সূর্যের সংসারে জনৈক বালুকণা পৃথিবী। সেই যৎসামান্য পৃথিবীর অতিসামান্য ভূমিখণ্ডের ঘুম বার বার কেড়ে নেন কবি, লেখক, শিল্পী।
মাটির পৃথিবীর আথেন্সে এক সুদর্শন দার্শনিক আকাশে বালুকণার মতো ছড়িয়ে থাকা তারাদলের দিকে তাকিয়ে ভেবেচিন্তেই কি কবিকে নির্বাসন দিয়েছিলেন তাঁর ভাবনার আদর্শ রিপাবলিক থেকে? কবির নির্বাসন কি কবি-দার্শনিক প্লেটো সত্যিই চেয়েছিলেন? সম্ভবত এত সরল নয় বিষয়টি। কিন্তু মানতে তো হবেই, কবি-লেখক-শিল্পীরা সুবিধের লোক নয় মোটেই। সুযোগ পেলেই ঝামেলা বাধায়। সকলেই যে তা করে, তা নয়। কারও কারও মাথায় প্রতিবাদের ভূত চাপে। কাব্যের উপচার তো কম সাজিয়ে রাখেনি প্রকৃতি! মেঘ আছে, ফুল আছে, লতা-পাতা-গাছ আছে, নদী-সমুদ্র-নরনারী আছে, উষা-গোধূলি আছে। কিন্তু সতত সঞ্চরমাণ যৎসামান্য পৃথিবীর বাকি অংশের মতোই অতি সামান্য এশিয়া মহাদেশের ভারত নামের রাষ্ট্রের কারও মাথায় বিজবিজ করে ওঠে অন্য কিছু। তিনি লেখেন— ‘পারলে তুমি বণিক ডেকে গোধূলিও দাও বেচে/ গোদাবরীও শুকিয়ে যাবে, থাকবে না কেউ বেঁচে’ (অনুবাদ: গৌতম ঘোষ দস্তিদার)।
আদ্যন্ত রোমান্টিক পেন্ডিয়ালা ভারাভারা রাও লিখেই ফেললেন— ‘পারলে তুমি বণিক ডেকে গোধূলিও দাও বেচে’! ব্যস! যে রাজদণ্ড ভিত্তিগত ভাবে বণিকের মানদণ্ড, তা তেতে উঠতে বাধ্য তো হবেই। কবি নিরুদ্দেশের পথিক হয়ে গেলেন। রবীন্দ্রনাথে যে ভাবে কবিরা পাগল আর পাগলেরা কবি, যে ভাবে তারা জন্মবাউল, খানিকটা সে ভাবেই। কিন্তু রাজনীতির উন্মাদেরা মোটেই বাধ্য নয় কবির পাগলামি সহ্য করতে। অতএব, কারাবাস। আয়ুর অধিকাংশ সময় কারাগারে ভারাভারা। কিন্তু তাঁর প্রধান পরিচয় তো কবি হিসেবেই। তা হলে লিখলেন কোথায়? কেন? কারাগারেই। কিন্তু কারাগারে বসে লেখালিখিতেও লোক-খেপানো যখন থামানো গেলই না, তখন কারাগারে রেখে লাভ? লাভ আছে। কারণ, কাব্যচর্চা ছাড়াও অধ্যাপনা, বক্তৃতায় বিদ্ধ করা, সাংবাদিকতা, পত্রপত্রিকা সম্পাদনা, বিশেষ রাজনৈতিক ভাবাদর্শের ‘মস্তিষ্ক’ হয়ে ওঠা— এ সব তো গারদান্তরালে হয় না সে ভাবে!
স্মৃতিবদ্ধ হত্যা
রোহিত ভেমুলা নাকি আত্মহত্যা করেননি। ওটা নাকি ‘স্মৃতিবদ্ধ হত্যা’। প্রথমেই এ কথা বলেছিলেন ভারাভারা। সংবাদপত্রের জন্য ফোনে যখন রোহিত-মৃত্যু নিয়ে লেখা চাওয়া হল, তখনই। স্বল্পভাষী। নিজে না বলতে চাইলে বেশি বলানো অসম্ভব। আর নিজে চাইলে থামানো সুকঠিন। লেখা ‘তোলা’র সুবাদে তত দিনে ওঁর দক্ষিণী ইংরেজি উচ্চারণের সঙ্গে খানিকটা ভাব হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু ‘স্মৃতিবদ্ধ হত্যা’ বলেই চুপ। হয়তো তেলুগুতে অন্য কিছু বলছেন, বাঙালি কান শুনছে ‘স্মৃতিবদ্ধ’, এমনও হতে পারে। প্রশ্ন করা গেল, এর মানে? ও-প্রান্ত থেকে জানা গেল— লেখার মন হলে
মেলে পাঠিয়ে দেবেন এবং পাঠাতে পারলে জানিয়ে দেবেন ফোনে।
আন্দাজ হল, লিখতে চাইছেন না। জোর করে ওঁর লেখা যে পাওয়া যায় না, জানা কথাই। কিন্তু ফোন এল। খানিক পরেই। জানালেন, লেখা মেল করে দিয়েছেন। লেখার আগে ওঁর বেশ কিছু প্রশ্ন শোনার অভ্যেস। কিছু পাল্টা প্রশ্ন করারও। যখন নিজে টাইপ করে মেল পাঠানোয় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, তখনও সে-পর্ব ফোনে। রোহিত ভেমুলা নিয়ে কোনও প্রশ্ন-পর্বের সুযোগ ছিল না। শুরুতেই ওই ‘স্মৃতিবদ্ধ হত্যা’। কিন্তু মেল খুলে দেখা গেল, প্রতি বারের মতোই কাব্যময় ইংরেজিতে ঠাসবুনোন লেখা। প্রশ্নের আন্দাজে উত্তর সাজানো। সে লেখার শুরুতেও রোমান হরফে লেখা ‘স্মৃতিবদ্ধ হত্যা’। ফোন করা গেল। ধরেই বললেন— ‘‘ওটা স্মৃতিবদ্ধই। সংস্কৃত শব্দবন্ধে বলেছি।’’ সে লেখারই খানিক অংশ— ‘‘রোহিতের মৃত্যু ব্যক্তিগত মৃত্যু নয়। এমনকি, শুধুমাত্র রাজনৈতিক হত্যাও নয়। এটা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক খুন। আমি এই হত্যাকাণ্ডকে সংস্কৃত শব্দবন্ধে ধরতে চাই— এটা ‘স্মৃতিবদ্ধ হত্যা’। ‘স্মৃতি’ মানে অবশ্যই মনুস্মৃতি… রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাপ যত উঁচু, ব্রাহ্মণ্যবাদের ছায়াও তত ঘন, দীর্ঘ এবং দলিতদলনে পারদর্শী।’’
হ্যাঁ, যুক্তিবাদী প্রতর্কের মতোই এমন শিলাবাণী ভারাভারা রাওয়ের স্বাভাবিকতা, যে স্বাভাবিকতা সারস্বত মেরুদণ্ডের থাকে। এবং রসিকতাও। রবীন্দ্রনাথ যে গুরুগুরু স্বরে অন্তর্লীন একটা হাসি রেখে যান ‘দুর্দান্ত পাণ্ডিত্যপূর্ণ দুঃসাধ্য সিদ্ধান্ত’ অক্ষরবৃত্তে, যেখানে বাড়তি আধমাত্রাও আর গোঁজা যায় না, তেমন ‘উইট’ও ভারাভারা এড়িয়ে যান না, সম্ভবত তাঁর অতিমাত্রার রবীন্দ্রপ্রেমের কারণেই। এর উদাহরণ তাঁর বহু লেখায়। যেমন ওই আগের লেখাটিতেই ছিল— ‘‘বহু ঘামরক্ত ঝরিয়ে, দর্জির কাজ করে ছেলেমেয়েদের বড় করে তোলেন রোহিতের মা। তাঁর সন্তানেরা মায়ের জাতধর্মই গ্রহণ করে। ঠিক সত্যকাম জবালার পুরাকথার মতো। মায়ের পরিচয়ে যে পরিচিত। রোহিতের সঙ্গে একলব্যের তুলনাও টানা যায়… তবে দ্রোণাচার্যের ভূমিকা একই আছে।’’
অন্য গন্ধ পাঁউ
জোড়াসাঁকোর বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন তরুণ রবীন্দ্রনাথ। ঘোড়ার গাড়িতে উঠলেন। সে গাড়ি আসতে দেখেই পাশের পুলিশ-চৌকি হেঁকে দিল— অমুক-নম্বর আসামি বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে! কারণ, পুলিশের গোপন ডায়েরিতে কবির নাম রয়েছে যে!
‘হামচূপামূ হাফ’। একটি বিপ্লবী সমিতির নাম। কলকাতার। পরাধীন দেশের সম্ভবত প্রথম গুপ্ত সংগঠন। পাঠ্যে থাকলে এটুকুর উত্তর দিলেই ফুলমার্কস পাওয়া যেত নিশ্চিত। কিন্তু ভিন্ন চাপ বিদ্যমান! সে গুপ্ত সমিতির অন্যতম সদস্যের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
১৯১৬। আমেরিকায় ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ। দু’বছর পরে আমেরিকা যাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। হঠাৎ জানলেন, দু’বছর আগের সানফ্রান্সিসকো ষড়যন্ত্র-মামলায় তিনিও নাকি অন্যতম অভিযুক্ত। তিনি নাকি মদত দেন বিপ্লবীদের অস্ত্র ও অর্থ আমদানিতে।
রাষ্ট্রবিরোধী কাজকর্মে অভিযুক্ত ‘হুংকার’ কাব্যগ্রন্থের কবি হীরালাল সেনকে আদর করে ডেকে শান্তিনিকেতনে চাকরি দিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ‘অপরাধ’জনিত কারণে এজলাসে হাজিরা দিতে হল রবীন্দ্রনাথকে। শান্তিনিকেতন ছাড়তে বাধ্য হলেন হীরালাল। অদম্য রবীন্দ্রনাথ তাঁর নতুন কাজের ব্যবস্থা করলেন পারিবারিক জমিদারি দেখাশোনায়। রবীন্দ্রনাথের গতিবিধিতে সরকারের নজরদারি কার্যত জীবনভর। বিদেশের চিঠিপত্রে গোয়েন্দাগিরি। আশ্রমে কখন কত বার কে আসে কে যায়, তার শ্যেনসন্ধান।
এ সব খ্যাতির বিড়ম্বনাই। আর ধোওয়া তুলসীপাতাও ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। কম কাণ্ড তো করেননি! সেই নবীনকালে, ১৯০৫ সালেই তো ইংরেজের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। রাজদ্রোহিতার অভিযোগেই গ্রেফতার নজরুল, আর তাঁকেই তাঁর নাটক ‘বসন্ত’ উৎসর্গ করছেন রবীন্দ্রনাথ। একই ধারায় বামপন্থী ‘লাঙল’ পত্রিকার জন্য আশিসবাণীও লিখে দিচ্ছেন। ইংরেজ স্বাভাবিক ভাবেই ‘অন্য’ গন্ধ পেয়েছিল।
হঠাৎ রবীন্দ্রনাথকে টানা কেন? পরিচিত উদাহরণ হিসেবেই, যদিও সে কালের সরকার রবীন্দ্রনাথকে অন্তত ভয় পেত। কিন্তু রাষ্ট্রও তো সাবালক হয়ে ওঠে, আরও অভিজ্ঞ এবং নির্ভীক হয়ে ওঠে! তাই ভারাভারা নতুন নন। আসলে, ‘অন্য’ গন্ধ পেতে একেবারেই দেরি করে না ভূমিখণ্ডের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। কোনও কালেই করেনি। সম্ভবত করবেও না কোনও কালে। জনমানসে যাঁর খ্যাতি যত বেশি, তাঁর প্রতি সন্দেহের মাত্রাও বেশি। এ বিন্যাস যুগে যুগে ঘটমান বর্তমান। এ ছবি সব গুলাগ দ্বীপপুঞ্জেরই।
রাশি রাশি ভারাভারা
রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা বা খ্যাতির আলোকবর্ষ-ধারেকাছেও নেই ভারাভারা রাও। কিন্তু, তাঁর আত্মীয়তা ঢুকে বসে আছে ‘ও-পাড়ার প্রাঙ্গণের’ ভিতরে। জলজঙ্গলে, চাষের খেতে, বনবসতিতে, দলিত মহল্লায়, সংখ্যালঘুর উঠোনে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর অতি-বাম রাজনৈতিক মতাদর্শ। এ দু’য়ের জেরে কারাগারই হয়ে উঠেছে তাঁর বাড়ি। যে কবি ‘বিবাদ’ শব্দের ব্যাখ্যা দেন ‘বড়র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’, যে কোনও লেখার শুরুতেই যিনি স্পষ্ট করে নেন ঘটনার প্রকৃত উদ্দেশ্য, তাঁকে সহজ ভাবে নেওয়া কঠিনই। ১৯৭৩ সালে মিসা-য় গ্রেফতারি দিয়ে শুরু। দেড় মাস পর মুক্তি। মাসকয়েক পরেই আবারও মামলা। তাঁর লেখা নাকি ইন্ধন জোগাচ্ছে আন্দোলনে। বছরখানেক পর জামিন। এর গায়ে-গায়েই জরুরি অবস্থা জারি। আবারও গ্রেফতার ভারাভারা। জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার দিন অন্যেরা মুক্তি পেলেও নতুন করে গ্রেফতার তিনি। ভারাভারাকে গ্রেফতার করার এই ধারাপর্ব কখনও থেমে থাকেনি। তা সব জমানাতেই সমছন্দে রণিত। তাঁর সামাজিক ভাবনাকে রাষ্ট্রের অসামাজিক মনে হওয়া বা পৃথক রাজ্য তেলঙ্গানার আন্দোলনে সমর্থনের অভিযোগ কিংবা অতি-বাম কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণ— কারাগার তাঁর পিছু ছাড়েনি। এখন তিনি কারাগারে যে সব মামলায়, তার মধ্যে গুরুতর অভিযোগটি দেশনেতা খুনের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার। সে অভিযোগে সঙ্গত করেছে ভীমা কোরেগাঁও মামলাও। দলিতদের উপর হামলা উচ্চবর্ণের। দলিতদের পাশে দাঁড়ানোয় গ্রেফতার ভারাভারা এবং আরও অনেক বিশিষ্টজন।
গত শতকের সত্তরের দশকে ভারাভারা গড়ে তোলেন ‘রেভলিউশনারি রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’। কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পাশাপাশি চলতে থাকে নানা বিষয়ে প্রবন্ধ, রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কাজও। সবই মূলত কারাগার থেকেই। ভারাভারার প্রবন্ধে বা লেখায় লিপিবদ্ধ হতে শুরু করল স্থানিক লোকসংস্কৃতির রাজনৈতিক আঙ্গিক। যেমন ১৯৭২ সালে গড়ে ওঠা জননাট্যমণ্ডলীর কথা। কী ভাবে কাজ করত জননাট্যমণ্ডলী, তার কথা পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। কুশীলবেরা নির্দিষ্ট কোনও গ্রামে যেতেন। চৌকি (স্থানীয় ভাষায় বাল্লা) জোগাড় করে তার চার পাশে চারটি খুঁটি পুঁতে তৈরি হত মঞ্চ। নাটকের বিষয় ওই গ্রামেরই কোনও ঘটনা বা সমস্যা। নাটকের সংলাপ বা কাহিনির এগিয়ে যাওয়ায় অংশ নিতেন দর্শকেরাও। গ্রামের বাসিন্দারাই শুধরে দিতেন কাহিনি ভুল পথে এগোলে। নিদান দিতেন কাঙ্ক্ষিত বিধানের। সব মিলিয়ে গড়ে উঠত একাত্মতার বোধ। এই ভাবেই গ্রামের পর গ্রাম পরিবার হয়ে ওঠা।
রসবিপ্লবী
আপনার কবিতা অনুবাদ করা যাবে? শুনে ভারাভারা বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই। কোন কবিতা? তেলুগু জানা আছে?’’ তেলুগু জানা নেই, কিন্তু ‘কসাই’ নামের কবিতাটার তো ইংরেজি অনুবাদও রয়েছে বালাগোপালের করা। ভারাভারা বললেন, ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ! অনুবাদটা খুব ভাল। আপনি তো ইংরেজি থেকে বাংলায় করবেন? বেশ, বাংলায় অনুবাদ করার পর সেটা ইংরেজিতে অনুবাদ করে আমায় বরং এক বার শুনিয়ে নেবেন।’’ দ্রুতগতিতে বলে যাওয়া কথাগুলোর মধ্যে যেন কত কিছু বলে গেলেন কবি! অনেকটা তাঁর ওই কবিতাটির মতোই, যেখানে এক কসাই বলছেন, তিনি রোজ পশুহত্যা করলেও ঘৃণা থেকে করেন না, জীবিকার জন্য করেন। কিন্তু পুলিশি লাঠি আর রাইফেলের বাঁটে মাংসপিণ্ডে পরিণত হওয়া এক তরুণের দেহ দেখে তিনি বুঝেছেন, প্রকৃত কসাই কাকে বলে!
এ লেখা শুরু করার আগে ইন্টারনেটের নামী সার্চ-ইঞ্জিন খুলেছিলাম। কিছু সন-তারিখ মিলিয়ে নেওয়ার জন্য। সেখানে দেখলাম, ভারাভারা রাও বিষয়ে শুরুর দিকে মোটের উপর যা লেখা রয়েছে, তা হল, ভারাভারা রাও তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৪০ বছর ধরে হিন্দু-বিরোধী ‘টক্সিক’ ভাবধারার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে চলছিলেন বলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এবং সে বাক্য শুরুর আগে ‘আনফরচুনেটলি’ বা দুর্ভাগ্যবশত শব্দটিও ছিল। ‘ছিল’ বলার কারণ, এ হেন বর্ণনা হজম করার আগেই দেখলাম, লেখাটা উড়ে গেল সার্চ-ইঞ্জিন থেকে। একটু পরেই ভেসে উঠল একেবারে একশো-আশি ডিগ্রি উল্টো বয়ান— ভারাভারা রাও একজন খ্যাতনামা কবি, সমালোচক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ইত্যাদি-প্রভৃতি। প্রথমে এক লাইন। ধীরে ধীরে তা বড় হতে শুরু করল নব ভাবধারায়, নব-নব গৌরববচনে। কী ঘটল, জানা নেই! তবে, বদল তো ঘটলই কিছু বয়ানে! বোঝা গেল, দেশ এখন কবির মুক্তি চাইছে!
শঙ্খ ঘোষের অনুবাদে ভারাভারার কবিতা ‘চারণকবি’ মনে পড়ল— ‘‘যখন কাঁপন লাগে জিভে/ বাতাসকে মুক্ত করে দেয় সুর/ গান যখন হয়ে ওঠে যুদ্ধেরই শস্ত্র/ কবিকে তখন ভয় পায় ওরা/কয়েদ করে তাঁকে, আর/ গর্দানে আরও শক্ত করে জড়িয়ে দেয় ফাঁস/ কিন্তু, তারই মধ্যে, কবি তাঁর সুর নিয়ে/ শ্বাস ফেলছেন জনতার মাঝখানে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy