Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Special Durga Puja of Mushidabad

শারদীয়া আর বাসন্তী পুজোর মাঝে হয় নবাবভূমির নিজস্ব দুর্গোৎসব

মুর্শিদাবাদে এই পুজো শুরু হয় সরস্বতী পুজো, মানে শ্রীপঞ্চমীর পরের দিন থেকেই। দুর্গার নাম ‘রাজরাজেশ্বরী’। আর সরস্বতী পুজোর ঠিক আগের দিন থেকে শুরু হয় ঈশানেশ্বর শিবের পুজো।

রাজরাজেশ্বরী দুর্গা। দশমহাবিদ্যার ষোড়শীর সঙ্গে মিল আছে এই চতুর্ভুজা দুর্গার।

রাজরাজেশ্বরী দুর্গা। দশমহাবিদ্যার ষোড়শীর সঙ্গে মিল আছে এই চতুর্ভুজা দুর্গার।

সায়ন্তন মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৮
Share: Save:

শীতের শেষে বসন্তের আগমন মানেই সরস্বতী পুজো। আর দুর্গাপুজো তো আবার সেই বসন্তকালে, বাসন্তী পুজো। তা হলে এই দুইয়ের মাঝে আবার দুর্গাপুজো কী রকম? মহানগরী থেকে দু’শো কিলোমিটার দূরে, অতীতের নবাবভূমি মুর্শিদাবাদে এ রকম এক আশ্চর্য পুজো হয়। এক কথায় যাকে বলে মেয়ে সরস্বতীর পুজোর অনুষঙ্গেই বাবা-মায়ের ভাগ বসানো। কারণ শ্রীপঞ্চমীর পরের দিন শীতলষষ্ঠী থেকেই এক দুর্গাপুজো শুরু হয় জেলার উত্তরে। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক বরাবর সুতি থানার বংশবাটী গ্রামে দশ দিন ধরে চলে এই পুজো। স্থানীয় ভাবে দেবী দুর্গা রাজরাজেশ্বরী নামে খ্যাত। কথিত আছে, “কি সুন্দর মনোহর বংশবাটী হেরি।/ মহোৎসবে পূজে সবে রাজরাজেশ্বরী॥”

প্রচলিত দশভুজা দুর্গামূর্তি বা দুর্গাপূজার সঙ্গে এর বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। দেবী এখানে চতুর্ভুজা। উপরের হাতগুলোয় রয়েছে চক্র ও শঙ্খ। নীচের দুই হাতে তির-ধনুক। তিনি বসে রয়েছেন চতুর্ভুজ শিবের নাভি থেকে উৎপন্ন পদ্মফুলের উপর। একই জায়গা থেকে উৎপন্ন আর একটি ছোট পদ্মফুলে দেবী রেখেছেন তাঁর ডান পা, আর বাম পা-টি তোলা রয়েছে ডান পায়ের উপর। নিম্নে শয়ান চতুর্ভুজ শিব তাঁর চার হাতের মধ্যে দু’হাত জোড় করে পত্নীর বন্দনা করছেন। সেই শিব আবার শুয়ে রয়েছেন এক শবের উপরে। এই পূর্ণ ব্যবস্থাটিকে সিংহাসনের চারটি পায়া হিসেবে ধারণ করেছেন চার জন—নারায়ণ, স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা, পঞ্চমুখী শিব এবং ধর্মরাজ যমদেব। এঁদের প্রত্যেকেই চতুর্ভুজ। দেবীর এই রূপের সঙ্গে দশমহাবিদ্যার তৃতীয় বিদ্যা ষোড়শী মূর্তির মিল রয়েছে। সেই দেবীরও সিংহাসনের চারটি পায়ারূপে থাকেন চার দেবতা, দেবী বসেন শিবের নাভিপদ্মে। ষোড়শীর সঙ্গে রাজরাজেশ্বরীর অমিলও রয়েছে। এখানে দেবীর দুই পাশে দুই হাতে দু’টি করে পদ্ম ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া। চালচিত্রে থাকে দুই পক্ষধারী বিদ্যাধরী বা ডানাওয়ালা পরি। প্রতিমাসজ্জায় ব্যবহৃত হয় প্রচুর ময়ূরপুচ্ছ।

শীতলষষ্ঠীর সন্ধ্যায় হয় দেবীর অধিবাস। স্থাপিত হয় ঘট। সপ্তমীতে দুর্গাপুজোর মতোই ঘাটে কলাবৌ স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিরে এসে স্থাপিত হয় নবপত্রিকা। সন্ধিপূজায় ১০৮ প্রদীপ জ্বলে। সপ্তমী থেকে সন্ধিপুজো-সহ নবমী পর্যন্ত ভোগে নিবেদিত হয় ফল, লুচি, মিষ্টান্ন। নবমীতে হোম, দশমীতে দধিকর্মা। সপ্তমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে পাঁঠা ও মোষ বলি হয়। দর্পণে বিসর্জন হলেও দেবীবরণ হয় না। তবে প্রতিমাকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ফুল এবং নৈবেদ্য দেওয়া হয়। পূর্ণিমার পরের দিন সেই রাজুয়া দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়, যেখানে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। এ ভাবেই আজ প্রায় চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো পেয়ে আসছেন রাজরাজেশ্বরী।

রাজুয়া দিঘি সেই সময় ছিল ভয়ঙ্কর। এক দিন দেবী তার তীরে বসে কলসি মাজছিলেন। পথে এক সময় এসে হাজির হয় এক শাঁখারি। তার কাছে মা শাঁখা পরতে চান। নিজেকে ভবানন্দ ভট্টাচার্যের কন্যা বলে পরিচয় দিয়ে বাবার কাছ থেকে শাঁখার দাম নিয়ে নিতে বলেন। শাঁখারি সরল বিশ্বাসে শাঁখা পরিয়ে ভবানন্দ ভবনে হাজির হলে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ ভবানন্দ ছিলেন নিঃসন্তান। দু’জনে মিলে হাজির হন রাজুয়ায়। কিন্তু কোথায় সেই মেয়ে? ঘাট শূন্য! শাঁখারি তখন আবার মেয়েটিকে দেখার কাতর মিনতি করলে ঘটে এক অলৌকিক কাণ্ড— “হেন কালে মধ্য জলে শাঁখা পরা কর।/ দেখি মনে ধন্য মানে দোঁহে পরস্পর॥”

দেবীর লীলা সকলেই বুঝতে পারেন। তখন শাঁখারি আর শাঁখার দাম নেননি। ভবানন্দকে বলেন, “এই দাস তব পাশ নাহি চায় মূল্য।/ বিশ্বমাতা বলে পিতা কেবা তোমা তুল্য॥” বাংলার নানা জায়গার দুর্গা ও কালী মন্দিরে এই শাঁখারি ও তার শাঁখা পরানোর কাহিনি নানা যোগ-বিয়োগ করে প্রচলিত। শাঁখারির বাড়ি ছিল নিকটবর্তী রাতুরী গ্রামে। সেই গ্রাম থেকে আজও কেউ না কেউ পুজোয় শাঁখা দিয়ে যান।

ঈশানপুরের ঈশানেশ্বর শিব।

ঈশানপুরের ঈশানেশ্বর শিব।

কিন্তু বাড়ি ফিরেও শান্তি পেলেন না ভবানন্দ। পনেরো দিন বন্ধ ঘরে অনশনে বসে মায়ের ধ্যান করে অবশেষে পুজো শুরুর প্রত্যাদেশ পান তিনি। “সেই হতে এ গ্রামেতে এল কৃপা করি।/ দ্বিজ কীর্তি এই মূর্তি রাজরাজেশ্বরী॥” খড়ের ঘর থেকে একতলা পাকা ঘরের পর আজ রাজরাজেশ্বরীর বিরাট সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। রাজরাজেশ্বরী নামেই এক কালীর স্থান রয়েছে মন্দিরের সামনে। মন্দিরের মধ্যে রয়েছে শিব ও ষষ্ঠীমূর্তি। এই মন্দিরেই এক সময় পূজিত হতেন জয়দুর্গা ও দ্বিভুজা বৃদ্ধমাতা দুর্গা। কিন্তু সে সব আজ বহু বছর হল চুরি হয়ে গিয়েছে। রাজুয়া দিঘির পাশে ছিল বৃদ্ধেশ্বরী মন্দির। আজ তার ভিত ছাড়া আর কিছুই নেই। মন্দিরটি লালগোলার মহারাজা রামশঙ্কর রায় উনিশ শতকে তৈরি করেন। দিঘিটি নবাব কর্মচারী রাঘব বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করলেও ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা জমিদারবংশ পরে এর মালিকানা পায়। এত বড় দিঘির খনন নাকি শেষই হচ্ছিল না। এক দিন শেষ হলে লোকেরা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করেন ‘আজ হুয়া’। এই শব্দই বিবর্তিত হয়ে রাজুয়া নাম নিয়েছে।

শারদীয়া নয়, বাসন্তী নয়, তার মাঝামাঝি শীতকালীন এই দুর্গাপুজোয় মাতোয়ারা হয় বংশবাটী-সহ আশপাশের সমস্ত গ্রাম। তবে গ্রামেরই এক জন মুখে মুখে ছড়া রচনা করতেন। সেই ভূমিপুত্র ব্যোমকেশ মজুমদার ১৯৭০ সালে আশিরও বেশি বয়সে এই গ্রামেই প্রয়াত হন। স্বনামধন্য কবিয়াল গুমানি দেওয়ানের সঙ্গেও নাকি তাঁর তরজা হয়েছিল। তিনিই রচনা করেছিলেন রাজরাজেশ্বরীর আগমনীগীতি। আজও প্রতি বছর ছাপিয়ে সকল মানুষকে তা বিতরণ করা হয়। ব্যোমকেশের সঙ্গে যেন মিলে যায় আমাদের ভাবনাও— “কৃপানেত্রে চাও পুত্রে নাহি জানি ধ্যান।/ ব্যোমকেশ মাগে শেষ চরণেতে স্থান॥”

এ বার আমরা বংশবাটী ছেড়ে জাতীয় সড়ক বরাবর বহরমপুরের দিকে চলে আসব। নবগ্রাম থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে গেলে পৌঁছে যাব ঈশানপুরে। সেখানেই ঈশানেশ্বর শিবমন্দির। এই মন্দিরের সব চেয়ে বড় উৎসব আরম্ভ হয় সরস্বতী পুজোর আগের দিন, অর্থাৎ মাঘের শুক্লা চতুর্থী থেকে। এক কথায় এ জেলায় বিদ্যাবতী কন্যাকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছেন তাঁর বাবা-মা। মন্দিরের কাছেই রয়েছে পরম শিবভক্ত চাঁদ সওদাগরের স্মৃতি বিজড়িত চাঁদক্ষেত্র। এখানকার শিবলিঙ্গ যেন বেশ ক্ষতবিক্ষত। আগে নাকি এক কলুর ঘানির তলায় শিব বিরাজ করতেন। তাই ঘানিদণ্ডের ঘষায় এই অবস্থা! শিবের আরও একটি নাম রয়েছে, কালীন্দ্র শিব। সদর বহরমপুরের কাশিমবাজারের ব্রাহ্মণ রাজবংশীয় রাজা আশুতোষনাথ রায় মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা। পরে তাঁর পুত্র কমলারঞ্জন রায় নাটমন্দির, ভোগমন্দির নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। রাজাদের রাজত্বের মতোই এক সময় তা জরাজীর্ণ হয়ে গেলে কীর্তিভূষণ ঘোষ নামে এক গ্রামবাসী ১৩৭১ বঙ্গাব্দে নাটমন্দির তৈরি করে দেন। কিন্তু ২০১১ সালে মন্দিরের আমূল সংস্কার করে এক বিশাল মন্দির স্থাপিত হয়।

আসি পুজোর কথায়। তৃতীয়ার দিন ক্ষৌরকর্ম বা কামান এবং সংযম পালন করে চতুর্থীর দিন দিয়াসিন বা ভক্তরা ‘উতরী’ অর্থাৎ কয়েকগাছা সুতো ধারণ করেন। তার আগে সেটি এক বার শিবকে পরানো হয়। সে দিন কুলের কাঁটাডাল ভেঙে শিবকে প্রদক্ষিণ করে তাতে গড়াগড়ি দেন তাঁরা। স্নান করে শিবের মাথায় জল ঢালেন। সে দিন শিবের বন্দনা করতে গিয়ে তাঁরা বলেন ‘আটবন্ধন আটবন্ধন/ দেববন্দন দিয়াসিনবন্দন।’ অর্থাৎ অষ্টাঙ্গ বন্ধন করে দেবতার বন্দনা করছেন দিয়াসিনরা। এই বন্দনাগীতির ফাঁকে হনুমান, শীতলাও ঢুকে পড়েন। শিবের মাথার সিঁদুর দিয়ে ভক্তরা মাথায় কেটে নেন তিলক। পঞ্চমীর দিন সবাই সকাল ও সন্ধ্যায় ফল-জল খান। ষষ্ঠীর দিন মন্দিরের চূড়ায় মালা দেওয়া হয়। সেই দিন থেকে সপ্তমীর দুপুরে একশোটিরও বেশি পাঁঠা বলি হওয়া পর্যন্ত ভক্ত-দিয়াসিনরা নির্জলা উপবাসী থাকেন।

ষষ্ঠীর দিন তারা ‘কাঁচ’ অর্থাৎ পাটের দড়ি ও ছালের কাপড়ে তৈরি কাঁচুলি ধারণ করেন। ষষ্ঠীর গোটা রাত জাগা হয়। সন্ধ্যা থেকে বাবার প্রদীপ ও ধূপের ধোঁয়া যাতে বিন্দুমাত্র বন্ধ না হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়। রাত্রির প্রতি প্রহরে অর্থাৎ তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর মোট চার বার উচ্চারিত হয় বিশেষ মন্ত্র। একে বলে ‘প্রহর গোছানো’। প্রথমে বলা হয় “এলাম এলাম দক্ষিণ দুয়ার/ দক্ষিণ দুয়ারে হনুমান পৌরি [প্রহরী]/ রে হনু ছাড় দুয়ার/ গোঁসাই দেখি ফুলের কাতার/ আমরা সতের লয় ভাই/ গোঁসাই দেখতে না পাই।” এই ভাবে মন্ত্রের মাধ্যমে ভক্তরা পশ্চিম দুয়ারে ভীম, উত্তর দুয়ারে গরুড়, পূর্ব দুয়ারে সূর্যের কাছে পৌঁছেও গোঁসাইকে দেখতে পান না। কারণ গোঁসাই তখন কপাট বা দরজা দিয়ে নিদ্রামগ্ন। এ বার বহু ক্রোশ দূরে পাঁচ বামুনের গা দিয়ে ‘রক্তান’ বা রক্ত ঝরে পড়ে। তখন সুন্দর রংয়ের গোঁসাই বেরোন। ‘রক্তান যায় না লাঢ়ের রং’ কথাটিতে ‘লাঢ়’ বলতে ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ রাঢ়ভূমিকে বোঝানো হয়েছে। মন্দিরটিও সেই বিভাগেই পড়ে। মন্ত্র পাঠ আমাদের জানান দেয় “এসো গোঁসাই পবিত্র হয়ে/ কুশমর্দন হাতে নিয়ে/ প্রহর প্রহর লও লিখিয়ে।/ আমরা তুলছি ষষ্ঠীর প্রহর/ ষষ্ঠীর প্রহর দিয়ে কালীন্দ্রকে/ যে বর চাই সে বর পাই।” গোঁসাই কালীন্দ্র-ঈশানেশ্বর শিব শেষে সকলের যমযাতনা বা মৃত্যুভয় দূর করেন— “যদি যমরাজা ভ্রান্ত করে/ বাবা কালীন্দ্রদেব রাখে রাঙা পায়ে।” সকলের সমবেত ‘বল শিবের মহেশ’ জয়ধ্বনির মাধ্যমে নিশা অবসানে ভোর হয় সপ্তমীতে।

চতুর্থীর দিনে ধারণ করা উতরী খুলে দেওয়া হয় সপ্তমীতে। ঘাটে স্নান করার পরে ঘাট ছাড়ানোর মন্ত্র পাঠ করা হয়— “ঘাট ঘাট মহাঘাট/ হনুমানে বাঁধিলে ঘাট/ কৃষ্ণ শুধলে পানি/ বত [ব্রত] করে এয়োরানি/ বত করা আমরা জানি।” এর পর সমুদ্র, গঙ্গা, ব্রহ্মাণ্ড ইত্যাদি নানা জায়গার জল (‘পানি’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়) ছিনিয়ে এনে সব জলকে মিলিয়ে বাবা মহেশ্বরকে স্নান করানোর কথা ঘোষণা করা হয় মন্ত্রে।

ঈশানপুরে আগে এই মাঘের মেলা চলত ফাল্গুনের শিবরাত্রি পর্যন্ত। এখন তা সংক্ষিপ্ত। এই শিব ও শিবমেলাকে মহাকালের কপোলতলে ‘তৃণভূমি’ উপন্যাসে অবিনশ্বর করে রেখেছেন এই জেলারই গোকর্ণে আবির্ভূত ও সমাহিত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy