ছবি: রৌদ্র মিত্র।
ঋদ্ধি এক টানে ঋকের কানে গোঁজা ইয়ারফোনটা খুলে চাপা গলায় বলল, “দাদাই, সাংঘাতিক সিরিয়াস একটা ব্যাপার হয়েছে।”
ঋক বিরক্ত হয়ে উঠল। চোদ্দোশো স্কোয়ার ফুটের তিন কামরার এই ফ্ল্যাটে দুই ভাইবোনের আলাদা-আলাদা বেডরুম। কেউ পারতপক্ষে একে অন্যের শোয়ার ঘরে যায় না। তৃতীয় তথা মাস্টার বেডরুমটা বাবা-মায়ের। ঈষৎ বড় খুপরি। আর যত সমস্যা ওই খুপরিতেই। বাবা-মা বাড়িতে থাকলেই শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া। ঝগড়া করার জন্য একশো বাহান্নটা ইস্যু আছে বাবা-মায়ের। এই মুহূর্তে চিল চিৎকার করে বাবা-মা যে ইস্যুটা নিয়ে ঝগড়া করছে, সেটা হল, বাবাকে না বলে মা ঝরনামাসির তিনশো টাকা মাইনে বাড়িয়ে দিয়েছে। ঝগড়ার শুরু হয় এ রকম একটা ইস্যু থেকে, তার পর সেটা বয়ে চলে কৃষ্টি, সংস্কৃতি, বংশের গুষ্টির তুষ্টি করা ক্লিশে হাজারটা সংলাপে। এই বিরক্তিকর চিৎকার থেকে পরিত্রাণ পেতে ঋক কানে গুঁজে নেয় ইয়ারফোন।
“ধ্যাত! শোন না,” রুদ্ধশ্বাসে ঋদ্ধি বলল, “বাবার একটা গার্লফ্রেন্ড হয়েছে।”
“কী?” অবান্তর কথাটা শুনে আরও বিরক্ত হয়ে উঠল ঋক।
“সিরিয়াসলি। বাবার একটা গার্লফ্রেন্ড হয়েছে। সিক্রেট গার্লফ্রেন্ড।”
বাবা-মায়ের ঝগড়া পুরোদমে চলছে। বাবা কিছুতেই মানতে চাইছে না পেঁয়াজের দাম যখন আবার কমতির দিকে, তখন মূল্যবৃদ্ধির সূচক অনুসরণ না করে দুম করে তিনশো টাকা মাইনে বাড়িয়ে দেওয়ার কী যুক্তি। মা-ও কম যায় না। কোন আনাজের কত দাম তার ফিরিস্তি শোনাচ্ছে। যুক্তি-প্রতিযুক্তিতে মা যখন কোণঠাসা হয়ে পড়ে, তখনও সেই এক কথাই বলে, “সংসারটাকে কিন্তু আমাকেই চালাতে হয়। ঝরনা না এলে বাসনমাজা, ঘর ঝাঁট দেওয়া, ওয়াশিং মেশিন চালানো থেকে বাড়ির সব কাজ আমাকে করতে হয়। বাড়িতে যে আরও তিনটে গোদা মুঘল বাদশার বংশধর আছে, তারা তো কেউ কুটো ভেঙে দু’টো করে না।”
ঋক বলল, “ওই কাঠখোট্টা হাড়কঞ্জুস লোকটার আবার গার্লফ্রেন্ড হবে? ভাগ এখান থেকে!”
“আমার কাছে ডেফিনিট প্রুফ আছে।” ঋদ্ধির চোখ কুঁচকে গিয়েছে।
এ বার রীতিমতো রেগে উঠল ঋক, “কী প্রুফ আছে তোর কাছে?”
“ফটো!”
ঋক অবাক হয়ে বলল, “মানে? বাবার গার্লফ্রেন্ডের ফটো?”
“ধ্যাত!” দমবন্ধ উত্তেজনায় ঋদ্ধি নিজের মোবাইলটা বার করে বলল, “এই দ্যাখ।”
ঋক ঋদ্ধির হাত থেকে মোবাইলটা নিল। মোবাইলের স্ক্রিনে একটা ফটো। তাতে ফুটে আছে একটা লেখা, “বসন্ত পঞ্চমীর দিন আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি। সেই কাঁচা হলুদ শাড়ি। সেই তোমার কপালে ছড়ানো কুঁচো চুল, সেই তোমার ঝকঝকে হাসির দু’পাশে ছড়ানো দু’টো টোল, সেই তোমার আমাকে দেখেও না দেখা, সেই শুধু তোমার জন্য আমার পকেটে লুকিয়ে রাখা নারকেল কুল…”
আর পড়ল না ঋক। ঋদ্ধিকে ফোনটা ফেরত দিয়ে ঋক বলল, “ট্র্যাশ অ্যান্ড ননসেন্স।”
“পুরোটা পড়লি?”
“পড়ার দরকার নেই। এইটা নিয়ে বাবার গার্লফ্রেন্ড বলে আমাকে জ্বালাতে এসেছিস কেন?”
“বাবার প্যাডে পেলাম।”
হো-হো করে হেসে উঠল ঋক, “বাবার প্যাডে এইটা পেয়েছিস বলে তুই আমাকে বলতে এসেছিস যে বাবার সিক্রেট গার্লফ্রেন্ড আছে?”
ছটফট করে উঠল ঋদ্ধি, “তোর ধৈর্যটা বড্ড কম। পুরোটা শোন। হাতের লেখাটা চিনতে পারলি না? বাবার নিজের হাতে লেখা।”
“বাবার মতো কাঠখোট্টা একটা লোক এটা লিখেছে, স্বয়ং ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর হাত ধরাধরি করে এসে বললেও আমি বিশ্বাস করব না। বাবা তো দিনরাত প্যাডে একটাই জিনিস লেখে। কোন মিউচুয়াল ফান্ডের
দাম কত কমল বাড়ল। আর বাবার বাংলা হাতের লেখা আমি কোনও
দিন দেখিনি।”
“আরে আমি চিনি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিয়োর।”
“তুই কি বাবার লেখার প্যাডে গোয়েন্দাগিরি করছিস? হাইলি আনএথিকাল।”
“গোয়েন্দাগিরি কেন করব? আমার ফোনে ডেটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাবার মোবাইল থেকে হটস্পটে ডেটা নেব বলে অ্যাক্সিডেন্টালি… অ্যাক্সিডেন্টালি বলব না, ফর্চুনেটলি পেয়ে গেলাম এই লেখাটা। প্যাডের এই লেখাটার উপর মোবাইল চাপা দিয়ে বাথরুমে গিয়েছিল। আমি দেখেই ফটো তুলে নিয়ে এসে তোকে প্রবলেমটা বলছি।”
ঋক দু’হাতে মাথার চুল খামচে ধরে বলল, “উফ্! যে লোকটা কোনও ইস্যু না পেলে এনআরসি আর সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কিস্যু জানে না বলে মায়ের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে, আমাকে বিশ্বাস করতে বলবি সে লুকিয়ে প্রেম করছে আর তার জন্য লিখছে, ‘শুধু তোমার জন্য আমার পকেটে লুকিয়ে রাখা নারকেল কুল’! নির্ঘাত কারও হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ঝেড়ে কপি করে রেখেছে।”
“তর্কের খাতিরে তাই যদি ধরে নিই, তা হলে কার জন্য কপি করে রেখেছে? মা ঠিকই সন্দেহ করে। বাবা লাস্ট প্রোমোশন পাওয়ার পর যে সেক্রেটারিটা পেয়েছে, খুব বাজে ধরনের একটা গায়ে পড়া মেয়ে।”
“তোর ইম্যাজিনেশন অসাধারণ। বাবা তার সেক্রেটারির জন্য পকেটে নারকেল কুল নিয়ে অফিসে যাচ্ছে।”
চোদ্দোশো স্কোয়ার ফুটের তিন কামরার ফ্ল্যাটে তখন জয়ন্ত আর সুচরিতার ঝগড়া চলছে কেব্ল টিভির প্যাকেজে কোন কোন চ্যানেল কে বেছেছিল তাই নিয়ে।
“দাদাই, তুই কিন্তু ব্যাপারটা একেবারে সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না।”
“কোন ব্যাপার?” ঋক যথারীতি বিরক্ত হয়ে উঠল, “ওই বাবার গার্লফ্রেন্ড?”
“আস্তে! আস্তে!” ঋদ্ধি ঠোঁটের উপর আঙুল ঠেকাল।
“দূর আস্তে। ঝগড়ার ভলিউমটা শুনছিস? পাশের বাড়ির ছাদে নিউক্লিয়ার বোম পড়লেও ওরা কিছু শুনতে পাবে না।”
“দ্যাখ দাদাই, মা কিন্তু আজ বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছে। মায়ের মোবাইলের পেমেন্টের ডিউ ডেট পেরিয়ে গেছে বলে এ রকম চিৎকার? সেটা বাবার দোষ? নিজের পেমেন্টটা নিজে অনলাইন করে দিতে পারে না? বাবা তো ঠিক কথাই বলছে। বাড়ির বাইরের কোন কাজটা মা করে? নিজের এটিএম-এর পিনটা পর্যন্ত জানে কি না সন্দেহ।”
“এগজ়্যাক্টলি!” ঋকও উত্তেজিত হয়ে উঠল, “বাবাও তাই দরকার পড়লেই মায়ের ডেবিট কার্ডটা ইউজ় করে। চাকরি তো দু’জনেই করে। বাবা বাড়িতে ঢুকেই কোনও কাজ না করে পায়ের উপর পা তুলে চিৎকার চেঁচামেচি করে কেন?”
“তুই না অন্ধের মতো মাকে সাপোর্ট করিস। এই জন্যই বাবার যদি একটা গার্লফ্রেন্ড হয়েও যায়, আমি অন্যায় দেখি না। মানুষ তো কোথাও একটু শান্তি খুঁজবে।”
“ওয়ান্ডারফুল। তা হলে তো সমস্যা মিটেই গেল।”
“তুই কি বুঝছিস না, না কি বুঝেও না বোঝার ভান করছিস? ব্যাপারটা কী সাংঘাতিক কমপ্লিকেটেড হয়ে যাবে বল তো? ব্যাপারটা কিন্তু তখন আর শুধু মা আর বাবার মধ্যে থাকবে না। তোকে আমাকে অ্যাফেক্ট করবে। বাড়িতে পিস বলে আর কিছু
থাকবে না।”
“ফর দ্যাট ম্যাটার, বাড়িটা অনেক দিন আগেই পিস হাভেন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তুই কেন সিরিয়ালের মতো কমপ্লিকেসি করছিস বল তো?”
“আমি কোনও সিরিয়াল দেখি না। ওয়েব সিরিজ় দেখি। আর তুই ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না তো? এটা দ্যাখ।”
ঋদ্ধি নিজের মোবাইলটা ঋকের দিকে বাড়াল। একটা অনলাইন শপিং পোর্টালের ডেলিভারি স্টেটাস। ডেলিভারি ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর জিনিসগুলো অদ্ভুত। গোলাপ, চকলেট,
টেডি বেয়ার। ঋক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “তো?”
রেগে উঠল ঋদ্ধি, “চোখটা খুলে দেখ না। বাবার লগ-ইন দিয়ে ঢুকেছি। ডেলিভারি অ্যাড্রেসটা কোথায় দেওয়া আছে? বাবার অফিসে। আর দিনটা ভ্যালেন্টাইনস ডে।”
“মানে বলতে চাইছিস বাবার সেক্রেটারির জন্য?”
“নয়তো আবার কী? আজকাল নতুন ট্রেন্ড হয়েছে। খুকি সেজে এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার। আচ্ছা তোর কি মনে হয়, মাকে এই ব্যাপারটা জানানো উচিত?”
“তুই কী চাইছিস বল তো? সুনামি না ভূমিকম্প?”
“ব্যাপারটা তুই একদম বুঝতে পারছিস না, মা যদি এ বার সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে মামার বাড়ি চলে যায়, আমরা কী মুশকিলটায় পড়ব!”
সুচরিতা অফিস থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে এসে দেখল, গাড়িতে হেলান দিয়ে জয়ন্ত সিগারেট খাচ্ছে। সুচরিতার অফিস ছুটি হয় ছ’টায়। জয়ন্ত কোনও দিন রাত্রি আটটার আগে অফিস থেকে বেরোয় না। সুচরিতা বেশ অবাক হয়ে বলল, “তুমি? কী ব্যাপার?”
গাড়ির লক খুলে জয়ন্ত বলল, “গাড়িতে ওঠো তো, বলছি।”
“তুমি কেন? ড্রাইভার কোথায়?”
“ছুটি দিয়ে দিলাম।”
গাড়িতে উঠে সুচরিতা জিজ্ঞেস করল, “সত্যি করে বলো তো, সব ঠিক আছে?”
গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে জয়ন্ত বলল, “সিট বেল্ট লাগাও।”
“আঃ! আগে বলো কী হয়েছে? ঋক, ঋদ্ধি ঠিক আছে? আজ কিন্তু দিন ভাল নয়। ভ্যালেন্টাইনস ডে। আমি তোমার ছেলেমেয়ে দু’জনকেই বলে দিয়েছি, কোনও পার্টি-ফার্টি নয়। সন্ধের মধ্যে যেন সোজা বাড়ি ফেরে। তোমার নবাবনন্দিনীর আজ সাজ তো দেখোনি! কলেজে আমরা কোনও দিন ও রকম সেজে যেতাম? সব তোমার আশকারা পেয়ে হয়েছে।”
জয়ন্ত গাড়ির ইনফোটেনমেন্ট সিস্টেমে পেনড্রাইভ থেকে একটা গান বাজাল, “মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হ্যায়…”
সুচরিতা ঝাঁঝিয়ে উঠল, “তুমি কি কোনও জিনিসই একটু সিরিয়াসলি নেবে না?”
“আচ্ছা, ওরাও তো বড় হয়েছে। এ বার ওদেরকে ওদের মতো ছেড়ে দাও না।”
“এই না হলে তোমার বুদ্ধি? বুঝবে, যে দিন মুখটা পুড়বে, সে দিন বুঝবে। অমৃতার মেয়ে আজ কী করেছে জানো? বাড়িতে কিছু না বলে বন্ধুদের সঙ্গে রায়চকে গিয়েছে। ওখানে গিয়ে মা-কে ফোন করছে, রাতে বাড়ি ফিরতেও পারি, না-ও পারি।”
“তোমার চিন্তা নেই। তোমার দু’পিসই বাড়িতে। তবে তোমার ছেলের এক বান্ধবীও এসেছে।”
“উর্জা। মেয়েটা ভাল। ঋক বলেছিল আজ বাড়িতে নিয়ে আসবে। তুমি কিন্তু বাড়িতে গিয়ে মেয়েটাকে আলতু-ফালতু প্রশ্ন কোরো না। তোমাদের বংশকে তো হাড়ে হাড়ে চিনি। তোমার বাবা যে দিন আমাকে প্রথম দেখতে গিয়েছিল, জিজ্ঞেস করেছিল…”
“আঃ! ছাড়ো না! ৩৬৫ দিনই তো ঝগড়া করো।”
“ঝগড়া বুঝি আমি একা করি? তোমার মতো লোকের সঙ্গে থাকতে গেলে ৩৬৫ দিনই ঝগড়া
করা উচিত।”
“বেশ, ৩৬৫ দিনই কোরো। তবে এ বছর যখন লিপ ইয়ার বলে একটা দিন এক্সট্রা পাওয়া গিয়েছে, আজকের দিনটা চলো ঝগড়া না করে কাটাই।”
“মানে?”
“আমার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটা তো পড়োনি দেখলাম। নীল টিক নেই। জানিয়েছিলাম, তোমাকে তুলতে আসছি।”
“তোমার ৫৭টা মেসেজ আনসিন হয়ে আছে। হয় কাজের ফিরিস্তি না হয় যত্তসব পলিটিক্যাল ফরওয়ার্ড করা মেসেজ। কোনও দিন একটা রোম্যান্টিক মেসেজ পাঠিয়েছ? লোকেরা যেমন বৌদের পাঠায়!”
“পিছনের সিটে একটা প্যাকেট আছে। খুলে দেখো।”
পিছনের সিট থেকে প্যাকেট নিয়ে খুলতে-খুলতে সুচরিতা বলল, “আবার জঞ্জাল কিনেছ অনলাইনে? তার পর প্যাকেট খুলে বিস্ফারিত চোখে বলল, “এগুলো কী?”
গানের ভলিউমটা বাড়িয়ে জয়ন্ত বলল, “হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে।”
কিছু ক্ষণ থমকে থেকে গোলাপের মধ্যে গোঁজা প্যাডের একটা কাগজের লেখা পড়ে আপ্লুত হয়ে গেল সুচরিতা। তাতে লেখা ছিল, ‘বসন্ত পঞ্চমীর দিন আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি...’। তার পর গোলাপগুলো শুঁকতে শুঁকতে আদুরে গলায় বলে উঠল, “সত্যি আমার জন্য! থ্যাঙ্ক ইউ। তুমি এখনও কী সুন্দর বাংলা লিখতে পারো। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে।”
তার পর এক টুকরো চকলেট মুখে পুরে টেডিটাকে আদর করতে-করতে বলল, “অ্যাই, চলো না আজকে দূরে কোথাও যাই। লং ড্রাইভে।”
“রায়চক?”
“না, ওখানে গেলে অমৃতার মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। আরও দূরে কোথাও।”
“দাদাই, ব্যাপারটা কিন্তু আজ সাংঘাতিক সিরিয়াস জায়গায় চলে গিয়েছে। রাত্রি বারোটা বেজে গেল, বাবা, মা কেউ ফিরল না। দু’জনেরই ফোন সুইচড অফ। বাবার প্যাডেও সেই বাংলা লেখাটা নেই। বাবার সেক্রেটারির নম্বরটা টুকে রেখেছি। ওর ফোনটাও সুইচড অফ কি না, এক বার ট্রাই করে দেখব ভাবছি।”
চিন্তা ঋকেরও একটু হচ্ছে। মাকে জানিয়েছিল উর্জাকে আজ বাড়িতে নিয়ে আসবে। কিন্তু সন্ধে থেকেই মায়ের ফোন সুইচড অফ।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই সুচরিতা আগে ঘরে ঢুকে চটি ছাড়তে ছাড়তে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে সকালে জয়ন্তর ছেড়ে যাওয়া শার্টটা দেখে চিৎকার করে উঠল, “এই চিটে নোংরা শার্টটা এখানে কে রেখেছে? এটা কি আলনা? গেঁয়োর হদ্দ সব।”
জয়ন্ত সদর দরজা বন্ধ করতে করতে বলল, “গেঁয়ো শব্দটা একদম ইউজ় করবে না। সাবঅল্টার্ন ব্যাপারটা কী, তোমার এই শহুরে মোটা মাথায় কোনও দিন ঢুকবে না। পৃথিবীতে কত বড় বড় বিপ্লব গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল, কোনও ধারণা আছে তোমার?”
“গেঁয়ো বলব না তো কী বলব? গেঁয়োর হদ্দ বংশ একটা। না হলে তোমার বাবা আমাকে প্রথম দেখতে এসে জিজ্ঞেস করেন, রাজীব গাঁধীর সঙ্গে জ্ঞানী জৈল সিংহের কেমন সম্পর্ক বলে আমার ধারণা!”
“যাও। যাও। কোনও দিনই ন্যূনতম রাজনৈতিক বোধ নেই তোমার। জেএনইউ আর জেইউ-এর ছাত্র আন্দোলনের মূল তফাত কোথায় সেটাই বোঝো না, আর এমন অ্যারিস্টোক্রেসির হাবভাব করো যেন বাকিংহাম প্যালেসে জন্মে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে কুমিরডাঙা খেলতে-খেলতে বড় হয়েছ। অথচ ব্রেক্সিট কী জানো না!”
“বেশি ফটর-ফটর কোরো না। সেই স্কুল লাইফ থেকে দেখছি তোমাকে। হাবা-ক্যাবলার মতো আমাদের স্কুলের সামনে ক্যাটকেটে সবুজ জামা পরে দাঁড়িয়ে থাকতে। তখনই বোঝা উচিত ছিল আমার…”
ঋদ্ধি ঋকের ঘরে ঢুকে দু’হাত মুঠো করে ঝাঁকিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে বলল, “ইয়েয়ে! দাদাই, প্রবলেম সলভ্ড। মা আজকে বাবাকে হাতেনাতে ধরেছে।”
“মানে?”
“আরে ওই যে রে, অনলাইন কেনা জিনিসগুলো মা রেড করে সব সিজ় করে নিয়ে এসেছে। এখন বেডরুমে টিভির তলায় সাজিয়ে রাখতে রাখতে ঝগড়া করছে।”
“তুই-ই নিশ্চয়ই মাকে হিন্ট দিয়ে চুকলি করেছিলি! তা, টিভির তলায় সাজিয়ে রাখছে কেন?”
“যাতে বাবা চোখের সামনে ওগুলো সব সময় দেখে আর ভুলেও কক্ষনও সেক্রেটারিকে গার্লফ্রেন্ড করার কথা না ভাবে। বেচারা বাবা!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy