Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প

আর এক জন

ভিড় বাস থেকে ব্যাগ কাঁধে এমন ভাবে নামল বিমান, যেন ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হল। বিমান যেহেতু টিকিট না কেটে বাস থেকে নামবে না, তাই স্টপ ছাড়িয়ে চলে এল অনেকটাই। দোষ কন্ডাক্টরের। আগেই বিমান কয়েক বার হাঁক দিয়েছে টিকিটের জন্য।

ছবি: সুমন চৌধুরী

ছবি: সুমন চৌধুরী

সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ভিড় বাস থেকে ব্যাগ কাঁধে এমন ভাবে নামল বিমান, যেন ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হল। বিমান যেহেতু টিকিট না কেটে বাস থেকে নামবে না, তাই স্টপ ছাড়িয়ে চলে এল অনেকটাই। দোষ কন্ডাক্টরের। আগেই বিমান কয়েক বার হাঁক দিয়েছে টিকিটের জন্য। কন্ডাক্টর আসেনি। হাতে থাকা টিকিটটা ছুড়ে ফেলতে গিয়ে বিমানের চোখ গেল ফুটপাত লাগোয়া শো-রুমের কাচে। তার মুখে আবার সেই বিরক্তির ছাপ! ক’দিন আগেই মলি বলেছিল, ‘মুখটা সারা ক্ষণ ব্যাজার করে থাকো কেন? দু’মাস পরেই আমাদের বিয়ে। লোকে ভাববে, বউ পেয়ে তুমি খুশি হওনি...’ কথাগুলো যেন এখন কানে বাজল।

মুখটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়েছে বিমান। দু’চার পা এগোতেই ফের কুঁচকে হেল ভ্রু-যুগল। রাস্তার ধার ঘেঁষে, ট্রান্সফর্মারটায় হেলান দিয়ে, ফুটপাতে বসে চশমা পরা একটা লোক বই পড়ছে। গলায় চার-পাঁচটা বাসি রজনীগন্ধার মালা। তাকে দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল বিমান। উলটো দিক থেকে আসা একটা ছেলে পড়ুয়াকে দেখে পকেট থেকে স্মার্টফোন বার করল ফোটো তুলবে বলে। এ দিকে ছেলেটির পিছনের দৃশ্য দেখে প্রমাদ গোনে বিমান। সর্পিল ভঙ্গিতে এগিয়ে আসছে এক পাগলি। একমুখ হাসি। দু’দিকে দু’হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে পথচারীদের। ছিটকে সরে যাচ্ছে তারা। পাগলির সঙ্গে নির্ঘাত ধাক্কা লাগবে ছেলেটার। হাত থেকে পড়ে যাবে দামি ফোন।

যে আশঙ্কা করছিল বিমান, মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গেল তার চেয়ে একটু বেশি। পাগলিটা ছেলেটার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিল ফোন। ধাওয়া করে ধরে ফেলল ছেলেটা। পাগলিটা ধুলোমলিন নয়। বেশ ফরসা। গন্ডগোল বলতে উঁচু করে পরা শাড়ি আর মুখে দুষ্টু কিশোরীর হাসি। যেন গোটা ব্যাপারটাই একটা মজা!

আশপাশের লোক ঘিরে ফেলেছে তাদের। ছেলেটার বুকে মোক্ষম লাথি চালিয়ে উঠে দাঁড়াল পাগলি। হাতে তার কিছু নেই। হামাগুড়ি অবস্থা থেকে সোজা হল ছেলেটা। পাগলির শূন্য হাত দেখে হাহাকারের গলায় বলে উঠল, ‘কোথায় ফেললি রে শালি!’ পাগলি আগের মতোই হাসছে। ছেলেটা উদ্‌ভ্রান্তের মতো ফুটপাতের আনাচে-কানাচে খুঁজে যাচ্ছে তার দামি ফোন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এক জন উত্তেজিত গলায় বলে উঠল, ‘কোথাও ফেলেনি ফোন। শিয়োর ওর সায়াতে পকেট আছে, এক ফাঁকে ঢুকিয়ে নিয়েছে!’

অন্য এক জন বলল, ‘না-না, ওটা পুরোপুরি খেপি। আমি আগে দেখেছি। দামি ফোন কেন যে সামলে রাখে না এরা! ধাক্কাধাক্কিতে পড়েছে এদিক-ওদিকে। তাল বুঝে কেউ তুলে নিয়ে পালিয়েছে।’

বিমানের কপালে ভাঁজ পড়ল। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। মোবাইল কাড়াকাড়ি দেখতে গিয়ে অদ্ভুত পড়ুয়াকে ছাড়িয়ে এসেছিল সে, আবার ফিরতে থাকে। পড়ুয়ার সামনে বসে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি রাস্তায় বসে বই পড়ছেন কেন?’

‘আপনাকে বলতে যাব কেন? কে আপনি?’ খিঁচিয়ে উঠল লোকটা।

বিমান বলে, ‘গলায় আবার মালা! কে পরাল?’

‘আমিই নিজেকে পরিয়েছি। আপনার কোনও অসুবিধে আছে?’ বিমান উত্তেজিত হয় না। শুধু সম্বোধন এক স্তর নামিয়ে এনে বলে, ‘ছকটা ভালই সাজিয়েছ! কিম্ভূত সেজে বই পড়ছ রাস্তায়। লোকে ছবি তুলতে যাচ্ছে, তোমার পার্টনার পাগলির অ্যাক্টিং করে ছিনিয়ে নিচ্ছে ফোটো-তুলিয়ের ফোন। তার পর হাপিশ করে দিচ্ছে।’

‘পাগলিটা কে?’ বিষম বিস্ময়ে জানতে চায় লোকটা। বিমান উঠে দাঁড়াল। অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা কর্তব্যরত দুই ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে জানাল ব্যাপারটা। পুলিশ বলল, ‘চলুন তো দেখি। তবে এত ক্ষণে হয়তো পালিয়েছে।’

পালায়নি পড়ুয়া। পুলিশ বলল, ‘অ্যাই, এখানে কী করছিস? এটা বই পড়ার জায়গা?’ পুলিশ দেখে একটুও ঘাবড়াল না লোকটা। মুখ তুলে বলল, ‘এখানে তো কোথাও লেখা নেই, বই পড়া নিষেধ। এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার...’ কথা শেষ করতে পারল না পড়ুয়া, ‘ভাগ শালা’ বলে পুলিশ বাঁ হাত চালাল লোকটার মাথা লক্ষ্য করে। মুখ সরিয়ে নিয়েছে পড়ুয়া। চশমা খুলে পড়ল রাস্তায়, সেটা কুড়িয়ে দৌড় মারল। পুলিশ হাত ঝাড়তে-ঝাড়তে বলল, ‘যত সব পাগলের কারবার!’ বিমান বলে, ‘পাগল নয় স্যর। বোকা বানিয়ে পালাল। ওকে ধরুন।’

‘আমার কি আর কোনও কাজ নেই? রাস্তায় ট্র্যাফিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি দুজনে,’ বলে পুলিশ। ‘রাস্তায় চুরি-ছিনতাই আটকানোও তো আপনাদের ডিউটি,’ বলল বিমান।

পুলিশটি বলে, ‘চুরি-ছিনতাই তো দেখিনি। পাগল দেখাতে নিয়ে এসে কাজে ডিসটার্ব করলেন,’ এক প্রকার বিমানকেই দায়ী করে চলে
গেল পুলিশ।

এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নয় সে। সিদ্ধান্ত নেয়, লোকাল থানায় যাবে। থানায় কিছু একটা লিখছিলেন ডিউটি অফিসার। ‘স্যর, একটা কথা ছিল’ বলে শুরু করেছিল বিমান। পুরো ঘটনাই বলা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু অফিসার লেখা থামাননি এখনও। বিমান উদ্‌গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে উত্তরের। অফিসার মুখ তুলে বিমানকে জরিপ করে বললেন, ‘হ্যাঁ। সকাল থেকে দুজন ফোনের ব্যাপারে মিসিং ডায়েরি করেছে।’

‘আমি শিয়োর স্যর, দুটো ক্ষেত্রেই ওই মালা পরা লোকটার হাত আছে,’ উত্তেজিত বিমান।

‘অতটা নিশ্চিত আপনি হতে পারেন না। যত দিন যাচ্ছে, অপরাধগুলো জটিল হয়ে পড়ছে। লোকটা যে কায়দায় বিখ্যাত হতে চাইছে, সেটা এখন আর অস্বাভাবিক নয়। আর পরিষ্কার চেহারার পাগলিও বিরল নয়, মহিলা হয়তো তাঁর সচ্ছল পরিবারের পাহারা এড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। মোবাইল নেই। তাই অন্যেরটা ছোঁ মারছেন। আর আপনি দুজনের মধ্যে যোগসূত্র পাচ্ছেন, যেহেতু মোবাইলটা ওখানেই ভ্যানিশ হয়েছে।’

‘আপনাদের দু’এক জনকে পাঠান ওই স্পটে। সত্যিটা ঠিক বেরিয়ে পড়বে।’

‘আমাদের কাকের পিছনে ছুটতে বলছেন!’

‘কাক!’ অফিসারের কথায় এতটাই অবাক হয়েছে বিমান, শব্দটা মুখ থেকে বেরিয়ে এল! অফিসার বললেন, ‘হ্যাঁ, কাক! আপনার তো সমস্তটাই অনুমান। যাদের ফোন হারিয়েছে, তারা তো ওদের নামে কমপ্লেন করেনি। আপনার ফোন তো চুরি হয়নি, আপনি কেন অভিযোগ জানাছেন?’

‘চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখলে আপনাদের জানাব না?’ সবিস্ময়ে বলল বিমান। অফিসার বললেন, ‘নিশ্চয়ই জানাবেন। তবে আঁটোসাঁটো প্রমাণ সহ, অনুমাননির্ভর তথ্য নয়।’

উঠে পড়ে বিমান। বোঝাই যাচ্ছে, কোনও অ্যাকশন নেবে না পুলিশ। তারও দেরি হয়ে যাচ্ছে অফিসের কাজে। এর আগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে পাঁচটা চাকরি খুইয়েছে বিমান। দু’মাস পর বিয়ে। এই চাকরিটা যে করে হোক ধরে রাখতে হবে।

দু’দিন বাদে জানবাজারের মোড়ে আবার সেই পড়ুয়া। আজ বসার ভঙ্গি এবং চেহারা একটু আলাদা। মাথায় টোপর, ফুটপাতের রেলিঙে হেলান দিয়ে পড়ছে খবরের কাগজ। লোকটার সামনে গিয়ে ব্যঙ্গের সুরে বিমান বলে, ‘কী! আজকেও সেই ইচ্ছে? গণতান্ত্রিক অধিকার?’ লোকটা চশমার ফ্রেমের উপর দিয়ে বিমানের দিকে তাকিয়ে হাসল।

বিমান এসে দাঁড়াল জানবাজারের মোড় থেকে একটু দূরে। নজর রেখেছে পড়ুয়ার উপর। আজ বোধহয় আর অফিসের কাজ হবে না। লোকটাকে তার আস্তানা অবধি ধাওয়া করবে বিমান। বিমানের বিশ্বাস, একটু পরেই পাগলি উদয় হবে।

অফিসের যে কাজটা করে বিমান, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দরকারি নথিপত্র, লক্ষ-লক্ষ টাকার চেক বা ক্যাশ বিমানের হাত দিয়ে ডেলিভারি করে কোম্পানি। ইন্টারভিউয়ের সময় কোম্পানির মালিক বিমানকে প্রশ্ন করেছিল, ‘এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ছাড়া তোমার আর কী গুণ আছে?’ উত্তরে বিমান বলেছিল, ‘আর কোনও গুণ নেই। তবে ডিউটি আওয়ার্সের মধ্যে যা কাজ দেবেন, মন দিয়ে করব।’ মালিক বলেছিল, ‘গুণ আছে তোমার, সেটা হল সততা। এই যে বললে, ‘কোনও গুণ নেই,’ এটাই তো কেউ বলতে চায় না।’ দেখতে-দেখতে এই কোম্পানিতে বছর দুই টিকে
গেল বিমান।

থেমে গেল ভাবনা। ওই তো দেখা যাচ্ছে পাগলিকে। বিমানের আন্দাজ, দামি সেটে ফোটো তোলা হচ্ছে দেখলেই পড়ুয়া গোপন সংকেত পাঠায় পাগলিকে। যা ভাবা গিয়েছিল, তা-ই। সত্যিই গেল সেটটা। কারও সন্দেহ পড়েনি পড়ুয়ার উপর। টোপর পাশে রেখে উঠে দাঁড়াল লোকটা। খবরের কাগজটা ফেলে দিল মাটিতে। রাস্তা ক্রস করছে। অনুসরণ করতে থাকে বিমান। লোকটা দৌড়ে গিয়ে ভিড়বাস ধরল, ফার্স্ট গেট। বিমান উঠল পিছনের গেটে। তার ব্যাগে ক্যাশ টাকার প্যাকেট। লোকটাকে ফলো করতে গিয়ে কি একটু বেশিই ঝুঁকি নিয়ে ফেলছে? মলি বলে, ‘তুমি বাবা বড্ড ন্যায়-অন্যায় বিচার করো। ওই জন্যই চাকরিগুলো তোমার টেকে না।’ অথচ এই মলিই বিমানের সৎ এবং উদার হৃদয়ের প্রেমে পড়েছিল। বিমান তখন নিজেদের বাড়িতে টিউশন পড়ায়, মলিও পড়ত। মলির বাবার কারখানা দু’মাস ধরে লকআউট। দ্বিতীয় মাসেও যখন টিউশনির টাকা দিচ্ছিল মলি, বিমান নিতে অস্বীকার করে। বলে, ‘স্বপনকাকার ফ্যাক্টরি খুলুক, তখন দিয়ো।’ মলি ধরে নিয়েছিল, এই ছাড়টা বুঝি তার রূপের কারণে। তাই নেওয়ার জন্য জোর করছিল। কথা হচ্ছিল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে, বিমান মলিকে ঘর-ভর্তি ছাত্রদের দেখিয়ে বলেছিল, ‘এদের মধ্যে অনেকেই ফি দিতে পারে না। ওদের বলেছি ব্যাপারটা কাউকে না জানাতে। তুমিও জানিয়ো না।’

টিউশনে খরা এল। চাকরি ধরতে হল বিমানকে। বিমানেরা পাঁচ ভাই। উনুন আলাদা। বিমানের জিম্মায় অসুস্থ মা। মলিও চাকরি করে। ওকেও কিছু টাকা দিতে হয় সংসারে। তবু দুজনেই যখন রোজগার করে, সাদামাটা একটা সংসার পাতাই যায়। যাচ্ছিল না বিমানের চাকরি ধরা-ছাড়ার জন্য। এই চাকরিটাতে বিমানকে একটু থিতু হতে দেখে মলিই বিয়ের উদ্যোগ নেয়।

মানিকতলায় নামল লোকটা। বিমানও নামল। খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বিমান ফলো করছে বিড়াল পায়ে। লোকটা পৌঁছল চারতলা এক জীর্ণ ফ্ল্যাটবাড়ির সামনে। একতলার একটা দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে লোকটা। একটু অপেক্ষা করে বিমান কড়া নাড়ে। ভিতর থেকে ভেসে আসে পুরুষকণ্ঠের ‘কে?’

‘আমি দেবু।’ উত্তর করল বিমান।

‘কে দেবু?’ প্রশ্নের পর খুলে যায় দরজা। বিমান ঢুকে পড়ে ঘরে।

‘কে গো? কে এসেছে?’ বলে যে মহিলা ভিতর থেকে এল, তাকে দেখে ভীষণ চমকে উঠল বিমান। পাগলকে হঠাৎ এতটা সুস্থ স্বাভাবিক দেখলে যে এতটা ধাক্কা লাগে, জানা ছিল না বিমানের।

পড়ুয়া মাথা নিচু করে বসে পড়ল বিছানায়। মহিলা জায়গা নিল তার পাশে। বিমান পড়ুয়ার উদ্দেশে বলে, ‘ধরা পড়ে গেলেন তো! এ বার চলুন দু’জনে থানায়।’

ঝিমানো গলায় লোকটা বলল, ‘আমরা অত্যন্ত অসহায় হয়ে এই কাজ বেছে নিয়েছি।’

‘ধরা পড়ে এ কথা সব অপরাধীই বলে,’ বলল বিমান।

লোকটা বলে, ‘আমাদের ধরতে এতটা সময় নষ্ট করলেন, আর একটু কষ্ট করে দুটো কথা যদি শোনেন...’

‘বলুন,’ অনুমতি দেয় বিমান।

লোকটা সঙ্গিনীর দিকে হাত নির্দেশ করে বলে, ‘ও রুপালি, গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয় করত। ওর অধিকাংশ শো দেখতে যেতাম। তখন থেকেই প্রেম। আমি লেখালিখি করতাম, কিন্তু আমাদের কিছুই হল না। বয়স চলে গিয়েছে, ভদ্রস্থ কোনও চাকরি পাইনি। তত দিনে বিয়েও করে ফেলেছি। সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। অনেক সহ্য করার পর ঠিক করলাম, শিল্পমহল যখন আমাদের পাত্তা দিল না, নিজেদের শিল্পীসত্তা দিয়েই অন্য ভাবে রোজগার করব। দেখিয়ে দেব, কত উঁচু দরের শিল্পী আমরা।’

‘কোর্ট এ কথা শুনবে না।’

‘জানি। সেই জন্যেই আপনার কাছে একটা সুযোগ প্রার্থনা করছি।’

নড়েচড়ে বসে বিমান। বলে, ‘আপনাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন? অসম্ভব!’

‘আজ থেকে আমাদের কাজ বন্ধ। কথা দিচ্ছি।’

‘কী করে ভরসা করব? তা ছাড়া এত দিন যা অপরাধ করেছেন, তার জন্যও তো শাস্তি বরাদ্দ।’

‘শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি আপনাকে পনেরো হাজার টাকা দিচ্ছি, সব পাঁচশোর নোট। রাস্তাঘাটে এত যে ভদ্র মানুষ দেখেন, তাদের মধ্য থেকে এক জনকে বেছে নিয়ে পাশে একটা নোট ফেলে দিয়ে বলুন, ‘দাদা আপনার টাকা পড়ে গিয়েছে।’ দেখুন ক’জন বলে ‘আমার টাকা নয়’। বেশির ভাগ লোক নোটটা পকেটে পুরবে। কিন্তু তিরিশ জনের মধ্যে দশ জনও যদি বলে ওই টাকা তার নয়, আপনি লিখে নেবেন লোকটির নাম-ঠিকানা। আমরা দুজনে থানায় গিয়ে অপরাধ কবুল করব। কী, নেবেন চ্যালেঞ্জটা? দশ জন জোগাড় করার জন্য এক মাস সময় পাবেন। সময় দেওয়ার কারণ, যাতে ভাল করে লোক বাছতে পারেন। যাকে দেখে মনে হবে, এই মানুষটি নিশ্চয়ই নিজের টাকা বলবে না। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। আমরা চাই ওই দশ জনকে আপনি খুঁজে পান। রোজ ভাবি, আর এ কাজ করব না। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, কত স্বনামধন্য মানুষ অপরাধ করে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে আমরা তো নস্যি!’

‘আমাকে টাকা দিয়ে আপনারা যদি পালিয়ে যান!’ বলে ওঠে বিমান।

লোকটি বলে, ‘আপনিও তো টাকা নিয়ে ডুব মারতে পারেন। সেই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যখন দিচ্ছি অত ক’টা টাকা, পালাব না। তবু একটা প্রমাণের জন্য ফোনে আমাদের ছবি তুলে নিন, রেকর্ড করে নিন স্বীকারোক্তি। পালালে পুলিশের হাতে দেবেন।’ বিমান ফোন বার করতে গিয়ে একটু থমকায়, যতই হোক সামনের দুজন মোবাইল চোর। মুহূর্তে মাথায় আসে, আমার তো আনস্মার্ট ফোন।

আজ তিরিশতম দিন। বিমানের কাছে পড়ুয়ার দেওয়া শেষ পাঁচশোর নোট। বিমান এখনও পর্যন্ত ন’জনকে পেয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা লেখার আগে বলেছে, একটা এনজিও থেকে এই সমীক্ষাটা চালানো হচ্ছে। আজ ভীষণ টেনশনে আছে বিমান, আরও এক জনকে পাওয়া যাবে তো? এই চক্করে বেশ ক’দিন অফিস যায়নি। মালিক অসন্তুষ্ট। আজও বিমানের অফিস যাওয়া হবে না। আর এক জন যদি সৎ লোক না পায় বিমান, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে সমাজের প্রতি। ওই ভণ্ড পড়ুয়া, পাগলিও সমাজের প্রতি হারানো বিশ্বাসটা ফিরে
পেতে চাইছে।

প্রিয় পাঠক, যদি দেখেন আপনার পিঠে টোকা দিয়ে কেউ বলছে, ‘দাদা বা স্যর অথবা ম্যাডাম, আপনার টাকা পড়ে গিয়েছে’, জানবেন, ও-ই হচ্ছে বিমান। টাকাটা কুড়িয়ে ফেরত দিয়ে দেবেন প্লিজ।

‘রবিবাসরীয়’ বিভাগে ছোটগল্প পাঠান, অনধিক ১৫০০ শব্দে।

ইমেল: rabibasariya@abp.in সাবজেক্ট: rabibasariya galpa

ডাকে পাঠানোর ঠিকানা:

‘রবিবাসরীয় গল্প’,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা ৭০০০০১

অমনোনীত পাণ্ডুলিপি ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। পাণ্ডুলিপির সঙ্গে ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি জানাবেন। প্রকাশনার সুবিধার জন্য ইউনিকোড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy