ছবি: সৌমেন দাস
চোদ্দো পনেরো বছর বাঁকুড়ার বিভিন্ন থানায় দারোগাগিরি করার পরে অল্প কয়েক মাস হল ইন্সপেক্টর পোস্টে প্রমোশন পেয়ে পুরুলিয়ার এই থানায় বড়বাবু হয়ে এসেছে রমেন অর্থাৎ রমেন পাকড়াশী। আস্তে আস্তে এলাকার সঙ্গে পরিচিতি ঘটছে তার। ইচ্ছে করেই থানা সংলগ্ন কোয়ার্টারে না থেকে থানা থেকে মাইল খানেক দূরে বাসা ভাড়া করেছে। এর আগে অন্য থানায় থাকার সময় কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকার অভিজ্ঞতা তার মোটেও সুখের নয়। যত ক্ষণ কোয়ার্টারে না ফিরত, স্ত্রী শান্তা না খেয়ে বসে থাকত। তা ছাড়া থানার লাগোয়া জায়গায় থাকার ফলে এর ওর মুখ থেকে নানা রকম সত্যি মিথ্যে খবর ঠিক টের পেয়ে যেত, আর ডিউটি থেকে ফিরে এলেই শান্তার পুলিশি জেরা শুরু হত। বিশেষ করে মাওবাদী সন্ত্রাসের দিনগুলোতে শান্তা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকত। এখন অবশ্য এই সব অঞ্চলে সে ঝামেলা নেই। নেতা, মন্ত্রী, আমলাদের আনাগোনা আর খুচখাচ রাজনৈতিক ঝামেলা সব জায়গাতেই থাকে, পুলিশের চাকরিতেও এ সব হ্যান্ডেল করা রমেনের মতো অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদের কাছে এখন জলভাত।
ছেলে সায়নকে নিয়ে একটু চিন্তা রমেনের। ক্লাস এইটে পড়ে সে। সব বিষয়ে মোটামুটি ভাল নম্বর পায়। কিন্তু অঙ্কে কিছুতেই পাঁচের ঘরের গণ্ডি পার হতে পারছে না। ইতিহাসে এমএ রমেন নিজেও অবশ্য অঙ্কে খুব একটা ভাল ছিল না। পাটিগণিতে লাভ ক্ষতি আর বীজগণিতে সমীকরণ— আজও সে বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু সে যুগ আর এই যুগ তো এক নয়। রমেনরা পাঁচ ভাইবোন, কখন জড়াজড়ি করে বড় হয়ে গিয়েছে, মনে নেই। তখনকার দিনে বাবা মায়েরা অত খেয়াল রাখত না। এখন এই প্রতিযোগিতার যুগে একটা কি দুটো সন্তানকে ঘিরে বাপ মায়েদের অনেক আশা, স্বপ্ন। তার মধ্যে রমেন ছেলেকে সময়ও দিতে পারে না। শান্তাই যা খেয়াল রাখে।
খবরের কাগজটা নিয়ে শান্তাকে এক কাপ চা আর ম্যানপ্যাক সেটটা দিয়ে যেতে বলল। এটা একান্ত ভাবে রমেনের নিজস্ব বুদ্ধি। সেলফোন চালু হওয়ার পরে অনেক পুলিশ অফিসারই ওয়্যারলেস সেটকে হেলাফেলা করে। রমেন সেটা করে না। পুলিশের ওয়্যারলেস দফতর থেকে দেওয়া ম্যানপ্যাক সেট আর চার্জার সব সময় নিজের সঙ্গে রাখে। ওপরওয়ালা সাহেবরা যা কিছু নির্দেশ সব এই সেটের মাধ্যমেই দিয়ে থাকেন। সব কিছুই লগবুকে রেকর্ড হয়।
শান্তা চা বিস্কুট আর সেটটা দিয়ে গেল।
“সায়নের কি টিউশন আছে আজ?”
“হ্যাঁ, তৈরি হচ্ছে।’’
“বাইকে দিয়ে আসব?’’
“না, দরকার নেই। বাবুর নতুন সাইকেলে করে যাওয়ার শখ হয়েছে। বড় রাস্তায় তো যেতে হয় না।
ভিতর ভিতর দিয়ে যাবে। আমি বলেছি, সাবধানে আস্তে আস্তে চালিয়ে যাবি।”।
রমেন আর কিছু না বলে সেটটা অন করে ভলিউমটা মাঝামাঝি করে রাখল। ওয়্যারলেস সেটটা মোটামুটি চুপচাপই আছে, তার মানে এলাকা শান্তিপূর্ণ। খবরের কাগজ খুললেই আজকাল মেজাজ বিগড়ে যায়।
হঠাৎ ওয়্যারলেসে সাব-ইন্সপেক্টর সুদীপ রায়ের গলা শুনে রমেন সচকিত হয়ে উঠল। সুদীপের আজ মোবাইল ডিউটি। সে জানাচ্ছে, এক দল লোক জিতেন শাসমল নামে এক প্রাক্তন স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে হামলা করেছে। ইট ছুড়ে জানালার কাচ ভেঙে দিয়েছে, গালমন্দ করছে। সুদীপ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে, আরও কিছু ফোর্স লাগতে পারে। রমেন মিনিট দুই চুপ করে থাকল। তার পর থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ সব খবর না জানলে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়। ম্যানপ্যাক সেট থেকে আরও একটা মোবাইলকে স্পটে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে রমেন শান্তাকে বলল, “আমি বার হচ্ছি।”
“দুপুরে লাঞ্চ করবে তো?”
“ইচ্ছে তো আছে। দেরি হলে তোমরা খেয়ে নিও।”
থানায় গিয়ে যা শুনল তাতে রমেন হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারল না। জিতেন শাসমল পুরুলিয়ার এক স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। অবসরের পরে জয়পুরে নিজের বাড়ির একটা ঘরে প্রাইভেট পড়ান। এক জন ছাত্রদরদি এবং জ্ঞানী শিক্ষক হিসেবে বেশ জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু ওঁর সমস্যা হল অঙ্ক ভুল করলে ছাত্রছাত্রীদের শুধু মুখে গালমন্দ করে ক্ষান্ত থাকেন না, খাতায় ‘গরু’, ‘গাধা’, ‘ছাগল’, ‘বরাহ’, ‘তোর দ্বারা কিস্সু হবে না’, ‘মুটেগিরি কর’, ‘চুরিচামারি করতে হবে’, ‘লেখাপড়া তোর কম্মো নয়,’— এমন হাজারো শ্লেষাত্মক উপদেশ তো থাকেই, সঙ্গে আবার চোদ্দো পুরুষের শ্রাদ্ধ করে লিখে দেন অনেক কথাই।
থানার ডিউটি অফিসার রবিনবাবু এই এলাকার ছেলে। সে বলল, ‘স্যর, জিতেনবাবু অমন লেখেন ঠিকই, কিন্তু আজকের দিনে ও রকম মাস্টারমশাই বিরল। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন জিতেনবাবু।”
“সে তো বুঝলাম। কিন্তু এখন ওঁর বাড়িতে ভাঙচুর কারা করেছে? ওঁর ছাত্ররা?” জিজ্ঞেস করল রমেন।
রবিন কিছু বলার আগেই থানার বাইরে হইচই শুনে রমেনরা সচকিত হয়ে উঠল। ঝড়ের বেগে দলবল নিয়ে থানায় ঢুকল এলাকার দাপুটে নেতা বলাই মাহাতো। এখন দলের ব্লক সভাপতি। শোনা যাচ্ছে, সামনের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে। আগের শাসক দলের নেতা ছিল। ক্ষমতা বদলের পরে বেআইনি কেরোসিনের ডিলারশিপ, দিশি মদ আর সিমেন্টের কারবার, জমির দালালি রক্ষা করার জন্য রাতারাতি জার্সি পাল্টে ফেলেছে। এখন যা হয়, এই দলের পুরনো আদি নেতারাও ওর দাপটে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে। “এই যে বড়বাবু, আছেন দেখছি। ভালই হয়েছে, আমি জিতেন মাস্টারের নামে এফআইআর করতে এসেছি”।
“কেন কী হল, বলাইবাবু? আগে তো শান্ত হয়ে বসুন।”
“শান্ত হব মানে? মাথায় আমার রক্ত চড়ে গিয়েছে। ওই মাস্টারকে জেলে ঢোকাতে না পারলে আমার নাম বলাই মাহাতো নয়!”
কারা জিতেনবাবুর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে রমেনের কাছে জলের মতো পরিষ্কার হল। ধীর কণ্ঠে বলল, “সে তো বুঝলাম। আপনি তো আগেই অভিযোগ নিয়ে থানায় আসতে পারতেন, ওঁর বাড়িতে হামলা করাটা কি ঠিক হল?”
বলাই কিছু বলার আগেই তার এক চ্যালা শিবু গর্জে উঠল, “বেঠিকটা কী হয়েছে? ওই মাস্টারের লাশ ফেলে দিতাম। এত সাহস আমাদের নেতাকে চোর, মূর্খ... বলে! ফ্যামিলি তুলে গালাগাল?”
রমেন কটমট করে শিবুর দিকে তাকাতে, বলাই ওকে ধমক দিল, “আহ! আমি যখন কথা বলছি তখন তোদের তো কিছু বলার দরকার নেই। চুপ কর।”
রমেন বলাইকে বলল, “আপনার এই সব এলিমেন্টদের থানার বাইরে যেতে বলুন। আর ঘটনাটা আমাকে খুলে বলুন।”
বলাইয়ের অভিযোগ আর থানার কর্মচারীদের কথা শুনে রমেন পুলিশি অভিজ্ঞতা দিয়ে একটা কাঠামো দাঁড় করাল। সেটা এ রকম— বলাই মাহাতোর ছেলে নিতাই জিতেন স্যরের কাছে পড়ে। নিতাই ফেল করতে করতে ক্লাস নাইনে উঠেছে। নিতাইয়ের মতো বজ্জাত ছোকরা এ তল্লাটে আর নেই। স্যর যখন অঙ্ক বোঝাচ্ছিলেন, দামি মোবাইল বার করে সে তখন বন্ধুদের দেখাচ্ছিল। ব্যাপারটা জিতেনস্যরের চোখে পড়ে। মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটায় বেজায় খেপে গিয়ে বলেন, ‘‘ওরে চোরের ব্যাটা চোর, বাপের বেআইনি কারবারগুলো সামলাতে গেলেও তো পেটে কিছু বিদ্যে লাগবে। তোর তো সেটাও নেই রে শুয়ার!’’ এতেই আগুন জ্বলে গিয়েছে। নেতার পো তার বাবাকে এসে জানাতে নেতার ইজ্জতে লেগেছে আর নেতার ইজ্জত বাঁচাতে তার চ্যালারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে জিতেনবাবুর বিরুদ্ধে।
ব্যাপারটা বোঝার পরে রমেন নিজের মনেই বলল, ‘চোরের আবার ইজ্জত! মাস্টার ছাত্রকে শাসন করেছে বলে চোরের চ্যালারা লাশ ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যাই হোক, এখন সব দিক ঠিক রেখে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। দু’পক্ষকে সামনাসামনি বসিয়ে একটা মিটমাট করিয়ে দিতে পারলে সব দিক রক্ষা হয়।’
‘‘আরে বড়বাবু, কী ভাবছেন? একটা ডায়েরি করুন আর ওই জিতেনমাস্টারকে লক আপে ঢোকান।’’
বলাই মাহাতোর কথায় রমেনের ক্ষণিকের চিন্তায় ছেদ পড়ল। উঠে অন্য ঘরে গিয়ে মোবাইলে সুদীপকে চাপা স্বরে বলল, “সুদীপবাবু, স্যরকে রেসকিউ করে থানায় নিয়ে আসুন। দেখবেন ওঁকে যেন কেউ শারীরিক আঘাত না করে। দরকার হলে দু-এক ঘা দিয়ে চ্যালাগুলোকে খেদিয়ে দিন। তার পরে আমি দেখছি।”
সুদীপ বলল, “অমরবাবুও এখানে এসেছে, স্যর। ওদের আমরা সরিয়ে দিয়েছি। দূরে দাঁড়িয়ে হম্বিতম্বি করছে। সব ক’টা বলাইয়ের লোক।”
“ঠিক আছে। এখন কিছু করতে হবে না। আগে জিতেনবাবুকে আগলে থানায় নিয়ে আসুন।”
খেটো ধুতি আর সাদা ধবধবে ফতুয়া পরা দোহারা ফর্সা চেহারা। এক মাথা ভর্তি সাদা পশমের মতো চুল। তবে চেহারার মধ্যে যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল জিতেনস্যরের দুটো চোখ। অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক অনমনীয় ভাব, যা সম্ভ্রম জাগায়। রমেন বুঝতে পারল, আজকের মূল্যবোধহীন সমাজে এক বিরল প্রজাতির মানুষ উনি। ওঁর গালমন্দের মধ্যেও লুকিয়ে আছে এক নিখাদ ছাত্রদরদি মন।
মিটমাট করে নেওয়ার ব্যাপারে বলাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কোনও লাভ হল না রমেনের। বলাইয়ের দাবি, হয় জিতেনস্যর ক্ষমা চাইবেন, না হলে গ্রেফতার করে লকআপে ঢোকাতে হবে। শুনে স্যরের মুখে গনগনে ক্রোধের বহ্নি। বললেন, “জেলের ভয় দেখাচ্ছেন? আমার পূর্বপুরুষরা স্বদেশি আন্দোলনে বহু বার দেশের জন্য জেল খেটেছেন। ও সব আপনাদের মতো দুর্নীতিপরায়ণ লোকেদের ভয়ের কারণ।”
রমেন পাকড়াশী এ বার একটু চিন্তায় পড়ে গেল। গালমন্দ করার জন্য এক জন শিক্ষককে গ্রেফতার করা যায় না। আবার শাসক দলের নেতাকে চটালেও বিপদ। এই দোটানার মধ্যে ওয়্যারলেস সেটে কন্ট্রোল রুম থেকে নির্দেশ এল, বড়বাবু যেন এখনই এসপি সাহেবের সঙ্গে ফোনে কথা বলে। রমেনের বুক ছ্যাঁত করে উঠল। কী আছে কপালে কে জানে।
ফোন করে এসপি সাহেবের ক্ষোভের মুখে পড়ল রমেন। দু’পক্ষের মধ্যে মিটমাট করিয়ে দেওয়ার প্ল্যান আর জিতেনবাবুকে ওর ঘরে বসিয়ে রেখেছে বলার পরে সাহেব একটু শান্ত হলেন। কিন্তু তার পরে যা বললেন শুনে রমেনের চক্ষু চড়কগাছ! হাইকোর্টের বিচারপতি, লালবাজারের ওপরওয়ালা, কলকাতার নামী ডাক্তার, এক ডজন আমলা, এমনকি শাসক দলের এক মন্ত্রী পর্যন্ত এসপি সাহেবকে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন, জিতেনস্যরের গায়ে যদি সামান্য আঁচড় লাগে, তা হলে ওই বলাইয়ের তো লালবাতি জ্বলবেই, সেই সঙ্গে পার পাবে না থানার বড়বাবু অর্থাৎ রমেন। এঁরা সব জিতেনস্যরের ছাত্র। এঁদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। ফলে আগুনের মতো ছড়িয়েছে খবরটা। এসপি সাহেব কোনও ডায়েরি না নিয়ে বলাইকে বিদায় করে দেওয়ার পরিষ্কার নির্দেশ দিলেন রমেনকে। এও জানিয়ে দিলেন এই ব্যাপারে তিনি রমেনের পাশে আছেন। সুতরাং বলাইকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই রমেনের।
রমেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, তার মনে একটু আনন্দও হল, বলাই বধের অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে বলে। জিতেনবাবুকে বিনীত ভাবে নিজের ঘরে অপেক্ষা করতে বলে বলাইকে বাইরে ডেকে নিয়ে বলল, “শুনুন আপনি এখনই থানা খালি করুন। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাস্টারমশাইয়ের বাড়ির যা যা ক্ষতি হয়েছে সব মেরামতি করে দেবেন।”
আচমকা দৃশ্যপট এমন ভাবে বদলে যাওয়াতে বলাই হতচকিত! তবুও রাশ নিজের হাতে রাখার জন্য মিনমিন করে বলল, “মানে? ডায়েরি... ”
“ধুর মশাই ডায়েরি আবার কী! আপনার বিরুদ্ধেই ডায়েরি করার নির্দেশ আছে। কোথায় হাত দিয়েছেন আপনি জানেন? আপনার জন্য কি চাকরি হারাব না কি? আপনার চ্যালা-চামুণ্ডাগুলোকে স্যরের বাড়ির ত্রিসীমানায় যেন আর না দেখি।”
“ঠিক আছে। আমি আমার পার্টির উপরমহলে জানাব। দেখে নেব আমি। ছাড়ব না কাউকে। ভাল করলেন না বড়বাবু।”
“যাকে খুশি জানান, যা খুশি করতে পারেন। তবে কিছু করার আগে নিজের বেআইনি কারবারগুলোর কথা ভেবে নেবেন। আবারও বলছি, যদি নিজের ভাল বোঝেন, স্যরের বাড়ির জানালার কাচ মেরামত করে দেবেন। আর আপনার বানর সেনাদের দূরে থাকতে বলবেন। আসুন এখন।”
রমেন গাড়িতে জিতেনস্যরকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ওঁর কাছে ছেলের অঙ্ক শেখার ব্যবস্থা পাকা করে এসেছে। সায়নের জন্য অনুরোধ করতে জিতেনস্যর মৃদু হেসে রমেনের চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন, “এত কিছু শোনার পরেও আমার কাছে ছেলেকে অঙ্ক শেখাতে পাঠাবেন? ভেবে বলছেন তো?”
রমেন হাতজোড় করে বলেছে, “আপনি যা খুশি গালমন্দ করুন, খাতায় লিখুন। কিছু যায় আসে না, শুধু আমার একমাত্র ছেলেটাকে অঙ্ক শিখিয়ে দিন। স্যর, আমি নিজেও অঙ্কে ভাল ছিলাম না। পাটিগণিতে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক আর বীজগণিতে সমীকরণ কিছুতেই মিলত না। তাই ইতিহাস নিয়ে পড়েছি। আপনি দায়িত্ব নিলে নিশ্চিন্ত হতে পারি।”
“কে বলে আপনি অঙ্কে ভাল নন? আপনি জীবনের অঙ্কে দক্ষ। তাই তো এত সুন্দর ভাবে আজকের পরিস্থিতিকে সরল সমীকরণ করে নিজের পক্ষে নিয়ে এসে উত্তর মিলিয়ে দিলেন। আর পাটিগণিতের যে লাভ-ক্ষতির অঙ্কের কথা বলছিলেন, সেখানেও বলতে পারি আপনার উত্তর আজ নির্ভুল ভাবে মিলে গেছে। আপনার ছেলেকে আমি তৈরি করে দেব। ওকে কাল থেকে পাঠিয়ে দেবেন।’’ জিতেনস্যরের কথার মর্মার্থ অনুধাবন করে সলজ্জ হেসে কৃতজ্ঞ রমেন আবার হাতজোড় করে নমস্কার করল।
গাড়িতে ফিরতে ফিরতে হঠাৎই রমেনের মনে হল, জিতেনস্যর কি মনে করতে পারেন, গন্ডগোল থেকে তাঁকে বাঁচিয়ে দেওয়ার বদলে ছেলেকে পড়ানোর সুবিধেটা নিলাম! সঙ্গে সঙ্গে মনের ভিতরে আর এক রমেন বলে উঠল, ‘আরে বাপু, বাবা হিসেবে ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিস্থিতিকে এইটুকু কাজে লাগানো কি অন্যায়? এটা নিছক একটা কো-ইনসিডেন্স।’
মন হালকা হয়ে গেল রমেনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy