Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Gautama Buddha

আনন্দ

ভাবতে ভাবতে আনন্দর মনে বড় বিস্ময় জাগে। তথাগত নিজেও কি ভুলতে পেরেছিলেন এই সম্পর্কের কথা?

ময়ূখ নস্কর
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০০:০৮
Share: Save:

চিতাবহ্নি নির্বাপিত প্রায়। নিভন্ত অগ্নির আভা ঝিলিমিলি খেলছে হিরণ্যবতীর বুকে। বেলাশেষের বাতাসে শিউরে শিউরে উঠছে জল। কোন আলোর স্পর্শ পেল আজ এই অখ্যাত তটিনী? দূর শালবনের শীর্ষে অন্তর্হিত সূর্যের? না কি যুগপুরুষের চিতার?

বনের সীমানার অনেকটা আগে একটি নিঃসঙ্গ শালগাছ। বন থেকে আগে, আবার চিতাস্থল থেকে কিছুটা দূরে। মনে হয় জগতের সমস্ত শালগাছের প্রতিনিধি হয়ে সে এসেছে মুক্তবন্ধন চৈত্যের সম্মুখে। দাঁড়িয়ে আছে সমবেত জনমণ্ডলীর বৃত্তের বাইরে। তার পত্রপুটে সকরুণ অভিযোগ— আশি বৎসর পূর্বে আপনার আবির্ভাব-মুহূর্তের সাক্ষী আমরা। নির্বাণের রাতে আমরাই বাতাস দিয়ে আপনাকে সেবা করেছি। বোধিলাভের পরম লগ্নে আমাদের কেন বঞ্চিত করেছিলেন দেব?

শালগাছটির কাণ্ডে ঠেস দিয়ে বসে আছেন আনন্দ। চিতায় অগ্নি সংযোগের পর থেকে যে বাদানুবাদ শুরু হয়েছে, তার আওয়াজ এখানে এসে পৌঁছচ্ছে না। শুধু অগণিত নরনারীর মৃদুকণ্ঠ বিলাপ মর্মরধ্বনির মতো বাতাসে ভেসে আসছে। ভেসে আসছে তাদের ঘর্মাক্ত দেহগন্ধ। তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে দগ্ধ চন্দনকাষ্ঠের সুবাস। প্রচুর পরিমাণে চন্দন, ধূপ, ধুনা... শবদাহের কটুগন্ধও তাতে চাপা পড়ে যায়। চাপা পড়ে না রাতভর মলত্যাগের দুর্গন্ধ। আনন্দর প্রশ্বাসে এখনও যেন তার রেশ লেগে আছে।

গত কয়েক দিনের পরিশ্রমে আনন্দর চোখ বুজে আসছে। আধো তন্দ্রায় তিনি ভাবছেন, স্বর্গের অধিবাসীরা বুঝি আজ নেমে এসেছেন হিরণ্যবতীর তীরে। তাঁদের সাক্ষাৎ পেয়ে খরতর হয়ে উঠেছে বাতাস। চিতার অন্তিম শিখাটি আকাশে হস্ত প্রসারিত করে তাঁদের সম্ভাষণ করছে। বৈশাখের বাতাসে অগ্নি জ্বলে দাউদাউ। আবার সেই বাতাসেই সুশীতল পিতৃভূমির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই হিমালয়ের পাদদেশ। মনে পড়ে...

চমকে উঠলেন আনন্দ। এখনও সেই সব স্মৃতি মনে জাগে কেন? মায়ার বন্ধন কেন কাটে না? তবে কি তাঁর এত বছরের সাধনা বৃথা? এত বছর কি তিনি অভিনয় করে নিজেই নিজেকে ভুলিয়েছেন? না কি সব বন্ধন ছিন্ন হলেও শেষ বন্ধনটা ছিল? এতটাই তীব্র ছিল যে, তার তীব্রতায় ভুলে গিয়েছিলেন অন্য সব স্মৃতি? শালবনের গহনে সেই বন্ধনটুকু ছিঁড়ে যাওয়ার পর, বুঝি শেষ বারের মতো সব স্মৃতি ভেসে আসছে বৈশাখের বাতাসে। ভেসে আসছে, আবার মিশে যাচ্ছে শবদাহের ধোঁয়ায়। মিলিয়ে যাচ্ছে অরণ্যের গভীরতায়।

ওই যে মানুষটির চিতা, নিভে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো ধূম উদ্গীরণ করছে, তিনিই তো ছিলেন আনন্দর শেষ বন্ধন! তাঁর ব্যবহৃত বস্ত্রখণ্ডটি এখনও পরম মমতায় দুই হাতে ধরে রেখেছেন আনন্দ। বার বার ধোয়ার পরেও তা থেকে মলের দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর হয়নি। না, নিজের সঙ্গে কপটতা করবেন না আনন্দ। বস্ত্রখণ্ডটি তিনি উত্তম রূপে ধুতে পারেননি। কী ভাবে ধোবেন? কাপড়ের দিকে নজর দেবেন না কি অসুস্থ দাদার...

আবার চমকে উঠলেন আনন্দ। ‘দাদা!’ কত দিন পরে এই সম্বোধন, এই সম্পর্কের কথা তাঁর মনে এল! দাদা বেঁচে থাকলে কী বলতেন? স্মিত মুখে চেয়ে চুপ করে থাকতেন! না কি তিরস্কার করে বলতেন, “তথাগত কারও ভ্রাতা হন না আনন্দ।” অথচ নিজের কাছে অসত্য কী করে বলবেন আনন্দ! এই দাদার কথা ভেবেই তো ভিক্ষুসঙ্ঘে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। শাক্যকুলপতি শুদ্ধোদন তাঁর পিতৃব্য, এ কথা কী করে ভুলবেন আনন্দ?

ভাবতে ভাবতে আনন্দর মনে বড় বিস্ময় জাগে। তথাগত নিজেও কি ভুলতে পেরেছিলেন এই সম্পর্কের কথা? না হলে এত জ্ঞানী শিষ্য থাকতে আনন্দকেই কেন দিয়েছিলেন সর্বদা পাশে পাশে থাকার অধিকার? এ অধিকার তো পেতে পারতেন দেবী যশোধরা। না, না, দেবী তো নন! ভিক্ষুণী। ভিক্ষুণী যশোধরা। যদি আজ সেই ভিক্ষুণী বেঁচে থাকতেন, কোন মুখে দাঁড়াতেন আনন্দ তাঁর সম্মুখে? কী বলতেন তিনি এই অপরিচ্ছন্ন বস্ত্রখণ্ড দেখলে? “দাদা! দাদা!” বস্ত্রখণ্ডটিতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠলেন আনন্দ। পারেননি, তথাগতের যথাযথ সেবা করতে তিনি পারেননি। সর্বক্ষণ কাছে কাছে থেকেও কেন তিনি খেয়াল করলেন না, কর্মকার চুন্দ তথাগতকে কী খাদ্য পরিবেশন করেছেন?

চুন্দ কর্মকারের নাম মনে পড়তে মুখ তুললেন আনন্দ। চোখের জল মুছলেন। তাঁর মনে পড়ল, তথাগত তাঁকে একটা দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। গত কয়েক দিনের ব্যস্ততায় ব্যাপারটা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। চুন্দর সঙ্গে দেখা হলে হয়তো মনে পড়ত, কিন্তু পাবা ত্যাগ করার পর তাঁর সঙ্গে আর দেখা হয়নি। চুন্দ কি এর মধ্যে এখানে এসেছিলেন? বোধহয় আসেননি। এলে তিনি সংবাদ পেতেন। কিন্তু আজ? আজও কি চুন্দ আসেননি? উঠে দাঁড়িয়ে এক বার চার দিকে তাকালেন আনন্দ। দেখলেন, এক জন অল্পবয়সি ভিক্ষু তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।

“কিছু বলবে আয়ুষ্মান?”

“শ্রমণ মহাকাশ্যপ আপনাকে খুঁজছেন।”

“মহাকাশ্যপ! কোথায় তিনি?”

নবীন ভিক্ষুটি হাত তুলে নদীতীরের দিকে ইঙ্গিত করল। তার পর আনন্দকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। নদীতীর জনাকীর্ণ। তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা সসম্ভ্রমে পথ ছেড়ে দিলেন। সেই পথে কিছুটা হাঁটার পর আনন্দ দাঁড়ালেন। মুখ তুলে তাকালেন পশ্চিমের দিকে। বৈশাখের দীর্ঘ দিবসের অবসান হয়েছে। একটু পরেই জ্যোৎস্নায় ভেসে যাবে চরাচর। কিন্তু সেই আলোয় কি...?

আনন্দ বললেন, “আয়ুষ্মান, আমি মহাকাশ্যপের কাছে নিজেই চলে যেতে পারব। তুমি আমার একটা কাজ করে দেবে?”

“আজ্ঞা করুন।”

“পাবা নগরীর কর্মকার চুন্দকে তুমি চেনো?”

উত্তরে নবীন ভিক্ষু সম্মতিবাচক মাথা নাড়ল।

“তাঁর সন্ধান করো। যদি সন্ধান পাও, আমাকে সংবাদ দেবে। আর তাঁকে বলবে, তিনি যেন আমার জন্য অপেক্ষা করেন।”

“যথা আজ্ঞা।”

জনমণ্ডলীর মধ্যে মিলিয়ে গেল তরুণ ভিক্ষু। আনন্দ একটু নিশ্চিন্ত বোধ করলেন। তিনি নিজে খোঁজ করতে গেলে চুন্দ হয়তো সামনে আসতেন না। দূর থেকে তাঁকে দেখেই আত্মগোপন করতেন। শেষ বার যখন চুন্দকে দেখেছিলেন, তখন তাঁর চোখে মহা-অপরাধীর গভীর গ্লানি লক্ষ করেছিলেন আনন্দ।

কুশীনারা আসার পথে পাবা নগরীতে চুন্দ কর্মকারের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন তথাগত। সঙ্গে তাঁর শিষ্যরাও। সেই যে দেবদত্ত পাহাড়ের উপর থেকে পাথর ফেলে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন, প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছিলেন তথাগত। তার পর থেকে আর আগের মতো দীর্ঘ পথ অনায়াসে অতিক্রম করতে পারেন না।

সেই রাতে আহারের পর ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে আনন্দ দেখে ফেলেছিলেন, বাড়ির পিছনের জমিতে চুন্দ কী যেন করছেন।

“কী করছেন চুন্দ?” নিছক কৌতূহলের বশেই তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন আনন্দ।

ম্লান মুখে চুন্দ বলেছিলেন, “তথাগত বলেছেন, এই খাদ্য মাটিতে পুঁতে দিতে। তাঁকে ছাড়া আর কাউকে যেন এই খাদ্য দেওয়া না হয়।”

“শিষ্যদের না দিয়ে তথাগত একা খেয়েছেন! কী খাদ্য এটা?”

“শূকরমর্দব প্রভু। আমি নিজে রেঁধেছিলাম। বুঝতে পারিনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

শূকরমর্দব! সর্বনাশ! প্রমাদ গুনেছিলেন আনন্দ, “চুন্দ আপনি তো জানেন, তথাগতর শরীর আর আগের মতো নেই। বয়স হয়েছে। তার উপরে এই গুরুপাক!”

“আনন্দ, আনন্দ,” বিলম্ব দেখে মহাকাশ্যপ নিজেই এগিয়ে এসেছেন আনন্দর কাছে। সারিপুত্ত ও মৌদগল্যায়নের প্রয়াণের পর তথাগতর শিষ্যদের মধ্যে তিনিই প্রধান। মহাপরিনির্বাণের সময় তিনি কুশীনারায় ছিলেন না। সংবাদ পেয়ে যখন এসে পৌঁছলেন তখন দাহকার্যের প্রস্তুতি চলছে। আর সঙ্গে চলছে, তথাগতর চিতাভস্মের দখল নিয়ে কাড়াকাড়ি।

কুশীনারা ও পাবার মল্লরা চিতাভস্মের দখল ছাড়তে নারাজ। তাঁদের ভূমিতে বুদ্ধ নির্বাণলাভ করেছেন। তাই তাঁরা এখানেই চিতাভস্মের উপর স্তূপ নির্মাণ করতে চান। কিন্তু কপিলাবস্তুর শাক্যরা সেই দাবি মানতে নারাজ। তাঁরা চিতাভস্ম নিয়ে যেতে চান তথাগতর জন্মস্থানে। তথাগতর প্রিয় নগরী বৈশালীতে স্তূপ নির্মাণ করতে চান লিচ্ছবীরা। অল্লকপ্প, বেটদ্বীপ এবং রামদ্বীপের প্রতিনিধিরাও নিজ নিজ দাবি নিয়ে উপস্থিত। সর্বাপেক্ষা প্রবল দাবিদার হিসেবে উপস্থিত হয়েছে মগধসম্রাট অজাতশত্রুর দূত।

“কী করা যায় বলো তো ভ্রাতা আনন্দ?” বললেন মহাকাশ্যপ।

কী বলবেন আনন্দ? কী করতে পারেন তিনি? কোনও সমস্যায় পড়লে, মনে দ্বিধা দেখা দিলে আর কার কাছে নির্দেশ চাইতে যাবেন? যাঁর কাছে যেতেন, তিনি তো আনন্দকে নিজের বিবেক-বিবেচনার উপর নির্ভর করার উপদেশ দিয়ে চিরতরে চলে গিয়েছেন। ধীর পায়ে চিতার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। আনন্দ ও মহাকাশ্যপকে বেষ্টন করে অনেক সাধারণ মানুষও এগিয়ে চলেছেন। চিতাভস্মের অধিকার কে পাবেন তা নিয়ে তাঁদের কৌতূহলের অন্ত নেই। তথাগতর প্রধান শিষ্যদ্বয় দায়িত্ব নিলেই সব বিবাদের অবসান হয়।

এক ব্রাহ্মণকে দেখিয়ে মহাকাশ্যপ বললেন, “এঁর প্রস্তাব, তথাগতর চিতাভস্ম সকল প্রার্থীর মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হোক।”

তাঁর কথার উত্তর না দিয়ে, আনন্দ চিতার সম্মুখের মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন। দুই প্রধান ভিক্ষুকে আসতে দেখে বিবদমান রাজপ্রতিনিধিরা কিছু ক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়েছিলেন। আনন্দ প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই তাঁদের কণ্ঠস্বর আবার তীব্র হয়ে উঠল।

আনন্দর সদাপ্রসন্ন মুখে বিরক্তির ছায়া পড়ল। মহাকাশ্যপ কেন তাঁকে এখানে নিয়ে এলেন? কিন্তু আজকের দিনে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন না। নিজেকে সংযত করে বললেন, “আপনারা কেউ চুন্দকে দেখেছেন?”

সমস্বরে প্রশ্ন, “চুন্দ? কোন চুন্দ?”

“সেই দুষ্ট কর্মকার? যে তথাগতকে কুখাদ্য খাইয়েছে? ”

“সে কোন মুখে আসবে? তার জন্যই তো...”

“শান্ত হোন আপনারা, শান্ত হোন,” স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে চিৎকার করতে বাধ্য হলেন আনন্দ, “আপনারা কেউ এমন কথা বলে চুন্দকে বিব্রত করবেন না। স্বয়ং তথাগত বলে গিয়েছেন, কর্মকার চুন্দ অনেক পুণ্য অর্জন করেছেন। তাই তাঁর দেওয়া অন্নপিণ্ড গ্রহণ করে তথাগত মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছেন।”

“ভ্রাতা আনন্দ,” বললেন মহাকাশ্যপ, “তথাগত সত্যই বলেছেন এ কথা?”

“হ্যাঁ মহাকাশ্যপ। তথাগত বলেছেন, সুজাতার দেওয়া পরমান্ন আর চুন্দর দেওয়া শূকরমর্দব দুইই সমান পবিত্র। একটি ভোজন করে তথাগত বোধিলাভ করেছিলেন, অন্যটি ভোজন করে লাভ করেছেন নির্বাণ!” বলতে বলতে আনন্দর দু’চোখ ভরে জল এল। দায়িত্বের গুরুভারে এত ক্ষণ মহাকাশ্যপ পাথর হয়ে ছিলেন। এ বার তিনিও আবেগ সম্বরণ করতে পারলেন না। দু’হাতে জড়িয়ে ধরলেন আনন্দকে।

নীরবতা গ্রাস করেছে রাজপ্রতিনিধিদের। জনমণ্ডলীকেও। শুধু দূরের শালবনের মর্মরধ্বনিতে ভেসে এল সমর্থনের সুর, ‘শুনেছি, আমরাও শুনেছি সেই বাক্য। তথাগত বলেছেন, চুন্দ মহাপুণ্যবান।’

সহসা এক কিশোরকণ্ঠের চিৎকারে নীরবতা ছিন্ন হল। ভিড় ঠেলে দ্রুত এগিয়ে আসছে সেই

নবীন ভিক্ষু।

“কর্মকার চুন্দর সন্ধান পেয়েছি।”

“কোথায়? কোথায় তিনি?” উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠলেন আনন্দ।

“চৈত্যের পিছনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। আপনার কথা বলতেই ছুটে পালিয়ে গেলেন। ওই শালবনের দিকে...” বলল নবীন ভিক্ষু।

“মহাকাশ্যপ, আমি চললাম। এখানকার সব দায়িত্ব তোমার উপরেই রইল,” বলে আনন্দ দ্রুতপদে এগিয়ে গেলেন।

“ভ্রাতা আনন্দ,” বললেন মহাকাশ্যপ, “কোথায় যাবে তুমি?”

“চুন্দর সঙ্গে দেখা করতে। তথাগত বলেছেন, তাঁর মনের গ্লানি দূর করতে হবে।”

“একটু দাঁড়াও, আমিও তোমার সঙ্গে যাব।”

“কিন্তু তথাগতর চিতাভস্ম?”

প্রশ্ন শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন মহাকাশ্যপ। দেখলেন, অজাতশত্রুর দূত পিছু পিছু আসছেন। বলছেন, “তথাগতর চিতাভস্মের কী হবে?... তথাগত ছিলেন ক্ষত্রিয়। আমাদের সম্রাটও তাই। সম্রাট বলেছেন...”

তাঁর কথা শেষ হতে না হতে বেটদ্বীপের প্রতিনিধি বললেন, “আমরা ব্রাহ্মণ। বর্ণশ্রেষ্ঠ। তাই আমাদের অধিকার...”

মহাকাশ্যপের ভ্রু কুঞ্চিত হল। জাত! জাত! জাতের অহঙ্কার! হা তথাগত! আপনিও কি ব্যর্থ হলেন? অসহায়ের মতো তিনি তাকালেন আনন্দর দিকে। দেখলেন, তাঁর মুখে ফিরে এসেছে পরিচিত প্রসন্নতা। প্রিয় কার্য সম্পাদনের আগ্রহে অধীর তিনি। মৃদু হেসে মহাকাশ্যপ আনন্দকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।

যাত্রা শুরুর আগে আনন্দ সেই নবীন ভিক্ষুকে কাছে ডাকলেন। তার হাতে তথাগতর বস্ত্রখণ্ডটি তুলে দিয়ে বললেন, “এটিকে সযত্নে রেখো আয়ুষ্মান।”

তার পর মিলিয়ে গেলেন জ্যোৎস্নায় আর্দ্র শালবনের ভিতরে। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়কে ফেলে এগিয়ে গেলেন শূদ্রের কুটিরের দিকে।

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ

অন্য বিষয়গুলি:

Gautama Buddha Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy