Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১০

শেষ নাহি যে

পূর্বানুবৃত্তি:  দরিয়ার কাছে দ্রুত পৌঁছতে চায় বিহান। কিন্তু বাস, গাড়ি কিছুই পায় না সে। তখন বকুলতলার একমাত্র মহিলা রিকশাচালক মিনু বিহানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। রিকশায় বসে তার মনে পড়ে স্কুলে পড়ার সময় সরস্বতী পুজোর দিন দরিয়াকে প্রথম দেখার কথা। পূর্বানুবৃত্তি:  দরিয়ার কাছে দ্রুত পৌঁছতে চায় বিহান। কিন্তু বাস, গাড়ি কিছুই পায় না সে। তখন বকুলতলার একমাত্র মহিলা রিকশাচালক মিনু বিহানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। রিকশায় বসে তার মনে পড়ে স্কুলে পড়ার সময় সরস্বতী পুজোর দিন দরিয়াকে প্রথম দেখার কথা। 

ছবি: শুভম দে সরকার

ছবি: শুভম দে সরকার

ইন্দ্রনীল সান্যাল
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৫
Share: Save:

বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা মেয়েটাকে দেখে বুঝল, তার মধ্যে এমন সব অনুভূতির জন্ম হচ্ছে, যা সে এত দিন টের পায়নি। বুকের বাঁ দিকে গুবগুবি বাজছে। ঘামে হাত ভিজে গিয়েছে। জিভ শুকিয়ে আসছে। খালি মনে হচ্ছে, মেয়েটা যদি তাকে অঞ্জলির জন্যে ফুল না দেয়, তা হলে সে মরেই যাবে। কী যেন নাম মেয়েটার? সাগরিকা না মণিকা? না কি অন্য কিছু? পুরো দুনিয়া ভুলে গিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিহান। মেয়েটা ফুল বিলি করতে করতে তার দিকে আসছে। আচ্ছা, মেয়েটা কি স্লো মোশনে আসছে? তা না হলে ওর আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন? চাতকপাখি যে ভাবে রৌদ্রদগ্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, বিহান সেই ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।

হঠাৎ বিহানের কোমরে সনৎ কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলল, “মালটাকে হেব্বি দেখতে না?”

মাল! কার সম্পর্কে এই শব্দ ব্যবহার করল সনৎ? দাঁতে দাঁত চেপে বিহান বলল, “তুই মাল বললি কাকে?”

“‘আরে! ওই দরিয়া নামের মেয়েটাকে। ওর সঙ্গে যেটা আছে, সেটাও ঘাপচু মাল। তবে দরিয়ার পাশে জাস্ট নস্যি!”

বিহান সনতের কথা শুনছে না। সে তাকিয়ে রয়েছে হলুদ প্রজাপতির দিকে। পাখনা মেলে প্রজাপতি তার দিকেই আসছে। কী যেন নাম? ও হ্যাঁ! দরিয়া। দরিয়াও খেয়াল করেছে, একটা ছেলে ভ্যাবা গঙ্গারামের মতো তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে বিহানের দিকে তাকিয়ে পাতলা হাসল। বিহান জানে না তার মধ্যে কী ভর করেছে। সে দরিয়ার দিকে তাকিয়ে অবিকল একই কায়দায় হাসল।

ফুল দিতে দিতে দরিয়া আরও কাছে চলে এসেছে। এ বার সে তার দুটো ভুরু তুলে নাচাল। বিহান ঘোরের মধ্যে রয়েছে। সেও তাই করল। দরিয়া হার স্বীকার করে নিয়েছে। অসহায় বালিকার মতো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বিহানের সামনে এসে এক মুঠো ফুল এগিয়ে দিল। বিহান হাত পেতে ফুল নিল। নেওয়ার সময়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য বিহানের আঙুল স্পর্শ করে গেল দরিয়ার আঙুল। কী নরম! কী তুলতুলে! ঠিক যেন পাখির পালক! ঢোক গিলে, ভারী গলায় বিহান বলল, “তেরা নাম কেয়া

হ্যায় বাসন্তী?”

বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা মেয়ে দু’টি হেসে কুটোপাটি। দরিয়া সনতের হাতে ফুল দেওয়ার সময়ে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল, “ওর নাম মণিদীপা। আর আমার নাম দরিয়া। অঞ্জলি দিয়ে চলে যেও না। প্রসাদ খেয়ে যাবে।”

“আচ্ছা,” ঘাড় নাড়ল বিহান। পুরোহিতমশাই মন্ত্রপাঠ শুরু করেছেন। বিহান চোখ বন্ধ করে পুজোর মন্ত্র বিড়বিড় করছে। এগুলো ছোটবেলা থেকে বলে বলে মুখস্থ। হঠাৎ তার কানের কাছে হিসহিস করে সনৎ বলল, “তুই দরিয়ার দিকে তাকাবি না বলে দিলাম। দরিয়া আমার!”

মন্ত্রপাঠ বন্ধ করে সনতের দিকে তাকাল বিহান। গত এক মিনিটে তার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না। অচেনা একটা মেয়েকে দেখে এত উতলা হওয়ার কারণ তার কাছে পরিষ্কার নয়। সিনেমায় দেখেছে, শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজলের প্রেম হয়। দেবের সঙ্গে কোয়েলের। সেই প্রেম নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া বিরাট চাপের ব্যাপার! হাজার প্রশ্ন, লক্ষ কনফিউশন। তার মধ্যে গাম্বাট সনৎ নতুন ঝামেলা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বিহান অবাক হয়ে বলল, “দরিয়া তোর? এই কথাটার মানে কী?”

“আমি ওকে ভালবাসি।”

“উরিত্তারা! এই কথাটা দরিয়া জানে?”

“এখনও নয়। দু’এক দিনের মধ্যেই মালটাকে তুলে ফেলব।”

অঞ্জলি শেষ হয়ে গিয়েছে। হাতের ফুল সরস্বতী ঠাকুরের দিকে ছুড়ে বিহান বলল, “সবাই তোর কাছে মাল, তাই না রে সনৎ? মদও মাল, মণিদীপাও মাল, দরিয়াও মাল।”

“ম্যাচ্ছেলে নিয়ে কী বুঝিস তুই?” বিহানের থুতনি নেড়ে দিল সনৎ, “সন্টা মনা! বাড়ি গিয়ে মায়ের আঁচলের তলায় ঢুকে বসে থাকিস আর দুদুভাতু খাস। এই সব হল অ্যাডাল্টদের ব্যাপার!”

“ট্রেন ঢুকে গিয়েছে!” মিনুর চিৎকারে ঘোর কাটল বিহানের। সে দেখল মিনু প্যাডেল মারছে ঝড়ের গতিতে। বকুলতলা স্টেশন এখনও অনেকটা দূর। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকে গেলেও এখনও দাঁড়ায়নি। তার মানে মিনিটখানেক সময় পাওয়া যাবে। মিনুদি হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে, “ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য টাইম নষ্ট করবে না। সোজা উঠে যাবে।”

“তুমি কথা বোলো না। হাঁপিয়ে যাবে।” স্টেশনের দিকে তাকিয়ে বলছে বিহান। ট্রেন বকুলতলা স্টেশনে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে, যাত্রীরা ওঠানামা করছে।

গম্ভীর হর্ন বাজিয়ে ট্রেন যাত্রা শুরু করল।

রিকশা থেকে এক লাফে নেমেছে বিহান। দৌড় দিয়েছে স্টেশনের দিকে। ট্রেনের গতি বাড়ছে। সে কি ট্রেনটা ধরতে পারবে?

মিনু চিৎকার করে বলছে, “তুমি প্রথম কামরায় উঠে যাও। ওখেনে আমার বর আচে।”

বিহান স্টেশনে ঢুকল। তরতর করে সিঁড়ি টপকে পৌঁছে গেল প্ল্যাটফর্মে। সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে হাওড়াগামী ট্রেন। গতি বেড়ে যাওয়ার ফলে কামরাগুলো আর আলাদা করে দেখা যাচ্ছে না। ঝাপসা প্রতিবিম্বর মতো লাগছে। বিহান গতি বাড়াল। দৌড়তে লাগল ট্রেনের পাশাপাশি। আর একটু দৌড়লেই প্ল্যাটফর্ম শেষ হয়ে গিয়ে পাথর আর খোয়ার ঢিবি শুরু হবে। ওইখানে মুখ থুবড়ে পড়লে আর দেখতে হবে না!

আর কিছু ভাবছে না বিহান। ছুটন্ত অবস্থায় সে ট্রেনের হাতলের দিকে হাত বাড়াল। এবং ধাতব হাতল স্পর্শ করা মাত্র তার ঘেমো হাত পিছলে গেল।

রাজু আর সাম্যব্রত মিলে একটা নড়বড়ে ট্রলি নিয়ে এসেছে। ট্রলিটা দেখে ঘেন্না করছে দরিয়ার। তারা গরিব হতে পারে, কিন্তু বাড়িতে পরিষ্কার বিছানায় শোয়। পরিষ্কার জামাকাপড় পরে। এই ট্রলিটা ভীষণ নোংরা। এক পাশে কালচে লাল দাগ লেগে রয়েছে। বোধহয় শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। এই ট্রলিতে দরিয়াকে শুতে হবে? সাম্যব্রতর দিকে করুণ মুখে তাকাল সে।

সাম্যব্রত অসহায় ভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, “কিছু করার নেই রে মা! চোট না লাগলে পাড়ার নার্সিং হোমেই সব হয়ে যেত।”

ঠিক কথা। এখন আর এই সব ভেবে লাভ নেই। দরিয়া কোনও রকমে নিজেকে হিঁচড়ে ট্রলিতে ওঠাল। রাজু অ্যাম্বুল্যান্স ঘুরিয়ে পার্কিং লটের দিকে চলে গেল।

ট্রলিতে শুয়ে দরিয়া দেখল, মোটা আর বেঁটে একটা লোক কুতকুতে চোখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। লোকটার বয়স বছর পঞ্চান্ন। মাথার চুল ধবধবে সাদা। কামানো গাল। পরনে ফতুয়া আর পাজামা। কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। কপালে তিলক কাটা। ট্রলির হ্যান্ডেলে হাত রেখে লোকটা বলল, “মা জননীর কপাল খারাপ। ভুল দিনে ব্যথা উঠেছে।”

“আপনি কে?” জিজ্ঞেস করল দরিয়া।

“আমার নাম মন্টু হাইত,” হাত জড়ো করেছে লোকটা, “এই হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। বয় আর গার্লের ঠাকুরদা হয়ে গেছি, কিন্তু উপাধিটা রয়ে গেছে।”

“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মন্টুদা,” বলল দরিয়া।

“আরও কষ্ট বাকি আছে রে মা!” স্নেহ মেশানো গলায় বলে মন্টু, “আমাদের হাসপাতালে মেটারনিটি ওয়ার্ডের কোনও বেড খালি নেই। তোকে মেঝেয় অ্যাডমিশন

নিতে হবে।”

“মেঝে?” চমকে উঠে সাম্যব্রতর হাত চেপে ধরে দরিয়া।

“এখন নিয়ম হয়েছে, কোনও পেশেন্ট ফেরানো যাবে না। সবাইকে ভর্তি করতে হবে। একটা বেডে তিন জন মা শোওয়ার পরেও পোয়াতির লাইন কমছে না। তখন মেঝেই ভরসা।” ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে একটা বিল্ডিং-এ ঢুকেছে মন্টু।

দরিয়া সাম্যব্রতর হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চলো!

প্লিজ বাবা!”

সাম্যব্রত বললেন, “এখানে পেয়িং বেডের ব্যবস্থা নেই?”

“সেগুলোও ভর্তি,” দাঁড়িয়ে পড়েছে মন্টু। সাম্যব্রতর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখে বলছে, “আপনারা বড় ফেমিলির মানুষ। খরচ করতে পিছপা হবেন না। বিপদে পড়েছেন বলে বঙ্গবাসী হাসপাতালে এসেছেন। তা না হলে মা জননীর বাচ্চার নার্সিং হোমে জন্মানোর কথা।”

সাম্যব্রত এত ক্ষণে বুঝতে পারলেন। সৌম্যদর্শন মানুষটি ঘুষ চাইছে। ইংরিজিতে যাকে বলে ব্রাইব বা স্পিড মানি, হিন্দিতে রিশ্‌ওয়াত, সংস্কৃতে উৎকোচ। সাম্যব্রত জীবনে কখনও ঘুষ নেননি। মহাকরণে চাকরির সময়ে অনেক সুযোগ এসেছিল। তিনি ঘুষ নেন না বলে ডিপার্টমেন্টের বাকিদের অসুবিধে হত। কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস করত না। ঘুষ দেওয়ার কথাও সাম্যব্রত ভাবতেও পারেন না। একটা আস্ত জীবন এই ভাবে কাটিয়ে আজ তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন, যখন তাঁকে ঘুষ দিতে হবে। না দিয়ে উপায় নেই। এতে তিনি আদর্শচ্যুত হচ্ছেন কি না তা নিয়ে ভাবার সময় এটা নয়। মুশকিল অন্য জায়গায়। ঘুষ কী ভাবে অফার করতে হয়, এটা তিনি জানেন না।

সাম্যব্রত নিজের মতো করে কথা সাজিয়ে নিলেন। বললেন, “আপনি তো সবই জানেন। আমার টাকা খরচ করার সামর্থ্য আছে। তা-ও এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। আপনি একটা বেডের ব্যবস্থা করে দিন। যা লাগে দিয়ে দেব স্যর!” ওয়ার্ড বয়কে তিনি সচেতনভাবে ‘স্যর’ বলেছেন। ইগোতে একটু মালিশ করা আর কী!

“আমার হাতে সেই ক্ষমতা নেই দাদা,” দীর্ঘশ্বাস ফেলল মন্টু, “আমি বড় জোর ডাক্তারবাবু বা ওয়ার্ড মাস্টারকে অনুরোধ করে দেখতে পারি। ওঁদের আবার খাঁই অনেক।”

“কত স্যর?” ভয়ে ভয়ে বললেন সাম্যব্রত। তাঁর কাছে যা টাকা আছে, তাই দিয়ে খাঁই মিটবে তো!

“ডাক্তারবাবু তিন নেবেন। মাস্টারমশাই নেবেন দুই। আমি এক। পারলে বলুন। না হলে মেঝের ব্যবস্থা দেখি,” স্ত্রীরোগ বিভাগের ইমার্জেন্সিতে ঢোকার আগে দাঁড়িয়ে পড়ে হাত পেতেছে মন্টু।

“কোনও অসুবিধে নেই স্যর। আপনার ভরসাতেই তো এখানে আসা,” পকেট হাতড়ে তিনটে দু’হাজার টাকার নোট বার করে মন্টুর হাতে গুঁজে দিয়েছেন সাম্যব্রত।

ইমার্জেন্সি রুমে ডাক্তারের চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন মাঝবয়সি এক চিকিৎসক। রোগা, বেঁটে, রাজ্যের বিরক্তি মুখে জমা হয়েছে। এক ভাঁড় চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “সিস্টার, ‘আরোগ্য নিকেতন’ পড়েছেন?”

কর্তব্যরত সিস্টার বললেন, “ডক্টর ঘোষ, বইটা নীহাররঞ্জন গুপ্তের লেখা না?”

দরিয়া হেসে ফেলেছে। সে খুব একটা গল্প-উপন্যাস পড়ে না। কিন্তু ‘আরোগ্য নিকেতন’ যে নীহাররঞ্জন গুপ্তের লেখা নয়, এটা তার জানা। ডক্টর ঘোষ আড়চোখে দরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, “হাসছ কেন? এটা কি নাট্যশালা?”

সৌভাগ্যবশত এই লাইনটাও দরিয়ার জানা। সে আবারও হেসে ফেলল। ডক্টর ঘোষের মুখ থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিরক্তির মুখোশটা সরে গেল।

তিনি বললেন, “কে বলেছিল?”

‘‘প্রসন্ন গুরুমশাই,” ফিক করে হাসল দরিয়া।

“আর ‘আরোগ্য নিকেতন’?’’

‘‘তারাশঙ্করের লেখা।’’

উত্তরে ডক্টর ঘোষ খুশি হয়ে দরিয়াকে নিয়ে এগজামিনেশন রুমে চলে গেলেন।

ক্রমশ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy