ছবি: সৌমেন দাস
রবিবারের সকাল। বাজার সেরে ঘেমে নেয়ে নিজেদের হাউজ়িং-এ ফিরল দেবাংশু। লিফটের দরজার ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা ‘পাঁচ’। অর্থাৎ দেবাংশুদের ছ’তলায় কেউ গিয়েছে। ওটাই টপ ফ্লোর। চারটে ফ্ল্যাট।
উপরে উঠে দেবাংশু দেখে, তার ফ্ল্যাটের দরজায় গোটা পাঁচ-ছ’জনের ভিড়। লিফটের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকিয়েছে লোকগুলো। সকলেই পাড়ার ক্লাবের। কপালে ভাঁজ পড়ে দেবাংশুর। কী দরকারে এসেছে এরা?
তপন নামের লোকটা বলতে থাকে, ‘‘এই তো, দাদা এসে গেছেন। বৌদি বলছিলেন, ভিতরে বসতে। আমরা বললুম, বসতে লাগবে না। ছুটির দিন দাদা তো এই টাইমেই বাজার করে ফেরেন।’’
মুখটা গম্ভীর রেখে লোকগুলোর মাঝখান দিয়ে হেঁটে যায় দেবাংশু। চটি ছেড়ে, ঘরের মাঝে এসে ঘুরে দাঁড়ায়। পরিচারিকা বেলা দেবাংশুর হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে গেল। ওকে অনুসরণ করে ভিড়ের কয়েক জোড়া লোলুপ চোখ। বেলা এখন আঠেরো। দেবাংশুর বৌ-মেয়ে আছে এখানেই। পাড়ার এই গ্রুপটাকে পছন্দ করে না সে। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। এখন জিজ্ঞেস করে, ‘‘হ্যাঁ, বলুন, কী ব্যাপার?’’
ওদের মধ্যে লিডার গোছের দিলীপ পাল, বলে উঠল, ‘‘সামনের রোববার পাড়ায় রক্তদান শিবির দাদা। আপনাকে পাশে চাই।’’
একটুও সময় নষ্ট না করে দেবাংশু বলে, ‘‘এই রে, সামনের সানডেতে থাকছি না। দেশের বাড়ি যাব। বাবার শরীর খুব খারাপ।’’
তোষামুদে ভাব উধাও হল লোকগুলোর চেহারা থেকে। হাল না ছাড়ার চেষ্টায় লিডার দিলীপ পাল বলে, ‘‘একটু ম্যানেজ করা যাবে না দাদা? যদি পরের উইকে যান বাড়ি।’’
‘‘সরি, এমনিতেই অনেক দেরি করে ফেলেছি। বেশ চিন্তাও হচ্ছে বাবার ব্যাপারে। আপনারা চাঁদাটা নিয়ে যান বরং।’’
দিলীপের বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বলল, ‘‘চাঁদা তো লাগবেই, ডোনারদের ভাল গিফট দেওয়ার ইচ্ছে আছে আমাদের। তবে শুধু চাঁদার জন্য আমরা এত জন আপনার কাছে আসি! আপনি সেলেব্রেটি মানুষ। ক্যাম্পে উপস্থিত থাকলে আমাদের ওয়েটটা বাড়ে।’’
কথা কেড়ে দিলীপ বলে, ‘‘আপনি ব্লাড ডোনেট করছেন, এ রকম ছবি কাগজে, টিভিতে গেলে পাড়ারই সুনাম হত। উৎসাহ পেত অন্য ডোনাররা।’’
গলায় নিরুপায় ভাব এনে দেবাংশু বলে, ‘‘কিছু করার নেই। বুঝতেই পারছেন, বাবা বলে কথা! দূরে থাকি, তাতেই একটা গিল্টি ফিল হয়। বাড়িতে বলাও হয়ে গেছে।’’
বড় করে একটা শ্বাস ফেলে দিলীপ বলল, ‘‘এর পর আর কী বলব! তবু যদি কোনও ভাবে আসতে পারেন, ভাল লাগবে।’’
ফিরে যাচ্ছে দিলীপের দলবল। দেবাংশু ওদের উদ্দেশে বলে, ‘‘আমি ক্লাবঘরে গিয়ে চাঁদাটা দিয়ে আসব। কাউকে পাঠাতে হবে না।’’
‘‘ওকে দাদা,’’ মুখ না ঘুরিয়ে বলল দলের একজন।
সদর দরজা বন্ধ করতেই সামনে এসে দাঁড়াল শ্রীতমা। বিস্ময়ের গলায় জানতে চাইল, ‘‘কখন ঠিক হল, সামনের রবিবার বর্ধমান যাচ্ছি? বাবা-মা তো এখন দিল্লিতে!’’
মনে মনে জিভ কাটে দেবাংশু, তাড়াহুড়োতে “দেশের বাড়ি” বলে ফেলেছে। দিল্লিতে ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছে বাবা-মা। মুখে ছদ্মহাসি এনে শ্রীতমাকে বলে, ‘‘যাব আসলে মন্দারমণি। ওদের বর্ধমান বললাম।’’
‘‘হঠাৎ মন্দারমণিই বা যাচ্ছি কেন? কখন ঠিক করলে?’’
‘‘এই তো একটু আগে। ওরা যখন বলল ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে থাকতে,’’ বলে বৌয়ের পাশ দিয়ে বাথরুমের দিকে এগোয় দেবাংশু।
‘সেলেব্রেটি’ অভিধার মর্যাদা আজ যে কত তলানিতে ঠেকেছে! নিজেকে দিয়েই সেটা উপলব্ধি করতে পারে দেবাংশু। ক্লাবের লোকগুলো ওই অভিধায় অভিহিত করে গেল তাকে। অথচ দেবাংশু শিল্পী নয়, জনপ্রতিনিধিও না। সে কলেজে পড়ায় আর পত্রপত্রিকায় টুকটাক প্রবন্ধ, উত্তর সম্পাদকীয় লেখে। যারা এসেছিল একটু আগে, সে সব লেখার কিছুই পড়েনি। দেবাংশুকে খবরের চ্যানেলগুলোতে হামেশাই দেখা যায়। প্যানেল ডিসকাশনে বসে। কলেজবন্ধু সুগত তাকে প্রথম টিভির আলোচনাচক্রে বসায়। সুগত তখন ওই চ্যানেলটির কর্তা বিশেষ। দেবাংশু বাগ্মী, ভাল বলে। সেই সূত্রে ডেকেছিল সুগত। বন্ধুর মান রেখেছিল দেবাংশু। সুগতদের চ্যানেলের নিয়মিত অতিথি-বক্তা হয়ে যায়। ডাক আসতে থাকে অন্য চ্যানেলগুলো থেকেও। দেবাংশু আলোচনায় মধ্যপন্থায় অবিচল থাকতে পারে। অনেকটা সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না গোছের।
কখনওই কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে তার বক্তব্য চলে যায় না। নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান বোঝাতে চ্যানেলগুলোর দরকার পড়ে এ রকম অন্তত এক জন মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী বাগ্মীর। টিভির প্যানেল ডিসকাশনে অংশগ্রহণ বেড়ে চলে দেবাংশুর। আত্মীয়-বন্ধুরা তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে থাকে। রাস্তাঘাটে, বাসে, মেট্রোরেলে লোকে নোটিস করে। পাড়া-প্রতিবেশীরা সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে তাকায়। আর এই সুবাদেই ক্লাবের লোকগুলো ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে থাকার আমন্ত্রণ নিয়ে এসেছিল। পাড়ার ক্লাবটাকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না দেবাংশু। ওদের কর্মকাণ্ডের ফলে মনে হয় এই ফ্ল্যাটটা কেনার টাকা পুরোটাই জলে গিয়েছে। এটা বিক্রি করে অন্য ফ্ল্যাটের খোঁজে আছে দেবাংশু। ফ্ল্যাটটা মাঠমুখো, মেট্রো স্টেশন হাঁটাপথে পাঁচ মিনিট। তখন কি আর জানত, সারা বছর জুড়ে ওই মাঠে ঘন ঘন ভূতের নেত্য চলবে! দশ বছর হতে চলল ফ্ল্যাটটা কিনেছে, মাঠে তখন দুর্গা, কালী আর সরস্বতী পুজো হত। মাইক বাজত, মদ খেয়ে রাত অবধি নাচ-হইচই… চলত সবই। দেবাংশুর পড়ালেখায় ব্যাঘাত হলেও, ওই ক’টা দিন তবু সহ্য করে নেওয়া যেত। ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল পুজোর সংখ্যা। বিশ্বকর্মা, কার্তিক, শনি, শীতলা, গণেশ, হনুমান... এ সব পুজোয় ক্লাবের ছেলেদের কোনও ভক্তি নেই, আছে হুল্লোড় করার অজুহাত। ওদের মাইকের আওয়াজ, সিটি, চিৎকার রাত অবধি আছড়ে পড়তে থাকে দেবাংশুর ফ্ল্যাটে। দেবাংশুর মেয়ে এখন ক্লাস টু। পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে তারও। পাড়ার অনেকেই ক্লাবটার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস নেই। রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয় পায় ক্লাবের ছেলেরা। বেশ কয়েকবার মাথা গরম করে মাইকের আওয়াজ কমাতে বলতে গিয়েছে দেবাংশু। ওরা কমিয়েছে। ফ্ল্যাটে ফিরে আসতে না আসতেই ফের তারস্বরে বেজেছে মাইক। এর পরেও লোকগুলো কী ভাবে আশা করে, ওদের অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে দেবাংশু?
জল খাবার নিয়ে এল শ্রীতমা। থালা টেবিলে রেখে বলল, ‘‘তুমি থাকতে পারতে। উদ্যোগটা ভাল।’’
লুচি-তরকারি মুখে পোরার আগে দেবাংশু বলে, ‘‘ভাল না কচু। আরও একটা বেলেল্লাপনা করার উপলক্ষ। সারা দিন গান বাজবে। ভুল উচ্চারণে ঘন ঘন ঘোষণা...’’
‘‘তবু রক্ত তো একটা জরুরি জিনিস। মোচ্ছব করেও যদি জোগাড় করতে পারে, তা হলে মানুষের সঙ্কটকালে কাজে লাগবে।’’
বৌয়ের কথায় পোক্ত তার্কিক দেবাংশু একটু থতমত খেল। দ্রুত যুক্তি সাজিয়ে নিয়ে বলে, ‘‘আমার তো ওখানেই আপত্তি। মহৎ কাজকে সামনে রেখে ওরা আসলে ক্লাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। দেখলে না বলে গেল ভাল গিফট দেবে ডোনারদের! ফুর্তি-ফার্তাই করবে। ওদের সমর্থন করে রক্ত দিতে যাব? ওরা তোমাকেও বলবে ব্লাড ডোনেট করতে। রক্তদান করার হলে অন্য ক্যাম্পে গিয়ে করব। কতই তো হয়।’’
‘‘তুমি শেষ কবে রক্ত দিয়েছ?’’
শ্রীতমার কথায় হাতে তোলা গ্রাস নামিয়ে নেয় দেবাংশু। শ্লেষের গলায় বলে ওঠে, ‘‘কী ব্যাপার বলো তো, ক্লাবের হয়ে এত কথা বলছ! যারা এসেছিল, তাদের মধ্যে তোমার রূপমুগ্ধ ছিল নাকি কয়েকজন? তুমি রাস্তায় বেরোলে যারা চোখ ফেরাতে পারে না!’’
শ্রীতমা ঝাঁঝের গলায় বলে ওঠে, ‘‘এ কী অসভ্যের মতো কথা বলছ! কী শিখবে মেয়ে! বাড়িতে আর একটা মেয়েও আছে। পাঁচ বাড়িতে কাজ করে। কথা পাচার হয়ে যাবে।’’
মাথা নামিয়ে নেয় দেবাংশু। সত্যিই একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। পাশে এসে দাঁড়াল মেয়ে রুমনি। দেবাংশুকে ঠেলা মেরে জিজ্ঞেস করে, ‘‘ও বাবা, বেলাপিসি বলছে আমরা নাকি বেড়াতে যাব। আমার বার্থডে করবে না?’’
শ্রীতমা মেয়েকে বলল, ‘‘বার্থডে তো বুধবার মা। তার আগেই ফিরে আসব। বাড়িতেই কেক কাটব।’’
মন্দারমণি ঘুরে এসেছে দেবাংশুরা। আজ রুমনির জন্মদিন। কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছে দেবাংশু। সকালবেলা গুছিয়ে বাজার করেছে। জন্মদিনের অনুষ্ঠান সন্ধেবেলা। ছোট করেই হয়। রুমনির কিছু ক্লোজ় ফ্রেন্ড এবং তাদের মায়েরা নিমন্ত্রিত। ওদের জন্য খাবার আসবে কাছের একটা রেস্তোরাঁ থেকে। দুপুরের জন্য মটন এনেছে দেবাংশু। তার সঙ্গে পোলাও করবে শ্রীতমা। এই দুটো তার প্রিয় পদ।
জলখাবারের পর অনেক ক্ষণ ধরে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়েছে দেবাংশু। ফ্ল্যাটময় মাংস রান্নার সুবাস। পুলকিত হচ্ছে মন। তবু কোথায় যেন একটা খটকা থেকে যাচ্ছে! অন্য দিন যখন মাংস রান্না হয়, তার থেকে আজকের পরিবেশটা একটু বুঝি আলাদা। আবার আওয়াজ তুলল প্রেশার কুকার। এবার ধরে ফেলে দেবাংশু। শ্রীতমাকে বলে, ‘‘কী ব্যাপার গো, প্রেশার কুকারের সিটিটা কি বদলে গেছে? নতুন কিনলে না কি?’’
‘‘এক বার রান্নাঘরে গিয়ে দেখেই এসো, কেন বদলেছে আওয়াজ।’’
রান্নাঘরে গিয়ে দেবাংশু দেখল, ওভেনের উপর নতুন প্রেশার কুকার। তাই সিটিটা অচেনা ঠেকছিল।
ঘুরে দাঁড়িয়ে শ্রীতমাকে বলে, ‘‘কবে কিনলে কুকার? আমাকে বলোনি তো! আগেরটা কি একেবারেই গেছে?’’
ধুলো ঝাড়া হয়ে গিয়েছে শ্রীতমার। দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, ‘‘কিনিনি। ওটা উপহার, তোমার মেয়েকে জন্মদিনে বেলা দিয়েছে।’’
অবাক হয় দেবাংশু। চোখ যায় বেলার দিকে। পিছন ফেরা অবস্থায় বেডরুমের মেঝে মুছতে মুছতে এগিয়ে আসছে মেয়েটা। দেবাংশু বলে, ‘‘এত দামি উপহার দিতে গেল কেন? ছোটখাটো কিছু দিলেই তো হত। মিছিমিছি টাকা খরচ।’’
যেন মজার ব্যাপার, এমন সুরে শ্রীতমা বলল, ‘‘বেলাও ওটা গিফট পেয়েছে। আমাদের সামনের মাঠে রক্তদান শিবিরে। ও রক্ত দিয়ে পেয়েছে ওটা। আহা! তোমার মনে নেই, ক্লাবের ছেলেরা তো বলেইছিল, ভাল উপহার থাকবে।’’
যেহেতু তার প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে, বেলা ঘুরে গিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মাথা নিচু, খানিক লজ্জায়।
বেলাকে কেন জানি ভীষণ রোগা লাগে দেবাংশুর। যেন অনেক রক্ত শুষে নিয়েছে পাড়ার রক্তদান শিবির! এমন সময় আবার বেজে ওঠে প্রেশার কুকারের সিটি। ছড়িয়ে পড়া রান্নার গন্ধটা। এ বার আর পুলক জাগায় না মনে। অসহ্য লাগতে থাকে। শরীর জুড়ে অস্বস্তি হতে থাকে দেবাংশুর। গা গুলোয়। নিজের অবস্থা বুঝতে না দিয়ে দেবাংশু শ্রীতমাকে বলে, ‘‘এই রে, মিষ্টির দামটা দিতে ভুলে গেছি সত্যনারায়ণে। যাই দিয়ে আসি।’’
এ পাড়া ও পাড়া কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে দেবাংশু। মিষ্টির দাম দেওয়ার কথাটা তো ছুতো। সে আসলে যে করে হোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে চাইছিল। মনে হচ্ছিল প্রেশার কুকারে ফুটছে বেলার রক্ত! কিন্তু এ ভাবে পালিয়ে কত ক্ষণ থাকবে দেবাংশু! বাড়ি তো ফিরতেই হবে। শ্রীতমা যত্ন করে বেড়ে দেবে
মাংস আর পোলাও। দেবাংশুর পছন্দের খাবার। ওই কুকারে রান্না মাংস কিছুতেই খেতে পারবে না দেবাংশু। বমি করে ফেলবে নির্ঘাত। খাওয়াটা কী ভাবে এড়ানো যায়, দেবাংশু ভাবতে থাকে। মরিয়া হয়ে খোঁজে একটা মধ্যপন্থা। টিভির আলোচনাচক্রে ওই পন্থায় অবিচল থাকতে পারলেও, এখন আর কোনও ভাবেই থই পায় না সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy