Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Short Story

মারীচ-কথা

মেয়েটির কপালের উপর এক গোছা কোঁকড়ানো ভিজে চুল নেমে এসেছে। তাতে মুক্তোর মতো জলের বিন্দু, যেন কচি ঘাসের ডগায় শিশিরকণা। স্নিগ্ধ, কোমল। আড়চোখে এক বার ড্রাইভারের দিকে চেয়ে দেখল। এমন কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যে নেহাত কলিযুগ না হলে হয়তো ভস্ম হয়ে যেত সুমিত।

অরুণ কর
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ২০:৩১
Share: Save:

এক্সকিউজ মি! সুরেলা কণ্ঠস্বর। পরিশীলিত উচ্চারণ। সদ্য থামা ট্যাক্সির হাতলে হাত রেখে পিছন ফিরে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল সুমিত।

ক্ষমাপ্রার্থিনী একেবারে কাকভেজা। ছিপছিপে শরীরে হালকা সবুজ রঙের শিফন শাড়িটা লেপ্টে গিয়েছে। মুখে হয়তো আলতো প্রসাধন ছিল, কিন্তু জলের ঝাপটায় তার চিহ্নমাত্র নেই। শুধু পাতলা ঠোঁটে আবছা লিপস্টিকের দাগ পুরোপুরি মেলায়নি। হাতে একটা উল্টে যাওয়া বাদামি রঙের লেডিজ ছাতা। কোনও রকমে মাথাটা বাঁচানোর জন্য সেটাই মাথার উপর ধরে এগিয়ে এলেন তিনি।

ফর্সা রঙ, টিকোলো নাক, তীক্ষ্ণ চিবুক, পানপাতার মতো মুখ। গভীর কালো মায়াবী চোখ। সুমিত মুগ্ধ হয়ে গেল।

এত ক্ষণ সুমিত যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানেও গোড়ালি-ডোবা জল। রাস্তাতে তো নদীর মতো স্রোত বইছে। গত রাত থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সকালে হাওয়া অফিস বলেছে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের দিকে সরতে শুরু করেছে, তবে আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। আপাতত বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমেছে বটে, কিন্তু তার বদলে এমন ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে যে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার জোগাড়। রাস্তায় বাস কিংবা ট্যাক্সি নেই বললেই চলে। দু’একটা সরকারি বাস আসছে বটে, কিন্তু সেগুলোতে বাদুড়ঝোলা ভিড়। একে বৃষ্টিতে জামাকাপড় ভিজে সপসপ করছে, তার উপর স্যাঁতসেঁতে দামাল হাওয়ায় সুমিতের রীতিমতো কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল। প্রায় ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় এই প্রথম একটা ট্যাক্সিকে দাঁড় করাতে পেরেছে সে।

‘‘কহাঁ জানা হ্যায়?’’

ট্যাক্সি ড্রাইভার তো নয়, যেন থানার বড়বাবু! কর্কশ কণ্ঠস্বর। সুমিত গায়ে মাখল না। পাছে চলে যায়, সেই ভয়ে ক্ষিপ্র হাতে দরজা খুলে গাড়িতে উঠে পড়ল। তার পর গলাটা যতটা সম্ভব গম্ভীর করে বলল, ‘‘বেহালা।’’

গাড়ির দরজাটা বন্ধ করতে যাবে, এমন সময় তিনি বললেন, ‘‘মে আই হ্যাভ আ লি‌ফ্‌ট?’’

মেয়েটির কপালের উপর এক গোছা কোঁকড়ানো ভিজে চুল নেমে এসেছে। তাতে মুক্তোর মতো জলের বিন্দু, যেন কচি ঘাসের ডগায় শিশিরকণা। স্নিগ্ধ, কোমল। আড়চোখে এক বার ড্রাইভারের দিকে চেয়ে দেখল। এমন কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যে নেহাত কলিযুগ না হলে হয়তো ভস্ম হয়ে যেত সুমিত।

চোখাচোখি হতেই সে খেঁকিয়ে উঠল, ‘‘মিটার মে হম নহি জায়েঙ্গে। পুরা পাঁচশো দেনা হোগা! নহি তো উতর যাইয়ে।’’

সুমিত ড্রাইভারের কথার জবাব না দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। তার পর নিজে সরে বসে মেয়েটিকে বসার জায়গা করে দিল। গাড়িতে উঠে উল্টে যাওয়া ছাতাটা যে কোথায় রাখবে ভেবে পাচ্ছিল না মেয়েটি। সুমিত হাত বাড়িয়ে বলল, ‘‘ছাতাটা আমাকে দিন, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।’’

খুব মিষ্টি করে হাসল মেয়েটি। মুক্তোর মতো ঝকঝকে নিখুঁত দাঁত। অবাক হয়ে বলল, ‘‘আপনি বুঝি ছাতা সারাতে পারেন?’’

সুমিত একটু অপ্রস্তুত হল। বলল, ‘‘না না। উল্টে যাওয়া ছাতা চেষ্টা করলে যে কেউ সোজা করতে পারে।’’

মেয়েটি সুমিতের হাতে ছাতাটা দিতে দিতে বলল, ‘‘আমি কিন্তু পারি না।’’

“চেষ্টা করে দেখেছেন কখনও?”

“জীবনে কত কিছুই তো চেষ্টা করলাম, সবাই কি সব কিছু পারে?”

মুখে সেই ভুবনমোহিনী হাসি ধরে রাখলেও কণ্ঠস্বরে যেন লুকোনো দীর্ঘশ্বাস খেলে গেল। সুমিত ওর মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল। বাইরে থেকে বৃষ্টির ছাঁট আসতে শুরু করেছে বলে কাচ তুলে দিতে হল। গাড়ির ভিতরটা বেশ গুমোট। কিন্তু তারই মধ্যে মিষ্টি একটা সুবাস সুমিতের নাকে এসে লাগছিল। খুব দামি সুগন্ধী নিশ্চয়ই। সুমিত আড়চোখে মেয়েটির দিকে তাকাল। কোলের উপর অনাবৃত শঙ্খের মতো সাদা অনিন্দ্যসুন্দর হাত দু’খানা রেখে ঝাপসা কাচের মধ্যে দিয়ে উদাস মুখে বাইরের দিকে চেয়ে আছে সে। চোখে যেন বাদল দিনের বিষণ্ণতা।

গাড়িটার ভাব যেন শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রার মতো। চলার চাইতে থামার উপরে ঝোঁক বেশি। অবশ্য ড্রাইভারেরও কিছু করার নেই। একটু বাদে বাদেই প্রবল ট্রাফিক জ্যাম, তার উপর রাস্তায় কোথায় কতটা জল সেটা আগের গাড়িগুলোকে দেখে আন্দাজ করে তবেই এগোতে হচ্ছে।

সম্পূর্ণ অপরিচিতা এক জন সুন্দরী যুবতীর সঙ্গে কাচ তোলা ট্যাক্সিতে পাশাপাশি বসে যাওয়ার মধ্যে হয়তো একটা রোমাঞ্চ আছে, তবু ভিতরে ভিতরে সুমিতের একটা চাপা অস্বস্তি হচ্ছিল। হয়তো একটু ভয়ও। আজকাল এমন সব সুন্দরীদের পাল্লায় পড়ে নিরীহ মানুষের সর্বস্ব খোয়ানোর খবর কাগজে প্রায়ই বার হয়। সুমিতের কাছে অবশ্য খোয়া যাওয়ার মতো দামি কিছু নেই। আঙুলে একটা বিবর্ণ জোডিয়াক আংটি, হাতে একটা পুরনো হাতঘড়ি আর পার্সে মেরেকেটে হাজার খানেক টাকা। তাতে অবশ্য বিপদের আশঙ্কা কিছু কমে না। টাকাকড়ি না পেয়ে গাড়ির কাচ নামিয়ে ‘আমাকে বাঁচান’ বলে এক বার চিৎকার করলেই আর দেখতে হবে না।

‘‘কী ভাবছেন?’’

প্রশ্ন শুনে চমকে উঠল সুমিত। মেয়েটির চোখে কেমন স্বপ্নালু দৃষ্টি, ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাসির আভাস। বিগলিত সুমিত বোকার মতো হেসে বলল, ‘‘কেমন বাজে বৃষ্টি দেখুন, আজ আর গাড়ি পৌঁছবে না মনে হচ্ছে!’’ মেয়েটির ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখা হাসিটা কেমন যেন বিদ্রুপে বদলে গেল। সুমিতের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বলল, ‘‘আপনি কী ভাবছেন আমি জানি।’’

‘‘ক্কী, কী ভাবছি আমি?’’

‘‘আপনি মনে মনে আমাকে একটু ভয় পাচ্ছেন। পাছে আমি আপনাকে কোনও বিপদে ফেলি! অথচ দেখুন, এমন পরিস্থিতিতে আমারই ভয় পাওয়ার কথা ছিল। আজকাল রাস্তাঘাটে একলা মেয়েরা তো খুব একটা সুরক্ষিত নয়। বিশেষ করে এমন দুর্যোগের রাতে! তবে আপনার খুব অস্বস্তি হলে বলুন, আমি এখনই গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছি।’’

লজ্জায় সুমিতের কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। মেয়েটা কি থট রিডিং জানে? ওর মুখে কি সত্যিই মনের ছায়া ফুটে উঠেছে?

নিজেকে আড়াল করতে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘‘না না, আমি ভয় পাব কেন? আপনারও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। মেয়ে দেখলেই যারা নবীন দাশের রসগোল্লার মতো টুপ করে গিলে ফেলার কথা ভাবে, আমি অন্তত তাদের দলের নই! দুশ্চিন্তা একটাই, গাড়িটা আদৌ আজ গন্তব্যে পৌঁছবে কি না। রাস্তায় যা জল বাড়ছে! বাই দি ওয়ে, আপনি কোথায় যাবেন?’’

মেয়েটা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘‘আপনার গন্তব্যের কাছাকাছি।’’

‘‘আমি কোথায় যাব আপনি জানলেন কী করে?’’

‘‘বা রে! গাড়িতে উঠে আপনি ড্রাইভারকে বললেন যে!’’

সুমিত মৃদু হাসল। এখন আর মেয়েটিকে ভীতিপ্রদ মনে হচ্ছে না। ট্যাক্সির ধীরে চলাটা বেশ উপভোগ্য মনে হতে লাগল তার। জানলার কাচ নামিয়ে বাইরের দিকে তাকাল সে।

থেমে থেমে চলতে চলতে এক্সাইড মোড়ে এসে একেবারে দাঁড়িয়ে গেল গাড়িটা। চারিদিকে জল থইথই, তার মধ্যে অনেকগুলো এলোমেলো গাড়ির জট। হঠাৎ সুমিত অনুভব করল, এমন পরিস্থিতিতে যতটা উদ্বেগ এবং বিরক্তি হওয়ার কথা, তার কণামাত্র হচ্ছে না তার। বরং নিজেকে বেশ ফুরফুরে লাগছে। তাকিয়ে দেখল, পাশে বসা মেয়েটির কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। সুমিত খুব আন্তরিক গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘‘দেরি হলে আপনার বাড়িতে সবাই নিশ্চয়ই খুব ভাববে?’’

‘‘বাড়িতে কেউ থাকলে তো ভাববে!’’

‘‘মানে?’’

‘‘আমি একা থাকি। একদম একা!’’

‘একদম একা’ কথাটা কেমন বেসুরো বাজল সুমিতের কানে। কথাটার মধ্যে কি কোনও বেদনা লুকোনো? অথবা কোনও বেপরোয়া স্বাধীনতার আনন্দ! সুমিত ধন্দে পড়ে গেল। অস্বস্তি কাটাতে বলল, ‘‘চাকরি করেন বুঝি?’’

‘‘চাকরি? হ্যাঁ, চাকরিই বলতে পারেন। আপনি কী করেন?’’

‘‘গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাই!’’

সুমিতের কথা শুনে মেয়েটা হোহো করে হেসে উঠল।

‘‘কী হল, হাসছেন যে? টিউশন দেওয়া মানে তো তা-ই! মাঝে মাঝে মাঝে দু-একটা পরীক্ষা দিচ্ছি বটে, কিন্তু কোনওটাই ঠিকঠাক লাগছে না। যেমন আজ একটা ইন্টারভিউ ছিল। ভাবলাম বৃষ্টিবাদলার দিন, প্রতিযোগী কম আসবে। ও মা! গিয়ে দেখি, আধা কিলোমিটার লম্বা লাইন! ঝাড়া তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজলাম। তার পর ইন্টারভিউতে কী জিজ্ঞেস করল জানেন?’’

‘‘কী করে জানব? আমি তো আর ইন্টারভিউ দিতে যাইনি!’’

‘‘তা তো বটেই! আপনিই বা জানবেন কী করে? ওরা জিজ্ঞেস করল, ‘পথের পাঁচালী’তে হরিহর, মানে অপুর বাবা অপুকে বলেছিল, তুমি বড় হাঁ-করা ছেলে। সেই হাঁ-এর পরিধির মাপ কত?’’

সুমিতের কথা শুনে হাসিতে ভেঙে পড়ল মেয়েটি। বলল, ‘‘যাহ্‌! আপনি নিশ্চয়ই বানিয়ে বানিয়ে বলছেন!’’

ওর এই চোখ বড় বড় অবিশ্বাসী চাউনিটা বড় ভাল লাগল সুমিতের। হঠাৎ মনে হল, বাদলা দিনটা হয়তো একেবারে বৃথা গেল না।

লালবাতি পেরতেই মেয়েটা আচমকা ট্যাক্সিটা দাঁড় করাতে বলল। নীচে নেমে সুমিতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, ‘‘আপনার কাছে অনেক ঋণ হয়ে গেল। আসবেন না কি আমার সঙ্গে? এক কাপ কফি খাইয়ে যদি কিছুটা শোধ করা যায়!’’

এমন আহ্বানের জন্যে সুমিত ঠিক তৈরি ছিল না। কথাটার মধ্যে যেন কেমন হেঁয়ালির সুর। সুমিত কী উত্তর দেবে ভেবে পেল না। মেয়েটা ওর চোখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে কী যেন ভাবল। তার পর লম্বা করে ‘বাই’ বলে হাত নেড়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

রঙ্গমঞ্চে তীব্র আলোর নীচে অভিনয় করতে করতে হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেলে কুশীলবদের যেমন লাগে, মেয়েটা চলে যেতে সুমিতের অবস্থাও অনেকটা তেমনই হল।

বাকি পথটুকু কেমন যেন ঘোরের মধ্যে কাটল সুমিতের। অন্যমনস্ক ভাবে ট্যাক্সির ভাড়া মেটাল। তার পর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নামতে যাবে, এমন সময় ড্রাইভার চেঁচিয়ে বলল, ‘‘আপকা ছাতা তো লে জাইয়ে!’’

সুমিত দেখল, সেই বাদামি ছাতাটা। আনমনে সেটা নাকের কাছে আনতে সেই মিষ্টি গন্ধটা পেল। মৃদু অথচ কী তীব্র মাদকতা গন্ধটার মধ্যে! সুমিত গভীর শ্বাস নিল।

পর দিন সকালে দুর্যোগ কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদ উঠল। একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে অনেক ক্ষণ চুপচাপ বসে রইল সুমিত। পড়াতে যেতে ইচ্ছে হল না। একটা অদৃশ্য সুতো যেন সজোরে সুমিতকে টানতে লাগল। কোনও রকমে স্নান সেরে আটটার মধ্যে ছাতাটা নিয়ে আগের রাতে মেয়েটা যেখানে নেমেছিল, সেখানে এসে হাজির হল।

সুমিত বুঝতে পারছিল, এ ভাবে অচেনা এক জন মানুষকে খুঁজে বার করার চেষ্টা অনেকটা খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতো। তবু যদি কোনও ভাবে দেখা হয়ে যায়, সেই আশায় ঘণ্টা তিনেক রোদের মধ্যে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পথচলতি মেয়েদের মধ্যে গত রাতে দেখা মুখখানা খুঁজে চলল। বার চারেক চা খেল। এক প্যাকেট সিগারেট যে কেমন করে উড়ে গেল, টেরই পেল না। অবশেষে এগারোটা নাগাদ নিতান্ত হতাশ হয়ে বাড়ির পথ ধরল।

অনেক ভেবেচিন্তে পর দিন বিকেলে মেয়েটা যেখান থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিল, সেখানে গিয়ে দাঁড়াল সুমিত। মেয়েটাকে খুঁজে বার করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল। বিকেল গড়িয়ে এক সময় সন্ধে নামল। কিন্তু তবু ‘তোমার দেখা নাই রে!’ সুমিতের মনেও আঁধার ঘনিয়ে এল।

দিন পনেরো এ ভাবে ঘোরাঘুরির পর এক সময়ে মেয়েটির আশা ছেড়েই দিল সুমিত। আবার সেই টিউশন দেওয়া, চাকরির জন্যে প্রস্তুতি, টুকটাক ইন্টারভিউ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের চেনা ছন্দে ফিরে এল সে। এক সময়ে সেই বাদল দিনে দেখা হওয়া অপরূপা মেয়েটির কথা প্রায় ভুলেই গেল।

মাস তিনেক পরে এক দিন কলেজ স্ট্রিট থেকে কিছু বই কিনে বাস ধরার জন্যে এম জি রোড ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সুমিত। এমন সময়ে টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। মাথা বাঁচাতে শাড়ির দোকানের শেডের নীচে ঢুকে সবে একটা সিগারেট ধরিয়েছে, এমন সময় সুরেলা মেয়েলি গলায় কে যেন বলল, ‘‘এক্সকিউজ মি!’’

সুমিত দেখল, দামি গাড়ির দরজা খুলে এক জন মাঝবয়সি মোটা ভদ্রলোক গাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন, আর তার সামনে সেই অপরূপা মেয়েটি দাঁড়িয়ে। মুখে সেই ভুবনমোহিনী হাসি। ভদ্রলোকের পরনে দামি সাফারি সুট, গলায় মোটা সোনার চেন, হাতে অনেকগুলো পাথর বসানো আংটি, এক মুখ পানমশলা।

সুমিত দৌড়ে মেয়েটির সামনে গিয়ে বলল, ‘‘আমাকে চিনতে পারছেন? সেই যে বর্ষার রাতে ট্যাক্সিতে, আপনি ছাতা ফেলে নেমে গেলেন...’’

কঠিন চোখে সুমিতকে দেখল মেয়েটা। তার পর মাঝবয়সি লোকটার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ হেসে বলল, ‘‘মে আই হ্যাভ আ লিফ্‌ট?’’

মাথায় আচমকা বাজ পড়লে কি এমনই অনুভূতি হয়? নিশ্চল পাথুরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল সুমিত। রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠল একে একে।

ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy