Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Novel

মায়া প্রপঞ্চময়

সে দিন ওদের অনেকটা সময় লেগেছিল হাতির গতিপথ থেকে বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে মোটামুটি সুবিধেজনক একটা জায়গায় নীচে থেকে পাড়ের উপরে উঠতে।

কানাইলাল ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

বোসস্যর বলেন, ‘‘তুমি রাজ্যের মধ্যে ছ’মাসের ট্রেনিং করেছ, আর আমি সারা ভারতের জঙ্গল ঘুরে-ঘুরে পাক্কা দু’বছরের ট্রেনিং করেছি। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বনে-জঙ্গলে রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে, ক্যাম্প করে শিক্ষা নিতে হয়েছে আমায়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাক-চোখ-কান আরও বেশি সজাগ হয়েছে। অসম, অরুণাচল, মেঘালয় আর উত্তরবঙ্গে তো বেশ কিছু দিন করে জঙ্গলে তাঁবুতেই কাটিয়েছি। পরে আস্তে-আস্তে এগুলো কমে যাবে, তবে রিফ্লেক্সটা বজায় থাকবে এখনও বেশ কিছু দিন। চলো, এখন এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে পড়ি। এই খাড়া পাড় বেয়ে দলটা নেমে আমাদের তাড়া করতে পারবে না, কিন্তু দলের আরও মেম্বার কাছেপিঠের রিভার-বেডে ঘাপটি মেরে বসে আছে কি না, কে জানে!’’

সে দিন ওদের অনেকটা সময় লেগেছিল হাতির গতিপথ থেকে বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে মোটামুটি সুবিধেজনক একটা জায়গায় নীচে থেকে পাড়ের উপরে উঠতে। তার পর অনেক ঘুরে গুড়পনার যেখানে ওদের বাইক রাখা ছিল সেখানে গিয়ে ফেরার রাস্তা ধরেছিল। তবে বেন্দা আরও বেশি করে বোসস্যরের ভক্ত হয়ে পড়ল সে দিন থেকে৷

ভালই চলল কিছু দিন। তবে যা হয়, সুখের দিন একটানা থাকে না। এর মাঝে বেন্দা স্যরকে ছোটখাটো কিছু টিপস দেওয়ায় স্যর কয়েকটা কাঠ চুরির কেস হাতেনাতে ধরে ফেললেন। লোক ধরা গেল না কোনও বারেই, কারণ স্যর প্রতি বার বাইক নিয়ে একাই চলে যেতেন। অন্যদের উপর ওঁর ভরসা ছিল না, আর বেন্দার উপর সবার আক্রোশ এসে পড়তে পারে ভেবে ওকেও সঙ্গে নিতেন না। লোক অ্যারেস্ট না হলেও চুরির মাল ধরা পড়ে যাওয়ায় কাঠ মাফিয়ারা কিছুটা হলেও দমে গেল। কিন্তু বেন্দা স্যরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাস পেতে লাগল মধুদা মারফত।

স্যরকে সাবধান করলেও লাভ হচ্ছিল না। শুধু হেসে বলতেন, ‘‘ভাগ্য যাকে আগেই মেরে রেখেছে তাকে আর কে মারবে? তুমি চিন্তা কোরো না, আমার কিছু হবে না। হলে জানব, যা এত দিন ধরে চাইছি সেই মোক্ষ পেয়েছি।’’ কেন যে লোকটা বিপদের দিকেই জোর করে এগিয়ে যেতে চাইত, তা যেমন ওর কাছে আজও স্পষ্ট নয়, তেমনই ও বুঝে উঠতে পারেনি, ওই রকম একটা খোলামেলা মনের মানুষকে কী করে কেউ কষ্ট দিতে পারল! অবশ্য স্বার্থ বড় ভয়ঙ্কর জিনিস, না হলে বান্দোয়ানে নতুন এসেই লোকটার এত শত্রু কোথা থেকে তৈরি হল?

দিনটা ওর পরিষ্কার মনে আছে। তখন জুনের শেষ বা জুলাইয়ের শুরু। পয়লা আষাঢ় ছিল সে দিন। সকালবেলাই স্যর ’আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে...’ আর কী-কী সব বলে কবিতা পাঠ করছিলেন। আষাঢ় মাস হলেও প্রচণ্ড গরম। তখনও বান্দোয়ানে বিদ্যুৎ আসেনি। দারুণ গুমোট গরমে সারা দিন কেটেছে, তখন সন্ধে হয়-হয়। স্যর অফিসে বসে অ্যাকাউন্ট মেলাচ্ছেন, এমন সময়ে লোহারবাবু এসে স্যরকে ফিসফিস করে বললেন, ‘‘স্যর, আজ এ্যাকটো টেরাক লোড হইঁচছে চিরুডির পাশের গেরামট্যায়, গ্যালেই ধরা পইড়ব্যে। আম্যিই যেথ্যম, কিন্তুক কাইল রাত্র্য থেক্যে প্যাটটো এ্যামন বিগড়্যাঁইছে কী বইল্যবার ল্যয়...’’

বেন্দা কিছু বলতে গিয়েও সামলে নেয়। আসল ঘটনা ও খানিকটা জানে। লোহারবাবু তত ক্ষণে অনেকটাই ঝঞ্ঝাট পাকিয়ে ফেলেছেন ব্যাপারটা নিয়ে। স্যরের ভালমানুষির সুযোগ নিয়ে উনি পারমিট ইস্যু করার সময় স্যরের নাম করে টাকা তুলতে শুরু করেছেন। একেবারেই হদ্দ অল্পশিক্ষিত লোক, আলাদা দু’টো সংসার পেতে ফেলে আর সামাল দিতে পারছেন না। স্যর এক বার ধরে ফেলে কড়া ধমক দেওয়ায় হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘‘ইবারকার মত্যো ক্ষ্যামা-ঘেন্না করে লিন স্যর। হামি মুখ্যসুখ্য গরিব মানুষ বট্যি, চেয়ে-মেঙে টুকু খাই, আর এ্যামনটো হব্যেক নাই!’’ কিন্তু গরুতে এক বার নোংরা খেতে শুরু করলে তাকে আর আটকানো যায় কখনও? এ বারেও জামশেদপুরের একটা পার্টির এক ট্রাক কাঠ ক’দিন ধরে চালান দেওয়া আটকে আছে লোহারবাবুর গড়িমসির জন্যে। স্যরের সেটা অজানা, কিন্তু বিষয়টা নিয়ে বান্দোয়ান বাজারে ঘোঁট হচ্ছে বেশ।

এ দিকে পার্টির আড়কাঠি শাসিয়েও গেছে বান্দোয়ান মোড়ের আদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে বসে বোঁদে-ভুজিয়া খেতে খেতে, ‘‘ইয়ে মাল টাটা টাউন কা লকড়ি মাফিয়া দলপত সিংজি কা হ্যায়, কিস চাপরাস কা মজাল হ্যায় কি উসকো রোখকে রাখেগা? এক লালপয়সা ভি নেহি দে’কর হম লোহার কি নাক কে নীচে সে পুরা মাল লে জায়েঙ্গে। উনকা সাহাব অগর রোক সকে তো রোক লেঁ!’’ কথাগুলো কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বেন্দার নিজের কানে শোনা। যত দূর ও জানে, থানাও কিছু বলবে না, কেন না থানার ডাকবাবু, মানে পাঁড়েজিও তো ওর পাশে বসেই খাচ্ছিল কথাগুলো বলার সময়।

লোহারবাবুর সামনে কথাগুলো স্যরকে বলা যাবে না, তাই বেন্দা চট করে একটা বুদ্ধি খাটায়। বলে, ‘‘স্যর, টেরাকটো ধইরল্যে তো রেঞ্জ অফিসে আইনত্যে লাগব্যেক, হামি টেরাক চালাত্যে পারি কিন্তুন। ই চাকরিটো পাবার আগ্যে হামি গ্যারেজে টেরাকের ডেরাইভারের সঙ্গে কাজ করথম। আজ তাইলে হামি সঙ্গে যাই বাইক চালায়্যেঁ?’’ কী মনে করে স্যর ঘাড় নাড়েন, ‘‘তাড়াতাড়ি বাইক বার করো, অন্ধকার হওয়ার আগে ওটাকে নিয়ে ফিরতে হবে আমাদের।’’ লোহারবাবুর মুখে কী একটা সেয়ানার হাসি দেখেছিল বেন্দা? না কি চোখের ভুল?

ট্রাকটা ধরতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। ওরা দু’জনেই সে দিন ইউনিফর্মে ছিল আর দূর থেকে ওদের দেখেই ট্রাক ড্রাইভার দরজা খুলেই এক লাফে পগার পার। একেবারে অল্পবয়সি ক্লিনার ছেলেটা বোধহয় লাইনে নতুন, থতমত খেয়ে পালাতে দেরি করে ফেলল। স্যর দৌড়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরলেন, সাবধান করেও দিলেন যে পালিয়ে লাভ হবে না। ক্লিনারটাকে পাশে বসিয়ে ট্রাক চালিয়ে রেঞ্জ অফিসের দিকে রওনা দিল বেন্দা। ড্রাইভার তাড়াহুড়োয় চাবি ঝুলিয়ে রেখেই পালিয়েছে। স্যর বাইকে ট্রাকের বাঁ দিক কভার করে চললেন, যাতে ছেলেটা লাফিয়ে পালাতে না পারে।

বেন্দা পরে খবর জোগাড় করেছিল যে, ওরা বাইকে বেরোবার পরই লোহারবাবু সে খবরটা দলপত সিংয়ের লোকের কাছে পৌঁছে দেয়, ফলে ওরা যখন বান্দোয়ান চারমাথা মোড়ে এসে ডান দিকে টার্ন নিতে গেল রেঞ্জ অফিসে গাড়ি ঢোকাবে বলে, ওদের সামনেই একটা ট্রাক আর একটা বাস দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হল। মোড়ের মাথায় তখন গিজগিজে ভিড়। ভাড়া-করা লোক এনে, সামনে ইলেকশন বলে বিষয়টা নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও করিয়ে ফেলেছে কাঠ মাফিয়ার লোকেরা। স্যরকে স্থানীয় নেতৃত্বকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রের জন্যে দায়ী করে মাইক নিয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়েছে। মোড় আটকে রেখেছে তখন শ’দুয়েক লোক, বেশির ভাগই মাতাল, ওদের বিনা পয়সায় ব্লাডার-ভর্তি চোলাই সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে আর তাতানো হচ্ছে ফরেস্টের, বিশেষ করে স্যরের বিরুদ্ধে।

রাত ক্রমশ বাড়ছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উগ্রচণ্ড মাতাল ও স্বার্থান্বেষী লোকের ভিড়, যারা এই সুযোগে অনিকেত বোসকে চরম শিক্ষা দিতে চায়। বেন্দা দেখতে পাচ্ছে ভিড়ের পিছন দিকে দুয়ারিবাবু আর লোহারবাবু দাঁড়িয়ে, ওদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মজা দেখছে সন্দীপ শেঠ আর ওর সমিতির লোকজন। একটু দূরে দলবল নিয়ে লোকাল পার্টি-মস্তান চরণদাস সামন্ত, যার বিরুদ্ধে মারপিট ছাড়াও দু’-দু’টো খুনের চার্জ আছে। বেন্দা ভিড়ে ঢুকে স্যরের কাছে যেতে পারছে না ভয়ে, আবার পালিয়ে যেতেও বাধছে লোকটাকে একলা ফেলে। ও ইশারা করার চেষ্টা করেছে, স্যর যাতে বিপদের গুরুত্ব বুঝতে পারেন, ধরতে পারেন যে তাঁকে ফাঁদে ফেলে সব পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছে। উনি সেটা বুঝতে অবশ্যই পেরেছেন, কিন্তু একগুঁয়েমি করে স্পট ছেড়ে যাচ্ছেন না কিছুতেই। ভাবটা এমন, ‘পারলে আমাকে মেরে ফেলো, কিন্তু ট্রাক আমি ছাড়ছি না কিছুতেই।’

রাত বারোটার পর হালকা গোলমালের আওয়াজ একটা জোরালো হল্লায় পরিণত হল। থানার দারোগা অর্থাৎ বড়বাবু চার জন আর্মড কনস্টেবল নিয়ে ভিড় ঠেলে স্যরের কাছে পৌঁছলেন। প্রায় ঘণ্টাপাঁচেক হই-হট্টগোল শুনে উনি আর বসে থাকতে পারেননি ঢিল-ছোড়া দূরত্বের থানায়। ওঁর বুশ-শার্টের তলা থেকে রিভলভারটার নল দেখা যাচ্ছে, সঙ্গের কনস্টেবলরা রাইফেলধারী। বেন্দা এত ক্ষণে স্বস্তি পায়। পুলিশকে সমঝে চলে না, এমন কে আছে? কিন্তু সে স্বস্তি স্থায়ী হল না। বড়বাবু স্যরকে কিছু বোঝাতে চাইছেন আর স্যর সমানে ঘাড় নাড়ছেন। মানে, উনি কোনও সমঝোতায় আসতে রাজি নন, আর সমঝোতা মানে ট্রাকটা ছেড়ে দেওয়া। উল্টে উনি আঙুল দেখিয়ে বলতে চাইছেন যে, ট্রাকটাকে রেঞ্জ কম্পাউন্ডে কিংবা থানায় ঢোকানো হোক, কাল সকালে তদন্ত করে কিছু না পেলে ছেড়ে দেওয়া হবে। কায়েমি স্বার্থের লোকজন সেটা করতে দিচ্ছে না।

এর পরই পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠল। কয়েকজন গুন্ডা-পাণ্ডা টাইপের ছোকরা সঙ্গে নিয়ে সামন্ত বড়বাবুকে প্রায় ঘিরে ফেলল। সামন্ত বড়বাবুর বাহুটা ধরে নিল, ওর মুখ নড়া থেকে বেন্দা আন্দাজ করল যে কিছুটা শাসানির সুরে সামন্ত বলছে, ‘‘এই ঝঞ্ঝাটে না ঢুকেন তো বেহতর, যা করার, থানার সঙ্গে সকালেই সালটে নিয়েছি, এখন ফরেস্টের সঙ্গে আমরাই বুঝে নিব।’’ এর পর সম্মান রাখতে বেশি কিছু করা চলে না। ও দিকে রাইফেলধারী কনস্টেবলদের কয়েকজন মিলে গলাধাক্কা দিচ্ছে। দূরদর্শী দারোগাবাবু এক-দু’বার স্যরের দিকে তাকালেন, যার মানে ‘দেখলেন তো, আপনার কথা ভেবে যথাসাধ্য করলাম আমার আরামের চেয়ার ছেড়ে উঠে, কিন্তু এখন নিজের সম্মান আর পাবলিকের উপর পুলিশের কন্ট্রোল বজায় রাখতে মানে-মানে চলে যেতে হচ্ছে। কাল সকালে আপনার বডিটা রিকভারি করে পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করব, অবশ্য যদি তখনও বডির কিছু অবশিষ্ট থাকে! আচ্ছা, চলি এখন, অলবিদা!’

এখন চালাক-চতুর মগজ নিয়ে বেন্দা এতটা পরিষ্কার ভাবে সবকিছু ভাবতে পারছে, কিন্তু তখন ওই আতঙ্কের পরিবেশে সদলবলে পুলিশের সরে যাওয়া দেখে আর মদ-উন্মত্ত, ক্ষিপ্ত পাবলিকের জয়ধ্বনি শুনে বেন্দার মনে হয়েছিল যে, এ বার জনতা স্যরকে ছিঁড়ে খাবে। স্যর কিন্তু সামনে পেয়ে গেলেন সুশাসনের আর-এক কর্মকর্তা অবিনাশ ব্যানার্জিকে, বললেন, ‘‘এরা তো আপনাদেরই লোক, বিষয়টার গুরুত্ব বুঝে একটু জনতাকে বোঝান না যে, কাল সকালে এ সবের বৈধতা নিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে দেখা হবে! এখন অনেক রাত হয়েছে, যে যার বাড়ি চলে যাক। কেউ বা কারা তো ট্রাকটার চাকা থেকে হাওয়া বার করে দিয়েছে। ফলে গাড়ি এখন কোনও দিকেই মুভ করবে না। আপনি বললে জনতা বুঝবে।’’

অবিনাশবাবু নেকড়ের মতো ধূর্ত একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘‘বট্যেই তো, বট্যেই তো, আপনি আমাদের এত উপকার করছ্যেন আর আমি এটুকু করত্যে পারব না? এই, কে আছিস, একটা টুল এনে দে না রে বাপ, আমি বেঁটে মানুষ, ঠিক করে দেখতে না পেলে লোকজন কথা বুঝব্যা কী করে?’’ চায়ের দোকান থেকে একটা টুল এসে গেল, তাতে উঠে নাতিদীর্ঘ অবিনাশ এক নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন যার সারাংশ, ‘‘এই বদমাশ রেঞ্জার এসে অবধি আমাদের অতিষ্ঠ করে রেখেছে। রোজ রোজ এর অত্যাচার আর সহ্য হয় না, টিম্বার মার্চেন্টদের অনারারি সভাপতি হিসাবে আমি জনতার আদালতে ব্যেপারটো ছেড়ে দিল্যাম। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। বন্ধুগণ, আমি চললাম আপনেরা যা করার করে ন্যেন, আজ্ঞা!’’ এর পরই টুল থেকে তড়াক করে এক লাফ আর ভিড়ের ফাঁক গলে প্রস্থান।

কর্মাধ্যক্ষের এতখানি ‘সহযোগিতা’ স্যরের মতো লোকও বোধ হয় আশা করেননি। উনি সামলে ওঠারও সময় পেলেন না, সম্মিলিত জনতা রে-রে করে ঘিরে ধরল। বেন্দা ওর কর্তব্য স্থির করে নিজের খাকি প্যান্ট-শার্ট খুলে ফেলেছে, ও জানে স্যরকে এদের হাত থেকে বাঁচানো যাবে না, অন্তত বডিটা যাতে আস্ত পাওয়া যায় তার চেষ্টা শুধু। এখন ওকে আমজনতার এক জন বলেই মনে হচ্ছে, ফলে ধাক্কাধাক্কি করে ও জমাট-বাঁধা ভিড়টা পর্যন্ত পৌঁছতে পারল এক সময়। আধো-অন্ধকারে ভিড়ের মধ্যে মাতালদের মার-মার চিৎকার, কে কাকে মারছে বুঝতেই পারা যাচ্ছে না। চাপের মুখে বেন্দাও দু’চারটে রদ্দা খেয়ে গেল, তবে কয়েক জনকে মনের সুখে ঘুসিও মারল কয়েকটা। কিন্তু স্যর কোথায়? ঠাহর করে দেখল, মাটিতেও পড়ে আছেন বলে মনে হল না ওর। কোনও মতে মাতালদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে ও রেঞ্জ অফিসের বাউন্ডারি পাঁচিলের কর্নারে একটা পানগুমটির পাশে আশ্রয় নিল।

জায়গাটা একটু বেশি অন্ধকার। চোখ সয়ে যেতে বেন্দা দেখল, স্যরকে ঘিরে জনা ছয়-সাত কমবয়সি ছেলে ফিসফিস করে কথা বলছে। ছেলেগুলো সবাই পরিচিত, বাজারে যে ক’টা বড় দোকান আছে, সেগুলোরই মালিক বা মালিকের ছেলেরা, সবাই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির। ওরা স্যরকে ধৈর্য ধরে বোঝাচ্ছে, ‘‘দেখুন, একগুঁয়েমিরও একটা সীমা আছে, আপনি একা এখানে মরা ছাড়া কিচ্ছু করতে পারবেন না। ছ’সাত বছর হয়ে গিয়েছে পোর্টের ডিসি বিনোদ মেহতার মার্ডার কেসটার... ভুলে যাওয়ার মতো পুরনো নয়। এখনও কাগজে খবর হয়, আমরাও পড়ি। আজ পর্যন্ত কার কী হয়েছে, বলুন? আপনি মার্ডার হলে এর চেয়েও কম নড়াচড়া হবে, কারণ ওটা ছিল খাস কলকাতার আইপিএস অফিসারের কেস। আর এটা? আপনি জীবন দিয়েও বেশি কিছু করতে পারবেন না। এই কয়েক মাসে আপনার কাজকর্ম দেখে আমরা আপনার ফ্যান হয়ে গিয়েছি। বেঁচে থাকলে আপনি এর চেয়ে অনেক বড় আর ভাল কাজও তো করতে পারেন... তাই না?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy