দ্বিতীয়ত, এই আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ার মেঘের আড়ালে সূর্যের ঢাকা পড়াও খুব একটা আশ্চর্যের নয়। সে ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছবে না সূর্যালোক। ফলে তাপমাত্রা হু-হু করে নামতে শুরু করবে। যার জেরে ফের একবার পৃথিবীতে ফিরতে পারে তুষার যুগ। আলোর অভাবে উদ্ভিদ জগতের অপমৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। দুনিয়া জুড়ে দেখা দেবে খাদ্যসঙ্কট। ঠিক যে কারণে কয়েক কোটি বছর আগে অতিকায় ডাইনোসর চির দিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করেন জীববিজ্ঞানীদের একাংশ।
এত আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেন বছরের পর বছর ‘কুম্ভকর্ণের নিদ্রা’ দিচ্ছে ইয়েলো স্টোনের আগ্নেয়গিরি? এর নেপথ্যে একাধিক কারণের উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, ভূপৃষ্ঠ প্রকৃতপক্ষে একাধিক প্লেটের সমাহার। সাধারণত, ঘর্ষণের জেরে দু’টি প্লেটের সংযোগস্থলে ভূমিকম্প হলে সেখান শুরু হয় অগ্নুৎপাত। কিন্তু মজার বিষয় হল, উদ্যানটি মোটেই দু’টি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত নয় ।
শুধু তা-ই নয়, ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান এলাকায় হওয়া ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই কম যে, আমজনতার পক্ষে তার মালুম পাওয়া শক্ত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা দুই বা তারও কম থাকে। বিজ্ঞানীদের দাবি, উদ্যানটির নীচে যে লাভার প্রকোষ্ঠ রয়েছে, তাতে তাপজনিত চাপের কারণেই বার বার কেঁপে ওঠে সেখানকার মাটি। ফলে এটি আগ্নেয়গিরিটিকে জাগিয়ে তুলতে কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, উদ্যানটির নীচে আশ্চর্য এক প্রাকৃতিক খেলা চলছে। সাধারণত, ভূমিকম্পের জেরে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে লাভা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টো। গরম লাভার তাপজনিত চাপের জেরে বার বার কম্পন অনুভূত হচ্ছে। এই ভূমিকম্প না থাকলে ওই চাপ বাড়তে বাড়তে একটা সময়ে এমন জায়গায় পৌঁছবে যা আগ্নেয়গিরিটিকে জাগিয়ে তুলবে।
দুনিয়ার বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরিগুলির একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে ২১তম স্থানে জ্বলজ্বল করছে ইয়েলোস্টোনের নাম। সাম্প্রতিক গবেষণায় আর পাঁচটি আগ্নেয়গিরির তুলনায় একে সামান্য বড় বলেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। এর জেগে ওঠার সম্ভাবনা ০.০০০১৪ শতাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘আগ্নেয়গিরিটির সমস্ত লাভা গলিত অবস্থায় থাকলে এবং এর অবস্থান দু’টি প্লেটের সংযোগস্থলে হলে এর জেগে ওঠার সম্ভাবনা থাকত ১০০ শতাংশ। তখন প্রলয়ের মুখে পড়তে হত বিশ্বকে।’’
উদ্যানে রয়েছে একাধিক উষ্ণ প্রস্রবণ। যার জল লাভা প্রকোষ্ঠের উপর দিয়ে বেরিয়ে ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে দিব্যি বয়ে চলেছে। উষ্ণ প্রস্রবণগুলির তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনও কোনও জায়গায় তার চেয়েও বেশি। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল, এগুলির জলে মিশে রয়েছে অ্যাসিড। যা এতটাই তীব্র যে, কোনও ক্ষেত্রে লোহাকেও গলিয়ে দিতে পারে।
ইয়োলোস্টোনের আর একটি আকর্ষণীয় বিষয় হল এর বিচিত্র রঙিন ভূমি। যা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা সেখানে ২৪০ কোটি বছরের পুরনো থার্মোফিলিক এবং অ্যাসিডোফিলিক প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন। যা ওই তাপ এবং অ্যাসিড-সমৃদ্ধ পরিবেশে দিব্যি বেঁচে রয়েছে। পাশাপাশি, সেখানকার রঙিন ভূমি ও অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নেপথ্যেও সেগুলির ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy