Who is Dhirendra Brahmachari, the person who had allegedly impressed Indira Gandhi dgtl
Indira Gandhi
Dhirendra Brahmachari: ছিল অস্ত্র কারখানা, বিমান সংস্থা! এই যোগগুরুর সঙ্গে নাকি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ ছিল ইন্দিরার
ধীরেন্দ্র ছিলেন এক দীর্ঘদেহী সুপুরুষ। শোনা যায় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ, যাঁকে একা ঘরে ইন্দিরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৮:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
নাহ, এই যোগগুরু কোনও আয়ুর্বেদিক পণ্যের ব্র্যান্ড খোলেননি। রাজনীতিতেও আসেননি। মেয়ে ইন্দিরা গাঁধীকে যোগব্যায়াম শেখানোর জন্য তাঁকে নিয়োগ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। শোনা যায়, সে কাজ করতে দিল্লি আসার বছর কয়েক পর দিল্লি তো বটেই গোটা ভারতেরই রাশ নিজের আঙুলের ডগায় রেখেছিলেন যোগগুরু ধীরেন্দ্র ব্রহ্মচারী। তবে সবার অলক্ষ্যে।
০২১৬
ধীরেন্দ্র ছিলেন এক দীর্ঘদেহী বিহারি সুপুরুষ। শোনা যায় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ, যাঁকে একা ঘরে ইন্দিরার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতি দিন সকালে তাঁর সঙ্গে অন্তত এক ঘণ্টা চলত ইন্দিরার যোগাভ্যাস।
০৩১৬
১৯৬০ সাল। তখন সদ্য বিধবা হয়েছেন ইন্দিরা। ফিরোজ গাঁধী মারা গিয়েছেন। দুই পুত্র রাজীব এবং সঞ্জয় সবে কৈশোরে। ইন্দিরার বয়স ৪৩।
০৪১৬
ধীরেন্দ্রর সঙ্গে ইন্দিরার সাক্ষাৎ ওই বছরেই। যোগগুরুকে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লিখেছিলেন নেহরু-কন্যা। আমেরিকার নামজাদা ফটোগ্রাফার ডরোথি নরম্যানকে লেখা সেই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে এক সুপুরুষ যোগীর কাছে আমার যোগশিক্ষা শুরু হল।’ কেমন দেখতে সেই যোগীকে? ইন্দিরা বন্ধুকে লিখেছেন, ‘চমৎকার দেখতে। শারীরিক গঠনও বেশ আকর্ষক। যাঁরা দেখেছেন প্রত্যেকেরই চোখ টেনেছে ওঁর উপর।’
০৫১৬
ইন্দিরা নিজের কথা বলেননি। তবে তাঁর সঙ্গে যোগগুরুর সম্পর্ক নিয়ে গল্প থেমে থাকেনি। ইন্দিরার জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন আমেরিকার লেখিকা ক্যাথরিন ফ্র্যাঙ্ক। নিজের বইয়ে ক্যাথরিন লিখেছিলেন, বন্ধ দরজার ভিতর প্রতি দিন যোগীর সঙ্গে অনেকখানি সময় কাটাতেন ইন্দিরা। সেই সময় যদি কারও সঙ্গে ইন্দিরার সম্পর্ক হয়ে থাকে, তবে তিনি এই যোগগুরুই।
০৬১৬
গাঁধী এবং নেহরু পরিবারের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন খুশবন্ত সিংহ। সেই খুশবন্তও তাঁর চিরপরিচিত রাখ-ঢাকহীন ঢঙে বলেছিলেন, ‘‘ধীরেন্দ্র এক জন লম্বা-চওড়া সুঠাম শরীরের বিহারি। বন্ধ ঘরে রোজ সকালে ইন্দিরার সঙ্গে তাঁর এক ঘণ্টার যোগশিক্ষা কামসূত্রের শিক্ষায় পরিণত হতেই পারে।’’
০৭১৬
মোট কথা ইন্দিরার সঙ্গে যে ধীরেন্দ্রর একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচিত হতে শোনা গিয়েছে। ইন্দিরা তখনও কোনও প্রশাসনিক পদে বসেননি। জওহরলালই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ কথা মনে হতেই পারে, বিরোধীরা নেহরু এবং তাঁর পরিবারকে কলঙ্কিত করার জন্য এই ধরনের গুজব ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু ইন্দিরা এবং যোগগুরুর সম্পর্ক নিয়ে তাঁর শত্রুরা নন, বন্ধুরাই আলোচনা শুরু করেছিলেন সবার আগে। সেই আলোচনা জল পেয়ে তরতরিয়ে বেড়েছিল যোগগুরুর প্রতিপত্তি ক্রমে বেড়ে চলায়।
০৮১৬
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কন্যার যোগ প্রশিক্ষক। দেশে যোগগুরুর খ্যাতি ছড়াচ্ছিল দ্রুত। তাঁর কাছ থেকে যোগ প্রশিক্ষণ পেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক আশ্রমও তৈরি হচ্ছিল। যোগগুরু ধীরেন্দ্র সেই সমস্ত আশ্রমে যাতায়াত করতেন নিয়মিত। আর যেতেন ব্যক্তিগত বিমানে চেপে।
০৯১৬
ব্যক্তিগত সংগ্রহে দু’টি বিমান ছিল ধীরেন্দ্রর। তার মধ্যে একটি সে কালের ভারতে কেনা কিংবা চড়া তো দূর চোখেই দেখেননি কেউ। তার সঙ্গে ধীরেন্দ্রর ছিল বিদেশি গাড়ির শখ। সংগ্রহও ছিল দেখার মতো। সাধারণ ভারতীয় তো দূর অস্ত্, টাটা-বিড়লাদের মতো শিল্পপতিকেও সেই সব গাড়ি কিনতে ভাবতে হত দু’বার।
১০১৬
না, যোগগুরু কোনও আয়ুর্বেদিক পণ্যের ব্র্যান্ড খোলেননি ঠিকই। তবে প্রতিপত্তির চূড়ায় পৌঁছে ধীরেন্দ্র একটি এয়ারলাইন্স সংস্থা খুলে ফেলেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘এয়ার অপর্ণা’। তাঁর বিমান পরিবহণ সংস্থা এয়ার ট্যাক্সি পরিষেবা দিত। বিমান ওঠানামা করার জন্য ব্যক্তিগত তিনটি রানওয়ে ছিল ধীরেন্দ্রের। ছিল বিমান রাখার তিনটি নিজস্ব হ্যাঙ্গারও।
১১১৬
ইন্দিরার যোগশিক্ষকের প্রতিপত্তি যখন শিখর ছুঁয়েছে, তখন যোগাসন, বিমান, বিদেশি গাড়ির বাইরে যোগগুরু ধীরেন্দ্রের আগ্রহ ছিল বন্দুকেও! জম্মুতে বন্দুক তৈরির একটি কারখানা খুলেছিলেন ধীরেন্দ্র। নাম ‘শিবা গান ফ্যাক্টরি’।
১২১৬
অনুমতি বা জমি কোনওটাই পেতে বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। এমনকি, যোগগুরুর বিরুদ্ধে যখন ওই কারখানার জন্য ৫০০ স্প্যানিশ গান ব্যারেল চোরা পথে দেশে আনার অভিযোগ ওঠে, তখন আগাম জামিন পেতেও কোনও অসুবিধা হয়নি তাঁর।
১৩১৬
এর উপর যোগগুরুকে তাঁর যোগশিক্ষার জন্য দূরদর্শনের প্রাইম টাইমের সময় দেওয়া হয়েছিল। টিভিতে নিয়মিত হত তাঁর অনুষ্ঠান। তা-ও আবার চিত্রহারের মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগেই। ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৬৪ সালে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লালবাহাদুর শাস্ত্রী দায়িত্ব নিলেন, তখন দেশের কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেন ইন্দিরা। দু’বছর তিনি ওই পদে ছিলেন।
১৪১৬
১৯৮০ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা। একই বছরে সঞ্জয় গাঁধীও সাংসদ হন। শোনা যায় এই সময় যোগগুরুর প্রতিপত্তি ছিল সবথেকে বেশি। সঞ্জয়ের যে সব নীতি চূড়ান্ত সমালোচিত হয়েছিল সেই সব নীতিকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করতে শোনা যায় ধীরেন্দ্রকে। সঞ্জয়ও পছন্দ করতেন ধীরেন্দ্রকে। যোগগুরুর ব্যক্তিগত বিমান চালিয়ে প্রায়ই ঘুরে বেড়াতেন সঞ্জয়।
১৫১৬
শোনা যায়, এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁর পদ খোয়াতে বসেছিলেন ধীরেন্দ্রর জন্য। যোগগুরু তাঁর আশ্রমের জন্য জমি চাইলে সেই অনুরোধ খারিজ করে দিয়েছিলেন ইন্দিরার মন্ত্রিসভার আবাসন প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরাল। আইন দেখিয়ে গুজরাল যোগগুরুকে বলেছিলেন, তাঁকে জমি দেওয়া হলে তা হবে বেআইনি কাজ। জবাবে যোগগুরু নাকি তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি জমি না দাও তবে কালই মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হবে তোমাকে।’’ অদ্ভুত ভাবে এই ঘটনার পরই ইন্দিরার মন্ত্রী গুজরালের দায়িত্ব বদলে দেওয়া হয়। এর পর ইন্দিরা বিরোধীদের অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন মসনদে ইন্দিরা থাকলেও, আসলে কেন্দ্রের ক্ষমতার রাশ জড়ানো আছে যোগগুরু ধীরেন্দ্রর হাতে।
১৬১৬
তবে জল্পনা এর বেশি বাড়তে পারেনি। ১৯৮৪ সালে মৃত্যু হয় ইন্দিরার। তার ১০ বছর পর ১৯৯৪ সালে নিজের বিমানে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মারা যান ধীরেন্দ্রও। বিহারের এই যোগগুরুর আখ্যান তদবধি রহস্য হয়েই থেকে গিয়েছে।