Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

অযোধ্যাতেই ‘শুকিয়ে গেল’ পদ্ম! ‘রামের আশীর্বাদ’ নিয়ে কী ভাবে বিজেপিকে হারালেন অখিলেশের দূত?

মনে করা হয়েছিল, রামমন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দুত্বের আবেগ উস্কে এ বারও অযোধ্যায় জয় হাসিল করবে বিজেপি। কিন্তু ফৈজাবাদ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে দিলেন এসপি প্রার্থী।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ১৪:২৮
Share: Save:
০১ ১৭
উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ আসনটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। এই লোকসভা কেন্দ্রেই রয়েছে অযোধ্যার রামমন্দির।

উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ আসনটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। এই লোকসভা কেন্দ্রেই রয়েছে অযোধ্যার রামমন্দির।

০২ ১৭
মনে করা হয়েছিল, রামমন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দুত্বের আবেগ উস্কে এ বারও ওই কেন্দ্রে জয় হাসিল করবে পদ্মশিবির। কিন্তু ফৈজাবাদের দু’বারের সাংসদ লাল্লু সিংহকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দেন এসপির অবধেশ প্রসাদ।

মনে করা হয়েছিল, রামমন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দুত্বের আবেগ উস্কে এ বারও ওই কেন্দ্রে জয় হাসিল করবে পদ্মশিবির। কিন্তু ফৈজাবাদের দু’বারের সাংসদ লাল্লু সিংহকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দেন এসপির অবধেশ প্রসাদ।

০৩ ১৭
‘অপ্রত্যাশিত’ জয়ের পর তাঁর দাবি, রামের আশীর্বাদ এবং মানুষের ভালবাসাতেই সাফল্য এসেছে। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তরপ্রদেশের ন’বারের সাংসদ অবধেশ বলেন, “রামমন্দিরকে সামনে রেখে বিজেপি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চেয়েছিল। বিজেপি চেয়েছিল বেকারত্ব, দারিদ্র, মুদ্রাস্ফীতি কিংবা কৃষকদের সমস্যার মতো বিষয়গুলি থেকে মানুষের মনোযোগ সরে যাক।”

‘অপ্রত্যাশিত’ জয়ের পর তাঁর দাবি, রামের আশীর্বাদ এবং মানুষের ভালবাসাতেই সাফল্য এসেছে। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উত্তরপ্রদেশের ন’বারের সাংসদ অবধেশ বলেন, “রামমন্দিরকে সামনে রেখে বিজেপি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চেয়েছিল। বিজেপি চেয়েছিল বেকারত্ব, দারিদ্র, মুদ্রাস্ফীতি কিংবা কৃষকদের সমস্যার মতো বিষয়গুলি থেকে মানুষের মনোযোগ সরে যাক।”

০৪ ১৭
গত লোকসভা নির্বাচনে এই ফৈজাবাদ কেন্দ্রে বিজেপির কাছে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন এসপি প্রার্থী। সেই কেন্দ্রে কোন জাদুতে এ বার জয় পেল এসপি? অবধেশ বলেন, “আমি দলিত ভাইবোনেদের থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছি। দলিত সম্প্রদায় গত বারে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। তা ছাড়া ওবিসি এবং সংখ্যালঘু ভোটও আমরা পেয়েছি।”

গত লোকসভা নির্বাচনে এই ফৈজাবাদ কেন্দ্রে বিজেপির কাছে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন এসপি প্রার্থী। সেই কেন্দ্রে কোন জাদুতে এ বার জয় পেল এসপি? অবধেশ বলেন, “আমি দলিত ভাইবোনেদের থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছি। দলিত সম্প্রদায় গত বারে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। তা ছাড়া ওবিসি এবং সংখ্যালঘু ভোটও আমরা পেয়েছি।”

০৫ ১৭
৭৭ বছর বয়সি দলিত নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়ি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকনেতা তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরী চরণ সিংহের হাত ধরে। প্রয়াত চরণকেই নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে মানেন অবধেশ।

৭৭ বছর বয়সি দলিত নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়ি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকনেতা তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরী চরণ সিংহের হাত ধরে। প্রয়াত চরণকেই নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে মানেন অবধেশ।

০৬ ১৭
লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক অবধেশ প্রথম জীবনে ভেবেছিলেন আইনজীবী হবেন। এই পেশায় খানিক নামযশও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে।

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতক অবধেশ প্রথম জীবনে ভেবেছিলেন আইনজীবী হবেন। এই পেশায় খানিক নামযশও হয়েছিল তাঁর। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে।

০৭ ১৭
সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে অযোধ্যা এলাকার স্থানীয় রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান হয় অবধেশের। তিনি ছিলেন সাবেক ফৈজাবাদ (বর্তমান নাম অযোধ্যা) জেলার ‘জরুরি অবস্থা বিরোধী সংঘর্ষ সমিতি’র যুগ্ম আহ্বায়ক। জরুরি অবস্থার সময় বেশ কয়েক দিন জেলও খেটেছেন তিনি।

সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করে অযোধ্যা এলাকার স্থানীয় রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান হয় অবধেশের। তিনি ছিলেন সাবেক ফৈজাবাদ (বর্তমান নাম অযোধ্যা) জেলার ‘জরুরি অবস্থা বিরোধী সংঘর্ষ সমিতি’র যুগ্ম আহ্বায়ক। জরুরি অবস্থার সময় বেশ কয়েক দিন জেলও খেটেছেন তিনি।

০৮ ১৭
মায়ের মৃত্যুর খবর পেলেও প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারেননি তিনি। জেল থেকে বেরিয়েই তিনি স্থির করেন, পূর্ণ সময়ের জন্য রাজনীতি করবেন। ১৯৮১ সালে লোক দল এবং জনতা পার্টি— দুই দলেরই সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

মায়ের মৃত্যুর খবর পেলেও প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারেননি তিনি। জেল থেকে বেরিয়েই তিনি স্থির করেন, পূর্ণ সময়ের জন্য রাজনীতি করবেন। ১৯৮১ সালে লোক দল এবং জনতা পার্টি— দুই দলেরই সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

০৯ ১৭
১৯৮১ সালে সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর জেরে অমেঠী কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। কংগ্রেস প্রার্থী রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ান লোক দলের শরদ যাদব। অবধেশ সেই সময় শরদের অন্যতম কাউন্টিং এজেন্ট।

১৯৮১ সালে সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর জেরে অমেঠী কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। কংগ্রেস প্রার্থী রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ান লোক দলের শরদ যাদব। অবধেশ সেই সময় শরদের অন্যতম কাউন্টিং এজেন্ট।

১০ ১৭
সেই সময় টানা ৫-৭ দিন ধরে ব্যালট গোনা হত। অবধেশ পিতার মৃত্যুর খবর পেয়েও গণনাকেন্দ্র ছাড়েননি। কারণ চরণের নির্দেশ ছিল, কোনও অবস্থাতেই গণনাকেন্দ্র ছাড়া চলবে না। নির্বাচনে অবশ্য বিপুল ভোটে জয়ী হন রাজীব।

সেই সময় টানা ৫-৭ দিন ধরে ব্যালট গোনা হত। অবধেশ পিতার মৃত্যুর খবর পেয়েও গণনাকেন্দ্র ছাড়েননি। কারণ চরণের নির্দেশ ছিল, কোনও অবস্থাতেই গণনাকেন্দ্র ছাড়া চলবে না। নির্বাচনে অবশ্য বিপুল ভোটে জয়ী হন রাজীব।

১১ ১৭
জনতা পার্টি যখন বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল, সেই সময় মুলায়মের পক্ষ নেন অবধেশ। ১৯৯২ সালে মুলায়মের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) গঠন করেন অবধেশরা। অবধেশকে দলের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করা হয়। এর পাশাপাশি তাঁকে দলের অন্যতম নীতি নির্ধারক কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডের সদস্য করেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম।

জনতা পার্টি যখন বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল, সেই সময় মুলায়মের পক্ষ নেন অবধেশ। ১৯৯২ সালে মুলায়মের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) গঠন করেন অবধেশরা। অবধেশকে দলের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করা হয়। এর পাশাপাশি তাঁকে দলের অন্যতম নীতি নির্ধারক কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডের সদস্য করেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম।

১২ ১৭
পরবর্তী সময়ে দলের প্রভাব এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় অবধেশের। তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এখনও সেই পদেই রয়েছেন তিনি। মুলায়মের মৃত্যুর পর এসপির অন্দরে নানা টানাপড়েনের মধ্যেও অখিলেশের পাশ থেকে সরে যাননি অবধেশ।

পরবর্তী সময়ে দলের প্রভাব এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় অবধেশের। তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এখনও সেই পদেই রয়েছেন তিনি। মুলায়মের মৃত্যুর পর এসপির অন্দরে নানা টানাপড়েনের মধ্যেও অখিলেশের পাশ থেকে সরে যাননি অবধেশ।

১৩ ১৭
দলিত এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ভোটের কথা মাথায় রেখেই এ বার ফৈজাবাদ আসনে ভূমিপুত্র তথা দলিত নেতা অবধেশকে প্রার্থী করেন মুলায়ম-পুত্র। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, অখিলেশের সেই কৌশল কার্যকর হয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিকে জাতপাতের অঙ্ক কষে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দলিত এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ভোটের কথা মাথায় রেখেই এ বার ফৈজাবাদ আসনে ভূমিপুত্র তথা দলিত নেতা অবধেশকে প্রার্থী করেন মুলায়ম-পুত্র। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, অখিলেশের সেই কৌশল কার্যকর হয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিকে জাতপাতের অঙ্ক কষে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি।

১৪ ১৭
রামমন্দির যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই আসনে জেতার জন্য কি আলাদা কোনও কৌশল ছিল? উত্তরে অবধেশ বলেন, “আমার আলাদা কোনও পরিকল্পনা ছিল না। এই জয় সম্ভব হয়েছে প্রভু রাম এবং হনুমানজির আশীর্বাদ এবং মানুষের ভালবাসায়। আমি মনে করি এই তিন শক্তি আমার জয়কে সুনিশ্চিত করেছে।”

রামমন্দির যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই আসনে জেতার জন্য কি আলাদা কোনও কৌশল ছিল? উত্তরে অবধেশ বলেন, “আমার আলাদা কোনও পরিকল্পনা ছিল না। এই জয় সম্ভব হয়েছে প্রভু রাম এবং হনুমানজির আশীর্বাদ এবং মানুষের ভালবাসায়। আমি মনে করি এই তিন শক্তি আমার জয়কে সুনিশ্চিত করেছে।”

১৫ ১৭
তাঁর জয়ের কৃতিত্ব অখিলেশকেও দিয়েছেন ন’বারের বিধায়ক অবধেশ। তাঁর কথায়, “জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়ার মতো সমাজবাদী নেতাদের স্বপ্নপূরণ করবেন অখিলেশ।”

তাঁর জয়ের কৃতিত্ব অখিলেশকেও দিয়েছেন ন’বারের বিধায়ক অবধেশ। তাঁর কথায়, “জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়ার মতো সমাজবাদী নেতাদের স্বপ্নপূরণ করবেন অখিলেশ।”

১৬ ১৭
অতীতে এক বারই লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন অবধেশ, ১৯৯৬ সালে। সাবেক আকবরপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে হেরে যান তিনি। তখন এই কেন্দ্রটি ফৈজাবাদ (বর্তমানে অযোধ্যা) লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অতীতে এক বারই লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন অবধেশ, ১৯৯৬ সালে। সাবেক আকবরপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে হেরে যান তিনি। তখন এই কেন্দ্রটি ফৈজাবাদ (বর্তমানে অযোধ্যা) লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৭ ১৭
তবে বিধানসভা নির্বাচনে অধিকাংশ সময়েই জয়ের মুখ দেখেছেন অবধেশ। ১৯৯১ সালে সোহাওয়াল কেন্দ্রে জনতা পার্টির প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হন তিনি। আর ২০১৭ সালে এসপি প্রার্থী হিসাবে মিল্কিপুর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হন তিনি। সেই হিসাবে প্রথম বার দেশের সংসদে পা রাখতে চলেছেন অবধেশ।

তবে বিধানসভা নির্বাচনে অধিকাংশ সময়েই জয়ের মুখ দেখেছেন অবধেশ। ১৯৯১ সালে সোহাওয়াল কেন্দ্রে জনতা পার্টির প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হন তিনি। আর ২০১৭ সালে এসপি প্রার্থী হিসাবে মিল্কিপুর লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হন তিনি। সেই হিসাবে প্রথম বার দেশের সংসদে পা রাখতে চলেছেন অবধেশ।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE