What will happen if 1 Indian Rupee becomes equal to 1 US Dollar dgtl
1 Indian Rupee = 1 US Dollar
১ টাকা = ১ ডলার! কতটা লাভ হতে পারে টাকার দাম ডলারের সমান হলে? ক্ষতিই বা কী কী?
ডলার এবং মুদ্রার তুল্যমূল্য বিচারে যদি আমেরিকাকে সত্যিই কোনও দিন ছুঁয়ে ফেলতে পারে ভারত, তখন কী পরিস্থিতি তৈরি হবে? ১ ডলার এবং ১ টাকার মূল্য যদি একই হয়, তখন কেমন হবে দেশের মানুষের দৈনন্দিন যাপন?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
আমেরিকান ডলারের চেয়ে ভারতীয় মুদ্রা এখন অনেক দুর্বল। যত দিন এগিয়েছে, ডলার এবং টাকার ব্যবধান ক্রমেই বেড়েছে। বর্তমানে ১ ডলার ৮২.৯১ টাকার সমান।
০২১৮
ভারত উন্নয়নশীল দেশ। আমেরিকার মতো উন্নত দেশকে ছোঁয়ার লক্ষ্য নিয়েই এগোয় সে। তবে আমেরিকান অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারতকে এখনও দীর্ঘ পথ পেরোতে হবে।
০৩১৮
ডলার এবং মুদ্রার তুল্যমূল্য বিচারে যদি আমেরিকাকে সত্যিই কোনও দিন ছুঁয়ে ফেলতে পারে ভারত, তখন কী পরিস্থিতি তৈরি হবে? আদতে তাতে ভারতের লাভ হবে কি? ১ ডলার এবং ১ টাকার অর্থমূল্য এক হলে কেমন হবে দেশের মানুষের দৈনন্দিন যাপন?
০৪১৮
টাকার দাম ডলারের সমান হয়ে গেলে অবশ্যই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমবে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নয়, বিলাসবহুল জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও আর দু’বার ভাবতে হবে না মধ্যবিত্ত দেশবাসীকে।
০৫১৮
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, টাকা এবং ডলার সমান মূল্যের হলে দামি আইফোন মিলবে ৬০০ টাকায়। কারণ, আমেরিকায় আইফোনের দাম ৬০০ ডলার থেকেই শুরু।
০৬১৮
টাকা মূল্যবান হলে ভারতে বিদেশ থেকে আমদানি সহজ হবে। আরও সস্তায় অনেক বেশি জিনিস বিদেশ থেকে ভারতে আমদানি করা যাবে। ফলে ভারতের বাজারে জিনিসের দাম কমে আসবে হু হু করে। পেট্রল, ডিজ়েলের দাম কমায় পরিবহণের খরচও কমবে চোখে পড়ার মতো। মাত্র কয়েক হাজার টাকায় বিদেশে ছুটি কাটিয়ে আসা যাবে।
০৭১৮
কিন্তু পরিস্থিতি যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটা নয়। ডলার এবং ভারতের মুদ্রা সমান সমান হয়ে গেলে বিপদও অনেক। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে তাই ১ টাকা = ১ ডলার কখনই কাম্য নয়।
০৮১৮
টাকা, ডলার সমান হলে আমদানি সস্তা হবে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে রফতানির খরচ বাড়বে। ভারতে উৎপন্ন জিনিসের মূল্য অন্য অনেক দেশের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ফলে তা বিদেশে রফতানি করার জন্যও খরচ হবে অনেক বেশি হবে। ভারতের কাছ থেকে দামি সে সব পণ্য কিনতেও দ্বিধা করবে অন্য দেশ।
০৯১৮
টাকার মূল্য ডলারের সমান হয়ে গেলে এ দেশে বাণিজ্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে বহু বিদেশি সংস্থা। কারণ, বিদেশ থেকে ভারতে বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য সুলভ শ্রমিক। সস্তায় এই দেশে পরিশ্রমযোগ্য শ্রমিক মেলে। তাই ভারতে বাণিজ্যের খরচ অন্য অনেক দেশের চেয়ে কম। যে কারণে বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতে বাণিজ্য বিস্তারে আগ্রহী হয়। টাকা ডলারের সমান হয়ে গেলে বিদেশি বণিকেরা ভারতীয় শ্রমিকে উৎসাহ হারাবেন।
১০১৮
ভারতের জিডিপিতে অন্তত ৬০ শতাংশ অবদান রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা ক্ষেত্রের। আইটি সেক্টরেই ভারতের ২৭ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। টাকা এবং ডলার সমান মূল্যের হয়ে গেলে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। ভারতে কর্মীদের বেতন হয়ে যাবে আমেরিকান কর্মীদের বেতনের সমান। পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে মোটামুটি ভাবে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে যে শ্রম মেলে, ভারতে তার জন্য ৭৫ হাজার টাকা (বা ৭৫ হাজার ডলার) খরচ করতে রাজি হবে না কোনও সংস্থাই।
১১১৮
বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেলে ভারতের অর্থনীতি ধসে পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সস্তা হলেও ১ ডলার = ১ টাকায় বৃদ্ধি পাবে বেকারত্ব।
১২১৮
১৯৪৭ সালে ভারত যখন ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল, সে সময় আক্ষরিক অর্থেই ভারতের ১ টাকা আমেরিকার ১ ডলারের সমতুল্য ছিল। তার পর কালক্রমে ডলারের চেয়ে দুর্বল হয়েছে টাকা।
১৩১৮
মুদ্রার মান নির্ধারণ কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তের উপরেও নির্ভর করে। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মুদ্রাকে দুর্বল করে রাখাই সরকারের হাতিয়ার।
১৪১৮
যে সমস্ত দেশ আমদানিভিত্তিক, অর্থাৎ, আমদানির উপরেই যে সমস্ত দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে, সেই দেশগুলিতে মুদ্রাকে শক্তিশালী করে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। কারণ, মুদ্রা শক্তিশালী হলে বিদেশ থেকে সস্তায় জিনিস কেনা যায়।
১৫১৮
আবার, যে দেশগুলি রফতানির উপরে অর্থনৈতিক কাঠামোকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে, সে দেশের সরকার মুদ্রাকে দুর্বল করে রাখতে চায়। মুদ্রা দুর্বল হলে দেশ থেকে পণ্য রফতানির মাধ্যমে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব হয়।
১৬১৮
ভারতে আমদানি এবং রফতানির পরিসংখ্যান পাশাপাশি রেখে দেখা গিয়েছে, বিদেশে পণ্য বিক্রির চেয়ে বিদেশ থেকে পণ্য কেনার পরিমাণই ভারতে বেশি। ফলে ভারতের মুদ্রা যত শক্তিশালী হবে, ততই লাভ।
১৭১৮
১৯৪৭ সালের পর স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৫২ সালে। তার পর অনেক নির্বাচন এসেছে। রাজনৈতিক নেতারা বার বার আশ্বাস দিয়েছেন, টাকার দাম আরও বাড়িয়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যপূরণে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। ১ ডলার = ১ টাকা তো দূরের কথা, দিন দিন বরং আরও দুর্বল হয়েছে ভারতীয় মুদ্রা।
১৮১৮
এ কথা সত্য, ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ১ টাকা = ১ ডলার কাম্য নয়। তবে টাকাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারলে দেশবাসীর দৈনন্দিন যাপনের মান উন্নত হবে, তাতে সন্দেহ নেই।