Untold story of mysterious iron mountain of Greenland dgtl
iron mountain of Greenland
বরফের রাজ্যে অদ্ভুত ধাতব পাহাড়! রহস্য সমাধানে প্রকাশ্যে আসে ১০ হাজার বছরের পুরনো ভয়ঙ্কর সত্য
অমূল্য পাহাড়টির খুঁজে পেতে দুর্গম এলাকায় একের পর এক তল্লাশি চলে। বহু চেষ্টা করেও সেই লোহার পাহাড়ের সন্ধান পাননি অনেকেই। ব্যর্থ হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয় অভিযাত্রীদের।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:১২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। নাম গ্রিনল্যান্ড হলেও দেখা মেলে না এক ফোঁটা সবুজের। এখানকার ৮৫ শতাংশ এলাকা তুষারে ঢাকা। ২১ কোটি ৬৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই দ্বীপটির অধিবাসীর সংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজারের কাছাকাছি।
০২১৬
গ্রিনল্যান্ডের অধিবাসীদের সাধারণত আমরা এস্কিমো বলে জানি। এস্কিমো নামটি এখন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেরু অঞ্চলে সাদা তুষারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এই মানুষগুলো নিজেদের ‘ইনুইট’ বা ‘মানুষ’ নামে ডাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
০৩১৬
১৮ শতকে ইউরোপের কয়েকটি অনুসন্ধানকারী দল গ্রিনল্যান্ডে পা রাখার পর মৃত্যুশীতল তাপমাত্রায় প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকা এই মানুষগুলির সন্ধান পান। তাঁরা দেখেন প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে টিকে থাকার আশ্চর্য শক্তি রয়েছে এঁদের মধ্যে।
০৪১৬
তীব্র ঠান্ডা ও বরফাচ্ছাদিত এই অঞ্চলে বেঁচে থাকাই প্রায় অসম্ভব। খাবার জোগাড়ের উপায় মাছ ধরা ও শিকার। ইউরোপ থেকে আসা মানুষগুলি দেখলেন পৃথিবীর বাকি অংশের সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন ইনুইটরা শিকারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে লোহা দিয়ে তৈরি অস্ত্র।
০৫১৬
১৮১৮ সালে ইংল্যান্ডের অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জস রোস গ্রিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে স্থানীয় ইনুইটদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে সময় তিনি লক্ষ করেন, ইনুইটরা শিকারের জন্য এক ধরনের বিশেষ ছুরি ও বল্লম ব্যবহার করেন যেগুলির অগ্রভাগে লোহার মতো শক্ত ধাতব উপাদান রয়েছে।
০৬১৬
ক্যাপ্টেন রোস প্রথমে ভেবেছিলেন গ্রিনল্যান্ডের উপকূলে ভেসে আসা কোনও পরিত্যক্ত জাহাজ থেকে এই ধাতু পেয়েছেন ইনুইটরা। পরে তাঁর সেই অনুমান ভুল বলে প্রমাণিত হয়। এক স্থানীয় ইনুইট তাঁকে জানান এই বরফে ঢাকা উপত্যকায় লুকিয়ে রয়েছে এক ধাতব পাহাড়।
০৭১৬
এই তথ্যটি শুনে রোসের মনে সন্দেহ জাগলেও চোখের সামনে অস্ত্রগুলি দেখে তা অবিশ্বাস করার উপায় ছিল না। তিনি জানতেন এই বিশেষ পাহাড় খুঁজে পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম আকাশছোঁয়া হবে।
০৮১৬
সেই অমূল্য ধাতব পাহাড়টি খুঁজে পেতে একের পর এক দুর্গম এলাকায় খানাতল্লাশি চলে। তবে বহু চেষ্টা করেও সেই পাহাড়ের সন্ধান পাননি রোস। ব্যর্থ হয়ে খালি হাতেই তাঁকে ফিরতে হয়। রোসের দৌলতে সারা ইউরোপে চাউর হয়ে যায় গ্রিনল্যান্ডের অদ্ভুত এই পাহাড়টির গল্প।
০৯১৬
১৮১৮ সাল থেকে ব্রিটেন, সুইডেন ও ডেনমার্কের অভিযাত্রীরা বার বার গ্রিনল্যান্ডে হানা দেন রহস্যময় পাহাড়ের লোভে। তবে সেই পাহাড়ের হদিস পাননি কেউই।
১০১৬
বিদেশি হিসাবে গ্রিনল্যান্ডের বুকে লোহার পাহাড়টির প্রথম আবিষ্কার করেন যে ব্যক্তি, তিনি ছিলেন আমেরিকান নৌবাহিনীর এক সদস্য। তাঁর নাম রবার্ট পিয়েরি। তিনি বহু দিন গ্রিনল্যান্ডে বসবাস করার ফলে স্থানীয় ইনুইটদের সঙ্গে তাঁর গভীর সখ্য গড়ে উঠেছিল। ইনুইটদের ভাষা ও সংস্কৃতিকেও ভাল ভাবে আয়ত্ত করেছিলেন রবার্ট।
১১১৬
১৮৯৪ সালে স্থানীয় এক ইনুইটকে সঙ্গী করে রবার্ট পিয়েরি ওই লোহার পাহাড় খুঁজে পান। লোহার পাহাড়টি খুঁজে পাওয়ার পর তা পরীক্ষা করে তিনি বুঝে যান এই পাহাড়টি পৃথিবীর কোনও অংশ নয়।
১২১৬
বিশাল এই লোহার টুকরোটি মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে খসে পড়া উল্কাপিণ্ডের অংশ। এটি প্রায় ১০ হাজার বছর আগে গ্রিনল্যান্ডে আছড়ে পড়ে বলে ধারণা করেন তিনি। ধেয়ে আসা উল্কাপিণ্ডের আয়তন আরও বড় ছিল।
১৩১৬
মহাকাশ থেকে ছিটকে আসা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় এবং সবচেয়ে বড় টুকরোটি গ্রিনল্যান্ডে এসে পড়ে।
১৪১৬
আমেরিকার বাজারে সেই লোহার পিণ্ড বিক্রি করে বড়সড় দাঁও মারতে চেয়েছিলেন রবার্ট। একই সঙ্গে তিনি আরও একটি পরিকল্পনা করেন, যার ফল হয়েছিল ভয়াবহ। রবার্টের লোভের কারণেই শেষ হয়ে যায় পাঁচ জন নিষ্পাপ মানুষের জীবন। ধ্বংস হয়ে যায় একটি সুখী পরিবার।
১৫১৬
বিশাল উল্কাপিণ্ডটিকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। সে সময় উন্নত যন্ত্রপাতি গ্রিনল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই উল্কাপিণ্ডটিকে জাহাজে তোলার জন্য স্থানীয় ইনুইটদেরই সাহায্য নিতে হয়েছিল রবার্টকে। উল্কাপিণ্ডটিকে উপকূলে জাহাজ পর্যন্ত নিয়ে যেতে তিন বছর সময় লেগে যায়।
১৬১৬
উল্কাপিণ্ডটি ১৮৯৭ সালে ‘আমেরিকান মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি’কে ৪০ হাজার ডলারে বিক্রি করেন রবার্ট। বর্তমান হিসাবে এটি প্রায় আট কোটি টাকার সমান। যাঁদের সহায়তায় রবার্ট এত অর্থ রোজগার করেন তাঁদের জন্য এক কপর্দকও খরচ করেননি তিনি।