What is the main reason behind ongoing Manipur Clash, take a look dgtl
Manipur Clash
কেন হিংসার আগুন জ্বলছে মণিপুরে, নেপথ্যে কি কেবলই অনাস্থা আর অবিশ্বাস?
কিন্তু কেন অশান্তির আগুনে জ্বলতে হচ্ছে মণিপুরকে, যার জন্য অলিম্পিক্স পদকজয়ী বক্সার মেরি কমকে পর্যন্ত বলতে হচ্ছে, “আমার রাজ্য জ্বলছে। সকলে মিলে মণিপুরকে রক্ষা করুন”?
সংবাদ সংস্থা
ইম্ফলশেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ১৪:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বুধবারের পর প্রায় ৪ দিন কেটে গেলেও হিংসা থামার কোনও ইঙ্গিত নেই মণিপুরে। শুক্রবার গভীর রাতেও সে রাজ্যের চূড়াচাঁদপুরে গুলি করে খুন করা হয়েছে বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসা এক সিআরপিএফ কমান্ডোকে। রাজধানী ইম্ফলে হিংসার বলি হয়েছেন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের এক আয়কর আধিকারিক।
০২১৯
পরিস্থিতি মোকাবিলায় উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে ৩৫৫ ধারা জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
০৩১৯
কিন্তু কেন অশান্তির আগুনে জ্বলতে হচ্ছে মণিপুরকে, যার জন্য অলিম্পিক্স পদকজয়ী বক্সার মেরি কমকে পর্যন্ত বলতে হচ্ছে, “আমার রাজ্য জ্বলছে। সকলে মিলে মণিপুরকে রক্ষা করুন?”
০৪১৯
মণিপুর-হিংসার কারণ অনুসন্ধানে সে রাজ্যের জনতত্ত্ব বা ডেমোগ্রাফির দিকে নজর দিতে হবে। জনসংখ্যার নিরিখে মেইতেই সম্প্রদায়ই সে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই মেইতেই গোষ্ঠীর তফসিলি জনজাতি (এসটি) তকমার দাবিতে আন্দোলন শুরু করার পরেই সে রাজ্যে হিংসার সূত্রপাত।
০৫১৯
মেইতেইদের তফসিলি জনজাতি তকমা পাওয়ার বিরোধিতা করছে রাজ্যের অন্য তফসিলি সম্প্রদায়গুলি। রাজ্যে প্রায় ৩৪টি স্বীকৃত তফসিলি সম্প্রদায় থাকলেও, এদের মধ্যে প্রভাবে এবং জনসংখ্যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুকিরা।
০৬১৯
রাজ্যের তফসিলি সম্প্রদায়গুলির দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিসাবে এমনিতেই বহু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষরা। তাই তাদের আর আলাদা করে তফসিলি জনজাতির তকমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
০৭১৯
অন্য দিকে, মেইতেইদের দাবি, রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও তাদের অস্তিত্বসঙ্কট দেখা দিয়েছে। তার প্রমাণ হিসাবে তারা ২০১১ সালের জনসুমারীর পরিসংখ্যানকে খাড়া করছে।
০৮১৯
ওই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ১৯৫১ সালে মণিপুরে ৫৯ শতাংশ মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষ থাকলেও ২০১১ সালে কমতে কমতে তা ৪৪ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। তা ছাড়া মণিপুর উপত্যকায় জনজাতি বিশেষত কুকিদের বিরুদ্ধে জায়গা জমি দখল করার অভিযোগ তুলেছে তারা।
০৯১৯
মায়ানমারের জুন্টা সরকারের তাড়া খেয়ে বহু অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মণিপুরে এসে জায়গাজমি দখল করছে বলেও মেইতেইদের অভিযোগ। প্রসঙ্গত, মণিপুরে সংবিধানের ৩৭১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাহাড়ি অঞ্চলে শুধু তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষই বাড়ি করতে পারেন।
১০১৯
রাজ্যের নানা পাহাড়ি অঞ্চলে জনজাতি সম্প্রদায়গুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও, মূলত রাজধানী ইম্ফল এবং সন্নিহিত উপত্যকায় বসবাস করে মেইতেইরা। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলেও মেইতেইরা রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ অঞ্চলে বসবাস করেন।
১১১৯
এই হিংসার প্রেক্ষাপট অবশ্য রচিত হয়েছিল অনেক আগেই। মণিপুরের তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়গুলির অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। অন্য দিকে, মেইতেইদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
১২১৯
তবে এই হিংসার নিবিড় পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এটি নিছক হিন্দু বনাম খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংঘাতের বিষয় নয়। বরং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির যে সাধারণ সমস্যাগুলি রয়েছে, মণিপুরের এই সমস্যাও তার ব্যতিক্রম নয়।
১৩১৯
কিছু দিন আগেই অবৈধ উপায়ে জমি দখলের অভিযোগে পাহাড়ি অঞ্চলে তিনটি গির্জা ভেঙে দেয় মণিপুর সরকার। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় কুকি-সহ অন্য তফসিলি জনগোষ্ঠীগুলি।
১৪১৯
তারও আগে অবৈধ পোস্ত চাষের অভিযোগে পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে অভিযান চালায় সরকারের বিশেষ বাহিনী। কুকিদের অভিযোগ, মেইতেইদের পাহাড়ি অঞ্চলে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
১৫১৯
সম্প্রতি মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি বুধবার থেকে তার বিরোধিতায় পথে নামে।
১৬১৯
উচ্চ আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আদালত অবমাননার দায়ে তফসিলি ছাত্র সংগঠন (এটিএসইউএম)-এর সভাপতিকে শোকজ় নোটিস পাঠায় মণিপুর হাই কোর্ট। তার পরই তফসিলি গোষ্ঠীগুলি দাবি করে, হাই কোর্ট মেইতেইদের কথায় কাজ করছে।
১৭১৯
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাসের ঘটনা দেখা গিয়েছিল পড়শি রাজ্য অসমেও। সে রাজ্যে অসমিয়ারা দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা তাদের জমি-জীবিকা কেড়ে নিচ্ছে।
১৮১৯
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ নিজেও মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষ। এর আগে কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো তফসিলি সম্প্রদায়গুলির আস্থা অর্জনে ইম্ফলের বাইরে বেরিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে মন্ত্রিসভার বৈঠক করতেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি নাকি তাঁর সেই উদ্যোগে ছেদ পড়ে।
১৯১৯
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তফসিলি জনগোষ্ঠী এবং মেইতেইদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ ফেরাতে না পারলে, মণিপুরের হিংসায় লাগাম পরানো যাবে না। (এই প্রতিবেদন প্রথম বার প্রকাশের সময় মণিপুরের রাজধানী শিলং লেখা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)