What happened in RG Kar Incident in last one week dgtl
R G Kar Hospital Incident
শুক্র থেকে শুক্র, এক সপ্তাহে কোন দিকে গড়াল আরজি কর-কাণ্ড? কতটা এগোল তদন্ত? দেখে নিন এক নজরে
গত শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৪ ১৩:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
গত শুক্রবার আরজি করের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার জেরে উত্তাল রাজ্য। ঘটনার অভিঘাত এমনই যে, রাজ্য ছাড়িয়ে সারা দেশে এই নিয়ে তোলপাড় চলছে। দিকে দিকে প্রতিবাদে নেমেছেন সাধারণ মানুষ থেকে তারকারা। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এক সপ্তাহে কোন দিকে গড়াল আরজি কর-কাণ্ডের ঘটনাপ্রবাহ।
০২২৭
গত শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসকের মৃত্যুতে উত্তাল হয় আরজি কর। প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকদের সংগঠন। রাতেও বিক্ষোভ চলে আরজি কর হাসপাতালের সামনে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিজেপি, তৃণমূল নেতৃত্ব। চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তদন্ত শুরু করে পুলিশও।
০৩২৭
সেমিনার হলে একটি নীলরঙা কার্পেটের উপর চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল। কার্পেটের চারপাশে চুলের গোছা পড়ে থাকতেও দেখা গিয়েছিল। সেই কার্পেটে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছিল। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মৃতার দু’চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার চিহ্নের উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া, মুখেও রক্তের দাগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন বাঁ পা, পেট, নখ, মুখ, ঠোঁট, যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্নও মেলে। এর পরেই ওই ঘটনায় ধর্ষণের মামলা যুক্ত হয়।
০৪২৭
আরজি কর হাসপাতালে তরুণীর চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই এক অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। রাতভর চলে জিজ্ঞাসাবাদ। শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ওই যুবকের পরিচয় এবং পেশা নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়। এর মধ্যেই আরজি কর-কাণ্ডের আঁচ রাজ্যের বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পথে নামেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। সরব হন বাংলা থেকে মুম্বইয়ের তারকাশিবিরও।
০৫২৭
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দোষীর ফাঁসির শাস্তি চান তিনি। সংবাদমাধ্যমকে টেলিফোনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এই ঘটনায় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে ফাঁসির আবেদন জানানো উচিত। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা না থাকলে অন্য কোনও এজেন্সির দ্বারস্থও হতে পারেন আন্দোলনকারীরা। কারণ, সরকার উপযুক্ত তদন্ত চায়। জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ সঙ্গত বলেও মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, কথা বলেন মৃতার মা-বাবার সঙ্গেও।
০৬২৭
এর মধ্যেই আরজি কর-কাণ্ডে যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর মোবাইল ফোন ঘেঁটে পর্নোগ্রাফির বহু ভিডিয়ো পায় পুলিশ। ওই যুবকের মানসিক বিকৃতি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে যুবককে দেখা গিয়েছিল। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর আবার তাঁকে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যেই তিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা যায়, অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যুবক। তবে তাঁর মধ্যে কোনও অপরাধবোধ দেখা যায়নি।
০৭২৭
অন্য দিকে, আরজি করের নিরাপত্তারক্ষীরাই জানান, ধৃত যুবকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল হাসপাতালে। তিনি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। হাসপাতালে দালালির সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল বলে মনে করা হয়। মূলত দু’টি বিষয়ের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে। এক, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং দুই, একটি ব্লুটুথ হেডফোন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালে প্রবেশের সময়ে অভিযুক্তের কানে একটি হেডফোন ছিল। পরে তিনি যখন বেরিয়ে আসছেন, তখন হেডফোন দেখা যায়নি তাঁর কানে। পরে ওই হেডফোনেরই ছেঁড়া অংশ পাওয়া যায় আরজি করের জরুরি বিভাগের চার তলার ওই সেমিনার হল থেকে।
০৮২৭
তদন্ত চলাকালীন প্রকাশ্যে আসে, ধৃতের আরও অনেক কীর্তি। জানা যায়, একাধিক বিয়ে করেছেন ধৃত যুবক। পাশাপাশি পুলিশে চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে অতীতে টাকা তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। জানা যায়, কখনও সিভিক ভলান্টিয়ার, কখনও পুলিশ, কখনও আবার বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মী হিসাবে নিজের পরিচয় দিতেন অভিযুক্ত! ‘কেপি’ (কলকাতা পুলিশ) লেখা গাড়ি, বাইকও ছিল তাঁর। সেই বাইক নিয়েই ছিল হাসপাতালে নিত্য যাতায়াত। নিজের এলাকাতেও ‘পুলিশ’ লেখা টি-শার্ট পরে দাপট নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। অথচ পুলিশের ঠিক কোন পদে কর্মরত ছিলেন অভিযুক্ত, জানতেন না কেউই!
০৯২৭
শনিবার ধৃত যুবককে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়। শিয়ালদহ কোর্টে অভিযুক্তের হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করেননি। এর পর তদন্তকারীদের সূত্রে খবর মেলে, আরজি কর হাসপাতালে ঢুকে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত। অপরাধের কথা স্বীকার করলেও তাঁর মধ্যে কোনও অপরাধবোধ দেখা যায়নি বলেও তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যায়। তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, কোনও অনুতাপবোধ ছিল না অভিযুক্তের মধ্যে। বরং অভিযুক্ত জেরার সময় বলেন, ‘‘ফাঁসি দিলে দিন।’’
১০২৭
এর পর শনিবার সকাল থেকে আবার উত্তাপ ছড়ায় আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে। ঘড়ির কাঁটা যত এগোয়, তত বাড়ে অবস্থান, বিক্ষোভ, প্রতিবাদের তেজ। বিকেলে তা চরমে পৌঁছয়। ‘বহিরাগত’ একদল আন্দোলনকারী আরজি করে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দিতেই শুরু হয় ধ্বস্তাধস্তি। চলে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। দীর্ঘ ক্ষণ ‘বহিরাগত’ আন্দোলনকারীদের আরজি করের ভিতরে প্রবেশ আটকাতে সমর্থ হন পুলিশকর্মীরা। পরে ফের একদফা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়।
১১২৭
অবস্থানরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াতে শনিবার বিকেলে আরজি কর হাসপাতালের কাছে পৌঁছে যান একাধিক বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্যেরা। পথে নামে পদ্মশিবিরও। স্টুডেন্টস হেল্থ হোমের চিকিৎসকেরা ওই একই সময়ে পৌঁছে যান আরজি করের সামনে। তাঁদের মধ্যে আরজি করের প্রাক্তনীরাও ছিলেন। তাঁরা ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করতেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত ‘খণ্ডযুদ্ধ’।
১২২৭
আরজি করে আধ ঘণ্টার নৃশংসতা কী ভাবে ঘটল? রবিবার ধর্ষণ, অত্যাচার এবং খুনের সূত্র জুড়তে শুরু করেন তদন্তকারীরা। ওই সেমিনার হলে ঠিক কী ঘটেছিল, তার ছবি পুলিশের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ইঙ্গিত মেলে, আক্রমণের সময় ওই মহিলার নিজেকে বাঁচাতে যতটা প্রতিরোধ করা স্বাভাবিক ততটা করতে পারেননি। তদন্তে পুলিশ অনুমান করে, অভিযুক্ত খুবই বলশালী। ফলে তিনি যখন মহিলাকে আক্রমণ করেন, তখন তাঁকে খুব শক্ত ভাবে চেপে ধরা হয়। যুবতীর মুখ, গলা, হাত-পা, এমন ভাবে চেপে ধরেন অভিযুক্ত, যার ফলে তিনি স্বাভাবিক প্রতিরোধ করার সুযোগ পাননি। পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে, হামলার সময় কি ওই যুবতী বাঁচার জন্য সাহায্য চাইতে চিৎকার করতে পারেননি? যদি চিৎকার করেন, তবে তা হাসপাতালের অন্য কেউ কেন শুনতে পেলেন না?
১৩২৭
অন্য দিকে, তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহে যে ধরনের এবং যত সংখ্যক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, তা কি এক জনের পক্ষে করা সম্ভব? আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনায় এই সব প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন আন্দোলনকারী মেডিক্যাল পড়ুয়া এবং চিকিৎসকদের একাংশ। প্রশ্ন তোলেন রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেও। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এক জন নন, একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলেও নানা তত্ত্ব ঘুরতে শুরু করে সমাজমাধ্যমে।
১৪২৭
রবিবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সুপারকেও সরানোর নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য দফতর। এত দিন এই দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক সঞ্জয় বশিষ্ঠ। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় হাসপাতালের ডিন বুলবুল মুখোপাধ্যায়কে। শুক্রবার হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পর থেকেই সুপারকে সরানোর দাবি উঠেছিল। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর স্বাস্থ্য দফতর সুপারকে অপসারণের নির্দেশ জারি করে।
১৫২৭
মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদ বিক্ষোভে শিকেয় ওঠে আরজি কর হাসপাতালের রোগী পরিষেবা। রবিবার জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, প্রশাসন যদি কর্তৃপক্ষের অপসারণ-সহ তাঁদের বাকি দাবি না মানে, তবে এই পরিস্থিতি আপাতত বদলাবে না। পাশাপাশি, রাজ্যের বহু হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাক দেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
১৬২৭
১২ অগস্ট, অর্থাৎ সোমবার আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় তাঁর চার সহকর্মীকে তলব করে লালবাজার। সূত্রের খবর, এই চার জনই সে দিন যুবতীর সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। ওই দিন আরজি কর-কাণ্ডে তদন্তের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসেন জাতীয় মহিলা কমিশনের দুই প্রতিনিধি। সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে লালবাজারের যান তাঁরা। তাঁরা নিহত চিকিৎসকের বাড়িতেও যান।
১৭২৭
সোমবার সকালে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তবে আরজি করের অধ্যক্ষের পদে তিনি ইস্তফা দিলেও বিকালে তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে বদলি করা হয়। তা নিয়েও জলঘোলা শুরু হয়। আন্দোলনে নামেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পডুয়াদের একাংশ।
১৮২৭
সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। তালা ঝোলানো হয় অধ্যক্ষের জন্য নির্ধারিত ঘরে। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দাবি, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপকে মেনে নেবেন না। মঙ্গলবারও প্রতিবাদে নামেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা।
১৯২৭
এর পর গত মঙ্গলবার আরজি কর হাসপাতালে হাজির হন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরা। সকালেই তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নতুন অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল এবং নতুন সুপার বুলবুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। একই সঙ্গে জানিয়ে যান, কমিশন আন্দোলনকারীদের পাশে রয়েছে।
২০২৭
মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশও লালবাজারে আবার ডেকে পাঠায় আরজি করের চার জুনিয়র চিকিৎসক-সহ আরজি করের বেশ কয়েক জন পদাধিকারী এবং কর্মীকে। পুলিশ সূত্রের খবর, কিছু বিষয়ে সন্দেহ নিরসনের জন্যই ডাকা হয় তাঁদের।
২১২৭
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাগুলির শুনানি হয়। মোট পাঁচটি জনস্বার্থ মামলায় আবেদনকারীদের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে সওয়াল করেন। এই ঘটনায় রাজ্য এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন মামলাকারীরা। জনস্বার্থ মামলাগুলির আইনজীবীরা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন। এর পর তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় উচ্চ আদালত।
২২২৭
আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হলের কাছে একটি ঘর সংস্কারকে কেন্দ্র করেও মঙ্গলবার উত্তাল হয় হাসপাতাল চত্বর। মঙ্গলবার দেখা যায়, সেমিনার হল থেকে কয়েক হাত দূরের একটি ঘর রাতারাতি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। দাবি, সেই ঘর সংস্কার করা হবে। আরও বড় ঘর তৈরি করা হবে। অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হচ্ছিল ঘর ভেঙে।
২৩২৭
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে প্রথম থেকেই শামিল হয়েছিল কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলি। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি হাসপাতাল থেকে আওয়াজ ওঠে— ‘বিচার চাই’। আন্দোলনের প্রভাব পড়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। বুধবার বিকেল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগের পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়।
২৪২৭
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। শহর কলকাতা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় বিভিন্ন শহরে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সেই মতো কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি, কৃষ্ণনগর থেকে মেদিনীপুর— রাজপথ দখল করে নেন মেয়েরা। পাশে কোথাও কোথাও রইলেন পুরুষেরাও। কলকাতার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় নামে প্রতিবাদী মুখ। সারা বাংলার মতো আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষিতা, নিহত চিকিৎসকের বাড়ির এলাকাতেও মধ্যরাতে নাগরিক জমায়েতে কার্যত জনজোয়ার তৈরি হয়। যার জেরে রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় বিটি রোড।
২৫২৭
ওই একই রাতে নতুন করে অশান্ত হয়ে ওঠে আরজি কর হাসপাতাল। মধ্যরাতে কলকাতা শহরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি চলাকালীনই তাণ্ডব চালানো হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কোলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালালেন একদল ব্যক্তি। একই সঙ্গে ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালের বাইরের চত্বরেও। বুধবার মধ্যরাতে হামলাকারীদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একাংশ। ভাঙচুর করা হয় আরজি করের পুলিশ ফাঁড়িও। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয়।
২৬২৭
ঘটনাস্থলে সীমিত সংখ্যক পুলিশকর্মী থাকলেও তাঁরা প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেননি বলে অভিযোগ। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। নামানো হয় র্যাফ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করা হয়। তার আগে ভাঙচুর করা হয় পুলিশের একাধিক গাড়ি। এই হামলার ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে বুধবার মধ্যরাতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘অপরাধী’দের খুঁজে বার করতে হবে পুলিশকে।
২৭২৭
এর পরে দোষীদের চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার থেকে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমের সহায়তাতেও বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।