What arrangement has been done for the g20 summit in Delhi by the Narendra Modi Government dgtl
G20 Summit arrangement in Delhi
রাতে মশা, দিনে বাঁদরামি! জি২০ অতিথিদের ‘পুজো’র আগে দিল্লিতে কেন্দ্রের আচমনের ব্যবস্থা
দিল্লির রাস্তায় অতিথিরা যাওয়া-আসা করবেন বুলেটপ্রুফ লিমুজ়িনে। বিমানবন্দর থেকে হোটেল। হোটেল থেকে ভারত মণ্ডপ তাঁদের বাহন হবে ওই গাড়ি। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর সকাল। দিল্লি। ভারতের অতিথি হয়ে আসা এক বিদেশি রাষ্ট্রনেতা দাঁড়িয়ে আছেন রাজধানী শহরের রাস্তায়। হঠাৎ তাঁর কাঁধে লাফ দিল এক বাঁদর! কিংবা হয়তো দেখা গেল মশার কামড় খেয়ে ধুম জ্বর কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের। তিনি যোগ দিতেই পারলেন না জি২০ সম্মেলনে। জি২০-র আয়োজনে ভারতীয় আয়োজকরা যদি কোনও দুঃস্বপ্ন দেখে থাকেন তবে নিঃসন্দেহে, সেগুলো এমনই! হয়তো তাই সম্মানীয় অতিথিদের জন্য বিপুল আয়োজনের পাশাপাশি দিল্লির বাঁদরদের সামলাতেও আলাদা দল গড়েছে কেন্দ্র। তৈরি করা হয়েছে মশানিধনের বিশেষ ‘টিম’ও।
০২১৯
অতিথিদের দেবতাজ্ঞানে পুজো করে ভারত। সেই হিসাবে আগামী শনি-রবিবার দিল্লিতে ‘বড় পুজো’! জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বিদেশ থেকে আসছেন হোমরাচোমরা অতিথিরা। প্রত্যেকেই রাষ্ট্রনেতা। এক একটি দেশের প্রধান। সম্মাননীয় অতিথিদের যত্নআত্তি নিয়ে তাই চিন্তায় কাঁটা হয়ে রয়েছে কেন্দ্র। পুজোর আগে ‘আচমন’ বা শুদ্ধিকরণের ব্যবস্থাটিও পাকা করেছে তারা।
০৩১৯
‘পুজো’র আয়োজন দিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপে। যদিও অতিথি আপ্যায়নে গোটা রাজধানীই এখন অতিথিশালা। হাতে মেরেকেটে ৪৮ ঘণ্টা সময়। তার পরেই দিল্লির জি২০ নক্ষত্র সমাবেশে যোগ দিতে একে একে এসে হাজির হবেন আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা-সহ বিশ্বের ১৯টি দেশের প্রধান অথবা প্রতিনিধিরা।
০৪১৯
রাজনীতির নজরদাররা বলছেন, এমন শক্তি সমাবেশ আগে কখনও হয়নি ভারতে। স্বাভাবিক ভাবেই আপ্যায়নে ত্রুটি রাখেনি কেন্দ্র। অতিথিদের স্বাগত জানাতে যে লাল গালিচা গড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লির বুকে, তাকে তিলে তিলে নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে তুলেছেন আয়োজকরা। ঠিক কী কী ব্যবস্থা থাকছে অতিথিদের জন্য?
০৫১৯
রুফটপ স্নাইপার্স— অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য থাকছেন কম করে হাজার দশেক নিরাপত্তারক্ষী। এর মধ্যে রয়েছে রুফটপ স্নাইপারদের একটি দলও। ছাদের উপর থেকে সন্দেহজনক গতিবিধির উপর নজর রাখবেন এই নিপুণ লক্ষ্যভেদী বন্দুকধারীরা।
০৬১৯
ড্রোনবিরোধী প্রযুক্তি— এত বড় আয়োজন। শত্রুপক্ষ চেষ্টা করতেই পারে সব কিছু ভন্ডুল করে দেওয়ার। ড্রোন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আকাশপথে চালাতে পারে হামলা। রাজধানী দিল্লিকে তাই মুড়ে ফেলা হয়েছে অ্যান্টি ড্রোন ব্যবস্থাপনায়। ড্রোন-বিরোধী এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সহজেই যে কোনও জায়গায় ড্রোনের গতিবিধি সহজে চিহ্নিত করা যাবে।
০৭১৯
ব্ল্যাক ক্যাটস— সন্ত্রাসবিরোধী ‘ব্ল্যাক ক্যাটস’ বাহিনী দায়িত্বে থাকবে দিল্লির নিরাপত্তার। গত কয়েক দিন ধরেই চলছে তাদের মহড়া। হঠাৎ প্রয়োজনে কী ভাবে দ্রুত হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হবে। কী ভাবেই বা হোটেলের ছাদে নেমে নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়বেন তাঁরা। সব কিছু বার বার দেখে নেওয়া হয়েছে।
০৮১৯
ট্র্যাফিক— অন্য দিন দিল্লির রাস্তায় অটো, রিকশা, বাস, লরি, ট্রাক, ট্যাক্সির হর্নের শব্দে কান পাতা যায় না। আগামী শনি এবং রবিবার অবশ্য সেই শব্দদূষণ বিদেশি অতিথিদের অনভ্যস্ত কানে যন্ত্রণা দেবে না। ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, দিল্লির কেন্দ্রস্থলে একটি বড় অংশ জুড়ে গাড়ির গতিবিধিতে কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শহরের অন্যান্য অংশেও যানজট যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা থাকবে।
০৯১৯
দু’দিনের ছুটি— আগামী শনি এবং রবিবার অর্থাৎ ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে দিল্লিতে। বন্ধ থাকবে দোকানপাটও। ফলে দিল্লির তিন কোটি বাসিন্দার অধিকাংশই বাড়িতে থাকবেন। ফলে রাস্তায় যান চলাচল এমনিতেই থাকবে কম।
১০১৯
অতিথিদের যানবাহন— দিল্লির রাস্তায় অতিথিরা যাওয়া-আসা করবেন বুলেটপ্রুফ লিমুজ়িনে। বিমানবন্দর থেকে হোটেল। হোটেল থেকে ভারত মণ্ডপ— তাঁদের বাহন হবে ওই গাড়ি। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা। আলাদা গাড়িও।
১১১৯
ইতিমধ্যেই দিল্লির রাস্তায় প্রতিটি মোড়ে চোখ তুললেই দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর কাট আউটে ছেয়ে গিয়েছে রাজধানীর রাজপথ। অভ্যাগতদের স্বাগত জানাতেই এই ব্যবস্থা। তবে এ ছাড়াও দিল্লির রাস্তাঘাটের সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থা গত এক বছর ধরেই করছে কেন্দ্র।
১২১৯
৪০০০ গৃহহীন মানুষ, যাঁরা ব্রিজের নীচে বা রাস্তার পাশে অস্থায়ী আস্তানা বানিয়ে থাকতেন, তাঁদের জন্য আশ্রয় বানিয়েছে কেন্দ্র।
১৩১৯
দিল্লির রাস্তায় বন্ধ হয়ে পড়েছিল বহু ফোয়ারা। সেই সব ফোয়ারায় আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ধারাপাত। জং আর জ্বলে যাওয়া রঙের উপর তাদের গায়ে পড়েছে নতুন রঙের পোঁচ।
১৪১৯
দিল্লিকে সাজানোর জন্য বসানো হয়েছে ৭০ হাজার ফুলের টব। তাতে জল দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ৩৫টি জলের ট্যাঙ্ক।
১৫১৯
তবে এই ব্যবস্থাপনায় আলাদা করে উল্লেখ করতেই হয় ‘মাঙ্কি মেন’-এর কথা। দিল্লির রাজপথে বাঁদর তাড়ানোর জন্য যে বিশেষ বাহিনী তৈরি করেছে কেন্দ্র তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাঙ্কি মেন’। মোট ৩০ জন সদস্যের এই বাহিনীর একমাত্র কাজ হবে বাঁদরদের তফাতে রাখা।
১৬১৯
দিল্লির বাঁদরদের বাঁদরামি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আচমকা পথচারীদের উপর লাফ দিয়ে পড়ে তাঁদের হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নেওয়া তাদের অভ্যাসের মধ্যে পড়ে। ফুল-ফলের গাছও নষ্ট করে তারা। কিন্তু জি২০ সম্মেলনের আগে রাষ্ট্রনেতাদের জন্য সাজানো-গোছানো ব্যবস্থাপনা যাতে তারা ভন্ডুল করতে না পারে, সে কাজই করবেন ‘মাঙ্কি মেন’রা।
১৭১৯
এক বিশেষ প্রজাতির লেঙ্গুরকে ভয় পায় এই বাঁদরেরা। মাঙ্কি মেনদের কাজ হবে ওই লেঙ্গুরদের মতো শব্দ করে বাঁদরদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখা। এ ছাড়া বাঁদরদের ভয় দেখানোর জন্য দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় লেঙ্গুরের ছবি দেওয়া প্রমাণ মাপের প্রতিকৃতিও লাগানো হয়েছে মধ্য দিল্লির বিভিন্ন রাস্তায়।
১৮১৯
তবে বাঁদরদের তফাতে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলেও পথকুকুরদের সামলানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি দিল্লি। পথকুকুরদের ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতেই সরব হন দিল্লির পশুপ্রেমীরা। বন্ধ হয়ে যায় কাজ।
১৯১৯
গত কয়েক সপ্তাহে এক বিশেষ ধরনের মাছও ঝাঁকে ঝাঁকে আনানো হয়েছে দিল্লিতে। সেই সব মাছ ছাড়া হয়েছে প্রগতি ময়দানের ফোয়ারার জলে। কেন্দ্র সূত্রে খবর, এই সব মাছের মূল খাবার হল মশার লার্ভা। জি২০ সম্মেলন চলাকালীন যাতে দিল্লিতে মশার উৎপাত না হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা!